স্কন্ধমহাপুরাণে বর্ণিত নাথ পরম্পরার প্রথম আচার্য শ্রীমৎসেন্দ্রনাথজীর জন্মকথন

 🚩#স্কন্ধমহাপুরাণে_বর্ণিত_নাথ_সম্প্রদায়ের_প্রতিষ্ঠাতা_শ্রীমৎসেন্দ্রনাথজীর_জন্মকথন 


বর্তমানে বহু মায়াচ্ছন্ন ব্যক্তি মায়ার দ্বারা আবৃত থাকার কারণে, তারা বলে থাকেন যে নাথ সম্প্রদায়ের কোন শাস্ত্রিয় উল্লেখ নেই এবং তাদের কারোরই নাম পুরাণের পাওয়া যায় না, ফলে অনেকেই নাথ সম্প্রদায়ের সম্পর্কে কটুক্তি করে থাকেন। 

তাই #International_Shiva_Shakti_Gyan_Tirtha - এর পক্ষ থেকে আমি কৌশিক রায়, এই অপপ্রচারের জবাব হিসেবে আজ প্রমাণসহ স্কন্ধমহাপুরাণের অন্তর্গত নাগরখণ্ডের ২৮৩ নং অধ্যায় থেকে নাথ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা দাদাগুরু শ্রীমৎসেন্দ্রনাথজীর জন্মকথনের শাস্ত্রিয় উল্লেখ করে দিলাম। 


চলুন দেখে নিন প্রজাপতি ব্রহ্মা কি বলছেন👇


ব্রহ্মোবাচ । 

এতস্মিন্নগরে তত্র ক্ষীরসাগর-মধ্যতঃ । 

উজ্জহার বিমানাগ্রে তেজোভারাভি পীড়িতঃ ॥৪৩ 

উরো বাহুকৃতিং ফুর্ব্বম সান্নিধ্যং সমুপাগতঃ । 

মহামৎস্যোজ্ঞাতপূর্ব্বঃ সন্নিধানেহনহঙ্কৃতিঃ ॥৪৪

হঙ্কারগর্ভং মৎস্যঞ্চ দৃষ্টা তং স মহেশ্বরঃ । 

তেজসা স্তম্ভয়ামাস বাক্যমেতদুবাচ হু ॥৪৫

কস্ত্বং মৎস্যোদয়স্থশ্চ দেবাে যক্ষোহুথ মানুষঃ । 

কথং জীবসি দেহান্তর্গতো মম বদ প্রভো ॥৪৬ 


মৎস্য উবাচ । 

অহং মৎস্যোদরে ক্ষিপ্ত সমুদ্রে ক্ষীরসম্ভবে ।

মাত্রা তু পিতৃবাক্যেণ নায়ং মম কুলান্বিতঃ ॥ ৪৭ 

কুলক্ষয়ভয়াত্তেন জাতং স্বকুলনাশনম্ । 

গণ্ডান্তযােগজনিতো বালাে ন গৃহকর্ম্মকৃৎ ॥৪৮

ইতি মাত্রা দুঃখিতয়া নিরন্তঃ শৃণু বংশজঃ । 

ঋষেণাপি গৃহীতোঽম্মি কালাে মেছত্র মহানভূৎ ॥৪৯

তব বাক্যামৃতৈরেভির্জ্ঞানযোগো মহানভুৎ ।

তেন ত্বং সকলো জ্ঞাতো ময়ামূৰ্ত্তোঽথ মূর্ত্তগঃ ॥৫০

অনুজ্ঞাং মম দেবেশ দেহি নিষ্ক্রমণায় চ ।

যথাহুং পিতৃপো ব্ৰহ্মন ভবান্যাশ্চাপি লক্ষ্যতে ॥৫১ 


হর উবাচ । 

বিপ্রোঽসি সুতরূপোঽসি পূজ্যোঽস্যাসি ব ভাষতঃ। বহির্নিষ্ক্রম বেগেন স্তম্ভিতােঽসি মহাবাযঃ ॥৫২

ততােহসৌ শিরসা জাত উৎক্লেশাত্মৎসযোনিতঃ । 

ততো হি বিকৃতং বক্ত্রং ক্ষণাদ্বহিরুপাগ্রতঃ ॥৫৩। 

রূপবান প্রতি মাযুক্তো মৎস্যগন্ধেন সংযুতঃ । 

সােমকান্তিসমস্তত্র হভবদ্দিব্যগন্ধভাক্ ॥৫৪। 

উমাপি প্রণতং চামুং সুতং স্তোৎসঙ্গভাজনম্ । 

চকার তস্য নামাপি হরঃ পরমহর্বিতঃ ॥৫৫

যস্মান্মৎস্যোদরাজ্জাতো যােগিনং প্রবয়ে হ্যয়ম্ । 

তস্মাত্তু মৎস্যনাথের্তিন্মোকে খ্যাতো ভবিষ্যতি ॥৫৬ অচ্ছেদ্যঃস্যান্মরতনুর্জ্ঞানযোগস্য পারগঃ । নিৰ্ম্মৎসরোঽপি নির্দ্দন্ধো নিরাশো ব্রহ্মসেবকঃ ॥৫৭

জীবন্মুক্তশ্চ ভষিতা ভুবনানি চতুর্দ্দশ ।

ইত্যুক্তশ্চ মহেশানং প্রণমংশ্চ পুনঃপুনঃ । 

মহেশ্বরেণ সহিতো মন্দরাচলমাযষৌ ॥৫৮। 


ব্রহ্মোবাচ ।

কৃত্বা প্রদক্ষিণং দেবীং স্কন্ধমালিঙ্গ্য সোঽগমং ॥৫৯

ততঃ স পাৰ্ব্বতী হৃষ্টা প্রাপ্য জ্ঞানমনুত্তমম্ । 

এবং সা পরমাং সিদ্ধিং প্ৰণবস্য প্ৰভাজনম্ ॥৬০

সা প্রাপ্য জগতাং মাতা দ্বাদশাযক্ষরজাম্বুনা । 

ইমাং মৎস্যেন্দ্রনাথস্য চোৎপত্তিং যঃ শৃণােতি চ ॥৬১

চাতুৰ্ম্মাস্যে বিশেষেণ সোঽশ্বমেধফলং লভেৎ ॥৬২


  ইতি শ্রীস্কান্ধে মৎস্যেন্দ্রনাথােৎপত্তিকথনং নাম ত্রিষষ্ট্যধিকদ্বিশততমােঽধ্যায় ॥ ২৮৩ ॥


-------------------সরলার্থ -------------------


ব্ৰহ্মা বললেন - 

দেবদেব মহাদেবের বিমানবিহার কালে ক্ষীরসাগর মধ্য হতে এক অজ্ঞাতপূর্ব মহামৎস্য তোজোভারাভিপীড়িত হয়ে তার বিমানের অগ্রে উত্থিত হল ॥৪৩


মৎস্য বক্ষ দ্বারা হস্তের কৰ্ম করে মহাদেবের কাছে আগমন করল। মহাদেবের সন্নিকটেই হুঙ্কার দিতে লাগল সেই মৎস্য ॥৪৪

 মহাদেব ঐ মৎস্যকে হুঙ্কার করতে দেখে নিজ তেজ দ্বারা তাকে স্তম্ভিত করে মৎস্য কে বললেন ॥৪৫

মহাদেব বললেন , - মৎস্য উদরে থেকে তুমি কে অবস্থান করছ ?

তুমি দেবতা , যক্ষ বা মানুষ ? কিভাবে তুমি মৎস্যের দেহের মধ্যে থেকে জীবিত রয়েছ ? ॥৪৬


মৎস্য বললেন, 

 হে দেব ! শ্রবণ করুন , আমি জাত হওয়া মাত্ৰ কুলক্ষয়কর দুর্লক্ষণ হইয়াছিলাম, এজন্য মাতা পিতৃবাক্যে আমাকে ক্ষীরােদসমুদ্রে মৎস্য গর্ভে নিক্ষেপ করেন ॥৪৭


আমি গণ্ডান্তযােগে জন্মেছিলাম, এই যোগে জন্মালে বালক গৃহকর্মকারী হয় না ॥৪৮

 

এই দুঃখেই আমার মা আমায় পরিত্যাগ করেছিলেন। মৎস্যে আমাকে গ্রাস করেছিল।

এটি আজ বহুদিনের আগের কথা ॥৪৯


 এখন আপনার বাক্যামৃতে আমার জ্ঞানযােগ হল বলে আমার মনে হচ্ছে । 

তাই আপনাকে আমি মায়ামূর্ত ও মূৰ্তাতীতরূপে জানতে পারিলাম ॥৫০


 হে দেবেশ মহাদেব ! আমায় নিষ্ক্রমণার্থ অনুজ্ঞা প্রদান করুন । 

আমি যাতে পিতৃপ ও ভবানীর অনুগৃহীত হবো সেটিই করুন ॥৫১

 

পরমেশ্বর হর বললেন -

 হে মহামৎস্য ! তুমি বিপ্র, তুমি পুত্রতুল্য এবং তুমি স্বভাবতঃ পূজ্য । তুমি অবিলম্বে সবেগে বাইরে নির্গত হও ; তুমি স্তম্ভিত আছ ॥৫২


 মহাদেব এই কথা বলার পর,ক্ষনকাল মধ্যে মৎস্য যোনি হতে অতিকষ্টে তার মস্তক, পরবর্তীতে সে নিজে সম্পূর্ণ বহির্গত হল বটে ; বদন তার বিকৃত হল ॥৫৩


শিব কৃপায় সে রূপবান লাবণ্যযুক্ত হল বটে ; কিন্তু তার গাত্র হতে মৎস্য গন্ধ অপনীত হল না । পরে শিব প্রসাদে সে চন্দ্রাকৃতি দ্বিগন্ধযুক্ত হল ॥৫৪


উমা তাকে নিজ উৎসঙ্গভাগী করিলেন অর্থাৎ জগন্মাতা পার্বতী সেই বালককে মাতৃস্নেহে কোলে তুলে আদর করলেন।

সেটি দর্শনে ভগবান ভবন্তু শিব হৃষ্ট হয়ে তার নাম করণ করলেন ॥৫৫


তিনি বললেন , — যেহেতু তুমি যোগিশ্রেষ্ঠ হয়ে মৎস্যের উদরে জন্মেছ, অতএব তোমার নাম হইল , - মৎস্যনাথ ॥৫৬


তুমি অচ্ছেদ্য, নয়তনু, জ্ঞানযােগ - পায়গ , নিৰ্মৎসয়, নির্দ্বন্দ্ব, নিরাশ, ব্রহ্মসেবক হবে ॥৫৭


চতুর্দশ ভুবনে জীবন্মুক্ত হিসেবে মৎসেন্দ্রনাথ খ্যাত হবেন।দেবদেব মহাদেব হর, এই কথা বললে মৎস্যনাথ তখন বারংবার তাকে প্রণাম করে মহাদেবের সাথে মন্দরাচলে আগমন করলেন ॥৫৮


ব্রহ্মা বললেন,

 মৎস্যনাথ আগমনকালে তিনি দেবী পার্বতীকে প্রদক্ষিণ করলেন এবং ভগবান কার্ত্তিকেয়কে আলিঙ্গন করে তাদের সঙ্গে আগমন করতে লাগলেন ॥৫৯


দেবী পার্বতী দেবদেবের উপদেশে উক্ত প্রকারে উত্তম জ্ঞান প্রাপ্ত করলেন, প্রণবের পরম সিদ্ধিও প্রাপ্ত করলেন॥৬০

 

এছাড়াও দ্বাদশাক্ষরজা উত্তমসিদ্ধি লাভ করলেন,

 যে মানব বিশেষতঃ এই মৎস্যেন্দ্রনাথের চরিত্র শ্রবণ করে ॥৬১

 

চাতুর্মাস্যে সে অশ্বমেধফল প্রাপ্ত হয় ॥৬২


( রেফারেন্স : স্কন্ধমহাপুরাণ | নাগরখণ্ডম | দ্বিষষ্ট্যধিক দ্বিশততম - অধ্যায় ২৬২ )


✔✔✔✔✔✔সিদ্ধান্ত✔✔✔✔✔✔

নাথ সম্প্রদায়ের শুরু হয়েছে পরমেশ্বর শিব আদিনাথ থেকে। সেই প্রভু আদিনাথের কাছ থেকে এই মৎসেন্দ্রনাথ জী নাথ সম্প্রদায়কে প্রসারিত করেছেন। জ্ঞানযোগের মাধ্যমে পরমেশ্বর শিবকে নিজ আত্মায় দর্শন করাই হল নাথযোগীদের মূল উদ্দেশ্য। দাদাগুরু মৎসেন্দ্রনাথ ক্ষীর সাগরের বিষ্ণুর মায়াস্বরূপ হিসেবে জন্মেছিলেন তাই তিনি মঙ্গলসূচক ছিলেন না, ফলস্বরূপ তাকে মৎস্যযোনীতে পরিত্যক্ত করেন তার পিতামাতা। কিন্তু যখনই মঙ্গলময় পরমেশ্বর মহাদেবের দর্শন পেলেন তখনই সেই মায়ার অশুভ গুণ মুছে গিয়ে জ্ঞানযোগ দ্বারা ব্রহ্ম দর্শন করে মৎসেন্দ্রনাথ জী মাতা পার্বতীর কাছে মাতৃস্নেহ সহ রূপবান চেহারাও পেলেন। আর পরমেশ্বর শিবের কাছ থেকে পেলেন শিবজ্ঞানের সহিত মৎসেন্দ্রনাথ নামক মহান পবিত্র নাম।

পরবর্তীতে নাথ সম্প্রদায়ের মহান ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস অনুসারে এই মৎসেন্দ্রনাথ জীর মহান শিষ্য হয়েছেন স্বয়ং শম্ভু জ্যোতি গুরু গোরক্ষনাথ জী।


অতএব, নাথ সম্প্রদায়ের শাস্ত্রিয় ভিত্তি যে পাকাপাকি ভাবে রয়েছে সেটিও আজ প্রমাণিত হয়ে গেল। 


#লেখক - শ্রীনন্দীনাথ শৈবাচার্য জী 

#প্রচারে - #ISSGT


(আমাদের 👉#International_Shiva_Shakti_Gyan_Tirtha_ISSGT - এর এই Official পেজ থেকে আমরা নিরন্তর নতুন নতুন পোষ্ট উপস্থাপন করতে থাকি, এই পোষ্টের বিষয়বস্তু গুলি সংগ্রহ করে সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপন করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তাই সবার কাছে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি যে আপনাদের এই পোষ্ট টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই শেয়ার করুন।এতে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয় এবং নতুন নতুন লেখা আনতে আমাদের আরো বেশি করে উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও যারা নতুন আমাদের পেজে তারা পেজটি লাইক করুন ফলো বাটনে ক্লিক করে ""See First"" অথবা """FAVOURITE""" করে রাখুন।এর ফলে আপনার কাছে আমাদের সমস্ত পোষ্ট সবার আগে পৌঁছে যাবে।যাদের লেখাটি পছন্দ হবে তারা অবশ্যই লাইক করবেন এবং এই লেখাটি আপনার কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। ভবিষ্যতে আপনি শিব সম্পর্কিত কোন বিষয়ে জানতে চান সেটি উল্লেখ করে কমেন্ট করবেন)


[বিঃদ্রঃ - আমাদের লেখাগুলি শেয়ার করুন এবং লেখাগুলি কপি করতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনোরকম ভাবেই লেখাটিকে এডিট করা যাবেনা বা কোনো স্থানের লেখাকে মুছতে পারবেননা। আপনি Same to Same কপি করে পেস্ট করে পোষ্ট করবেন।]


 


🙏🙏🙏🙏🙏 হর হর মহাদেব 🙏🙏🙏🙏🙏

🙏🙏🙏🙏🙏 ॐ পার্বতৈ নমঃ 🙏🙏🙏🙏🙏

🙏🙏🙏🙏 জয় নাথ পন্থার জয় 🙏🙏🙏🙏

🙏🙏🙏দাদাগুরু মৎসেন্দ্রনাথের জয় 🙏🙏🙏


#omnamahshivay #ॐनमःशिबाय #parvatidevi #deviparvati #mataparvati #goddessparvati #Parvati #স্কন্ধমহাপুরাণ #মৎস্যনাথ #আদিনাথ #পার্বতী #ব্রহ্মা #স্কন্ধপুরাণ #মহাদেব #পরমেশ্বরশিব #মৎসেন্দ্রনাথ #পার্বতী_মাতা #পার্বতীদেবী #মাতা_পার্বতী #নাথসম্প্রদায় #স্কন্ধ #কার্তিকেয় #আন্তর্জাতিকশিবশক্তিজ্ঞানতীর্থ #দাদাগুরু #internationalshivashaktigyantirtha

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত