মহেশ্বরের কঙ্কালমূর্তিরূপে বিষ্ণুর বামন অবতারের সংহার বর্ণন

 

আমরা সবাই জানি যে জগতের পালন কর্তা ভগবান শ্রীবিষ্ণুর তামসিক অহংকারস্বরূপ মূর্তি নৃসিংহদেবকে বধ করে তার মধ্য থেকে সাত্ত্বিক ভগবান বিষ্ণুকে মুক্ত করেছিলেন পরমেশ্বর শিবের শরভেশ্বর অবতার। 


⭕ কিন্তু কেউ কি আগে এটা শুনেছেন - ভগবান বিষ্ণুর বামন অবতারও একসময় অহংকারের বশবর্তী হয়ে নিজের আত্মতত্ত্বকে ভুলে জগতের সর্বনাশ সাধনে বদ্ধপরিকর হন। তখন তাকেও মহাদেবেরই একটি স্বরূপ পরাজিত করে হত্যা করেন। 


 🔘 28 টি বেদানূকূল শৈবসিদ্ধান্ত আগমের মধ্যে অন্যতম সূক্ষ্মাগম আমাদের এই তথ্য সম্পর্কে অবগত করায়।


 " পুরা ত্রৈবিক্রমং রুপং স্বীকৃত্য পরমাদ্ভূতম্ ।

জিত্বা বলিং মহাদৈত্যমতিদৃপ্তোহভবদ্ধরিঃ ॥ ৪২ ॥

নিরুন্ধন্ ববৃধে সোহয়ং সূর্যচন্দ্রগতিং তথা ।

বিজিত্য তং মহাদেবঃ কঙ্কালং তস্য সন্দধে ।

তস্মান্ কঙ্কালধারীতি বিশ্রুতঃ পরমেশ্বরঃ ॥ ৪৩ ॥


(তথ্যসূত্র : সূক্ষ্মাগম /উত্তরভাগ/ক্রিয়াপাদ/দ্বিতীয়পটলঃ) 


🔻অতীতে একসময়ে - শ্রীবিষ্ণুদেব অত্যন্ত অদ্ভূত ত্রিবিক্রম (অর্থাৎ বামনদেব) এর রুপ ধারন করে বলিরাজ কে পরাজিত করে তিনি অহংকারী হয়ে পড়েন। তিনি তার বৃহৎ দেহ দ্বারা চন্দ্র,  সূর্যেরও গতিকে অবরুদ্ধ করে দেন। তখন দেবতাদের অনুরোধে মহাদেব সেই বামন অবতারকে বধ করে তাঁর কঙ্কাল স্বয়ং ধারন করেন। এরপর থেকেই পরমেশ্বর মহাদেব কঙ্কালধারী নামে প্রসিদ্ধ হন।


🔘মহেশ্বরের ২৫ টি লীলা বিগ্রহ এমন কি মহেশ্বরের ৬৪ টি লীলা বিগ্রহের মধ্যেও এই কঙ্কালমূর্তি একটি পরমপবিত্র লীলামূর্তি।


🔘তাছাড়া রৌরবাগম সহ বিভিন্ন আগম গুলিতেও মহেশ্বরের কঙ্কালমূর্তির ধ্যান ও বিবরণ মেলে। 


[তথ্যসূত্র - রৌরবাগম/ক্রিয়াপাদ/৩৫ নং পটল/শ্লোক নং ২৬৯ - ২৮০

অজিতাগম/ক্রিয়াপাদ/৩৬ নং পটল/শ্লোক নং ২২৪ - ২২৭

কারনাগম/১ম খন্ড/১১ নং পটল/৩০৩ - ৩১০/৩৫১ - ৩৫৬ নং শ্লোক/৭৮ নং পটল/১ - ৫ নং শ্লোক

বাতুলশুদ্ধাখ্য আগম/প্রথমপটল/১২৯ নং শ্লোক ]


🔘তাছাড়া বিখ্যাত তামিল শাস্ত্রশ্রীকুমার প্রদত্ত 'শিল্পরত্ন' তেও কঙ্কালমূর্তির উল্লেখ আছে।  [ শিল্পরত্ন -২য় খন্ড - ২২নং অধ্যায় - ১১৬-১১৯ ]


🔘তাছাড়া - শ্রীতত্ত্বনিধির 'শিবনিধৌ' নামক তৃতীয় অধ্যায়ের ৫৯ নং অনুচ্ছেদে কঙ্কালমূর্তির বিবরণ পাওয়া যায়।


 🔴🔵বামন অবতারের আবির্ভাব ও শিবকর্তৃক তাঁর মুক্তি --


 তিরুমাল(বিষ্ণুদেব)  ত্রিভিক্রম(বামন) রুপে অবতারিত হয়ে তার প্রথম পদধাপে সমগ্র বিশ্ব-পৃথিবীকে অধিকার করে নেন এবং দ্বিতীয় ধাপে তিনি পুরো আকাশকে দখল করে নেন এবং কে রেখেছিলেন এবং মাভিল্লিকে(বলিরাজ)  তৃতীয় পদক্ষেপ রাখার জন্য জায়গা জিজ্ঞাসা করেন।  এতে মাভিল্লি(বলি) তাকে তৃতীয় পদক্ষেপটি তার মাথায় রাখতে বললেন।  বামন তার তৃতীয় পদক্ষেপটি তার মাথার নীচে রেখে তাকে পাতালে প্রেরণ করেন। এরপর তার(বামন) মনে অহংকারের জন্ম নেয় ফলে সে তার বিরাট শরীরে পৃথিবীর মানুষ ও আকাশের দেব,  গ্রহ, নক্ষত্র সবাইকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। দেবগণ তখন আতঙ্কিত হয়ে কৈলাস পর্বতে চলে গিয়ে পরমেশ্বর শিবের শরণাপন্ন হন। এরপর পরমেশ্বর শিব বামনকে শীতল ও শান্ত রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বামন তাঁর কথায় কর্ণপাত করলেন না।  তাই ভগবান শিব তার  থানডম অস্ত্র(বজ্র) দিয়ে বামনের বুকে প্রচণ্ড আঘাত করেন এবং আকৃতি হ্রাস পেয়ে বামন মাটিতে পড়ে যান। এরপর মহাদেব বামনের দেহের চর্ম আলাদা করে  নিজের পোশাক হিসেবে ধারন করলেন এবং বামনের মেরুদণ্ডের হাড়টি সরিয়ে এটি একটি দন্ড হিসাবে নিজের হাতে ধারণ করলেন । এটিই ' কঙ্কালমূর্তি ' নামে পরিচিত । এরপরে বামন শরীর থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীবিষ্ণু শিবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বৈকুন্ঠধামের উদ্দেশ্যে রওনা হন।


[ 🔻তথ্যসূত্র - National Tamil Daily 'Dinamalar' ]


✅এ সমন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন-  তামিল শৈবশাস্ত্র 'Sivaparakramam' (சிவபராக்கிரமம்.) by - তামিল পন্ডিত E-Rathinavelu Mudaliar (ஈ-இரத்தினவேலு முதலியார்)  পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১২৭ - ১৩১ ।


🔻অথ 'কঙ্কালমূর্তি' ধ্যানম -


" রক্তকঞ্চুকবদ্ধাঙ্গং জটামুকুট মণ্ডিতম্ ॥ ২৬৯ ॥

ধুত্তুরপুষ্প নাগং চ বামে সব্যেন্দুশৈখরম্ ।

কিঞ্চিত্প্রহসিনাস্যং চ গণৈর্গয়সমন্বিতম্ ॥ ২৭০ ॥

কর্ণকুন্ডল সংযুক্তং বামে শঙ্খদলং তু বা ।

বামে পূর্বকরে ঢক্কাং প্রহারং দক্ষিণে ধরেৎ ॥ ২৭১ ॥

দক্ষিণে প্ররহস্তস্তু মৃগবক্ত্রে তু ব্যাপৃতঃ ।

বামে পরে তু পিচ্ছং স্যাত্সকলাস্থি সমন্বিতম্ ॥ ২৭২ ॥

তদস্থ্যাকৃতি নির্ভাসং দ্বিপাদং দ্বিকরান্বিতম্ ।

কৃষ্ণশ্যামনিভাকারমপরে দণ্ডবেশনম্ ॥ ২৭৩ ॥

দণ্ডে কঙ্কালপাদৌ দ্বৌ নাগপাশেন বন্ধয়েৎ ।

নেত্রাভ্যাং কিঙ্কিণীকেতু বাক্ত্রান্তং ত্বগ্জধারয়া ॥ ২৭৪ ॥

কঙ্কালমেতদস্থি স্যাত্স্কন্ধোপরি নিধাপয়েৎ ।

বিবিধৈর্ভূতজায়াভিঃ সেবিতং ত্বতি কামতঃ ॥ ২৭৫ ॥

বলিপাত্রং ধরেদ্ভূতং বামপার্শ্বে মনোত্সুকম্ ।

দর্ব্যা পাত্রে বলিং দধুর্জায়াস্তু নতবাসসঃ ॥ ২৭৬ ॥

ললাটে বামপার্শ্বে তু নেত্রান্তে তত্পুটান্তকে । অধরস্য তু হিক্কায়া মধ্যে হৃদয়মধ্যমে ॥ ২৭৭ ॥

নাভেস্তু দক্ষিণে বেদমাত্রং নীত্বা প্রসারয়েৎ ।

বামপাদে তু গুল্ফস্য মধ্যে সূত্রং প্রলম্বয়েৎ ॥ ২৭৮ ॥

আভঙ্গং সমভঙ্গং বাপ্যতিভঙ্গমথাপি বা ।

ব্যাঘ্রচর্মাম্বরোপেতং দুকূলবসনান্বিতম্ ॥ ২৭৯ ॥

নানানাগসমোপেতং সর্বাভরণভূষিতম্ ।

ভিক্ষাটনমিবাযুক্তং যুক্তং চান্যং প্রকল্পয়েৎ ॥ ২৮০ ॥"


( রৌরবাগম - ক্রিয়াপাদ - ৩৫ পটলঃ )


[বিঃদ্রঃ - এছাড়া মহাদেব যে বিষ্ণু অবতার বামন কে পীড়া দান করেছিলেন তার প্রমাণ স্বয়ং শ্রুতিশাস্ত্র শরভ উপনিষদের ১৩নং মন্ত্র]


✍️সংগ্রহে ও লেখনীতে -RohitKumarChoudhury(ISSGT)


🔘সম্পাদনায়- শ্রী কৌশিক রায়

[কপিরাইট ও প্রচারে - #ISSGT ]



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত