"কৃষ্ণ দুধ আর শিব দ‌ই" দাবীর খণ্ডন

 


বর্তমানে একটি ম্লেচ্ছ দের দ্বারা পুষ্ট সংগঠনে তথাকথিত বৈষ্ণবরা পরমেশ্বর শিবের নিন্দা করবার জন্য কৃষ্ণ হল দুধ আর শিব হল দ‌ই - এই মুখস্ত বুলি আওড়াতে থাকেন সমাজে ।

বৈষ্ণবদের এই অপমানজনক বুলি আওড়ানোর উদ্দেশ্য হল -

 শ্রীহরির চেয়ে নিম্নস্তরের দেবতা মাত্র শিব, ভগবান হরি হলেন শ্রেষ্ঠ আর শিব হল তার চরণ সেবক দাস মাত্র তাই সকল জনসাধারণকে হরির ভক্ত বানাবার উদ্দেশ্যে তারা এই কৌশল অবলম্বন করে চলেন ।

 সাধারণ মানুষের কাছে শাস্ত্রের জ্ঞান থাকে না, ফলে তাদের মগজ ধোলাই করে পরোক্ষভাবে শিবকে ছোট এবং হরিকে বড় বলে বিশ্বাস করাবার এই অকৌশল তারা অবলম্বন করেন। 

যদি শিব হরির ভক্ত‌ই হন তাহলে শিব তো আর ভগবান নন, ভগবান একমাত্র হরি ই । এই ধারণাকে মানুষের প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে এই পাষণ্ডরা প্ল্যানিং করে indirectly পরমেশ্বর শিবকে অপমানিত করে হরিকে বড় করে দেখায় ।

এমন চিন্তাধারাটাই সকল সনাতনীদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে এই কলির চর ম্লেচ্ছ পাষণ্ড বৈষ্ণবরা বলে থাকে। 

আবার শিবভক্তদের দেখলেই এই বৈষ্ণবেরা তাদের কাছে এই দুধদ‌ই এর বুলি আওড়াতে শুরু, যাতে পরমেশ্বর শিবের উপরে হরি এটা শিবভক্তদের থেকে স্বীকার করাতে পারে। 

এমনভাবেই বর্তমানে এদের ভণ্ডামির কারণে অতিষ্ট হয়ে গেছে শিবভক্তরা । তাই এদের আপাদমস্তক খণ্ডন করার জন্য আমি উদ্যত হয়েছি ।

চলুন..... আগে দেখে নেওয়া যাক বৈষ্ণবদের দাবি ও তারপর এর খণ্ডন পর্ব শুরু করা হবে ।


🔳 ম্লেচ্ছ বৈষ্ণবদের দাবী :


বৈদিক শাস্ত্র ব্রহ্মসংহিতার ৪৫নং শ্লোকে

বলা হয়েছে -

ক্ষীরং যথা দধি বিকারবিশেষযোগাত

সঞ্জায়তে ন হি তত: পৃথগস্তি হেতো:।

য: শম্ভুতামপি তথা সমুপৈতি কার্যাদ

গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।


অনুবাদ - দুগ্ধ যেমন বিকার-বিশেষযোগে দধিতে রিণত হয়, যা কারণরূপে দুগ্ধ হতে পৃথক নয়, তেমনি যিনি কার্যবশত 'শম্ভুতা' প্রাপ্ত হন এবং সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।


তাই এখানে লক্ষনীয় বিষয় হল - 

দুধ আর দই এক আবার ভিন্ন, 

এক হবার কারন হল, দুধ ছাড়া দই হয় না। 

আর ভিন্ন হবার কারন হল, দুধ থেকে দই হয় কিন্তু দই থেকে দুধ হতে পারে না।


'' শিব হচ্ছেন দই আর কৃষ্ণ হলেন দুধ। তাই 

দুধরূপী হরি/কৃষ্ণ থেকে দ‌ইরূপী শম্ভু/শিব হতে পারেন কিন্তু দ‌ইরূপী শিব কখনোই দুধরূপী কৃষ্ণ হতে পারেন না।

দই প্রস্তুত করতে হলে তুমি দুধ নেবে, খাঁটি দুধ আর তাতে কিছু টক মিশিয়ে নেবে। তখন তা দই হবে।''

তদ্রুপ কৃষ্ণ পরম পবিত্র, আর যখন এই পরম পবিত্র মায়ার সাথে মিশ্রিত হয়, সেটি হলো শিব। 

তাই কৃষ্ণ থেকে শিবের জন্ম হয় কিন্তু শিব কখনোই কৃষ্ণ হতে পারে না। 

☝️ উপরোক্ত এই দাবি গুলি কলিরচর বৈষ্ণবরা করে থাকেন ।

চলুন এবার এই অপপ্রচারের জবাব দেওয়া যাক।


🔥খণ্ডন পর্ব :

 

♨️ ১) বৈদিক শাস্ত্র ব্রহ্মসংহিতা - এই কথাটাই হাস্যকর। কোনো একটি গ্রন্থ বলে তখন‌ই মান্যতা পায় যখন সেই শাস্ত্রটি "শ্রুতি-স্মৃতি পুরাণ ইতিহাস আগম-তন্ত্র প্রভৃতি শাস্ত্রের অন্তর্গত অংশ হয়।

 উদাহরণ হিসেবে - বেদ শাস্ত্রের অন্তর্গত অংশ হল সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ। 

পুরাণ শাস্ত্রের মধ্যে ১৮ রকমের মহাপুরাণ রয়েছে।

ইতিহাস শাস্ত্রের মধ্যে রামায়ণ ও মহাভারত রয়েছে।

আগম শাস্ত্রের মধ্যে শৈবআগম শাস্ত্র রয়েছে

এই ব্রহ্ম সংহিতা কোন শাস্ত্রের অংশ ? 

 কোনো শাস্ত্রের অন্তর্গত নয় এই ব্রহ্ম সংহিতা, তাই এই পিতৃপরিচয়হীন ব্রহ্মসংহিতাতে যাই বলা থাকুক তা কখনোই গণ্য হয় না, আর তার নামের সাথে বৈদিক শব্দটা জুড়ে দিলেই ব্রহ্মসংহিতাটা বেদের অংশ হয়ে যায়না ।


♨️ ২) পরমেশ্বর শিব কখনোই হরির থেকে জন্মান না। কারণ পরমেশ্বর শিবের কোনো জন্ম‌ই নেই, তার কোনো মৃত্যুও নেই। তিনি অজন্মা । এ কথা বেদ স্বীকার করেছেন। প্রমাণ - 

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের মধ্যেই ৪নং অধ্যায়ের ২১নং শ্লোকে পরমেশ্বর শিবকে অজাত বলে উল্লেখ পর্যন্ত রয়েছে - 

অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে।

রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ।।২১

সরলার্থ: হে রুদ্র, তুমি জন্মরহিত। তাইতো মৃত্যুভয়ে ভীত মানুষ তোমার শরণ নেয়। তোমার দক্ষিণ(কল্যাণময় দক্ষিণামূর্তি) মুখ আমার দিকে ফেরাও এবং সর্বদা আমাকে রক্ষা কর।


তাই কাল্পনিক ব্রহ্মসংহিতা শিবের জন্ম আছে এমটা উল্লেখ করে এমনিতেও বেদ বিরুদ্ধ কথা বলে আপনাআপনি খণ্ডিত হয়ে গিয়েছে। 


♨️ ৩) শ্লোকে শম্ভু উল্লেখ রয়েছে, শিব উল্লেখ নেই, তবুও যদি বৈষ্ণবরা ওই শম্ভু বলতে শিবকেই বোঝাতে চান বৈষ্ণবরা তবে তারা জেনে রাখুন, হরির থেকে কখনোই শিব জন্মাতে পারেন না, বরং হরিই শিবের থেকে উৎপন্ন হয়েছে, নীচে শাস্ত্র প্রমাণ সহ দেখুন 👇


✅বৈষ্ণবদের পদ্মপুরাণেই শিব থেকে হরি সহ ত্রিদেবের উৎপত্তি বলা হয়েছে 👇

যএকঃ শাশ্বতোদেবোব্রহ্মবন্দ্যঃ সদাশিবঃ । ত্রিলোচনোগুণাধারো গুণাতীতোহক্ষরোব্যয়ঃ ॥৩ পৃথকৃত্বাত্মনস্তাততত্র স্থানং বিভজ্য চ ।

দক্ষিণাঙ্গে সৃজাৎপুত্রং ব্রহ্মাণাং বামতো হরিম্ ॥৫  পৃষ্ঠদেশে মহেশানংত্রীপুত্রান্ সৃজিদ্বিভুঃ । জাতমাত্রাস্ত্রয়োদেবা ব্রহ্মাবিষ্ণু মহেশ্বরাঃ ॥৬ "

(তথ্যসূত্র : পদ্মপুরাণ/ পাতালখণ্ড/১০৮ নং অধ্যায়)

অর্থ : সেই এক সদাশিবই শাশ্বত, ব্রহ্মা দ্বারা অর্চিত, ত্রিলোচন, ত্রিগুণধারী, ত্রিগুণাতীত, অক্ষর (অক্ষর ব্রহ্মস্বরূপ) এবং অব্যয়। তিনি নিজ ইচ্ছায় নিজেকে তিনভাগে বিভক্ত করেন। তিনি তাঁর দক্ষিণ(ডান)ভাগ থেকে পুত্রস্বরূপ ব্রহ্মাকে, বামভাগ থেকে শ্রীহরিকে এবং পৃষ্ঠদেশ থেকে মহেশ্বরকে (অর্থাৎ রুদ্র) সৃষ্টি করেন। এই ভাবে সদাশিবের তিনপুত্র ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর ত্রিদেব হিসেবে পরিচিতি পায়। [ তাই সদাশিবকে ত্রিদেবজনক বলা হয়]


✅শিবমহাপুরাণেও বলা হয়েছে যে সদাশিব হতেই হরি উৎপন্ন হন 👇

॥শিবউবাচ॥

যুবাং প্রসূতৌ প্রকৃতের্মদীয়ায়া মহাবলৌ ।

গাত্রাভ্যাং সব্যাসব্যভ্যাং মম সর্বৈশ্বরস্য হি ॥১৬

অয়ং মে দক্ষিণাৎপার্শ্বাদ্ব্রহ্মা লোকপিতামহঃ । 

বামপার্শ্বাদ্ বিষ্ণুস্ত্বং সমুৎপন্নঃ পরমাত্মনঃ ॥১৭

 [তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/রুদ্র সংহিতা/৯নং অধ্যায়]

অর্থ : পরমেশ্বর শিব বললেন - আমি সকলের ঈশ্বর, তোমরা দুজন(ব্রহ্মা ও বিষ্ণু) জন্ম হয়েছ আমার স্বরূপভূত (আদিশক্তির) প্রকৃতির অংশ থেকে। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু উভয়েই পরমপুরুষ মহাদেবের ডান-বামঅঙ্গ হতে উদ্ভব হয়েছে।


✅অথর্বশির উপনিষদে বলা হয়েছে 👇

যোবৈ রুদ্রঃ স ভগবান যশ্চ বিষ্ণুস্তস্মৈ বৈ নমোনমঃ॥

 [তথ্যসূত্র : অথর্ব-শির উপনিষদ - ২|২]

সরলার্থ - যিনি বিষ্ণুরূপ ধারন করে অনন্ত জগৎ পালন করছেন সেই পরাৎপর পরমব্রহ্ম রুদ্র শিবকে কে পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি। 



তাছাড়া শিবমহাপুরাণ সহ অনান্য পুরাণ ও বেদ থেকে আরো হাজার হাজার প্রমাণ দেখাতে পারি যেখানে বলা হয়েছে যে পরমেশ্বর শিব থেকেই হরির জন্ম হয়েছে, তাই কাল্পনিক ব্রহ্মসংহিতার কথা কখনোই শাস্ত্রসম্মত নয়, গ্রহণযোগ্য‌ও নয় ।


♨️ ৪) পরমেশ্বর শিবকে মায়া বলার অর্থ নিজের নরকে অনন্তকালের জন্য স্থান ঠিক করে নেওয়া, পরমেশ্বর শিব কখনোই মায়া অর্থাৎ গুণযুক্ত নন। তিনি গুণের অতীত অর্থাৎ মায়ার অতীত। মায়ার ঊর্ধ্বে মহেশ্বর, মায়ার‌ও অধিপতি পরমেশ্বর তিনি। 

প্রমাণ - 

মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়িনং চ মহেশ্বরম্।

তস্যাবয়বভূতৈস্তু ব্যাপ্তং সর্বমিদং জগৎ ॥১০

[তথ্যসূত্র: শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/অধ্যায় নং ৪]

অর্থ - তিনি প্রকৃতি রূপ মায়ার অধীশ্বর এবং এই বিশ্বভুবন তাঁরই বিভিন্ন রূপ বা অবয়বের দ্বারা পরিব্যাপ্ত–প্রকৃতিকে মায়া বলে এবং মহেশ্বরকে মায়াধীশ বলে জানবে।


আরো দেখুন,

 শিবমহাপুরাণে পরমেশ্বর শিবকে মায়ার অতীত বলা হয়েছে 👇

যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ।

তদেব পরমং প্রোক্তং ব্রহ্মৈব শিবসংজ্ঞকম্।।১৪

আকাশং ব্যাপকং যদ্বৎ তথৈব ব্যাপকং বিদম্।

মায়াতীতং পরাত্মানং দ্বন্দ্বাতীতং বিমৎসরম্।।১৫

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/কোটিরুদ্রসংহিতা/৪১নং অধ্যায়]

সরলার্থ - যেখান থেকে মনসহ বাক্য তাকে না পেয়ে ফিরে আসে সেই পরমব্রহ্ম পরমাত্মাকেই শিব বলা হয়। যেমন আকাশ সর্বত্র ব্যাপ্ত তেমন ওই এই সিদ্ধান্ত সর্বব্যাপী তিনি মায়ার অতীত, সম্পূর্ণ দ্বন্দ্ব থেকে রহিত মাৎসর্যশূন্য পরমাত্মা ॥১৪-১৫


🔵আরো দেখুন... ভাগবত পুরাণেও পরমেশ্বর শিবকে মায়ার ঊর্ধ্বে বলা হয়েছে, এমনি তাকে হরিও জানতে সক্ষম নন 👇

ন তে গিরিত্রাখিললােকপালবিরিঞ্চবৈকুণ্ঠসুরেন্দ্রগমাম্ ।

জ্যোতি পরং যত্র রজস্তমশ্চ সত্ত্বং ন যদ্ ব্রহ্ম নিরস্তভেদম্ ॥ ৩১

[তথ্যসূত্র : ভাগবতপুরাণ/৮নং স্কন্ধ/৭নং অধ্যায়]

✅বাংলা অর্থ👉 হে ভগবান শিব ! আপনার জ্যোতির্ময় স্বরূপ হল পরম ব্রহ্ম । সেখানে সত্ত্ব, রজঃ বা তমােগুণ নেই এবং কোনো প্রকারের ভেদ - বিভেদও নেই । আপনার সেই স্বরূপকে লােকপালগণ এমনকি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইন্দ্র পর্যন্ত কেউই জানতে পারেন না ॥ ৩১ ॥


হে ম্লেচ্ছ তথাকথিত বৈষ্ণবগণ ! 

আপনাদের প্রাণপ্রিয় সাত্ত্বিক পদ্মপুরাণ ও ভাগবত পুরাণ থেকে প্রমাণ সহ দেখালাম যে, শিব হতেই হরি উৎপন্ন হন, শিব মায়াতীত, শিবকে হরিও জানতে সক্ষম নন। তাই আপনাদের বলা আকাশকুসুম গল্প কখনোই গ্রহণ যোগ্য নয়। 


♨️ ৫) দুধ দ‌ই এর এই কাল্পনিক গল্পের যুক্তির খণ্ডন শিবমহাপুরাণেই সুন্দর ভাবে রয়েছে 👇


যথা জলং জলে ক্ষিপ্তং ক্ষীরে ক্ষীরং ঘৃতে ঘৃতম্ ।
এক এব তদা বিষ্ণুঃ শিবে লীনো ন চান্যথা ॥৩১

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/শতরুদ্রসংহিতা/১২নং অধ্যায়]

🌷 সরলার্থ - যেমনভাবে জলে জল মিশে যায়, দুধের মধ্যে দুধ মিলে যায়, ঘৃতের মধ্যে ঘৃত মিশে যায় । তেমন ভাবেই সর্বদা একমাত্র ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিবের মধ্যে  শ্রীবিষ্ণু লীন হয়ে যান, এর অন্যথা হয় না অর্থাৎ বিষ্ণুর মধ্যে কখনোই শিব লীন হন না ॥৩১


এখানে পরমেশ্বর শিবকে দুধ স্বরূপ ধরা হয়েছে।

এছাড়াও 

♨️৬) পবিত্র বেদের অন্তর্গত অথর্ব-শির উপনিষদের ৪নং মন্ত্রে বলা হয়েছে পরমেশ্বর ঈশান (সদাশিব) হলেন গাভীস্বরূপ যেখান থেকে গোদুগ্ধ নির্গত হয়👇

অথ কস্মদুচ্যতে ঈশানঃ যঃ সর্বান্দেবানীশতে ঈশনীভির্জননীভিশ্চ পরম ভক্তিভিঃ । অভি ত্বা শূর নোনুমো দুগ্ধা ইব ধেনবঃ

ঈশানমস্য জগতঃ স্বর্দৃশমীশানমীন্দ্র তস্থুষ ইতি তস্মাদুচ্যত ঈশানঃ ।

অর্থ — পরমেশ্বর শিবকে ঈশান কেন বলা হয় ? এ কারণেই বলা হয়,যে, তিনি সমস্ত দেবতা ও তাদের শক্তির ওপরে নিজের প্রভুত্ব(ঈশত্ব)-এর শাসন রাখেন। গাভীস্বরূপ শিবের থেকে দুধস্বরূপ যে ভক্তি লাভ হয়, হে মহান(শূর) প্রভু শিব আপনার প্রতি সেই পরমভক্তি লাভের জন্য আমরা আপনার স্তুতি করি, যাতে আপনি প্রসন্ন‌ হন।

আপনিই ইন্দ্রস্বরূপ, স্থাবর-জঙ্গমরূপী সমগ্র সংসার ই দিব্যদৃষ্টিকোণের বিচারে ঈশস্বরূপ(ঈশ্বর) অর্থাৎ শিবস্বরূপ শিবময় । এই কারণে আপনাকে “ঈশান” নাম দ্বারা সম্বোধন করা হয় ।


🌷বেদ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পরমেশ্বর শিব‌ই গাভীস্বরূপ, যেখান থেকে দুধ নির্গত হয়।


🔥 সিদ্ধান্ত 🔥


•  ব্রহ্মসংহিতা কাল্পনিক, 

• বৈদিক শাস্ত্র হ‌ওয়া তো দূরের কথা বরং বেদবিরুদ্ধ, 

• হরি থেকে কখনোই শিব হতে পারে না,

• পরমেশ্বর শিব হরি হতে পারেন, 

• শিব‌ই পরমব্রহ্ম পরমাত্মা, তাই শিবের মধ্যে বিষ্ণু বিলীন হয়ে যান, কিন্তু কখনোই শিব বিষ্ণুর মধ্যে বিলীন হন না ।

• শিব মায়া নন, বরং তিনি মায়ার অতীত ব্রহ্ম।

• সুতরাং, উৎসহীন ব্রহ্মসংহিতা invalid. 


=  খণ্ডন পর্ব সমাপ্ত =


অগ্রিম পর্যায়ের ঔষধ দিলাম নীচে 👇

যদি বৈষ্ণবদের কথা অনুসারে কাল্পনিক ও পিতৃপরিচয় হীন বেদবিরুদ্ধ ব্রহ্মসংহিতা - হরি/কৃষ্ণ কে দুধ ও শম্ভুকে(শিব) দ‌ই বলে চালায়,

 তবে তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের শৈবশাস্ত্র পরমব্রহ্ম সংহিতায় উল্লেখিত শ্লোক সমূহ জবাব হিসেবে উপহার দিলাম 👇

व्रह्मोवाच ।

यथा प्रत्येकं कल्पे अहं भगवान् हरिः रुद्रदेवश्च निर्गुणपरमात्म ।

सदाशिवेन प्रकटितः जगतः विविधानि कार्याणि कर्तुं ॥১০

किन्तु, केनचित् कल्पे अहं श्रीविष्णुनाभितः प्रादुर्भूतः।

 मम ललाटात् श्री रुद्रदेवः सदाशिवरूपः प्रादुर्भूतः ॥১১

 यतः मम विष्णुदेवस्य च पूर्वं दत्तानां ।

आशीर्वादानां गुणवत्तां रक्षणार्थम् ॥১২

अतः यथा दधिः क्षीरतः भवति तथा विष्णुदेवात् । शिवगुणयुक्तः रुद्रतत्त्वः श्रीशम्भूः प्रकटितः भवति ॥১৩

किन्तु, सा दुग्धोत्पादिका दुग्धदा च गौः ।

सदाशिवस्वरूपा इति वेदे सदा वर्णिता ।

यतः परमं सदाशिवः पिता मम विष्णुरुद्रयोः॥১৪

[তথ্যসূত্র : পরমব্রহ্মসংহিতা/অধ্যায় ২]

🌷 সরলার্থ : ব্রহ্মা নারদকে বললেন - 

যেমন , প্রত্যেক কল্পে আমি(ব্রহ্মা), ভগবান হরি ও রুদ্রদেব সেই নির্গুণ পরমাত্মা সদাশিব দ্বারা প্রকটিত হন জগতের বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করবার জন্যে ।

কিন্তু, কোনো কোনো কল্পে শ্রীবিষ্ণুর নাভিকমল থেকে আমি(ব্রহ্মা), আমার কপাল থেকে পরমেশ্বর সদাশিবের গুণস্বরূপ শ্রীরুদ্রদেব প্রকটিত হন, পূর্বকালে সদাশিব আমার(ব্রহ্মার) ও বিষ্ণুদেবকে দেওয়া আশীর্বাদের মান রক্ষার জন্যে।

তাই, যেমন দুধ থেকে দই তৈরি হয় তেমনই গোবিন্দ থেকে শিবের গুণযুক্ত রুদ্রতত্ত্ব শ্রীশম্ভু প্রকটিত হন ঠিক‌ই কিন্তু সেই দুধ উৎপন্নকারি ও দুধ প্রদানকারী গাভীকে সর্বদা সদাশিব স্বরূপ মনে করবে ।

কারণ, সদাশিবই হল আমার(ব্রহ্মার) , হরির ও রুদ্রদেবকে উৎপন্নকারী পিতা ও একমাত্র পরমেশ্বর, ইহা বেদের‌ও বানী ॥১১-১৪

অর্থাৎ, হরি যদি দুধ হয় আর শম্ভু যদি দ‌ই হয় তবে গরুটা কে ? 😁

গরুস্বরূপ হলেন সাক্ষাৎ সদাশিব [বেদের অন্তর্গত অথর্ব-শির উপনিষদের ৪নং মন্ত্রেই একথা বলা হয়েছে]।

গরুরূপী সদাশিবের থেকে দুধরূপী হরি উৎপন্ন হন, আর সেই দুধরূপী হরির থেকে দ‌ইরূপী রুদ্রদেব কখনো কখনো প্রকট হয়ে থাকেন । তাই হরির উৎস স্বয়ং সদাশিব, যেমনটা দুধের উৎস গরু। গাভীরূপী সদাশিব অফুরন্ত দুধরূপী হরিকে উৎপন্ন করতে পারেন কিন্তু দুধরূপী হরি কখনোই গাভীরূপী সদাশিবকে উৎপন্ন করতে পারেন না । 

যদি ব্রহ্মসংহিতা মান্য হয় তবে পরমব্রহ্মসংহিতাও মানতে হবে বৈষ্ণবদেরকে ।

হে শিবভক্তশৈবগণ, 

যখন‌ই শিবনিন্দুক তথাকথিত ম্লেচ্ছ বৈষ্ণবদের এই দুধ-দ‌ই প্রসঙ্গ টেনে আনতে দেখবেন সাথে সাথে এই লেখা পোষ্ট টি তাকে শেয়ার করবেন অথবা এই লেখাটির কথা বলবেন, দেখবেন তারা নিজেদের ধুতিতে গোবর ছড়িয়ে হলুদ করে ফেলেছে ।


✍️ অপপ্রচার দমনে : শ্রীনন্দীনাথ শৈব

কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত