লয়যোগ প্রসঙ্গে শ্রুতি কি বলছে?

 


" যো বেদাদৌ স্বরঃ প্রোক্তো বেদান্তে চ প্রতিষ্ঠিতঃ |

তস্য প্রকৃতিলীনস্য যঃ‌ পরঃ স মহেশ্বরঃ || "

(কৃষ্ণ যজুর্বেদ /‌তৈত্তিরীয় আরণ্যক পরিশিষ্ট ভাগ/ ১০ম প্রপাঠক/ ১২ ‌নং‌ অনুবাক/ ১৪ নং মন্ত্র)


সায়ণভাষ্য -

 " যঃ স্বরো যো বর্ণঃ প্রণবরুপোঽস্তি [‌ স চ স্বরঃ প্রণবো বেদান্তে চোপনিষদ্যোমিত্যেতদক্ষরমিদং সর্বমিত্যাদিকাযাং প্রতিষ্ঠিতঃ প্রতিপাদিতঃ,] স চ স্বরঃ প্রণবো ধ্যানকালেঽব্যাকৃতে জগৎকারণে লীনা ভবতি | অকারোকারমকারেষু বিরাড্ঢিরণ্যগর্ভাব্যাকৃতানি ধ্যাত্বা বিরাড্রূপমকারমুকারে প্রবিলাপ্য তং চোকারং হিরণ্যগর্ভরূপং মূলপ্রকৃতিরুপে মকারে প্রবিলাপযেৎ | তস্য চ প্রকৃতৌ লীনস্য প্রণবস্য যঃ পরশ্চতুর্থমাত্রারুপেন নাদে ধ্যাতব্য উৎকৃষ্টোঽস্তি সোঽযং মহেশ্বরো বিজ্ঞেযঃ | "

সায়ণ ভাষ্যের অনুবাদ সহ মর্মার্থ -  

পুরাতন বেদ ভাষ্যকার সায়ণ আচার্যের মতে, সমগ্র বেদে (বর্ণিত) যে স্বর, যে বর্ণ (আদিমতম) (সাক্ষাৎ) প্রণব রূপে বিদ্যমান, সেই স্বর বেদান্ত তথা উপনিষদে " ওমিতি একাক্ষরং ইদং সর্বং " ইত্যাদি (শ্রুতি বাক্য) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, প্রতিপাদিত। ধ্যান যোগের সময় সেই স্বর জগতের কারণ অব্যক্ত প্রকৃতি তত্ত্বে লীন হয়ে যায় (ইহা যোগীর উপলব্ধি)। প্রণব ত্রিমাত্রিক - , , । ইহা তিন গুণের ধারক, যথা রজ (ব্রহ্মা, জাগ্রত), সত্ত্ব (বিষ্ণু, স্বপ্ন) এবং তম (রুদ্র বা কালরুদ্র সুষুপ্তি), ইহারা অব্যক্ত প্রকৃতি তত্ত্ব হতেই জাত। কেননা প্রকৃতি সর্বদাই -কার, -কার, -কার রূপা। সুতরাং, এই ত্রিমাত্রিক প্রণব দ্বারাই সমগ্র দ্বৈত জগৎ ব্যাপ্ত। তাই, লয়ক্রমে (বিপরীত) ধ্যানকালে এই ত্রিমাত্রিক প্রণবকে ত্রিগুণাত্মিকা অব্যাকৃতি অর্থাৎ অব্যক্ত প্রকৃতিতে লয় করাতে হয় এবং অদ্বৈত এর দিকে ক্রমশঃ অগ্রসর হতে হয়। অকার, উকার এবং মকারকে (যথাক্রমে) বিরাট, হিরণ্যগর্ভ এবং অব্যক্ত প্রকৃতি রূপে ধ্যান পূর্বক, বিরাটরূপ অ-কারকে উ-কারে লয় করাতে হবে এবং সেই হিরণ্যগর্ভরূপ উ-কারকে মূলপ্রকৃতি স্বরূপ ম-কারে লীন করাতে হবে। এই ভাবেই ত্রিমাত্রিক প্রণব ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতিতে লীন হয়ে থাকে। এই প্রকৃতি লীন প্রণবের ত্রিমাত্রার উর্ধ্বে বিদ্যমান থাকে চতুর্থমাত্রা স্বরূপ নাদ (তূরীয়)। এই নাদ তত্ত্বে (অর্ধমাত্রা) ধ্যেয় উৎকৃষ্ট যিনি, তিনিই মহেশ্বর। (ইহা লয়ক্রম অনুসারে ব্যাখ্যা।)

আলোচ্য শ্লোকে 'মহেশ্বর' শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে শ্রী বৃষভেন্দ্র শিবাচার্য তাঁর মহানারায়ণ উপনিষদের ভাষ্যে বলছেন -

" মহেশ্বরঃ | মহাশ্চাংসৌ ঈশ্বরশ্চ মহেশ্বরঃ | ত্রিমূর্ত্যযাতীতপরশিব ইত্যর্থঃ | মহেশশব্দরুঢ্-যর্থবোধিতপরশিব .. || "

 ভাষ্যানুবাদ -

মহান যে ইশ্বর, উহাই মহেশ্বর। (" ঈশান সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃসর্বভূতানাং" - ইত্যাদি শ্রুতি দ্বারা যা সিদ্ধ) 'মহেশ্বর' শব্দ এখানে ত্রিমূর্তির (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, কালরুদ্র) অতীত পরশিব এর বোধক। 'মহেশ্বর' শব্দ এখানে রুঢ়ি অর্থ বোধক, যা পরশিব এরই প্রতিপাদক। 

এ প্রসঙ্গে শিবমহাপুরাণে পরম পাশুপতাচার্য মহর্ষি উপমন্যু বলছেন -

" ত্রযোবিংশতিতত্ত্বেভ্যঃ পরা প্রকৃতিরুচ্যতে |

প্রকৃতেস্তু পরং প্রাহুঃ পুরুষং পঞ্চবিংশকম্ || ৯ ||

যদ্বেদাদৌ স্বরং প্রাহুর্বাচ্যবাচকভাবতঃ |

বেদৈকবেদ্যং যাথাৎম্যাদ্বেদান্তে চ প্রতিষ্ঠিতম্ || ১০ ||

স এব প্রকৃতৌ লীনো ভোক্তা যঃ প্রকৃতের্যতঃ |

তস্য প্রকৃতিলীনস্য যঃ‌ পরঃ স মহেশ্বরঃ || ১১ || " 

(রেফারেন্স - শিবমহাপুরাণ/কৈলাসসংহিতা/৯ নং অধ্যায় )

অর্থ - ২৩ তত্ত্বাদির অতীত তত্ত্বই পরাপ্রকৃতি। তাঁরও অতীত পঁচিশতম তত্ত্বই পুরুষ। এই ২৫ তম তত্ত্ব পুরুষই বেদ দ্বারা জ্ঞেয় এবং যা বেদের আদি স্বর (ত্রিমাত্রিক প্রণব) হিসেবে উক্ত হয়েছে এবং ইহাই বেদান্তে প্রতিষ্ঠিত। এই ত্রিমাত্রিক প্রণব স্বরূপ পুরুষতত্ত্ব প্রকৃতিতে লীন হয়ে প্রকৃতিকে ভোগ করে থাকে। প্রকৃতিতে লীন এই পুরুষেরও অতীত যে পরমপুরুষ তার নাম মহেশ্বর (কারণ মহেশ্বর প্রকৃতি-পুরুষের উর্ধ্বে)। (ইহা সৃষ্টি ক্রম অনুসারে ব্যাখ্যা)


নমঃ শিবায 

নমঃ শিবাযৈ 

শিব ॐ তৎ সৎ 


👉 অনুবাদ এবং ব্যাখ্যায় - RohitKumarChoudhury (ISSGT)

👉 প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত