শিব ও কৃষ্ণের যুদ্ধে শিবের পরাজয়ের উক্তির খণ্ডন

  


পরমেশ্বর শিবের ক্ষমতাকে নিম্নস্তরের বলে প্রমাণ করার জন্য বর্তমানে কিছু বৈষ্ণব বেশধারী কল্পিত পণ্ডিতেরা মহাভারতের মধ্যে উল্লেখিত শিব ও কৃষ্ণের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে দাবী করছে যে, শিব ও কৃষ্ণের যুদ্ধে পরমেশ্বর শিব শ্রীকৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই কারণে শ্রীকৃষ্ণ ই হচ্ছেন সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী।

তথাপি এই নিয়ে তারা শিবভক্তদের খোঁটা দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। 

তাই ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) এর পক্ষ থেকে শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী - এ বিষয়ের বিশ্লেষণ করে সত্য তুলে ধরেছেন নীচের আলোচনায়। 


মহাভারত সহ অনান্য শাস্ত্রে পরিষ্কার করে বারংবার বলা যে, বিষ্ণু সহ তার প্রত্যেক অবতার পরমেশ্বর শিবের ভক্ত ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সেই অবতারের মধ্যে অন্যতম। সেই কৃষ্ণের সহিত পরমেশ্বর শিব যুদ্ধ করেন এবং তিনি পরাজিত হবার গ্লানি কে স্বীকার করেছেন  কিন্তু স্বয়ং পরমেশ্বর হয়ে কিভাবে তিনি পরাজিত হতে পারেন ?

এটা কিভাবে সম্ভব ?

চলুন আসল কারণ টা এবার দেখা যাক।


মহাভারতের দ্রোণপর্বে বর্ণিত অশ্বথামা নিজের পিতা দ্রোণাচার্যের মৃত্যুর খবর শুনেই ক্রোধিত হয়ে পান্ডবদের সৈন্যদের উপর তথা কৃষ্ণ ও অর্জুনের উপরে লক্ষ্যে করে একটি ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করেন । সেই আগ্নেয়াস্ত্র কুরুক্ষেত্রের ময়দানে পান্ডব সৈন্যদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। 


এই দেখে, কৌরব সৈন্যসহ সকলে সবাই আনন্দিত হয়ে জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন । কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সবাই দেখেন যে, সেই আগুন ও ধোঁয়ার মধ্যে হতে কৃষ্ণ ও অর্জুন বেরিয়ে আসছেন। এমনকি সম্পূর্ণরূপে অক্ষত অবস্থায়, ঠিক যেভাবে চন্দ্র ও সূর্য মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। তখন সেই দৃশ্য দেখে দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা হতবাক হয়ে যান এবং দৈবাস্ত্রকে ধিক্কার জানান।

 অশ্বত্থামা বললেন, এ সব মিথ্যা, এ অসম্ভব, এই অস্ত্র মিথ্যা কেমন করে হতে পারে ? এই ধরনের কথা বলতে বলতে অশ্বত্থামা ধনুর্বাণ ত্যাগ করে যুদ্ধস্থল ত্যাগ করে চলে গেলেন ।


চলুন.. মহাভারতের সেই দ্রোণপর্বের একাধিকদ্বিশততমোহধ্যায়ঃ এর অংশ থেকে শ্লোক ও বঙ্গানুবাদ সহ আলোচনা টি নীচে তুলে ধরছি👇


ততো দ্রৌণির্ধনুস্তক্ত্বা রথাৎ প্রস্কন্দ্য বেগিতঃ।

ধিগ্ ধিক্ সর্ব্বমিদং মিথ্যেতুক্ত্বা সংপ্রাদবদ্রণাৎ।।৪৭


সরলার্থ - তার পর অশ্বত্থামা ধনু ত্যাগ করে রথ হতে বেগে অবতীর্ণ হয়ে ধিক্ ধিক্ এ সমস্তই মিথ্যা, এই কথা বলে রণস্থল হইতে দ্রুত প্রস্থান করলেন।


ততঃ স্নিগ্ধাম্ভুদাভাসং বেদাবাসমকল্মষম্।

বেদব্যাসং সরস্বত্যাবাসং ব্যাসং দদর্শ হ॥৪৮


সরলার্থ - তারপর তিনি স্নিগ্ধ মেঘের ন্যায় শ্যাম কান্তিধারী, বেদ ও সরস্বতীর আবাসস্থান তথা বেদের বিস্তারকারী পাপশূণ্য মহর্ষি ব্যাসকে সেখানে দেখতে পেলেন।


তং দ্রৌণিরগ্রতাে দৃষ্ট্বা স্থিতং কুরুকুলোদ্বহ!।

সন্নকণ্ঠোহব্রবীদ্বাক্যমভিবাদ্য সুদীনবৎ ॥৪৯


সরলার্থ - কুরুকুল শ্রেষ্ঠ! বেদব্যাসকে সামনে দেখে দ্রৌণকুমারের গলা অশ্রুসিক্তে ভরে এলো। অশ্বত্থামা অত্যন্ত নতভাবে প্রণাম করে বেদব্যাসকে এইপ্রকারে জিজ্ঞাসা করলেন।


ভাে ভাে মায়া যদৃচ্ছা বা ন বিদ্ম কিমিদং ভবেৎ।

অস্ত্রং ত্বিদং কথং মিথ্যা মম কশ্চ ব্যতিক্রমঃ॥৫০


সরলার্থ - মহর্ষি! এটা কি মায়া, না- দৈবইচ্ছা! আমার বুদ্ধিতে আসছে না এটা কি? এই অস্ত্র মিথ্যা কেমন করে হলো? আমার কি কোনো ত্রুটি হল ?


অধরোত্তরমেতদ্বা লােকানাং বা পরাভবঃ।

যদিমৌ জীবতঃ কৃষ্ণো কালাে হি দুরতিক্রমঃ॥৫১


সরলার্থ - এই আগ্নেয়াস্ত্রের প্রভাব বিপরীত হল অথবা সমস্ত লোকের পরাভব দিলেন, যা এই দু'জন জীবিত বেঁচে গেলেন! নিশ্চয়ই কালের উল্লঙ্ঘন করা অত্যন্ত কঠিন।


নাসুরা ন চ গন্ধর্বা ন পিশাচা ন রাক্ষসাঃ।

ন সর্পযক্ষপতগা ন মনুষ্যাঃ কথঞ্চন।৫২

তদিদং কেবলং হত্বা শান্তমক্ষৌহিণীং জ্বলৎ।

উৎসহন্তেহন্যথা কর্ত্তুমেতদস্ত্রং ময়েরিতম্॥৫৩


সরলার্থ - আমার দ্বারা নিক্ষিপ্ত করা এই অস্ত্রের

অসুর, গন্ধর্ব, পিশাচ, রাক্ষস, সর্প, যক্ষ, পক্ষী ও মনুষ্যেরা কোনো প্রকারেই ব্যর্থ করতে সমর্থ হয় না। তারপরেও এই প্রজ্বলিত অস্ত্র কেবল এক অক্ষৌহিণী সৈন্য জ্বালিয়ে শান্ত হয়ে গেল।


সর্ব্বঘাতি ময়া মুক্তমস্ত্রং পরমদারুণম্॥

কেনেমৌ মর্ত্যধৰ্ম্মাণৌ নাবধীৎ কেশবাৰ্জ্জুনৌ।৫৪


সরলার্থ - আমি তো অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও সর্ব্বসংহারক অস্ত্র নিক্ষিপ্ত করেছি, কিন্তু এই অস্ত্র কোন্ কারণে এই মত্যধর্মা কৃষ্ণ ও অর্জুনের বধ করল না ?


এতৎ প্রব্রুহি ভগবন! মযা পৃষ্টৌ যথাতথম্।

শ্রোতুমিচ্ছামি তত্ত্বেন সৰ্ব্বমেতন্মহামুনে।।৫৫

সরলার্থ - ভগবান মহামুনে! আমি যে আপনাকে এই প্রশ্ন করলাম, তাঁর যথার্থ উত্তর দিন। আমি এর ঠিক ঠিক উত্তর শুনতে ইচ্ছা করি।


॥ ব্যাস উবাচ ॥


মহান্তমেতমর্থং মাং যং ত্বং পৃচ্ছসি বিস্ময়াৎ।

তং প্রবক্ষ্যামি তে সৰ্ব্বং সমাধায় মনঃ শৃণু॥৫৬


সরলার্থ - বেদব্যাস বলিলেন- অশ্বত্থামা, তুমি বিস্ময়বশতঃ এই যে উত্তম বিষয় জিজ্ঞাসা করেছো, আমি সেই সমস্তই বলব, তুমি মনোনিবেশ করে শ্রবণ কর।


যহসৌ নারায়ণো নাম পূর্বেষামপি পূর্বজঃ।

অজায়ত চ কার্য্যার্থং পুত্রো ধর্ম্মস্য বিশ্বকৃৎ।৫৭


সরলার্থ - যিনি আমাদের পূর্ব্বজেরও পূর্ব্বজ ভগবান নারায়ণ, সেই বিশ্ববিধাতা ভগবান এক সময় কোনো এক বিশেষ কার্য হেতু ধর্ম্ম পুত্ররূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।


স তপস্তীব্রমাতস্থে শিশিরং গিরিমাস্থিত।

উৰ্দ্ধবাহুর্মহাতেজা জ্বলনাদিত্যসংনিভঃ।।৫৮


সরলার্থ - অগ্নি ও সূর্যের সমান মহাতেজস্বী সেই ভগবান নারায়ণ হিমালয় পর্বতের উপরে গিয়ে নিজের দুই বাহু উপরে তুলে কঠোর তপস্যা করছিলেন।


পষ্টিং বর্ষসহস্রাণি তাবন্ত্যেব শতানি চ।

অশোপয়ত্তদাত্মানং বাযুভক্ষোহম্বূজেক্ষণঃ॥৫৯


সরলার্থ - সেই কমলনয়ন শ্রীহরি ছয়ষট্টি হাজার বছর পর্যন্ত কেবল বায়ু ভক্ষণ করে সেদিনই নিজের শরীরের সুস্বায়া করেন।


অথাপরং তপস্তপ্ত্বা দ্বিস্ততােহন্যৎ পুনমহৎ।

দ্মাবাপৃথিব্যোবিবরং তেজসা সমপূয়রৎ॥৬০


সরলার্থ - তদন্তর তার চেয়ে দ্বিগুণ কাল পর্যন্ত ভারী তপস্যা করে তিনি নিজের তেজে পৃথিবী আর আকাশের মধ্যবর্তী আকাশ ভরে দিয়েছিলেন।


স তেন তপসা তাত ব্ৰহ্মভূতাে যদাভবৎ।

তদা বিশ্বেশ্বরং যােনিং বিশ্বস্য জগতঃ পতিম্॥৬১

দদর্শ ভৃশদুর্ধর্শং সর্বদেবৌরভিষ্টুতম।

অণীয়াং সমণুভ্যশ্চ বৃহদ্ভ্যশ্চ বৃহত্তমম্।।৬২

 

সরলার্থ - তখন সেই তপস্যাতে উনি সাক্ষাৎ ব্রহ্মস্বরূপে স্থিত হয়ে গেলেন, তখন ওনাকে সেই ভগবান বিশ্বেশ্বরের দর্শন হয়েছিল, সেই মহাদেব যিনি সম্পূর্ণ বিশ্বের উৎপত্তিস্থান ও জগতের পালক, যাঁকে পরাজিত করা অত্যন্ত কঠিন ও অসম্ভব। সমস্ত দেবতা যাঁর স্তুতি করে থাকেন যিনি সুক্ষ্মের চেয়েও অতি সূক্ষ্ম এবং মহানের চেয়েও পরম মহান।


রুদ্রমীশানবৃষভং হরং শম্ভুং কপর্দিনম্।

চেকিতানং পরাং যােনিং তিষ্ঠতো গচ্ছতশ্চ হ॥৬৩


সরলার্থ - তিনি 'রু' অর্থাৎ দুঃখ দূর করার কারণে রুদ্র নামে অভিহিত। ব্রহ্মাদি লোকপালের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ যিনি। যিনি পাপহারী, কল্যাণকারী তথা জটাজুটধারী। উনিই সবাইকে চেতনা প্রদান করেন এবং উনিই স্থাবর-জঙ্গম প্রাণীদের পরম কারণ।


দুর্বারণং দুর্ধশং তিগ্মমন্যুং মহাত্মানং সর্বহরং প্রচেতসম্।

দিব্যং চাপমিষুধী চাদদানং হিরণ্যবর্ম্মাণমনন্তবীর্য্যম্॥৬৪


সরলার্থ - ওনাকে কেউ কোথাও স্তব্ধ করতে পারে না, উনার দর্শন অনেকটাই দুর্লভ, যিনি দুষ্টের উপর প্রচন্ড ক্রোধী, যাঁর হৃদয় বিশাল, যাঁকে সকল ক্লেশ হরণকারী বা সংহারকারী বলা হয়, সাধুপুরুষের প্রতি যাঁর হৃদয় অত্যন্ত উদার হয়, যিনি দিব্য ধনু ও তরকস ধারণ করেন, যাঁর কবচ স্বর্ণের হয়ে থাকে তথা উনি অত্যন্ত বল- পরাক্রমে পরিপূর্ণ।


পিনাকিনং বজ্রিণং দীপ্তশূলং পরশ্বধিনং গদিনঞ্চায়তাসিম্।

শুভ্রং জটিলং মূসলিনং চন্দ্রমৌলিং ব্যাঘ্রাজিনং পরিঘিণং দণ্ডপাণিম্।।৬৫


সরলার্থ - উনি নিজের হাতে পিনাক ও বজ্র ধারণ করেন, উনার এক হাতে ত্রিশূল জোতির্ময় থাকেন, উনি ফরসা, গদা ও লম্বা তরবারি নিয়ে থাকেন, মুসল, পরীঘ ও দণ্ড যাঁর হাতের শোভা বাড়ায়, উনার অঙ্গকান্তি উজ্জ্বল, যিনি মস্তকে জটা ও তার উপরে চন্দ্রিমার মুকুট ধারণ করেন, যাঁর শ্রীঅঙ্গে বাঘম্বর শোভা পায়।


শুভাঙ্গদং নাগযজ্ঞােপবীতং বিশ্বৌৰ্গণৌঃ শােভিতং ভূতসঙ্ঘৌ।

একীভূতং তপসাং সন্নিধানং বযোতিগৌ সুষ্টুতমিষ্টবাগ্ভিঃ।।৬৬


সরলার্থ - তার বাহুতে সুন্দর অঙ্গত ও গলায় নাগময় যজ্ঞোপবীত শোভা পায়, যিনি নিজের পার্ষদস্বরূপে সম্পূর্ণ ভূতসমুদায়ে সুশোভিত, ওনাকেই একমাত্র ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর সম্বোধন করা হয়, উনিই তপস্যার নিধি এবং দিব্য পুরুষ প্রিয় বাক্যদ্বারা ওনার স্তুতি করে থাকেন।


জলং দিশং খং ক্ষিতিং চন্দ্ৰসুৰ্য্যৌ তথা বাযুগ্নী প্রমিমাণং জগচ্চ।

নালং দ্রষ্টুং যং জনা ভিন্নবৃত্তা ব্ৰহ্মদ্বিষঘ্নমমৃতস্য যােনিম্॥৬৭


সরলার্থ - নল, দিশা, আকাশ, পৃথিবী, চন্দ্রিমা, সূর্য, বায়ু, অগ্নি তথা জগতের মাপ নেওয়ার কাল- এইসব উনার স্বরূপ। উনি ব্রহ্মদ্রোহীদের নাশক ও মোক্ষপ্রাপ্তির পরম কারণ, দুরাচারী মনুষ্য উনার দর্শন প্রাপ্ত হতে পারেন না।


যং পশ্যন্তি ব্রাহ্মণাঃ সাধুবৃত্তাঃ ক্ষীণে পাপে মনসা বীতশােকাঃ।

তং নিষ্পতন্তং তপসা ধম্মমীভ্যং তদ্ভক্ত্যা বৈ বিশ্বরূপং দদর্শ।

দৃষ্ট্বা চৈনং বাঙ্মনােবুদ্ধিদেহৈঃ সংহৃষ্টাত্মা মুমুদে বাসুদেবঃ।।৬৮


সরলার্থ - যাঁরা মন থেকে সর্বদা শোক-সন্তাপ দূরীভূত করে দেন, সেই সদাচারী ব্রাহ্মণের পাপের ক্ষয় হওয়ার পর যাঁর দর্শন করতে পারেন, এই সম্পূর্ণ বিশ্ব যাঁর স্বরূপ, যিনি সাক্ষাৎ ধর্ম তথা স্তব করার যোগ্য পরমেশ্বর, সেই মহেশ্বর সেখানে নারায়ণের ভক্তির প্রভাবে প্রকট হয়ে গেলেন তখন তপস্বী নারায়ণ উনার দর্শন করলেন। ওনার দর্শন করে মন, বাণী, বুদ্ধি ও শরীরের সাথে ওনার অন্তরআত্মা হর্ষবর্ধন হয়ে উঠে, তখন ভগবান বাসুদেব অনেক আনন্দ অনুভব করেন।


অক্ষমালাপরিক্ষিপ্তং জ্যোতিষাং পরমং নিধিম্।

ততো নারায়ণাে দৃষ্ট্বা ববন্দে বিশ্বসম্ভবম্॥৬৯


সরলার্থ - রুদ্রাক্ষ মালাতে বিভূষিত জোতির্ময় পরম নিধিরূপ সেই বিশ্ব-বিধাতার দর্শন করে, ভগবান নারায়ণ ওনার বন্দনা করেন।


বরং পৃথুচার্বঙ্গ্যা পার্বত্যা সহিতং প্রভুম্।

ক্রীড্যমানং মহাত্মানং ভূতসঙ্ঘগণৈর্বৃতম্॥৭০

অজমীশানমব্যক্তং কারণাত্মানচ্যুতম্।


সরলার্থ - সেই বরদায়ক প্রভু হৃষ্টপুষ্ট এবং মনোহর অঙ্গাধীকারী পার্বতী দেবীকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হলেন, সেই অজন্মা, দর্শন অব্যক্ত, কারণস্বরূপ এবং নিজের মহিমা থেকে কখনও চ্যুত হয় না সেই পরমাত্মাকে উনার পার্ষদস্বরূপ ভূতগণেরা ঘিরে রেখেছিলেন।


অভিবাদ্মাথ রুদ্ৰায় সদ্মোৎন্ধকনিপাতিনে।

পদ্মাক্ষস্তং বিরূপাক্ষমভিতুষ্টাব ভক্তিমান্‌।।৭১

অনুবাদ:- কমলনয়ন ভগবান শ্রীহরি পৃথিবীর উপপর দুই হাঁটু ঠেকিয়ে এবং মস্তকের উপর দুই হাত জোড় করে অন্ধকাসুরের বিনাশকারী সেই রুদ্রদেবকে প্রণাম করেন এবং ভক্তিভাবে যুক্ত হয়ে ভগবান বিরূপাক্ষকে নারায়ণ এই প্রকারে স্তুতি করা শুরু করলেন।


॥ নারায়ণ উবাচ ॥


ত্বৎসম্ভুতা ভূতকৃতো বরেণ্য! গােপ্তারোহস্য ভুবনস্যাদিদেব।

আবিশ্যেমাং ধরণীং যেহভ্যরক্ষন্ পুরা পুরাণীং তব দেব! সৃষ্টিম্॥৭২


সরলার্থ - নারায়ণ বললেন, সর্বশ্রেষ্ঠ আদিদেব, যিনি এই পৃথিবীতে এসে পুরাতন সৃষ্টির রক্ষা করেছিলেন তথা যে এই বিশ্বের রক্ষা করবেন, যিনি সম্পূর্ণ প্রাণীলোকের সৃষ্টি করবেন প্রজাপতিগণ আপনার থেকে সৃষ্টি হয়েছেন।


সুরাসুরান্নাগরক্ষঃপিশাচান্নরান্ সুপর্ণানথ গন্ধর্বযক্ষান্।

পৃথগ্বিধান্ ভূতসঙ্ঘাংশ্চ বিশ্বাস্ত্বস্তসম্ভুতান্ বিদ্ম সর্বাংস্তথৈব।

ঐন্দ্রং যাম্যং বারুণং বৈত্তপাল্যং পৈত্ৰং ত্বাষ্টং কৰ্ম্ম সৌম্যঞ্চ তুভ্যম্॥৭৩


সরলার্থ - দেবতা, অসুর, নাগ, রাক্ষস, পিশাচ, মনুষ্য, গরুড়াদি পক্ষী, গন্ধর্ব তথা যক্ষাদি পৃথক পৃথক প্রাণীদের অস্বিল সমুদায় বিরাজমান, সেইসব ও আমি আপনার থেকে সৃষ্টি। সেই প্রকার ইন্দ্র, যম, বরুণ, এবং কুবেরের পদ, পিতৃপুরুষের লোক তথা বিশ্বকর্মার সুন্দর শিল্পকর্মের আবির্ভাব আপনার থেকেই হয়েছে।


রূপং জ্যোতিঃ শব্দ আকাশ বায়ুঃ স্পর্শ স্বাদ্মং সলিলং গন্ধ উৰ্ব্বী।

কালাে ব্রহ্মা ব্ৰহ্ম চ ব্রাহ্মণাশ্চ ত্বৎসম্ভূতং স্থাস্নু চরিষ্ণু চেদম্॥৭৪


সরলার্থ - শব্দ ও আকাশ, স্পর্শ ও বায়ু, রূপ ও তেজ, রস ও জল তথা গন্ধ ও পৃথিবীর সৃষ্টি আপনার থেকে হয়েছে। কাল, ব্রহ্মা, বেদ, ব্রাহ্মণ তথা এই সম্পূর্ণ চরাচর জগৎ আপনার থেকে সৃষ্টি হয়েছে।


অদ্ভ্যঃ স্তোকা যান্তি যথা পৃথক্ত্বং তাভিশ্চৈক্যং সংক্ষয়ে যান্তি ভূয়ঃ।

এবং বিদ্বান্ প্রভং চাপ্যয়ং চ মত্বা ভূতানাং তব সাযুজ্যমেতি॥৭৫


সরলার্থ - যেভাবে জলের মধ্যে তাঁর কণাবিন্দু বিলগ্নিকরণ হয় ক্ষীণ হওয়ায় কালক্রমে তা পুনরায় জলে মিলে তাঁর সাথে একরূপ হয়ে যায়, সেই প্রকার সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড আপনার থেকে সৃষ্টি হয় এবং আপনার কাছেই লীন হয়ে যায়। এই জ্ঞান ধারণকারী বিদ্বান পুরুষ আপনার সাযুজ্য প্রাপ্তি করে থাকেন।


দিব্যাবৃতৌ মানসৌ দ্বৌ সুপর্ণৌ বাচঃ শাখাঃ পিপ্পলা সপ্ত গােপাঃ।

দশাপ্যন্যে তৌ পুরং ধাবয়ন্তি ত্বযা সৃষ্টাস্ত্বং হি তেভ্যঃ পরাে হি॥৭৬


সরলার্থ - অন্তঃকরণে নিবাসকারী দুই দিব্য অমৃত স্বরূপ ঈশ্বর ও জীব। সাথে ধাতুরূপ সাথে পিপলও, যা তাঁদের রক্ষা করে। দৈববাণী সেই বৃক্ষের শাঁখা। দ্বিতীয়ত দশ বাস্তুতে তথা দশ ইন্দ্রিয়, যা পাশ্চভৌতিক শরীররূপী নগরের ধারণ করেন। সেইসব পদার্থের রচয়িতা স্বয়ং আপনি, তথাপি আপনি এইসবের উর্দ্ধে।


ভূতং ভব্যং ভবিতা চাপ্যধৃব্যং ত্বৎসম্ভুতা ভুবনানীহ বিশ্বা।

ভক্তঞ্চ মাং ভজমানং ভজস্ব মা রীরিষাে মামহিতাহিতেন॥৭৭


সরলার্থ - ভুত, বর্তমান, ভবিষ্য তথা অজেয় কাল- এইসব আপনারই স্বরূপ। সেখানকার সম্পূর্ণ লোক আপনার থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আমি আপনার ভজনকারী ভক্ত হই, আপনি আমায় গ্রহণ করুন। হে মঙ্গলকারী গ্রহণ করুন আমায়, হিংসা(অমঙ্গল জনক দৃষ্টি প্রদান) করবেন না।


আত্মানং ত্বামাত্মনােহনন্যবোধং বিদ্বানেবং গচ্ছতি ব্ৰহ্মশুক্রম্।

অস্তৌষং ত্বাং তব সম্মানমিচ্ছন্ বিচিন্বন্ বৌ সদৃশং দেববর্য্য!।

সুদুর্লভান্ দেহি বরান্মমেষ্টানভিষ্টুতঃ প্রতিকার্ষীশ্চ মায়াম্॥৭৮


সরলার্থ - আপনি জীবাত্মা থেকে অভিন্ন অনুভবকারী জ্ঞানীর আত্মা স্বরূপ, এইরকম জ্ঞানকারী বিদ্বান পুরুষ বিশুদ্ধ ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত করেন। দেবর্ব্য! আমি আপনার সৎকার শুভ ইচ্ছা নিয়ে এই স্তব করছি। স্তুতির সর্বদা যোগ্য হে পরমেশ্বর আমি চিরকালই আপনার অন্বেষণ করে যাচ্ছি। যাঁর উপযুক্ত স্তুতি জ্ঞাপন করছি ঠিক এইভাবে আপনি আপনার মায়াকে দূর করে আমায় অভীষ্ট বরদান প্রদান করুন।



॥ ব্যাস উবাচ ॥


তস্মৈ বরানচিন্ত্যাত্মা নীলকণ্ঠঃ পিনাকধৃত্।

অর্হতে দেবমুখ্যায় প্রাযচ্ছদৃষিসংস্তুতঃ॥৭৯


সরলার্থ - ব্যাসদেব বললেন, হে দ্রোণকুমার, নারায়ণ ঋষির এই প্রকারে স্তুতি করার পর অচিন্তস্বরূপ, পিনাকধারী, নীলকন্ঠ ভগবান শিবজি বর প্রাপ্তির সর্বথা যোগ্য সেই দেবপ্রধান নারায়ণকে অনেক বর প্রদান করেছিলেন।


॥ শ্রীভগবান উবাচ ॥


মৎপ্রসাদন্মনুষ্যেষু দেবগন্ধৰ্ব্বযোনিষু।

অপ্রমেষবলাত্মা ত্বং নারায়ণ! ভবিষ্যসি।।৮০


সরলার্থ - শ্রীভগবান শিব বললেন, নারায়ণ! তুমি আমার কৃপাপ্রসাদে মনুষ্য, দেবতা তথা গন্ধর্বেতেও অসীম বল-পরাক্রমশালী হবে।


ন চ ত্বাং প্ৰসহিষ্যস্তি দেবাসুরমহােরগাঃ।

ন পিশাচা ন গন্ধৰ্ব্বা ন যক্ষা ন চ রাক্ষসাঃ॥৮১

ন সুপর্ণাস্তথা নাগা ন চ বিশ্বে বিযোনিজা।

ন কশ্চিত্ত্বাঞ্চ দেবোহপি সমরেহপু বিজেষ্যতি।।৮২


সরলার্থ - দেবতা, অসুর, বড় বড় সর্প, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, সুপর্ণ নাগ তথা সমস্ত পশু(সিংহ, বাঘ্রাদি) প্রাণীগণ তোমার বেগ সহ্য করতে পারবে না। যুদ্ধস্থলে কোনো দেবতা তোমাকে পরাজিত করতে পারবে না।


ন শস্ত্রেণ ন বজ্রেণ নাগ্নিনা ন চ বায়ুনা ।

ন চাদ্রেণ ন শুষ্কেণ ত্ৰসেন স্থাবরেণ চ ॥ ৮৩

কশ্চিত্তব রুজাং কর্ত্তা মৎপ্রসাদাৎ কথঞ্চন ।

অপি বৈ সমরং গত্বা ভবিষ্যসি মমাধিক্‌ ॥ ৮৪

অনুবাদ:- শস্ত্র, বজ্র, অগ্নি, বায়ু, ভেজা-শুষ্ক পদার্থ ও স্থাবর এবং জঙ্গম প্রাণীমধ্যেও কেউ আমার কৃপাপ্রসাদে কোনোভাবেই তোমায় আঘাত বা ক্ষতি করতে পারবে না।

তুমি পৃথিবীতে আবির্ভাব হওয়ার পর স্বয়ং আমার থেকেও অধিক বলবান হয়ে যাবে। 


এখানে বিশেষভাবে খেয়াল করে দেখুন ৮৪তম শ্লোকে স্বয়ং পরমেশ্বর শিব নিজ শ্রীমুখপদ্ম দ্বারা বলেছেন যে, হে নারায়ণ, আমার কৃপার প্রভাবে তুমি পৃথিবীতে আবির্ভাব তথা জন্ম নেওয়ার পর স্বয়ং আমার (শিবের) থেকেও অধিক বলবান অর্থাৎ শক্তিশালী হবে ।


মর্হষি বেদব্যাস বলেছেন -

স এষ রুদ্রভক্তশ্চ কেশবো রুদ্রসম্ভবঃ। 

সর্ব্বরূপং ভবং জ্ঞাত্বা লিঙ্গে যো আর্চ্চয়ত প্রভুম ॥

        [রেফারেন্স  - মহাভারত / দ্রোণপর্ব - ১৬৯/৬২]

অনুবাদ - যিনি জগদীশ্বর শিবকে সর্ব্বময় জানিয়া তাঁহার লিঙ্গে পূজা করিতেন, তিনি শিবাংশ জাত ও শিবভক্ত সেই নারায়ণই হচ্ছেন এই শ্রীকৃষ্ণ।    


সুতরাং, 

এখান থেকে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, 

স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শিব যখন নিজেই তার পরমভক্ত নারায়ণের ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে বরদান দিলেন,  ভগবান কি কখনো নিজের মুখ থেকে নির্গত হ‌ওয়া বাক্য কে বিফল হতে দেবেন ?


 অত‌এব, নারায়ন যেহেতু পরবর্তীতে কৃষ্ণ রূপে জন্ম গ্রহণ করেন, তাই ভক্ত কৃষ্ণের কাছে পরমেশ্বর ভগবান শিব পরাজিত হয়েছেন শুধুমাত্র নিজ বরদানের কথা কে সত্য করার জন্য। তাই ভক্তকে ভগবানের দেওয়া বরদানের প্রভাবে ভগবান একবার কেনো হাজার বার পরাজিত হবেন এতে কোনো সন্দেহ ই নেই। 


কারণ, পরমেশ্বর শিব হলেন বৃক্ষ স্বরূপ, বৃক্ষস্বরূপ শিব তার ফলস্বরূপ ভক্ত নারায়ণের ভার গ্রহণ করতে পারেন, কিন্তু ফল স্বরূপ ভক্ত নারায়ণ কখনই বৃক্ষস্বরূপ শিবের ভার গ্রহণ করতে সক্ষম নন। 

পরমেশ্বর শিব বরদান দিয়েছেন ও সেটি সত্য‌ও করে দেখিয়েছিলেন, তাই তিনি পরমেশ্বর মহাদেব । 

অত‌এব, এখন সিদ্ধান্ত হল এই - মহাভারতে কৃষ্ণ ও পরমেশ্বর শিবের যুদ্ধে পরমেশ্বর শিব পরাজয়ের গ্লানি নিজের জন্য বরাদ্দ করেছেন শুধু মাত্র তার ভক্তকে দেওয়া বরদানের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য। এখন সেটিই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। 

পরমেশ্বর শিব শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমতায় নয় বরং প্রতিশ্রুতির কারণে নিজের পরাজয় নিশ্চিত করেছেন। কেননা, ভগবান দিতে জানেন পরন্তু নিতে জানেন না, কিন্তু ভক্তের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। ভগবানের কাছ থেকে ভক্ত নিতে জানেন কিন্তু দিতে জানেন না । সেটিই পরমেশ্বর শিবের ইচ্ছাকৃতভাবে স্বীয় পরাজয়ে এটাও প্রমাণিত হয় যে, ভক্তের কাছে বাঁধা ভগবান কিন্তু ভগবানের কাছে ভক্তের বাধ্যবাধকতা নেই। 

শ্রীকৃষ্ণ গত জন্মে নারায়ণ রূপে পরমেশ্বর শিবের কাছে পৃথিবীতে যেকোনো রূপে অবতীর্ণ হয়ে যে কোনো অবস্থায় অপরাজেয় হবার বর প্রাপ্ত হন । তাই সেই বরদান কে ফলিত করেন পরমেশ্বর শিব নিজেই নিজের পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে। কিন্তু বর্তমানের তথাকথিত জ্ঞানপাপী বৈষ্ণববেশধারীগণ সেই সত্য অবগত না হয়েই অযাচার ভাবে পরমেশ্বর শিবের ক্ষমতার উপর প্রশ্ন তোলেন এবং শিবভক্তদের শিবভক্তিকে আঘাত করতে জুটে যান। সেই সমস্ত অজ্ঞদের প্রতি দয়া করে এই সত্য উজাগর করা হল। আশা করি এর পর থেকে এই পাষণ্ড ব্যক্তিগণ কখনোই শিবনিন্দা করে পাপের ভাগীদার হবে না। কারণ তারা নিজেদের অজান্তেই মূর্খতাবশত পরমেশ্বরকে নিন্দা করছেন। তাই তাদের সর্বদা মনে রাখা উচিত নারায়ণের শিব স্তুতি - 

আত্মানং ত্বামাত্মনােহনন্যবোধং বিদ্বানেবং গচ্ছতি ব্ৰহ্মশুক্রম্।

অস্তৌষং ত্বাং তব সম্মানমিচ্ছন্ বিচিন্বন্ বৌ সদৃশং দেববর্য্য!।

সুদুর্লভান্ দেহি বরান্মমেষ্টানভিষ্টুতঃ প্রতিকার্ষীশ্চ মায়াম্॥৭৮


এটি জানার পরেও যারা শিবনিন্দা করতে ইচ্ছা রাখে তাদের জন্য যেন নারায়ণ ই শাস্তি বিধান করেন। 

নমঃ শিবায় 🙏 


যারা এই লেখাটি দ্বারা সত্য জেনে আনন্দিত হয়েছেন তারা এই পোষ্টটি শেয়ার করুন। এতে বহু শিবভক্তের উপকার হবে এবং তারাও কোনো পাষণ্ডের পাল্লায় পড়লে এর জবাব দিতে সক্ষম হবেন। 


লেখনীতে - শ্রীকৌশিক রায় শৈবজী

Copyright ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

মন্তব্যসমূহ

  1. আমরা শিবভক্ত তাই কাউকে কষ্ট বা অপমান জনক কথা শোভা পায় না তথাপি এই ব্রহ্ম জ্ঞান পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি ৷ শত কোটি প্রনাম আপনার শ্রী চরণে ৷

    উত্তরমুছুন
  2. মহাদেব আপনার প্রতি সহায় হোক

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত