পরমেশ্বর শিব কি তার পুত্র গণেশ কে চিনতে পারেননি ?

Why Shiva did not recognize his own son Ganesha


কলিযুগের প্রভাবে সনাতন ধর্মের উপর বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে আঘাত আসছে। 

বিশেষতঃ নাস্তিক, আর্যসমাজী, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম সহ বিভিন্ন অসনাতনীরা এসে সনাতনীদের কাছে বিভিন্ন রকম কটুক্তি করে থাকে। তার মধ্যে একটি কটুক্তি হল এরকম, 

শিব যদি ভগবান হয়ে থাকে তাহলে নিজের পুত্র গণেশকে কেন চিনতে পারলেন না ?

 

এইরকম মূর্খের মতো প্রশ্ন করে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করে অসনাতনী রা,

বেশিরভাগ সনাতনী রা নিজেদের ধর্মের শাস্ত্র ই পঠন পাঠন করে না। ফলে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান থাকে না, আর এই অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়েই অসনাতনীরা সনাতনীদের কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে থাকে। 

স্বাভাবিকভাবেই তখন শাস্ত্র জ্ঞানহীন অসনাতনীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, নিজে কোনো উত্তর দিতে না পেরে অসনাতনীদের কথায় ফেঁসে যায়। এভাবেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়া শাস্ত্রজ্ঞানহীন সনাতনীদের মন থেকে নিজের সনাতন ধর্মের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যেতে শুরু করে।

তাই এই প্রশ্নের জবাব আমি শাস্ত্র থেকেই উদ্ধৃতি দিয়ে উপস্থাপন করছি।

ভগবান গণেশের আবির্ভাব তিথি পবিত্র চতুর্থী তিথি উপলক্ষ্যে আজ এই শঙ্কা থেকে সকল শিবভক্ত শৈব সনাতনীদের মুক্ত করে দেবার জন্য এই প্রতিবেদন টি উপস্থাপন করছি।

গণেশায় নমঃ ॥

নমঃ শিবায় 🙏

   শ্রী লিঙ্গ মহাপুরাণের পূর্বভাগের ১০৫ নং অধ্যায়ের সম্পূর্ণ বর্ণনা করা হল নীচে শ্লোক ও বাংলা অনুবাদ সহ, এখানেই উত্তর রয়েছে 👇


यदा स्थिताः सुरेश्वराः प्रणम्य चैवमीश्वरम् ।

तदाम्बिकापतिर्भवः पिनाकधृङ् महेश्वरः ॥ १

ददौ निरीक्षणं क्षणाद्भवः स तान् सुरोत्तमान्।

प्रणेमुरादराद्धरं सुरा मुदार्द्रलोचनाः ॥ २

भवः सुधामृतोपमैर्निरीक्षणैर्निरीक्षणात् ।

तदाह भद्रमस्तु वः सुरेश्वरान् महेश्वरः ॥ ३ 

वरार्थमीश वीक्ष्य ते सुरा गृहं गतास्त्विमे ।

प्रणम्य चाह वाक्पतिः पतिं निरीक्ष्य निर्भयः ॥ ४

सुरेतरादिभिः सदा ह्यविघ्नमर्थितो भवान् ।

समस्तकर्मसिद्धये सुरापकारकारिभिः ॥ ५

ततः प्रसीदताद्भवान् सुविघ्नकर्मकारणम्।

सुरापकारकारिणामिहैष एव नो वरः ॥ ६

ततस्तदा निशम्य वै पिनाकधृक् सुरेश्वरः ।

गणेश्वरं सुरेश्वरं वपुर्दधार सः शिवः ॥ ७

गणेश्वराश्च तुष्टुवुः सुरेश्वरा महेश्वरम् ।

समस्तलोकसम्भवं भवार्तिहारिणं शुभम् ॥ ८

इभाननाश्रितं वरं त्रिशूलपाशधारिणम् ।

समस्तलोकसम्भवं गजाननं तदाम्बिका ॥ ९

ददुः पुष्पवर्षं हि सिद्धा मुनीन्द्रा- स्तथा

खेचरा देवसङ्घास्तदानीम् ।

तदा तुष्टुवुश्चैकदन्तं सुरेशा

प्रणेमुर्गणेशं महेशं वितन्द्राः ॥ १०

तदा तयोर्विनिर्गतः सुभैरवः समूर्तिमान् ।

स्थितो ननर्त बालकः समस्तमङ्गलालयः ॥ ११

विचित्रवस्त्रभूषणैरलङ्कृतो गजाननः ।

महेश्वरस्य पुत्रकोऽभिवन्द्य तातमम्बिकाम् ॥ १२

जातमात्रं सुतं दृष्ट्वा चकार भगवान् भवः ।

गजाननाय कृत्यांस्तु सर्वान् सर्वेश्वरः स्वयम् ॥ १३

आदाय च कराभ्यां च सुसुखाभ्यां भवः स्वयम्।

आलिङ्ग्याघ्राय मूर्धानं महादेवो जगद्गुरुः ॥ १४

तवावतारो दैत्यानां विनाशाय ममात्मज ।

देवानामुपकारार्थं द्विजानां ब्रह्मवादिनाम् ॥ १५

यज्ञश्च दक्षिणाहीनः कृतो येन महीतले ।

तस्य धर्मस्य विघ्नं च कुरु स्वर्गपथे स्थितः ॥ १६ 

अध्यापनं चाध्ययनं व्याख्यानं कर्म एव च ।

योऽन्यायतः करोत्यस्मिंस्तस्य प्राणान् सदा हर ॥ १७ वर्णाच्च्युतानां नारीणां नराणां नरपुङ्गव ।

स्वधर्मरहितानां च प्राणानपहर प्रभो ॥ १८

याः स्त्रियस्त्वां सदा कालं पुरुषाश्च विनायक ।

यजन्ति तासां तेषां च त्वत्साम्यं दातुमर्हसि ॥ १९

त्वं भक्तान् सर्वयत्नेन रक्ष बालगणेश्वर ।

यौवनस्थांश्च वृद्धांश्च इहामुत्र च पूजितः ॥ २०

जगत्त्रयेऽत्र सर्वत्र त्वं हि विघ्नगणेश्वरः ।

सम्पूज्यो वन्दनीयश्च भविष्यसि न संशयः ॥ २१

मां च नारायणं वापि ब्रह्माणमपि पुत्रक ।

यजन्ति यज्ञैर्वा विप्रैरग्रे पूज्यो भविष्यसि ॥ २२

त्वामनभ्यर्च्य कल्याणं श्रौतं स्मार्तं च लौकिकम् ।

कुरुते तस्य कल्याणमकल्याणं भविष्यति ॥ २३

ब्राह्मणैः क्षत्रियैर्वैश्यैः शूद्रैश्चैव गजानन ।

सम्पूज्य सर्वसिद्ध्यर्थं भक्ष्यभोज्यादिभिः शुभैः ॥ २४

त्वां गन्धपुष्पधूपाद्यैरनभ्यर्च्य जगत्त्रये ।

देवैरपि तथान्यैश्च लब्धव्यं नास्ति कुत्रचित् ॥ २५

अभ्यर्चयन्ति ये लोका मानवास्तु विनायकम् ।

ते चार्चनीयाः शक्राद्यैर्भविष्यन्ति न संशयः ॥ २६

अजं हरिं च मां वापि शक्रमन्यान् सुरानपि ।

विघ्नैर्बाधयसि त्वां चेन्नार्चयन्ति फलार्थिनः ॥ २७

ससर्ज च तदा विघ्नगणं गणपतिः प्रभुः ।

गणैः सार्धं नमस्कृत्वाप्यतिष्ठत्तस्य चाग्रतः॥ २८

तदाप्रभृति लोकेऽस्मिन् पूजयन्ति गणेश्वरम् ।

दैत्यानां धर्मविघ्नं च चकारासौ गणेश्वरः ॥ २९

एतद्वः कथितं सर्वं स्कन्दाग्रजसमुद्भवम्।

यः पठेच्छृणुयाद्वापि श्रावयेद्वा सुखी भवेत् ॥ ३०

 ॥ इति श्रीलिङ्गमहापुराणे पूर्वभागे विनायकोत्पत्तिर्नाम पञ्चाधिकशततमोऽध्यायः ।। १०५ ॥

(তথ্যসূত্র — লিঙ্গ মহাপুরাণ/পূর্বভাগ/১০৫ অধ্যায়) 

🪷 অর্থ — সূত মুনিজী বললেন, হে ঋষিগণ ! পরমেশ্বর শিবকে প্রণাম করে যখন দেবতাগণেরা যথাস্থান স্থিত হয়ে গেলেন, তখন অম্বিকাপতি পিনাকধারী ভব মহেশ্বর সেই শ্রেষ্ঠ দেবতাদের ক্ষণকালের মধ্যে দিব্যদৃষ্টি প্রদান করলেন। তখন অশ্রুসিক্ত নয়ন যুক্ত হয়ে দেবতারা প্রসন্ন মনে আদরপূর্বক পরমেশ্বর শিব কে প্রণাম করলেন ॥ ১-২

এরপর মহেশ্বর ভব সুধা অমৃত তুল্য দৃষ্টির দ্বারা সুরেশ্বরদের (দেবতাদের) দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, তোমাদের কল্যাণ হোক ॥৩

তদন্তর স্বামী শিব কে দেখে নির্ভয় হয়ে দেবগুরু বৃহস্পতি পরমেশ্বর শিব কে প্রণাম করে বললেন, হে ঈশ ! এই দেবতারা আপনার দর্শন করে বর প্রাপ্তির প্রার্থনা নিয়ে আপনার গৃহে উপস্থিত হয়েছে, দেবতাদের অপকার করতে থাকা দৈত্য গণদের দ্বারা নির্বিঘ্নতা পূর্বক সমস্ত কর্মের সিদ্ধির জন্য আপনি সদা প্রার্থিত । অতএব, আপনি দেবতাদের অপকারকারী দৈত্যদের কর্মের মধ্যে যাতে বিঘ্ন উৎপন্ন হয় আপনি সেই বিঘ্নতার কারণ হোন তথা আমাদের ওপর প্রসন্ন হন, ইহাই আমাদের প্রার্থিত বর ॥৪-৬

তখন এটি শুনে সেই সুরেশ্বর প্রভু শিব দেবতাদের স্বামী রূপী গণেশ্বর রূপের একটি পৃথক শরীর প্রকাশ করে ধারণ করলেন, তদন্তর গনেশ্বর তথা দেবতাদের সমস্ত লোককে উৎপন্ন কারী তথা সংসারের কষ্টদূরকারি শুভ (গজাননরূপী) মহেশ্বর এর স্তুতি করলেন(মহেশ্বর নিজেই) ॥ ৭-৮

এরপর সেখানে উপস্থিত থাকা অম্বিকা পার্বতীদেবী সেই হাতির সমান মুখ ধারন কারী আর হাতে ত্রিশূল তথা পাশ হাতে ধারণ করে থাকা সমস্ত লোকের উৎপাদক কল্যাণকারী গজাননকে (লোকাচারবশত) নিজের অংশস্বরূপের থেকে প্রকট করে দিলেন ॥৯

সেই সময় সিদ্ধ, মুনিগণ, আকাশচারীগণ তথা দেবতা গণেরা পুষ্প বৃষ্টি করলেন ও আলস্যরহিত হয়ে একদন্ত গণেশরূপী মহেশ্বরের‌ই স্তুতি ও প্রণাম করলেন ॥১০

সেই সময় শিব-শিবা(পার্বতী) দ্বারা উৎপন্ন, বিচিত্র বস্ত্র-আভূষণের দ্বারা অলংকৃত তথা সমস্ত মঙ্গলের আলয় মহেশ্বর-পুত্র সেই বালক গজানন মূর্তিমান সুন্দর ভৈরবের ন্যায় স্থিত হয়ে পিতামাতার বন্দনা করে নৃত্য করতে লাগলেন ॥১১-১২

উৎপন্ন হওয়া পুত্রকে দেখে ভগবান সর্বেশ্বর ভব-শঙ্কর গজানন গণেশের জন্য সমস্ত জাতকর্ম আদি সংস্কার স্বয়ং করলেন ॥১৩

এরপর জগৎ গুরু মহাদেব স্বয়ং নিজের পরম সুখাদায়ক হস্ত দ্বারা তাকে উঠিয়ে আলিঙ্গন করে তথা তার মস্তকে শুঁকে বললেন — হে আমার পুত্র ! আমার তুমি রূপী এই গণেশ অবতার দৈত্যদের বিনাশের জন্য আর দেবতাদের কথা ব্রহ্মবাদী দ্বিজদের উপকারের উদ্দেশ্যে হয়েছে ॥১৪-১৫

যিনি পৃথিবীতে দক্ষিণা বিহীন যজ্ঞ করে, তুমি সর্ব পথে স্থিত হয়ে তার ধর্মতে বিঘ্ন প্রদান করো। এই পৃথিবীতে যে অন্যায়-পূর্বক অধ্যয়ন, অধ্যাপন, ব্যাখ্যা তথা অন্য কর্ম করে, তার প্রাণকে তুমি সদা হরণ করতে থাকো। 

হে নরশ্রেষ্ঠদের প্রভু ! বর্ণ হতে ছুতো তথা নিজের ধর্ম থেকে রহিত পুরুষ এবং স্ত্রীদের প্রাণকে সর্বদা হরণ করো।

হে বিনায়ক ! যে স্ত্রী তথা পুরুষ সদা কালরূপ তোমার পূজা করে, তুমি তাদের নিজের সাম্য প্রদান করো ।

এ বালগণেশ্বর ! তুমি এই লোক তথা পরলোকে পূজিত হয়ে যুবক আর বৃদ্ধ ভক্তদের রক্ষা সম্পূর্ণ চেষ্টার দ্বারা করো।

তুমি তিন লোকে সর্বত্র বিঘ্নগণেশ্বর -এই রূপে পূজনীয় তথা বন্দনীয় হবে, এতে কোন সংশয় নেই। হে পুত্র ! যে ব্যক্তি আমার (শিবের), বিষ্ণুর তথা ব্রহ্মার পূজা করে থাকে অথবা যজ্ঞের দ্বারা যজন করে, সে ব্রাহ্মণদের দ্বারাও সবার প্রথম তুমি পূজ্য হবে ।

তোমার পূজা না করে যে কল্যাণের নিমিত্ত শ্রৌত-স্মার্ত-লৌকিক কর্ম করে, তার মঙ্গল অমঙ্গল রূপে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। হে গজানন ! তুমি সমস্ত কাজের সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য তথা শূদ্রের মাধ্যমে শুভ ভক্ষ্য ও ভোজ্য আদির দ্বারা ভালোভাবে পূজার যোগ্য হবে ।

গন্ধ পুষ্প ধূপ আদি দ্বারা তোমার পূজা না করে তিন লোকে কোথাও দেবতা তথা অন্য ব্যক্তির কিছুই প্রাপ্ত হবে না। যে মনুষ্য ! বিনায়কের পূজা করবে, সে ইন্দ্রাদির দ্বারাও পূজনীয় হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।

যদি ফল প্রাপ্ত করবার ইচ্ছাকারী ব্যক্তি তোমার পূজা না করে, তাহলে সে যদি ব্রহ্মা-বিষ্ণু, স্বয়ং আমি (রুদ্র), ইন্দ্র অথবা অন্য দেবতা‌ই হোক না কেন, তুমি তাদের বিঘ্ন দ্বারা বাধিত করো ॥ ১৬-২৭

তখন প্রভু গণপতি বিঘ্নগণকে উৎপন্ন করলেন, তিনি সেই গণেদের সাথে পরমেশ্বর শিব কে নমস্কার করে সেখানে সবার সামনে স্থিত হয়ে গেলেন ॥২৮

সেই সময় থেকে মনুষ্যরা এই লোকে গণপতির পূজা করতে শুরু করলেন আর সেই গনেশ্বর দৈত্যদের ধর্মতে বিঘ্ন প্রদান করা শুরু করলেন। হে ঋষিগণ আমি আপনাদের সবাইকে সেই গণপতি গণেশের সম্পূর্ণ আখ্যান বললাম, যার অগ্রজ হলেন শ্রীকার্তিকেয় । যে এটি পাঠ করেন বা শ্রবণ করেন অথবা অন্যদের শ্রবন করান, তিনি সুখী হন ॥২৯-৩০

॥ এইভাবে শরীর লিঙ্গ মহাপুরাণের অন্তর্গত পূর্বভাগের মধ্যে “বিনায়ক উৎপত্তি” নামক ১০৫ তম অধ্যায় পূর্ণ হল ॥

—————————————————————

এবার উপরোক্ত কাহিনী বিশ্লেষণ করা যাক।


(প্রশ্ন) ভগবান গণেশের উৎপত্তি কেন হয়েছে ?

উত্তর — শ্রীলিঙ্গমহাপুরাণের পূর্বভাগের ১০৫ তম অধ্যায়ের ৪-৬নং শ্লোকে বলা হয়েছে, দেবতাদের গুরু বৃহস্পতি পরমেশ্বর শিবের কাছে বর প্রার্থনা করেছিলেন দেবতাদের পীড়া প্রদানকারী দৈত্যদের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে দৈত্যদের সংহার করবার জন্য । তাই সেই কার্য করবার জন্য শ্রীগণেশ উৎপন্ন হয়েছেন।


(প্রশ্ন) ভগবান গণেশ কার থেকে উৎপন্ন হয়েছেন ?

উত্তর — শ্রীলিঙ্গমহাপুরাণের পূর্বভাগের ১০৫ তম অধ্যায়ের ৭-৮নং শ্লোকে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর শিব‌ই দেবতাদের বরপ্রদানের জন্য পৃথকভাবে নিজের‌ই একটি স্বরূপকে প্রকাশ করে গজানন অবতার রূপে প্রকট হয়েছিলেন । ৯নং শ্লোকে বলা হয়েছে, সে গজানন রূপ‌ই দেবী পার্বতীর অংশস্বরূপের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে গণেশ হন ।


(প্রশ্ন) গণেশ যে শিবের পুত্র এটা কেন শিব জানতে পারেনি ?

উত্তর — শ্রীলিঙ্গমহাপুরাণের পূর্বভাগের ১০৫ তম অধ্যায়ের ৭-৮নং শ্লোকে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর শিব নিজেই এই গণেশরূপ ধারণ করেছেন দেবতাদের বরদান দেবার নিমিত্তে। তাহলে পরমেশ্বর শিব যে গণেশকে চিনতেন না বা জানতেন তা তো মূর্খের মতো কথা মাত্র।

এছাড়াও, শ্রীলিঙ্গমহাপুরাণের পূর্বভাগের ১০৫ তম অধ্যায়ের ১৩নং শ্লোকে বলা হয়েছে যে,

“ উৎপন্ন হওয়া পুত্রকে দেখে ভগবান সর্বেশ্বর ভব-শঙ্কর গজানন-গণেশের জন্য সমস্ত জাতকর্ম আদি সংস্কার স্বয়ং করলেন ”

অর্থাৎ, পরমেশ্বর শিবের সামনে গণেশ উৎপন্ন হবার সাথে সাথে পরমেশ্বর শিব স্বয়ং নিজেই গণেশের জন্ম হবার জন্য জাতকর্ম সংস্কার অনুষ্ঠান নিজের হাতে করেছেন । 


এমনকি,  শ্রীলিঙ্গমহাপুরাণের পূর্বভাগের ১০৫ তম অধ্যায়ের ১৪-১৫ নং শ্লোকে পরমেশ্বর শিব ঐ গণেশকে ‘আমার পুত্র ’ বলে সম্বোধন করেছেন, দেখুন 👇

“ মহাদেব স্বয়ং নিজের পরম সুখাদায়ক হস্ত দ্বারা তাকে উঠিয়ে আলিঙ্গন করে তথা তার মস্তকে শুঁকে বললেন — হে আমার পুত্র ! আমার তুমি রূপী এই গণেশ অবতার দৈত্যদের বিনাশের জন্য আর দেবতাদের কথা ব্রহ্মবাদী দ্বিজদের উপকারের উদ্দেশ্যে হয়েছে ”


শেষ কথা হল, পরমেশ্বর শিব হলেন সর্বজ্ঞ, অর্থাৎ তিনি সবকিছুই জানেন, তার কাছ থেকে কোনো কিছু গুপ্ত রাখা যায় না, তার কোনো কিছুই অজানা নয়। 

প্রমাণ দেখুন 👇 

শিব এব হি সর্বজ্ঞঃ পরিপূর্ণশ্চ নিঃস্পৃহ ॥১১

সর্বজ্ঞতা তৃপ্তিরনাদিবোধঃ স্বতন্ত্রতা নিত্যমলুপ্তশক্তিঃ ।

অনন্তশক্তিশ্চ মহেশ্বরস্য যন্মানসৈশ্চর্যমবৈতি বেদঃ ॥১২

(শিব মহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১৮ অধ্যায়)

অর্থ — শিব ই সর্বজ্ঞ, পরিপূর্ণ তথা নিঃস্পৃহ ॥১১

সর্বজ্ঞতা, তৃপ্তি, অনাদিবোধ, স্বতন্ত্রতা, নিত্য অনুপ্ত শক্তি দ্বারা সংযুক্ত হওয়া এবং নিজের মধ্যে অনন্ত শক্তি ধারণ করা- মহেশ্বরের এই ছয় প্রকার মানসিক ঐশ্বর্য কেবল বেদ ই জানে ॥১২


সুতরাং,

সনাতন ধর্মের শাস্ত্র থেকেই এবার প্রমাণিত হয়ে গেল অসনাতনীরা যে দাবী করে বলে যে, শিব নিজের পুত্র গণেশকে চিনতে পারেননি। এই দাবী সম্পূর্ণ ভাবে ভিত্তি হীন । 

এর মধ্যে থেকে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল যে, প্রভু শিব ই স্বয়ং সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর। তিনিই গণেশের রূপ ধারণ করে লীলা করছেন। 

সনাতন ধর্মে একজন‌ই পরমেশ্বর, তিনি হলেন — শিব, আমাদের সকলের প্রভু। তিনিই সকল দেবতার রূপ ধারণ করে নিজের সহিত নিজেই লীলা করেন মাত্র।

[শিবমহাপুরাণে কল্পভেদে ভিন্ন কল্পের অনুসারে গণেশের উৎপত্তির ভিন্ন আখ্যান উপস্থিত, তথাপি পরমেশ্বর শিব যে গণেশের জন্ম হ‌ওয়া থেকে গণেশ কে নিজের পুত্র বলে চিনতেন, তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ পরমেশ্বর শিব সর্বজ্ঞ, তার কাছে কোনো কিছু অজানা নয়।]

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


🔥 অপপ্রচার দমনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত