শৈব দীক্ষা ও শিব সাধনা সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর



নিম্নোক্ত আলোচনাটির উত্তর শ্রীকৌশিক রায় শৈবজী দিয়েছেন।


🔴প্রশ্ন (১) - শৈবমতাদর্শ অনুসারে কি গুরুর নিকট থেকে দীক্ষা গ্রহণ না করলে সমস্ত সাধনা নিষ্ফল বলে মান্য ?


✴️উত্তর - সবার আগে এটা জেনে রাখা উচিত সাধনা শব্দের অর্থ আরাধনা। শৈবধর্মে গুরুবাদের কট্টরতা নেই, শৈবধর্মে যে কোনো জীবের শিব সাধনায় অধিকার আছে। শাক্তমতে গুরুবাদের কট্টরতা অধিক প্রবল, কেননা, শাক্তমতের বিশ্বাস হল যে, গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা না নিয়ে যে কোনো সাধন কর্ম করলে সেটি অর্থহীন হয়, নিষ্ফল হয়। তাই শৈবধর্মে দীক্ষিত ও অদীক্ষিত উভয় ব্যক্তিই শিব সাধনা করতে পারেন, শিব সাধনায় সকলের অধিকার রয়েছে। 


🔴প্রশ্ন (২) - দীক্ষাগুরু ছাড়া শিবসাধনা অথবা শিবজ্ঞান কার থেকে গ্রহণ করবো ?


✴️উত্তর - যে ব্যক্তির নিকট হতে শিবসম্পর্কিত তথ্য ও তার সহজ সরল ব্যাখা আপনার বুঝতে সহজসাধ্য বোধ হয়, আপনার বিচার বিবেচনা অনুসারে যে ব্যক্তি শিবজ্ঞানে পারদর্শী ও বিশ্বাসযোগ্য, সেই ব্যক্তিকে অনুসরণ করুন। তার দেখানো মার্গে এগোতে থাকুন। শিবমহাপুরাণ অনুসারে জ্ঞানীব্যক্তি গুরু বলেই গণ্য। তাই যে ব্যক্তি আপনার জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে থাকে সেই ব্যক্তিকেই নিজ গুরু বলে শ্রদ্ধা ও মান্য করুন। এর জন্য মন্ত্রদীক্ষা নেওয়া আবশ্যক নয়।


🔴প্রশ্ন(৩) - কেউ যদি শিবমন্ত্র ছাড়া অন্য মন্ত্রে দীক্ষিত হন তবে সেই ব্যক্তি কি শিব সাধনায় অধিকারী ? 


✴️উত্তর - হ্যা অবশ্যই অধিকারী। শৈবধর্মে সেই ব্যক্তি অদীক্ষিত হিসাবে বিবেচিত, কিন্তু শিবসাধনা সম্পর্কিত কার্য করার অধিকার অবশ্যই রয়েছে। এক্ষেত্রে তার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা অতি আবশ্যক।

এক, পরমেশ্বর শিবের প্রতি অগাধ ভক্তি ;

দুই, পরমেশ্বর শিবের জন্য আসক্তি ;

তিন, পরমেশ্বর শিবের কাছে নিজেকে সমর্পন করা।(পাপের জন্য অনুতপ্ত ও পাপকর্ম থেকে বিরত হতে হবে। পাপের ফল ও অর্জিত পুণ্যফল সব শিবকে সমর্পণ করতে হবে, কোনো পুণ্যেরফল পাবার আশা করা যাবে না, সবটাই শিবের চরণে সমর্পণ করে সমস্ত কর্মকে নিজের কর্তব্য মনে করে কর্ম করতে হবে, এটিই নিষ্কাম ভক্তি, যে ভক্তিতে কামনা বাসনা অর্থাৎ অন্য কিছু পাবার আশা থাকে সেই সকাম ভক্তিতে শিবকে পাওয়া যায় না, তাই অতি অবশ্যই কামনা বাসনা মুক্ত নিষ্কাম ভক্তি দ্বারা শিবের চরণে নিজেকে সমর্পন করাই একমাত্র কর্তব্য, এতে শিব লাভ সম্ভব।)


🔴প্রশ্ন(৪) দীক্ষিত ও অদীক্ষিত ব্যক্তিরা কীভাবে শিব সাধনা করবে ?


✴️উত্তর - সাধনার অর্থাৎ আরাধনা বিভিন্ন মার্গে হতে পারে।


♠️ অদীক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য শৈবমতে ৩টি মার্গ খোলা -


👉ভক্তি মার্গ - নববিধা ভক্তি পালনের মাধ্যমে শিব আরাধনা।


👉কর্ম মার্গ - পরমেশ্বর শিবকে সর্বব্যাপী চিন্তা করে নিষ্কাম মনের ভাব দ্বারা দান, সেবা, ব্রত, যজ্ঞ, পূজা-অর্চনা, ধ্যান, জপ ইত্যাদি কর্ম পালন এবং সেগুলিকে পরমেশ্বর শিবের উদ্দেশ্যে সমর্পিত করা।


👉যোগ মার্গ - অষ্টাঙ্গযোগ, হঠযোগ, রাজযোগ ইত্যাদি যোগ-আচারে থেকে নিজের দেহস্থিত সচ্চিদানন্দ স্বরূপে পরমেশ্বর শিবকে অনুভব করা এবং মানস পূজার মাধ্যমে শিব আরাধনা করা। (মানসপূজার অর্থ - চোখ বন্ধ করে মনে মনে শিবের পূজা করছি এমনটা কল্পনা করা ও সেটিকে চোখবন্ধ অবস্থাতেই দর্শন করাকেই মানসপূজা বলে)


♠️ শৈবধর্মে দীক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য ২টি মার্গ প্রশস্ত -


👉আগম মার্গ - কোনো শৈবগুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে, তার আশ্রয়ে থেকে শৈব আগম বিদ্যা অর্জন করে, সেটি দ্বারা শিবের সাধনাতে অগ্রসর হওয়া।


👉জ্ঞান মার্গ - এটি একটি অতি কঠিন সাধন মার্গ। প্রথমে সদগুরুর আশ্রয়ে থেকে আগম নিগম সিদ্ধান্ত এবং সাধন-চতুষ্টয়ে সিদ্ধিলাভ করতে হয়। এরপর সন্ন্যাসমার্গী হয়ে তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে, শিব তুল্যতা লাভ করা। কিন্তু বর্তমান দিনে জ্ঞানমার্গী শিবসাধক খুঁজেও পাওয়া প্রায় অসম্ভব।


🔴প্রশ্ন(৫) তন্ত্রের কৌলাচারে কী শিব সাধনা হয় ?


✴️ উত্তর - কৌলাচার শাক্ত আগমাচার, কৌলাচার শৈব আগমাচার, অঘোরাচার শৈব আগমাচার। তবে কৌলাচারেও শিব সাধনা সম্ভবপর, কিন্তু এখন বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ কৌলাচারী মাতৃ সাধক হয়ে থাকেন, শৈব কৌলাচার লুপ্তপ্রায়।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত