পুরাণের প্রকাশক স্বয়ং পরমাত্মা শিব, ব্যাসদেব পুরাণের রচয়িতা নন

 


বর্তমানে দেখা যায় আর্যসমাজীরা সনাতনীদের মাঝে পুরাণ শাস্ত্রকে নিন্দা করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে,

আর্যসমাজীরা বলছে যে, অষ্টাদশ পুরাণসমূহকে মান্যকারী পৌরাণিক ব্যক্তিরা নাকি ব্যাসদেবকে পুরাণশাস্ত্রের রচয়িতা বলে মানেন। 


আমরা শৈব সনাতনীরা অষ্টাদশ পুরাণসমূহ শাস্ত্রকে মানি। কারণ, শিবমহাপুরাণ ও লিঙ্গমহাপুরাণ দুটি এই অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যেই পরিগণিত হয়।

তাই আমরাও পৌরাণিক বলে পরিচিত।


আমরা পৌরাণিক হয়ে বলছি, পুরাণ শাস্ত্রের রচয়িতা ভগবান ব্যাসদেব নন, বরং পুরাণ সমূহের রচয়িতা সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিব ।

আর্যসমাজীরা আগাগোড়া মূর্খ ছিল, মূর্খ আছে আর চিরকাল মূর্খ হয়েই থাকবে। কারণ, এদের পাণ্ডা দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই একটি আকাট মূর্খ ম্লেচ্ছ ছিলেন। সেই কারণে এরা সর্বদাই মিথ্যাচার করতে অগ্রগণ্য, তার‌ই সাথে এরা অর্ধসত্য বলতে খুব‌ই পটু।

আর্যসমাজী দয়ানন্দীরা পৌরাণিকদের মান্যতা সম্পর্কে না জেনেই চিল্লামিল্লি করা শুরু করেছে যা এদের জন্মগত রোগ। বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক আর্যমসমাজীদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে এই দাবিটি তুলে একটি ভিডিও তৈরি করে আপলোড করেছে। 

সেই ভিডিওর বিপক্ষে আমাদের পোষ্ট টি করা হল।

⭕বাংলাদেশ অগ্নিবীর ইউটিউব চ্যানেলের সেই ভিডিওটির লিঙ্ক 👉 https://youtu.be/j0GNV9A0duw

উপরোক্ত এই ভিডিওতে করা আর্যসমাজী পাষণ্ড ম্লেচ্ছ দের দাবি আমরা এখন খণ্ডন করবো নীচে। 

যাই হোক এবার পুরাণ থেকেই প্রমাণ করছি পরমেশ্বর শিব‌ই পুরাণের নির্মাণ কর্তা ।


শিবমহাপুরাণ থেকে প্রমাণ 👇


শিবেন কল্পিতং পূর্বং পুরাণং গ্রন্থসংখ্যয়া ।

শতকোটিপ্রমাণং হি পুরা সৃষ্টৌ সুবিস্তৃতম ॥৫৭

ব্যস্তেঽষ্টাদশধা চৈব পুরাণে দ্বাপরাদিষু ।

চতুর্লক্ষণ সংক্ষিপ্তে কৃতে দ্বৈপায়নাদিভিঃ ॥৫৮

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বরসংহিতা/অধ্যায় নং ২]

সরলার্থ - পূর্বকালে ভগবান শিব শ্লোকসংখ্যার দৃষ্টিতে একশত কোটি শ্লোকের একটিই পুরাণগ্রন্থ গ্রথিত করেছিলেন। সৃষ্টির আদিতে নির্মিত সেই পুরাণ-সাহিত্য অত্যন্ত বিস্তৃত ছিল ॥৫৭

তারপর দ্বাপর ইত্যাদি যুগে দ্বৈপায়ন (ব্যাসদেব) প্রমুখ মহর্ষিগণ যখন পুরাণকে আঠারো ভাগে বিভক্ত করেন, সেই সময় সম্পূর্ণ পুরাণের সংক্ষিপ্ত স্বরূপ শুধু চার লাখ শ্লোকে সীমিত করা হয় ॥৫৮


এবার বৈষ্ণবদের পদ্মপুরাণ থেকে প্রমাণ দিচ্ছি 👇

সদাশিব উবাচ্

"মদ্বাক্যাদখিলংশুদ্ধ্যেন্মদ্বাক্যাদমৃতং বিষম্ । মদ্বাক্যাদখিলাবেদা মদ্বাক্যাদ্দেবতাদয়ঃ ॥২২৭  মদ্বাক্যাদ্ধর্মবিজ্ঞানং মদ্বাক্যান্মোক্ষ উচ্চত্যে । পুরাণন্যাগমাশ্চৈব স্মৃতয়ো মম বাক্যতঃ ॥২২৮  "

(তথ্যসূত্র - পদ্মপুরাণ/ পাতাল খন্ড / ১১৪ নং অধ্যায়)

সরলার্থ - সদাশিব বললেন - আমার বাক্য মাত্রই অখিল বিশ্বসংসার শুদ্ধ হয়ে যায়। আমার বাক্যে বিষও অমৃত হয়ে যায়। আমার বাক্যই হল সমগ্র বেদ শাস্ত্র । আমার বাক্যেই দেবতারা দেবত্ব প্রাপ্ত হন। আমার বাক্যই সাক্ষাৎ ধর্ম ও বিজ্ঞান স্বরূপ। আমার বাক্যেই জীব মোক্ষলাভ করে। সমগ্র পুরাণ, আগম এবং স্মৃতিশাস্ত্র সবই আমার বাক্য । 

পদ্মপুরাণে আরো বলা হয়েছে 👇

"পুরাণমকমেবাসীদস্মিন্কল্পান্তরে নৃপ ত্রিবর্গসাধনং পুণ্যং শতকোটিপ্রবিস্তরম্ ॥

স্মৃত্বা জগাদ চ মুনীন্প্রতি দেবশ্চতুর্মুখঃ ।

প্রবৃত্তিঃ সর্বশাস্ত্রাণাং পুরাণস্যভবত্ততঃ ॥

কালেনাগ্ৰহণং দৃষ্টবা পুরাণস্য ততো নৃপ ।

ব্যাসরূপং বিভুং কৃত্বা সংহরেৎস যুগেযুগে ॥

চতুর্লক্ষপ্রমাণেন দ্বাপরে সদা তদষ্টাদশধা কৃত্বা ভূর্লোকেঽস্মিন্প্রভাষতে ॥

অদ্যাপি দেবলোকে তচ্ছতকোটিপ্রবিস্তরম্ ।

তদর্থোত্র চতুর্লক্ষঃ সংক্ষেপেণ নিবেশিতঃ ॥ 

পুরাণানি দশাষ্টৌ চ সাম্প্রতং তদিহোচ্যতে ‌। 

 [তথ্যসূত্র : পদ্মপুরাণ/রেবামাহত্ম্য ১। ২৩। ৩০]

সরলার্থ -

হে রাজন! কল্পান্তরে একটি মাত্র পুরাণ ছিল এবং অর্থ, ধর্ম, কর্মের সাধক সেটি(পুরাণ টি) শত-কোটি শ্লোকে বিস্তৃত ছিল, তাকে স্মরণ করে ব্রহ্মা  মুনিগণের প্রতি কথন করেন, তখন সকল শাস্ত্র ও পুরাণের প্রবৃত্তি হয়। যখন সময়ের পর পুরাণের অগ্ৰহণ দেখে যে, এতো বড়ো গ্ৰন্থ সকলে কীভাবে গ্ৰহণ করতে পারে তখন ব্যাসরূপ ধারণ করে বিভু নারয়ণ প্রতি দ্বাপর যুগে সেই পুরাণকে সংক্ষিপ্ত করেন। প্রতি দ্বাপরযুগে তিনি চার লক্ষ প্রমানের পুরাণকে ১৮ টি ভাগে বিভক্ত করেন।



এবার মৎস্যপুরাণের থেকে প্রমাণ দিচ্ছি 👇 

(এখানে প্রমাণ করা হয়েছে যে, ব্যাসদেবের পূর্বেই পুরাণ শাস্ত্র উপলব্ধ ছিল)

"পুরাণমেকমেবাসীন্তদা কল্পান্তরেঽনঘ ॥

ত্রিবর্গসাধনং পুণ্যং শতকোটিপ্রবিস্তরম্ ॥৪॥

নির্দগ্ধেষু চ লোকেষু বাজিরূপেণ বৈ মযা ॥

অঙ্গানি চতুরো বেদাঃ পুরাণং ন্যাযবিস্তরম্ ॥ ৫॥

মীমাংসা ধর্মশাস্ত্রং চ পরিগৃহ্য মরা কৃতম্ ॥

মৎস্যরূপেণ চ পুনঃ কল্পাদাবুদকার্ণবে ॥ ৬॥

অশেষমেতৎকথিতমুদকান্তর্গতেন চ ॥

শ্রুত্বা জগাদ চ মুনীন্প্রতি দেবার চতুর্মুখঃ ॥৭॥

[তথ্যসূত্র : মৎস্যপুরাণ/৫৩ নং অধ্যায়]

সরলার্থ - হে পাপরহিত! প্রথমে একটি‌ই পুরাণ ছিল যা ত্রিবর্গসাধন এবং পুণ্যস্বরূপ শতকোটি শ্লোকে বিস্তারসহিত ছিল, যখন সব লোক দগ্ধ হয়ে যায় তখন আমি বাজি রূপে অঙ্গ সহিত চার বেদ, পুরাণ, ন্যায় বিস্তার, মীমাংসা, ধর্মশাস্ত্রকে গ্ৰহণ করেছিলাম এবং কল্পের  আদিতে মৎসরূপে জলের অন্তর্গত এইসব বর্ণন করেছিলাম এবং এই পুরাণকে শুনে ব্রহ্মদেব অন্যান্য মুনিদের প্রতি বর্ণন করেন।


এবার বেদ থেকেই প্রমাণ করবো যে, পুরাণ শাস্ত্র ঈশ্বর অর্থাৎ পরমেশ্বর শিবের থেকেই উদয় হয়েছে👇

ঋচঃ সামানি ছন্দাংসি পুরাণযজুষা সহ।

উচ্ছিষ্টা জাজ্ঞিরে সর্বে দিবি দেবা দিবি শ্রিতাঃ ॥

[তথ্যসূত্র : অথর্ববেদ - ১১/৯/২৪]

সরলার্থ - যজ্ঞের উচ্ছিষ্ট দ্বারা ঈশ্বর থেকে যজুর্বেদের সহিত ঋক্, সাম, ছন্দ এবং পুরাণ প্রকটিত হয়।


উপরোক্ত তিনটি পুরাণের ও বেদের শব্দ প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হল - একটি পুরাণশাস্ত্র‌ই পরমেশ্বর শিব নির্মান করেছেন। 


সিদ্ধান্ত  : 

১) পুরাণ শাস্ত্র ঈশ্বরের বানী, একথা বেদ স্বীকার করেছে ও পুরাণশাস্ত্র নিজেও স্বীকার করেছে। যা সৃষ্টির পূর্বেই ঈশ্বর অর্থাৎ পরমেশ্বর শিব নির্মিত করেছেন।

২) ব্যাসদেব পুরাণ শাস্ত্রের রচয়িতা নন। ব্যাসদেবের জন্মের পূর্ব হতেই একটিই মাত্র পুরাণ শাস্ত্র প্রচলিত ছিল। কিন্তু তা অতি বৃহৎ আকারের হবার কারণে তা  প্রত্যেক কল্পের প্রত্যেক মন্বন্তরের প্রত্যেক চারযুগের মধ্যে দ্বাপরযুগে ব্যাসদেব দ্বারা সংক্ষিপ্ত আকারে বিভক্ত হয়ে ১৮টি পুরাণে পরিনত হয়।


যেহেতু, বেদ ও পুরাণ উভয়েই স্বীকার করেছে যে পুরাণ শাস্ত্র ঈশ্বরের বানী, ব্যাসদেবের রচিত নয়।

 সুতরাং, পুরাণ শাস্ত্র নিয়ে আর্যসমাজীদের দ্বারা প্রচারিত মিথ্যা ও অর্ধসত্য দাবি এখানে খণ্ডিত হল।

শিবকৃপায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক আর্যমসমাজীদের মিথ্যাচার গুলি ধীরে ধীরে এভাবেই সম্পূর্ণভাবে খণ্ডন করা হবে।  

নমঃ শিবায় ॥

নমঃ নন্দীকেশ্বরায় 🙏

✍️ অপপ্রচার দমনে - শ্রীনন্দীনাথ শৈব 

🙏সহযোগিতায় - শ্রীরোহিত কুমার চৌধুরী ও শ্রীমতি নমিতা রায় দেবীজী ।


🚩 কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত