বিষ্ণু ও অনান্য দেবতাদের মধ্যে একমাত্র শিবকেই পরম কারণ বলে না জানলে মোক্ষ অসম্ভব


 এই আলোচনাটি শ্রীনন্দীনাথ শৈব জী দ্বারা অনুবাদিত  ও লিখিত হয়েছে । ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) -এর পক্ষ থেকে শৈব অদ্বৈত দর্শনের ভিত্তিতে শিব ও মোক্ষ সম্পর্কিত এই তথ্যবহুল সংগ্রহটি টীকাসহ লিখিত ও প্রকাশিত করা হল।


(প্রকাশকের নিবেদন : অনুগ্রহ করে এই লেখাটির তাৎপর্য কে ভেদাভেদ বলে ভাববেন না, এখানে শৈব অদ্বৈত দর্শনের ভিত্তিতে শিব‌ই মূল , তিনি বিষ্ণু তথা অনান্য দেবতারূপী দেহগুলি ধারণ করেন, তাই শিবকেই নিত্য ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর বলা হয়েছে । এখানে বিষ্ণুকেও শিব বলা হয়েছে, ব্রহ্মাকেও শিব বলা হয়েছে, কোনো দেবতার সহিত শিবকে ভেদাভেদ করা হয়নি। এখানে বলা হয়েছে শিব‌ই বিভিন্ন রূপ ধারণ করেন তাই শিব‌ই মূল, কেউ কারোর থেকে ছোট বড় নয়, বরং সকল দেবতা এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিবের বিভিন্ন রূপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 অত‌এব, এখানে ভেদাভেদ করা হচ্ছে এমন টা দাবী করবেন না, নমঃ শিবায় ॥)


মূল আলোচনার পূর্বে সর্বপ্রথম দেখে নিই

বেদশাস্ত্র বলছে -

যোবৈ রুদ্রঃ স ভগবান যশ্চ বিষ্ণুস্তস্মৈ বৈ নমোনমঃ॥

[অথর্ব-শির উপনিষদ - ২|২]

সরলার্থ - যিনি বিষ্ণুরূপ ধারন করে অনন্ত জগৎ পালন করছেন সেই পরাৎপর পরমব্রহ্ম রুদ্রদেব শিবকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি।

👆উপরোক্ত বেদশাস্ত্র থেকে প্রমাণিত হল যে পরমেশ্বর শিব‌ই জগৎ পালন করেন বিষ্ণুরূপ ধারণ করে। 

এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।


নিম্নোক্ত শ্লোক গুলি স্কন্দমহাপুরাণের সূতসংহিতা থেকে বর্ণিত হয়েছে -

মহাপাপবতাং পুংসাং পূর্বজন্মসু সুব্রতাঃ ।

বিষ্ণুঃ সর্বাধিকো ভাতি ন সাক্ষাৎপরমেশ্বরঃ॥ ৫৮

বিষ্ণুঃ সর্বাধিকো ভাতি নারকী স ন সংশয় ।

বিষ্ণু সর্বাধিকো নান্য ইতি চিন্তয়তাং নৃণাম্ ॥ ৫৯ 

নাস্তি সংসারবিচ্ছিত্তিঃ কল্পকোটিশতৈরপি।

তেষাং নৈব চ মোক্ষাশা কল্পকোটিশতৈরপি ॥ ৬০

ব্রহ্মাদিদেবতানাং চ বিশ্বাধিক্যং বদন্তি যে ।

অধোমুখোর্ধ্বপাদাস্তে যাস্যন্তি নরকার্ণবম্ ॥ ৬১

বিষ্ণোর্বা ব্রহ্মণো বাঽপি তথৈবান্যস্য কস্যচিৎ ।

সাম্যং বদন্তি যে তেষাং ন সংসারাদ্বিমোক্ষণম্ ॥ ৬২

বিষ্ণুপ্রজাপতীন্দ্রাদিদেবতাসু মুনীশ্বরাঃ ।

বিহীনাসু শিবং পশ্যন্মুচ্যতে ভববন্ধনাৎ ॥ ৬৩

শিবরুদ্রমহাদেবব্রহ্মেশানাদিনামতঃ ।

বিষ্ণবাদিদেবতাঃ পশ্যন্ক্রমান্মুচ্যেত বন্ধনাৎ ॥ ৬৪

শিবং সর্বোত্তমং বিপ্রা হরিবিষ্ণবাদিনামতঃ ।

চিন্তয়ন্ঘোরসংসারে পতত্যেব ন সংশয়ঃ ॥ ৬৫

যথাঽমাত্যাদিবুদ্ধিস্তু রাজ্ঞি বাধায় দেহিনাম্ ।

তথা বিষ্ণবাদি‌বুদ্ধিস্তু শিবে বাধায় দেহিনাম্ ॥ ৬৬

অতঃ শিবঃ সদা‌ ধ্যেযঃ প্রধান্যেন মনীষিভঃ ।

জ্ঞানযজ্ঞাৎপরো যজ্ঞো নাস্তি নাস্তি শ্রুতৌ স্মৃতৌ ॥ ৬৭


[তথ্যসূত্র - স্কন্দমহাপুরাণ/সূতসংহিতা/যজ্ঞবৈভবখণ্ড/অধ্যায় নং ২]


☘️ সরলার্থ -

যারা পূর্বজন্মে পাপ করেছেন তাদের ‌ই তাদৃশ সংস্কার দ্বারা বিষ্ণু‌‌ শ্রেষ্ঠ মনে হয় ॥৫৮

[🔥নন্দীটীকা : যে সমস্ত ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্বের অভিমান বশত শ্রীবিষ্ণু কে স্বতন্ত্র পরমেশ্বর বলে ধারণা করেন এখানে তাদের উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে যে, তারা গত জন্মে পাপ করেছেন। কারণ, তারা জানতে পারে না যে একমাত্র পরমেশ্বর শিব‌ই সেই বিষ্ণু রূপটি ধারণ করেন। শিব ব্যতীত দ্বিতীয় আর অন্য কোনো সত্ত্বার অস্তিত্ব নেই সুতরাং বিষ্ণুকে শিব থেকে ভিন্ন ভাবে শ্রেষ্ঠ মনে করা হল মায়া জনিত ভ্রমের প্রভাব। পরমেশ্বর শিব পালন করার জন্য মায়ার দ্বারা বিষ্ণুরূপ ধারণ করেন, তাই বিষ্ণু রূপটি স্থায়ি নয়। কার্য শেষে বিষ্ণু রূপটিও শিবে বিলীন হয়ে গিয়ে একমাত্র শিব‌ই বর্তমান থাকেন। এ কারণেই বিষ্ণুকেই আলাদা করে শ্রেষ্ঠ মান্য করলে তা শাস্ত্র বিরুদ্ধ হয়। সুতরাং এটিকে পাপের কারণ বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।]


তারা নরক গমণ করেন। তারা বিষ্ণুকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করেন তারা কোটি কল্প পর্যন্ত সংসার বন্ধনে বেঁধে থাকেন অর্থাৎ তাদের কোটি কল্পেও মোক্ষ প্রাপ্তির আশা থাকেনা। ৫৯-৬০


[🔥নন্দীটীকা : যখনই পরমেশ্বর শিবের থেকে ভিন্নভাবে বিষ্ণুকে স্বতন্ত্র এবং একমাত্র শ্রেষ্ঠ পরম দেবতা বলে অভিহিত করা হয় সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য‌ই নরক গমনের বাক্যটি প্রযোজ্য হয়েছে,  কারণ শ্রীবিষ্ণু কোন আলাদা সত্ত্বা নয়। শ্রীবিষ্ণুর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিব‌ই বিদ্যমান, যারা পরমেশ্বর শিবের থেকে পৃথক ভাবে শ্রীবিষ্ণুকে বোধ করে শ্রীবিষ্ণুকে শ্রেষ্ঠ ভেবে নেন এবং বিষ্ণুর থেকে পরমেশ্বর শিবকে পৃথক ভাবেন তারাই নরকগামী হবেন, তারাই মোক্ষ প্রাপ্তি করতে পারবে না, কারণ তারা ভেদবাদী]


যিনি ব্রহ্মা আদি অন্যান্য দেবতাদেরকেই পরম মান্য করেন সেই ব্যক্তি সরাসরি নরকের মুখে গিয়ে পড়ে । ৬১

[🔥 নন্দীটীকা : ব্রহ্মা সহ অন্যান্য সমস্ত দেবতারাই পরমেশ্বর শিবের বিভিন্ন রূপ, বিভিন্ন কার্যের জন্য এই সমস্ত রূপ গুলি ধারণ করে থাকেন সুতরাং এই ধারণ করা রূপ গুলি যেহেতু নিত্য নয়, এগুলি মায়া দ্বারা ধারণ করা হয়েছে, তাই শিব দ্বারা ধারণ করা এই দেবতাদের রূপ গুলিকে স্বতন্ত্র ভাবে শ্রেষ্ঠ অথবা সেই দেবতাকেই শ্রেষ্ঠ মনে করলেই নরকের মুখে পতিত হতে হবে]


যিনি বিষ্ণু ব্রহ্মা আদিকে শিবের সমান মনে করেন সেই ব্যক্তির কখনোই মোক্ষ প্রাপ্তি হয় না । ৬২

[🔥 নন্দীটীকা : শিব হল সমস্ত দেবতা রূপের কারণ আর দেবতারা হল শিবের মায়া দ্বারা ধারণ করা দেবসত্ত্বা, কল্পের অন্তে মহাপ্রলয়ের সময়ে এই সমস্ত দেবতারা কার্য সমাপ্ত করে শিবে লীন হয়ে যান, সে সময়ে একমাত্র পরমেশ্বর শিব‌ই একা অদ্বিতীয় ভাবে অবস্থিত থাকেন, শিব ভিন্ন দ্বিতীয় আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না, কিন্তু যারা পরমেশ্বর শিবকে মুখ্য থেকে গৌণ বানিয়ে অনান্য দেবতাদের মতোই একজন সাধারণ দেবতা মনে করেন তারা কখনোই মোক্ষ প্রাপ্ত করতে সক্ষম হন না, কিছু ব্যক্তি পরমেশ্বর শিবের গূঢ় শিবতত্ত্ব সম্পর্কে অবগত না হয়েই নিজ মস্তিষ্কের কল্পনা প্রসূত চিন্তা ধারা প্রকাশ করে দেন, তাদের কথা অনুসারে - 

 " সব ই ব্রহ্মের রূপ, শিব হল ব্রহ্মের রূপ, বিষ্ণু হল ব্রহ্মের রূপ, ব্রহ্মা হল ব্রহ্মের রূপ ও অনান্য দেবতাও ব্রহ্মের এক একটি রূপ। তাই ভেদাভেদ করবেন না"

👆উপরোক্ত এই ধরণের চিন্তা ধারা তে অভ্যস্ত ব্যক্তিবর্গই যে মোক্ষলাভ করতে পারবে না সেটাই এই শ্লোকে বলা হয়েছে। কারণ, এমন ধরণের বক্তব্যের মধ্যে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, শিব এখানে মুখ্য নয়, এখানে ব্রহ্ম মুখ্য, সেই কারণে ব্যক্তি সবকিছুর মূলে ব্রহ্মকে রেখেছেন, এই ব্রহ্ম বা ঈশ্বর শব্দটাই মূল হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এটি যে মায়ার প্রভাব সেটিই এই শ্লোকে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। কারণ উক্ত ব্রহ্মটিই যে সাক্ষাৎ শিব সেটি এরা স্বীকার করে না, সুতরাং এরা অনান্য দেবতাদের সমান মনে করে পরমেশ্বর শিবকে মূখ্য ব্রহ্ম পদ থেকে সরিয়ে গৌণ দেবতা পদে নির্দেশ করে। কিন্তু শাস্ত্র বলছে শিব‌ই সাক্ষাৎ ব্রহ্ম, ব্রহ্ম শিবরূপ ধারণ করে না, বরং শিব‌ই ব্রহ্ম আর এই শিব‌ই বিষ্ণু রূপ ধারণ করেন, শিব‌ই ব্রহ্মা রূপ ধারণ করেন, শিব‌ই ইন্দ্র সহ অনান্য দেবতাদের রূপ ধারণ করেন। তাই এখানে শিব মুখ্য, আলাদা অন্য কোনো ব্রহ্ম নয়। যারা এটি অস্বীকার করে ব্রহ্মকে মূলে রেখে অনান্য দেবতার মতোই সমানভাবে শিবকে সেই ব্রহ্মের একটি রূপ মনে করে তারাই মোক্ষ না পেয়ে হন্যে হয়ে এই সংসারে ভ্রমিত হতে থাকে। ইহাই এই শ্লোকের তাৎপর্য।]


বরং বিষ্ণু প্রজাপতি ইন্দ্রাদি অপরম দেবতাদের মধ্যেও শিবদৃষ্টি করেন এমন ব্যক্তি ভববন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায় । ৬৩

[🔥 নন্দীটীকা : এখানে মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য যে মার্গের কথা বলা হয়েছে সেটা হল, শিব হল পরম দেবতা। আর বিষ্ণু প্রজাপতি ইন্দ্রাদি দেবতাদের অপরম দেবতা বলার কারণ হল - এই দেবতা রূপ গুলি মায়া দ্বারা কল্পিত হয়েছে মাত্র। যা নিত্য নয়। তাই এই দেবতাদের রূপ গুলি অপরম বলে চিহ্নিত হয়েছে শ্লোকে। 

এই দেবতাদের রূপ গুলি আলাদা হলেও এই প্রত্যেক দেবতার মধ্যে শিব দৃষ্টি করতে বলার তাৎপর্য হল এই, প্রত্যেক দেবতাই শিবের এক একটি কার্যগত রূপ। 

পরমেশ্বর শিব বিষ্ণুরূপ ধারণ করেছেন পালন কযার জন্য, পরমেশ্বর শিব প্রজাপতি ব্রহ্মার রূপ ধারণ করেছেন সৃষ্টি করার জন্য, পরমেশ্বর শিব ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ইন্দ্রতথা অনান্য দেবতাদের রূপ ধারণ করেছেন সংসারের বিভিন্ন কর্তব্য পালনের জন্য। অর্থাৎ সব দেবতার মধ্যে এক শিব‌ই নিত্য আছেন এই ভাবনাকেই শিব দৃষ্টি বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এই শিবদৃষ্টি দ্বারা প্রত্যেক দেবতাকেই একমাত্র শিবের বিভিন্ন রূপ বলে জানবে , একমাত্র সেই ব্যক্তিই মোক্ষের অধিকারী হবে, অন্য কেউ হবে না, ইহাই এই শ্লোকের তাৎপর্য ।]


যে সমস্ত ব্যক্তি বিষ্ণু আদি দেবতাকে শিব, রুদ্র, মহাদেব, ব্রহ্ম, ঈশান আদি নামের বিষয় বলে বোঝেন সেই সমস্ত ব্যক্তিই ক্রমমোক্ষ প্রাপ্ত করতে সক্ষম হন । ৬৪

[🔥 নন্দীটীকা : এখানে এই শ্লোকের তাৎপর্য হল, বিষ্ণু নামটি পরমেশ্বর শিবের। পরমেশ্বর শিবের বিভিন্ন নাম হল রুদ্র, মহাদেব, ব্রহ্ম, ঈশান। পরমেশ্বর শিবের নাম হল ব্রহ্ম, পরমেশ্বর শিবের‌ নাম হল ঈশান অর্থাৎ ঈশ্বর। তাই যে সমস্ত ব্যক্তি ব্রহ্ম বা ঈশ্বর বলতে শিবের থেকে আলাদা অন্য কিছু সত্ত্বাকে ভাবনা করেন তাদের চিন্তা ধারা যে ত্রুটিপূর্ণ তা এখানে প্রমাণিত হয়েছে। এখানে পরিষ্কার করে বলা হচ্ছে যে শিবের নাম ব্রহ্ম বা ঈশ্বর। সুতরাং শিব‌ই একমাত্র পরমেশ্বর।

এই পরমেশ্বর শিব ব্যাপ্ত হবার কারণে বিষ্ণু নামে অভিহিত হন । তাই এই শ্লোকে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি বিষ্ণু তথা অনান্য দেবতাকে শিবের নামের বিষয়বস্তু বলে জানেন তারাই ক্রমশ মোক্ষ লাভ করেন।]


সর্বোত্তম শিবকে যারা হরি, বিষ্ণু আদি নামের বিষয় মনে করে তারা ঘোর সংসারে ঘুরে বেড়ায় হয়রানির শিকার হতে থাকে । ৬৫

[🔥 নন্দীটীকা : কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি শিব নামের অর্থকে বিষ্ণুর মঙ্গলময় বা কল্যানময় হবার গুণগত অর্থ বলে বোঝায় এবং শিবের পরমত্ত্ব কে অস্বীকার করে তাহলে তারা এই সংসারে দুঃখ ভোগ করতে থাকে, এটিই এই শ্লোকের তাৎপর্য। সুতরাং, পরমেশ্বর শিবকেই মূল কারণ বলে জানতে হবে। শিব বিষ্ণুর রূপ ধারণ করেন এটি মান্য করলে মোক্ষ সম্ভব, কিন্তু কেউ যদি বলে বিষ্ণু শিবরূপ ধারণ করেন, তবে এটিই বন্ধনের কারণ। সুতরাং একমাত্র শিবকেই সমস্ত দেবতার মধ্যে দর্শন করা হল শাস্ত্রের নির্দেশ, নচেৎ মোক্ষ লাভ অসম্ভব।]


যেমন রাজাকে মন্ত্রী মনে করলে রাজকোপের কারণে কষ্ট হয় তেমনি শিবকে বিষ্ণু মনে করলে কষ্ট হয়। ৬৬

[🔥 নন্দীটীকা : উপমা হিসেবে এখানে বলা হয়েছে যে, রাজাকে মন্ত্রী ভাবলে যে পীড়া সহ্য করতে হয় ঠিক তেমনি শিবরূপী রাজা ও  বিষ্ণুরূপী মন্ত্রীর মধ্যে বিষ্ণুকে রাজা ও শিবকে মন্ত্রী ভেবে নিলে সেই একই ভাবে ফলস্বরূপ সংসার যাতনারূপী পীড়া সহ্য করতে হবে।]


সুতরাং, মনীষিদের প্রধানত শিবকে‌ই ধ্যান করা উচিত। শ্রুতি, স্মৃতি অনুসারে জ্ঞানযজ্ঞ থেকে বড়ো কোনো যজ্ঞ নেই। ৬৭

[🔥 নন্দীটীকা : শিব‌ই একমাত্র ধ্যেয়, তার‌ই ধ্যান করা উচিত, শিবের ধ্যানকেই জ্ঞানের যজ্ঞ হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, কেননা জ্ঞানের উদয় হলেই অজ্ঞানরূপী অন্ধকার দূর হয়, তাই শিবের ধ্যান সমস্ত অজ্ঞানরূপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করে থাকে। এই কারণেই জ্ঞানের থেকে শ্রেষ্ঠ আর অন্য কিছুই নেই বলা হয়েছে এই শ্লোকে।]


☀️উপরোক্ত শ্লোকগুলিকে শ্রুতিশাস্ত্র অর্থাৎ বেদশাস্ত্র সমর্থন করেছে। বেদের অন্তর্গত শরভ উপনিষদের ৩০ নং শ্লোকে বলা হয়েছে -

এক এব শিবো নিত্যস্ততোঽন্যৎসকলং মৃষা ।

তস্মাৎসর্বান্পরিত্যজ্য ধ্যেযান্বিষ্ণবাদিকান্সুরান্ ॥ ৩০ ॥

[রেফারেন্স - শ্রুতিশাস্ত্র(বেদ)/শরভ উপনিষদ]

☘️ সরলার্থ – শিব‌ই একমাত্র নিত্য, অন্য সকল কিছুই মিথ্যা । এই কারণে বিষ্ণু আদি সকল দেবতাকে পরিত্যাগ করে শিবকেই ধ্যেয় বলে জানা উচিত ॥ ৩০ ॥

ব্যাখ্যা - যেহেতু বিষ্ণু সহ সমস্ত দেবতার স্বরূপ পরমেশ্বর শিব নিজেই ধারণ করেন তাই একমাত্র শিবকেই ধ্যেয় এবং সত্য বলা হয়েছে , বাকি সবকিছুকেই মিথ্যা বলেছেন স্বয়ং বেদ শাস্ত্র। 


উপরোক্ত সূতসংহিতার শ্লোকের উপর শ্রুতিশাস্ত্রের সমর্থন পাওয়া গিয়েছে । তাই এই শ্লোকগুলি যে চিরাচরিত সত্য তা দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার।

কেননা ব্যাস সংহিতায় বলা হয়েছে,

মহর্ষি ব্যাসদেব তার ব্যাস সংহিতা ১.৪ তে বলেছেন -


"শ্রুতি স্মৃতি পুরাণানাং বিরোধো যত্র দৃশ্যতে ।

তত্র শ্রৌতং প্রমাণস্তু তয়োর্দ্বৈধে স্মৃতিব্বরা ॥"


সরলার্থ : যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্রুতির কথনই বলবান এবং যেস্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে স্মৃতির কথনই বলবান।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, বেদের সহিত পুরাণ শাস্ত্রের বাক্যের উপর সমর্থন রয়েছে। তাই এই শ্লোকগুলির অর্থ নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। 

পরমেশ্বর শিব‌ই সত্য, শিবই নিত্য, শিবজ্ঞানের দ্বারাই মোক্ষ লাভ সম্ভব। ইহাই বেদবাক্য ইহাই চূড়ান্ত পরমজ্ঞান।


©️ Copyright ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 


© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt108.blogspot.com


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত