উমামহেশ্বর ব্রত বিধি

 


পুরাণ শাস্ত্রের মধ্যে উমা মহেশ্বর ব্রতের উল্লেখ রয়েছে, এই ব্রত বিধিটি ISSGT এর পক্ষ থেকে শ্রীমতি নমিতা রায় দেবীজী সংগ্রহ করেছেন। 

উমামহেশ্বর ব্রত পালন করার জন্য ১ বর্ষ পর্যন্ত অষ্টমী, চতুর্দশী, অমাবস্যা তথা পূর্ণিমায় নক্তব্রত(একবার মাত্র রাতে হবিষান্ন ভোজন গ্ৰহণ) পালন করে শিব-পার্বতীর পূজা করতে হবে। তারপর বর্ষের অন্তে উমা-মহেশ্বরের সোনা বা রুপোর প্রতিমা তৈরি করে বিধিপূর্বক প্রতিষ্ঠা করে, শিবভক্ত শৈবদের বা শিশুদের অথবা ব্রাহ্মণভোজন করিয়ে যথাশক্তি দক্ষিণা প্রদান করতে হবে। তারপর পূর্ণ সৌন্দর্যযুক্ত তথা ছত্র-চামর-আভূষণ দ্বারা অলংকৃত রথে করে শিব-পার্বতীকে শিবালয়ে নিয়ে গিয়ে এই ব্রতকে পরমেশ্বর শিবের কাছে সমর্পিত করতে হবে।

🛑ব্রতফল

ব্রতপালন কারী ব্যক্তি শিব সাযুয্য প্রাপ্ত করেন এবং নারী হলে দেবী শিবার(উমার) সাযুয্য প্রাপ্ত করেন।

কন্যা হোক অথবা বিধবা তারা একবর্ষ পর্যন্ত অষ্টমী তথা চতুর্দশীতে নিয়মপূর্বক ব্রহ্মচারিণী থেকে(ব্রহ্মচর্য পালন করে) ভোজন গ্ৰহণ না করে, বর্ষের অন্তে (স্বর্ণ অথবা রূপোর উমা-মহেশ্বর) প্রতিমা তৈরি করে ও তার প্রতিষ্ঠা করে, কোনো রুদ্রালয়ে দান করে শিবভক্ত শৈব দের, শিশুদের অথবা ব্রাহ্মণ ভোজন করাবেন ।

 ব্রতপালনকারী কন্যা বা বিধবা দেবী ভবানীর সান্নিধ্য লাভ করেন। যে নারী বর্ষপর্যন্ত কেবল কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে এই ব্রত পালন করেন এবং বর্ষের অন্তে যেকোনো পদার্থ দ্বারা উমা-মহেশ্বরের প্রতিমা তৈরি করে পূর্বোক্ত সকল বিধি পালন করেন তিনি ভবাণীর সঙ্গে আনন্দে থাকেন।


স্ত্রীগণ একবছর পর্যন্ত অমাবস্যার দিন আহার গ্ৰহণ না করে  পরমেশ্বর শিবের ব্রত করে বর্ষের অন্তে সোনা বা রুপোর ত্রিশূল তৈরি করে পরমেশ্বর শিবকে নিবেদিত করে তথা ভগবান ঈশানের(শিব) অভিষেক করে সহস্র শ্বেত কমল(পদ্ম) পুষ্প দ্বারা ভক্তিপূর্বক পূজা করবেন এবং সুবর্ণময়ী কর্ণিকা যুক্ত রুপোর কমল(পদ্ম) পরমেশ্বর শিবকে সমর্পিত করবেন, তারপর শিবভক্ত শৈবদের বা শিশুদের অথবা ব্রাহ্মণভোজন করিয়ে দক্ষিণা প্রদান করবেন। 

ব্রতপালনকারী স্ত্রী ত্রিশূল দান করার ফলস্বরূপ ভ্রূণহত্যার পাপ নষ্ট হয়ে যায় এবং ভগবতী শিবার সাযুয্য লাভ করে। যদি কোনো পুরুষ এই ব্রত পালন করেন তাহলে তিনিও রুদ্রসাযুয্য লাভ করেন।

একবর্ষপর্যন্ত পূর্ণিমা তথা অমাবস্যার দিন আলস্যরহিত তথা উপবাস পরায়ন হয়ে নারী তথা নরদের‌ও এই ব্রত পালন করা উচিত স্ত্রীরা পতীর আজ্ঞা নিয়েই ব্রত,জপ,দান,তপ পালন করবেন। বর্ষের অন্তে স্বর্ণ বা রুপোর শিব-পার্বতীর প্রতিমা বানিয়ে প্রতিষ্ঠা করে, শিবভক্ত শৈবদের বা শিশুদের অথবা ব্রাহ্মণদের ভোজন ও দক্ষিণা দান করে,সেই প্রতিমা  সুন্দর রথে করে শিবালয়ে দান করে ব্রত সম্পন্ন করবেন।

ব্রত পালন কারী নারী ভগবতী শিবার সাযুজ্য তথা স্বারূপ্য লাভ করবেন এবং নর বা পুরুষ রুদ্র সাযুজ্য তথা স্বারূপ্য লাভ করবেন।

🛑উমামহেশ্বর পূজা বিধি :

🔹উপকরণ

১. তামার তৈরী নন্দীর উপরে স্থিত শিবপার্বতীর বিগ্রহ বা ঐ রকম একটি চিত্র, অথবা শিবলিঙ্গে শিবপার্বতীকে একত্রে পূজা করতে হবে।

২. সাধ্যমত গন্ধপুষ্প ও কিছু বেলপাতা ।

৩. পঞ্চামৃত (কাঁচা দুধ, ঘি, দ‌ই, মধু ও শর্করা)।

৪. শিবের জন্য একটি পানীয় জল পূর্ণ গ্লাস।

৫. ভোগ হিসেবে সাধ্যমত মিষ্টান্ন ও পাকা ফল ।

৬. ধূপ, দীপ, চন্দন ।

৭. দূর্বা, কিছু গোটা আঁতপচাল।


🔵প্রাথমিক করণীয় :


১. সারাদিন উপবাস বা নিরাহার থাকতে হবে। 

বিকালের ক্ষেত্রে : সূর্যাস্তের তিন দন্ড (১ দন্ড = ২৪ মিনিট, ৩ দন্ড= ৭২ মিনিট) পূর্বে স্নান সেরে ফেলতে হবে (স্কন্দপুরাণানুসারে)। 

এছাড়া ব্রতের দিন সকালেও স্নান করতে হবে।

২. স্নানের পর সাদা বস্ত্র ধারন করে পবিত্র মনে পূজায় বসতে হবে।

৩. বৃক্ষে জলদান করুন। কুকুর বা পাখিদের খেতে দিন। এতে শিব খুশি হন।

৪. তারপর শিবকে নিত্য সন্ধ্যারতি করার পর সন্ধ্যাবেলায় মূল পূজা করতে বসতে হবে।

৫. যেকোনো ধরনের শিব পূজায় ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারন আবশ্যিক।

৬. নেশাজাত বা মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।

৭. ব্রহ্মচর্য্য পালন করুন। নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টি রাখুন, কটুভাষা বা কটুচিন্তা পরিত্যাগ আবশ্যিক।


 🔵সকালের করনীয় কর্ম :


✅সকালে নিদ্রাভঙ্গ করে শিবপার্বতীর স্মরণ করুন হাত জোড় করে। মন্ত্র –


কর্পূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারম্ ভুজগেন্দ্রহারম্ ।

সদা বসন্তং হৃদয়ারবিন্দে ভবং ভবানী সহিতম্ নমামি ।।


✅এবার ব্রত সংকল্প করুন এই মন্ত্রে(অথবা সরল বাংলা ভাষাতেই বলুন) –


🛑 মন্ত্র – দেবদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নমোঽস্তু তে ।

কর্তুমিচ্ছাম্যহং দেব উমামহেশ্বরব্রতং তব ॥

তব প্রভাবাদ্দেবেশ নির্বিঘ্নেন ভবেদিতি ।

কামাদ্যাঃ শত্রবো মাং বৈ পীড়া কুর্বন্তু নৈব হি ॥

এরপর উপবাসী থেকে স্নান করবেন নমঃ শিবায় জপ করে। স্নান সেরে শুদ্ধবস্ত্রধারণ করে ত্রিপুণ্ড্র ও রুদ্রাক্ষ ধারণ করবেন বৃক্ষে জল দেবেন এবং কিছু পশুপাখিদের(গরু/ছাগল/কুকুর/কাক/যেকোনো পাখি) এবং কীটপতঙ্গ(পিঁপড়ে ইত্যাদি) খাদ্যবস্তু দান করবেন। এবার হাত ধুয়ে নিন।


🔴 উপাসনার সময়ে করণীয় কর্ম :


উপাসনার কক্ষে অথবা শিবমন্দিরে উপস্থিত হয়ে গঙ্গা জল চারিদিকে ছিটিয়ে দিন রং মন্ত্রে। শিবলিঙ্গ অথবা শিবপার্বতীবিগ্রহ (অথবা শিবপার্বতীর চিত্র) – এর সামনে কুশের আসন অথবা কম্বলের আসন পেতে তার উপর উত্তর দিকে মুখ করে বসুন।


✅ সর্বপ্রথম শিবস্মরণ করুন – 


ॐ শিব ॐ শিব ॐ শিব বৃষভারূঢ়ং হিরণ্যবাহুং হিরণ্যবর্ণং হিরণ্যরূপং পশুপাশবিমোচকং পুরুষং কৃষ্ণপিঙ্গলং ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং বিশ্বরূপং সহস্রাক্ষং সহস্রশীর্ষং সহস্রচরণং বিশ্বতোবাহুং বিশ্বাত্মানং একং অদ্বৈতং নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং শিবং অক্ষরং অব্যয়ং হরি-হর-হিরণ্যগর্ভ-স্রষ্টারং অপ্রমেয়ং অনাদ্যন্তং রুদ্রসূক্তৈরভিষিচ্য সিতেন ভস্মনা শ্রীফল দলৈশ্চ ত্রিশাখৈরার্দ্রৈর-নার্দ্রৈর্বা ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥

ॐ নমঃ শিবায় ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॥



✅এবার শৈব আগমোক্ত শুচিমন্ত্র পাঠ করুন –


ॐ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা ।

যঃ স্মরেৎ বৈ বিরূপাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ‌‌॥


✅অতঃপর নিজ গুরু কে স্মরণ করুন । (যদি আপনি অদীক্ষিত ব্যক্তি হন তবে ভগবান গণেশকে স্মরণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে – ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ


🍁এবার পার্বতীসহিত পরমেশ্বর শিবকে পূজা গ্রহণ করার জন্য ভক্তিসহকারে আবাহন করুন হাতজোড় করে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে –


ঋণপাতক দৌর্ভাগ্যদারিদ্র্যবিনি বৃত্তয়ে ।

অশেষাঘবিনাশায় প্রসীদ মম শঙ্কর ॥

দুঃখশোকাগ্নিসন্তপ্তং সংসারভয়পীড়িতম্ ।

বহুরোগাকুলং দীনং ত্রাহি মাং বৃষবাহন ॥

আগচ্ছ দেবদেবেশ মহাদেবাভয়ঙ্কর ।

গৃহাণ সহ পাৰ্ব্বত্যা তব পূজাং ময়া কৃতাম্ ॥


(অথবা এই সহজ ভাষায় আবাহন করুন,

বলুন – হে শঙ্কর ! 

ঋণ, পাতক, দুর্ভাগ্য, দারিদ্র্য এবং অশেষ পাপ বিনাশের নিমিত্ত তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও। 

হে বৃষবাহন! 

আমি দুঃখ-শোকাগ্নি সন্তপ্ত, সংসারভয়-পীড়িত, বহুরোগাকুল এবং দীন, তুমি আমাকে ত্রাণ করো । 

হে দেবদেবেশ! এসো, মহাদেব ! 

হে অভয়ঙ্কর ! তুমি জগৎজননী পার্বতী মাতার সহিত এসে‌ আমার কৃত এই পূজা গ্রহণ করো ।)



✅এবার ঘিয়ের দীপ জ্বালুন, সুগন্ধযুক্ত ধূপ জ্বালিয়ে নিন। ফল অথবা মিষ্টান্ন এবং পানীয় জল সহ জলের গ্লাস সাজিয়ে দিন প্রভু শিবের সমীপে। এবার এক একটি থালা প্রভুর সামনে দেখিয়ে বলুন – 


ॐ শিবার্পণমস্তু ॥

ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবার্পণমস্তু ॥

হে প্রভু মহাদেব ! হে মাতা পার্বতী ! আমার দ্বারা নিবেদিত এই ভক্তিযুক্ত সমস্ত প্রসাদ আপনারা প্রসন্ন হয়ে গ্রহণ করে আমার উপর কৃপা করুন।


✅এবার শিবলিঙ্গ অথবা শিবপার্বতীবিগ্রহকে পঞ্চামৃত দ্বারা স্নান করাবেন।


🔥গরুর কাচা দুধ দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

গোক্ষীরস্নানং দেবেশ গোক্ষীরেণ ময়া কৃতম্ ।

স্নপনং দেবদেবেশ গৃহাণ পরমেশ্বর ॥


🔥দ‌ই দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

দধ্না চৈব ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ চ ময়া দত্তং সুপ্রসন্নো ভবাদ্য বৈ ॥


🔥ঘি দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

সর্পিষা চ ময়া দেব স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ॥


🔥মধু দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

ইদং মধু ময়া দত্তং তব প্রীত্যর্থমেব চ ।

গৃহাণ ত্বং হি দেবেশ মম শান্তিপ্রদো ভব ॥ 


🔥শর্করা(আখের রস/চিনিজল) দ্বারা স্নান করান নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে  


☘️মন্ত্র -

সিতয়া দেবদেবেশ স্নপনং ক্রিয়তেহধুনা ।

গৃহাণ শ্রদ্ধয়া দত্তাং সুপ্রসন্নো ভব প্রভো ॥


[এবং পঞ্চামৃতেনৈব স্নপনীয়ো বৃষ-ধ্বজঃ ।

পশ্চাদর্ঘ্যং প্রদাতব্যং তাম্রপাত্রেণ ধীমতা ।

অনেনৈব চ মন্ত্রেণ উমাকান্তস্য তুষ্টয়ে ॥]


✅ হাতে এক ঘটি গঙ্গা জল নিয়ে সমগ্র গঙ্গাজল দ্বারা শিবলিঙ্গ বা শিবপার্বতীর বিগ্রহে অভিষেক করার উদ্দেশ্যে ঢেলে দিন, এই মন্ত্র পাঠ করতে করতে – 

ॐ ত্র্যয়ম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্ ।

উর্বারুকমিব বন্ধনান মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ ॥ 

ॐ নমঃ শিবায় ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥


✅এবার অর্ঘ্য নিবেদন - এর জন্য তামার পাত্রে অথবা হাতে দূর্বা আতপচাল নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে বা শিবপার্বতী বিগ্রহে প্রদান করুন –


অর্ঘ্যোঽসি ত্বমুমাকান্ত অর্ঘেণানেন বৈ প্রভো ।

গৃহাণ ত্বং ময়া দত্তং প্রসন্নো ভব শঙ্কর ॥ 


✅ কিছু ফুল বেলপাতা হাতে নিয়ে শ্রীগণেশ কে সমর্পণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে -  ॐ গাং গণেশায় নমঃ ॥


✅ কিছু ফুল বেলপাতা হাতে নিয়ে শ্রীকার্তিকেয় কে সমর্পণ করুন এই মন্ত্র পাঠ করে -  ॐ ষণ্মুখায় নমঃ ॥



✅এবার পঞ্চোপচার [ধূপ, দীপ, গন্ধ(চন্দন), ফুল, নৈবেদ্য] দিয়ে পূজা করুন।


✅এবার দীপ নিবেদন - এর জন্য হাতে দীপ তুলে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –

দীপং হি পরমং শম্ভো ঘৃতপ্রজ্বলিতং ময়া ।

দত্তং গৃহাণ দেবেশ মম জ্ঞানপ্রদো ভব ॥

দীপং বিশিষ্টং পরমং সর্ব্বৌষধিবিজৃম্ভিতম্ ।

গৃহাণ পরমেশান মম শান্ত্যর্থমেব চ ॥ 

দীপাবলিং ময়া দত্তাং গৃহাণ পরমেশ্বর । 



✅এবার চন্দন নিবেদন - এর জন্য হাতে চন্দন নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –


সুগন্ধং চন্দনং দেব ময়া দত্তঞ্চ বৈ প্রভো ।

ভক্ত্যা পরময়া শম্ভো সুগন্ধং কুরু মাং ভব ॥


✅এবার পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন - এর জন্য হাতে কিছু গন্ধপুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গে প্রদান করুন –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাদ্যদ্যৎ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥

তাবকস্ত্বদ্ গতপ্রাণস্ত্বচ্চিত্তোঽহং সদা মৃড ।

ইতি বিজ্ঞায় গৌরীশ ভূতনাথ প্রসীদ মে ॥

ভূমৌ স্খলিতপাদানাং ভূমিরেবাবলম্বনম্ ।

ত্বয়ি জাতাপরাধানাং ত্বমেব শরণং প্রভাে ॥

এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি সমর্পয়ামি ।

ॐ শ্রীসাম্বসদাশিবায় নমঃ ॥


✅অতঃপর

মাতা পার্বতী সহিত পরমেশ্বর শিবের ধ্যান করবেন এই মন্ত্র উচ্চারণ করে –


কৈলাসপীঠাসনমধ্যসংস্থং ভক্তৈঃ সনন্দাদিভির্রচ্যমানম্ ।

ভক্তার্তিদাবানলহাপ্রমেয়ং ধ্যায়েদুমালিঙ্গিতবিশ্বভূষণম্ ॥

ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্ ।

পদ্মাসীনং সমন্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম ॥


(ধ্যান করার সময় নিচের এই চিত্রটি দেখে কল্পনা করতে পারেন চোখ বন্ধ করে এবং ধ্যানের সময়সীমা আপনার মনের গভীরতার উপর নির্ভরশীল, অন্তত দশমিনিট ধ্যান করুন)

✅ধ্যানের পর এবার ১০৮ বার ষড়াক্ষর মহামন্ত্র জপ করুন(রুদ্রাক্ষমালা অথবা হাতের শৈবমালাতেও জপ করতে পারেন)।


মন্ত্র – ॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥


✅জপ এর পর মাতা পার্বতীর উদ্দেশ্যে জপ করুন ষড়াক্ষরী মহামন্ত্র


মন্ত্র- ॥ ॐ নমঃ শিবায়ৈ ॥


✅এবার একটা ফুল হাতে নিয়ে হাত জোড় করে পূজার মধ্যে অজান্তে হওয়া ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।


মন্ত্র –

অজ্ঞানাদ্যদি বা জ্ঞানাজ্জপ পূজাদিকং ময়া ।

কৃতং তদস্তু সফলং কৃপয়া তব শঙ্কর ॥


[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু শিব শঙ্কর! আমি না জেনে অথবা জেনে বুঝে যে জপ- পূজা ইত্যাদি সৎ কর্ম করেছি, তা যেন আপনার কৃপায় সফল হয়]


✅এবার প্রভু শিবের কাছে শিবভক্তি প্রার্থনা করুন এই মন্ত্র পাঠ করে।


মন্ত্র –


শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তিঃ শিবে ভক্তির্ভবে ভবে ।

অন্যথা শরনং নাস্তি ত্বমেব শরনং মম ॥



[বাংলাতে সহজ সরল ভাবেও প্রার্থনা করতে পারেন এটি বলে – হে প্রভু সদাশিব ! প্রত্যেক জন্মে আমার শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক, শিবে ভক্তি হোক। শিব ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে শরণ দেবার নেই। হে পার্বতীপতি আপনিই আমার শরণদাতা]

🔴 বিসর্জন/ পূজার সমাপ্তীকরণ – 


উমামহেশ্বরব্রত দ্বারা গিরিজাপতি প্রভু শিবের নিকট প্রার্থনা করার পর 

এবার ধ্বনি দিন জোরে জোরে -


এক অদ্বিতীয় সগুণ নির্গুণ পরমেশ্বর 

হর শঙ্কর কি........ জয়......


ব্রহ্মাবিষ্ণুসেবিত শক্তিপতি মহেশ্বর

প্রভু সদাশিব কি...... জয়......


বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ ইতিহাস পুরাণ 

আগম ধর্মশাস্ত্রবর্ণিত মহাদেব কি...... জয়.....


সন্তানপ্রতিপালনকারী সনাতন ধর্ম

প্রকাশকারী রুদ্রদেব কি...... জয়.......


ভক্তবৎসল আশ্রয়দাতা পরমপিতা

আশুতোষ ত্রিপুরারী কি....... জয়.......


শৈব হো মন.. শৈব হো তন.. শৈব হো জীবন..

শৈব হে ধর্ম.. শৈব হে কর্ম.. শৈব হে বর্ম...

শিব শিব শিব হর হর শঙ্কর হর নীলকন্ঠ মহাদেব

ॐ শান্তি শান্তি শান্তি

ॐ নমঃ পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব ॥


🛑এবার নিজের হাতে জল নিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করুন–

স্বস্থানং গচ্ছ দেবেশ পরিবারযুতঃ প্রভো ।

পূজাকালে পুর্ননাথ ত্বয়াহহগন্তব্যমাদরাৎ ॥


এরপর সেই জল পূজাস্থলে ও নিজ মস্তকে(অনান্যদের মস্তকেও) ছিটিঁয়ে পূজা সমাপ্ত করুন ।

(শিবমহাপুরাণোক্ত)


॥ সমাপ্ত ॥


© কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত