শ্রীশ্রীমঙ্গলাগৌরী ব্রত বিধি

 


🌺শ্রী মঙ্গলা গৌরী ব্রত টি বাংলাতে মঙ্গলচণ্ডী ব্রত নামে পরিচিত, এটি বাংলার বাইরে মঙ্গলা গৌরী ব্রত নামে সুবিখ্যাত। জগজ্জননী পার্বতীর উদ্দেশ্যে এই ব্রত করলে মঙ্গলদোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, যারা মাঙ্গলিক ব্যক্তি তারাও এই মঙ্গলাগৌরী ব্রত পালন করে মাঙ্গলিক দোষ হতে মুক্ত হয়ে যায়, এছাড়া মাঙ্গলিক নারী বা পুরুষের বিবাহের দিন মাতা গৌরীর পূজা করা আবশ্যক। মায়ের কাছে নিজ নূতন বৈবাহিক জীবনের সমস্ত বাধা বিপত্তির থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা উচিত।


💠 মঙ্গলা গৌরী ব্রতের সময় -


🔹শ্রাবণ মাসের প্রত্যেক মঙ্গলবার ৫ বছর করে উদযাপন করতে হবে অথবা শ্রাবণ মাসে প্রথম মঙ্গলবার থেকে ১ বছর অর্থাৎ পরের বছর শ্রাবণ মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মঙ্গল বার এই ব্রত করে উদযাপন করতে হবে বা শ্রাবণ মাসের প্রথম মঙ্গলবার থেকে শেষ মঙ্গলবার পর্যন্ত এই ব্রত করা হয়ে থাকে।

[এই ব্রত সকালে অথবা প্রদোষ অর্থাৎ সন্ধ্যাকালে করা হয়]


💠ব্রতের ফল-


🔹এই ব্রত বিবাহিত মহিলারা সৌভাগ্য, সন্তান সুখ, স্বামীর আয়ূ, গৃহস্থীর উন্নতি, স্বামী-স্ত্রী বন্ধন, মঙ্গল দোষ এবং বৈবাহিক সম্পর্কে অশান্তি দূর করার জন্য করেন।

[ অবিবাহিত মহিলারা সৌভাগ্য, যোগ্য বর, বিবাহে বাধা দূর করার জন্য করে থাকেন]


💠১৬ প্রকারের বস্তু অর্পন-


🔹মঙ্গলা গৌরী ব্রত পূজায় ১৬ প্রকারের ফুল, ১৬টি মালা, ১৬ সৃঙ্গার, ১৬ টি পান, ১৬ ধরনের ভোগ , ১৬ টি দ্বীপ জ্বালানোর বিধি রয়েছে। 

আপনারা সাধ্যমত যা পারবেন তা ১৬ প্রকারের অর্পন করবেন। যেমন ধরুন -১৬ টি দীপ অথবা ১৬ প্রকারের ফুল অর্পন করতে পারেন।


💠কী কী আহার গ্ৰহণ করতে পারবেন👇


🔹পূজার আগে উপবাস থাকবেন যারা সকালে পূজো করবেন তারা পূজা সেরে সারাদিন ফল খেয়ে থাকতে পারেন সন্ধা আরতীর পর  ভোগপ্রসাদ খাবেন এবং প্রদোষ কালে পূজো করবেন যারা পূজার আগে উপবাস থাকবেন উপবাস থাকা কালীন জল গ্ৰহন করতে পারেন অসুবিধে হলে ফল আহার করতে পারেন পূজো সেরে প্রসাদ খাবেন ।

এই ব্রতে সন্ধার পর পূজো শেষে হবিষ অথবা নিরামিষ অন্ন খেতে পারবেন। 

[যারা উপোস করতে পারবেন না তারা সকালেই পূজা করে লবণ ছাড়া নিরামিষ আহার গ্ৰহণ করবেন এবং সন্ধ্যায় কর্পূর আরতী করবেন]

☀️ মনে রাখবেন এই ব্রত করার দিন লবণ খাবেন না, অন্য দিন খেতে পারেন।


🔴 মঙ্গলাগৌরী পূজার সামগ্রী —


১) দেবী পার্বতীর একটি মূর্তি অথবা ছবি

(উপরোক্ত চিত্র টির উপর একবার স্পর্শ করুন, তারপর স্পর্শ করে ধরে রেখে ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন এবং স্টুডিও থেকে প্রিণ্ট করে ছবিটি বাধিয়ে নিয়ে পূজা করতে পারেন)


২) তামা অথবা পিতলের একটি থালা, ঘটি ও গ্লাস

৩) কিছুটা গোটা আতপচাল

৪) কিছু গন্ধপুষ্প (বিষ্ণুকান্তা এবং তুলসী বাদে) এবং সাধ্য থাকলে ১ টি পদ্মফুল (কারণ এটি মাতার প্রসন্নকারীপুষ্প) ও লাল জবা ফুল,

৫) কিছু বেলপাতা

৬) পানীয় জল

৭) ধূপ (সম্ভব হলে অষ্টাদশাঙ্গ ধূপ)

৮) চন্দন

৯) নৈবেদ্য হিসাবে গোটা একটি পাকা ফল এবং আপনার সাধ্যমত অন্য প্রসাদ হিসেবে মিষ্টান্ন ও অন্য ফলসমূহ।

১০) গন্ধ হিসেবে অগুরু

১১) দূর্বাঘাস

১২) কর্পূর

১৩) ঘি ও কর্পূরের দীপ

১৪) চারমুখী/ চার দীপ( আঁটা বা মাটির দিয়ে তৈরি)

১৫) গঙ্গাজল

১৬) ২টি বা ১৬ টি পান-সুপারী ও লবঙ্গ 

১৭) সিঁদুর/কুমকুম, হলুদ গুঁড়ো

১৮) একটি ছোট পরিষ্কার কাপড়। 

১৯) বস্ত্র/ লাল চুনরী


🔴 পার্বতী মাতার আরাধনার শুভারম্ভ —


✅ পুজোর স্থানে এসে কুশের আসন অথবা কম্বলের আসন পেতে বসুন।


✅ হাতজোড় করে শিবস্মরন করুন —


কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ॥


✅ এবার হাতজোড় করে ঋগ্বেদীয় শিবসংকল্পসূক্ত পাঠ করুন –


পরাৎপরতরো ব্রহ্মা তৎপরাৎপরতো হরিঃ ।

তৎপরাৎ হ্যেষ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

যো বৈ বেদ মহাদেবং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

য সর্বং যস্য চিৎসর্বং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥

কৈলাসশিখরাভাসা হিমবদ্গিরিসংস্থিতা ।

নীলকন্ঠং ত্রিনেত্রং চ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥


✅ নিজ গুরুকে স্মরণ করুন —


অখণ্ড মণ্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম ।

তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।।


✅এবার ধূপ ও ঘিয়ের দীপ জ্বেলে নিন।


✅প্রথমে ব্রতসংকল্প করতে হবে —


হাতে দূর্বা, কিছু আতপ চাল ও জল নিয়ে নিচের মন্ত্র পাঠ করে দেবীর চরণে দিন‌ -


মঙ্গলাগৌরী ব্রতং হ্যেতৎ করিষ্যেঽহং মহাফলম ।

নির্বিঘ্ন মস্তু মে চাত্র ত্বৎ প্ৰসাদা গৎপতে ।। 

দিবাং নিরাহারো ভূত্বা চৈবাপরেঽহনি । 

ভোক্ষ্যেঽহং ভুক্তি মুক্ত্যর্থং শরণং মে ভবেশ্বরী ।।


☘️এবার ভগবান গণেশজীর পূজা করুন —


চন্দনযুক্ত ফুল বেলপাতা সহিত হাতে নিয়ে উচ্চারন করুন – ॐ গাং গণেশায় নমঃ ॥


এবার উক্ত দ্রব্য গণেশজীকে প্রদান করে দিন।


☘️ কার্তিকের চিত্র থাকলে তাতে ভগবান কার্তিকেয় জীর পূজা করুন — চন্দনযুক্ত ফুল বেলপাতা সহিত হাতে নিয়ে উচ্চারন করুন – ॐ স্কন্দায় নমঃ ॥


এবার উক্ত দ্রব্য কার্তিকেয় জীকে প্রদান করে দিন । অথবা শিবলিঙ্গতেও কার্তিকেয় ও গণেশ জীকে কল্পনা করে পূজা করতে পারেন।


💠 এবার পরমেশ্বর প্রভু শিবের পূজন সম্পন্ন করুন —


✅এবার পরমেশ্বর শিবকে জল দ্বারা অভিষেক করান ভক্তিযুক্ত মনে এই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করে ।


☘️ মহামৃত্যুঞ্জয় মহামন্ত্র –


ॐ ত্র্যয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।

উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ॥


এবার সমগ্র জলটি শিবলিঙ্গ ঢেলে দিন।


✅এবার শ্বেতচন্দন সহ ফুল বেলপাতা পরমেশ্বর শিবকে অর্পণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করতে করতে –

ॐ নমঃ ভগবতে শ্রীসাম্বসদাশিবায় সচন্দন গন্ধপুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলী সমর্পয়ামি ॥


এবার হাত জোড় করে প্রনাম করুন নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে -

☘️ শিব প্রনামমন্ত্র –

ॐ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে ।

নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর ॥


✅অতঃপর ধূপ দীপ দিয়ে তাদের পূজা করুন।


🔴এবার দেবী পার্বতীর মাতার আহ্বান করুন —


✅পার্বতী মাতার সামনে নিজের হাতে আবাহনী মুদ্রা ধারণ করে ভক্তিসহকারে হয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করুন👇



☝️হাতটি এইভাবে করুন, 

এটি আবাহনী মুদ্রা, এবার এইভাবে হাত দেখিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করুন👇


অস্মদ মঙ্গলাগৌরীপূজাং করিষ্যে ।

ॐ শিবপ্রিয়ায় আবাহয়ামি নমঃ ।

ॐ স্কন্দমাতয়ে আবাহয়ামি নমঃ ।

ॐ শক্তিয়ে আবাহয়ামি নমঃ ।

ॐ শঙ্করীয়্ আবাহয়ামি নমঃ ।

ইত ব্যুষ্টতি ইত ব্যুষ্টতি ইত ব্যুষ্টতি ।


✅ হাতে একটি ফুল নিয়ে পার্বতীদেবীর বিগ্রহ বা চিত্রের সম্মুখে ধ্যান আসনে বসে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করে চোখ বন্ধ করে দেবী পার্বতীর ধ্যান করুন —


গৌরীং রত্ন নিবন্ধ নূপুররণৎ পাদম্বুজামিষ্টদাং কাঞ্চী রত্নদুকূল হারনিনদাং নীলাং ত্রিনেত্রোজ্জ্বলাম ।

শূলাদ্যস্ত্রসহস্র মণ্ডিত ভূজামুদ্বৃত্ত তুঙ্গস্তনীমাবদ্ধামৃত রশ্মিরত্মমুকুটাং বন্দে মহেশপ্রিয়াম ॥


☘️ ধ্যান অন্তে হাতের ফুল টি নিজের মাথায় রেখে দিন।


✅ এবার পার্বতী মাতার সামনে সাধ্যমত ভোগসহ ভোগপ্রসাদের থালাগুলি মাতাকে সাজিয়ে দিন পানীয় জলপূর্ণ গ্লাস সাজিয়ে দিন । পানীয় জলে খুব ই সামান্য পরিমাণ কর্পূর দিয়ে দেবেন।


✅ এবার ধূপ দীপ নৈবেদ্য জল ফুল দ্বারা ভক্তিসহকারে পূজা করুন।


✅ পার্বতী মাতার সামনে সাধ্যমত সাজিয়ে রাখা ভোগসহ ভোগপ্রসাদের থালাগুলি এক এক করে মাতাকে নিবেদন করুন ৷ পানীয় জলপূর্ণ গ্লাস নিবেদন করুন।


☘️ মাতা পার্বতীকে বস্ত্র বা লাল চুনরী নিবেদন করবেন/ পড়িয়ে দেবেন এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে- ॐ নমঃ শিবায়ৈ, বস্ত্রং সমর্পয়ামি॥


☘️ এক এক করে মাতা পার্বতীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা প্রসাদপূর্ণ পাত্র গুলি এবং একটি গোটা পাকা ফল মাতার সম্মুখে তুলে ধরে বলুন – ॐ নমঃ শিবায়ৈ, নৈবেদ্যং সমর্পয়ামি ॥


☘️ এবং পানীয় জলপূর্ণ গ্লাসটি মাতা পার্বতীর উদ্দেশ্যে মাতার সম্মুখে তুলে ধরে বলুন – ॐ নমঃ শিবায়ৈ, পানার্থ পয়ঃ সমর্পয়ামি ॥


☘️ এবার দেবীকে চারমুখী/ চারটি দীপ(আসনের চারদিকে) নিবেন করুন এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে- 

ॐ নমঃ শিবায়ৈ, দীপং সমর্পয়ামি॥


☘️ এবার হাতে পদ্ম বা লাল জবা অথবা অন্য যেকোনো ফুল স্বল্প পরিমাণে/১৬ টি এক‌ই রকমের ফুল  নিয়ে মাতা পার্বতীকে সমর্পিত করুন ভক্তিভরে এই নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে – ॐ নমঃ শিবায়ৈ, পুষ্পং সমর্পয়ামি ॥


☘️কিছুটা হলুদ গুঁড়ো নিবেদন -


হরিদ্রা রঞ্জিতে দেবী সুখ সৌভাগ্য দায়িনী ।

হরিদ্রাং তে প্রদাস্যামি গৃহাণ পরমেশ্বরি ॥

ॐ শিবায়ৈ নমঃ হরিদ্রা নিবেদয়ামি ॥


☘️দেবীর চরণে সিঁদুর নিবেদন -


বিদ্যুত্ কৃশানু সংকাশং জপা কুসুমসন্নিভং ।

সিন্দূরংতে প্রদাস্যামি সৌভাগ্যং দেহি মে চিরং  ॥

ॐ শিবায়ৈ নমঃ সিন্দূরং নিবেদয়ামি  ॥


(মনে রাখবেন - এই সিঁদুর হলুদসমূহ উপাসনার অন্তে  যত্ন করে তুলে রাখবেন, এই সিঁদুর হলুদ যেকোনো অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা করবে আপনাকে)


☘️ এবার ২টি/১৬টি তাম্বুল(পান-সুপারী) ও লবঙ্গ নিবেদন করুন -

   

তাং ম আবহ জাতবেদো লক্ষ্মীমনপগামিনীম্ ।

যস্যাং হিরণ্যং বিন্দেয়ং গামশ্বং পুরুষানহম্ ॥ 

এলালবংগ কস্তূরী কপূরৈঃ পুণ্যবাসিতাম্ ।

বীটিকাং মুখবাসার্থং অৰ্পয়ামি সুরেশ্বরি ॥

পূগীফলং সতাম্বুলং নাগবল্লি দলৈযূতম্ ।

তাম্বুলং গৃহ্যতাং দেবী যেল লবঙ্গ সম্যুক্তম্ ॥

ॐ শিবায়ৈ নমঃ পূগীফল তাম্বুলং নিবেদয়ামি ॥


☘️দেবীকে ১৬টি শৃঙ্গার বা ১৬ টি চুরি অর্পন করুন

এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে-

ॐ নমঃ শিবায়ৈ, শৃঙ্গারং সমর্পয়ামি॥


[প্রতি মঙ্গলবারে শৃঙ্গার নিবেদন করার সামর্থ না থাকলে শেষ মঙ্গলবারে দিবেন]


☘️এবার ধূপ দ্বারা আরতি প্রদান করুন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে — ॐ নমঃ শিবায়ৈ, ধূপমাঘ্রাপয়ামি ॥


☘️এবার দীপ দ্বারা আরতি প্রদান করুন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে —

দীপং হি পরমং পার্বতী ঘৃতপ্রজ্বলিতং ময়া ।

দত্তং গৃহাণ দেবেশী মম জ্ঞানপ্রদো ভব ॥

দীপং বিশিষ্টং পরমং সর্ব্বৌষধিবিজৃম্ভিতম্ ।

গৃহাণ পরমেশানী মম শান্ত্যর্থমেব চ ॥

দীপাবলিং ময়া দত্তাং গৃহাণ পরমেশ্বরী ।


[⭕যেকোনো আরতির সময়ে শাঁখ, ঘন্টা, কাঁসর প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন]


☘️এবার নিম্নোক্ত মঙ্গলাগৌরী স্তোত্র পাঠ করুন -


॥ মঙ্গলাগৌরী স্তোত্রম্ ॥


ॐ রক্ষ -রক্ষ জগন্মাতে দেবী মঙ্গল চন্ডীকে ।

হারিকে বিপদার্রাশে হর্ষমঙ্গল কারিকে ॥

হর্ষমঙ্গল দক্ষে চ হর্ষমঙ্গল দায়িকে ‌।

শুভেমঙ্গল দক্ষে চ শুভেমঙ্গল চন্ডীকে ॥

মঙ্গলে মঙ্গলার্হে চ সর্বমঙ্গল মঙ্গলে ।

সতা মঙ্গল দে দেবী সর্বেষাং মঙ্গলালয়ে ॥

পূজ্যে মঙ্গলবারে চ মঙ্গলাভিষ্ট দেবতে ।

পূজ্যে মঙ্গল ভূপস্য মনূবংশস্য সংততম ॥

মঙ্গলা ধিষ্ঠাত দেবী মঙ্গলাঞ্চ মঙ্গলে ।

সংসার মঙ্গলাধারে পারে এ সর্বকর্মণাম্ ॥

দেব্যাশ্চ মঙ্গলংস্তোত্রং যঃ শ্রৃণোতি সমাহিতঃ ।

প্রতি মঙ্গলবারে চ পূজ্যে মঙ্গল সুখ-প্রদে ॥

তন্মঙ্গলং ভবেতস্য ন ভবেন্তদ্- মঙ্গলম্ ।

বর্ধতে পুত্র -পৌত্রশ্চ মঙ্গলঞ্চ দিনে-দিনে ॥

মামরক্ষ রক্ষ -রক্ষ ॐ মঙ্গল মঙ্গলে ।


॥ ইতি মঙ্গলাগৌরী স্তোত্রম্ সম্পূর্ণম্ ॥


 ✅ অতঃপর নিজের হাতে কিছু গোটা আতপচাল , চন্দনযুক্ত ফুল ও বেলপাতা নিয়ে হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করুন —


জয়াম্বিকে জগন্মাতর্জয় সর্বজগন্ময়ি ।

জয়ানবধিকৈশ্বর্যে জয়ানুপমবিগ্রহে ॥

জয় বাঙ্মমনসাতীতে জয়াচিদ্ ধ্বান্তভঞ্জিকে ।

জয় জন্মজরাহীনে জয় কালোত্তরোত্তরে ॥

জয়ানেকবিধানস্থে জয় বিশ্বেশ্বরপ্রিয়ে ।

জয় বিশ্বসুরারাধ্যে জয় বিশ্ববিজৃম্ভিণি ॥

জয় মঙ্গলদিব্যাঙ্গি জয় মঙ্গলদীপিকে ।

জয় মঙ্গলচারিত্রে জয় মঙ্গলদায়িনি ॥

সদাশিবাঙ্কমারূঢ়া শক্তিরিচ্ছা শিবাহ্বয়া ।

জননী সর্বলোকানাং প্রযচ্ছতু মনোরথম ॥


এবার আতপচাল সহ ফুলবেলপাতা গুলি অর্পন করুন মাতা পার্বতীর চরণে ।


☘️ মাতা পার্বতীকে প্রণাম করে ভক্তিসহকারে মাতার কাছে প্রার্থনা করুন –


মহিষগ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনি।

দ্রব্যমারোগ্যবিজয়ং দেহি দেবি নমোহস্ত তে ভূতপ্রেতপিশাচেভ্যে রক্ষোভ্যশ্চ মহেশ্বরি।

দেবেভ্যো মানুষেভ্যশ্চ ভয়েভ্যো রক্ষ মাং সদা ॥

সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সব্বার্থসাধিকে।

উমে ব্রহ্মাণি কৌমারি বিশ্বরূপে প্রসীদ মে॥


✅এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।


মন্ত্র –

সদাকার্যে দাসৈরেনঃ ক্ষমাপনম্ ।

প্রসীদ পরমেশানি জগদানন্দদায়িনি ॥

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব পার্বতী ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে জগদম্বা পার্বতী ! আমি আপনার দাস হয়ে সদাকার্য করি, আমার ত্রুটি ক্ষমা করুন, হে জগতের আনন্দদায়িনি পরমেশ্বরী ঈশানি আপনি প্রসন্ন হোন ।আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজাব্রত ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]

ফুলটি মাতার শ্রীচরণে প্রদান করে দিন ।


✅ এবার দাড়িয়ে কর্পূর জ্বেলে আরতি করুন।


আরতি অন্তে অবশেষে মাতার পার্বতীর কাছে শিবভক্তি চেয়ে মিনতি করুন —


মন্ত্র –

শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।

ভক্ত্যা ময়ার্চিতো মহ্যং প্রার্থিতং শং প্রয়চ্ছতু ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে জননী পার্বতী ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। আমি ভক্তিসহকারে আপনার সেবা অর্চনা করেছি, আপনি আমাকে প্রার্থিত কল্যাণ প্রদান করুন]


✅ এবার ব্রত কথা পাঠ করে পূজা সমাপ্ত করুন_


॥ শ্রী মঙ্গলাগৌরী ব্রত কথা ॥


এক সময়ে একটি শহরে ধর্মপাল নামে এক ব্যবসায়ী থাকতেন। তার পত্নী খুব সুন্দর ও সম্পত্তিবান ছিলেন। কিন্তু তাদের কোনো সন্তান না থাকায় পতী-পত্নী খুব দুঃখিত থাকতেন। ভগবানের কৃপায় তারা এক পুত্র প্রাপ্ত করেন কিন্তু সেই সন্তান অল্পায়ু ছিল। সেই পুত্রের উপর অভিশাপ ছিল যে সে ১৬ বছর বয়সে সাপের দংশনে মৃত্যু প্রাপ্ত করবে। সংযোগে তার বিবাহ ১৬ বছরের আগেই এক নারীর সাথে হয়ে যায় যার মাতা মঙ্গলাগৌরী ব্রত করতেন। 


পরিনামস্বরূপ তিনি নিজের পুত্রীর জন্য এমন জীবনের আশির্বাদ প্রাপ্ত করেছিলেন যে তার পুত্রী কখনো বিধবা হবেন না। এই কারনেই ধর্মপালের পুত্র ১০০ বছরের দীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত করেছিলেন। 


এই কারনে‌ই সকল নববিবাহিত মহিলারা এই পূজা করেন তথা মঙ্গলাগৌরী ব্রত করেন এবং নিজের জন্য দীর্ঘ আয়ু, সুখী, স্থায়ী বৈবাহিক জীবনের কামনা করেন। যে মহিলারা উপবাস করতে পারেন না তারা অন্ততঃ পূজা করেন।

সকলে মাতা আদ্যাশক্তি মঙ্গলাগৌরীর জয় ধ্বনী দিন।

জয় মা মঙ্গলাগৌরীর জয়

জয় মাতা পার্বতীর জয় 

জয় মা মঙ্গলচণ্ডীর জয় 


॥ শ্রীশ্রীমঙ্গলাগৌরী ব্রত বিধি সমাপ্ত ॥


✍️ সংগ্রহে ও লেখনীতে : শ্রীমতি নমিতা রায় দেবীজী 

🖋️সম্পাদনায় - শ্রী কৌশিক রায় শৈবজী 

Copyright ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha -ISSGT

© Koushik Roy. All Rights Reserved https://issgt100.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত