মহাভারতের দ্রোণপর্বের অন্তর্গত রুদ্রাভিষেক স্তোত্র

মহাভারতের দ্রোণপর্বের অন্তর্গত রুদ্রাভিষেক স্তোত্র




পুত্র অভিমন্যুর মৃত্যু শোকে বিহ্বল কুন্তীপুত্র অর্জুন জয়দ্রথকে সমর সংগ্রামে হত্যা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অচিন্ত্য পরাক্রমশালী  অর্জুন আপন প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে শিব মন্ত্রের চিন্তন করতে করতে নিদ্রামগ্ন হন।

সেই সময় অর্জুনের স্বপ্নে শ্রীকৃষ্ণ শোকসন্তপ্ত অর্জুনের সন্নিকট এলেন এবং অর্জুনকে নানা প্রকার সান্তনা দিলেন, তবুও অর্জুনের চিন্তার নিবারন হলো না।

তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন-  হে পার্থ! পাশুপাত নামক এক উত্তম সনাতন অস্ত্র আছে, যার দ্বারা একমাত্র জয়দ্রথের বধ সম্ভবপর। শ্রীকৃষ্ণের আদেশানুসার অর্জুন পরমেশ্বরের আরাধনায় লীন হল। এরপর দুজনে আকাশমার্গে  কৈলাশের উদ্দেশ্যে গমন করলেন।

সেখানে পৌছে তারা বৃষভধ্বজ পরমেশ্বরের দর্শন করলেন। আপন তেজে সহস্র সূর্যের ন্যায় প্রকাশিত হাতে ত্রিশূল, মস্তকে জটাধারী তার মধ্যে গঙ্গা, মৃগচর্মধারী, কর্পূরের ন্যায় কান্তি। সহস্র নেত্র যুক্ত পরমেশ্বর উমা সহিত বিরাজমান। ভক্ত বৃন্দ দ্বারা সেবিত, ব্রহ্মবাদী মর্হষিগণ দিব্য স্তুতির দ্বারা প্রভুর চরণ বন্দনা করছেন। অর্জুন সহিত বাসুদেব নন্দন শ্রীকৃষ্ণ প্রভুর দর্শন করে বারংবার ধরাতলে মাথা নত করে প্রনাম করতে লাগলেন।

হে জগতের আদি কারণ, লোকস্রস্টা, অজন্মা, ঈশ্বর, অবিনাশী, দেবতা, দানব, যক্ষ ও মনুষ্যের প্রধান কারণ,  চরাচর জগতের সৃষ্টি ও সংহারের একমাত্র কারণ পরমেশ্বরের মন, বুদ্ধি, বাণী দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ বন্দনা করলেন। অর্জুনও বারংবার নতমস্তকের প্রনাম করতে লাগল।

নর এবং নারায়ণ দুজনকে দেখে প্রভু আনন্দিত হয়ে বললেন- হে নরশ্রেষ্ঠ! তোমাদের স্বাগত! হে বীর! তোমাদের মনের অভিষ্ট বস্তু কি ? শীগ্র বলো। তোমরা যে কার্যের জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছ, সেই কল্যাণকারী বস্তু চাও, তা অবশ্যই সিদ্ধ হবে।

পরমেশ্বরের এই বাণী শ্রবন করে তারা প্রফুল্ল চিত্তে হাত জোড় করে পরমেশ্বরের স্তুতি করতে লাগলেন।



।। রুদ্রাভিষেক স্তোত্র ।।


নমো ভবায শর্বায, রুদ্রায বরদায চ ।

পশূনাং পতযে নিত্যমুগ্রায  চ কপর্দিনে ।।১।।



মহাদেবায ভীমায়, ত্র্যম্বকায চ শান্তযে ।

ঈশানায মখঘ্নায, নমোঽস্ত্বন্ধকঘাতিনে ।।২।।



কুমারগুরবে তুভ্যং, নীলগ্রীবায বেধসে ।

পিনাকিনে হবিষ্যায, সত্যায বিভবে সদা ।।৩।।



বিলোহিতায ধূম্রায, ব্যাধাযানপরাজিতে ।

নিত্যনীলশিখন্ডায, শূলিনে দিব্যচক্ষুসে ।।৪।।



হন্ত্রে গোপ্ত্রে ত্রিনেত্রায, ব্যাধায বসুরেতসে ।

অচিন্ত্যাযাম্বিকাভর্ত্রে, সর্বদেবস্তুতায চ ।।৫।।



বৃষধ্বজায মুন্ডায, জটিনে ব্রহ্মচারিণে ।

তপ্যমানায সলিলে, ব্রহ্মণ্যাযাজিতায চ ।।৬।।



বিশ্বাত্মনে বিশ্বসৃজে, বিশ্বমাবৃত্য তিষ্ঠতে ।

নমো নমস্তে সেব্যায, ভূতানাং প্রভবে সদা ।।৭।।



ব্রহ্মবক্তায সর্বায, শঙ্করায শিবায চ ।

নমোঽস্তু বাচস্পতযে, প্রজানাং পতযে নমঃ ।।৮।।



নমো বিশ্বস্যপতযে, মহতাং পতযে নমঃ ।

নমঃ সহস্রশিরসে, সহস্রভুজমৃত্যবে ।।৯।।



সহস্রনেত্রপাদায, নমোঽসংখ্যেযকর্মণে ।

নমো হিরণ্যবর্ণায, হিরণ্যকবচায চ ।

ভক্তানুকম্পিনে নিত্যং, সিধ্যতাং নো বরঃ প্রভো ।।১০।।



এবং স্তুত্বা মহাদেবং বাসুদেবঃ সহার্জুনঃ ।

প্রসাদযামাস ভবং তদা হ্যাস্ত্রোপলব্ধযে ।।১১।।



ইতি শ্রীমন্মহাভারতে দ্রোণপর্বাণি প্রতিজ্ঞাপর্বাণি অর্জুনস্বপ্নে অশীতিতমোঽধ্যায রুদ্রাভিষেক স্তোত্রম সম্পূর্ণম।।


শ্রীমহাভারতের দ্রোণপর্বের অন্তর্গত প্রতিজ্ঞাপর্বে অর্জুনস্বপ্ন বিষয়ক আশিতম অধ্যায় ।। 



শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন বললেন- ভব(সবার উৎপত্তির কারক), শর্ব (সংহারকারী), রুদ্র (দুঃখ দুরকারী), বরদাতা, পশুপতি, সদা উগ্ররুপ ধারণকারী এবং জটাজুটধারী ভগবান শিবকে নমস্কার ।।১।।


মহান দেবতা, ভয়ংকর রূপধারী, ত্রিনেত্র ধারণকারী, শান্তিস্বরূপ, সবার শাসনকারী, দক্ষযজ্ঞনাশক তথা অন্ধকাসুরের বিনাশকারী ভগবান শঙ্করকে প্রণাম ।।২।।


প্রভো! আপনি কুমার কার্তিকের পিতা, কন্ঠে নীলচিহ্ন ধারণকারী, লোকস্রষ্টা, পিনাকধারী, হবিষ্যের অধিকারী, সত্যস্বরূপ এবং সর্বত্র ব্যাপক, আপনাকে সর্বদা নমস্কার ।।৩।।


বিশেষ লোহিত ও ধূম্র বর্ণ ধারণকারী, মৃগব্যাধ স্বরূপ, সমস্ত প্রানীকে পরাজিতকারী, সর্বদা নীলকেশ ধারণকারী, ত্রিশূলধারী, দিব্যলোচন, সংহারক, পালক, ত্রিনেত্রধারী, পাপরূপী মৃগের বধকারী, হিরণ্যরেতা(অগ্নি), অচিন্ত্য, অম্বিকাপতি, সম্পূর্ণ দেবতাদের দ্বারা প্রশংসিত, বৃষভ-চিহ্নযুক্ত ধ্বজা ধারণকারী, মুন্ডিত মস্তক, জটাধারী, ব্রহ্মচারী, জলে তপকারী, ব্রহ্মণভক্ত, অপরাজিত, বিশ্বাত্মা, বিশ্বসৃষ্টা, বিশ্বকে ব্যাপ্তকারী, সবার দ্বারা সেবার যোগ্য, তথা সদা সমস্ত প্রাণীদের উৎপত্তির কারক, ভগবান শঙ্কর আপনাকে নমস্কার ।।৪-৭।।


ব্রহ্মণ যার মুখ, সেই সর্ব স্বরূপ কল্যাণকারী ভগবান শিবকে নমস্কার, বাণীর অধীশ্বর এবং প্রাণীদের পালনকারী আপনাকে নমস্কার ।।৮।।


বিশ্বের স্বামী এবং মহাপুরুষের পালনকারী ভগবান শিবকে নমস্কার, যার সহস্র মস্তক এবং সহস্র ভুজাধারী, যিনি মৃত্যু স্বরূপ, যার নেত্র এবং পদ ও সহস্র সংখ্যায় বিদ্যমান, যার কর্ম অসংখ্য, সেই ভগবান শিবকে নমস্কার ।।৯।।


সুবর্ণের সমান যাহার গাত্রবর্ণ, যিনি সুবর্ণময় কবচ ধারণকারী, সেই মঙ্গলময় ভগবানকে আমার নিত্য নমস্কার, প্রভো! আমাদের অভীষ্ট বর সিদ্ধ হোক ।।১০।।


এই প্রকার মহাদেবের স্তুতি করে সেই সময় অর্জুন সহিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাশুপতাস্ত্রের প্রাপ্তির হেতু ভগবান শঙ্করকে প্রসন্ন করলেন ।।১১।।



Ⓒ কপিরাইট ও প্রচারে 一 International Shiva Shakti Gyan Tirtha – ISSGT


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত