কলিযুগে হরিনাম ছাড়াও শিবনামে মুক্তি সম্ভব

 


বর্তমানে কলিরচর বৈষ্ণবেরা যখন‌ই কোনো শিব ভক্তদের দেখে তখন‌ই এরা এদের মুখস্ত করা বুলি আ‌ওড়াতে শুরু করে । সেই মুখস্ত করা বুলি কিছুটা এইপ্রকার, নিচে দেয়া হল -

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম ।

কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা ॥১১৫

[রেফারেন্স - বৃহ‌ন্নারদীয় উপপুরান/পূর্বভাগ/অধ্যায় নং ৪১]

সরলার্থ -

কলিযুগে হরির নাম ছাড়া আর কোন গতি নেই ॥১১৫


এই শ্লোক আওড়ানোর পর কলিরচরেরা যুক্তি উপস্থাপন করে যে, একমাত্র হরি নাম ছাড়া কলিযুগে আর মুক্তির কোনো পথ নেই, সব দেবদেবী ছেড়ে শুধু হরিনাম করো। শিবনাম করলে কলিযুগে উদ্ধার হ‌ওয়া যাবে না। কারণ হরিনাম‌ই একমাত্র পথ, শিবনাম করে লাভ নেই।

 

👆উপরোক্ত এই ধরণের কথা বার্তা এই কলিরচর বৈষ্ণবেরা বলতে থাকে, এরা পালা কীর্তনে, যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, শাস্ত্রসম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ সরলসিধা মানুষকে, শিবভক্তদের দেখলে, ঘাটে পথে সমস্ত স্থানে এরা এই এক বুলি আওরাতে থাকে। 

 পালা কীর্তনে উপস্থিত দর্শকেরা ও অনান্য মানুষেরা‌ও শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার ফলে কলির চর বৈষ্ণবদের এসব মগজ ধোলাই করা অপযুক্তির অপকৌশল বুঝতে অক্ষম হয়ে ওই সমস্ত অশাস্ত্রিয় কথা বার্তাকে সত্য ও শাস্ত্রের বচন বলেই বিশ্বাস করে নেন।   

ফলে, এই কথাকে বিশ্বাস করে নিয়ে অজ্ঞ মানুষেরা কলিযুগে শুধু হরি নামেই মুক্তি হয় আর অন্য কোনো নামে মুক্তি নেই বলে নিজেদের পরিবার, পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে প্রচার করতে থাকে। এই ভাবে এই গুজব গত ৫০০ বছর থেকে শুরু করে বাংলা তথা বাংলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই অতীত থেকে চলে আসা গুজবের সত্যতাকে সাধারণ মানুষেরা কখনোই যাচাই করে দেখেনি। ফলে এক অজ্ঞ ব্যক্তি এটা শুনে আরেক অজ্ঞ ব্যক্তিকে সেটা শুনিয়েছে। সেই শুনে ওই ব্যক্তিও সেটি যাচাই না করে অন্য অজ্ঞ ব্যক্তিদের বুঝিয়েছে, ফলে এ ভাবেই ধীরে ধীরে বাংলায় এই গুজব গুলি ছড়িয়েছে সমগ্র স্থানে। 

তাই বর্তমানে কলি যুগে হরিনাম ছাড়া আর কোনো মুক্তির পথ নেই এমন অর্ধসত্য কথা আমাদের শিবভক্তদের সহ্য করতে হয়। কেননা, বাংলাতে শৈবসংস্কৃতি শৈবজ্ঞানের প্রকাশের অভাব থাকার ফলে শিবভক্তেরা পদে পদে এই সমস্ত লাঞ্ছনার শিকার হন। শিবভক্তদের জোর পূর্বক মানতে বাধ্য করা হয় যে হরিনাম ছাড়া শিবনাম মুক্তি দিতে পারে না। ফলে এইভাবে বৈষ্ণব আগ্রাসনের ফলে, বহু শিবভক্তরা বৈষ্ণব হতে বাধ্য হয়েছে। আবার কোনো শিবভক্তরা এই গুজবের শিকার হয়ে নিজেকে শিবের ভক্ত বলেন ঠিক‌ই কিন্তু তিনি ওই গুজব গুলিকেই স্বীকার করে সেগুলিকেই প্রচার করেন ও সত্য বলে মানাতে চান অন্যদেরকেও। 

তাই সেই সমস্ত অপপ্রচারকে দমনের জন্য আমরা ISSGT(International Shiva Shakti Gyan Tirtha) -এর পক্ষ থেকে শৈবসংস্কৃতিকে তথা শৈবসনাতনধর্মের উত্থানে এগিয়ে এসেছি, শ্রীকৌশিক রায় শৈবজীর লেখনীতে আজ এই কলিকালে উদ্ধার হ‌ওয়া সংক্রান্ত সমস্ত বিভ্রান্তিকে মেটানো হবে। যারা নিজেদের শৈব বলে গর্ববোধ করেন তারা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হিসেবে এই লেখা গুলিকে অবশ্য‌ই প্রচুর পরিমাণে শেয়ার করবেন। কারণ, অপপ্রচারকে দমন করতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন এই প্রকৃত সত্যকে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, যাতে বিশাল পরিমানে বিপুল সংখ্যক মানুষ শিব মাহাত্ম্য সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারেন এবং তারাই তাদের এলাকায় বা আশেপাশে কলিরচর বৈষ্ণবদের এরকম গুজব ছড়াতে দেখলেই সাথে সাথে জবাব দিয়ে শিবনিন্দা বন্ধ করতে পারে। আপনারা যেভাবে জবাবটি দেবেন সেটি এবার দেখে নেওয়া যাক।


কলির চর বৈষ্ণবেরা বৃহন্নারদীয় উপপুরাণের পূর্বভাগের ৪১ নং অধ্যায়ের শুধুমাত্র ১১৫ নং শ্লোকটিই তুলে ধরে বলেন যে, কলিযুগে শুধু হরির নাম ছাড়া আর কোনো নামে মুক্তি নেই।


অথচ কলিরচর বৈষ্ণবেরা ঐ এক‌ই বৃহন্নারদীয় উপপুরাণের পূর্বভাগের ৪১নং অধ্যায়ের‌ই পূর্ববর্তী ১০১ নং শ্লোকটি এড়িয়ে যান। 


বৃহন্নারদীয় উপপুরাণের পূর্বভাগের ৪১ নং অধ্যায়ের ১০১ নং শ্লোকটিতে কি বলা আছে একটু দেখে নেওয়া যাক।


শিব শঙ্কর রুদ্রেশ নীলকন্ঠ ত্রিলোচন 

ইতি জপন্তিয়ে ইয়াপি কলি স্তন্যাপিবাধতে ॥১০১

[রেফারেন্স - বৃহন্নারদীয় উপপুরাণ/পূর্বভাগ/৪১ নং অধ্যায়]

সরলার্থ - শিব, শঙ্কর, রুদ্র, ঈশ(ঈশান/ঈশ্বর), নীলকন্ঠ, ত্রিলোচন এই পবিত্র নামসমূহ যারা জপ করেন কলিযুগ তাদেরকেও বাধা দিতে পারেন না তথা মুক্তি সম্ভব ॥১০১


সুতরাং, বৈষ্ণবদের মুখস্ত বুলি যে অর্ধসত্য, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।  

তাই কলিযুগে পরমেশ্বর শিবের নাম নিলেও মুক্তি অবধারিত। 


তাই অর্ধসত্য প্রচারকারী কলিরচর তথাকথিত কল্পিত বৈষ্ণবদেরকে এবার থেকে এটাও মানতে হবে যে শিবনাম যারা করে তাদের‌ও কলিযুগে মুক্তি সম্ভব । 


তাছাড়া শিবমহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতার উত্তর খণ্ডের ১৩নং অধ্যায় - এ পরমেশ্বরী পার্বতী মাতা প্রভু সদাশিবের কাছে লীলাবশত জিজ্ঞাসা করেছিলেন - 

দেবী বললেন – 

হে মহেশ্বর ! দুর্জয়, দুর্লঙ্ঘ্য এবং কলুষিত কলিকালে যখন সমস্ত জগৎ ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে পাপময় অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয়ে যাবে, বর্ণ ও আশ্রম সম্পর্কীয় আচার নষ্ট হয়ে যাবে, ধর্মসংকট উপস্থিত হবে, সকলের অধিকার সন্দিগ্ধ, অনিশ্চিত এবং বিপরীত হয়ে যাবে, সেই সময় উপদেশের প্রণালী নষ্ট হয়ে যাবে এবং গুরু-শিষ্যের পরম্পরাও চলে যাবে, এরূপ পরিস্থিতিতে আপনার ভক্ত কী উপায়ে মুক্ত হতে পারবে ?

দেবী পার্বতী মাতার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রভু সদাশিব বলেছিলেন -

আশ্রিত্য পরমাং বিদ্যাং হৃদ্যাং পঞ্চাক্ষরীং মম ।

ভক্ত্যা চ ভাবিতাত্মানো মুচ্যন্তে কলিজা নরাঃ ॥ ৪

মনোবাক্কায়জৈর্দোষৈর্বক্তুং স্মর্তুমগোচরৈঃ ।

দুষিতানাং কৃতঘ্নানাং নিন্দকানাং ছলাত্মানাম্ ॥ ৫

লুব্ধানাং বক্রমনসামপি মৎপ্রবণাত্মনাম্ ।

মম পঞ্চাক্ষরী বিদ্যা সংসারভবতারিণী ॥ ৬

মযৈবমসকৃদ্দেবী প্রতিজ্ঞাতং ধরাতলে ।

পতিতোঽপি বিমুচ্যেত মদ্ভক্তো বিদ্যয়াঽনয়া ॥ ৭

[রেফারেন্স - শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তর খণ্ড/১৩নং অধ্যায়]

অর্থাৎ

পরমেশ্বর শিব বললেন —

দেবী ! কলিকালের মানুষ আমার পরম মনোরম পঞ্চাক্ষরী-বিদ্যা "ॐ নমঃ শিবায়" - মহামন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে ভক্তিতে ভাবিতচিত্ত হয়ে সংসার-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। যা অকথনীয় ও অচিন্তনীয়—সেই মানসিক, বাচিক ও শারীরিক দোষে যে দূষিত, কৃতঘ্ন, নির্দয়, ছলনাময়, লোভী, কুটিলচিত্ত, সেই ব্যক্তিও যদি আমাতে মন নিরত করে(নিজ দেহের অন্তরস্থ আত্মাকে পরমেশ্বর শিবের অভিন্নস্বরূপকে 'আমি' ভাবনা করে) আমার পঞ্চাক্ষরী বিদ্যা জপ করে, তাকে এই বিদ্যাই সংসার ভয় থেকে মুক্ত করবে। 

হে দেবী ! আমি বারংবার প্রতিজ্ঞাপূর্বক বলেছি যে, ভূতলে আমার পতিত ভক্তও এই পঞ্চাক্ষরী বিদ্যার দ্বারা বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ করবে।

সুতরাং যারা মনে করে যে " হরে কৃষ্ণ " বা " হরিনাম " ছাড়া কলিযুগে আর মুক্তির কোনো পথ নেই তারা আসলেই অর্ধসত্যের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। 

" শিবনাম " তথা " ॐ নমঃ শিবায় " মহামন্ত্র গায়নেও মুক্তি অবশ্যম্ভাবী। তাই শিব ভক্তশৈবদের মনে কষ্ট হ‌ওয়ার বা কোনো সন্দেহ থাকার আর কোনো কারণ নেই। নিঃসন্দেহে শিবনামে মত্ত হোন, শিবনামে চরম সত্য উপলব্ধি হয় ।

পরমেশ্বর শিবের ভক্তদের কাছে শিবনামের অপমান করার চরম থেকে চরমতম শাস্তি কলিরচরেদের হোক এবং পাপের শাস্তি ভোগের পর তারাও শিবনাম করার সুযোগ যেন পায় এবং পাঁচ প্রকারের মুক্তির মধ্যে থাকা অন্তিম মুক্তি কৈবল্যপদ শিবসাযুজ্য যেন তারা লাভ করতে পারে এটিই আমার প্রার্থনা। 

শিব শিব ॥

 

✍️অপপ্রচার দমনে - শ্রীকৌশিক রায় শৈবজী 

©️কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT


মন্তব্যসমূহ

  1. আপনার মনে ক্যান্সার হয়েছে, শয়তানি বুদ্ধি করে ছেন

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত