বাল্য-বিবাহ প্রসঙ্গে আর্যসমাজীদের দ্বারা বেদ মন্ত্রের অর্থ বিকৃতিকরণ এবং পুরাণের সাথে বেদের বিরোধ বাঁধানোর চক্রান্ত ফাঁস



কলিযুগে এই ধরাধামে একদল ম্লেচ্ছ, প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদী, যবনবীর, দয়ালভণ্ডবাবার চ্যালা, আর্যনামাজীদের আবির্ভাব হয়েছে যারা কিনা দাবী করে, পুরাণ শাস্ত্র নাকি বাল্য বিবাহের আতুরঘর এবং বেদই নাকি একমাত্র শাস্ত্র যেখানে বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করা হয়েছে। শাস্ত্র অধ্যয়ন করলেই হয়না, শাস্ত্র বাক্য এর অর্থগত প্রয়োগ কোথায় কিভাবে হয়েছে, স্থান- কাল- পাত্র ভেদে শাস্ত্র বাক্য কিভাবে প্রযুক্ত হয় সেসব বোঝার আর বালাই নেই। পুরাণ শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে যে এদের ভণ্ডামীর ঝুলির গিট খুলে যাবে, সেই জন্যই তো এরা পুরাণ শাস্ত্রকে অস্বীকার করে। কিন্তু যখনই নিজের আঁতে ঘা লাগে, তখনই নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেই পুরাণ  শাস্ত্রকে বা পৌরাণিক কোনো চরিত্রকে ঢাল বানিয়ে সাধারণ মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভাঙতে এরা একপাও পিছোয় না। পুরাণ শাস্ত্রে যে বাল্যবিবাহের কোনো উল্লেখ নেই সেটার প্রমাণ এবং বাল্য বিবাহ সম্পর্কিত পুরাণ শাস্ত্রের প্রকৃত মীমাংসা পূর্বেই করা হয়ে গিয়েছে। এই পোস্টে প্রমাণ করা হবে যে, আর্যনামাজী বিড়িখোরেরা বেদ মন্ত্রের অর্থের বিকৃতিকরণ ঘটাতে এবং মিথ্যাচার করতে কতটা পটু ।

আর্য সমাজীদের দ্বারা বাল্য বিবাহ প্রসঙ্গে বেদ মন্ত্রের বিকৃতিকরণ সংক্রান্ত পোস্টটির লিঙ্ক দেওয়া হল, আপনারা চাইলে পুরোটা পড়ে দেখতে পারেন  👇👇👇

http://back2thevedas.blogspot.com/2022/01/blog-post_6.html?m=1


তাদের প্রথম দাবী -

উপরে প্রদত্ত মূল শ্লোকে কোথাও 'বাল্যবিবাহ' শব্দটি পর্যন্ত নেই, সেখানে এই সব নব্য বৈদিক ফণ্ডিতের দল কোথা থেকে 'বাল্যবিবাহ' শব্দের আমদানী করল সেটা তাদের তথাকথিত মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর পক্ষেও বলা হয়তো সম্ভব নয়। এর কারণ এবার দয়াভণ্ডনন্দ এর ভাষ্য দেখে দেখে নেব, উনি আলোচ্য মন্ত্রের কোন অর্থ বের করেছেন সেটা দেখে নেওয়া যাক - 

"যেমন সর্দার তেমন তাঁর চ্যালা", এটা তো সকলেরই শোনা কিন্তু এই অগ্নিপীরবাবা-রা যে তাদের তথাকথিত মহর্ষি দয়ালবাবার বাটপারির উপরেও যে আরো মশলা আমদানি করেছে, সেটি সত্যিই লোক হাসানো ছাড়া আর কিছুই না। কারণ, উপরে প্রদত্ত দয়াভাষ্যের কোথাও বাল্যবিবাহ শব্দের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। দয়াভাষ্যে আলোচ্য শ্লোক প্রসঙ্গে শুধুমাত্র ব্রহ্মচর্য অবস্থায় শিক্ষা লাভের ব্যাপারে বলা রয়েছে, উপরে প্রদত্ত দয়ানন্দ ভাষ্য পড়লেই তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। 

এরা নিজেদের তথাকথিত মহর্ষির কথার উপরে উঠে কথা বলেছে... ছিঃ ছিঃ কত বড় সাচ্চা আর্যসমাজী এরা 😄


যদিও দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্যও বিকৃত। কারণ আলোচ্য শ্লোকটি বনস্পতি দেব 'যুপ' এর প্রতি সমর্পিত। কিন্তু মূর্তিপূজা বিরোধী, নিরাকারবাদী আর্য নামাজীরা সেই প্রসঙ্গকেই সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে, সংশ্লিষ্ট শ্লোকটির অর্থই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। সাধেই কি আর এদের ধুরন্ধর বলা হয়।

এবার দেখে নেব সনাতন পণ্ডিতগণ সংশ্লিষ্ট শ্লোকের কি অর্থ বের করেছেন -



মহামান্য আচার্য্য সায়ণ এর ভাষ্য সহ অন্যান্য পণ্ডিতগণ কৃত অনুবাদ অধ্যয়ন করে এটাই সিদ্ধান্ত দাঁড়ায় যে আলোচ্য শ্লোকটি 'যুপ' নামক দেবতার উদ্দ্যেশ্যে সমর্পিত, আগে এবং পরের শ্লোক গুলির অনুবাদ অধ্যয়ন করলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়, এখানে কোথাও কোনো কিছু সাথে বাল্যবিবাহের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং অগ্নিবিড়িখোরেদের এবং তাঁদের তথাকথিত মহর্ষির ভাষ্য এর মিথ্যাচার এবং চালবাজী এখানেই ফাঁস হয়ে যায়। 


তাদের দ্বিতীয় দাবী -



অগ্নিপীরদের মনগড়া কাহিনী পুনরায় শুরু। এখানে আলোচ্য শ্লোকে কোথায় তারা কোনো মনুষ্য যুবতীর উল্লেখ পেয়েছে সেটা ওদের পূর্বপুরুষরাও বলতে সমর্থ নয়। 'ব্রহ্মচর্য', 'কুমারী অবস্থা', 'তরুণ পতি', 'পূর্ণ যৌবনা স্ত্রী', 'গর্ভধারণ' ইত্যাদি এসব নতুন নতুন শব্দ কিসের ভিত্তিতে আমদানি করেছে, সেটা ওদের দয়াবাবাই জানে। পাণিনির কোন সূত্র, কোন কাশিকা-কার এর বৃত্তি, কোন নিরুক্ত বা কোন শব্দ-কোষের এর ভিত্তিতে এরা বেদ মন্ত্রের নতুন নতুন অর্থ আমদানি করছে সেটা এদের বিকৃত মস্তিষ্ক ছাড়া আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। শব্দের বাচ্যার্থ বা লক্ষার্থ কোনো দিক থেকে বিচার করেই তো এদের উচ্চ কোটির অনুবাদকে মাপা সম্ভব হচ্ছে না। দেখা যাক এদের তথাকথিত মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার ভাষ্যে আলোচ্য শ্লোক প্রসঙ্গে কি নতুন গল্প বলছে  -

দয়াভাষ্যের গল্প তো দেখছি অন্য কথা বলছে। তার যে কল্পনা শক্তি এত প্রবল ছিল, সেটা হয়তো বেদের প্রকট কর্তা ঈশ্বরের জানা ছিল না। 'ধেনবঃ', 'দেবানাম', 'অশিশ্বী', 'অপ্রদুদ্ধা' - ইত্যাদি শব্দের অর্থকে কিসের ভিত্তিতে ইনি অনুবাদ করেছেন, সেটা ইনিই জানেন। অনুবাদে ইনি 'পতি' শব্দটি কোথা থেকে ধার করেছেন তা ইনিই জানেন। এনার দ্বারা কৃত আলোচ্য শ্লোকের অনুবাদ নিম্নরূপ- "প্রথম অবস্থায় (ব্রহ্মচর্য) বিদ্যালাভ করার পর, সদ্য-যৌবনপ্রাপ্ত ব্রহ্মচারিণী স্ত্রী-রা নিজের ন্যায় পতি লাভের পর যেরূপ আনন্দিত হন, সেই রূপ সর্ববিদ্যা যুক্ত বাণী লাভ করার পর বিদ্বানরাও খুশি হন"

এনার অনুবাদের সাথে তো দেখছি এনার চ্যালারা নিজেদের মস্তিষ্ক প্রসূত কাল্পনিক গল্প মিশিয়ে খিচুড়ি করে নতুন maya কাহিনীরই রচনা করে ফেলেছে।  'বাচকলুপ্তোপমালঙ্কার'- এর দোহাই দিয়ে তিলকে তাল বানানোর চাতুরি ইনি ভালোই শিখেছেন দেখছি।

আলোচ্য শ্লোকে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত কোনো বিষয় তো দূরের কথা, কোনো মনুষ্য স্ত্রী এর কথা পর্যন্ত এখানে বলা হয়নি, যা নিম্নে প্রদত্ত বিভিন্ন পণ্ডিতগণ কৃত অনুবাদ ও ভাষ্য দ্বারা সুস্পষ্ট হয় -




উপরে প্রদত্ত বিভিন্ন পণ্ডিতগণকৃত অনুবাদ এবং মহামান্য সায়ণ ভাষ্য অধ্যয়ন করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আলোচ্য শ্লোকটি সম্পূর্ণ লক্ষার্থক/রূপকার্থক। আলোচ্য শ্লোকের দেবতা - বিশ্বদেব, এখানে কোনো মনুষ্য তরুণীর কথা বলা হয়নি বরং 'দিক' (দিশা) অথবা 'মেঘ' এর কথা বলা হয়েছে। এই মেঘকেই সদ্য-যৌবন প্রাপ্ত, শিশুহীণ (কুমারী), ক্ষীণতা হীন, রসযুক্তা (তেজস্বীনী), দোহন করা হয়নি (ভরিত স্তন), দুগ্ধামৃত এর বর্ষণকারিণী, নবীন (লাবণ্যময়ী) যুবতীর সাথে তুলনা করা হয়েছে মাত্র আলোচ্য শ্লোকে, যা মেঘের বর্ষিত হওয়ার প্রবণতাকেই ইঙ্গিত করে। সুতরাং, এখানে বাল্যবিবাহের উল্লেখের কোনো প্রশ্নই ওঠে না । আর্যনামাজীদের ভণ্ডামী পুনরায় ফাঁস হল। 


তাদের তৃতীয় দাবী 


আলোচ্য শ্লোকের অনুবাদের ক্ষেত্রেও অগ্নিপীরনামাজীরা গোরুর রচনা লিখে ফেলেছে দেখছি। যেন, তেন প্রকারে 'ব্রহ্মচর্য', 'যৌবন-অবস্থা', 'পুত্র-পৌত্র', 'বিদ্যা-শিক্ষা', 'শতবর্ষ' - এসব শব্দের আমদানী ঘটিয়ে, সেসবের সাথে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক স্থাপন করে, বেদ মন্ত্রের অর্থকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপিত করে স্বার্থসিদ্ধি করাটাই হল এদের মূল লক্ষ্য।  আমরা এবার দেখবো, এদের দয়াবাবা কি ভাষ্য বের করেছেন আলোচ্য শ্লোকের -


আলোচ্য মন্ত্রের অনুবাদ পড়লেই বোঝা যায় যে, বার্তালাভ হচ্ছে লোপামুদ্রা এবং ঋষি অগস্ত্য এর মধ্যে, সম্ভোগ অথবা রতিক্রিয়া বিষয়ের উপর, সুতরাং মন্ত্রের দেবতা স্বাভাবিক ভাবেই রতি হওয়া উচিৎ, সেখানে তো দেখা যাচ্ছে - দয়ালবাবা আলোচ্য মন্ত্রের দেবতা হিসেবে 'দম্পতি'কেই নির্দেশ করে বসে আছেন, বানোয়াট করবার এত অসাধারণ প্রতিভা ইনি কোথায় থেকে পান কে জানে। 

যদিও আলোচ্য শ্লোক প্রসঙ্গে দয়াভাষ্যে কোথাও 'ব্রহ্মচর্যে বিদ্যা-শিক্ষা লাভ', 'যৌবনে বিবাহ' ইত্যাদি শব্দের কোনো উল্লেখ নেই। এ থেকেই বোঝাযায় যে এসব অগ্নিনামাজীরা কতটা বাটপার এবং বলদামিতে এরা এদের মহর্ষির থেকেও কয়েক কাঠি উপরে।

এবার উক্ত মন্ত্রের মূল অর্থ দেখে নেব মহামান্য আচার্যদের ভাষ্য ও অনুবাদ হতে - 






আচার্য্য সায়ণ এর ভাষ্য সহ অন্যান্য পণ্ডিতগণের অনুবাদ অধ্যয়ন পূর্বক উক্ত মন্ত্রের যথাযথ অর্থ দাঁড়ায় -

লোপামুদ্রা তাঁর স্বামী অগস্ত্যকে বলছেন যে, তিনি পূর্ববর্তী বহু বছর ('শরদ' শব্দটি এখানে লক্ষার্থক) ধরে (জরা বা বার্ধক্যের দিকে ক্রমশ প্রেরণকারী) দিবারাত্র এবং ঊষাকালে ঋষি অগস্ত্য-এর সেবা করে চলেছেন এবং তিনি শ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। জরা তথা বার্ধক্য দেহের ক্ষমতা তথা সৌন্দর্য্যকে ক্ষীণ করে দেয়। (সুতরাং) (রেতোৎসর্গে) সামর্থ্যবাণ পুরুষেরই 
পত্নী এর নিকট গমন করা  (সম্ভোগ নিমিত্তে) উচিৎ

সুতরাং, আলোচ্য বেদমন্ত্রের কোনো অংশের সাথেই বাল্যবিবাহ এর দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই। 

🔥এবার দেখুন 👇

আপনারাই এবার অগ্নিসমাজীদের ভণ্ডামীর বিচার করুন। প্রাচীন আচার্য্যদের মান্যতাকে উপেক্ষা করে, নিজ মনগড়া পাষণ্ড মত প্রচারের নিমিত্তে যারা বেদের মন্ত্রের অর্থকেই বিকৃত করে দেয়, তাদেরকে কলির অসুর ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। নিজ আঁতে ঘা লাগলে চৌর্যবৃত্তি এবং দ্বিচারিতা করতে এবং নিজেদের তথাকথিত মহর্ষি দয়ানন্দের ভাষ্যের উপরে বাটপারি করতেও এরা পটু। মিষ্টি কথায় এবং শাস্ত্র এর মিথ্যা আছিলার মায়ায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে সনাতন ধর্ম আর বৈদিক মত এর নামে নিজেদের পাশ্চাত্যবাদী, নাস্তিক্যবাদী ম্লেচ্ছ মত এর প্রচার প্রসার করাই এদের মূল লক্ষ্য। সনাতন সমাজ এর ক্যান্সার স্বরূপ এই যবনবীরদের থেকে সাবধান হওয়ার নিবেদন জানানো হচ্ছে। এদেরকে বয়কট করুন, সত্যের পথে চলুন।

ভবিষ্যতে সনাতন ধর্ম নীতি বিরোধী এদের প্রত্যেকটি দাবীর সকলের সামনে আগাগোড়া খণ্ডন করা হবে ISSGT এর পক্ষ থেকে।

তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু |

👉 অপপ্রচার দমনে - RohitKrChoudhury (ISSGT)

👉 প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha



♦️আর্যসমাজীদের আরো কিছু দাবীর খণ্ডন গুলি পড়তে নীচের লিঙ্ক গুলিতে ক্লিক করে পড়ুন 👇










মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত