শ্রীশ্রী ভৈরব স্তোত্রম্ (শ্রীঅভিনবগুপ্ত কৃত)




ব্যাপ্ত চরাচর ভাব বিশেষম্ চিন্ময় মেকমনন্ত অনাদিম্ ।
ভৈরব নাথমনাথ শরণ্যম্ তন্ময় চিত্ত তথা হৃদি বন্দে ॥ ১ ॥

🔴অনুবাদ -- যিনি সমগ্র জগৎ চরাচরকে ব্যাপ্ত করে রেখেছেন, যিনি ভাব-চৈতন্যের সাগর, যিনি চিন্ময়, এক ও অদ্বিতীয়, যিনি অনন্ত, অজন্মা, অনাদি, যিনি অনাথের নাথ সেই ভৈরবকে (পরমশিব স্বচ্ছন্দ ভৈরব) বন্দনা করি।

ত্বন্ময় মেতদ শেষ মিদানি ভাতি মম ত্বদনুগ্রহ শক্ত্যা ।
ত্বম চ মহেশ সদৈব মমাত্মা স্বাত্ম ময়ং মম তেন সমস্তম্ ॥ ২ ॥

🔴অনুবাদ -- হে মহেশ! তোমার অনুগ্রহ শক্তির দ্বারা তুমিই জগতরূপে প্রতিভাত হয়েছ। তুমি ব্যতীত এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। তুমি আমার আত্মস্বরূপ। তাই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড আমার আত্মস্বরূপ চিৎ এর থেকে অভিন্ন।

স্বাত্মনি বিশ্বগতে ত্বয়ি নাথে তেন ন সংসৃতি ভীতে কথাস্তি ।
সত্স্বপি দুর্ধর দুঃখ বিমোহ ত্রাস বিধায়িষু কর্ম গণেষু ॥ ৩ ॥

🔴অনুবাদ -- হে নাথ! আপনি আমার আত্মস্বরূপ এবং সেই চিদানন্দরূপি আত্মার প্রতিবিম্বই এই সমগ্র বিশ্ব। যার আমি সর্বদাই ভয়, কাঠিন্য, দুঃখ এসব থেকে মুক্ত যেগুলি জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনের দরুন সৃষ্টি হয়।

অন্তক মাম প্রতিমা দৃশমেনা ক্রোধ করাল তমাং বিনিধেহি ।
শংকর সেবন চিন্তন ধীরো ভীষণ ভৈরব শক্তি ময়োস্মি ॥ ৪ ॥

🔴অনুবাদ -- হে অন্তক! আমার প্রতি তোমার ক্রোধান্বিত করাল দৃষ্টি নিক্ষেপ কোরো না। আমি সর্বদাই সেই শঙ্করের চিন্তায়, ধ্যানে নিয়োজিত । তাই সেই পরমপ্রভু ভৈরবের সৃষ্টি, স্থিতি ও অন্তকারক শক্তির সাথে আমি একাত্ম হতে পেরেছি।

ইত্থমুপোদেব বন্ময় সংবিদ ধীধিতা দরিত ভুরি তমিস্তরঃ ।
মৃত্যু যমান্তক কর্ম পিশাচৈর নাথ নমোস্তু ন জাতু বিভেতি ॥ ৫ ॥

🔴অনুবাদ -- এই সমগ্র বিশ্বভুবনই তোমার স্বরূপ । হে নাথ! তোমারই শুদ্ধ সম্বিত শক্তি জাগতিক উপেক্ষা হতে মুক্ত করে আমাকে প্রজ্জ্বলিত করে তুলেছে। তাই মৃত্যু, যম, অন্তক, পিশাচ এসব আমাকে ভীত করতে তুলতে অক্ষম।

প্রোদিত সত্য বিবোধ মরীচি প্রোক্ষিত বিশ্ব পদার্থ সতত্বঃ ।
ভাব পরামৃত নির্ভর পূর্ণ ত্বব্যঃ মাত্মানি নিবৃতি মেমি ॥ ৬ ॥

🔴অনুবাদ -- তোমার সত্যস্বরূপ জ্যোতির ন্যায় চৈতন্যশক্তির জন্যই সমগ্র বিশ্ব ও পদার্থ অস্তিত্বমান হয়েছে । সেই শুদ্ধ চৈতন্যের দরুনই আমি নিজ আত্মস্বরূপে উপলব্ধি করেছি সেই অমৃত তত্ত্বকে যা আসলে মনের পরা/তূরীয় অবস্থা , যা নিবৃত্তিভাব সম্পন্ন।

মানস গোচর মেতি যদৈব ক্লেশ দশা তনু তাপ বিধাত্রী |
নাথ তদৈব মম ত্বদভেদ স্তোত্র পরামৃত বৃষ্টি রুদ্রেতও ॥ ৭ ॥

🔴অনুবাদ -- হে নাথ! যখন আমার মন ক্লেশে ব্যাকুল হয়ে ওঠে এবং দেহে ব্যাথা অনুভব হয় তখন ধ্যানমার্গ মারফত তোমার আর আমার একাত্ম হওয়ার বোধই অমৃত ধারা বর্ষণ করে সেই ব্যাথার উপশম করে।

শংকর সত্য মিদম ব্রত দান স্নান তপো ভব তাপ বিদারি ।
তাবক শাস্ত্র পরামৃত চিন্তা স্যন্দতি চেতসি নিবৃতি ধারাম্ ॥ ৮ ॥

🔴অনুবাদ-- হে শঙ্কর! এটা সত্য যে ভব সংসারের দুঃখ দূরীকরনের জন্য ব্রত, দান, স্নান, তর্পন এসব দরকার। তবে শৈবশাস্ত্রের প্রতি চিন্তন ও অনুরাগই সেই অমৃতসুধা বর্ষণের জন্য যথেষ্ট যা আমার মনে পরমানন্দের সঞ্চার করে।

নৃত্যতি গায়তি দৃষ্যতি গাঢম সম্বিদিয়ম মম ভৈরবনাথঃ ।
ত্বাম প্রিয়মাপ্য সুদর্শন মেকম দুর্লভ মন্য জনৈ সম যজ্ঞম ॥ ৯ ॥

🔴অনুবাদ -- হে ভৈরবনাথ! হর্ষে বিমোহিত হয়ে যখন আমি আপন মনে নৃত্য করি, গায়ন করি তখন আপন চেতনায় আমি যেন তোমার চিদানন্দস্বরূপকেই মানস নেত্রে দর্শন করে থাকি, অনুভব করে থাকি। তুমি সবার চেয়ে প্রিয়, সুদর্শন, এক ও অদ্বিতীয়। সমর্পন ও ভক্তি ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছেই তুমি ধরা দাও, মায়াচ্ছন্নদের কাছে তুমি দুর্লভ।

বসুরস পৌষে কৃষ্ণ দশম্যা অভিনব গুপ্তঃ স্তব মিম মকরোত্ ।
যেন বিভুর ভব মরু সন্তাপম শময়তি ঝটিতি জনস্য দয়ালু ॥ ১০ ॥

॥ ইতি শ্রীঅভিনবগুপ্তাচার্যকৃতং ভৈরবস্তোত্রং সমাপ্তম্ ॥

🔴অনুবাদ -- শ্রীশ্রী মহামহেশ্বর অভিনব গুপ্ত এই স্তোত্র রচনা করেন পৌষ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের দশমী তিথিতে যাতে পরমপ্রভু তার ভক্তদিগকে ক্ষমা প্রদান পূর্বক সমগ্র জাগতিক দুঃখ দুর্দশা দূর করে ঠিক যেন মরুভূমিতে জল দানের ন্যায়।

॥ সমাপ্ত ॥

 🔘সংগ্রহে ও বঙ্গানুবাদে -- RohitKumarChoudhury(ISSGT)

🔘প্রচারে -- International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT & আদ্যাশক্তি পার্বতী মাতা 


🙏ॐ নমঃ শিবায়। 
🙏জয় মা পরমেশ্বরী পার্বতী
🙏জয় শৈব সনাতন ধর্মের

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত