রহস্যপঞ্চদশিকা

                   ।। রহস্যপঞ্চদশিকা ।।

 


এই স্তোত্রে মোট সাইত্রিশটি শ্লোক আছে। এই স্তোত্রে জীবনমুক্ত অভিনবগুপ্ত শিবের সংবিদ্‌রূপা অনেক প্রকার শক্তি যেমন সরস্বতী, শিবা, অম্বিকা আদির স্তুতি করেছেন। তবে এখানে আপাতদৃষ্টিতে শক্তি অনেক প্রকার মনে হলে ও প্রত্যেকে এক মূলা পরাশক্তি দেবী পার্বতী (শিবা) তারই স্বরূপ। সংবিদের স্বামী শিব আপন শক্তি শিবার মাধ্যমে পঞ্চকৃত্য অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি, বিনাশ, নিগ্রহ এবং অনুগ্রহ করেন। বিনা তার শিব না কিছু করেন, না জানেন এবং না ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই শক্তি (মায়া) অজ্ঞানী মনুষ্যকে চর্ম, রুধির, মাংসাদি দ্বারা পরিপূর্ণ করে সর্বদা রোগযুক্ত শরীরে নিমজ্জিত করে রাখে। ইহাই তার মায়া, এই সংবিদরূপা শক্তির জ্ঞান প্রাপ্ত হলে, সম্পূর্ণ মোহময় জ্ঞান নষ্ট হয়ে যায় এবং সে শিবপদ অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্ত করে।

 


ব্রাহ্মে মুহূর্ত্তে ভগবত্‌প্রপত্তি

          স্ততঃ সমাধির্নিযমোঽথ সান্ধ্যঃ ।

যামৌ জপার্চাদি ততোঽন্যসত্রং শেষস্তু-

          কালঃ শিবশেষবৃতিঃ (বৃত্তিঃ)? ।। ১ ।।



👉ব্রহ্ম-মুহূর্তে ভগবানের প্রার্থনা, সমাধি, সন্ধ্যার অভ্যাস করতে হয়, এবং বাকি দুই প্রহরে জপ-পূজা আদি সম্পন্ন করতে হয়, এর অতিরিক্ত সময় শিবশেষবৃত্তির জন্য ধার্য ।। ১  ।।




আদিমুখা কাদিকরা টাদিপদা পাদিপার্শ্বযুঙ্মধ্যা ।

যাদিহৃদযা ভগবতী সংবিদ্রূপা সরস্বতী জযতি ।। ২ ।।


 

👉অকারাদি যার মুখ, ককারাদি যার হাত, টকারাদি যার পাদ, 'প' আদি যার দু পার্শ্ব এবং মধ্য, 'য' আদি যার হৃদয়, সেই সংবিদ্‌রূপা সরস্বতী সর্বশ্রেষ্ট ।। ২ ।।




ফলন্তি চিন্তামণিকামধেনুকল্পদ্রুমাঃ কাংক্ষিতমেব পুংসাম্‌ ।

অপ্রার্থিতা ন প্রচিতান্পুমর্থান্‌ পুষ্ণাতু (তি) মে মাতুরুদারভাবঃ ।। ৩ ।।


 

👉 চিন্তামণি, কামধেনু এবং কল্পবৃক্ষ মনুষ্যকে কেবল মাত্র বাঞ্ছিত ফল প্রদান করতে সক্ষম। কিন্তু মাতার উদারভাব বিনা প্রার্থনায় পুরুষার্থ (ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ) প্রদান করে ।। ৩ ।।




যযা বিনা নৈব করোতি কিঞ্চিন্ন বেত্তি নাপীচ্ছতি সংবিদেশঃ ।

তস্যৈ পরস্যৈ জগতাং জনন্যৈ নমঃ শিবাযৈ শিববল্লভাযৈ ।। ৪ ।।

 

👉 যার বিনা সংবিদের স্বামী, না কিছু করেন, না জানেন এবং না ইচ্ছা প্রকাশ করেন সেই পরাসংসারের মাতা, শিবের প্রিয়া, শিবাকে নমষ্কার ।। ৪ ।।




সদোদিতে ভগবতি সর্বমঙ্গলে

           শিবপ্রদে শিবহৃদযস্থিতে শিবে ।

ভজন্মনঃকুমুদবিকাসচন্দ্রিকে

          দ্বিজন্মনঃ কুরু মম খে গতিং পরে ।। ৫ ।।



👉 হে সদোদিতে ভগবতি! সর্বমঙ্গলে! শিবপ্রদে! শিবের হৃদয়ে স্থিত শিবে! তোমার ভজনাকারী ভক্তদের মনরূপী কুমুদের ন্যায় বিকাশকারী চন্দ্রমার সমান এই ব্রাহ্মণের অন্তিম গতি পরমাকাশে করো ।। ৪ ।।

 



প্রসীদ সর্বমঙ্গলে শিবে শিবস্য বল্লভে ।

উমে রমে সরস্বতি ত্বমেব দেবতা পরা ।। ৬ ।।



👉 হে সর্বমঙ্গলে, শিবে, শিবের বল্লভ, উমে, রমে, সরস্বতী প্রসন্ন হন। তুমি একমাত্র

পরাদেবতা ।। ৬ ।।




উমে অম্বিকে অস্বরূপে অনাখ্যে

        উমে রৌদ্রি বামে মহালক্ষ্মি মাযে ।

পরে দেবতে পঞ্চকৃত্যৈকলোলে

        শিবে ভৈরবি শ্রীমতি ত্বাং প্রপদ্যে ।। ৭ ।।

 


👉হে উমে!, হে অম্বিকে!, হে রূপরহিত!, হে নামরহিত!, হে উমে!, হে রৌদ্রী!, হে বামে!, মহালক্ষ্মী!, মাযে!, পরেদেবতে!, পঞ্চকৃত্যে লীন শিবে!, ভৈরবী!, শ্রীমতি!, আমি তোমার শরণাগত ।। ৭ ।।




মাযে বিদ্যে মাতৃকে মানিনি ত্বং

        কাযে কাযে স্পন্দসে চিত্কলাত্মা ।

ধ্যাযেযং তাং ত্বাং কথং স্বস্ফুরত্তাং

        ধ্যাযেযং ত্বাং বাচমন্তর্নদন্তীম্‌ ।। ৮ ।।

 


👉  হে মায়া!, হে বিদ্যা!, হে মাতৃকা!, হে মানিনী! তুমি চিত্কলাআত্মা স্বরূপে প্রত্যেক আত্মার অভ্যন্তরে স্পন্দনরত। স্বয়ং স্ফুরণকারী তোমার ধ্যান কিভাবে করবো? আমি তোমার ধ্যান অন্তর্নাদ করি বাণী স্বরূপে ।। ৮ ।।




ত্বগ্রুধিরমাংসমেদোমজ্জাস্থিমযে সদামযে কাযে ।

মাযে মজ্জযসি ত্বং মাহাত্ম্যং তে জনানজানানান্‌ ।। ৯ ।।



👉 হে মায়া!, যে মনুষ্য তোমার মহিমা সম্বন্ধে অজ্ঞ, তুমি তাদের ত্বক, রুধির, মাংস,মেদ, অস্থি দ্বারা পরিপূর্ণ সদা রোগময় শরীরে সর্বদা নিমজ্জিত করে রাখো ।। ৯ ।। 



 

লোহালেখ্যস্থাপিতান্‌ বীক্ষ্য দেবান্‌

           হা হা হন্তেত্যাহুরেকেঽকৃতার্থাঃ ।

দেহাহন্তাশালিনাং দেহভাজাং

          মোহাবেশং কং ন মাযা প্রসূতে ।। ১০ ।।

 


👉 লোহার উপর চিত্রিত দেবতাদের দর্শন করে কিছু কৃতঘ্ন লোক হা হা হন্ত হন্ত করে,

কারণ দেহে অহংভাবযুক্ত শরীরধারীদের মনে মায়া মোহবশ উৎপন্ন করে ।। ১০ ।।




মাযাবিলাসোদিতবুদ্ধিশুন্যকাযাদ্যহন্তাজনিতাদশেষাত্‌ ।

আযাসকাদাত্মবিমর্শরূপাত্‌ পাযাদপাযাত্‌ পরদেবতা মাম্‌ ।। ১১ ।।



👉 পরদেবতার মায়ার বিলাসের কারণে উদিত বুদ্ধি শূন্য শরীরাদির প্রতি অহন্তা জনিত

 প্রয়াস উৎপন্নকারী সম্পূর্ণ আত্মবিমর্শরূপ বিনাশ হতে আমার রক্ষা করো ।। ১১ ।।




 ঘোরাত্মিকাং ঘোরতমামঘোরাং

          পরাপরাখ্যামপরাং পরাং চ ।

বিচিত্ররূপাং শিবযোর্বিভূতিং

          বিলোকযন্‌ বিস্মযমান আস্তে ।। ১২ ।।

 


👉 আমি ঘোর, ঘোরতম, অঘোর, পরাপরা, অপরা এবং পরারূপময় বিচিত্র রূপধারী শিব

 এবং শিবার বিভূতি দেখে আশ্চর্যচকিত ।। ১২ ।।




পরাপরাপরাপরামরীচিমধ্যবর্তিনো ।

ন মে ঽভিদাভিদাভিদাভিদাসু কঞ্চিদাগ্রহঃ ।। ১৩ ।।



👉 পরাপরা এবং অপরা জ্যোতির মধ্যে স্থায়ী আমার মন অভেদ, ভেদ এবং ভেদাভেদের

বিষয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই ।। ১৩ ।।

 



স্ফুরতি যত্তরূপমনুত্তরং যদপরং চ জগন্মযমম্বিকে ।

উভযমেতদনুস্মরতাং সতামভযদে! বরদে! পরদেবতে! ।। ১৪ ।।

 


👉 হে অম্বিকে! তোমার অনুত্তর এবং জগন্ময় রূপের স্মরণকারী সজ্জন ব্যাক্তির জন্য পরদেবতা তুমি অভয় ও বর প্রদানকারী।




পরমেশ্বরি পঞ্চকৃত্যলীলে পরসংবিন্মযি পার্বতি! প্রসীদ ।

পতিতং পশুপাশমুদ্ধরেমং শিশুমাশ্বাসয শীতলৈঃ কটাক্ষৈঃ ।। ২৫ ।।



👉 হে পরমেশ্বরী! হে পঞ্চকৃত্যরূপী লীলাময়ী পরসংবিত্ময়ি পার্বতি! প্রসন্ন হন। পশুপাশে পতিত এই শিশুকে উদ্ধার করুন এবং আপন শীতল কটাক্ষে আশ্বস্ত করুন ।। ২৫ ।।


 


বিবর্ততে (প্রবর্ততে)? ঽনুবর্ততে হি বর্ততে চ যত্র স-

ন্নযং ষডধ্বডম্বরঃ (সন্নিদং ষডধ্বডংবর)? ত্বমেব তচ্চিদম্বরম্‌ ।। ১৬ ।।



👉 যেখানে এই ষডধ্ব বিস্তারে প্রবৃত্ত হয়, অনুবৃত্ত হয় এবং সত্তায় প্রবিষ্ট হয়, তুমি সেই

 চিদাকাশ ।। ১৬ ।।



 

অজ্ঞানামসমর্থানামস্থানাভিনিবেশিনাম্‌ ।

অম্ব ত্বং বলমস্মাকং শিশূনাং শিববল্লভে ।। ১৭ ।।

 


👉 হে শিববল্লভে! অজ্ঞানী, অসমর্থ এবং অনুচিত স্থানে শ্রদ্ধা প্রদানকারী আমার ন্যায় শিশুদের জন্য হে অম্বিকে তুমি শক্তি ।। ১৭ ।।




বেদপ্রসিদ্ধাদ্বিবিধপ্রভাবাত্‌ পাদপ্রভাবাত্পরদেবতাযাঃ ।

ছেদপ্রদা স্বাত্মমহাবিভূতের্ভেদপ্রথা মে সকলা নিবৃত্তা ।। ১৮ ।।

 


👉 বেদে প্রসিদ্ধ প্রভাবময় পরদেবতার চরণপ্রভাবে আমার স্বাত্ম মহাবিভূতিকে নষ্ট করে সমস্ত ভেদপ্রথা নিবৃত্ত হয়ে যাক ।। ১৮ ।।




বীরবাধকবিপক্ষভক্ষিণী ধীরসাধকসপক্ষরক্ষিণী ।

সাক্ষিণী মম সদাধিতিষ্ঠতঃ সাক্ষিণী সকলসংবিদাং পরা ।। ১৯ ।।



👉  বীরাচারী সাধকের বাধকরূপী বিপক্ষের ভক্ষিণী, ধীরসাধকের সপক্ষ রক্ষিণী, সমস্ত সংবিদের অন্তিম সাক্ষিণী, আমার সাক্ষিণী হয়ে সদা অধিষ্ঠিত হয়ে থাকো ।। ১৯ ।।

 



সচ্চিদম্ব সকলং ত্বদাত্মকং ত্বত্ত উদ্ভবতি লীযতে ত্বযি ।

ভামতী ভগবতী স্বযেচ্ছযা কেন নৈব বপুষা প্রকাশসে ।। ২০ ।।

 


👉 হে সচ্চিত্‌ মাতা! এই সমস্ত আপনি হতে ব্যাপ্ত, আপনি হতে উৎপন্ন এবং আপনাতে লীন হয়ে যায়। প্রকাশবতী তথা ঐশ্বর্য যুক্ত আপনি সর্বভূতে প্রকাশিত ।। ২০ ।।





নির্দ্বন্দ্ব চিদ্ধননিজাত্মধৃতাধ্বষট্‌কে

          দোর্দ্বন্দ্ব সঙ্কলিতপুস্তকবোধমুদ্রে ।

নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শিখিরবীন্দুমযৈর্দযার্দ্রৈঃ

         মাতঃ শিবং কুরু শিবে শরণাগতং মাম্‌ ।। ২১ ।।

 


👉 নির্দ্বন্দ্ব চিদ্‌ঘন আপন স্বরূপে ষডধ্ব ধারণকারী দুবাহুতে পুস্তক এবং ব্যাখামুদ্রা ধারণকারী মাতা শিবে! আমার মতো শরণাগতকে আপনি আপনার অগ্নি, সূর্য, চন্দ্রমার ন্যায় ত্রিনেত্র দ্বারা কল্যাণ করুন ।। ২১ ।।




মুগ্ধা পুস্তকহস্তা মুগ্ধেন্দুকলাললাটনেত্রবতী ।

শারদশশাঙ্কধবলা দযামযী কাপি দেবতা জযতি ।। ২২ ।।

 


👉 সরল, হস্তে পুস্তক ধারণ করে, মনোহারী, চন্দ্রকলারূপী নেত্রকে ললাটে ধারণ করে শারদীয় চন্দ্রের ন্যায় সমান স্বচ্ছ, দয়াময়ী আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ ।। ২২ ।।




সত্ত্বভূতিনিজমূর্তিসম্ভবত্তত্ত্বভূতিপুরশালিপালিকাম্‌ ।

হস্তযুগ্মধৃতপুস্তকতুলিকাং বালিকাং পরিচিনোমি তাং পরাম্‌ ।। ২৩ ।।



👉 আমি সেই পরাবালিকরা ধ্যান করি, যে দু হস্তে পুস্তক এবং তুলিকা ধারণ করে আছে, তথা আপন মহাসত্তা স্বরূপ হতে উৎপন্ন তত্ত্বের সুন্দর নগরের রক্ষিকা ।। ২৩ ।।



 

চন্দ্রমুখি চন্দ্রধরিণি চন্দ্রনিভে চন্দ্রমণ্ডলান্তঃস্থে ।

চন্দ্রাভরণকুটুম্বিনি চন্দ্রাদিত্যাগ্নিলোচনে রক্ষ ।। ২৪ ।।

 


👉 হে চন্দ্রমুখী! হে চন্দ্রধারিণী! হে চন্দ্রনিভে!, চন্দ্রমণ্ডলের অভ্যন্তরে স্থিত চন্দ্রমাকে আভরণ স্বরূপে ধারণকারী তথা চন্দ্র, সূর্য এবং অগ্নি রূপী নেত্রধারী! আমার রক্ষা করো ।। ২৪ ।।




মহা(মহী?) মূলমাযোর্ধ্বশক্ত্যণ্ডরত্ন

       প্রভাকীর্ণসৌবর্ণপীঠাধি (পীণাধি?) রূঢা ।

সৃজন্তী বহির্বিশ্বমন্তশ্চ সংবিত্‌

      পরা দেবতাহম্পরামর্শরূপা ।। ২৫ ।।

 


👉 পরাসংবিদ্‌রূপী দেবী, যিনি অহংপরামর্শরূপে অভ্যন্তর ও বাহ্য সংসারের সংরচনা করেন, তিনি ওই স্বর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত, যা কিনা মায়াণ্ডের উপরে স্থিত শাক্তাণ্ডের রত্নের শোভায় সুপ্রকাশিত ।। ২৫ ।।




সৌবর্ণপীঠমারূঢাং জাগ্রতীমগ্রপৃষ্ঠযোঃ ।

চিচ্চক্রবর্তিমহিষীং বন্দে তাং দেবতাং পরাম্‌ ।। ২৬ ।।

 


👉 স্বর্ণের আসনে অধিষ্ঠিত যিনি অগ্রভাগ ও পশ্চাৎভাগের বিষয়ে সাবধান, চিদ্‌চক্ররূপী মহিষী পরাদেবতার আমি বন্দনা করি ।। ২৬ ।।




সৌবর্ণসম্পুটকমধ্যভুবি প্রবিষ্টং

         ঊর্ধ্বাধরানননিপীতবিসৃষ্টসৃষ্টি ।

সারস্বতং কিমপি রত্নমযত্নসিদ্ধং

         জাগর্তি যস্য হৃদযে জগতাং স ঈষ্টে ।। ২৭ ।।

 


👉 যিনি স্বর্ণের সম্পুটকের মধ্যভাগে প্রবিষ্ট। উর্ধ্ব এবং নিন্ম মুখ হতে সৃষ্টির প্রলয় এবং সংহার করেন। স্বভাবসিদ্ধ এরকম অদ্ভূত সারস্বত রত্ন যার হৃদয়ে বিদ্যমান তিনি সংসারের স্বামী ।। ২৭ ।।



 

যত্‌ সঞ্চরাচারমিদং তদশেষমিচ্ছা-

        জ্ঞানক্রিযাভিরনুবিধ্য যযা বিসৃষ্টম্‌ ।

স্বস্মিন্ননুত্তরপদেন্তরহন্তযাস্তে

       সাসৌ পরা ত্বমসি শক্তিরুমে শিবস্য ।। ২৮ ।।

 


👉 এই চরাচর জগত সম্পূর্ণরূপে যার দ্বারা ইচ্ছা, জ্ঞান, ক্রিয়াতে অনুবিদ্ধ হয়ে সংরচিত এবং আপন অনুত্তরপদে অহন্তা রূপে বিরাজমান, হে শিবের পরাশক্তি! তুমি সেই ।। ২৮ ।।




স্বস্মিন্ননুত্তরবিসর্গমযে সদন্তঃ

       সংবিন্মযে সকলমেব সদা শিবাদ্যম্‌ ।

ইচ্ছাদিশক্তিভিরিদং বহিরাত্মনাসৌ

       সা ত্বং শিবস্য দযিতে বিসৃজস্যজস্ত্রজম্‌ ।। ২৯ ।।

 


👉 হে শিবের দয়িতে! তুমি আপন অনুত্তর বিসর্গময় তথা অন্তঃসবিন্ময়তে শিব হতে পৃথিবী আপন ইচ্ছা শক্তির দ্বারা বাহ্যরূপে নিরন্তর সৃজন করে থাকো ।। ২৯ ।।




যাঽসৌ স্ফুরস্যখিলশক্ত্যবিভাগমূর্তেঃ

          স্বৌজঃকৃতা ভগবতঃ প্রথমা বিভক্তিঃ ।

সত্ত্বাদিহেতুমখিলস্য পদার্থরাশে-

          স্তাং ত্বাং সদাম্ব বিমৃশন্‌ বিজযী ভবেযম্‌ ।। ৩০ ।।



👉  সম্পূর্ণ শক্তির অবিভক্ত মূর্তি ভগবান পরমশিবের আপন উর্যা হতে প্রথম বিভক্তি অর্থাৎ বিভূতির স্বরূপে স্ফুরিত সমস্ত পদার্থরাশির সৃষ্টি, স্থিতি এবং বিনাশের যে কারণ, হে মা! সেই তোমার ধ্যান করতে করতে আমি বিজয়ী হয়ে যাব ।। ৩০ ।।



 

ভুক্তিমুক্ত্‌যুভযপ্রাপ্তির্যদৃচ্ছালব্ধযা যযা ।

পুংসাং পুণ্যকৃতাং সাঽসৌ শ্রীরন্তর্বসতি স্থিযা ।। ৩১ ।।



👉 ভোগ ও মোক্ষের প্রাপ্তি তোমার ইচ্ছানুসারে করে, সেই পুণ্যবান পুরুষের অন্তরে লক্ষ্মী স্থায়ীরূপে বিরাজ করে ।। ৩১ ।।

 



মূলাধারমুখোদিতোততডিত্স্ফারস্ফুরত্তামযী

        কালাগ্ন্যাদিশিবান্তচিত্ররচনাবৈচিত্র্যলোলা সদা ।

লীলাপুস্তকলেখিনীধরকরা চিচ্চন্দ্রবিম্বাস্থিতা

       বালা কাচন দেবতা শিবকথালীলানুকূলা পরা ।। ৩২ ।।



👉 মূলাধারের মুখে উদিত বিদ্যুতের চমকের ন্যায় স্ফুরিত কালাগ্নি রুদ্র হতে শিবপর্যন্ত বিভিন্ন প্রকারের রচনার বৈচিত্র্য হতে চঞ্চল হস্তে লীলাপুস্তক, লেখনী ধারণ করে চিত্‌রূপী চন্দ্রবিম্বে স্থিত শিবকথার লীলার অনুকূল বালাদেবতা অদ্‌ভুত ।। ৩২ ।।

 



সংবিন্মূলালবালা ত্রিবলযকলিতা বীজশক্ত্যাত্মগর্ভা

যা সা সৌদামিনীব স্ফুরতি পরশিবজ্যোতিরক্রূররূপা ।

সৈষা শাখোপশাখোদিতকুসুমফলব্যাপ্তবিশ্বাবকাশা

ধীশ্রীবিশ্রান্তভূমিঃ শরণমুপযতাং কল্পনাকল্পবল্লীম্‌ ।। ৩৩ ।।



👉 পরমশিবের অক্রূররূপা জ্যোতি সংবিদের মূল পরিখা, তিন বলয়ে সৃষ্ট, বীজরূপী শক্তিকে নিজ অন্তরে লুকায়িতে রাখে, সেই সৌদামিনীর সমান স্ফুরিত হচ্ছে, তা শাখা উপশাখাতে প্রস্ফুটিত ফুল এবং ফলে ব্যাপ্ত বিশ্ব অবকাশময়, সেই কল্পনারূপী কল্পবৃক্ষের শরণে শরণাগতের বুদ্ধি ও লক্ষ্মীর শরণস্থলী ।। ৩৩ ।।

 



সদংশং চিদংশে চিদংশং মুদংশে

           মুদংশং নিরংশে তুরীযে বিলাপ্য ।

পরং শম্ভুমেবাবিশেদ(আবিশন্ন)?প্রমেযং

          প্রমেযপ্রমাণপ্রমাতৃপ্রকাশম্‌ ।।৩৪ ।।

 


👉 সদংশকে চিদংশতে, চিদংশকে আনন্দাংশতে, আনন্দাংশকে চতুর্থ নিরংশতে বিলীন করে প্রমেয়, প্রমাণ এবং প্রমাতার প্রকাশক অপ্রমেয় পরশিবে প্রবেশ করার উদ্দেশ্য ।। ৩৪ ।।




দক্ষিণং পশ্চিমং পূর্বমুত্তরন্তু নিরুত্তরম্‌ ।

ইদং পরং পদং তস্মাত্‌ (দেঃ.........সভাপারম্‌)? ।। ৩৫ ।।

 


👉 দক্ষিণ, পশ্চিম এবং পূর্ব, উত্তর, নিরুত্তর, এই হলো পরম পদ ।। ৩৫ ।।




............পালযেত্‌ পরমেশ্বরীম্‌ ।

অভেদেনাধিশয্যৈনাং(অতিশয্যেন)?জীবন্মুক্তো ভবেজ্জনঃ ।। ৩৬ ।।

 


👉 অভেদের সহিত অধিষ্টিত হয়ে মনুষ্য জীবন্মুক্ত হয়ে যায় ।। ৩৬ ।।




পূর্বসিদ্ধান্‌ গুরূন্‌ দেবান্‌ দেবীং নত্বাঽথ যোগিনঃ ।

ইমেঽভিনবগুপ্তেন শ্লোকাঃ পঞ্চদশোদিতাঃ ।। ৩৭ ।।



👉 পূর্বসিদ্ধ গুরুদের, দেবতাদের, দেবী এবং যোগীদের নমষ্কার করে অভিনবগুপ্ত এই পনেরোটি শ্লোকের রচনা করে ।। ৬৩ ।।





।। ইতি রহস্যপঞ্চদশিকা ।।



Ⓒ কপিরাইট ও প্রচারে 一 International Shiva Gyan Tirtha - ISSGT


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত