ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত

 

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত

বাংলাতে এই সর্বপ্রথম ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) – এর পক্ষ থেকে শৈবমতানুসারে স্কন্দমহাপুরাণ থেকে ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন বিধি প্রকাশিত হল। এই বিধি লেখনী ও সংগ্রহ করেছেন শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য (কৌশিক রায়) জী ।

🟥 ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলনের কারণ 🟥

ত্রিপুরাসুর নামে তিনজন অসুর ব্রহ্মা বরদানের ফলে অত্যন্ত বলিয়ান হয় তিনটি পুরী তৈরী করেছিলেন, যা বিমানের মতো মহাকাশে চলমান ছিল, সেই চলমান তিনটে অসুরপুরী আলাদা আলাদা ভাবে ভেসে বেড়াতো। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই তিনটি পুরী এক সরলরেখায় অবস্থান করলে তবেই একে ধ্বংস করা সম্ভব নচেৎ অন্য সময়ে আলাদা ভাবে একটি একটি করে এই অসুরপুরী ধ্বংস করা যাবে না, কারণ এটিই ব্রহ্মার বরদান। এর‌ই সুযোগ নিয়ে তিনপুরীতে থেকে এই তিন অসুর সমগ্র জগতের উপর অত্যন্ত অত্যাচার করতে থাকে, দেবতারা অতিষ্ট হয়ে পরমেশ্বরের শরণাপন্ন হয়ে আকুল ভাবে তার স্তুতি করতে থাকেন, তখন পরমেশ্বর ভগবান প্রভু শিব প্রকটিত হন এবং দেবতাদের আশ্বাস দিয়ে সেই ত্রিপুরকে নির্দিষ্ট ক্ষণে(সময়ে) ধনুকের একটিমাত্র বান সংযোগ করে তা নিক্ষেপ করে ওই তিনটি পুর অর্থাৎ ত্রিপুরকে একত্রে বিনাশ করে দিয়েছিলেন। তাই প্রভু শিবের নাম ত্রিপুরারী হিসেবে বিখ্যাত হয় । প্রভু শিব সেই ত্রিপুর ধ্বংস করলে সমস্ত দেবতখরা পরমেশ্বর ভগবান প্রভু শিবের প্রসন্নতার নিমিত্তে দীপ প্রজ্জ্বলন করে দান করেন প্রভু শিবকে। ঐ দিনের তিথি ছিল কার্তিক মাসের পূর্ণিমার সন্ধ্যা বেলা। এই দীপ প্রজ্জ্বলন ও তা শিবের উদ্দেশ্যে দান করলে প্রভু শিব অতি প্রসন্নতার সাথে সেই ভক্তের উপর সন্তুষ্ট হন।

🟥 ত্রিপু্রোৎসবে দীপপ্রজ্জ্বলনের মাহাত্ম্য 🟥

স্কন্দমহাপুরাণে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি শিবালয়ে(শিবমন্দিরে) প্রভু শিবের সমক্ষে এই দীপ প্রজ্জ্বলন করে প্রভু শিবকে দান করেন সেই ব্যক্তি জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত হয়ে যায়, এই দীপ আলো যে জীবের উপর পড়ে, যিনি এই দীপ দর্শন করেন তিনিও জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত হয়ে যান। দীপ দানের পর সমস্ত জগতের স্বামী সেই প্রভু শিবকে দর্শন করা উচিত। এর ফলে অতিপাপী ব্যক্তিও মৃত্যুর পর শিবজ্ঞানী হয়ে জন্ম গ্রহন করে মুক্ত হয়ে যায়, অন্তিমে সকলেই শিবলোক প্রাপ্ত হন । (সমস্ত শৈবমন্দির, শৈবমঠ, শৈবগুরুপরম্পরার মঠমন্দিরে এই দীপ প্রজ্জ্বলন করা অতীব সুখদায়ক হিসেবে প্রসিদ্ধ)issgt

🟥🟥🟥🟥 দিনক্ষণ 🟥🟥🟥🟥

✅ কার্তিক মাসের পূর্ণিমার সন্ধ্যা বেলায় এই রীতি পালন করা হয় । এটি বৈকুণ্ঠ চতুর্দশীর পূজা পরবর্তী তিথিতেই পালিত হয় ।

🟥🟥🟥🟥 কর্তব্য 🟥🟥🟥🟥

✅ উক্ত পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যাবেলায় শিবালয়ে অর্থাৎ শিবমন্দিরে বা বাড়িতে ৭২০টি দীপ প্রজ্জ্বলন করতে হয় ।(একটি শিবমন্দিরে সমগ্র গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ি থেকে এই দীপ দান করার কাজটি ভাগাভাগি করে নিতে পারেন, গ্রামের সকলে মিলে যদি এটি করেন তবে ৭২০টি দীপ অতি সহজেই প্রজ্জ্বলন করা সম্ভব হবে)

✅ যদি ৭২০টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করতে অসমর্থ হন তবে সমগ্র বাড়িতে বা শিবালয়ে ৭০টি প্রদীপ বা পরমেশ্বর ভগবান প্রভু শিবের সামনে ৭টি প্রদীপ অথবা ১টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করুন । বাড়ির বাইরের দিকে ও ভেতরেও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করবেন ।

✅ ঘী এর দীপ প্রজ্জ্বলন করবেন। অসমর্থ হলে সরিষা বা চম্পা(চাঁপা) ফুলের তেল দিয়ে দীপ প্রজ্জ্বলন করবেন ।

✅ নিজের হাতে মাটির দীপ বানাতে পারেন, অথবা পূজার সামগ্রী কেনার দশকর্মার দোকান থেকে কিনে নিতে পারেন ।

✅ প্রভু শিবের সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে হাত জোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করুন –

কীটাঃ পতঙ্গা মশকাশ্চ বৃক্ষা জলে স্থলে যে বিচরন্তি জীবাঃ ।
দৃষ্টা প্রদীপং ন চ জন্মভাগিনো ভবন্তু  নিত্যং শ্বপচা হি বিপ্রা ॥

✅ তারপর ঘন্টা শঙ্খ কাসর প্রভৃতি বাজিয়ে দীপ হাতে তুলে নিয়ে প্রভু শিবের সামনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আরতি করুন । আরতি শেষে ভক্তি সহকারে মন্ত্র পাঠ করে মিনতি করুন ।

✅ দীপ নিবেদন মন্ত্র 👇

দীপং হি পরমং শম্ভো ঘৃতপ্রজ্বলিতং ময়া ।
দত্তং গৃহাণ দেবেশ মম জ্ঞানপ্রদো ভব ॥
দীপং বিশিষ্টং পরমং সর্ব্বৌষধিবিজৃম্ভিতম্ ।
গৃহাণ পরমেশান মম শান্ত্যর্থমেব চ ॥
দীপাবলিং ময়া দত্তাং গৃহাণ পরমেশ্বর ।

কুলে মম মহাদেব ভজনং তেঽস্তু সর্বদা ।

মাভূত্তস্য কুলে জন্ম যত্র ত্বং নহি দেবতা ॥

অথবা মন্ত্রটি বাংলায় সরল ভাবে বলেও প্রার্থনা করতে পারেন –

হে শম্ভো, এই ঘৃতপ্রজ্বলিত পরম দীপ তোমাকে প্রদান করলাম । ইহা গ্রহণ করো প্রভু এবং আমাকে জ্ঞান প্রদান করো ॥১৩০
হে পরমেশ, তোমার শান্তির নিমিত্ত আমি এই সর্বৌষধি সমুদ্ভাসিত বিশিষ্ট দীপ প্রদান করলাম, ইহা তুমি গ্রহণ করো ॥ ১৩১
হে পরমেশ্বর, আমার দ্বারা নিবেদন করা এই দীপাবলী তুমি গ্রহণ করো প্রভু । ১৩২-১/২

হে পরমেশ্বর সদাশিব ! হে মহাদেব! 

আমার কুলে যেন সদাই আপনার ভজন হতে থাকে। যে কুলে আপনি ইষ্টদেবতা নন, সেখানে যেন কখনও আমার জন্ম না হয়।'

✅ সমর্থ হলে শুধুমাত্র শিবভজন সঙ্গীনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করবেন। সাথে সাথে শিবমন্দির পরিক্রমা করবেন । (যাদের এটি করার সামর্থ্য নেই তারা এটি এড়িয়ে যাবেন)

🔥সব শেষে শ্রীনন্দীনাথ শৈব আচার্য কৃত

 শৈবধ্বনী দিন —


এক অদ্বিতীয় সগুণ নির্গুণ পরমেশ্বর 

হর শঙ্কর কি........ জয়......


ব্রহ্মাবিষ্ণুসেবিত শক্তিপতি মহেশ্বর

প্রভু সদাশিব কি...... জয়......


বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ ইতিহাস পুরাণ 

আগম ধর্মশাস্ত্রবর্ণিত মহাদেব কি...... জয়.....


সন্তানপ্রতিপালনকারী সনাতন ধর্ম

প্রকাশকারী রুদ্রদেব কি...... জয়.......


ভক্তবৎসল আশ্রয়দাতা পরমপিতা

আশুতোষ ত্রিপুরারী কি....... জয়.......

জগন্মাতা শিবা পার্বতী কি...... জয়.......

দেবসেনাপতি ভগবান কার্তিকেয়্ কি...... জয়.....

বিঘ্নহারী সিদ্ধিদাতা গণেশ কি........ জয়

সাক্ষাৎ সনাতন ধর্ম শিববাহন বৃষভ নন্দী মহারাজ কি.. জয়..


শিব পঞ্চ আবরণ তথা সর্ব দেবদেবী কি.... জয়....

মোক্ষপুরী কাশীনগরী শিবলোক বারাণসী কি.... জয়...

শৈব সনাতন ধর্ম কি....... জয়......

পরম শৈবাচার্য স্বামী দয়ানন্দ অবধূত গুরু মহারাজ কি.. জয়..

শৈব অবধূত গুরুপরম্পরা কি....... জয়....

সর্ব শৈব আচার্য গুরুপরম্পরা কি...... জয়....

সর্ব শিবভক্ত তথা পরম শৈবগণ কি........ জয়...

জয় ত্রিপুরারীর জয়

জয় শিব শঙ্করের জয়

জয় পরমেশ্বরের জয়

শৈব হো মন.. শৈব হো তন.. শৈব হো জীবন..

শৈব হে ধর্ম.. শৈব হে কর্ম.. শৈব হে বর্ম...

শিব শিব শিব 

হর হর শঙ্কর হর 

নীলকন্ঠ মহাদেব

ॐ শান্তি শান্তি শান্তি


ॐ নমঃ শিবায় ॐ.... হর হর মহাদেব ॥

ॐ নমঃ ত্রিপুরান্তকায়.... হর হর মহাদেব ॥

ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে..... হর হর মহাদেব ॥

মম প্রাণ শিবার্পণমস্তু

শিবঃ ॐ তৎ সৎ ॥


এখানেই ত্রিপুরোৎসবের দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি সমাপ্ত হল ।।

নমঃ শিবায় ☘️

© KOUSHIK ROY. ALL RIGHTS RESERVED HTTPS://ISSGT.WORDPRESS.COM

মন্তব্যসমূহ

  1. খুব সুন্দর হয়েছে একটা অজানা জিনিসকে জানতে পেরেছি ৷ তবে সংক্ষিপ্ত ভাবে এটি পোষ্ট করলে ভাল হতো৷ সম্ভব হলে আমার মেসেঞ্জারে দিন ৷

    উত্তরমুছুন
  2. একটি মোম জ্বালালে হবে কি?

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)