পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

পরমশিব এবং কালসংকর্ষণী কালিকা তত্ত্ব এবং শিব সম্পর্কিত যাবতীয় অপপ্রচারের জবাব -

ছবি
  ॐ গুরবে নমঃ | ॐ পরভৈরবায় নমঃ‌ | ॐ‌ নমঃ শিবায় | পোস্টটির উদ্দ্যেশ্য -  আজকাল বহু শাক্ত মতালম্বী মানুষকে দেখছি যে তারা প্রচার করছেন - কালসংকর্ষণী কালিকা হচ্ছেন পরমশিব পরাভৈরবেরও উর্ধ্বেকার তত্ত্ব। পরমশিব যদি 37 নং তত্ত্ব হন তাহলে কালসংকর্ষণী হচ্ছেন নাকি 38 নং তত্ত্ব। সুতরাং এসব গুজব বহুদিন ধরে সহ্য করার পরে আজ আবার কলম তুলে নিতে বাধ্য হলাম। ধন্যবাদ জানাই ISSGT কে আমার এই প্রতিবেদনকে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য। সুতরাং আলোচনা একদম গোড়া থেকে শুরু করা যাক। সুতরাং সকলে পুরো প্রবন্ধটি পড়বেন মন দিয়ে। কাশ্মীর শৈব ধারা নিয়ে সম্যক ধারণা- কালসংকর্ষণী সম্পর্কে জানার জন্য আমাদেরকে আগে জানতে হবে কাশ্মীর শৈব দর্শনের ধারা গুলির ব্যাপারে। কাশ্মীর শৈব ধারা  এর অন্তর্গত বিভিন্ন উপধারা গুলি হলো - 1. কুল/ কৌল ধারা -    ইহা হল ভৈরব আম্নায় (শিবের 'যোগিনী বক্ত্র' কর্তৃক প্রকটিত কৌল মার্গিক ভৈরব স্রোত এর শৈব তন্ত্র , এদের অনুত্তর আম্নায় বলে), পূর্বাম্নায় , পশ্চিমাম্নায় , উত্তর আম্নায় , দক্ষিণাম্নায় , ঊর্ধ্বাম্নায় , পাতাল/রহস্যাম্নায় (অধঃআম্নায়) শৈব তন্ত্র ভিত্তিক শৈব কৌল পরম্পরা। আচার্

কুলকুণ্ডলিনী ও ষোড়শীকালিকা (শাস্ত্র-সম্মত সঠিক ব্যাখ্যা সহ)

ছবি
  " ব্রহ্মা বিষ্ণুশ্চ রুদ্রশ্চ ঈশ্বরশ্চ সদাশিবঃ | এতে মঞ্চখুরাং প্রোক্তাঃ ফলকস্তু পরঃশিবঃ || তস্যোপরি মহাকাল ভুবনেশো বিরাজতে | যেন সার্দ্ধং মহাদেবী কালিকা রম্যতে সদা || " (বিমলানন্দময়ী কালিকা ধ্যান/বিমলানন্দ কালিকা আশ্রম, বেলুড়) অনুবাদ :- সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা শ্রীহরি বিষ্ণু, প্রলয়কর্তা রুদ্র, তিরোভাব কর্তা ঈশ্বর এবং অনুগ্রহ কর্তা সদাশিব এই পাঁচজন মঞ্চের পায়া স্বরূপ। তার উপর মঞ্চরূপে পরশিব শায়িত আছেন । তারপর সেই পরশিবের নাভি থেকে উদ্ভূত সহস্রদল সহস্রার পদ্মের উপর মহাকাল(পরমেশ্বর পরমশিব স্বরূপ)আর তার বাম ক্রোড়ে নিজেরই অর্ধাঙ্গিনী মহাদেবী কালিকা উপবেশন করেন ও তাঁর সাথে সদা রমন করেন। অন্তর্নিহিত অর্থ ও ব্যাখ্যা - (যোগশাস্ত্র এবং শৈব ও শাক্ত শাস্ত্র মতে) --- 1 . সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা র(শিশুরূপি) অবস্থান- মূলাধার চক্রে (শক্তি- ডাকিনী এবং বাণী ) - চতুর্দল পদ্ম ( বং , শং , ষং , সং )। == ইহা ভূমি তত্ত্বকে প্রকাশ করেন। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর অ-কার মাত্রা স্বরূপ। ইনি সাক্ষাৎ সদ্যোজাত (সদাশিবের পশ্চিম বক্ত্র)।  2. পালনকর্তা বিষ্ণুর অবস্থান - স্বাধিষ্ঠান চক্রে

ত্রিংশিকা এবং কাশ্মীর ত্রিক শৈবধারা -

ছবি
সমগ্র ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে - ষড়দর্শনের বাইরে আরও একটি উচ্চমানের তন্ত্রভিত্তিক অদ্বৈত দর্শন কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে মাথা চারা দিয়ে ওঠে, এই দর্শনের নাম - ত্রিক শৈব দর্শন । এই দর্শনের অপর নাম স্পন্দদর্শন বা প্রত্যভিজ্ঞা দর্শন। এই দর্শন ছিল - অদ্বৈতমার্গী। তাই এই দর্শনকে ঈশ্বরাদ্বয়বাদ বা শিবাদ্বয়বাদ ও বলা হয়, কেননা শিবশক্তির সামরস্যপূর্ণ প্রকাশ ও বিমর্ষময় অবস্থার সমন্বয়ে সর্বোচ্চ সত্ত্বা পরমশিবই (পরমব্রহ্ম) এই দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য।  🔘 এই দর্শনের অন্তর্ভুক্ত শাস্ত্র ধারাগুলি হল -  👉আগমধারা (শৈব আগম ভিত্তিক),  👉স্পন্দশাস্ত্র ধারা   ও 👉 প্রত্যভিজ্ঞা   শাস্ত্র ধারা।  উপরিউক্ত তিন প্রকারের শাস্ত্র ধারার ভিত্তিতে কাশ্মীর ত্রিক শৈব পরম্পরা মূল চার ভাগে (মতান্তরে তিন ভাগে - স্পন্দ ও প্রত্যভিজ্ঞা- কে একই ধরে) বিভক্ত, যথা - 👉ক্রম  পরম্পরা ( আগম শাস্ত্র ভিত্তিক মূলত),   👉কুল পরম্পরা ( আগম শাস্ত্র ভিত্তিক),  👉স্পন্দ ( স্পন্দ শাস্ত্র ও আগম ভিত্তিক)  ও 👉 প্রত্যভিজ্ঞা ( প্রত্যভিজ্ঞা শাস্ত্র ও আগম ভিত্তিক)   কাশ্মীর শৈবধারার সাধন ক্রমের তিনটি পর্

ব্রাহ্মণ গ্রন্থ এবং অর্থবাদ (গুণবাদ, অনুবাদ, ভূতার্থবাদ) সম্পর্কিত আলোচনা -

ছবি
  ব্রাহ্মণভাগের পরিচয় প্রসঙ্গে মহর্ষি আপস্তম্ব বলেছেন -  " মন্ত্রব্রাহ্মণয়োর্বেদনামধেযম্ " (আপস্তম্ব যজ্ঞপরিভাষাসূত্র - ১.৩৩) অর্থ - মন্ত্র ও ব্রাহ্মণের নাম বেদ।  পূর্বে বেদের স্বরূপ বিষয়েও মতভেদ ছিল।‌ আপস্তম্ব যজ্ঞপরিভাষা সূত্রের হরদত্তাচার্যকৃত বৃত্তি থেকে জানা যায় -  " কৈশ্চিন্মন্ত্রাণামেব বেদত্বম আখ্যাতম্ |  কৈশ্চিৎ কল্পসূত্রাণামপি | উভযনিরাসার্থমযমারম্ভঃ || " (হরদত্তাচার্যকৃত বৃত্তি/১/৩৩) অর্থ - কোনো কোনো ব্যক্তি কেবল মন্ত্রভাগকেই বেদ বলেছেন, কেউ কেউ আবার শ্রৌতসূত্র-কেও বেদ বলে স্বীকার করেছেন। এই উভয় মতের খণ্ডনের জন্য আপস্তম্ব এই সূত্র প্রণয়ন করেছেন।   এখন প্রশ্ন হল 'ব্রাহ্মণ' কাকে বলে?  এর উত্তরে মহর্ষি আপস্তম্ব বলছেন -   " কর্মচোদনা ব্রাহ্মণানি ”   (আপস্তম্ব যজ্ঞপরিভাষাসূত্র - ১.৩৪) অর্থ - যে বাক্যগুলি যজ্ঞাদিকর্মের বিধি সেইগুলি ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বৈদিক কর্মকাণ্ডেরই বোধক। সুতরাং, ব্রাহ্মণ অংশ বিধিমূলক বৈদিক ক্রিয়াকর্মের নির্দেশক।  সুতরাং ব্রাহ্মণ শাস্ত্র যে বেদ এর অন্তর্গত এবং ইহাও যে শ্রুতি অর্থাৎ অপৌরষেয় , তার স্বপক্ষে শব্দ

লয়যোগ প্রসঙ্গে শ্রুতি কি বলছে?

ছবি
  " যো বেদাদৌ স্বরঃ প্রোক্তো বেদান্তে চ প্রতিষ্ঠিতঃ | তস্য প্রকৃতিলীনস্য যঃ‌ পরঃ স মহেশ্বরঃ || " (কৃষ্ণ যজুর্বেদ /‌তৈত্তিরীয় আরণ্যক পরিশিষ্ট ভাগ/ ১০ম প্রপাঠক/ ১২ ‌নং‌ অনুবাক/ ১৪ নং মন্ত্র) সায়ণভাষ্য -  " যঃ স্বরো যো বর্ণঃ প্রণবরুপোঽস্তি [‌ স চ স্বরঃ প্রণবো বেদান্তে চোপনিষদ্যোমিত্যেতদক্ষরমিদং সর্বমিত্যাদিকাযাং প্রতিষ্ঠিতঃ প্রতিপাদিতঃ,] স চ স্বরঃ প্রণবো ধ্যানকালেঽব্যাকৃতে জগৎকারণে লীনা ভবতি | অকারোকারমকারেষু বিরাড্ঢিরণ্যগর্ভাব্যাকৃতানি ধ্যাত্বা বিরাড্রূপমকারমুকারে প্রবিলাপ্য তং চোকারং হিরণ্যগর্ভরূপং মূলপ্রকৃতিরুপে মকারে প্রবিলাপযেৎ | তস্য চ প্রকৃতৌ লীনস্য প্রণবস্য যঃ পরশ্চতুর্থমাত্রারুপেন নাদে ধ্যাতব্য উৎকৃষ্টোঽস্তি সোঽযং মহেশ্বরো বিজ্ঞেযঃ | " সায়ণ ভাষ্যের অনুবাদ সহ মর্মার্থ -    পুরাতন বেদ ভাষ্যকার সায়ণ আচার্যের মতে, সমগ্র বেদে (বর্ণিত) যে স্বর, যে বর্ণ (আদিমতম) (সাক্ষাৎ) প্রণব রূপে বিদ্যমান, সেই স্বর বেদান্ত তথা উপনিষদে " ওমিতি একাক্ষরং ইদং সর্বং " ইত্যাদি (শ্রুতি বাক্য) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, প্রতিপাদিত। ধ্যান যোগের সময় সেই স্বর জগতের কারণ অব্যক্ত প

শৈব তন্ত্র গুলির উৎপত্তি সংক্রান্ত মত গুলির মধ্যে মীমাংসা এবং আম্নায় ভেদে সেগুলির বর্গীকরণ -

ছবি
  সদাশিব পারমার্থিক অবস্থায় পঞ্চ মস্তক বিশিষ্ট হলেও আসলেই তিনি সপ্ত মস্তক বিশিষ্ট। পাঁচটি মস্তক ব্যক্ত, পঞ্চভূতাত্মক কিন্তু অপর দুটি মস্তক অব্যক্ত ও গুপ্ত। তন্ত্রালোক, কামিকাগম ইত্যাদি তন্ত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে সদাশিবের পাঁচটি মস্তকের প্রত্যেকেটি আবার আরো সূক্ষ্ম পাঁচটি মস্তক (উপমস্তক) যুক্ত, এই উপমস্তক গুলিরও নাম এবং কোন দিকে কোন মস্তকের অবস্থান, তা সদাশিবের প্রধান পাঁচ মস্তকের মতোই, সমতূল্য। সুতরাং, ব্যবহারিক পর্যায়ে সদাশিব (5x5) = 25 টি মস্তক বিশিষ্ট, এই স্বরূপ শৈব তন্ত্র মতে মহাসদাশিব নামে পরিচিত। 25 টি মুখ মহেশ্বরের 25 টি লীলামূর্তিরই প্রতীক, যার বিস্তারিত উল্লেখ আগমে পাওয়া যায় । এবার আসি মূল রহস্যের কথায়।  ব্যবহারিক পর্যায়ে, সদাশিব তাঁর - মূল পশ্চিম মুখ (সদ্যোজাত) থেকে প্রকট করেন -- পশ্চিমাম্নায় তন্ত্র স্রোত - যার অন্তর্গত - ভূত তন্ত্র এবং কুব্জিকা মতের তন্ত্র সমূহ। এদেরকে মাতৃতন্ত্রও বলা হয়। এগুলো উগ্র বামাচারী শৈব তন্ত্র। কাপালিকরা এইসব তন্ত্র মেনে চলত। কাশ্মীর শৈব ধারার কুল ঘরানার কুব্জিকা কুল এই কুব্জিকামত তন্ত্রের অনুসারী। তান্ত্রিক বৌদ্ধরাও এই সব

পুরাণ - বাল্যবিবাহের আঁতুড় ঘর বলে দাবি করা আর্যসমাজীদের আস্ফালনের নিরসন

ছবি
বর্তমান কলিযুগে কলির চর দ্বারা ধর্মের অবনতি ঘটতে থাকা ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হতে দেখতে পাচ্ছি আমরা সকলেই। অসনাতনীরা সনাতনী হবার রূপ ধারণ করে সনাতন ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পন্ন শাস্ত্র সমূহ কে নিন্দা করে চলেছে। পুরান শাস্ত্রগুলিকে কাল্পনিক অবৈদিক অবৈজ্ঞানিক অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরার জন্য আর্যসমাজ নামক অসনাতনী ম্লেচ্ছরা ছলচাতুরির আশ্রয়ে বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার করে চলেছে। এরা পুরান শাস্ত্রের মধ্যে থেকে দু একটি শ্লোক তুলে নিয়ে সেটিকে বিকৃত দৃষ্টিকোণ দ্বারা বিশ্লেষণ করে তারপর নিজেরাই সিদ্ধান্ত দেয় যে পুরাণশাস্ত্র হলো বিকৃত এবং এগুলি সনাতন ধর্মের কোন শাস্ত্রই নয়। সাধারণ মানুষের কাছে এইসব পুরাণের শ্লোকের খণ্ডিতাংশ গুলির থেকে প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন করলে সাধারণ সনাতনী ব্যক্তি এগুলির বিশ্লেষণ করতে পারেনা এমনকি তারা এসব দেখে নিজেরাই দিশেহারা হয়ে পড়ে তখন এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আর্য সমাজী ম্লেচ্ছরা তাদের অর্থাৎ ভ্রমিত হওয়া সনাতনী ব্যক্তিদের আর্য সমাজী বানিয়ে নিজেদের দলে সামিল করে নিজেদের দল ভারী করে ।   পুরান শাস্ত্রকে নিন্দা করার পিছনে মূল কারণ হলো মূর্তি পূজা বন্ধ করানো, ঈশ্বরের সাকার

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত