কুলকুণ্ডলিনী ও ষোড়শীকালিকা (শাস্ত্র-সম্মত সঠিক ব্যাখ্যা সহ)

 


" ব্রহ্মা বিষ্ণুশ্চ রুদ্রশ্চ ঈশ্বরশ্চ সদাশিবঃ |

এতে মঞ্চখুরাং প্রোক্তাঃ ফলকস্তু পরঃশিবঃ ||

তস্যোপরি মহাকাল ভুবনেশো বিরাজতে |

যেন সার্দ্ধং মহাদেবী কালিকা রম্যতে সদা || "

(বিমলানন্দময়ী কালিকা ধ্যান/বিমলানন্দ কালিকা আশ্রম, বেলুড়)

অনুবাদ:- সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা শ্রীহরি বিষ্ণু, প্রলয়কর্তা রুদ্র, তিরোভাব কর্তা ঈশ্বর এবং অনুগ্রহ কর্তা সদাশিব এই পাঁচজন মঞ্চের পায়া স্বরূপ। তার উপর মঞ্চরূপে পরশিব শায়িত আছেন । তারপর সেই পরশিবের নাভি থেকে উদ্ভূত সহস্রদল সহস্রার পদ্মের উপর মহাকাল(পরমেশ্বর পরমশিব স্বরূপ)আর তার বাম ক্রোড়ে নিজেরই অর্ধাঙ্গিনী মহাদেবী কালিকা উপবেশন করেন ও তাঁর সাথে সদা রমন করেন।


অন্তর্নিহিত অর্থ ও ব্যাখ্যা - (যোগশাস্ত্র এবং শৈব ও শাক্ত শাস্ত্র মতে) ---


1. সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার(শিশুরূপি) অবস্থান- মূলাধার চক্রে (শক্তি-ডাকিনী এবং বাণী ) - চতুর্দল পদ্ম (বং, শং, ষং, সং)। == ইহা ভূমি তত্ত্বকে প্রকাশ করেন। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর অ-কার মাত্রা স্বরূপ। ইনি সাক্ষাৎ সদ্যোজাত (সদাশিবের পশ্চিম বক্ত্র)। 


2. পালনকর্তা বিষ্ণুর অবস্থান - স্বাধিষ্ঠান চক্রে (শক্তি রাকিনী ও মহালক্ষ্মী) - ষষ্ঠদল পদ্ম (বং, ভং, মং, যং, রং, লং) । == ইহা জলতত্ত্বকে প্রকাশ করেন। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর -কার মাত্রা স্বরূপ। ইনি সাক্ষাৎ বামদেব (উত্তর মুখ) । 


3. লয়কর্তা রুদ্রের অবস্থান- মনিপুর চক্রে (শক্তি- লাকিনী ও ভদ্রকালী) - দশদল পদ্ম (ডং, ঢং, ণং, তং, থং, দং, ধং, নং, পং, ফং )। == ইনি অগ্নি তত্ত্বকে প্রকাশ করেন। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর -কার মাত্রা স্বরূপ। ইনি সাক্ষাৎ অঘোর (দক্ষিণমুখ) । 


4. তিরোভাব বা নিগ্রহ কর্তা ঈশ্বরের অবস্থান-অনাহত চক্রে (শক্তি - কাকিনী ও ভুবনেশ্বরী ) । দ্বাদশদল পদ্ম (কং, খং, গং, ঘং, ঙং, চং, ছং, জং, ঝং, ঞং, টং, ঠং )। == ইনি বায়ুতত্ত্বকে প্রকাশ করেন। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর অর্ধমাত্রা বিন্দু স্বরূপ। ইনি সাক্ষাৎ তৎপুরুষ (পূর্বমুখ) 


5. অনুগ্রহকর্তা সদাশিবের অবস্থান - বিশুদ্ধ চক্রে (শক্তি- শাকিনী) । - ষোড়শদল পদ্ম (অং, আং, ইং, ঈং, উং, ঊং, ঋং, ঋ্ঋং, ৯ং, ৯৯ং, এং, ঐং, ওং, ঔং, অং, অঃ)। == ইনি আকাশ তত্ত্বকে প্রকাশ করেন। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর অর্ধমাত্রা নাদ স্বরূপ। সাক্ষাৎ ঈশান (ঊর্ধ্বমুখ) । এই সদাশিবকে মনোন্মন বলে, এনার শক্তিকে মনোন্মনী বা ঈশানীও বলে।


6. আজ্ঞাচক্রে থাকছে ইতর/শুক্ল নামক মহাশিবলিঙ্গ । দ্বিদল পদ্ম (হং, ক্ষং)। (শক্তি হাকিনী )। এই ইতর শিবলিঙ্গেই পরশিবের বাস, যিনি মঞ্চরূপে শায়িত রয়েছেন । যোগশাস্ত্র এবং নাথ শৈবদের সিদ্ধ সিদ্ধান্ত দর্শন মতে, এই ইতর বা শুক্ল শিবলিঙ্গের মধ্যে অর্ধনারীশ্বর স্থিত। আজ্ঞা চক্রের দুই দলের মধ্যবর্তী স্থানে ওঙ্কার কে পেঁচিয়ে এই ইতরাখ্য লিঙ্গ উপরের দিকে উঠে গিয়েছে।

তন্ত্রান্তরে পরশিবের শক্তি সিদ্ধকালিকা। এই পরশিব সাক্ষাৎ সূক্ষ চিত্তের প্রতীক। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর অব্যক্ত অঙ্গ কলা তত্ত্বকে বোঝান। ইনি শিবের অব্যক্ত ষষ্ঠমুখ নীলকণ্ঠকে বোঝান। ইনি পঞ্চকৃত্যে নিপুণ। এইঅব্যক্ত ষষ্ঠ মুখকেই পাতাল বক্ত্র বা গুপ্ত অধোমুখ বা রহস্য মুখ বলা হয়েছে শাস্ত্রে, যা কুমার কার্তিকের ষষ্ঠতম মুখের প্রকাশক। ইনি পঞ্চকৃত্যকারী। কাশ্মীর ত্রিক শৈব মতে, আজ্ঞা চক্রে শায়িত শিব তত্ত্বের নাম সদাশিব বা সাদাখ্য তত্ত্ব, তাঁর নাভি থেকে ত্রিংশিকার তিনটি ফলা বেড়িয়েছে।


7. সর্বশেষে সহস্রদল সহস্রার পদ্মে শূণ্যরূপি পরমেশ্বর নির্গুণ নিরাকার পরমশিবের অবস্থান -সহস্রারের সহস্রদল পদ্মে। নিরালম্বপুরীর উপরে ব্রহ্মরন্ধ্রে ঊর্ধ্বমুখ দ্বাদশদল পদ্মের উপর অধঃমুখ সহস্রদল পদ্ম বর্তমান। তার কর্ণিকায় সুধাসাগরের মধ্যাভাগে অবস্থিত মণিদ্বীপ । তাঁর উপরে নাদ ও বিন্দু অবস্থিত। তারও উপরে হংসপীঠ। এই হংসপীঠের উপরে কলাতীত, নিষ্কল পরমব্রহ্ম পরমহংস পরমশিবের বাস। এখানেই শিবের সপ্তম মুখ (তাঁর নাম হল চৈতন্য )অব্যক্ত। ইনি প্রণব ওঙ্কার এর অব্যক্ত সপ্তম অঙ্গ কলাতীত তত্ত্বকে বোঝান। কাশ্মীর শৈব তন্ত্র মতে এই মুখেরই নাম পিচু বা যোগিনী বা ভৈরব মুখ। পরমশিব হল নির্গুণ ব্রহ্ম। তিনি না স্ত্রী না পুরুষ না নপুংসক। তিনি নিরাকার, জন্ম-মৃত্যুরহিত , কল্পনাতীত, নির্বিকল্প। তিনি অব্যক্ত। তাঁর সম্মন্ধে জানা যায় না। ধ্যাঁন দ্বারাও তাঁকে উপলব্ধি করা যায় না। তিনি প্রণবের কলাতীত অঙ্গকে প্রকাশ করছেন। সহস্রারকেই বলে পরব্যোম বা পরাকাশ। 


🔘 পরমশিবের ব্যাপারে শাস্ত্র বলছে -

" ব্রহ্মণঃ পরমশিবস্য সর্বাধিক্যম্ উপদিশ্য অক্ষরশব্দবাচ্যত্ব | ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্মেতি শ্রুত্যংতরেপি প্রণবস্য ব্রহ্মাত্মকত্ব ।পুরুষোহক্ষর উচ্যতে |   

(ব্রহ্মসূত্র/ শ্রীপতি পণ্ডিতারাধ্যের শ্রীকরভাষ্যে/ ১/৩/১০) 

অর্থ- ব্রহ্ম পরম শিবের সর্বব্যাপকতা বাচিত হয়েছে 'অক্ষর' শব্দের দ্বারা । ওঙ্কারই একাক্ষর প্রণব যা সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম ( পরশিব ) এরই বাচক । 'অক্ষর' অর্থাৎ অক্ষর পুরুষ ( পূর্ণ ) অর্থাৎ ক্ষরণরহিত । সেই অক্ষর পদ বাচ্য পরমেশ্বর সাক্ষাৎ শিব।


" অথ পরশিবভক্ত্যা সচ্চিদানন্দপূর্ণ পরশিবমনুভূয় ত্বাত্মরুপেন সুতঃ " 

( স্কন্দ পুরাণ/ সূত সংহিতা/ যজ্ঞ বৈভব খণ্ড/ সূত গীতা)

 অর্থ - ধ্যান দ্বারা নিজ আত্মস্বরূপে সেই সচ্চিদানন্দ (ব্রহ্ম) পরমশিবকেই অনুভব করা যায় ।


 " পরমাকাশ মধ্যে বিভাত দেব শিব এব কেবলঃ" ..........তস্মাদনাদিমধ্যান্তং বস্তেকং পরমং শিবং

(কূর্ম মহাপুরাণ/ উপরিভাগ/ ঈশ্বর গীতা) 

অর্থ - পরমাকাশে সেই একমাত্র আাদি অন্তহীন পরমশিবই বিহার করেন ।

পঞ্চশিব এবং ষট্-শিবের ব্যাপারে শাস্ত্র বলছে -

ঈশ্বর উবাচ্ -

" অকারস্তু মহদু বীজং রজঃ স্রষ্টা চতুর্মুখঃ উকারঃ প্রকৃতির্যোনিঃ সত্ত্বং পালয়িতা হরিঃ || ২১ || 

মকার পুরুষো বীজী নমঃ সংহারকো হরঃ | 

বিন্দুর্মহেশ্বরো দেবস্তিরোভাব উদাহৃতঃ || ২২ || 

নাদঃ সদাশিবঃ প্রোক্তঃ সর্বানুগ্রহকারকঃ 

নাদমূৰ্দ্ধানি সচিন্ত্যঃ পরাৎপরতরঃ শিবঃ || ২৩ ||

স সর্বজ্ঞঃ সর্বকৰ্ত্তা সর্বেশো নির্মলোহব্যয়ঃ | 

অনির্দেশ্যঃ পরব্রহ্ম সাক্ষাৎ সদসতঃ পরঃ || ২৪ ||"

(শিবমহাপুরাণ / কৈলাস সংহিতা / ৩ নং অধ্যায়)

অর্থ -  ঈশ্বর দেবীকে বললেন - প্রণব ওঙ্কারের অকার হল সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা , উকার হল পালনকর্তা , যোনিরূপা প্রকৃতি তত্ত্ব শ্রীবিষ্ণু , মকার হল সংহারকর্তা হর ( রুদ্র ) , বিন্দু হল তিরোভাব কর্তা মহেশ্বর ( বা ঈশ্বর ) এবং নাদ হল সাক্ষাৎ অনুগ্রহ কর্তা সদাশিব । এইভাবেই পরাৎপর শিবকে ( ওঙ্কার ) চিন্তা করতে হবে । তিনি সর্বজ্ঞ , সর্বকর্তা , সর্বেশ্বর , নির্মল , অব্যয় , অনির্দেশ্য পরমব্রহ্ম তিনি সদ্ - অসদেরও অতীত ।


আরো শাস্ত্র প্রমাণে আসবো এবারে -

ভৈরব উবাচ্ - 

" অকারশ্চ উকারশ্চ মকারশ্চ তৃতীয়কঃ | 

বর্ণত্রয়মিদং প্রোক্তং ব্রহ্মাদ্যা দেবতাস্ত্ৰয়ঃ || ২৩ ||

 বিন্দুনাদসমাযোগাদীশ্বরশ্চ সদাশিবঃ ২৪ || 

[ স্বচ্ছন্দ তন্ত্র ( কাশ্মীর শৈব তন্ত্র ) / ষঠ পটল ] 

অর্থ - অ কার -- স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা অর্থাৎ সদ্যোজাত মস্তক। উ কার -- স্বয়ং স্থিতিকর্তা বিষ্ণু -- অর্থাৎ বামদেব মস্তক। ম কার -- স্বয়ং লয়কর্তা রুদ্র-- অর্থাৎ অঘোর মস্তক।বিন্দু -- তিরোভাব কর্তা ঈশ্বর -- অর্থাৎ তৎপুরুষ মস্তক। নাদ স্বয়ং -- অনুগ্রহ কর্তা সদাশিব -- ঈশান মস্তক (মনোন্মন)।


সদাশিব উবাচ্-

" ব্রহ্মা বিষ্ণু রুদ্রশ্চ ঈশ্বরশ্চ সদাশিবঃ |

ততঃ পরশিবশ্চৈব্ ষট শিবাঃ পরিকীর্ত্তিতাঃ || "        

(রেফারেন্স - শাক্তানন্দ-তরঙ্গিণী) 

অর্থ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, ঈশ্বর, সদাশিব, পরশিব এই ছয়জন শিব বিদ্যমান রয়েছেন (আমাদের ছয় চক্রে)।


💥 শঙ্কা - আলোচ্য ষোড়শী কালিকা বিগ্রহের‌ ধ্যানে পরমশিবকে কেন মহাকাল বলা হল ? তন্ত্র মতে তো মহাকাল একজন শিবগণ? এই মহাকাল কি শিবগণ মহাকাল নাকি ইনিই সেই শব্দব্রহ্ম পরমেশ্বর সদাশিব? এই মহাকালের কি আদৌ কোনো জন্ম আছে নাকি ইনিই সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম ?


💥 শঙ্কা নিবারণ/ মীমাংসা -

পরমশিব সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম, পরমাত্মা, যিনি ব্রহ্মরন্ধ্রে সহস্রার পদ্মের উপরে অবস্থিত হংস পীঠের উর্ধ্বে অবস্থান করেন। তিনি নির্গুণ, নিরাকার, নিষ্কল। ইনি অকর্তা, ইনি কোনো কাজ করেন না। এনাকে নির্গুণ সদাশিব বললেও ভুল হবে না। তত্ত্বাতীত নির্গুণ পরমশিব বা নির্গুণ সদাশিব যখন সহস্রার পদ্মে পরাশক্তি সংযুক্ত হচ্ছেন, তখন তিনি সগুণ এবং নির্গুণ এর মধ্যবর্তী একটি পর্যায়ে আসছেন। একে সকল - নিষ্কল এর মধ্যবর্তী শব্দব্রহ্মময় সদাশিব অবস্থা বলা হচ্ছে। 👉 যেহেতু কালিকুলে পরাশক্তি উমা সাক্ষাৎ কালি নামে অভিহিতা, তাই এই শব্দব্রহ্ম সদাশিবকেও সেই অর্থে মহাকাল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। 👉 অর্থাৎ এক্ষেত্রে মহাকাল শব্দ সদাশিব পদবাচ্য।

তিনি নির্গুণ ও সগুণ উভয়ই। এই পরমেশ্বরই তাঁর শক্তির সাথে সহস্রারে ক্রীড়া করে থাকেন, যাকে যোগের ভাষায় বলা হয় মহামৈথুন। এর থেকেই সৃষ্টি হয় কামকলার (নাদ ও বিন্দুর যামল)। 


এর সপক্ষে শাস্ত্র প্রমাণ আমরা দেখে নেব - 

"ধ্যায়েৎ সদাশিবং শুদ্ধস্ফটিকসন্নিতম্ শব্দব্রহ্মময়ং"

(রেফারেন্স - শাক্তানন্দ- তরঙ্গিণী) 


 "তত্ত্বাতীতং মহাদেব প্রসাদাত্কথযেশ্বর |

সর্বভাবপদাতীতং জ্ঞানরূপং নিরঞ্জনম্ || ৭ ||

(যোগশিখা ঊপনিষদ)

অর্থ- সহস্রারের সেই পরমশিবরূপি মহাদেব তত্ত্বাতীত, ভাবাতীত, পদাতীত, জ্ঞানসাগরস্বরূপ এবং নিরঞ্জন ।


সদাশিব উবাচ্‌- 

" সহস্রারং মহাপদ্মং নাদ-বিন্দু সমন্বিতং |

শূণ্যরুপঃ শিবঃ সাক্ষাদ্ বৃত্তং পরমকুণ্ডলী || "

(রেফারেন্স - শাক্তানন্দতরঙ্গিনী) 


মহাকাল উবাচ্- 

" মূলাধারে কুণ্ডলিনী সহস্রারে সদাশিব "

(মহাকাল সংহিতা/কামকলাকালী খণ্ড/ষষ্ঠপটল/ ১ নং শ্লোক) 


 ঈশ্বর উবাচ্ -

" পরমাত্মা শিবশ্চৈব ব্রহ্মপদ্মস্থিতঃ প্রভুঃ | 

কুণ্ডলী শক্তিরুপা চ পরমাত্মা শিবঃ স্বয়ম্ || " 

( যোনিমুদ্রা লক্ষনম্ , ১৪ নং অধ্যায় , প্রাচ্য প্রকাশনীকৃত যোনি তন্ত্র ) 


শ্রীগোরক্ষ উবাচ্‌ - 

" षोडस नाड़ी चंद्र प्रकास्या द्वादस नाड़ी भांनं | सहस्र नाड़ी प्रांण का मेला , जहां असंष कला सिव थानं || ९ ६ || "

(রেফারেন্স - সবদী , গোরক্ষ - বাণী) 

অর্থ - ষোড়শকলা যুক্ত ইড়া নাড়ী চন্দ্ৰজ্যোতির ন্যায় দ্যুতি বিশিষ্ট ( কেননা চন্দ্ৰও ষোলো কলা যুক্ত ) , দ্বাদশ কলা যুক্ত পিঙ্গলা নাড়ী সূর্যের ন্যায় দীপ্তমান ( সূর্যও দ্বাদশ কলা যুক্ত এবং সহস্রনাড়ী বা সুষুম্না বা সরস্বতীতে প্রাণের বাসস্থান , এই সুষুম্না নাড়ী যে সহস্রারে মিলিত হয়েছে সেখানে অসংখ্য কলাযুক্ত ( বা কলাতীত ) পরমেশ্বর শিব বাস করেন ।


শ্রীসদাশিব উবাচ্-


" সদাশিবো মহদেবো যত্রাস্তে পরমেশ্বরী তত্র গত্বা মহাদেবী কুন্ডলীনি |

মুখারবিন্দগন্ধেন মোদিতং পরমং শিবং |

প্রবোধ্য পরমেশানি! তত্রোপরি বসেৎ প্রিয়ে! ||

শিবস্য মুখপদ্মং হি চুচুম্বে কুন্ডলী শিবে |

সদাশিবেন দেবেশি! ক্ষনমাত্রং রমেৎ প্রিয়ে ||"

(রেফারেন্স - শাক্তানন্দ- তরঙ্গিণী) 

অর্থ- কুণ্ডলিনী শক্তি সেই সহস্রারে গমন করে পরমশিবকে জাগত করে সেই পরমশিবের সাকার প্রকাশ শব্দব্রহ্মময় সদাশিবের ক্রোড়ে বসে রমন করেন। ইনিই দেবাদিদেব মহাদেব।আ

আর কুণ্ডলিনী পরাশক্তিই হলেন আদ্যাশক্তি , সাক্ষাৎ কালিকা।


ঈশ্বর উবাচ্ - 

" পরবিন্দুঃ পরাশক্তিং মহামায়া চ কুণ্ডলী || ১১ || ইচ্ছাজ্ঞান ক্রিয়া চৈব শিবে স্থিত্বা সদৈব বৈ || ১২ ||শিবস্য স্বেচ্ছারূপার্থং জ্ঞানেচ্ছা শক্তিকাদিমান্ | স্বস্বকার্যং প্রকুৰ্বন্তি সবানুগ্রহকারণাৎ || ১৩ ||

[চিন্ত্যাগম ( শৈবাগম ) / ৩৮ নং পটল] 

অর্থ -  শিব ও শক্তি আসলেই অভিন্ন কেননা শক্তির অধিষ্ঠান শিবের হৃদয়েই । নির্গুণ শিব নিজের ইচ্ছাতেই সাকার বিগ্রহ ধারণ করেন , এই ইচ্ছাই হল পরবিন্দু বা পরাশক্তি বা মহামায়া বা কুণ্ডলিনী শক্তি । 

তিনিও  ব্রহ্মস্বরূপা। দ্বৈত অবস্থায় তাঁর অবস্থান মূলাধারের স্বয়ম্ভূ লিঙ্গের চারিপাশে আড়াই প্যাঁচে। তিনিই যখন ষটচক্র ভেদ পূর্বক সহস্রারের পরমশিবের কাছে পৌছায় এবং পরমশিব সক্রিয় হয়ে শব্দব্রহ্মময় মহাকা (আসলে পরমেশ্বর সদাশিব)রূপে প্রকটিত হন এবং সেই কুণ্ডলিনী মাতা মহাকালী রূপে সেই পরমশিবস্বরূপ মহাকালের বাম ক্রোড়ে উপবিষ্ট হন ও ক্রীড়া করেন । সেইশুরু হয় অদ্বৈত অবস্থার, সমাধিস্থ অবস্থার। 


তাই তো সদাশিব বলছেন -

শ্রীসদাশিব উবাচ্-

"মুখারবিন্দগন্ধেন মোদিতং পরমং শিবং | 

প্রবোধ্য পরমেশানি! তত্রোপরি বসেৎ প্রিয়ে! ||

শিবস্য মুখপদ্মং হি চুচুম্বে কুন্ডলী শিবে!

সদাশিবেন দেবেশি! ক্ষনমাত্রং রমেৎ প্রিয়ে ||"         

(রেফারেন্স - শাক্তানন্দ- তরঙ্গিণী) 

অর্থ- আদ্যাশক্তি কুলকুণ্ডলিনী যতক্ষন না পর্যন্ত মূলাধার থেকে ছয়টি চক্র ভেদ করে সহস্রারে পৌছাচ্ছেন ততক্ষন পরমশিব নিষ্ক্রিয় , নির্গুণ থাকছেন। তারপর সহস্রারে পরমশিবের সাথে কুণ্ডলিনী শক্তি কামোল্লাশ বিহারিণী হয়ে মিলিত হয়ে গেলে পরমশিব সক্রিয় হয়ে, মোদিত হয়ে পরমশিবরূপি মহাকাল প্রকট হচ্ছেন আর সেই কুলকুণ্ডলিনী শক্তিই মহাকালী রূপে সেই মহাকালের বাম ক্রোড়ে উপবিষ্ট হয়ে ক্ষনকাল ক্রীড়া করেন।

সদাশিব স্বরূপ, শব্দ ব্রহ্মময়এই পরমেশ্বর মহাকালকেই শক্তিসঙ্গম তন্ত্রের ছিন্নমস্তা খণ্ডের নবম পটলে বলা হয়েছে -

"ব্রহ্মানন্দ মহাকালঃ পূর্ণব্রহ্ম সনাতনম্"

এই ক্রীড়া হইতেই লাক্ষারস স্বরুপ অমৃতধারা বর্ষিত হয় যা ধারন করে সহস্রারস্থিত ষোড়শ_কলা। এই অমৃতধারাকে ষটশিবের প্রতি অর্পণ করে কুণ্ডলিনী পুনরায় 'সোঽহং' মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক পুনরায় মূলাধারে ফিরে আসে।।

উক্ত কালিকা বিগ্রহকে নির্বাণ_কালিকা বিগ্রহ বলে কেননা - কেননা সহস্রারে শিব-শক্তির মিলনের পর বর্ষিত অমৃত-সুধাধারা ধারন করে সহস্রারস্থিত ষোড়শ কলার অন্তর্গত নির্বাণ কলা এবং সেই নির্বাণ কলা হতে পরমনির্বাণ শক্তি প্রকাশ পায়, এরফলে সাধকের নির্বাণ লাভ হয় ও সমাধিস্থ অবস্থায় যায়। এই নির্বাণ শক্তিরই অধীশ্বর সেই পরমাত্মা পরমেশ্বর, বলছেন শাস্ত্রী হরিচরণ গঙ্গোপাধ্যায়। এই বিগ্রহকে অনেক সময় ষোড়শী কালী বলে কারন তাঁদের অবস্থান সহস্রারের ষোড়শী কলার উপরে।

পরাকুণ্ডলিনী থাকছে আমাদের সহস্রার পদ্মের ত্রিতয়লিঙ্গ/ পরমলিঙ্গকে জড়িয়ে । এই পরা কুণ্ডলিনীকেই তন্ত্রান্তরে বলা হয়েছে - ঊর্ধ্ব কুণ্ডলিনী বা সপ্তদশী কলা। মূলাধারস্থ প্রাণ কুণ্ডলিনীকে প্রথমে সেই পরাকুণ্ডলিনী এর সাথে মেলাতে হবে, তারপর সেই যুগ্ম কুণ্ডলিনীকে মেলাতে হবে পরমশিবের সাথে, তখনই পরমশিব শব্দব্রহ্ম ময় সাকার অবস্থা লাভ করে 


সদাশিব উবাচ্ -

 " সহস্রারং মহাপদ্মং নাদ-বিন্দু সমন্বিতং |

শূণ্যরুপঃ শিবঃ সাক্ষাদ্ বৃত্তং পরমকুণ্ডলী || "

 (রেফারেন্স - শাক্তানন্দ-তরঙ্গিণী)


অমতীতি অমা , অ - মা - ইতি , অবিদ্যমানং মা - মানং , নিষেধঃ নিত্যোদিব্যাং সংহারশ্চ যত্র সা ভগবতী অমা ইতি উত্যতে| হৃদয়স্থা তু যা শক্তি কৌলিকী কুলনায়িকা ....”

(কাশ্মীর শৈবাচার্য শ্রী অভিনবগুপ্ত বিরচিত 'পরাত্রিংশিকা বিবৃতি') 

অর্থ-  অমাকলাই (ঊর্ধ্বকুণ্ডলিনী সপ্তদশীকলা) সাক্ষাৎ ভগবতী পরাশক্তির বাচক। হৃদয়াস্থিতা (পরমেশ্বরের) সেই শক্তিই কৌলিকী, কুলনায়িকা নামে অভিহিত হন। 

বিসর্গস্যেইব বিশ্লেষ ইতি সপ্তদশীকলা | 

ক্বচিদষ্টাদশী সৈব পুনঃ প্রক্ষোভযোগতঃ || 

অনুত্তরস্যাকারস্য পরভৈরবরূপিণঃ | 

অকুলস্য পরা যেয়ং কৌলিকী শক্তিরুত্তমা || 

স এবায় বিসর্গস্তু তস্মাজ্জাতমিদং জগৎ |

(কাশ্মীর শৈবাচার্য ক্ষেমরাজকৃত টীকা /বিজ্ঞান ভৈরব তন্ত্র /৯১ নং শ্লোক ) 

অর্থ- পরমেশ্বরের এই বিসর্গ শক্তিই সাক্ষাৎ সপ্তদশীকলা । (শক্তিসঙ্গম তন্ত্র মতে সপ্তদশী কলা ঊর্ধ্বকুণ্ডলিনী হিসেবে পরিচিত।) ইহা সাধকের মনের ভাব ও যোগের দ্বারা অষ্টাদশীকলায় রূপান্তরিত হয় । অন্যদিকে 'অকার' সাক্ষাৎ অনুত্তর তত্ত্ব পরাভৈরবস্বরূপ অদ্বিতীয় ব্রহ্মস্বরূপ। অকুল (বা অকুলাতীত) আদিনাথের এই বিসর্গ শক্তিকেই পরাশক্তি ও কৌলিকি শক্তি বলা হয়ে থাকে, যার থেকে সমগ্র জগৎ জাত হয়। এই বিসর্গের দুই বিন্দুর বর্ণ সাদা ও লাল। এই বিসর্গ শক্তিই বিমর্শময়ী অহংভাব প্রকাশিকা, ইহাই পরমেশ্বরের বহিঃ উল্লাসিত শক্তি, ইহাই স্পন্দ , ইহাই হৃদয়। সপ্তদশী কলা স্বরূপা এই বিসর্গ শক্তিকেই আচার্য জয়রথ তাঁর তন্ত্রালোক- ভাষ্যে 'অব্যক্ত হকার - অর্ধকলা' বা 'হার্ধ কলা' বা 'বিমলকলা' হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন। 

অকার (বিন্দু /শিব /অকুল) + বিসর্গ (কুল /‌শক্তি) = পূর্ণ হকার । সুতরাং, বিসর্গ = অর্ধ হকার বা হকারার্ধ কলা । 


সর্বশেষে একটি কথাই বলার থাকে - 

" শিবাদিক্ষিতিপর্যন্ত বিশ্বংবযুরুদঞ্চযন‌ |

পঞ্চকৃত্যমহানাট্যরসিকঃ ক্রীড়তি প্রভুঃ || ২ ||"

(কাশ্মীর শৈব শাস্ত্র অনুত্তর পঞ্চাশিকা)

অর্থ - ৩৬ তত্ত্বের প্রথম তত্ত্ব শিব তত্ত্ব থেকে অন্তিমতম তত্ত্ব ভূমি তত্ত্ব, এই ৩৬ তত্ত্বময় বিশ্বচরাচর সেই পঞ্চকৃত্যকারী পরমেশ্বর এর ক্রীড়ার দরুন সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই জগৎ চরাচর নাটকের ন্যায় সেই পরমেশ্বর পরম প্রভু (শিব) এর মধ্যে চিত্রিত হয় মাত্র।


 নমঃ শিবায

 নমঃ শিবাযৈ


👉 লেখনীতে ও বিশ্লেষণে - RohitKumarChoudhury (ISSGT)


👉 প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 


[কেউ কপি করতে চাইলে পোস্টকর্তা ও পেজের নাম সহ পুরো লেখাটিই কপি করে পোস্ট করবেন, পোস্টকর্তার নাম কাটছাঁট করা চলবে না। ]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত