পুরাণ - বাল্যবিবাহের আঁতুড় ঘর বলে দাবি করা আর্যসমাজীদের আস্ফালনের নিরসন


বর্তমান কলিযুগে কলির চর দ্বারা ধর্মের অবনতি ঘটতে থাকা ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হতে দেখতে পাচ্ছি আমরা সকলেই। অসনাতনীরা সনাতনী হবার রূপ ধারণ করে সনাতন ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পন্ন শাস্ত্র সমূহ কে নিন্দা করে চলেছে। পুরান শাস্ত্রগুলিকে কাল্পনিক অবৈদিক অবৈজ্ঞানিক অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরার জন্য আর্যসমাজ নামক অসনাতনী ম্লেচ্ছরা ছলচাতুরির আশ্রয়ে বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার করে চলেছে। এরা পুরান শাস্ত্রের মধ্যে থেকে দু একটি শ্লোক তুলে নিয়ে সেটিকে বিকৃত দৃষ্টিকোণ দ্বারা বিশ্লেষণ করে তারপর নিজেরাই সিদ্ধান্ত দেয় যে পুরাণশাস্ত্র হলো বিকৃত এবং এগুলি সনাতন ধর্মের কোন শাস্ত্রই নয়। সাধারণ মানুষের কাছে এইসব পুরাণের শ্লোকের খণ্ডিতাংশ গুলির থেকে প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন করলে সাধারণ সনাতনী ব্যক্তি এগুলির বিশ্লেষণ করতে পারেনা এমনকি তারা এসব দেখে নিজেরাই দিশেহারা হয়ে পড়ে তখন এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আর্য সমাজী ম্লেচ্ছরা তাদের অর্থাৎ ভ্রমিত হওয়া সনাতনী ব্যক্তিদের আর্য সমাজী বানিয়ে নিজেদের দলে সামিল করে নিজেদের দল ভারী করে । 

 পুরান শাস্ত্রকে নিন্দা করার পিছনে মূল কারণ হলো মূর্তি পূজা বন্ধ করানো, ঈশ্বরের সাকার বাদে অবিশ্বাস তৈরি করা, শেষে সনাতন ধর্মের সকল সংস্কৃতির ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস আস্থা যাতে উঠে যায়, নাস্তিক তৈরি করা ও অবশেষে তার সুযোগে ম্লেচ্ছ বানানো ।

কারণ, পুরান শাস্ত্রের প্রচলন এই জগতে যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত দেব-দেবীর বিগ্রহ পূজা কখনোই বন্ধ হবে না, ঈশ্বরের সাকার বাদ বেঁচে থাকবে।

আর্য সমাজীরা যেহেতু ম্লেচ্ছদের দালাল, তাই তারা মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে এত রকম কারসাজি করছে। ম্লেচ্ছরা চিরকাল তাদের গ্রন্থ সমূহের নির্দেশ অনুসারে দেবমূর্তি পূজাকে নিন্দা করেছে ও মূর্তি পূজার বিপক্ষে কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে যেহেতু দেবপ্রতিমা পূজার বিবরণ উপলব্ধ তাই ম্লেচ্ছরা সনাতনী দের ছদ্মবেশ ধরে শাস্ত্র বিকৃত করে পুরান তথা বেদ শাস্ত্র থেকে পরমেশ্বরের সাকার হওয়ার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মুছে দেবার প্রয়াস করে চলেছে । 

 এই কারণে তারা পুরান শাস্ত্রের নিন্দা প্রচার করে মূর্তি পূজা বিরোধী তৈরি করতে চাইছে। দয়ানন্দ সরস্বতী হলো থিয়োসফিক্যাল সোসাইটি নামক ম্লেচ্ছ সংগঠনের দালাল।  ভারতে এই ম্লেচ্ছ সংগঠনের নাম আর্য সমাজ করে দয়ানন্দ সরস্বতী সনাতনের ছদ্মবেশে ম্লেচ্ছদের উদ্দেশ্য সফল করতে অগ্রসর হয়েছে। 

 পুরান শাস্ত্রকে নিন্দা করা দয়ানন্দের কাজ ছিল, আর্য সামাজিক অনুসারীরাও সেই একই কাজ আজও করে চলেছে। এদের ফাঁদে পড়ে বহু সনাতনী আজ আর্য সমাজীতে পরিণত হয়েছে। 

 বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক আর্য সমাজের সংগঠনটি প্রায় 2011 থেকে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এদের Back To Vedas নামক একটি Blog রয়েছে, সেখানে নিজেদের পরিচয় গোপন করে পুরান শাস্ত্রের মধ্যে থাকা বেশ কিছু  শ্লোকের খণ্ডিতাংশ তুলে এরা পুরাণের অশ্লীলতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছে,  এরা পুরান শাস্ত্র কে বলছে  - পুরান শাস্ত্র বাল্যবিবাহের আতুর ঘর ।


 বাল্যবিবাহ কে বর্তমানে কোন মানুষই গ্রহণযোগ্য মনে করে না, এটি সর্বজনবিদিত। এই দুর্বল জায়গাটির কথা আর্য সমাজী ম্লেচ্ছরা অবগত হয়ে বর্তমান সমাজের কাছে পুরান তথা কিছু স্মৃতি শাস্ত্র থেকে দু চারটে শ্লোক তুলে এরা দেখানোর চেষ্টা করছে যে, পুরান গুলিই হল বাল্যবিবাহ হবার উৎসস্থল ।  

যেহেতু এই কথাগুলি পুরাণে আছে তাই পুরান গুলি এই বর্তমান সমাজে অগ্রহণযোগ্য, এমনভাবে দুষ্ট উদ্দেশ্য পূর্তির জন্য আর্য সমাজীরা পুরান গুলিকে নিন্দা করে চলেছে।

 বাংলাদেশ অগ্নিবীদের এই অপপ্রচারের জবাব আমরা আজ দেবো। চলুন দেখে নিই পুরান শাস্ত্র কি সত্যিই বাল্যবিবাহের নির্দেশ দেয় কিনা।


👉আমাদের পুরাণ মান্যতা সম্পর্কে অপসংস্কৃতির বাহক আর্যসমাজীদের কিছু জিনিস প্রথমে জেনে রাখা উচিত ।


১) পুরাণ শাস্ত্রের কিছু অংশ তুলে যখন তার বিপক্ষে প্রশ্ন তোলা হয় তখন প্রশ্নকারীদের এটাও স্বীকার করতে হবে যে, উত্তর প্রদান করবার সময়ে তার বিশ্লেষণ পুরাণ থেকে প্রাপ্ত হলে সেটিও গ্রহন করতে হবে।

২) পুরাণ শাস্ত্রে কল্পের কথা রয়েছে, তাই এক এক কল্পে এক‌ এক দেবতার মাহাত্ম্য প্রকাশিত হয়েছে, আর সেই কারণে এক এক পুরাণে এক এক দেবতাদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এক‌ই ঘটনা বিভিন্ন কল্পে বারংবার ঘটেছে বিভিন্ন ভাবে ঘটেছে। যেমন - একটি কল্পে মহিষাসুরকে স্বয়ং মাতা পার্বতী বধ করেছেন, আবার অন্য কল্পে মাতা পার্বতীর থেকে প্রকটিত চণ্ডীদেবী মহিষাসুরকে বধ করেছেন। কিন্তু মূল ঘটনা হল দেবী দ্বারা মহিষাসুর বধ। তাই কখনো কোনো পুরাণ পারস্পরিক দ্বন্দে লিপ্ত নয়। যাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেনি, তারাই আংশিকভাবে পুরাণ পড়ে কটুক্তি করে পুরাণের নিন্দা করতে অগ্রসর হয়।


৩) পুরাণে বর্ণিত রীতিনীতির মধ্যে অনেক রীতিনীতি বর্তমানযুগে পালন করবার মতো উপযুক্ত নয়, সুতরাং স্থান কাল পাত্র ভেদে এক একটি নিয়ম নির্দেশ কার্যকরী হয়, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, অশ্বমেধ যজ্ঞ পূর্বকালে অনুষ্ঠিত হলেও কলিযুগের বর্তমান সময়ে তা অনুষ্ঠিত হ‌ওয়া সম্ভব নয়। 


এবার দেখা যাক ম্লেচ্ছ আর্যমসমাজী বাংলাদেশ অগ্নিবীর কি দাবী করেছে 👇

১৮ মহাপুরানসহ ব্যাস সংহিতা তথা বিভিন্ন সংহিতায় কন্যাকে ৯ বছরের মধ্যে বিবাহ দিতে বলা হয়েছে, ১১ বছর বয়সেও বিবাহ না দিলে তাতে পিতার ও ভ্রাতার পাপ হয়। শিব পুরাণে দেবী উমাকে বাল্য বয়সে বিবাহ দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে, বেদে বাল্যবিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই বাল্যবিবাহ করার নির্দেশ দেওয়া এই বেদবিরুদ্ধ পুরান ও স্মৃতিশাস্ত্র গুলিকে ত্যাগ করা উচিত।

👆 উপরোক্ত এইগুলিই আর্যমসমাজীদের মূল দাবী।

এদের মূল পোষ্টে বিস্তারিত দাবীটি দেখতে পারেন।

এদের এই দাবীর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন 👇

' পুরাণ ' - বাল্যবিবাহের আঁতুড়ঘর


এবার এই আর্যসমাজীদের এই দাবীর খণ্ডন করা যাক।


সবার আগে দেখে নেওয়া যাক 

বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক ম্লেচ্ছ আর্যসমাজীদের Back To Vedas নামক ব্লগে তারা বেদ ও পুরাণের কথার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে এটা প্রমাণ করতে গিয়ে 🔥 বেদ মন্ত্রের অর্থের অনর্থ ঘটাবার প্রমাণ ও তার আগাগোড়া খণ্ডন 👇

এখানে ক্লিক করে দেখুন 👉 বাল্য-বিবাহ প্রসঙ্গে আর্যসমাজীদের দ্বারা বেদ মন্ত্রের অর্থ বিকৃতিকরণ এবং পুরাণের সাথে বেদের বিরোধ বাঁধানোর  চক্রান্ত ফাঁস 

এবার আসা যাক আর্যমসমাজীদের দ্বারা পুরাণ নিয়ে মিথ্যাচারের খণ্ডন পর্বে👇


🔥 পুরাণ শাস্ত্রকে বাল্যবিবাহের আঁতুড়ঘর বলে দাবী করার খণ্ডন : 

 শ্রীগুরু ও পরমেশ্বর শিবের অশেষ করুনার ফলে আমি উপরোক্ত দাবির খণ্ডনে করতে উদ্যত হয়েছি। নিম্নোক্ত খণ্ডনে করুণাময় সদাশিব ও শ্রী গুরুর কৃতিত্ব রয়েছে। আমি এখানে উপলক্ষ বা নিমিত্ত মাত্র ।

 পুরান শাস্ত্রে বা স্মৃতি শাস্ত্রে ৯ বা ১১ বছর বয়সে বিবাহ দেবার উল্লেখ অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু সেই নির্দেশের পেছনে স্থান, কাল, পাত্র অনুসারে ভেদ রয়েছে। যা আর্যনামাজীদের মাথায় ঢোকেনা।

 যেমন - সত্য যুগে ধ্যান, ত্রেতা যুগে জ্ঞান, দ্বাপরে যজ্ঞ, কলিতে দান করার নির্দেশ আছে (কূর্মপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় ২৮/শ্লোক ১৭) 

ঠিক তেমনি প্রত্যেক কল্প বা যুগভেদে বিভিন্ন নিয়মাবলী তৈরি হয়ে থাকে, যার প্রবচন বহু ঋষিগণ করে থাকেন এবং সাধারণ মানুষের প্রতি নির্দেশ দেন। কিন্তু ইহা পরিবর্তনশীল হতে পারে। ঠিক তেমনভাবেই ৯ বা ১১ বছর বয়সে কন্যাকে বিবাহ দেবার পেছনেও কারণ রয়েছে। পরবর্তীতে সেই নিয়মের কারণ বদলেও গিয়েছে। 

চলুন প্রমাণ সহ দেখা যাক সেই কারণ।

শিব মহাপুরাণের রুদ্রসংহিতার দ্বিতীয়(সতী) খন্ডের ৫ নং থেকে ৭ নং অধ্যায় পর্যন্ত দেবী সন্ধ্যার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। 

 সেখানে পুরাণে বাল্য বয়সে বিবাহের কারণ ও সেই নিয়ম বদলে যাবার কাহিনীও কাহিনীর মাধ্যমে উল্লেখ রয়েছে প্রমাণসহ। বৃহৎ অধ্যায় জুড়ে সম্পূর্ণ কাহিনীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো


 👉সৃষ্টির পরবর্তীতে ব্রহ্মার থেকে সন্ধ্যা উৎপন্ন হন, সন্ধ্যা দেবীর মধ্যে জাত হওয়ার পর থেকেই কামনাভাব উৎপন্ন হয় ‌। কামাসক্ত হবার কারণে তিনি ঠিক করলেন এই জগতে যেন কোন জন্ম নেবার পর থেকেই কামভাব (সহবাসের জন্য উৎকণ্ঠা) প্রাপ্ত না হয় ‌।

 সেই জন্য তপস্যা করে এই অবস্থাকে পরিবর্তন করে দেবার সংকল্প করলেন দেবী সন্ধ্যা, তিনি স্থির করেছিলেন যে তার নিজের এই কামাসক্ত দেহ অগ্নিতে আহুতি দেবেন কিন্তু তার আগে তপস্যা করে বরদান প্রাপ্ত করে তারপরে তিনি অগ্নিতে নিজের এই কাম ভাবে পীড়িত দেহকে অগ্নিতে আহুতি দেবেন। 

 এরপর দেবী সন্ধ্যা এসব চিন্তা করতে করতে চন্দ্রভাগ পর্বতে গেলেন। সেসব ব্রহ্মা জেনে বশিষ্ঠকে ডেকে সন্ধার তপস্যার জন্য মার্গ প্রশস্ত করে দীক্ষা দেওয়ার আদেশ দিলেন। তখন মহর্ষি বশিষ্ঠ উক্ত পর্বতে চলে গেলেন, সন্ধ্যা দেবীকে জিজ্ঞাসা করলেন তার পরিচয় ও সন্ধ্যার উত্তরে সন্ধ্যা নিজের তপস্যার বিধি জানতে চাইলেন তখন বশিষ্ঠ তাকে বিধি জানালেন এবং তিনি সন্ধ্যা দেবীকে ॐ নমঃ শঙ্করায় ॐ - এই প্রণব অক্ষর সহ শিবমন্ত্র জপ করার দীক্ষা দেন।

[বশিষ্ঠ সন্ধ্যাকে বললেন -

ॐ নমঃ শঙ্করায়েতি ওমিত্যন্তেন সন্ততম্ ।

মৌনং তপঃ সমারম্ভং তন্মে নিগদতঃ শৃণু ॥৬৩ 

সরলার্থ - ॐ নমঃ শঙ্করায় ॐ - এই মন্ত্র দ্বারা মৌন হয়ে এইভাবে তপস্যার প্রারম্ভ করো, (বিশেষ বিধি) তোমাকে বলছি, তা শ্রবণ করো ।

(তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সতীখণ্ড/অধ্যায় ৫)]

  বশিষ্ঠ সন্ধ্যা কে বলেন পরমেশ্বর শিব তোমাকে তোমার সমস্ত মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে দেবেন ইহা সত্য সত্য সত্য। এরপর বৈশিষ্ট্য চলে গেলে সন্ধ্যা দেবী তপস্যার বেশ ধারণ করে দীক্ষা মন্ত্র জপ করতে করতে কঠোর শিব আরাধনা শুরু করলেন। তপস্যা করতে করতে এদিকে চার যুগ কেটে গেল পরমেশ্বর শিব সন্তুষ্ট হয়ে সন্ধ্যা কে দর্শন দিলেন এরপর শিবের স্তুতি করে শিব কে প্রসন্ন করলে পরমেশ্বর শিব তাকে বরদান দেবার জন্য বর প্রার্থনা করতে বললেন।

 তখন সন্ধ্যা বললেন, হে প্রভু পৃথিবী গগন ইত্যাদি যে কোন স্থানে যেসব প্রাণী আছে তারা জন্ম নিয়েই যেন কাম ভাবে যুক্ত না হয় কোথাও কারো প্রতি যেন আমার সকল দৃষ্টি না হয়। যিনি আমার পতি হবেন তিনি যেন আমার অত্যন্ত সুহৃদ হন প্রতি ছাড়া যে পুরুষ আমাকে সকাম ভাবে দেখবে তার যেন পুরুষত্ব নাশ হয়ে যায় ।

  পরমেশ্বর শিব বললেন, দেবী সন্ধ্যা তুমি যা প্রার্থনা করলে তা আমি পূর্ণ করব, তুমি যখন তপস্যা করছিলে তখন চারযুগ অতিক্রম হয়ে গিয়েছে, প্রাণীদের জীবনের প্রধানত চারটি অবস্থা : প্রথমে শৈশব অবস্থা, দ্বিতীয় কৌমার অবস্থা, তৃতীয় তরুন(যৌবন) অবস্থা ও চতুর্থ বৃদ্ধ অবস্থা। তৃতীয় অবস্থা প্রাপ্ত হলে দেহধারী জীব কাম ভাব যুক্ত হবে, কখনো কখনো দ্বিতীয় অবস্থার অন্তিম ভাগেও প্রাণী কাম যুক্ত হবে। তোমার তপস্যার প্রভাবেই জগতে সকামভাবে জাগ্রত হবার এই মর্যাদা আমি স্থাপন করলাম এখন। যাতে দেহধারী জীব জন্মগ্রহণ করেই কামাসক্ত না হয়ে যায়। তুমি দিব্য সতীভাব প্রাপ্ত করো যা ত্রিলোকে অন্য নারীর পক্ষে অসম্ভব প্রায় । তোমার পতি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি তোমার দিকে সকাম দৃষ্টিতে তাকালে সে নপুংসক হয়ে যাবে তোমার প্রতি একজন দিব্যরূপ সম্পন্ন মহর্ষি হবেন তুমি যেহেতু সংকল্প করেছ অগ্নিতে তোমার এই শরীর বিসর্জন দেবে, সেই প্রতিজ্ঞা সফল করার জন্য আমি তোমাকে একটি উপায় বলছি, মহর্ষি মেঘাতিথির আশ্রমে যাও সেখানে অগ্নিদেব প্রজ্জ্বলিত আছেন। সেখানে গিয়ে অগ্নিতে নিজেকে সমর্পন করে পরম পবিত্র হয়ে ওঠো। এটি করলে তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে। 

 এরপর পরমেশ্বর অন্তর্ধান করলেন, তখন সন্ধ্যা শিব কৃপায় অদৃশ্য হয়ে বশিষ্ঠ মহর্ষি কে নিজের পতি চিন্তা করে মহাযজ্ঞের অগ্নিতে প্রবেশ করলেন।

 তখন তার শরীর দগ্ধ হয়ে শিব কৃপায় দিব্য শরীর যুক্ত হল, তখন মহর্ষি মেধা যজ্ঞ সমাপ্তির পর দেহধারী সেই কন্যাকে গ্রহণ করেন,  তারপর কন্যার নাম রাখেন অরুন্ধতী। এরপর অরুন্ধতী মেধা মহর্ষি আশ্রমে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন। তিনি যখন বিবাহযোগ্যা হলেন তখন ত্রিদেবের ইচ্ছেয় বশিষ্ঠদেবের সাথে অরুন্ধতীর বিবাহ হয় ।👈


☝️ উপরোক্ত ঘটনা থেকে যা বোঝা গেল তা হল -


♦️১♦️ পূর্বকালে সৃষ্টির পরবর্তীতে একটি যুগে   বিধাতার ইচ্ছে অনুযায়ী এমন একটি বিধান ছিল - যার ফলে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া মাত্রই ছোটবেলা থেকেই জীবেরা তথা মনুষ্যগণ কামাসক্ত হয়ে থাকতো ।


🔵 বিশ্লেষণ 👉 যেহেতু বাল্য বয়স হতেই জীব কামের বশীভূত ছিল তাই কামাসক্ত জীব তথা মনুষ্য কে তার কামাসক্ত অবস্থার সঙ্গিনী হিসেবে স্ত্রী প্রদান করা হতো বাল্য বয়সেই, পুরাণ শাস্ত্রের যে যে স্থানে ৯ বা ১১ বছর বয়সের মধ্যে কন্যাকে বিবাহ দিতে বলা হয়েছে। সেই নিয়মগুলি উক্ত যুগের বাল্য অবস্থায় কামাসক্ত জীবের সময়কার হিসেবে বলা হয়েছিল। ৯ বা ১১ বছর বয়েসে বর্তমানে কারোর রজচক্র শুরু হয় না, কিন্তু পুরান শাস্ত্র থেকে জানা যায় যে উক্ত সময়ে ৯ বা ১১ বছর বয়সে  রজঃ চক্র হত কন্যাদের। যেমনটা সন্ধ্যা দেবীর ক্ষেত্রে হয়েছিল। 

 সুতরাং, এখানে পরিষ্কারভাবেই বোধগম্য হচ্ছে যে পুরাণের বাল্য বয়সে বিবাহ দেবার বিধান উক্ত সময়ের জন্য অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ, বাল্য বয়স হতেই যদি নারীর মধ্যে কামভাব থাকে তখন তাকে সে বয়েসে বিবাহ দেওয়া স্বাভাবিক পুরাণের উক্ত সময় অনুযায়ী, যখন বাল্য বয়সেই একজন নারী কামাসক্ত হয়ে থাকে তখন তাকে বিবাহ দেওয়া অযৌক্তিক হতে পারে না উক্ত সময় অনুযায়ী। সেক্ষেত্রে কখনো কখনো বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্রে রজঃ চক্র হবার আগেই(৯ বা ১১বছরের) বিবাহ দেবার কথা বলেছেন ঋষিগণ। কেননা, জন্মের পর থেকেই কামভাব থাকে এটা উল্লেখ হয়েছে পুরাণে।


♦️২♦️ দেবী সন্ধ্যা কামাশক্ত হয়ে অস্বাভাবিক বোধ করে এই বাল্য বয়স থেকে কামাসক্ত হবার নিয়মকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন ।


🔵 বিশ্লেষণ 👉  সন্ধ্যা দেবী বাল্যকাল থেকে কামাসক্ত হবার নিয়ম পরিবর্তন করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যাতে অন্যান্য জীবেরাও তথা মনুষ্যেরাও এই কামের মায়া থেকে কিছুকাল বিরত থাকতে পারে। কেননা বাল্য বয়স হতেই যদি কামই আসক্ত হয় তবে ব্রহ্মচর্য পালন করে ধর্মপথে উন্নতি করার কার্যে বিঘ্ন অতিমাত্রায় হতে পারে, তাই তিনি জীবের তথা মনুষ্যের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন। 


♦️৩♦️ ব্রহ্মার নির্দেশে সন্ধ্যা দেবীকে মহর্ষি বশিষ্ঠ দীক্ষা প্রদান করেন, সন্ধ্যা দেবী কে ॐ নমঃ শঙ্করায় ॐ - মন্ত্র জপ করতে নির্দেশ দেন।


🔵 বিশ্লেষণ 👉 বর্তমানে আর্যসমাজী পাষণ্ডরা বলে বেড়ায় যে নারীদের নাকি ॐ উচ্চারণ করতে নিষেধ করেছে পুরাণ শাস্ত্র, অথচ পবিত্র শিবমহাপুরাণে দেখা যাচ্ছে যে নারীও ॐ মন্ত্র জপ করতে পারে । আর্যনামাজীরা সনাতন ধর্মের মধ্যে থাকা গভীর মান্যতা ও রহস্য সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অনভিজ্ঞ। এই কারণেই এরা কিছু না জেনে বুঝেই মিথ্যাচার করেছে চেঁচামেচি করতে থাকে। আর্য সমাজীদের জানা উচিত শিব মহাপুরাণে বর্ণাশ্রমের কথা যেমন আছে ঠিক তেমনভাবে অতিবর্ণাশ্রমের কোথাও রয়েছে। যোগ্যতা, হৃদয়ের ভাব ও গুরু পরম্পরা অনুসারে কোন ব্যক্তি বর্ণের সঙ্গে নিয়মে আবদ্ধ হবে আর কোন ব্যক্তি অতিবর্ণাশ্রমের মধ্যে গণ্য হবে তা বিচার হয়। তাই পুরান শাস্ত্র নিয়ে মিথ্যাচার করে নাচার আগে আর্যনামাজীদের উচিত কার্য হল - পুরানের মধ্যে থাকা নিয়মাবলী গুলোর সম্পর্কে সঠিক গুরু পরম্পরা নির্দেশে তার অন্তর্নিহিত অর্থবোধ গম্য করা। না জেনে বুঝে এসব অবান্তর মন্তব্য করা অনুচিত, আর এসব জেনেও যদি মিথ্যাচার করে আর্যনামাজীরা তবে এদের রেহাই দেবে না পরমেশ্বর। যারা বর্ণাশ্রমের অন্তর্গত তাদের কাছে শিব পুরাণ বা অন্যান্য পুরানের মধ্যে থাকা বর্ণাশ্রমের নিয়মগুলি প্রযোজ্য, যারা অতিবর্ণাশ্রমের অন্তর্গত শিবমার্গের মাহেশ্বর পন্থার অন্তর্ভুক্ত তাদের কাছে বর্ণাশ্রমের নিয়মগুলি প্রযোজ্য নয় । তাই এসব সম্পর্কের না জেনে পুরাণ শাস্ত্রের নামে নিন্দা করা আর্যসমাজীদের মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।


♦️৪♦️  সন্ধ্যা দেবী যখন একাগ্রভাবে পরমেশ্বর শিবের আরাধনা করেছিলেন তখন চার যুগ পেরিয়ে গিয়েছিল তারপর পরমেশ্বর শিব সন্ধ্যা কে বরদান করে পূর্বযুগের নিয়মগুলি বদলে দেন।


🔵 বিশ্লেষণ 👉 ভালো করে লক্ষ্য করুন, সন্ধ্যা দেবী যখন তপস্যা করছিলেন তখন চতুর্যুগ অর্থাৎ সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগ কেটে গিয়ে পুনরায় নতুন যুগ আরম্ভ হয়েছিল। এর থেকে প্রমাণ হচ্ছে যে ভালো বয়সে বিবাহ হবার নির্দেশগুলি ওই কেটে যাওয়া চার যুগেই প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু চার যুগ কেটে গেলে পরমেশ্বর শিব সন্ধ্যা দেবীকে বরদান দিয়ে সেই নিয়ম গুলির কারণ সমূহকেই বদলে দেন। 

 সন্ধাকে বরদানের পর থেকে বাল্যবিবাহের কারণটাই বদলে যায়। কেননা, প্রথমে বাল্য অবস্থাতেই কামাসক্ত মনুষ্যকে বিবাহ দেয়া হতো, শিবের বরদানের ফলে পরবর্তী যুগ থেকে জীব তথা মনুষ্যগণ আর বাল্যঅবস্থাতে কামাসক্ত হন না, তারা যৌবনকালে বা কিশোর বয়সের শেষের দিকে কামভাব পেতে শুরু করল, এবার যদি বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টি বিচার করা যায় তবে আমরা দেখতে পাই যে বর্তমানে ১৩ বা ১৪ বছর বয়স থেকে নারীগণ কামভাব প্রাপ্ত করতে শুরু করেন, কিশোর অর্থাৎ কৌমার অবস্থার অন্তিম ভাগ এটি। 

  পরমেশ্বর শিবের বরদান অনুসারে বর্তমানে সমস্ত জীব এই কিশোর বয়সেই কামভাব প্রাপ্ত হচ্ছেন। এই কারণে আমরা দেখতে পাই বর্তমানে ১৬ থেকেই অনেক ব্যক্তি তার কন্যার বিবাহ দিয়ে দিচ্ছেন । এখন এই নিয়ে দেশীয় সংবিধান একটি নির্দিষ্ট বয়সে বিবাহ দেবার আইন তৈরি করেছেন (যদিও সেই আইনের নিয়ম‌ও বদলে যেতে পারে যে কোনো সময়ে)। 

 

আশা করি, শাস্ত্রের উক্ত নির্দেশ ও তার কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষণ দেখে মূর্খ দয়ানন্দ সরস্বতীর মূর্খ চ্যালাদের পঁচা মস্তিষ্কে জ্ঞান ঢুকেছে।


এই গর্দভশিরোমণি আর্যমসমাজী ম্লেচ্ছরা আবার মাতা পার্বতীর বিবাহের সময় তিনি বাল্যকাল ছিল বলে বিভিন্ন পুরান থেকে দেখানোর চেষ্টা করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

পুরান শাস্ত্রের সেসব কথা আমরা অস্বীকার করি না তার কারণ হলো, শিবমহাপুরাণে বলা হয়েছে যে, সন্ধ্যার তপসার সময় চার যুগ কেটে গিয়েছিল সেই হিসেবে উক্ত চার যুগের সাপেক্ষে বাল্য বয়সে বিবাহ অস্বাভাবিক নয় কেননা তখন সকল জীব তথা মনুষ্য জন্মাবার সাথে সাথে কামাসক্ত হয়ে যেত। 

 প্রত্যেক চার যুগে একই ঘটনা বিভিন্নভাবে ঘটে, সমস্ত যুগের ঘটনা একত্রে রয়েছে, তাই যে নির্দিষ্ট চতুর্যুগে বাল্যবয়সে মনুষ্য বাল্যকাল থেকেই কামাসক্ত হতো সেই চতুর্যুগের মধ্যে ঘটে যাওয়া দেবী পার্বতীর বিবাহ কাল বাল্যসময়ের হলেও তা অস্বাভাবিক নয়। এক‌ই ভাবে প্রত্যেক চারযুগের দ্বাপরে এক এক জন নূতন মহাত্মা ব্যক্তি ব্যাসদেব হয়ে আসেন, প্রমাণ চাই ?

এখানে ক্লিক করে দেখুন 👇

ব্যাসদেব একটি পদ,কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম ব্যাসদেব নয় 

 সুতরাং, সেই যুগের ভিত্তিতে ব্যাসদেবের রচিত ব্যাসসংহিতাতে বাল্য বয়সে কন্যাকে বিবাহ দেবার বিধান ছিল। কিন্তু পরমেশ্বর শিবের ইচ্ছেয় বাল্য বয়সে বিবাহ দেবার কারণ‌ই বদলে যায়। তাই পরবর্তী যুগে সেই ব্যাসদেবের উক্ত বাল্য বয়সে বিবাহের বিধান গণ্য হয়না। পরাশর সংহিতা বা অনান্য স্মৃতির ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। পুরাণ শাস্ত্রের মধ্যে সমস্ত চতুর্যুগের যুগের সমস্ত বর্ণনা রয়েছে, আর সেটা বর্তমানেও শাস্ত্রে উল্লিখিত রয়েছে। কিন্তু তা এই যুগে গ্রহণযোগ্য হবে কি না সেটাই বিচারের বিষয়।আর বিচারটি তিনিই করতে পারেন যিনি গুরু, সেই গুরুই এর সঠিক বিচার করে মানুষকে তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয় বা অমান্য করতে নির্দেশ দেন।

 অত‌এব, যারা গর্দভশিরোমণি একমাত্র তারাই পুরাণ শাস্ত্রের রহস্যের বিষয়ে না বুঝতে পেরে গুলিয়ে ঘেটে ঘ করে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। তাই একটি চতুর্যুগের সাপেক্ষে দেবী পার্বতীর বিবাহ বাল্যকালে হতেই পারে,

 কিন্তু যখন পুনরায় নূতন চতুর্যুগ আসে তখন আবার দেবীর বিবাহের সময় হল যৌবন অবস্থা।

 প্রমাণ চাই ? 

চলুন দেখে নেয়া যাক।



প্রথম প্রমাণ 👇


 (প্রশ্ন) মাতা সতীর বিবাহ কাল বাল্যবস্থা ছিল নাকি যৌবনকাল ?

(উত্তর)

মাতা সতীর যৌবন অবস্থা উপস্থিত হবার পর তার পিতা দক্ষরাজ সতী দেবীর বিবাহ দেবার কথা চিন্তা করলেন । 

ইত্থং বিহারৈ রুচিরৈঃ কৌমারৈভক্তবৎসলা ।

জহাববস্থাং কৌমারীং স্বেচ্ছাধৃতনরাকৃতিঃ ॥৮

বাল্যং ব্যতীত্য সা প্রাপ কিঞ্চিদ্ধৌবনতাং সতী ।

অতীব তপসাঙ্গেন সর্বাঙ্গেষু মনোহরা ॥৯

দক্ষস্তাং বীক্ষ্য লোকেশঃ প্রোদ্ভিন্নান্তর্বয়ঃ স্থিতাম্ ।

চিন্তায়ামাস ভর্গায় কথং দাস্য ইয়াং সুতাম্ ॥১০

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/২য় খণ্ড/অধ্যায় নং ১৫]

⭕সরলার্থ : এইভাবে যৌবনচিত সুন্দর বিহারে সুশোভিতো হয়ে ভক্তবৎসলা সতী, যিনি স্বেচ্ছায় মানবরূপ ধারণ করে প্রকটিত হয়েছেন, কৌমার অবস্থা অতিক্রম করেন। বাল্য অবস্থা পার হয়ে প্রারম্ভিক যুবাবস্থায় সতী অতিশয় তেজ এবং শোভাসম্পন্ন হয়ে অত্যন্ত  মনোহররূপে প্রতিভাত হলেন। লোকেশ দক্ষ দেখলেন সতীর দেহে যৌবনের লক্ষণ প্রকটিত হচ্ছে। তখন তার মনে এই চিন্তা এল যে, আমি কি ভাবে মহাদেবের সাথে সতীর বিবাহ দেব ? ॥ ৮-১০


🟥 বিশ্লেষণ 👉 দেবী পার্বতী পূর্ববর্তী জন্মে সতী নামে পরিচিত, সেই সতী দেবীর বিবাহের কথা দক্ষরাজ চিন্তা করছিলেন তখন, যখন সতী দেবী বাল্যাবস্থা ও কৌমারাবস্থা পার করে যৌবন কালে প্রবেশ করেছিলেন। এখানে আশা করি, আর্যমসমাজীরা চোখ খুলে এগুলি দেখতে পাচ্ছেন। 


দ্বিতীয় প্রমাণ 👇


(প্রশ্ন) মাতা পার্বতীর বিবাহ কখন হয়েছিল ? বাল্যকালে বিবাহ হয়েছিল নাকি তার বিবাহের পূর্বেই তিনি যৌবনাবস্থায় ছিলেন ? 


(উত্তর) গিরিরাজ হিমালয় ৮বছর বয়সী দেবী পার্বতীকে শিবের কাছে নিয়ে যান তার সেবা করানোর জন্য, শিবের সেবা করতে করতে দেবী পার্বতী যৌবন অবস্থায় প্রবেশ করেন । এর প্রমাণ দেখুন, ব্রহ্মা দেবতাদের উদ্দেশ্যে করে তারকাসুরকে বধ করার উপায় বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, 

সা সুতা গিরিরাজস্য সাঙ্প্রতং প্রৌঢ়যৌবনা।

তপস্যন্তং হিমগিরৌ নিত্যং সংসেবতে হরম্।।৩২

বাক্যাদ্ধিমবতঃ কালী স্বপিতূর্হঠতশ্শিবা।

সখীভ্যাং সেবতে সার্ধং ধ্যানস্থং পরমেশ্বরম্।।৩৩

তামগ্ৰতোহর্চমানাং বৈ ত্রৈলোক্যে বরবর্ণিনীম্।

ধ্যানাসক্তো মহেশো হি মনসাপি ন হীয়তে।।৩৪

ভার্যা সমীহতে যথা স কালীং চন্দ্রশেখরঃ।

তথা বিধধ্বং ত্রিদশা ন চিরাদেব যত্নতঃ।।৩৫ 

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/৩য় খণ্ড/অধ্যায় নং ১৬]

সরলার্থ : গিরিরাজের কন্যা পার্বতী এখন যৌবন অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছেন এবং প্রত্যহ হিমালয়ে ধ্যানস্থ মহাদেবের সেবা করছেন। তার পিতার কথায় পার্বতী তার দুই সখীর সঙ্গে ধ্যান পরায়ন পরমেশ্বর শিবের সাগ্রহে সেবা করছেন। ত্রিলোকে সর্বাপেক্ষা অধিক সুন্দরী পার্বতী শিবের সামনে থেকে প্রতিদিন তার পূজা করেন তবুও মানসিকভাবেও ধ্যানমগ্ন মহেশ্বর এর ধ্যান হীন অবস্থা হয় না অর্থাৎ ধ্যান ভঙ্গ করে পার্বতীর দিকে দেখার চিন্তাও মনে আনেন না শিব । 

হে দেবতাগণ ! চন্দ্রশেখর শিব যাতে কালিকে নিজ ভার যা করার ইচ্ছা করেন তোমরা সেই ভাবে শীঘ্র চেষ্টা করো ॥ ৩২-৩৫


🟥 বিশ্লেষণ 👉 ৮বছর বয়সী পার্বতী দেবী মহাদেবের সেবা করতে করতেই যৌবন অবস্থাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, ভুবন সম্পন্ন দেবী পার্বতীর সাথে যাতে মহাদেবের বিবাহ শীঘ্রই হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেবতাদের দিয়েছেন ব্রহ্মা, সুতরাং এখানে সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে দেরি পার্বতী বিবাহের পূর্বে যৌবন অবস্থা প্রাপ্ত করেছিলেন, তিনি তিনি বাল্য অবস্থাতে বিবাহ করেননি। আর্যনামাজীরা ৮বছর বয়সী পার্বতী দেবীকে শিবের কাছে নিয়ে যাবার শ্লোকটি তুলে অপযুক্তি বোঝাতে চেয়েছে যে দেবী পার্বতী ওই ৮বছর বয়েসেই বিবাহ করেছিলেন, কিন্তু আর্যনামাজীরা জানে না যে ৮ বছর বয়সী পার্বতীদেবী শিবের সেবা করতে করতেই যৌবননাবস্থা প্রাপ্ত করেছিলেন। যা আমরা শ্লোক সহ তুলে দেখিয়ে দিলাম, অর্ধসত্য প্রচার করা হল আর্যমসমাজীদের প্রকৃত ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য । কিন্তু আর্যনামাজীরা জানে না যে ওদের আগাগোড়া পরখ করবার মতোও কেউ এই জগতে আছে। সুতরাং মিথ্যাচার করে পার পাবে না বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক আর্যমসমাজীরা। 


তৃতীয় প্রমাণ 👇


দেবী পার্বতী পরমেশ্বর শিব কে নিজের পতিরূপে পাওয়ার জন্য তপস্যা করছিলেন, তখন পরমেশ্বর শিব দেবী পার্বতীকে পরীক্ষা করবার জন্য একজন ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে দেবী পার্বতীকে পরীক্ষা করতে আসেন। সেই সময়  ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণরূপ ধারণ করা শিব দেবী পার্বতীকে সরাসরি তরুণী যুবতী বলে সম্মোধন করেন। শব্দপ্রমাণ দেখুন 👇

ন বালা ন চ বৃদ্ধাসি তরুণী ভাসি শোভনা।

কথং পতিং বিনা তীক্ষ্ণং তপশ্চরসি বৈ বনে।।১১

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/৩য় খণ্ড/অধ্যায় নং ১৬]

সরলার্থ : তুমি বালিকাও নয়, বৃদ্ধাও না, তোমাকে সুন্দরী তরুণী বলে মনে হচ্ছে। তবে পতিকে ছাড়াই কি জন্য এই বনে এসে কঠোর তপস্যা করছো ? ॥১১


🟥 বিশ্লেষণ 👉  এখানে সরাসরি দেবী পার্বতীকে তরুণী অর্থাৎ যুবতী বলা হয়েছে।  


সিদ্ধান্ত : পুরাণ শাস্ত্র থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে নারীর বিবাহ যৌবন বয়সে হয়, সুতরাং দুচারটে শ্লোকের খণ্ডিতাংশ তুলে তার আক্ষরিক অর্থের ভিত্তিতে অর্ধসত্য প্রচার করে আর্যমসমাজী ম্লেচ্ছরা পুরাণ শাস্ত্রকে অবৈদিক বা অমান্য প্রমাণ করতে অসমর্থ হল। 


বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক আর্যমসমাজী ম্লেচ্ছদের দ্বারা পুরাণ শাস্ত্রের নামে ছড়ানো অপপ্রচার এখানে বেদ ও পুরাণ উভয়ের ভিত্তিতেই খণ্ডিত হল।

অর্ধসত্য প্রকাশে লজ্জাহীন অগ্নিপীরম্লেচ্ছ সৈনিকদের আস্ফালন - শিবকৃপায় আরো একবার দমানো হল, বাকিটা ইতিহাস... 😁


॥ ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥

 ॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥


🔥অসনাতনীদের আস্ফালন দমনে - শ্রীনন্দীনাথ শৈব 

💥বিশেষ সহযোগিতায় - শ্রীগৌতম রায় শৈবজী 

🚩কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 


আরো দেখুন 👇

👉দয়ানন্দ সরস্বতীর রচিত সত্যার্থপ্রকাশ পুস্তকে শিবপুরাণ সমীক্ষা নামক আপত্তির নিরসন

👉শিবমহাপুরাণোক্ত দারুবনে শিবলিঙ্গ প্রসঙ্গকে অশ্লীল আখ্যা দেয়া অসনাতনীদের আস্ফালনের নিষ্পত্তি 

👉 পুরাণের প্রকাশক স্বয়ং পরমাত্মা শিব, ব্যাসদেব পুরাণের রচয়িতা নন 



মন্তব্যসমূহ

  1. থিওসোক্যাল সোসাইটির মুখোস আর্যসমাজীদের মুখে ঝামা ঘসা বিশ্লেষন। জয় জয় বেদ,পুরাণ, তন্ত্র,আগম
    জয় জয় সত্য, সনাতন।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত