নীলপূজা ও নীলষষ্ঠী পূজার ব্রত বিধি

 


নীলপূজা বা নীলষষ্ঠী হল বাংলার প্রচলিত একটি লৌকিক অনুষ্ঠান। নীলপূজা ব্রত সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশে শুধুমাত্র হিন্দু এলাকায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। নীল বলতে পরমেশ্বর শিবকে বোঝনো হয়, পরমেশ্বর শিবের একটি নাম নীলকন্ঠ, সেহেতু পরমেশ্বর শিবকে নীল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। তার‌ই স্ত্রী মাতা পার্বতীর নাম হল - নীলচণ্ডিকা । দেবীকে নীলা বলা হয়ে থাকে।

   

🟣 দিনক্ষণ : চৈত্রসংক্রান্তির চড়কপূজার আগের দিন সন্ধ্যাবেলায় নীলপূজা ব্রত অনুষ্ঠান করতে হয় ।


 লোকমতে, পুরাতন কোনো এক সময়ে নীলকন্ঠ - এর সহিত নীলচণ্ডিকা দেবী শুভ পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন, তাছাড়া শিবগৌরীপুত্র ভগবান কার্তিকেয়র স্ত্রী দেবী ষষ্ঠী আজকের দিন এই ব্রতানুষ্ঠানের মাহাত্ম্য মর্তে বিস্তার করেছিলেন। সেই কারণে এটি নীলষষ্ঠী নামেও পরিচিত। 

বাংলার বধূরা এইদিন নিজ সন্তানের মঙ্গল ও রোগশোকমুক্ত সুস্থ জীবনের কামনায় নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে থাকেন। এছাড়াও ভক্তশৈবরা এইদিন নীলকণ্ঠ ও নীলচণ্ডিকা দেবীর বিবাহ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান করেন।

 

🟥 নীলপূজা ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য : 

কোনো একসময়ে এক ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ব্রাহ্মণী অতি ভক্তিসহকারে সপ্তাহের বার-ব্রত অনুষ্ঠান করতো। কিন্তু তারপরেও তাদের সন্তান জন্মানোর পর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না। একদিন পবিত্র কাশী তীর্থের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া গঙ্গানদীতে ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ব্রাহ্মণী স্নান করে ওখানেই নদীর পাড়ে থাকা ঘাটের উপর বসে মনের দুঃখে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিলেন। এটি দেখতে পেয়ে দেবী ষষ্ঠীর খুব করুণা উদয় হল। তিনি এক বৃদ্ধা ব্রাহ্মণীর রূপ ধারণ করে ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ব্রাহ্মণীর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলেন ' কি রে !! তোরা রোদন করিতেছিস কেন ?!

 ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ব্রাহ্মণী তারা নিজেদের মনের দুঃখের কথা জানালেন। দেবী ষষ্ঠী সেটি শুনে তারপর জিজ্ঞাসা করে বললেন ‘তোরা কখনো নীলষষ্ঠী করেছিস নাকি ? ’

ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ব্রাহ্মণী বললেন - সে আবার কি ব্রত গো জননী ? এই নীলষষ্ঠীব্রত সম্পর্কে আমরা কিছুই অবগত ন‌ই ।

তখন মা ষষ্ঠী বললেন 'সমগ্র চৈত্রমাসে অস্থায়ীভাবে সন্ন্যাসী হয়ে পরমেশ্বর সদাশিবের আরাধনা করবে, চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সারাদিন উপবাস থাকবে। সন্ধ্যে বেলায় শিবের নীলকণ্ঠ স্বরূপ ও জননী পার্বতীর স্বরূপ নীলচণ্ডিকার আরাধনা করে শিবালয় অর্থাৎ শিব মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করবে, দেবী ষষ্ঠীকে প্রণাম করবে অতঃপর উপবাস ভঙ্গ করবে। যে ব্যক্তি এই নীলষষ্ঠী ব্রত অনুষ্ঠান করে সেই ব্যক্তির কোনো সন্তান  কখনও অল্প আয়ুতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয় না। 

 এগুলি সম্পর্কে অবগত করিয়েই দেবী ষষ্ঠী অদৃশ্য হলেন। তখন ব্রাহ্মণ ও তার স্ত্রী ব্রাহ্মণী নিজ গৃহে ফিরে এসে অতি বিশ্বাস ও ভক্তির সহিত নীল ষষ্ঠীর আরাধনা করলেন। শিব পার্বতী ও দেবী ষষ্ঠীর কৃপায় এরপর তাদের যতগুলি সন্তান‌ হয়েছিল তারা সকলে দীর্ঘ আয়ু পেল, কেউ অকালে মৃত্যুলোক প্রাপ্ত হয়নি। 


🌼 নীলষষ্ঠী ব্রতের ফলাফল :

নীলকণ্ঠ শিব, মাতা নীলচণ্ডিকা এবং দেবী ষষ্ঠীর কৃপা লাভ হয়। সন্তানের কল্যাণ হয় এবং সন্তান লাভের বিঘ্ন সম্পর্কিত অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।


🌷 নীলপূজার দিন সকালে করনীয় কর্ম : 


✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবগৌরীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –


কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥


এরপর সারাদিন উপবাসী থেকে স্নান করবেন নমঃ শিবায় জপ করে। স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে কপাল সহ দেহের পাঁচ স্থানে ত্রিপুণ্ড্র ও গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন বৃক্ষে জল দেবেন এবং কিছু পশুপাখিদের(গরু/ছাগল/কুকুর/কাক/যেকোনো পাখি) এবং কীটপতঙ্গ(পিঁপড়ে ইত্যাদি) খাদ্যবস্তু দান করবেন। এবার হাত ধুয়ে নিন। এবার নিত্যদিনের মতোই সকালে শিব পূজা করে নিন। পূজা করার জন্য শিবালয় অর্থাৎ শিবমন্দিরেও যেতে পারেন। পূজা করার পর হাতে জল নিন ও নীলপূজার ব্রতসংকল্প করুন।

এখানে ক্লিক করে দেখুন 👉ত্রিপুণ্ড্র ধারণ বিধি

✅ নীলপূজা ব্রতের সংকল্প করুন, 

এই মন্ত্র পাঠ করে – 


দেবদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নমোঽস্তু তে ।

কর্তুমিচ্ছাম্যহং দেব নীলষষ্ঠীব্রতং তব ॥

তব প্রভাবাদ্দেবেশ নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।

কামাদ্যাঃ শত্রবো মাং বৈ পীড়াং কুর্বন্তু নৈব হি ॥

ॐ নমো নমঃ তৎসদস্য চৈত্রে মাসি শুক্লে পক্ষে চতুর্থী তিথৌ (নিজের গোত্র বলুন) গোত্রঃ শ্রী/শ্রীমতী (নিজের নাম বলুন) শিব শক্তি ষষ্ঠী প্রীতিকামঃ দেবরহস্যোক্ত নীলষষ্ঠী ব্রতমহং করিষ্যে ॥

ওঁয়া গুঙ্গুরখ্যা সিনীবালী যা রাকা যা সরস্বতী ।

ইন্দ্রাণীমহর উভয়ে বরুণানীং স্বস্তয়ে ।

নীলষষ্ঠীব্রতং হোতৎ করিয্যে অহং মহাফলম ।

নির্বিঘ্নমস্তু সে চাত্র তুৎ প্ৰসাদাগৎপতে ।

প্রতিপদ্যাং নিরাহারো ভূত্বা চৈবাপরেই হনি ।

ভোস্কো অহং ভুক্তিমুক্তার্থং শরণং মে ভবেশ্বর ॥

এবার জল টি মেঝেতে ছেড়ে দিন। 


এবার সন্ধ্যাবেলা পর্যন্ত উপবাসী থাকুন। সন্ধ্যাবেলায় একটি প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গের উপরে নীলকণ্ঠের সহিত মাতা নীলচণ্ডিকা এবং দেবী ষষ্ঠীর আরাধনা করুন।

সন্ধ্যাবেলায় আরাধনা সম্পূর্ণ হবার পর প্রসাদ ও চরণামৃত গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করতে পারবেন।


 ☘️ উপকরণ :

• শিবলিঙ্গ - এর অভিষেক করার জন্য নীচের যে কোনো একটি দ্রব্য সংগ্রহ করুন -

(১) পঞ্চামৃত (দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনি মিশ্রিত জল)

অথবা 

(২) দুধ ও গঙ্গাজল, 

অথবা

(৩) ডাবের জল

• কিছু আঁতপচাল ,

• চন্দন ,

• ১টি ঘিয়ের দীপ ও ধূপকাঠি ,

• একটি কাঁচা আম (শিবলিঙ্গের পীঠভাগে দেবী ষষ্ঠীর উদ্দেশ্যে সমর্পন করার জন্য) ,

• নৈবেদ্য হিসাবে কিছু পাকা ফল ও মিষ্টান্ন ,

• কিছুটা পরিষ্কার জল ,

• নীলকন্ঠ পুষ্প (নীল বর্ণের অপরাজিতা), আকন্দ পুষ্প, ধুতুরা পুষ্প ও একটি ধুতুরা ফল, কিছু সংখ্যক লাল পুষ্প,আপনি চাইলে একটি লালফুলের মালা গেঁথে সেটি দেবী নীলচণ্ডিকাকে(দেবী পার্বতীর ছবি) বা শিবলিঙ্গের গৌরীপীঠের অংশে সমর্পন করতে পারেন, কিছু সাদা বর্ণের পুষ্প,

• কিছু বেলপত্র ।


🛑 নীলপূজার শুভারম্ভ :


পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করুন, ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষমালা ধারণ করুন, একটি কম্বলের অথবা কুশের আসন পেতে পূজার জন্য বসুন।

এরপর শিবলিঙ্গের সামনে  বলে একটি ঘিয়ের দীপ জ্বালুন, এটি বলে – 'দীপো নমঃ'

 কয়েকটি ধূপকাঠি জ্বালুন, এই মন্ত্র বলে - 'ধূপো নমঃ


এবার হাতে একটি ফুল নিয়ে কূর্মমুদ্রায় নীলকণ্ঠ ও দেবী নীলচণ্ডিকার ধ্যান মন্ত্র পাঠ করে ধ্যান করুন কিছুক্ষণ -

বালার্কাযুত তেজসং ধৃতজটাজুটেন্দুখণ্ডোজ্জ্বলং, নাগেন্দ্রৈঃ কৃতশেখরং জপবটিং শূলং কপালং করৈঃ।

খট্টাঙ্গং দধতং ত্রিনেত্র বিলসৎপঞ্চাননং সুন্দরং, ব্যাঘ্রত্বক পরিধানমবজনিলয়ং শ্রীনীলকণ্ঠং ভজে ।

যৈষা ললিতকান্ত্যাখ্যা দেবী নীলচণ্ডিকা।

বরদাভয়হস্তা চ দ্বিভুজা গৌরদেহিকা ॥

রক্তপদ্মাসনস্থা চ মুকুটাঙ্গদমণ্ডিতা ।

রক্তকৌযেয়বস্ত্রা তু স্মিতবক্ত্রা শুভাননা ।

নবযৌবনসম্পন্না চাৰ্ব্বর্ঙ্গী ললিতপ্রভা‌ ॥



এবার 'ॐ নমঃ শিবায়' মহামন্ত্র পাঠ করতে করতে শিবলিঙ্গের জল দ্বারা অভিষেক করুন ।


এরপর লঘু মহামৃত্যুঞ্জয় ও শিবগায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করতে করতে শিবলিঙ্গর বিশেষ দ্রব্য দ্বারা অভিষেক করান। অর্থাৎ উপরোক্ত যেকোনো একটি দ্রব্য দিয়ে দুধ-গঙ্গাজল অথবা ডাবের জল অথবা পঞ্চামৃত।


ॐ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্।

উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর মুক্ষীয় মামৃতাত ॥

ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে 

মহাদেবায় ধীমহি ।

তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॐ ॥


🟩এবার পুণরায় শিবলিঙ্গ জল দ্বারা অভিষেক করুন, এই মহামন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে - ॐ নমঃ শিবায়‌


🟥এবার শিবলিঙ্গের লিঙ্গ ও পীঠ ভাগে চন্দন লেপন করুন, এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে - গন্ধো নমঃ

 

🟦শিবলিঙ্গের লিঙ্গভাগে বেলপাতা, নীলফুল, আকন্দ, ধুতুরা ফুল ও একটি ধুতুরার ফল নিবেদন করুন, এই মন্ত্র পাঠ করে -

 ॐ হৌং এতে গন্ধপুষ্পে নীলকণ্ঠায় নমঃ ॥


এরপর  

⚫ শিবলিঙ্গের পীঠ ভাগে(গৌরীপট্ট) কিছু লাল ফুল নিবেদন করুন, এই মন্ত্র পাঠ করে -

ॐ হ্রীং এতে গন্ধপুষ্পে নীলচণ্ডিকায় নমঃ ॥


এরপর

 🟤 শিবলিঙ্গের পীঠ ভাগে কিছু সাদা ফুল ও একটি কাঁচা আম নিবেদন করুন দেবী ষষ্ঠীর উদ্দেশ্যে, এই মন্ত্র পাঠ করে - ॐ এতে গন্ধপুষ্পে ষষ্ঠীদেব্যৈ নমঃ ॥


এরপর  

🟣 কিছু ফল মিষ্টি নিবেদন করুন শিবলিঙ্গে, এই মন্ত্র উচ্চারণ করে - নৈবেদ্যং নিবেদয়ামি ॥


এবার 

🛑 ঘিয়ের প্রজ্বলিত দীপ ও ধূপকাঠি দিয়ে শিবলিঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে ধূপ ও দীপ দ্বারা আরতি করুন। আরতির সময় বাম হাতে একটি হাত ঘন্টা নিয়ে বাজান।


এবার বসে পড়ুন।

 হাতে কিছু আঁতপ চাল, চন্দন মাখানো ফুল ও বেলপত্র নিয়ে প্রণাম অথবা অঞ্জলি মুদ্রা ধারণ করে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি দেবেন নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে -

 প্রথমবার, পরমেশ্বর নীলকন্ঠের উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলি দিন (শিবলিঙ্গের লিঙ্গভাগে অর্পণ করুন) -

ॐ নমঃ শিবায় । এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো নীলকণ্ঠায় নমঃ ॥


দ্বিতীয়বার, মাতা নীলচণ্ডিকার উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলি দিন (শিবলিঙ্গের পীঠভাগে অর্পণ করুন) -


ॐ নমঃ শিবায়ৈ । এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্ৰাঞ্জলি নমো নীলচণ্ডিকায় নমঃ ॥


তৃতীয়বার, মা ষষ্ঠীর উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলি দিন(শিবলিঙ্গের পীঠভাগে অর্পণ করুন) -


ॐ এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো ষষ্ঠীদেব্যৈ নমঃ ॥


🟩 এবার শিবলিঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম মুদ্রা ধারণ করে, নিম্নলিখিত সম্রটি পাঠ করে যথাক্রমে নীলকন্ঠ, মা নীলচণ্ডিকা ও দেবী ষষ্ঠীকে প্রণাম করুন -

ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় পঞ্চবক্ত্রায় নীলকণ্ঠায় শূলিনে।

নন্দি ভৃঙ্গি মহাব্যালগণ যুক্তায় শম্ভবে ॥ ১

শিবায়ৈ হরকান্তায়ৈ প্রকৃত্যৈ সৃষ্টিহেতবে।

নমস্তে ব্রহ্মচারিণ্যৈ নীলচণ্ডিত্র্যৈ নমো নমঃ ॥ ২

সংসারভয় সন্ত্রাপাৎ পাহি মাং সিংহবাহিনি। 

রাজ্য সৌভাগ্য সম্পত্তিং দেহি মাম্ ॥ ৩

জয় দেবী জগন্মাত জগতানন্দকারীনী।

প্রসীদ মম কল্যাণী নমস্তে ষষ্ঠী দেবীতে‌ ॥ ৪


যদি সন্তানের উদ্দেশ্য দীপ জ্বেলে দিতে চান তবে আপনার যে কয়টি সন্তান আছে তাদের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে একটি করে দীপ জ্বেলে দিয়ে হাতে ফুল বেলপাতা নিয়ে সন্তানের নাম ও গোত্র উচ্চারণ করতে করতে মন্ত্র পাঠ করে দীপের কাছে নিচের দিকে সেগুলি দিয়ে দিন। 

মন্ত্র — ॐ নমো নমঃ তৎসদস্য চৈত্রে মাসি শুক্লে পক্ষে চতুর্থী তিথৌ (সন্তানের গোত্র বলুন) গোত্রঃ শ্রী/শ্রীমতী (সন্তানের নাম বলুন) শিব শক্তি ষষ্ঠী প্রীতি চ ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ কামঃ  দেবরহস্যোক্ত নীলষষ্ঠী ব্রতমহং করিষ্যে ॥ দীপ প্রজ্জলম্ চ নিবেদয়ামি ॥ ॐ নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥


প্রত্যেকটি দীপ জ্বালিয়ে এভাবেই মন্ত্র পাঠ করে ফুল বেলপাতা অর্পন করুন। 



🟤 এরপর ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য হাতজোড়  করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করুন -

ॐ আবাহনং ন জানামি নৈব জানামি পূজনম ।

বিসৰ্জ্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব উমা মহেশ্বর ॥


আরাধনা সম্পূর্ণ হবার পর নীলষষ্ঠীর ব্রতকথা পাঠ করবেন। তারপর নীলকণ্ঠ স্তোত্রম পাঠ করবেন।

এখানে ক্লিক করে পাঠ করুন 👉নীলকণ্ঠ স্তব


এরপর মনের ইচ্ছা বলুন। তারপর শিব চরণামৃত ও প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস পরিহার করুন।  

রাত্রে সাবু, দুধ, দ‌ই, ফল আহার করুন (ভাত খাবেন না)।


☝️ বিশেষ দ্রষ্টব্য :

১. দিনে ঘুমোবেন না।

২. ভাত বা চালের কোনো খাবার খাবেন না।

৩. মাদক দ্রব্য সেবন করবেন না।

৪. আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করবেন না ।

৫. মৈথুন ও বীর্যপাত করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ।

৬. কাউকে অপমান, বিনা কারণে হেনস্থা, আঘাত করা, ঠকানো, অথবা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি পাপ কর্ম করবেন না। পশুদের হত্যা অথবা তাদের আঘাত করা করবেন না।এইগুলো করলে ব্রতের পুণ্যফল নষ্ট হবে।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত