শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

 


শিবরাত্রির কারণ হল ব্রহ্মা ও বিষ্ণু উভয়েই এই বিশেষ তিথিতে পরমেশ্বর শিবের পূজা করেছিলেন। তাই এই পরমপবিত্র তিথি শিবরাত্রি নামে পরিচিত। আরো বিস্তারিত বিবরণ জানতে এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন 👉 শিবরাত্রির কারণ কি ?

শিবমহাপুরাণ অনুসারে শিবরাত্রি ব্রত পূজা দুই পর্যায়ে হয়ে থাকে  -

 ১) প্রথম প্রহরেই শিবের মূলপূজা । তারপর..

 ২) চার প্রহরে শিবের প্রহরপূজা ।

(শিবরাত্রির আগেরদিন নিরামিষ (হবিষান্ন) খাদ্য গ্রহণ করবেন, শিবরাত্রির সমগ্র চতুর্দশী তিথিতে উপবাস থাকবেন, শিবরাত্রির প্রথম প্রহরের সময় শুরু হবার সাথে সাথেই প্রভু শিবের আরাধনা করতে হবে ও প্রথম প্রহর শেষ হবার আগেই সেই পূজা সেরে ফেলতে হবে, তারপর প্রথম প্রহরের মধ্যে বাকি থাকা  সময়ের মধ্যেই চারপ্রহরের পূজার শুভারম্ভ করতে হবে। প্রথম প্রহরে মূল পূজা সমাপ্তি করে সাথে সাথে প্রথম প্রহরের মধ্যেই চারপ্রহরোক্ত পূজার প্রথম প্রহরপূজা, উদাহরণ হিসেবে বলি - ধরুন, বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত প্রথম প্রহর রয়েছে, তবে আপনাকে আগে থেকেই মূলপূজার সামগ্রী সাজিয়ে ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে মূলপূজা সারতে হবে। এরপর ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে প্রহরপূজা হিসেবে প্রথমপ্রহরের পূজা সেরে ফেলতে হবে। তারপর থেকে প্রত্যেক প্রহরে প্রহরে আলাদা আলাদা ভাবে চার প্রহরেই পরমেশ্বরের পূজা করতে হবে।)

[বিঃদ্রঃ - চারপ্রহরের পূজা মাটির চারটি শিবলিঙ্গ বানিয়ে তাতে আলাদা আলাদা ভাবে করতে হয়। মূলপূজাটি পাথরের শিবলিঙ্গে বা শিববিগ্রহে করবেন। তারপর প্রত্যেক প্রহরে প্রহরে আলাদাভাবে একটি করে মাটির শিবলিঙ্গ নিয়ে তাতে প্রহরের পূজা করবেন। 

মনে রাখবেন - প্রথমপ্রহরে একটি মাটির শিবলিঙ্গ পূজা করবেন, দ্বিতীয় প্রহরে আরেকটি মাটির শিবলিঙ্গ পূজা করবেন, এইভাবেই চারপ্রহরে আলাদাভাবে আলাদা আলাদা ভাবে চারটি মাটির শিবলিঙ্গ পূজা করবেন। আপনার কাছে মাটির শিবলিঙ্গ না থাকলে সেক্ষেত্রে মূলপূজা ও চারপ্রহরের পূজাই একটি পাথরের শিবলিঙ্গেই করতে পারেন। মাটি দিয়ে শিবলিঙ্গ বানানোর সময় ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র জপ করবেন]


শিবরাত্রির সকালে করনীয় কর্ম


✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –

কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥


এরপর সারাদিন উপবাসী থেকে স্নান করবেন নমঃ শিবায় জপ করে। স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে কপালে সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন বৃক্ষে জল দেবেন এবং কিছু পশুপাখিদের(গরু/ছাগল/কুকুর/কাক/যেকোনো পাখি) এবং কীটপতঙ্গ(পিঁপড়ে ইত্যাদি) খাদ্যবস্তু দান করবেন। এবার হাত ধুয়ে নিন। এবার নিত্যদিনের মতোই সকালে শিব পূজা করে নিন। পূজা করার জন্য শিবালয় অর্থাৎ শিবমন্দিরেও যেতে পারেন। পূজা করার পর হাতে জল নিন ও শিবরাত্রির ব্রতসংকল্প করুন।

[যাদের শরীর অসুস্থ অথবা যাদের প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবনের প্রয়োজন রয়েছে তারা ঔষধ ও তারসাথে জল গ্রহন করে পূজা করবেন, যারা না খেয়ে পূজা করতে অসমর্থ, তারা খাদ্য গ্রহণ করেই পূজা করবেন]

✅ ব্রত সংকল্প করুন এই মন্ত্রে(অথবা সরল বাংলা ভাষাতেই বলুন) –

🛑 মন্ত্র – 

দেবদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নমোঽস্তু তে ।

কর্তুমিচ্ছাম্যহং দেব শিবরাত্রিব্রতং তব ॥

তব প্রভাবাদ্দেবেশ নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।

কামাদ্যাঃ শত্রবো মাং বৈ পীড়াং কুর্বন্তু নৈব হি ॥


(অথবা এই সহজ ভাষায় সংকল্প করুন,

বলুন – দেবদেব মহাদেব হে নীলকন্ঠ আপনাকে নমস্কার করি। হে দেব পরমেশ্বর! আমি আপনার শিবরাত্রিব্রতের অনুষ্ঠান করতে চাই। হে মহেশ্বর প্রভু শিব ! আপনার প্রভাবে এই ব্রত যেন সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয় এবং কামনা বাসনা আদি শত্রু যেন আমাকে পীড়া প্রদান না করে)

এরপর সেই জল সামনের মেঝেতে বা মাটিতে ছেড়ে প্রনাম করে উঠে পড়ুন এবং শিবরাত্রির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে পূজার স্থানে এনে রেখে দিন। 


উপকরণ :

১) চারটি মাটির শিবলিঙ্গ বানিয়ে নেবেন, আগেও বানিয়ে রেখে দিতে পারেন। (যারা অপারগ তারা একটি শিবলিঙ্গে বা শিববিগ্রহেই মূলপূজা ও প্রহরপূজা করবেন)

২) বেলপাতা, ৪টি পদ্মফুল, ধুতরা ফুল, অপরাজিতা (নীলকন্ঠ) ফুল, অনান্য গন্ধযুক্তফুল, বিভিন্ন পাকা ফল, একটি কলা এবং বেল ফল।

৩) বেশ কিছুটা গোটা আঁতপচাল, দূর্বা(কচিঘাস)

৪) পঞ্চামৃত (কাঁচা দুধ, দ‌ই, ঘি, মধু ও শর্করা (চিনিজল বা আঁখের রস)[কিছু পরিমান পঞ্চামৃত প্রহরপূজার জন্য‌ও আলাদা করে রেখে দেবেন]

৫) কালোতিল, সাদা চন্দন।

৬) ধূপ-দীপ ও নৈবেদ্য(কয়েকটি পাঁকা ফল ও রান্না করা কিছু খাবার হিসেবে খিচুড়ি, পায়েস, ক্ষীর , লুচি ইত্যাদি)

৭) তাম্বুল(পান), 

৮) কিছু পরিমান তিল, যব, গম, মাসকলাই, মুগডাল, 

৯) ১টি পাতিলেবু,

১০) বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন অথবা ডালের বড়া ,

১১) শিবের উপহার হিসেবে একটি ছোট্ট গামছা ।


[জেনে রাখুন -উপরোক্ত উপাচার গুলি শিবমহাপুরাণ অনুসারে বলা হয়েছে, যদি কেউ এই সমস্ত কিছু দিতে অসমর্থ‌ও হন তবে মন খারাপ করবেন না, প্রভু পরমেশ্বর শিব আপনার হৃদয়ে থাকা শ্রদ্ধা, সততা ও ভক্তিতেই আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রদান করা উপাচার গ্রহণ করবেন অতি প্রসন্ন হয়ে।যাদের সামর্থ্য থাকবে তারা উপরোক্ত উপাচার গুলি একটু অধিক পরিমাণে সংগ্রহ করে রাখবেন। যে উপাচার টি আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন না, সেই দ্রব্যটিকে জলের মধ্যে কল্পনা করে সেটি শিবলিঙ্গে কিছু টা ঢেলে দেবেন, তাতেই আপনার সেই অভাব থাকা দ্রব্যের দ্বারাও পূজা হয়ে যাবে।]

প্রথম প্রহর শুরু হবার আগে থেকেই সমস্ত উপাচার সাজিয়ে রেখে দেবেন। তারপর প্রথম প্রহরের কিছু আগে সময় আগে স্নান করে নেবেন, যদি জল স্নান করতে অসমর্থ হন তবে মন্ত্রস্নান করে নেবেন। এক্ষেত্রে শুধু দেহে জল ছিটিয়ে দিলেই স্নান সম্পূর্ণ হয়ে যায়।

💥 মন্ত্রস্নানের পদ্ধতি দেখার জন্য এখানের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন 👉 শৈবমতে মন্ত্রস্নান ও সন্ধিপ্ৰোক্ষণ পদ্ধতি

 এবার পুনরায় সুন্দর শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে সুন্দর করে কপালে সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র এঁকে নেবেন ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন। এবার শিবরাত্রির মূল পূজা সেরে নিয়ে তারপর সারারাত ধরে জেগে প্রহরপূজা করবেন।

💥ত্রিপুণ্ড্র ধারণ করার নিয়মটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন 👉 ত্রিপুণ্ড্র ধারণ পদ্ধতি 

✅ রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন এই নিচের মন্ত্রটি উচ্চারণ করে 👇 

রুদ্রাক্ষবৃক্ষ বীজায় ভূতি সংভূতি হেতবে ।

নেত্রত্রয়ায় রুদ্রায় নমো লোকহিতার্থিনে ॥


॥ শিবরাত্রির ব্রতপূজার শুভারম্ভ ॥ 


(১) শিবরাত্রির মূলপূজার পদ্ধতি


ভারতীয় সময় অনুযায়ী, চতুর্দশী তিথি শুরু হবে 2024 সালের 8ই মার্চ শুক্রবার রাত্রি 9:57pm থেকে, চতুর্দশী শেষ হবে পরবর্তী দিন 9 তারিখ সন্ধ্যা 6:57pm -এ


[প্রথম প্রহরের ভারতীয় সময় - শুক্রবার, ৮ই মার্চ 

প্রথম প্রহরের সময় - 6:25 PM থেকে 09:28 PM]


[প্রথম প্রহরের বাংলাদেশীয় সময় - শুক্রবার৮ই মার্চ  

প্রথম প্রহরের সময় -  06:55 PM থেকে 09:42 PM]


[প্রথম প্রহরের ওয়াশিংটন/USA সময় - শুক্রবার৮ই মার্চ  - প্রথম প্রহরের সময় - 07:55 AM থেকে 10:42 AM (সকাল বেলায়)]

(Washington DC , USA এর সময়সূচি অনুযায়ী)

(ভারতের সময় ওয়াশিংটন এর সময়ের থেকে সর্বদা 10 ঘণ্টা 30 মিনিট এগিয়ে থাকে)




সর্বপ্রথমে ধূপদীপ জ্বেলে দিন। এবার শিবস্মরণ করুন। 

✅ সর্বপ্রথম শিবস্মরণ করুন – 


ॐ শিব ॐ শিব ॐ শিব বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈরার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥

ॐ নমঃ শিবায় ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥


🟥এরপর আচমন করুন। 

 আচমন পদ্ধতিটি দেখার জন্য নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক করুন 👉 শৈব আচমন বিধি ও তার মাহাত্ম্য (শৈব আগমোক্ত)

✅এবার হাতজোড় করে শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –

ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।

যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ‌‌॥


✅অতঃপর নিজ গুরু কে স্মরণ করুন । (যদি আপনি অদীক্ষিত ব্যক্তি হন তবে ভগবান গণেশকে স্মরণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ ॥


🍁এবার পার্বতীসহিত পরমেশ্বর সদশিবকে পূজা গ্রহণ করার জন্য ভক্তিসহকারে আবাহন করুন হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে –

কৈলাস শিখরস্থং চ পাৰ্বতী পতিমুত্তমম্ ।

যথোক্ত রূপিণং শম্ভুং নির্গুণং গুণরূপিণম্ । 

পঞ্চবক্ত্রং দশভুজং ত্রিনেত্ৰং বৃষভ ধ্বজম্ ॥ 

কর্পূরগৌরং দিব্যাঙ্গং চন্দ্ৰমৌলিং কপর্দিনম্ । 

ব্যাঘ্রচর্ম উত্তরীয়ং চ গজচর্ম অম্বরং শুভম্ ॥ 

বাসুক্যাদি দীপ্তিতাঙ্গং পিনাকাদ্য আয়ুধান্বিতম্ । 

সিদ্ধয়োঽষ্টৌ চ যস্য অগ্রে নৃত্যন্তীহ নিরন্তরম্ ॥

জয় জয়েতি শব্দৈশ্চ সেবিতং ভক্তপুঞ্জকৈঃ । 

তেজসা দুস সহেনৈব দুর্লক্ষ্যং দেব সেবিতম্ ॥

শরণ্যং সর্বসত্ত্বানাং প্রসন্ন মুখ পঙ্কজম্ ।

বেদৈঃ শাস্ত্ৰৈ যথাগীতং বিষ্ণু ব্ৰহ্মনুতং সদা ।

ভক্তবৎসল পরমানন্দং শিবম আবাহয়াম্ অহম্ ॥


(আপনি সাধারণ বাংলা ভাষাতেও এইভাবে আবাহন করতে পারেন - যিনি কৈলাস শিখরে নিবাস করেন, যিনি পার্বতী দেবীর পতি, যিনি সমস্ত দেবতাদের থেকে উত্তম, শাস্ত্রে যাঁর স্বরূপ যথাবৎ বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি নির্গুণ হয়েও গুণরূপ, যাঁর পাঁচ মুখ, দশ হাত এবং প্রত্যেক মুখমণ্ডলে তিনটি করে নেত্র, যাঁর ধ্বজায় বৃষভ চিহ্ন অঙ্কিত, যাঁর অঙ্গকান্তি কর্পূরের ন্যায় গৌর, যিনি দিব্যরূপধারী, চন্দ্রের ন্যায় মুকুটে যিনি সুশোভিত ও যিনি মাথায় জটাজূট ধারণ করেছেন, যিনি হাতির চামড়া পরিধান করেন এবং ব্যাঘ্রচর্ম ধারণ করেন, যাঁর স্বরূপ শুভ, যাঁর অঙ্গে বাসুকি আদি নাগ জড়িয়ে আছে, যিনি পিনাক আয়ুধ (অস্ত্র) ধারণ করেন, যাঁর সামনে অষ্ট সিদ্ধি নিরন্তর নৃত্য করে থাকেন, ভক্তগণ জয়ধ্বনি করে যাঁর সেবায় ব্যাপৃত থাকে, দুঃসহ তেজের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা কঠিন, যিনি দেবগণ দ্বারা সেবিত ও সমস্ত প্রাণীকে শরণ দিয়ে থাকেন, যাঁর মুখ প্রসন্নতায় উদ্ভাসিত, বেদ এবং শাস্ত্রসমূহে যাঁর মহিমা যথাসাধ্য গীত হয়েছে, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাও সর্বদা যাঁর স্তুতি করে থাকেন, যিনি পরমানন্দস্বরূপ, সেই ভক্তবৎসল শম্ভু শিবের আমি আবাহন করি ॥)



🟥ফল অথবা মিষ্টান্ন এবং পানীয় জল সহ জলের গ্লাস সাজিয়ে দিন প্রভু শিবের সমীপে। এবার এক একটি থালা প্রভুর সামনে দেখিয়ে বলুন – 


ॐ শিবার্পণমস্তু ॥

ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥

হে প্রভু মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত সমস্ত প্রসাদ আপনারা প্রসন্ন হয়ে গ্রহণ করে আমার উপর কৃপা করুন।


✅এবার শিবলিঙ্গ অথবা শিববিগ্রহকে আলাদা আলাদা ভাবে পঞ্চামৃত দ্বারা স্নান করাবেন 👇

[কিছুটা পঞ্চামৃত প্রহর পূজার জন্য আলাদা পাত্রে সংরক্ষিত করে রেখে দিন আগে থেকেই]

🔥গরুর কাচা দুধ দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

গোক্ষীরস্নানং দেবেশ গোক্ষীরেণ ময়া কৃতম্ ।

স্নপনং দেবদেবেশ গৃহাণ পরমেশ্বর ॥

অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥দ‌ই দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

দধ্না চৈব ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ চ ময়া দত্তং সুপ্রসন্নো ভবাদ্য বৈ ॥

অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥ঘি দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

সর্পিষা চ ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ॥

অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥মধু দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

ইদং মধু ময়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ।

গৃহাণ ত্বং হি দেবেশ মম শান্তিপ্রদো ভব ॥ 

অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


🔥শর্করা(আখের রস/চিনিজল) দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

সিতয়া দেবদেবেশ স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তাং সুপ্রসন্নো ভব প্রভো ॥

অতঃপর কিছুটা জল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করান।


[এবং পঞ্চামৃতেনৈব স্নপনীয়ো বৃষ-ধ্বজঃ ।

পশ্চাদর্ঘ্যং প্রদাতব্যং তাম্রপাত্রেণ ধীমতা ।

অনেনৈব চ মন্ত্রেণ উমাকান্তস্য তুষ্টয়ে ॥]


✅ হাতে এক ঘটি গঙ্গা জল(অভাবে শুধু জল) নিয়ে সমগ্র গঙ্গাজল দ্বারা শিবলিঙ্গ বা শিববিগ্রহে অভিষেক করার উদ্দেশ্যে ঢেলে দিন, এই মন্ত্র পাঠ করতে করতে – 

ॐ ত্র্যয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।

উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥


✅এবার অর্ঘ্য নিবেদন - এর জন্য তামার পাত্রে অথবা হাতে দূর্বা ও গোটা আতপচাল নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে বিগ্রহে প্রদান করুন –


রূপং দেহি যশো দেহি ভোগং দেহি চ শঙ্কর

ভুক্তিমুক্তিফলং দেহি গৃহীত্বার্ঘ্যং নমোঽস্তু তে ॥


✅ কিছু চন্দনযুক্ত ফুল বেলপাতা হাতে নিয়ে শ্রীগণেশ কে সমর্পণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে - ॐ গাং গণেশায় নমঃ ॥ এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ॥


✅ কিছু চন্দনযুক্ত ফুল বেলপাতা হাতে নিয়ে শ্রীকার্তিকেয় কে সমর্পণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে - ॐ ষণ্মুখায় নমঃ ॥এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ॥


✅ শিবলিঙ্গে ভস্ম সমর্পন করুন এই মন্ত্র পাঠ করে - অনাদি শাশ্বতং শান্তং চৈতন্যং চিৎস্বরূপকম্ । চিদঙ্গং বৃষভাকারং চিদ্ভস্মলিঙ্গধারণম্ । শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ বিভূতিং সমৰ্পয়ামি ।


 হাতে বেলপাতা নিয়ে হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে শিবলিঙ্গে বেলপাতা অর্পণ করুন -  'ত্রিদলং ত্রিগুণাকারং ত্রিনেত্রং চ ত্রিয়ায়ুধম্ । ত্রিজন্মপাপসংহারম্ একবিল্বং শিবার্পণম্ ॥

শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ বিল্বপত্রাণি ধারয়ামি ।'


🟥এবার পঞ্চোপচার [ধূপ, দীপ, গন্ধ(চন্দন), ফুল, নৈবেদ্য] দিয়ে পূজা করুন👇


✅ধূপ নিবেদন  - এর জন্য হাতে ধূপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গের সামনে আরতি করে সেটি প্রদান করুন –

ॐ নমঃ কর্পর্দিনে চ ব্যুপ্তকেশায় চ নমঃ সহস্রাক্ষায় চ শতধন্বনে চ নমো গিরিশায় চ শিপিবিষ্টায় চ নমো মীঢ়ুষ্টমায় চেষুমতে চ ।

ভগবতে শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ, ধূপমাঘ্রাপয়ামি ॥


✅ দীপ নিবেদন - এর জন্য হাতে দীপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গের সামনে আরতি করে সেটি প্রদান করুন –

দীপং হি পরমং শম্ভো ঘৃতপ্রজ্বলিতং ময়া ।

দত্তং গৃহাণ দেবেশ মম জ্ঞানপ্রদো ভব ॥

দীপং বিশিষ্টং পরমং সর্ব্বৌষধিবিজৃম্ভিতম্ ।

গৃহাণ পরমেশান মম শান্ত্যর্থমেব চ ॥ 

দীপাবলিং ময়া দত্তাং গৃহাণ পরমেশ্বর । 


✅এবার চন্দন নিবেদন - এর জন্য হাতে চন্দন নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –


সুগন্ধং চন্দনং দেব ময়া দত্তঞ্চ বৈ প্রভো ।

ভক্ত্যা পরময়া শম্ভো সুগন্ধং কুরু মাং ভব ॥


✅এবার পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন - এর জন্য হাতে কিছু গন্ধপুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাদ্যদ্যৎ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥

তাবকস্ত্বদ্ গতপ্রাণস্ত্বচ্চিত্তোঽহং সদা মৃড ।

ইতি বিজ্ঞায় গৌরীশ ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥

ভূমৌ স্খলিতপাদানাং ভূমিরেবাবলম্বনম্ ।

ত্বয়ি জাতাপরাধানাং ত্বমেব শরণং প্রভাে ॥

এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ।

ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ ॥


নৈবেদ্য হিসেবে একটি পাকা ফল দিতে পারেন এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে

ॐ নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায় চাপরজায় চ নমো মধ্যমায় চাপগল্ ভায় চ নমো জগন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ॥


ভগবতে শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ, নৈবেদ্য নিবেদয়ামি ॥

✅অতঃপর

মাতা পার্বতী সহিত পরমেশ্বর শিবের ধ্যান করবেন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে –


কৈলাসপীঠাসনমধ্যসংস্থং ভক্তৈঃ সনন্দাদিভির্রচ্যমানম্ ।

ভক্তার্তিদাবানলহাপ্রমেয়ং ধ্যায়েদুমালিঙ্গিতবিশ্বভূষণম্ ॥

ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্ ।

পদ্মাসীনং সমন্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম ॥


(ধ্যান করার সময় নিচের এই চিত্রটি দেখে কল্পনা করতে পারেন চোখ বন্ধ করে এবং ধ্যানের সময়সীমা আপনার মনের গভীরতার উপর নির্ভরশীল, অন্তত দশমিনিট ধ্যান করুন)




✅ধ্যানের পর এবার ১০৮ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র জপ করুন(রুদ্রাক্ষমালা অথবা হাতের শৈবমালাতেও জপ করতে পারেন)।

মন্ত্র – ॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥

✅জপ এর পর মাতা পার্বতীর উদ্দেশ্যে জপ করুন ষড়াক্ষরী মহামন্ত্র 

মন্ত্র- ॥ ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥


✅এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।

মন্ত্র –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥

[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু শিব শঙ্কর! আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজা ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]


✅এবার প্রভু শিবের কাছে শিবভক্তি প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।

মন্ত্র –

শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।

অন্যথা শরনং নাস্তি ত্বমেব শরনং মম ॥

[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু সদাশিব ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। শিব ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে শরণ দেবার নেই। হে পার্বতীপতি আপনিই আমার শরণদাতা]


আপাতত মূলপূজা সম্পূর্ণ হল।

এবার শিবরাত্রির চারপ্রহরের প্রহরপূজা করতে হবে ।

 তাই নীচের এই প্রহরপূজার পদ্ধতিটি দেখার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করে দেখুন 👉 শিবরাত্রি ব্রতের প্রহরপূজাবিধি 



মন্তব্যসমূহ

  1. অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে ব্রত বিধি লেখার জন্য🙏

    উত্তরমুছুন
  2. বম ভোলে.... শৈব পদ্ধতিতে শিবার্চন বিধি আমাদের কাছে উপস্থিত করার জন্য অনেক ধন্যবাদ.. হর হর মহাদেব

    উত্তরমুছুন
  3. ওঁ নমঃ শিবায় 🕉️🔱

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত