শাস্ত্র বিচার - মঙ্গলকাব্য আদৌ কি কোনো মান্য শাস্ত্র হিসেবে গণ্য ?

 


মহর্ষি জৈমিনী তাঁর পূর্ব মীমাংসা ( ধর্ম মীমাংসা ) সূত্রের ১.৩.৩ এ বলছেন -

 " বিরোধে ত্বনপেক্ষ্যং স্যাদ্ অসতি হানুমানম্ " 

সূত্রার্থ - শ্রুতি আর স্মৃতির বিরোধ বাঁধলে স্মৃতিশাস্ত্র অপেক্ষার যোগ্য নয় অর্থাৎ স্মৃতিকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যাবে না , এক্ষেত্রে স্মৃতি শাস্ত্ৰ অপ্ৰমাণ হিসেবে পরিগণিত হবে । শ্রুতি আর স্মৃতির বিরোধ ( অসতি ) না হলে তবেই তা (স্মৃতি) অনুমানের যোগ্য অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য । 

আলোচ্য সূত্রের শাবর ভাষ্য এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মীমাংসক শ্রী যুধিষ্ঠির আচার্য মনু সংহিতার ১২.৯৫ নং শ্লোকের উল্লেখ করে বলছেন - 

 " যা বেদবাহ্যা স্মৃতযো যাশ্চ কাশ্চ কুদৃষ্টযঃ | সর্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্ৰেত্য তমোনিষ্ঠা হি তা স্মৃতা || ৯৫ || " 

অর্থ - যে সব স্মৃতি শাস্ত্র বেদবাহ্য মত বা শ্রুতির বিরোধী মত পোষণ করে যেগুলি কুদৃষ্টি সম্পন্ন , লোভী , অহংকারী ব্যক্তিদের দ্বারা রচিত , সেই সকল বেদ বিরোধী স্মৃতি শাস্ত্র সর্বথা নিষ্ফল । ওগুলো ইহলোক বা পরলোক কোনো কালেই মানব সমাজের জন্য কল্যাণকারী হবে না। 

মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁর ব্যাস সংহিতা ১.৪ এ বলছেন -

" শ্রুতি স্মৃতি পুরাণানাং বিরোধো যত্র দৃশ্যতে | তত্র শ্রৌতং প্রমাণন্তু তয়োর্দ্বৈধে স্মৃতির্ব্বরা || " 

অর্থ- যেখানে শ্রুতি , স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায় , সেখানে শ্রুতির কথনই বলবান এবং যে স্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায় , সেখানে স্মৃতির কথনই বলবান।

সিদ্ধান্ত - মধ্যযুগে রচিত এইসব মঙ্গলকাব্য যেহেতু কোনো স্মৃতি , পুরাণ শাস্ত্রেরও সমতূল্য নয় এবং একইসাথে শ্রুতি বিরোধী মতের পোষণকারী তাই মঙ্গলকাব্য কদাপি শাস্ত্র হিসেবে বা প্রমাণ হিসেবে সিদ্ধ হতে পারে না ।

©RohitKumarChoudhury. ISSGT. 2022. ARR 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত