॥ দেহস্থদেবতাচক্রস্তোত্রম্ ॥

               


  ॥ দেহস্থদেবতাচক্রস্তোত্রম্ ॥

[ ভূমিকা - এই স্তোত্রটিতে মোট ১৫ টি শ্লোক রয়েছে। এখানে শরীরে স্থিত প্রাণ, অপানবায়ু, জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং কর্মেন্দ্রিয়দের দেবতা স্বরূপ মেনে তাদের স্তুতি করা হয়েছে। উপরিউক্ত সকল সমূহ দেবতাচক্র এবং শরীরস্থ আত্মা সকলের স্বামী। এখানে পরমতত্ত্ব ভৈরব এবং তার শক্তি ভৈরবীর বর্ণনা রয়েছে যে সর্বক্ষণ সংসারের সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশ রূপী লীলা করতে থাকেন। কাশ্মীর শৈবদর্শন অনুসারে ভৈরব অর্থাৎ শিব যখন আনন্দিত হন তখন নিজের আনন্দভৈরবী নামক শক্তির দ্বারা সম্পূর্ণ বিশ্বের সৃষ্টি থেকে বিনাশ পর্যন্ত লীলা করতে থাকেন। এখানে সম্পূর্ণ শৈবমার্গের জ্ঞান প্রদানকারী সদগুরুর স্তুতির বর্ণন রয়েছে। ]


[ তথ্যসূত্র - শশীশেখর চতুর্বেদীর অনুবাদিত অভিনবস্তোত্রাবলি ]

বঙ্গানুবাদে - নমিতা রায় দেবীজী(ISSGT)


অসুরসুরবৃন্দবন্দিতমভিমতবরবিতরণে নিরতম্ ।

দর্শনশতাগ্ৰ্যপূজ্যং প্রাণতনুং গণপতিং বন্দে ॥১॥


সরলার্থ - অসুর এবং সুর সকলের কাছে বন্দিত, অভীষ্ট বর যিনি প্রদান করতে থেকে হাজারো দর্শন(অর্থাৎ নেত্র) দ্বারা প্রথমপূজ্য প্রাণরূপী গণপতিকে আমি প্রনাম করি ॥১॥


বরবীরযোগিনীগণসিদ্ধাবলিপূজিতংঘ্রিযুগলম্ ।

অপহৃতবিনযিজনার্তিং বটুকমপানাভিধং বন্দে ॥২॥


সরলার্থ - শ্রেষ্ঠ বীরাচারী সাধক, যোগিনীগণ ও সকল সিদ্ধপুরুষ দ্বারা পূজিত যার দু-পা আছে, বিনীত মনুষ্যদের দূঃখ বিনাশকারী অপান নামক বটুক কে আমি প্রনাম করি॥২॥


আত্মীযবিষয়ভোগৈরিন্দ্রিযদেব্যঃ সদা হৃদম্ভোজে ।

অভিপূজযন্তি যং তং চিন্মযমানন্দভৈরবং বন্দে ॥৩॥


সরলার্থ - নিজের বিষয়ভোগ দ্বারা ইন্দ্রিয়রূপী দেবীগণ নিজ হৃদয়কমলে যার সদা পূজা করতে থাকেন, আমি সেই চিন্ময় আনন্দ-ভৈরব কে বন্দনা করি ॥৩॥


যদ্ধীবলেন বিশ্বং ভক্তানাং শিবপথং ভাতি ।

তমহমবধানরূপং সদ্গুরুমমলং সদা বন্দে ॥৪॥


সরলার্থ - যার বুদ্ধির বলে(জ্ঞানের শক্তিতে) ভক্তদের সম্পূর্ণ শৈবমার্গ ভাষিত হয় সেই অবধানরূপী নির্মল সদ্গুরু কে সদা বন্দনা করি॥৪॥ 


উদযাবভাসচর্বণলীলাং বিশ্বস্য মা করোত্যনিশম্ ।

আনন্দভৈরবীং তাং বিমর্শরূপামহং বন্দে ॥৫॥


সযলার্থ - যিনি নিরন্তর বিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি এবং সংহার লীলা করতে থাকেন আমি বিমর্শরূপী সেই আনন্দভৈরবীকে প্রনাম করি ॥৫॥


অর্চযতি ভৈরবং যা নিশ্চয়কুসুমৈঃ সুরেশপত্রস্থা ।

প্রণমামি বুদ্ধিরূপাং ব্রহ্মাণীং তামহং সততম্ ॥৬॥


সরলার্থ - আমি সেই বুদ্ধিরূপী ব্রহ্মাণীকে নিরন্তর প্রনাম করি যিনি পূর্বদিকে স্থিত হয়ে নিশ্চয়রূপী ফুল দ্বারা নিরন্তর ভৈরবের পূজা করতে থাকেন ॥৬॥ 


কুরুতে ভৈরবপূজামনলদলস্থাঽভিমানকুসুমৈর্যাঃ ।

নিত্যমহংকৃতিরূপাং বন্দে তাং শম্ভবীমম্বাম্ ॥৭॥


সরলার্থ - আমি সেই শাম্ভবী অম্বার বন্দনা করি, যিনি অহঙ্কাররূপী তথা অগ্নিকোনো স্থিত হয়ে অভিমানরূপী ফুল দ্বারা নিরন্তর ভৈরবের পূজা করেন ॥৭॥


বিদধাতি ভৈরবার্চাং দক্ষিণদলগা বিকল্পকুসুমৈর্যা ।

নিত্যং মনঃস্বরূপাং কৌমারীং তামহং বন্দে ॥৮॥


সরলার্থ - দক্ষিণ দিশায় বিকল্পপুষ্প দ্বারা যিনি নিত্য ভৈরবের পূজা করেন, সেই মনঃস্বরূপা কুমারীকে আমি নিত্য প্রনাম করি ॥৮॥


নৈর্ঋতদলগা ভৈরবমর্চযতে শব্দকুসুমৈর্যা ।

প্রণমামি শব্দরূপাং নিত্যং তাং বৈষ্ণবীং শক্তিম্ ॥৯॥


সরলার্থ - নৈর্ঋত্য দিশায় স্থিত হয়ে যিনি শব্দপুষ্পের দ্বারা ভৈরবের পূজা করেন, আমি সেই শব্দরূপা বৈষ্ণবী শক্তিকে প্রনাম করি ॥৯॥


পশ্চিমদিদ্গলসংস্থা হৃদযহরৈঃ স্পর্শকুসুমৈর্যা ।

তোষযতি ভৈরবং তাং ত্বগ্ৰূপধরাং নমামি বারাহিম্ ॥১০॥


সরলার্থ - পশ্চিম দিশার পত্রের উপর স্থিত হয়ে যিনি মনোহারি স্পর্শপুষ্প দ্বারা ভৈরবকে সন্তুষ্ট করেন, সেই রূপ ধারণকারী বারাহী কে আমি প্রনাম করি ॥১০॥


বরতররূপবিশেষৈর্মারুতদিদ্গলনিষণ্ণদেহা যা ।

পূজয়তি ভৈরবং তামিন্দ্রাণীং দৃক্তনুং বন্দে ॥১১॥


সরলার্থ - যিনি বায়ু দিশার দলে স্থিত হয়ে শ্রেষ্ঠ মনুষ্য দ্বারা ভৈরবের পূজা করেন, সেই নেত্র শরীর ধারণকারী ইন্দ্রাণীকে আমি বন্দনা করি ॥১১॥ 


ধনপতিকিসলযনিলযা যা নিত্যং বিবিধষড্রসাহারৈঃ ।

পূজয়তি ভৈরবং তাং জিহ্বাভিখ্যাং নমামি চামুণ্ডাম্ ॥১২॥


সরলার্থ - কুবের দিশায় স্থিত পত্রের উপর বিরাজিত যে দেবী অনেক প্রকারের ছয়টি রসযুক্ত আহারের দ্বারা ভৈরবের পূজা করেন, জিহ্বা নামক সেই চামুণ্ডাকে আমি প্রনাম করি॥১২॥


ঈশদলস্থা ভৈরবমর্চযতে পরিমলৈর্বিচিত্রৈর্যা ।

প্রণমামি সর্বদা তাং ঘ্রাণাভিখ্যাং মহালক্ষ্মীম্ ॥১৩॥


সরলার্থ - ঈশান কোনের দলে স্থিত যিনি বিচিত্র গন্ধ দ্বারা নিত্য ভৈরবের পূজা করেন, ঘ্রাণ নামক সেই মহালক্ষ্মীকে আমি সর্বদা প্রনাম করি ॥১৩॥


ষড্দর্শনেষু পূজ্যং ষড্ত্রিংশত্তত্ত্বসংবলিতম্ ।

আত্মাভিখ্যং সততং ক্ষেত্রপতিং সিদ্ধিদং বন্দে ॥১৪॥


সরলার্থ - ছয় দর্শনে পূজ্য ছত্রিশ তত্ত্বযুক্ত সিদ্ধিদায়ক আত্মা নামক ক্ষেত্রপতির আমি সর্বদা বন্দনা করি ॥১৪॥


সংস্ফুরদনুভবসারং সর্বান্তঃ সততসন্নিহিতম্ ।

নৌমি সদোদিতমিথ্যং নিজদেহগদেবতাচক্রম ॥১৫॥


সরলার্থ - এইপ্রকারে অনুভবের দ্বারা সংস্ফুরিত হয়ে সবার ভেতর নিরন্তর বর্তমান, সদা উদিত, নিজের দেহস্থদেবতাচক্রকে আমি প্রনাম করি ॥১৫॥


              ॥ ইতি অভিনবগুপ্তপাদাচার্যকৃতং                                দেহস্থদেবতাচক্রস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ॥ 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত