ষোলো সোমবার ব্রত বিধি

 


🌷ষোলো সোমবার ব্রত🌷

ISSGT (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) - এর পক্ষ থেকে এই ষোলো সোমবার ব্রত বিধি টি সংগ্রহ করে লিখেছেন শ্রীমতি নমিতা রায় দেবীজী, সম্পাদনা করেছেন শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী 


👉পরমেশ্বর শিবের ব্রতের মধ্যে ষোলো সোমবার ব্রত মনোবাসনা পূর্ণ ও শিব কৃপা লাভকারী ব্রত। এই ব্রত ষোলো টি সোমবারে করা হয়। শ্রাবণ মাস থেকে এই ব্রত শুরু করা উত্তম তবে বৈশাখ, কার্তিক, মাঘ ও চৈত্র মাসেও কৃষ্ণপক্ষের প্রথম সোমবার থেকে এই ব্রত শুরু করা যায়। অবিবাহিত নারী, পুরুষ ও বিবাহিত নারী, পুরুষ সকলেই এই ব্রত করতে পারবেন।


👉ব্রতকারী প্রথম সোমবারে ষোলো সোমবার ব্রতের সঙ্কল্প নিবেন এবং পর পর ১৬ টি সোমবার এই ব্রত করবেন। প্রথম সোমবার যে সময়ে পূজা করবেন অর্থাৎ সকালে বা সন্ধ্যায় বাকি সোমবারেও সেই এক‌ই সময়ে পূজা করবেন। ১৭ সোমবারে উদযাপন করে আপনার সঙ্কল্প পূর্ণ করবেন‌। (অসুবিধার ক্ষেত্রে শ্রাবণের যে কোনো সোমবার থেকে ষোলো সোমবার ব্রতের সংকল্প শুরু করতে পারেন)


👉ব্রতের আগের দিন নিরামিষ বা হবিষ্য খাবেন এবং‌ ব্রতের দিন সারাদিন উপোস থাকবেন একবেলা রাতে নিরামিষ বা হবিষ খেতে পারেন। যারা নিঃর্জলা উপবাস করতে পারবেন না তারা অল্প পরিমাণ দুধ, জল ও ফল খেতে পারেন।


👉এই ব্রতের মাঝখানে কোনো‌ সোমবার ই বাদ দেওয়া যায় না তাই সঙ্কল্প নেওয়ার পর পরপর ১৬টা সোমবার ব্রত করে ব্রত সম্পূর্ণ করবেন [ঋতুকালে বাহ্যিক পূজা করতে অসুবিধে থাকলে মানসিক(সারাদিন উপোস থেকে শিব চিন্তা করবেন, জপ করবেন) পূজা করবেন ]। সাধারণত যারা শৈব অর্থাৎ জ্ঞানমার্গে বিশ্বাসী তারা ঋতুকালীন সময়েও শিবারাধনা করেন, কেননা প্রভু শিব সদাই পবিত্র, তাকে ঋতুকালীন অবস্থাতে পূজা করলেও তিনি অপবিত্র হননা। 


⭐নিচে সোমবার পূজা পদ্ধতি দেওয়া হল এই নিয়মে প্রতি সোমবার পূজা করবেন।

এখানে ক্লিক করে দেখুন 👉 সোমবার ব্রত বিধি 


ষোলো সোমবার ব্রত কথা : 

মৃত্যুলোকে ভ্রমণ করার ইচ্ছা রেখে একসময় শ্রী ভূতনাথ মহাদেব মাতা পার্বতীর সঙ্গে আগমন করেন। সেখানে ভ্রমণ করতে করতে বিদর্ভ দেশাঙ্গর্ত অমরাবতী নামের অতি রমণীয় নগরী তে পৌঁছান। অমরাবতী নগরী স্বর্গের সাদৃশ সর্ব প্রকারে সুখ দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল।সেখানে মহারাজ দ্বারা বানানো অতি সুন্দর পরমেশ্বর শিবের মন্দির ছিল। সেখানে কৈলাসপতি নিজ পত্নীর সঙ্গে নিবাস করতে শুরু করেন। একসময় মাতা পার্বতী নিজ প্রাণপতি কে প্রসন্ন দেখে মনে বিনোদন করার ইচ্ছা রেখে এমন প্রশ্ন করতে লাগলেন, হে পরমেশ্বর! চলুন আজ দুজনে চৌসর খেলি । ভগবান শিব প্রাণপ্রিয়ার কথা মেনে নিলেন এবং চৌসর খেলতে লাগলেন। সেইসময় মন্দিরের পুরোহিত মন্দিরে পূজা করতে এসেছিলেন। মাতা পার্বতী পুরোহিতকে প্রশ্ন করলেন যে, পুরোহিত মশাই বলুন এই প্রতিযোগিতায় কার জিত হবে।

পুরোহিত কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই মহাদেব বিজয়ী হবেন বলে দাবী করেন।

 কিন্তু শেষপর্যন্ত মাতা পার্বতী জিতে গেলেন । অতঃপর মাতা পার্বতী পুরোহিতকে কুষ্টরোগী হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দিলেন পুরোহিতের মিথ্যাভাষণের জন্য।

তারপর পুরোহিত কুষ্টরোগী হয়ে যান। শিব-পার্বতী কৈলাসে ফিরে গেলেন। কিছু সময় পর সেখানে অপ্সরারা আসেন। অপ্সরারা পুরোহিতের তার কুষ্টরোগী হবার কারণ জিজ্ঞাসা করলে পুরোহিত সব বলে দেন। 


অপ্সরারা শুনে বললেন পুরোহিত মশাই আপনি ষোলো সোমবার ব্রত করুন পরমেশ্বর শিব আপনার উপর প্রসন্ন হয়ে আপনার সঙ্কট দূর করবেন। পুরোহিত অপ্সরাদের ব্রত বিধি জিজ্ঞাসা করলেন। অপ্সরারা ব্রত এবং উদ্যাপনের সম্পূর্ণ বিধি বলে দিলেন। পুরোহিত বিধিপূর্বক শ্রদ্ধাভাব দ্বারা ব্রত শুরু করলেন এবং শেষে উদযাপন করলেন। ব্রতের প্রভাবে পুরোহিত মশাই রোগমুক্ত হয়ে গেলেন।


কিছুদিন পর শিব-পার্বতী পুণরায় সেই মন্দিরে এসে পুরোহিত কে রোগমুক্ত দেখে তার কারণ জানতে চাইলেন। পুরোহিত বললেন হে মাতা! অপ্সরা দ্বারা বলা ১৬ সোমবার ব্রত করে পরমেশ্বর শিবের কৃপায় আমি রোগমুক্ত হয়েছি।


মাতা পার্বতী শুনে তিনিও ১৬ সোমবার ব্রত করেন, তার ফলস্বরূপ শ্রী স্কন্দ প্রসন্ন হয়ে মাতার আজ্ঞা পালনকারী হন।


শ্রী স্কন্দ জী মাতা পার্বতীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মাতা! কী কারণে আমার মন সদা তোমার চরণে লেগে থাকে। মাতা পার্বতী শ্রী স্কন্দজীকে ১৬ সোমবার ব্রতের মাহাত্ম্য ও বিধি বললেন। তখন শ্রী স্কন্দজীও এই ব্রত করে তার হারিয়ে যাওয়া মিত্রকে পেয়েছিলেন। তারপর স্কন্দজীর মিত্র তার বিবাহের ইচ্ছা পূরণের জন্য এই ব্রত করেন।


 ফলস্বরূপ- তিনি অন্য রাজ্যে যান। সেখানকার রাজার কন্যার স্বয়ংবর ছিল। সেই রাজার শপথ ছিল যে তার রাজ্যের হস্তিনী যে ব্যক্তির গলায় বরমালা পড়াবেন তার সঙ্গেই রাজকুমারীর বিবাহ করাবেন। এই ব্রাহ্মন মিত্র স্বয়ংবর দেখার জন্য সেখানে বসেন। হস্তিনী সেই ব্রাহ্মন মিত্রর গলায় বরমালা পড়িয়ে দেন তারপর রাজা সেই মিত্রর সঙ্গে রাজকুমারীর বিবাহ সম্পন্ন করেন এবং তারা সুখে থাকেন।

 একদিন রাজকুমারী জিজ্ঞাসা করলেন‌ - হে নাথ! আপনি এমন কী পুন্য করেছিলেন যে হস্তিনী আপনার গলায় মালা পড়িয়ে দেন? ব্রাহ্মণ পতি ১৬ সোমবার ব্রতের মাহাত্ম্য ও বিধি বললেন।

 স্বামীর কথা শুনে রাজকুমারী সত্য-পুত্র প্রাপ্তির জন্য এই ব্রত করেন এবং সর্বগুণ সম্পন্ন পুত্র প্রাপ্ত করেন। 

 রাজা স্বর্গবাসী হলে এই পুত্র‌ই সেখানকার রাজার হন । তারপরেও রাজকুমারী এই ব্রত করতে থাকেন। একদিন রাজকুমারীর পুত্র তার পত্নীকে শিবালয়ে পূজার সামগ্ৰী নিয়ে যেতে বলেন কিন্তু সে দাসীদের সাথে সেই সামগ্ৰী পাঠান। রাজা পূজাপাঠ সমাপ্ত করেন তারপর আকাশবাণী হয় সে রাজন! তুমি এই পত্নীকে ত্যাগ করে দাও নাহলে তোমার রাজপাট সব শেষ হয়ে যাবে। ভগবানের আজ্ঞা মেনে রাজা তার পত্নীকে ত্যাগ করে দেন। তারপর সেই স্ত্রী নিজের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে এক বৃদ্ধার কাছে পৌছান এবং নিজের সব দুঃখ বলেন এবং পূজার সামগ্ৰী শিবালয়ে নিয়ে যায়নি স্বীকার করেন।

 তখন সেই বৃদ্ধা সুতোর গাঠ সেই স্ত্রীর উপরে রেখে দিয়ে বাজারে পাঠিয়ে দেন। রাস্তায় ঝড়ে তার সুতোর গাঁঠ উড়ে যায় ফলে সেই বৃদ্ধা তাকে সেখান থেকে যেতে বলেন। 

  তারপর রানী/স্ত্রী সেখান থেকে যেতে যেতে একটি আশ্রমে পৌছায় সেখানকার গুরুজী তাকে দেখে  বুঝতে পারেন সে উচ্চ ঘরানার বিপত্তিতে রয়েছে। তিনি রানীকে‌ বললেন কন্যা, তুমি আমার আশ্রমে থাকো কোনো প্রকারে চিন্তা করো না। কিন্তু যে বস্তুতে সে হাত দিত সেই বস্তু খারাপ হয়ে যেত। তা দেখে সেই গুরুজী জিজ্ঞাসা করলেন কোন দেবের অপরাধে তোমার সঙ্গে এরকম হচ্ছে? রানী বলেন আমি আমার স্বামীর কথার উলঙ্ঘন করেছি এবং শিবালয়ের পূজোয় যাইনি তাই এতো কষ্ট নিয়ে চলছি। 

  তারপর সেই গুরুজী রানী কে ১৬ সোমবার ব্রত বলেন ও বিধি অনুসারে ব্রত করতে পারেন। ব্রতের প্রভাবে রাজাকে রানীর কথা মনে‌ পড়ে এবং দূতদের তাকে খুঁজতে পাঠিয়ে দেন। তারপর  রানীর খোঁজ পেয়ে রাজা আশ্রমে গিয়ে গুরুজীর আজ্ঞা নিয়ে রানীকে ফিরিয়ে আনেন এবং‌ প্রতিবছর ১৬ সোমবার ব্রত করে তারা সুখে থাকেন।


👉১৭ সোমবারে এক‌ই নিয়মে পূজা করবেন এবং ভোগ নৈবেদ্য অর্পন করবেন পূজা শেষে ভক্তশৈব বা ১ টি/৫ টি বাচ্চাকে এবং কিছু মানুষদের ভোগ খাওয়াবেন/ সেবা করবেন। আপনার সকল মনোকামনা পরমেশ্বর শিব পূর্ণ করবেন।


🔹প্রচারে-#internationalshivashaktigyantirtha


ॐ সাম্বসদাশিবায় নমঃ 🙏 ©Namitaroy (issgt)


#শৈবসংস্কৃতি #ISSGT

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত