বাল্য-বিবাহ প্রসঙ্গে আর্যসমাজীদের দ্বারা বেদ মন্ত্রের অর্থ বিকৃতিকরণ এবং পুরাণের সাথে বেদের বিরোধ বাঁধানোর চক্রান্ত ফাঁস
আর্য সমাজীদের দ্বারা বাল্য বিবাহ প্রসঙ্গে বেদ মন্ত্রের বিকৃতিকরণ সংক্রান্ত পোস্টটির লিঙ্ক দেওয়া হল, আপনারা চাইলে পুরোটা পড়ে দেখতে পারেন 👇👇👇
http://back2thevedas.blogspot.com/2022/01/blog-post_6.html?m=1
তাদের প্রথম দাবী -
উপরে প্রদত্ত মূল শ্লোকে কোথাও 'বাল্যবিবাহ' শব্দটি পর্যন্ত নেই, সেখানে এই সব নব্য বৈদিক ফণ্ডিতের দল কোথা থেকে 'বাল্যবিবাহ' শব্দের আমদানী করল সেটা তাদের তথাকথিত মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর পক্ষেও বলা হয়তো সম্ভব নয়। এর কারণ এবার দয়াভণ্ডনন্দ এর ভাষ্য দেখে দেখে নেব, উনি আলোচ্য মন্ত্রের কোন অর্থ বের করেছেন সেটা দেখে নেওয়া যাক -
"যেমন সর্দার তেমন তাঁর চ্যালা", এটা তো সকলেরই শোনা কিন্তু এই অগ্নিপীরবাবা-রা যে তাদের তথাকথিত মহর্ষি দয়ালবাবার বাটপারির উপরেও যে আরো মশলা আমদানি করেছে, সেটি সত্যিই লোক হাসানো ছাড়া আর কিছুই না। কারণ, উপরে প্রদত্ত দয়াভাষ্যের কোথাও বাল্যবিবাহ শব্দের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। দয়াভাষ্যে আলোচ্য শ্লোক প্রসঙ্গে শুধুমাত্র ব্রহ্মচর্য অবস্থায় শিক্ষা লাভের ব্যাপারে বলা রয়েছে, উপরে প্রদত্ত দয়ানন্দ ভাষ্য পড়লেই তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
এরা নিজেদের তথাকথিত মহর্ষির কথার উপরে উঠে কথা বলেছে... ছিঃ ছিঃ কত বড় সাচ্চা আর্যসমাজী এরা 😄
যদিও দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্যও বিকৃত। কারণ আলোচ্য শ্লোকটি বনস্পতি দেব 'যুপ' এর প্রতি সমর্পিত। কিন্তু মূর্তিপূজা বিরোধী, নিরাকারবাদী আর্য নামাজীরা সেই প্রসঙ্গকেই সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে, সংশ্লিষ্ট শ্লোকটির অর্থই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। সাধেই কি আর এদের ধুরন্ধর বলা হয়।
এবার দেখে নেব সনাতন পণ্ডিতগণ সংশ্লিষ্ট শ্লোকের কি অর্থ বের করেছেন -
মহামান্য আচার্য্য সায়ণ এর ভাষ্য সহ অন্যান্য পণ্ডিতগণ কৃত অনুবাদ অধ্যয়ন করে এটাই সিদ্ধান্ত দাঁড়ায় যে আলোচ্য শ্লোকটি 'যুপ' নামক দেবতার উদ্দ্যেশ্যে সমর্পিত, আগে এবং পরের শ্লোক গুলির অনুবাদ অধ্যয়ন করলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়, এখানে কোথাও কোনো কিছু সাথে বাল্যবিবাহের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং অগ্নিবিড়িখোরেদের এবং তাঁদের তথাকথিত মহর্ষির ভাষ্য এর মিথ্যাচার এবং চালবাজী এখানেই ফাঁস হয়ে যায়।
তাদের দ্বিতীয় দাবী -
দয়াভাষ্যের গল্প তো দেখছি অন্য কথা বলছে। তার যে কল্পনা শক্তি এত প্রবল ছিল, সেটা হয়তো বেদের প্রকট কর্তা ঈশ্বরের জানা ছিল না। 'ধেনবঃ', 'দেবানাম', 'অশিশ্বী', 'অপ্রদুদ্ধা' - ইত্যাদি শব্দের অর্থকে কিসের ভিত্তিতে ইনি অনুবাদ করেছেন, সেটা ইনিই জানেন। অনুবাদে ইনি 'পতি' শব্দটি কোথা থেকে ধার করেছেন তা ইনিই জানেন। এনার দ্বারা কৃত আলোচ্য শ্লোকের অনুবাদ নিম্নরূপ- "প্রথম অবস্থায় (ব্রহ্মচর্য) বিদ্যালাভ করার পর, সদ্য-যৌবনপ্রাপ্ত ব্রহ্মচারিণী স্ত্রী-রা নিজের ন্যায় পতি লাভের পর যেরূপ আনন্দিত হন, সেই রূপ সর্ববিদ্যা যুক্ত বাণী লাভ করার পর বিদ্বানরাও খুশি হন"।
এনার অনুবাদের সাথে তো দেখছি এনার চ্যালারা নিজেদের মস্তিষ্ক প্রসূত কাল্পনিক গল্প মিশিয়ে খিচুড়ি করে নতুন maya কাহিনীরই রচনা করে ফেলেছে। 'বাচকলুপ্তোপমালঙ্কার'- এর দোহাই দিয়ে তিলকে তাল বানানোর চাতুরি ইনি ভালোই শিখেছেন দেখছি।
আলোচ্য শ্লোকে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত কোনো বিষয় তো দূরের কথা, কোনো মনুষ্য স্ত্রী এর কথা পর্যন্ত এখানে বলা হয়নি, যা নিম্নে প্রদত্ত বিভিন্ন পণ্ডিতগণ কৃত অনুবাদ ও ভাষ্য দ্বারা সুস্পষ্ট হয় -
উপরে প্রদত্ত বিভিন্ন পণ্ডিতগণকৃত অনুবাদ এবং মহামান্য সায়ণ ভাষ্য অধ্যয়ন করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আলোচ্য শ্লোকটি সম্পূর্ণ লক্ষার্থক/রূপকার্থক। আলোচ্য শ্লোকের দেবতা - বিশ্বদেব, এখানে কোনো মনুষ্য তরুণীর কথা বলা হয়নি বরং 'দিক' (দিশা) অথবা 'মেঘ' এর কথা বলা হয়েছে। এই মেঘকেই সদ্য-যৌবন প্রাপ্ত, শিশুহীণ (কুমারী), ক্ষীণতা হীন, রসযুক্তা (তেজস্বীনী), দোহন করা হয়নি (ভরিত স্তন), দুগ্ধামৃত এর বর্ষণকারিণী, নবীন (লাবণ্যময়ী) যুবতীর সাথে তুলনা করা হয়েছে মাত্র আলোচ্য শ্লোকে, যা মেঘের বর্ষিত হওয়ার প্রবণতাকেই ইঙ্গিত করে। সুতরাং, এখানে বাল্যবিবাহের উল্লেখের কোনো প্রশ্নই ওঠে না । আর্যনামাজীদের ভণ্ডামী পুনরায় ফাঁস হল।
তাদের তৃতীয় দাবী -
আলোচ্য শ্লোকের অনুবাদের ক্ষেত্রেও অগ্নিপীরনামাজীরা গোরুর রচনা লিখে ফেলেছে দেখছি। যেন, তেন প্রকারে 'ব্রহ্মচর্য', 'যৌবন-অবস্থা', 'পুত্র-পৌত্র', 'বিদ্যা-শিক্ষা', 'শতবর্ষ' - এসব শব্দের আমদানী ঘটিয়ে, সেসবের সাথে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক স্থাপন করে, বেদ মন্ত্রের অর্থকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত করে স্বার্থসিদ্ধি করাটাই হল এদের মূল লক্ষ্য। আমরা এবার দেখবো, এদের দয়াবাবা কি ভাষ্য বের করেছেন আলোচ্য শ্লোকের -
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন