শ্রীমদপ্পয্য দীক্ষিতেন্দ্র বিরচিতা আত্মার্পনস্তুতি

।। শ্রীমদপ্পয্যদীক্ষিতেন্দ্রবিরচিতা আত্মার্পনস্তুতিঃ ।।



 এই স্তুতি আচার্য অপ্পয্য দীক্ষিতের সম্ভবতঃ অন্তিম কৃত্তি, কারণ এর উপর তার কোন স্বয়ী টীকা নেই, যেখানে অন্য স্তুতিতে তার স্বরচতি টীকা উপলব্ধ আছে। নবধাভক্তিতে আত্মার্পন অন্তিম ও সর্বশ্রেষ্ঠ, অতঃ সম্ভবতঃ ভক্তরাজ দীক্ষিত অনন্যচিত্ত হয়ে অন্তিম ক্ষণে আত্মার্পন রচনা করেন। সর্বদা চিন্তপরায়ণ আচার্য প্রবরের জন্য ইহা অসম্ভব নয়।

এই স্তোত্রে মাত্র পঞ্চাশটি শ্লোক আছে, যেখানে ভাবের উদামতা ও সমর্পনের সরলতা চরম সীমায় পৌছেছে। জনশ্রুতি অনুসারে, একবার আচার্য দীক্ষিত আত্মপরীক্ষণ হেতু তার অবচেতন মানস পটলে পরমেশ্বর শিবের স্মৃতি বিদ্যমান থাকে কিনা না, তা দেখার উদ্দেশ্যে নিজের শিষ্যদের সাবধান করে ধুতরার বীজ ভক্ষন করেন। উন্মাদাবস্থায় তার মুখ হতে পরমেশ্বর শিবের স্তুতি প্রস্ফুটিত হয় যা তার শিষ্যরা লিপিবদ্ধ করে। উন্মত্তাবস্থায় লিখিত হওয়ার জন্য এই স্তোত্রের অপর নাম উন্মত্তপঞ্চাশত অথবা উন্মত্তপঞ্চাশিকা


।। আত্মার্পনস্তুতিঃ ।। 

 



কস্তে বোদ্ধুং প্রভবতি পরং দেবদেব প্রভাবং

যস্মাদিত্থং বিবিধরচনাসৃষ্টিরেষা বভূব ।

ভক্তিগ্রাহ্যস্ত্বমিতি ভগবন্‌ ত্বামহং ভক্তিমাত্রাত্‌

স্তোতুং বাঞ্ছাম্যতিমহদিদং সাহসং মে সহস্ব ।। ১ ।।



👉হে দেবাদিদেব! আপনার উৎকৃষ্ট সামর্থ্যকে কেই বা জানতে সক্ষম। আপনা হতে অগনিত প্রকারের অনেক রূপময় সৃষ্টি উৎপন্ন হয়েছে। "আপনি একমাত্র ভক্তির দ্বারাই প্রাপ্ত" হে প্রভো! আমি স্বল্প ভক্তির দ্বারা আপনার স্তুতি করতে ইচ্ছুক। আপনি আমার এই দুষ্প্রয়াসকে ক্ষমা করবেন ।।১ ।।




ক্ষিত্যাদীনামবযববতাং নিশ্চিতং জন্ম তাবত্‌

তন্নাস্ত্যেব ক্বচন কল্পিতং কর্ত্রধিষ্ঠানহীনম্‌ ।

নাধিষ্ঠাতুং প্রভবতি জডো নাপ্যনীশশ্চ ভাবম্‌

স্তস্মাদাদ্যস্ত্বমসি জগতাং নাথ ! জানে বিধাতা ।। ২ ।।



👉পৃথিবী আদি অবয়বের উৎপত্তির নিশ্চিত কোন উৎস বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু কর্তা এবং আশ্রয়ের অভাবে আমি তার কল্পনা মাত্র করতে অপারগ। (সেই জগতের) নিয়ন্ত্রণে না তো কোন জড় পদার্থ সমর্থ্য না তো কোন শক্তিহীন (জীব) সমর্থ্য। অতঃ হে স্বামিন্‌। আমি জানি যে এই জগতের আদ্যস্রষ্টা বিধাতা একমাত্র আপনি।।২।।




ইন্দ্রং মিত্রং বরুণামনিলং পুনরজং বিষ্ণুমীশং

প্রাহুস্তে তে পরমশিব তে মাযযা মোহিতাস্ত্বাম্‌ ।

এতৈঃ সাকং সকলমপি চ যচ্ছক্তিলেশে সমাপ্তং

স ত্বং দেবঃ শ্রুতিষু বিদিতঃ শ্মভুরিত্যাদিদেবঃ ।। ৩ ।।



👉হে পরমশিব! আপনার মায়ায় মোহিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোক আপনাকেই ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু রূপে জ্ঞাত করে জগতের আধার কারণ স্বরূপে অভিহিত করে। এদের সমষ্টিগত সত্তা যার অনন্ত শক্তির কণামাত্রে সমাহিত, সেই দেবতা একমাত্র আপনি, শ্রুতিতে আপনি "শম্ভু" নামে বিখ্যাত ও সমস্ত দেবতাদের সহিত সকলের আপনিই ঈশ্বর।।৩।।




আনন্দাদ্যঃ কমপি চ ঘনীভাবমাস্থাযরূপং

শক্ত্যা সার্দ্ধং পরমমুমযা শাশ্বতং ভোগমৃচ্ছন্‌

অধ্বাতীতে শশিদিবসকৃতোঃ কোটিদীপ্তে  (পে) কপর্দিন্‌ !

অদ্যে স্থানে বিহরসি সদা সেব্যমানো গণেশৈঃ ।। ৪ ।।



👉 হে শিব! আপনি আনন্দে ঘনীভূত হয়ে অনির্বচনীয় রূপ ধারণ করেন, শক্তিভূতা উমা দেবীর সহিত সর্বোকৃষ্ট এবং সার্বকালিক ভোগ প্রাপ্ত করেন, হে কপর্দিনে! আপনি কোটি চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় দীপ্তময় রূপে প্রকাশিত হয়ে ষড়াধ্বরে উর্দ্ধে, পরম পদে গণাধিপতের দ্বারা সেবিত হয়ে সদাবিলাসরত অবস্থায় অবস্থান করেন ।। ৪ ।।




ত্বং বেদান্তৈঃ বিবিধ মহিমা গীযসে বিশ্বনেতঃ

ত্বং বিপ্রাদ্যৈর্বরদ নিখিলৈরিজ্যসে কর্মভিঃ স্বৈঃ ।

ত্বং দৃষ্টানুশ্রবিকবিষযানন্দমাত্রাবিতৃষ্ণৈ-

রন্তর্গ্রন্থিপ্রবিলযকৃতে চিন্ত্যসে যোগিবৃন্দৈঃ ।। ৫ ।।




👉'হে বিশ্বনায়ক! উপনিষদে আপনারই অনন্ত মহিমার বর্ণনা আছে, হে বরদায়ক! ব্রাহ্মণ। ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র- চার বর্ণের লোক নিজ-নিজ বর্ণ অনুকূল আচরণ দ্বারা আপনারই পূজন করে, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক এই দুই প্রকার সুখ হতে যার বৈরাগ্য উৎপন্ন হয়েছে, সেরকম যোগীজন ও অবিদ্যারূপী হৃদয়গ্রন্থির ভেদনের জন্য সদা আপনার চিন্তন করে ।। ৫ ।।




ধ্যাযন্তস্ত্বাং কতিচন ভবং দুস্তরং নিস্তরন্তি

ত্বত্পাদাব্জং বিধিবদিতরে নিত্যমারাধযন্তঃ

অন্যে বর্ণাশ্রমবিধিরতা পালযন্তস্ত্বদাজ্ঞাং

সর্বং হিত্বা ভবজলনিধৌ দেব মজ্জামি ঘোরে ।। ৬ ।।



👉কিছু লোক আপনার বিজ্ঞানানন্দঘন পরব্রহ্মস্বরূপের  ধ্যান করে এই দুস্তর ভবার্ণবকে পার করে, কিছু লোক আপনার সুদুর্লভ চরণাবৃন্দের পূজন করে নিজের মনরোথ সিদ্ধ করে এবং কিছু লোক বর্ণাশ্রম অনুসারে আচরণ করে শাস্ত্ররূপ আপনার আজ্ঞার পালন করে, কিন্তু আমি সবকিছু ত্যাগ করে এই ঘোর সংসার-সাগরে হাবু-ডুবু খাচ্ছি আমার দ্বারা না তো আপনার ধ্যান হয়, না আপনার পূজন, এবং না শাস্ত্র-মর্যাদানুকূল আচরণ করি। আমার থেকে অধিক অভাগা সংসারে কে আর আছে? ।।৬ ।।




উৎপদ্যাপি স্মরহর মহত্যুত্তমানাং কুলেঽস্মিন্‌

আস্বাদ্য ত্বন্মহিমজলধেরপ্যহং শীক্ষরাণূন্‌ ।

ত্বত্‌পাদার্চাবিমুখহৃদযশ্চাপলাদিন্দ্রিযাণাং

ব্যগ্রস্তুচ্ছেষ্বহহ জননং ব্যার্থযাম্যেষ পাপঃ ।। ৭ ।।



👉হে স্মররিণো! আমি উওম ব্রাহ্মণ কূলে জন্মগ্রহন করেছি এবং আপনার মহিমারূপী অপার সমুদ্রের কতিপয় বিন্দুর আস্বাদন করেছি, কিন্তু আমি পাপাত্মা আপনার পদসেবা হতে মুখ ঘুরিয়ে ইন্দ্রিয়ের চপলতার কারণ ক্ষুদ্র সংসারিক বিষয়ের পশ্চাদে উন্মাদের ন্যায় ঘুরে বেড়াছি, আর এই দুর্লভ মনুষ্য-জন্মকে ব্যর্থ নষ্ট করেছি, হীরককে কাচের দামে বিক্রয় করেছি, আমার থেকে অধিক অজ্ঞানী আর কে আছে ।। ৭ ।।




অর্কদ্রোণপ্রভৃতিকুসুমৈরর্চনং তে বিধেয়ং

প্রাপ্যং তেন স্মরহর ফলং মোক্ষসাম্রাজ্যলক্ষ্মীঃ ।

এতজ্জানন্নপি শিব শিব ব্যর্থযন্‌ কলিমাত্মন্‌-

আত্মদ্রোহী করণবিবশো ভূযসাঽধঃপতামি ।। ৮ ।।



👉হে স্মরারে! আপনার পূজার জন্য না অর্থের প্রয়োজন পড়ে না বিশেষ কোন সামগ্রীর। আকন্দ, দ্রোণ ও ধুতরার পুষ্পেই আপনি প্রসন্ন হয়ে যান, যৎসামান্য উপচারে আপনার পূজা সম্পন্ন হয়, কিন্তু আপনার পূজন এত সহজ ও সরল হওয়ার পরেও আপনি তার বদলে কতো কি না প্রদান করেন? আকন্দ ও ধুতরার প্রতিফল স্বরূপ আপনি মুক্তিরূপী সাম্রাজ্যের বৈভব, লক্ষ্মী প্রদান করেন, যা দেবতাদের নিকটেও দুর্লভ, কি সরল চুক্তি? এইজন্যই তো আপনি 'আশুতোষ, এবং 'ঔঢরদানী' উপাধিতে বিভূষিত। কিন্তু শিব! শিব! আমি এরকম আত্মদ্রোহী যে সমস্ত কিছু জানা সত্ত্বেও নিজের জীবন ব্যর্থ অতিবাহিত করছি, আবার ইন্দ্রিয়ের বশীভূত হয়ে বারংবার পাপের গর্তে পতিত হচ্ছি ।। ৮ ।।




কিং বা কুর্বে বিষমবিষবস্বৈরিণা বৈরিণাঽহং

বদ্ধঃ স্বামিন্বপুষি হৃদযগ্রন্থিনা সাদ্ধর্মস্মিন্‌ ।

উক্ষ্না দর্পজ্বরভরজুষা সাকমেকত্র নদ্ধঃ

শ্রাম্যন্‌ বৎসঃ স্মরহর! যুগে ধাবতা কিং করোতু ।। ৯ ।।



👉ঘোর বিষয়ে স্বচ্ছন্দে বিচরণকারী শত্রু মনের দ্বারা বাধিত এই শরীরের সেই রহস্যময়ী গ্রন্থি হতে ----হে স্বমিন্‌! আমি কি করবো! হে কামহর! অহঙ্কারের জ্বালাময় অনলে পরিপূর্ণ ধাবমান ষাড়ের সহিত একত্রে ধাবিত বাছুর ছানা কি করবে? ।। ৯ ।।




নাহং রোদ্ধ্রুং করণনিচযং দুর্নযং পারযামি

স্মারং স্মারং জনিপথরুজং নাথ সীদামি ভীত্যা ।

কিং বা কুর্বে কিমুচিতমিহ ক্বাদ্য গচ্ছামি হন্ত

ত্বত্‌পাদাব্জপ্রপদনমৃতে নৈব পশ্যাম্যুপাযম্‌ ।। ১০ ।।



👉'হে নাথ ! আমার ইন্দ্রিয় বড়ই দুর্দমনীয় হয়ে গেছে এবং আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। একে নিয়ন্ত্রণে রাখা আমার বশে নেই। আবার একে স্বতন্ত্র ছেড়ে দিলে আমার যা দুর্দশা হবে, তা কল্পনা করেই একেবারে আত্মা পর্যন্ত কেপে ওঠে। কারণ এর রাশ আলগা করে দিলে সংসারে বারং-বার জন্ম নেওয়া নিশ্চিত, এবং গর্ভবাসের নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, একথা স্মরণ করলেই লোমকূপ পর্যন্ত শিহরিত হয়ে ওঠে। এরকম দশায় আমি কি করব, কোথায় যাব, কিছুই বোধগম্য হয় না। এই দুর্বিপাকে পতিত হয়ে আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছি, এখন আপনার ভক্ত-ভয়হারী চরণাবৃন্দের আশ্রয় অতিরিক্ত দ্বিতীয় কোন মার্গ নেই। অতএব কৃপা করে আপনি আমাকে আপনার ওই চরণের শরণ প্রদান করুন    ।। ১০ ।।




উল্লংধ্যাজ্ঞামুডুপাতকলাচূড তে বিশ্ববন্দ্যং

ত্যক্তাচারঃ পশুবদধুনা মুক্তলজ্জংশ্চরামি ।

এবং নানবিধভবততিপ্রাপ্তদীর্ঘাপরাধঃ

ক্লেশাম্ভোধিং কথমহমৃতে ত্বত্‌প্রসাদাত্তরেযম্‌ ।। ১১ ।।



👉হে শশিশেখর! হে জগবন্দ্য প্রভো ! আমি আপনার আজ্ঞার অবহেলা করে সদাচারের মার্গকে পরিত্যাগ করে পশুর ন্যায় নির্লজ্জের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি, জন্ম-জন্মান্তর হতে আমি এত বড় পাপ করে চলেছি যে, কোটি জন্মেও সেই পাপ হতে পরিত্রাণ সম্ভব নয়। এখন এই দুঃখার্ণব হতে পরিত্রাণের যদি কোন উপায় থাকে, তবে সেটা একমাত্র আপনার কৃপা অবলম্বনে সম্ভব। অতএব এই দীনকে ও সামান্য কৃপা করুন ।। ১১ ।।




ক্ষাম্যস্যেব ত্বমিহ করুণাসাগরঃ কৃত্‌স্নমাগঃ

সংসারোত্থং গিরিশ সভযপ্রার্থনাদৈন্যমাত্রাত্‌ ।

যদ্যপ্যেবং প্রতিকলমহং ব্যক্তমাগঃসহস্রং

কুর্বন্‌মূকঃ কথমিব তথা নিস্ত্রপঃ প্রার্থযেযম্‌ ।। ১২ ।।


👉'হে গিরিশ! আপনি এমনি দয়ার সাগর যে যদি কোন মনুষ্য এই সংসার-রূপী ঘোর দাবানলে ভয়ভীত হয়ে দীনতা পূর্বক আপনার নিকট স্বয়ী অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনি তার জন্ম-জন্মান্তরের পাপকে আপন কৃপায় নষ্ঠ করে দেন, কিন্তু আমি এতই নির্লজ্জ যে কিনা নিজের পূর্বকৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা যাচনা তো দূর উল্টে প্রতি নিয়ত নব-নব পাপের কর্ম করে চলেছি, এবং এই প্রকার আমার পাপের বোঝা ক্রমশঃ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করে চলেছে, তার ক্ষয়ের কোন কথায় নেই। এরকম পরিস্থিতিতে আমি আপনার নিকট স্বয়ী পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব কোন মুখে?  এখন আপনি স্বয়ং নিজ স্বভাববশত দয়ালুতা দ্বারা আমার পাপকে ক্ষমা করে দিন, তখনি আমার নিস্তার সম্ভব, অন্যথা সম্ভব নয় ।। ১২ ।।



সর্বং ক্ষেপ্তুং প্রভবতি জনঃ সংসৃতিপ্রাপ্তমাগঃ

চেতং শ্বাসপ্রশমসমযে ত্বত্‌পদাব্জে নিধায ।

তস্মিন্‌ কালে যদি মম মনো নাথ দোষত্রযার্ত্তং

প্রজ্ঞাহীনং পুরহর ভবেত্‌ তত্‌কথং মে ঘটেত ।। ১৩ ।।



👉প্রাণের অন্তিম সময়ে আপনার চরণ কমলে মনকে নিমজ্জিত করে মনুষ্য সংসারে অর্জিত সমস্ত পাপকে সন্তরণ করতে সমর্থ হয়। হে স্বামী! সেই সময় যদি আমার মন (বাত, পিত্ত ও কফ) এই তিন দোষে পীড়িত হয়ে বিবেকহীন হয়ে পড়ে, তখন হে শিব! আমার (সংসার তারণ) কিভাবে সম্ভব হবে?।। ১৩ ।।




প্রাণোত্ক্রান্তিব্যতিকরদলত্সংধিবন্ধে শরীরে

প্রেমাবেশপ্রসরদমিতক্রন্দিতে বন্ধুবর্গে ।

অন্তঃপ্রজ্ঞামপি শিব ভজন্নন্তরাযৈরনন্তৈঃ

রাবিদ্ধোঽং ত্বযি কথমিমামর্পযিষ্যামি বুদ্ধিম্‌ ।। ১৪ ।।



👉মৃত্যুর অন্তিম সময়ে যখন প্রাণ মুক্ত হবে শরীর হতে, সেই সময়ে এই শরীরের সর্ব অঙ্গ ভঙ্গুর হতে প্রারম্ভ করবে এবং এই শরীরের সমস্ত সম্বন্ধীরা প্রেম বশত অপার ক্রন্দন রত, তখন অন্তরে জ্ঞান বিদ্যমান থেকে সত্ত্বেও (অথবা মনে মনে স্মরণ করতে করতে) হে শিব! অগণিত বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হয়েও আমি আমার এই মনকে কি ভাবে আপনার শ্রীচরণে সর্মপণ করবো ।। ১৪ ।।




অদ্যৈব ত্বত্‌পদনলিনযোরর্পযাম্যন্তরাত্মন্‌

আত্মানং মে সহ পরিকরৈরদ্রিকন্যাধিনায ।

নাহং বোদ্ধুং শিব তব পদং ন ক্রিযাযোগচর্যাঃ

কর্তুং শক্নোম্যনিতরগতিঃ কেবলং ত্বাং প্রপদ্যে ।। ১৫ ।।



👉হে অন্তরাত্মন্‌ ! হে পার্বতীপতি! আজ আমার সম্পূর্ণ সত্তা আপনার চরণ-কমলদ্বয়ে সমর্পিত করেছি। হে শিব! না আমি আপনাকে জানতে সমর্থ এবং না ক্রিয়া, যোগ করতে সক্ষম। অতএব দ্বিতীয় আশ্রয় না হওয়ার দরুণ আমি কেবল আপনার শরণে আশ্রয় নিতে পারি ।। ১৫ ।।

 



যঃ স্রষ্টারং নিখিলজগতাং নির্মমে পূর্বমীশঃ

তস্মৈ বেদান্‌বদতি সকলান্‌ যশ্চ সাকং পুরাণৈঃ ।

তং ত্বামাদ্যং গুরুমহমসাবাত্মবুদ্ধিপ্রকাশং

সংসারার্ত শরণমধুনা পার্বতীশং প্রপদ্যে ।। ১৬ ।।



👉যে ঈশ্বর সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ সংসারের বিধাতা ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেন, এবং যে তাকে পুরাণ সহিত সমস্ত বেদ অধ্যায়ন করায়, সেই আত্মজ্ঞানের প্রকাশক আদি গুরু পার্বতীপতির শরণে যাচ্ছি, সংসারের পীড়া হতে মুক্তির হেতু ।।১৬ ।।




ব্রহ্মাদীন্‌ যস্‌স্মরহর পশুন্মোহপাশেন বধ্বা

সর্বানেকশ্চিদচিদধিকঃ কারযত্যাত্মকৃত্যম্‌ ।

যশ্চৈতেষু স্বপদশরণান্‌ বিদ্যযা মোচযিত্বা

সান্দ্রানান্দং গমযতি পরং ধাম তং ত্বা প্রপদ্যে ।। ১৭ ।।



👉হে শিব! ব্রহ্মা আদি পশুদের মোহ পাশে আবদ্ধ করে জড় ও চেতনার উর্দ্ধে যে স্বয়ং সবাইকে দিয়ে কার্য সম্পাদন করান এবং যিনি তার এই চরণের শরণে আশ্রিত মনুষ্যদের বিদ্যা হতে মুক্ত করে সঘন আনন্দময় পরম ধামে নিয়ে যান, আমি সেই পরমেশ্বরের শরণে যেতে ইচ্ছুক ।। ১৭ ।।




ধ্যাতো যত্নাদ্বিজিতকরণৈর্যোগিভির্যোঽবিমুক্তে

স্তেভ্যঃ প্রাণোত্‌ক্রমণসমযে সন্নিধাযাত্মনৈব ।

তদ্‌ব্যাচষ্টে ভবভযহরং তারকং ব্রহ্মদেবং

তং সেবেঽহং গিরিশ সততং ব্রহ্মবিদ্যাগুরুং ত্বাম্‌ ।।১৮ ।।



👉"জিতেন্দ্রিয় যোগিগণ ধ্যানমার্গ দ্বারা আপনাকে প্রাপ্ত করার জন্য প্রযত্ন করে, কিন্তু তবুও আপনার দর্শন হতে বঞ্চিত থাকে। অন্ত সময়ে যখন তাদের প্রান পাখী উড়তে উদ্যত হয়, তখন আপনি বিনা নিমন্ত্রণেই নিজে থেকে তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে যান এবং তাদের কানে মোক্ষদায়ক তারক মন্ত্র প্রদান করে তাদের ভব-বন্ধন হতে সর্বদার জন্য মুক্ত করে দেন। এই ব্রহ্মবিদ্যার উপদেশক আপনার আমি শরণ নিলাম ।। ১৮ ।।




ভক্তাগ্রযাণাং কথমপি পরৈর্যোঽচিকিত্‌স্যামমর্ত্ত্যৈঃ

সংসারাখ্যাং শমযতি রুজং স্বাত্মবোধৌষধেন ।

তং সর্বাধীশ্বর ভব মহাদীর্ঘতীব্রামযেন

ক্লিষ্টোঽহং ত্বা বরদ শরণং যামি সংসারবৈদ্যম্‌ ।। ১৯ ।।




👉হে সর্বেশ্বর! বরদায়ক শম্ভো! আপনি আত্মবোধরূপী ঔষধী দ্বারা নিজ ভক্তের ভবরোগ হরণ করেন। অন্য দেবতাদের সামর্থ্য নেই যে এই দুঃসাধ্য রোগের চিকিৎসা করতে পারবে। এই ভবরূপী মহাভয়ঙ্কর এবং জন্ম-জন্মান্তর হতে ভ্রাম্যমান রোগ দ্বারা পীড়িত হয়ে আমি সংসার -বৈদ্যরূপী আপনার শরণাগত হয়েছি, কৃপা করে এরকম করুন যাতে পুনরায় এই সংসার রোগের দর্শন না করতে হয় ।। ১৯ ।।




দাসোঽস্মীতি ত্বযি শিব মযা নিত্যসিদ্ধং নিবেদ্যং

জানাস্যেতত্‌ ত্বমপি যদহং নির্গতিঃ সংভ্রমামি ।

নাস্ত্যেবান্যন্মম কিমপি তে নাথ বিজ্ঞাপনীযং

কারুণ্যান্মে শরণবরণং দীনবৃত্তের্গৃহার্ণ ।। ২০ ।।



👉'হে শিব! আমি আপনার দাস, ইহাই আপনার চরণে নিত্য নিবেদন করার আছে। আপনি এই ব্যাপারে জ্ঞাত যে আমি অসহায় হয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াছি। ব্যাস, এখন আর কিছু চাহি না, কেবল এতটুকু প্রার্থনা করি যে আপনি আমার মতো দীনকে আপনার অকারণ করুণার কণামাত্র প্রদান করে সদা সর্বদার জন্য নিজ শরণ প্রদান করুন ।।২০ ।।




ব্রহ্মোপেন্দ্রপ্রভৃতিভিরপি স্বেপ্সিতপ্রার্থনায

স্বামিন্নগ্রে চিরমবসরস্তোষযদ্‌ভিঃ প্রতীক্ষ্যঃ

দ্রাগেব ত্বাং যদিহ শরণং প্রার্থযে কীটকল্পঃ

তদ্‌বিশ্বাধীশ্বর তব কৃপামেব বিশ্বস্য দীনে ।। ২১ ।।



👉'হে স্বামী! হে বিশ্বেশ্বর! ব্রহ্মা ও বিষ্ণু প্রভৃতি দেবতা যখন নিজেদের কোন প্রার্থনা নিয়ে আপনার সমীপ উপস্থিত হয়, তখন তাদের অনন্তকাল পর্যন্ত  আপনার দর্শনের হেতু সুযোগের অপেক্ষায় প্রতীক্ষারত থাকতে হয়। কিন্তু আমি এক অধম কীটের ন্যায় হয়ে ও এমন ভাবে তাগাদা দিচ্ছি যেমন ভাবে কোন ঋণদাতা নিজের ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য তাগাদা করে। আমার ন্যায় এরকম অসহায় দীনের উপর আপনার এমন অহেতুক কৃপা দেখে, আমার এরকম ব্যবহার অনুচিত ধৃষ্টতা। আশা করি আপনি এই দীনের করুণ অবস্থার কথা স্মরণ রেখে আমার এই অপরাধকে অবশ্যই বারংবার ক্ষমা করবেন এবং আমাকে অবিলম্বে আপনার শরণে নেবেন, যাতে আমাকে বারংবার আপনাকে বিরক্ত না করতে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আমাকে আপনার শরণে নেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আপনাকে বিরক্ত করতে থাকবো আপনি কতদিন মৌন ধারণ করে বসে থাকবেন? এক না এক দিন আমার বাহু অবশ্যই ধরতে হবে। এইজন্য ভালো হয় না কি শীঘ্রতা পূর্বক কার্য করে ফেলুন, যাতে করে দুজনেরই হয়রান না হতে হয় ।। ২১ ।।




কর্মজ্ঞানপ্রচযমখিলং দুষ্করং নাথ পশ্যন্‌

পাপাসক্তং হৃদযমপি চাপারযন্‌ সন্নিরোদ্‌ধুম্‌ ।

সংসারাখ্যে পুরহর মহন্যন্ধকূপে বিষীদন্‌

হস্তালম্ব প্রপদনমিদং প্রাপ্য তে নির্ভযোঽস্মি ।। ২২ ।।



👉ধন্য প্রভো! ধন্য ভক্তবৎল! অন্তে আপনি আমার প্রার্থনা স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আমাকে আপনার বরদ হস্তের অবলম্বন প্রদান করেছেন। এখন আর কি আছে? এখন আমি বিজয়ী হয়েছি। এখন আমার কোন ভয় নেই, এতক্ষণ পর্যন্ত আমার ভয় ছিল যে না আমি জ্ঞানমার্গের অধিকারী না কর্মমার্গের অনুসরণকারী, উভয়ই আমার নিকট পাহাড় সমান। এদিকে আমার মন পাপের আবেশে লিপ্ত, তাকে পাপের আবৃত্ত থেকে কোনভাবেই আটকাতে পারছি না, সে বড়ই বেসামাল হয়ে পড়েছে, এই দশায় এই সংসাররূপী ঘোর অন্ধকার কূপ হতে আমার নিস্তার কিভাবে সম্ভব এই চিন্তা আমায় বারংবার উদ্বেলিত করে। এখন আপনার আশ্রয় পেয়ে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি, এখন আমার কেউ কিছু করতে পারবে না ।। ২২ ।।



ত্বামেবৈকং হতজনিপথে পান্থমস্মিন্‌প্রপঞ্চে

মত্বা জন্মপ্রপযজলধের্বিভ্যতঃ পারশুন্যাত্‌ ।

যত্তে ধন্যাঃ সুরবর মুখং দক্ষিণং সংশ্রযন্তি

ক্লিষ্টং ঘোরে চিরমিহ ভবে তেন মাং পাহি নিত্যম্‌ ।। ২৩ ।।



👉জন্ম মৃত্যুর আবর্তে ঘূর্ণণশীল বিশ্বে একমাত্র আপনিই সহযাত্রী রূপে আশ্রয়দাতা এবং এই অপার জন্ম-মৃত্যুর সিন্ধু হতে ভীত মনুষ্যদের আপনার দক্ষিণামূর্তি স্বরূপই একমাত্র উদ্ধারকর্তা। হে সুরশ্রেষ্ঠ আপনার সেই মুখ দ্বারা আপনার শরণে আশ্রয়কারী আমাকে এই দুঃখময় সংসারের ক্লেশ হতে সদা রক্ষা করুন ।। ২৩ ।।




একোঽসি ত্বং শিব জনিমতামোশ্বরো বন্ধমুক্ত্যোঃ

ক্লেশাঙ্গারাবলিষু লিঠতঃ কা গতিস্ত্বাং বিনা মে ।

তস্মাদস্মিন্নিহ পশুপতে ঘোরজন্মপ্রবাহে

খিন্নং দৈন্যাকরমিহ ভবে মাং ভজস্ব প্রপন্নম্‌ ।। ২৪ ।।



👉জন্মপ্রাপ্ত প্রাণীদের বন্ধন ও মোক্ষের হে শিব! তুমিই একমাত্র কারণ। তুমি বিনা এই দুঃখরূপী অগ্নিরাশিতে আমার আর কে আশ্রয়দাতা আছে? এইজন্য হে পশুপতি! এখানে এই দুঃখময় জন্মপ্রবাহের সংসারে সিক্ত দীন মোর শরণাগতকে স্বীকার করো ।। ২৪ ।।




যো দেবানাং প্রথমমশুভদ্রাবকো ভক্তিভাজম্‌

পূর্বং বিশ্বাধিক শতধৃতিং জাযমানং মহর্ষিঃ ।

দৃষ্ট্যাঽপশ্যত্‌ সকলজগতীসৃষ্টিসামর্থ্যদাত্র্যা

স ত্বং গ্রন্থিপ্রবিলযকৃতে বিদ্যাযা যোজযাস্মান্‌ ।।২৫ ।।



👉ভক্তদের অমঙ্গলের নাশক সেই ক্রান্তদর্শী মহাত্মা যিনি প্রথমে উৎপন্ন হওয়া দেবতাদের ও আদিভূত (হিরণ্যময় আদি তথা) বিশ্বোর্ত্তীণ (সদাশিব) হয়ে সংসারের সংরচনাকারী শক্তি প্রদানকারী দৃষ্টিপাত করেন। সেই পরমেশ্বর আপনি অজ্ঞান গ্রন্থির বিনাশ করার হেতু আমার সেই বিদ্যা প্রদান করুন          ।। ২৫ ।।




যদ্যাকাশং শুভদ! মনুজাশ্চর্মবদ্ধেষ্টযেযুঃ

দুঃখস্যান্তং তদপি পুরুষস্ত্বামবিজ্ঞায নৈতি ।

বিজ্ঞানং চ ত্বযি শিব! ঋতে ত্বত্‌প্রসাদান্ন লভ্যং

তদ্‌দুঃখার্ত কমিহ শরণং যামি দেবং ত্বদন্যম্‌ ।। ২৬ ।।



👉হে শুভপ্রদাতা! যদি মনুষ্য আকাশকে চর্মের ন্যায় আচ্ছাদন রূপে বেষ্টিত করে নেয়, এবং কিছু মানুষ শত্রুতা বশত রোষে আপনায় বিনা জেনে দুঃখের অস্ত স্বীকার করে নেয়। কিন্তু হে শিব! আপনার কৃপা অতিরিক্ত আপনার বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করা সম্ভবপর নয়। তারপরও ক্লেশগ্রস্ত আমি আপনার শরণ ভিন্ন কোন দেবতার শরণে যাব ? ।। ২৬ ।।




কিং গূঢর্থৈরকৃতকবচোগুম্ফনৈঃ কিং পুরাণৈঃ

তন্ত্রাদ্যার্বা পুরুষ্মতিভির্দুর্নিরূপ্যৈকমত্যৈঃ

কিং বা শাস্ত্রৈরফলকলহোল্লাসমাত্রপ্রধানৈ-

বিদ্যা বিদ্যেশ্বরকৃতবিধযাং কেবলং ত্বত্‌প্রসাদাত্‌ ।। ২৭ ।।



👉অপৌরষময় বেদবাণীর কি প্রয়োজনীয়তা? পুরাণের কি যুক্তিসঙ্গতা? তন্ত্রের কি লাভ? এদের মধ্যেকার পরস্পর বরোধী মতবাদের কি ঔচিত্য? হে বিদ্যার স্বামী, বিদ্যেশ্বর! পরিশুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত মনুষ্যের বিদ্যা কেবলমাত্র আপনার কৃপায় প্রাপ্ত হয় ।। ২৭ ।।




পাপিষ্ঠোঽং বিষযচপলঃ সন্ততদ্রোহশালী

কার্পন্যৈকস্থিরনিবসতিঃ পুণ্যগন্ধানভিজ্ঞঃ ।

যদ্যপেবং তদপি শরণং ত্বত্‌পদাব্জং প্রপন্নং

নৈনং দীনং স্মরহর তবোপেক্ষিতুং নাথ যুক্তম্‌ ।। ২৮ ।।



👉আমি মহাপাপী, বিষয়ের প্রতি চঞ্চল, নিরন্তর দ্রোহ আমার স্বভাব, কৃপনতা আমার স্থায়ী আবাস, এবং পবিত্রতার গন্ধ হতে আমি অপরিচিত, যদ্যাপি আমি এরকম তবুও আপনার চরণকমলের শরণ নিয়েছি, এই দীনকে কেন উপেক্ষা করছেন, হে স্বামীন্‌ কামদমন! আপনি উচিত করছেন না ।। ২৮ ।।




আলোচ্যৈবং যদি মযি ভবন্নাথ দোষাননন্তান-

নস্মত্‌পাদাশ্রযণপদবীং নার্হসীতীতি ক্ষিপেন্মাম্‌ ।

অদ্যৈবেমং শরণবিরহাদ্‌ বিদ্ধি ভীত্যৈব নষ্টং

গ্রামো গৃহ্ণাত্যহিততনযং কিন্তু মাত্রা নিরস্তম্‌ ।। ২৯ ।।



👉হে স্বামীন! যদি এই প্রকার আপনি আমার অগনিত দোষের আলোচনা করেন আমার বিষয়ে এই নির্ণয় করেন, "তুমি আমার চরণ অবলম্বনের যোগ্য নও"। তবে আপনার শরণের অভাবে আজই আমি ভয়ে বিনষ্ট হয়ে যাব। মায়ের দ্বারা ত্যাগ করা দুষ্ট পুত্রকে গ্রামের মানুষ কি স্বীকার করবে ? ।। ২৯ ।।




ক্ষন্তব্যং বা নিখিলমপি মে ভূতভবি ব্যলীকং

দুর্ব্যাপারপ্রবণমথবা শিক্ষণীযং মনো মে ।

ন ত্বেবার্ত্যা নিরতিশযযা ত্বত্‌পদাব্জং প্রপন্নং

ত্বদ্বিন্যস্তাখিলভরমমুং যুক্তমীশ প্রহাতুম্‌ ।। ৩০ ।।



👉হে স্বামীন! হয় আপনি আমার ভূত এবং ভবিষ্যতের সমস্ত অপরাধকে ক্ষমা করুন, অথবা এই কুমার্গগামী দুষ্ট মনকে সঠিক দিশা প্রদান করুন। দুয়ের মধ্যে একটি কার্য তো করতেই হবে, না হলে চলবে কি করে? এটা হতে পারে না, যে আপনি এই ঘোর দুঃখে আমার হাত ছেড়ে দেবেন, কারণ এই ধরণের কার্য আপনার ন্যায় দয়ালু স্বামীর পক্ষে উচিত নয়। আপনার চরণই যার একমাত্র অবলম্বন, এবং যে নিজের সমস্ত ভার আপনার উপর সপে দিয়েছে, তাকে আপনি কোনভাবেই নিরাশ করতে পারবেন না, এই আপার দৃঢ় বিশ্বাস ।। ৩০ ।।




সর্বজ্ঞস্ত্বং নিরবধিকৃপাসাগর পূর্ণশক্তিঃ

কস্মাদেনং ন গণযসি মামাপদব্ধৌ নিমগ্নম্‌ ।

একং পাপাত্মকমপি রুজা সর্বতোঽত্যন্তদীনং

জন্তুং যদ্যুদ্ধরসি শিব! কস্তাবতাতিপ্রসঙ্গঃ ।। ৩১ ।।



👉হে শঙ্কর! আপনি সর্বজ্ঞ, দয়ার সাগর তথা সামর্থ্যবান, তবুও কেন জানি না, আপনি আমাকে এই দুঃখের সাগর হতে উদ্ধার করছেন না? মানছি আমি পাপত্মা, কিন্তু সেই সাথে দু;খে অত্যন্ত কাতর। এইরূপ দশায় যদি আপনি আমাকে উদ্ধার করেন তাহলে আপনার ন্যায়পরায়নতায় কি কোন বাধা পড়বে? সমস্ত নিয়মে অপবাদ হবে, এইজন্য যদি আপনি অপবাদ স্বরূপ মেনেও নিজ দয়া ভিক্ষা প্রদান করেন তাতে কিসে আপত্তি? যেভাবেই হোক এইবার তো দয়া করতেই হবে ।। ৩১ ।।




অন্যন্তার্তিব্যথিতমগতিং দেব মামুদ্ধরেতি

ক্ষুন্নো মার্গস্তব শিব পুরা কেন বা নাথ নাযম্‌ ।

কামালম্বে বন তদধিকাং প্রার্থনারীতিমন্যাং

ত্রাযস্বৈনং সপদি কৃপযা বস্তুতত্ত্বং বিচিন্ত্য ।। ৩২ ।।



👉আমার ন্যায় ঘোর দুঃখে পীড়িত ও অসহায়কে হে স্বামীন! উদ্ধার করো! হে নাথ! হে শিব আমি জানি না, কেউ কি এর আগে তোমার এই মার্গের অনুসরণ করেছি কিনা, এখনও আমি এর থেকে আলাদা দ্বিতীয় কোন প্রকার প্রার্থনা পদ্ধতি অবলম্বন করবো? তুমি প্রভু শীঘ্র এর বাস্তবিকতা বিচার করে কৃপাবশত রক্ষা করো ।। ৩২ ।।




এতাবন্তং ভ্রমণনিচযং প্রাপিতোঽথং বরাকঃ

শ্রান্তঃ স্বামিন্নগতিরধুনা মোচনীস্ত্বযাঽহম্‌ ।

কৃত্যাকৃত্যব্যপগতমাতির্দীনশাখামৃগোঽযং

সন্তাড্যৈনং দশনবিবৃতিং পশ্যতস্তে ফলং কিম্‌ ।। ৩৩ ।।



👉বেচারা আমি এত অধিক জন্ম-মরণের চক্র সমূহকে প্রাপ্ত করেছি, বড়ই ক্লান্ত, চলতে সমর্থ নয়, (অথবা দ্বিতীয় অবলম্বন নেই)। অতঃ হে স্বামীন! এখন আমাকে মুক্ত করে দিন। এই কর্তব্য হতে অজ্ঞাত দীন বানর আমি, একে পিটিয়ে তার দাত বের করে আপনার কি লাভ হবে ।। ৩৩ ।।




মাতা তাতঃ স্তুত ইতি সমাবধ্য মাং মোহপাশৈ-

রাপাত্যৈবং ভবজলনিধৌ হা! কিমীশ ত্বযাপ্তম্‌ ।

এতাবন্তং সমযমিযতীমার্তিমাপাদিতেঽস্মিন্‌

কল্যাণী তে কিমিতি ন কৃপা কাপি মে ভাগ্যরেখা ।। ৩৪ ।।



👉মাতা, পিতা, পুত্র মোহপাশে,আমায় আবদ্ধ করে এই প্রকার সংসার সিন্ধুতে পতিত করে হে নাথ! আপনার কি লাভ হয়েছে? এই ব্যাক্তির উপর এত সময় ধরে দুঃখ দেওয়ার পরে ও আপনার কল্যাণকারী, কৃপা করার অভিপ্রায় নেই, আমার কি কল্যাণকারী কোন ভাগ্যরেখা নেই ।। ৩৪ ।।




ভুভক্ষে গুপ্তং বন সুখনিধিং তাত সাধারণং ত্বং

ভিক্ষাবৃত্তিং পরমম্ভিনযন্মাযমা মাং বিভাজ্য ।

মর্যাদাযাঃ সকলজগতাং নাযকঃ স্থাপকস্ত্বং

যুক্তং কিং তদ্‌ বদ বিভজনং যোগযস্বাত্মনা মাম্‌ ।। ৩৫ ।।



👉হে পিতা! আপন মায়ার দ্বারা আমায় পৃথক করে, ভিক্ষাবৃত্তির ঘোর অভিনয় করে তুমি সর্বজন ভোগ্য আনন্দরাশিকে সন্তর্পনে একাই ভোগ করছো, তুমিই তো সম্পূর্ণ বিশ্বের মর্যাদার নায়ক তথা প্রবর্তক, বলুন আমায় পৃথক করা আপনার জন্য উচিত? আমায় শীঘ্রই আপনার শরণে নিয়ে নিন ।। ৩৫ ।।




ন ত্বা জন্মপ্রচল-জলধেরুদ্ধরামীতি চেদ্ধী

রাস্তাং তন্মে ভবতু চ জনির্যত্র কুত্রাঽপি জাতৌ ।

ত্বদ্‌ভক্তানামনিতরসুখৈঃ পাদ্ধূলীকিশোরৈ-

রারদ্ধং মে ভবতু ভগবন্‌ভামি সর্বং শরীরম্‌  ।। ৩৬ ।।



👉যদি আপনার বিচার হয় যে, জন্মের চঞ্চল সিন্ধু হতে আমায় উদ্ধার করবেন না, তবে তাই হোক এবং আমার জন্ম যেখানেই যেকোন যোনিতেই হোক না কেন, হে ভগবন! আমি কেবল আপনাকে এইটুকু অনুরোধ করতে চাই যে, অন্যের থেকে সুখের অপেক্ষা না করে আপনার ভক্তের চরণের ধূলিকণা দ্বারা যেন আমার সেই শরীর নির্মিত হয় ।। ৩৬ ।।




কিটা নাগাস্তরব ইতি তে কিন্ন সন্তি স্থলেষু

ত্বত্‌পাদাম্ভোরুহপারমলোদ্বাহিমন্দানিলেষু ।

তেষ্বেকং বা সৃজ পুনরিমং নাথ দীনার্তিহারিন্‌

আতোষং তে মৃড ভবমহাঙ্গারনদ্যাং লুঠন্তম্‌ ।। ৩৭ ।।



👉'হে নাথ! যে যে স্থানে আপনার চরণকমল পড়েছে, সেই সেই স্থানে কীট-পতঙ্গ, সাপ, বিছে অথবা গাছ-গাছালি তো অবশ্যই হবে। যদি আর কিছু না হয় অন্তত তাদের মধ্যে কারোর শরীর প্রদান করুন, যার দ্বারা আপনার চরণ কমলের সুমধুর গন্ধের দ্বারা সম্পৃক্ত সুশীতল সমীরণের সুখময় স্পর্শ প্রাপ্ত করে নিজের শরীর ও আত্মা উভয়ের তপনকে শান্ত করতে পারি। সেই যোনিতে আপনি যতদিন ইচ্ছে রাখতে পারেন, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই, উল্টে যত অধিক সময় পর্যন্ত আপনি আমাকে সেই শরীরে স্থান দেবেন, ততোই অধিক আনন্দ আমার হবে, এবং তা আমি নিজের সৌভাগ্য রূপে প্রতিপাদিত করবো । আপনি এই প্রার্থনাকেও স্বীকার করবেন না, অবশ্যই করবেন ।। ৩৭ ।।




কালে কন্ঠস্ফুরদমৃতকলালেশসক্তাবলোক-

ব্যগ্রোদগ্রব্যসনিসকল স্নিগ্ধরুদ্ধোপকন্ঠে

অনন্তস্তোদৈরবধিরহিতৈরা র্তিমাপাদ্যমানোঽ-

প্যঙঘ্রিদ্ধন্ধে তব নিবিশতামন্তরাত্মন্মমাত্মা ।। ৩৮ ।।



👉হে অন্তরাত্মন্‌! যে সময় কন্ঠ হতে স্বল্প শেষ প্রাণ বায়ু বহিরাগমণ হতে দেখে কাতর এবং অত্যাধিক বিলাপকারী প্রিয়জন পার্শ্বে উপস্থিত হয়ে অপার আন্তরিক পীড়ায় দুঃখী হওয়ার অবস্থায়ও যেন আমার মন আপনার চরণ যুগলে প্রবিষ্ঠ থাকে ।। ৩৮ ।।




অন্তর্বাষ্পাকুলিতনযনানন্তরঙ্গানপশ্যন্‌

অগ্রে ঘোষং রুদিতবহুলং কাতরাণামশৃন্বন্‌ ।

অপ্যুত্‌ক্রান্তিশ্রমমগনযন্নন্তকালে কপর্দিন্‌ 

অঙ্ঘ্রিদ্বন্দ্বে তব নিবিশতমন্তরাত্মন্‌মমাত্মা ।। ৩৯ ।।



👉'হে কপর্দিনে! হে আমার অন্তরাত্মা! নিজের অন্তকালের চিত্র এইসময় আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে। আমি দেখতে পাচ্ছি যে স্বয়ী আত্মীয়রা কাতর নেত্রে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে রয়েছে, চারিধারে স্ত্রীরা এবং বাচ্চারা করুণ স্বরে ক্রন্দনরত এবং তার মধ্যে কেউ কেউ চিৎকার করে কাদছে, এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য কল্পনা করে শরীরের প্রত্যেক লোমকূপ শিহরিত হয়ে উঠেছে, ভাবছি, সেই সময় আমার নিজের কি দশা হবে, প্রভু আপনি কৃপা করুন যাতে কুটুম্বদের বাস্পাকুলিত নেত্র না দৃষ্টিগোচর হয়, স্ত্রী ও বাচ্চাদের ক্রন্দন ধ্বনি শুনতে না পারি, প্রাণোত্‌সর্গের ব্যাথার দ্বারা আপনি যদি কৃপা করে এমন ব্যবস্থা করতে পারেন, আপনার জন্য কোন কিছুই দুঃসাধ্য নয় ।। ৩৯ ।।




চারুস্মেরাননসরসিজং চন্দ্ররেখাবতংসম্‌

ফুল্লন্মল্লীকুসুমকলিকাদামসৌভাগ্যচৌরম্‌ ।                                                                                                                                                                                                                                                          অন্তঃপশ্যাম্যচলসুতযা রত্নপীঠে নিষণ্ণং

লোকাতীতং শিবদ সততং রূপমপ্রাকৃতং তে ।। ৪০ ।।



👉মনোহর হাসি যুক্ত মুখ কমল, চন্দ্রমার কলার ন্যায় বিভূষিত, প্রস্ফুটিত মালতী পুস্পের কলিকার রশ্মির ছটা নিস্ক্রমণকারী, মাতা পার্বতীর সহিত রত্ন বেদীতে আসীন, আপানার লোকাত্তর দিব্য স্বরূপময় হে কল্যাণপ্রদ! আমি সর্বদা নিজ হৃদয়ে আপনার দর্শন করি ।। ৪০ ।।




স্বপ্নে বাঽপি স্বরসবিদলদ্দিব্যপঙ্কেরুহাভং

পশ্যেযং কিং তব পশুপতে পাদযুগ্মং কদাচিত্‌ ।

ক্বাহাং পাপঃ ক্ব তব চরণালোকভাগ্যং তথাঽপি

প্রত্যাশাং মে ঘটযতি পুনর্বিশ্রুতা তেঽনুকম্পা ।। ৪১ ।।



👉হে পশুপতে! প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় আপনার পদযুগলের সাক্ষাৎকার আমি কি স্বপ্নে পেতে পারি? যখন নিজের আচরণকে দেখি তখন নিজের মন নিরাশায় ভরে ওঠে, কিন্তু আপনার অপার দয়া স্মরণ করে আমার মনে আবারও আশার সঞ্চার হয়। ওই সময় আমি নিজের মনকে আশ্বস্ত করে বলি যে তুই নীচ তো কি হয়েছে তোর স্বামী তো পরম দয়ালু। সে অবশ্যই তোর ওপর কৃপা করবে নিশ্চিন্তে থাক ।।৪১।।




ভিক্ষাবৃত্তিং চর পিতৃবনে ভূতসংঘৈর্ভ্রমেদং

বিজ্ঞাতাং তে চরিতমখিলং বিপ্রলিপ্সোঃ কপালিন্‌ ।

আবৈকুন্ঠদ্রুহিণমখিলপ্রাণিনামীশ্বরস্ত্বং

নাথ স্বপ্নেঽপ্যহমিহ ন তে পাদপদ্মং ত্যজামি ।। ৪২ ।।



👉 হে কপালিনে! হে নাথ আপনি যতই ভিক্ষাবৃত্তির নাটক করুন অথবা ভূতের দলের সাথে শ্মশানে ভ্রমণ করুন, যাই করুন না কেন আপনি আপনার ঐশ্বর্য আমার থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন না আমি জেনে গেছি যে আপনি ব্রহ্মা-বিষ্ণু সহ সমগ্র চরাচর জগতের স্বামী এই জন্য আপনি যতই প্রবঞ্চনা করুন না কেন আমি স্বপ্নেও আপনার সুরমুনি দুর্লভ চরণ কমলের পরিত্যাগ কখনো করবো না এখন থেকে আপনারই হয়ে থাকবো ।।৪২ ।।




আলেপনং ভসিতমাবসতিঃ শ্মশান-

মস্থীনি তে সততমাভরণানি সন্তু ।

নিহোতুমীশ সকলশ্রুতিসারসিদ্ধ-

মৈশ্বর্যমম্বুজভবোঽপি ন চ ক্ষমস্তে ।। ৪৩ ।।



👉ভস্মের লেপনই হোক, শ্মশানে নিবাসই হোক, অস্থির মালাই হোক, এসব যতই আপনার নিরন্তন অভূষণ হোক না কেন! হে শিব! সমস্ত উৎকৃষ্ট শ্রুতিতে অথবা বেদে সার স্বরূপে সিদ্ধ আপনার বৈভবকে স্বয়ং ব্রহ্মা ও অন্তরাল করতে সমর্থ নয়।




বিবিধ্মপি গুণৌঘং গুণৌঘং বেদযন্ত্বর্থবাদাঃ

পরিমিতবিভবানাং পামরাণাং সরাণাম্‌ ।

তনুহিমকরমৌলে তাবতা ত্বত্‌পরত্বে

কতি কতি জগদীশাঃ কল্পিতা নো ভবেষ্যঃ ।। ৪৪ ।।



👉বেদের প্রশংসাসূচক বাক্য সীমিত বৈভবযুক্ত দেবতাদের বহুবিধ গুণের যতই গুণগান করা হোক না কেন, কিন্তু হে চন্দ্রকলাধর! যদি ধরে নেওয়া যায় যে তাদের নিকট এত বৈভব রয়েছে তবে হে জগদীশ্বর আপনার বৈভব তো কল্পনাতীত ।। ৪৪ ।।




বলমবলমমীষাং বল্বজানাং বিচিন্ত্য

কথমপি শিব কালক্ষেপমাত্রপ্রধানৈঃ ।

সকলমপি রহস্যং নাথ নিষ্কষ্য সাক্ষাত্‌

সরসিজভবমুখ্যৌঃ সাধিতং নঃ প্রমাণম্‌ ।। ৪৫ ।।



👉হে শিব! এই অসার বাক্যের বিচার করে এই প্রকার নিষ্কর্ষে অবতরণ করা যায় যে মুখ্যত সময় যাপনে সম্ভবপর। হে নাথ! ব্রহ্মা আদি প্রধান দেবতা দ্বারা সমস্ত রহস্যের রস নিংড়ে আমার বক্তব্যকেই সিদ্ধ করেছে ।। ৪৫ ।।




বিহরপিতৃবনে বা বিশ্বপারে পুরে বা

রজতগিরিতিটে বা রত্নসানুস্থলে বা ।

(দিশ) ভবঢুপকন্ঠে দেব মে ভৃত্যভাবং

পরমশিব তব শ্রীপাঢুকাবাহকানাম্‌ ।। ৪৬ ।।



👉হে পরমশিব হয় আপনি শশ্মানে বিচরণ করুন, হয় লোকাতীত সোমলোকে, হয় রজত পর্বতের তটে, হয় রত্নপর্বতের ভূমিতে, হে দেব! আপনি আমাকে আপনার নিকট আপনার চরণ-পাদুকা বহনের সেবক ভাব প্রদান করুন ।। ৪৬ ।।




ন কিঞ্চিমে চেতঃসমভিলষণীযং ত্রিভুবনে

সুখং বা দুখং বা ভবন্যভবদ্ভাবি ভগবন্‌ ।

সমুন্মীলত্‌পাথোরুহকুহরসৌভাগ্যমপি তে 

পদদ্বন্দং চেতঃ পরিচযমুপেযান্মম সদা ।। ৪৭ ।।



👉'হে নাথ! হে ভগবন্‌ ! আমার ত্রিভুবনের কোন প্রকার বস্তুর অভিলাষ নেই এবং না আমার সুখ-দুখের কোন প্রকার চিন্তা আছে, যা কিছু প্রারব্ধে লেখা আছে তা হতে থাকবে। শুধুমাত্র আমি তো কেবল এটা চাই যে প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় আপনার চরণ যুগলে আমার চিত্তরূপী সত্তা নিমগ্ন থাকে, কখনো তা হতে পৃথক না হয় ।। ৪৭ ।।




উদরভরণমাত্রং সাধ্যমুদ্দিশ্য নীচে-

ষ্বসকুদুপনিবন্ধাদাহিতোচ্ছিষ্টভাবাম্‌ ।

অহমিহ নুতিভঙ্গীমর্পযিত্বোপহার

তব চরণসরোজে তাত জাতোঽপরাধী ।। ৪৮ ।।



👉নিন্ম কোটির মনুষ্যদের সহিত বারংবার সম্পর্ক স্থাপনের কারণ কেবল মাত্র পেট ভরানোর লক্ষ্য নিশ্চিত করে আপনার চরণ-কমলে এই মিথ্যাভাবের প্রণতিপূর্ণ রচনার ভেট চড়িয়ে অপরাধী হয়ে গেছি ।। ৪৮ ।।




সর্বং সদা শিব সহস্ব মমাপরাধং

মগ্নং সমুদ্ধর মহত্যমুমাপদব্ধৌ ।

সর্বাত্মনা তব পদাম্বুজমেব দীনঃ

স্বামিন্ননন্যশরণঃ শরণং বৃণীতে ।। ৪৯ ।।



👉হে শিব! আপনি সদা আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করেন। এই ঘোর বিপত্তির সাগরে নিমজ্জিত আমায় উদ্ধার করুন। হে নাথ! এই বেচারা দ্বিতীয় কারোর স্মরণ না নিয়ে কেবলমাত্র আপনার শ্রীচরণ-কমলে আশ্রয় বরণ করেছে  ।। ৪৯ ।।





আত্মার্পনস্তুতিরিযং ভগবন্নিবদ্বা

যদ্যপ্যনন্যমনসা ন মযা তথাঽপি ।

বাচাঽপি কেবলমযং শরণং বৃণীতে

দীনো বরাক ইতি রক্ষ কৃপানিধে মাম্‌ ।। ৫০ ।।



👉হে ভগবন! আমি অত্যন্ত মনযোগসহকারে এই "আত্মার্পনস্তুতি" রচনা করিনি। তবু ও এই বাণীর দ্বারা আমি আপনার চরণে শরণ নিয়েছি, আমায় দরিদ্র ও বেচারা জ্ঞাত করে হে কৃপাসিন্ধু! আমার রক্ষা করুন ।। ৫০ ।।




                                                ।। আত্মার্পনস্তুতি সমাপ্তম।।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

পরমেশ্বর শিব বৈষ্ণব নন