মা সতী বা পার্বতীর চরণ দেখে ব্রহ্মা শুক্রপাত করেছিলেন বলে দাবী করা আর্যসমাজী তথা ম্লেচ্ছ-যবনদের খণ্ডন

 🔵 ঘটনা — মা সতী/পার্বতীর আঙ্গুল কে দেখে কামবানে পীড়িত হয়ে ব্রহ্মা বীর্য পাত করেছিল ।

বর্তমানে আর্যসমাজীদের জন্য এই গুজব ছড়িয়েছে, এদের জন্য‌ই খ্রিষ্টান-মুসলিম/বৌদ্ধ/নাস্তিকেরাও এই এক‌ই দাবী তুলে আক্রমণ করে বসছে সনাতনী দের। তাই আর্যসমাজীদের উদ্দেশ্য করেই সমগ্র পোষ্টের প্রতিবেদনে খণ্ডন দেওয়া হল। 

🤮 আর্যসমাজী/ খ্রিষ্টান-মুসলিম/বৌদ্ধ/নাস্তিকেরা দাবী করছে — ব্রহ্মার ঐ বীর্য নাকি মানুষের মতো বীর্য অর্থাৎ শুক্র। সেখান থেকে বালখিল্য মুনিগণ জন্মেছিলেন।


💥শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য দ্বারা এই অসনাতনী আর্যসমাজী/ খ্রিষ্টান-মুসলিম/বৌদ্ধ/নাস্তিকদের দাবীর খণ্ডন


১) ব্রহ্মা কামদেবকে বলে ছিলেন সকল দেবতা সহ সমগ্র জগতকে কামনায় জর্জরিত করতে, যাতে নারীপুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। তখন কামদেব ব্রহ্মার কথা সত্য কি না তা পরখ করবার জন্য ব্রহ্মাকেই কামবাণ নিক্ষেপ করে ব্রহ্মাকে বশীভূত করেছিল, ফলে ব্রহ্মা নিজের ইচ্ছায় কামের বশীভূত হননি, কামদেবের কারণে হয়েছেন। (তথ্যসূত্র : শিব মহাপুরান/রুদ্র সংহিতা/সতী খণ্ড/৩য় অধ্যায়)


২) ব্রহ্মার কামের ফলে তার বীর্য বলতে শুক্র নয় বরং ঘর্ম নির্গত হয়েছিল। 

এই বীর্য যদি মানুষের মতো সাধারণ বীর্য হতো তাহলে কি বীর্যপাত হ‌ওয়া মাত্র‌ই কি সন্তান উৎপন্ন হতে পারে ?

পারেনা........

মানুষের মতো সাধারণ বীর্য, স্ত্রীগর্ভে প্রবেশ করে একটি নির্দিষ্ট কালের পরেই সন্তান প্রসব করে।

কিন্তু পুরাণ শাস্ত্রে বলা হয়েছে ব্রহ্মার বীর্য পতিত হ‌ওয়া মাত্র‌ই সেখান থেকে বালখিল্য মুনিগণ উৎপন্ন হলেন।


তাহলে কোন যুক্তিতে আর্যসমাজীরা ব্রহ্মার বীর্যকে সাধারণ মানুষের মতো বীর্য ভাবছে ?


সাবর্ণীমুনিকৃত শৈবশাস্ত্র পৌরাণিক সংহিতার ২য় অধ্যায়ের অন্তর্গত ২নং শ্লোকে, ৪নং শ্লোকে ও ৬নং থেকে ১১নং শ্লোকে বলা হয়েছে —


বীর্য কি দেবতা ও জীবের ক্ষেত্রে সমান ? ॥২

রেত , জল , শ্বাস, স্বেদবিন্দু(ঘাম বিন্দু), দৈবশক্তি, তেজ বা দৈবাংশকেও বীর্য বলে জানবে ॥৪


প্রাচীনকালে মহাদেবের স্বেদবিন্দু থেকে অন্ধকাসুর নামের এক দৈত্য উৎপন্ন হয়েছিল, এই স্বেদবিন্দুই রেতস্বরূপ বীর্য বলে জানবে ॥৬


জড় জগতের জীবগণ কেবলমাত্র কামনার বশবর্তী হয়েই বীর্যপাত করে , কিন্তু দেবতাগণ জগতের হিতার্থে কোনো মহাত্মা বা শুভশক্তিকে এই ধরাধামে অবতীর্ণ করানোর নিমিত্তে তাদের অংশ থেকে উদ্ভূত দেবাংশস্বরূপ বীর্যকে লীলাবশত তাহাদের দিব্যশরীর থেকে পৃথক করেন বা নিক্ষেপ করেন ॥৭-৮


এহেন লীলাকে যে কামউদ্দিপক ক্রিয়া থেকে নির্গত বীর্যের সঙ্গে তুলনা করেন তাকে নিশ্চয় মনুষ্য যোনিতে বিচরণকারী ম্লেচ্ছস্বরূপ বলে জানবে ॥৯


কারণ , দৈববীর্য ও মনুষ্য বীর্যের মধ্যে আকাশ ও ভূমির সমান পার্থক্য বর্তমান, যেমন আকাশ ও ভূমিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় তারা মিশে আছে ॥১০

কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা মনের ভ্রম, তেমনই দৈববীর্য আর মনুষ্যবীর্য শ্রবণে এক হলেও টা সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতির । এতে কোনো সন্দেহ নেই ॥১১


সুতরাং দৈবী বিষয়ের সাথে মনুষ্যের বিষয়কে এক দৃষ্টিকোণে বিচার করা অনুচিত। 

এ কথা আমাদের পুরাণ শাস্ত্র নিজেই নির্দেশ দিয়েছে। দেখুন !!

মৎসপুরাণের অধ্যায় নং ৪ -এ বলা হয়েছে 👇

🔥 যেমন ভাবে সাপের মার্গ সাপ তথা পাখিদের আকাশে চলার মার্গ শুধু পাখিরাই জানতে পারে, ঠিক তেমন ভাবেই দিব্য জীবের(দেবতার) অচিন্ত্য মার্গের গতিপ্রকৃতি দিব্যজীব অর্থাৎ দেবতারাই বোধগম্য করতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ তা বোধগম্য করতে পারে না ॥৫

 হে রাজেন্দ্র ! কেননা, দেবতাদের কার্য বা অকার্য , শুভ বা অশুভ ফল প্রদানকারী হয় না। এই কারণে, সেই দেবতাদের বিষয়ে মনুষ্য মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করা শ্রেয়কর নয় ॥৬


*নিঘন্টুর ১.১২ তে রেত/বীর্য শব্দের অর্থ জল/ঘামের জল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।


[মজার বিষয় হল, আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতীও তার সত্যার্থপ্রকাশ নামক পুস্তকের তৃতীয় সমুল্লাসের (বাংলাপুস্তকের ৩১নং পৃষ্ঠাতে) "বীর্য" শব্দের অর্থ "ঘাম" বলে লিখেছেন]


✅ সিদ্ধান্ত — পুরাণের কোন শব্দ টি কোন অর্থে ব্যবহার হচ্ছে তা পুরাণ তথা সনাতন ধর্মের ব্যাখ্যাকারী শাস্ত্র থেকেই জেনে নিতে হবে। কোনো নব্য লেখকের লেখা ডিকশনারিতে কি লেখা আছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।


🌻 মীমাংসা হল :

  কামদেবের কারণে ব্রহ্মা কামভাবে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন।

সেই কামবানের প্রভাবের অস্থিরতায় দেবীর পায়ের আঙ্গুল দেখে ব্রহ্মার ঘাম ঝড়ে পড়েছিল। সেই ঘাম থেকেই তৎক্ষণাৎ বালখিল্য মুনিগণ উৎপন্ন হয়েছিলেন।


যারা দৈব বীর্যকে সাধারণ মানুষের মতো ভাবে তারা হল ম্লেচ্ছ - এটাই শাস্ত্র বলেছে। আর এটাতো সবাই জানেন যে, শাস্ত্রের কথা সর্বদাই সত্য।

আর্য সমাজ হল ইউরোপীয় থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটির খ্রি ষ্টানদের দা লাল তাই নিঃসন্দেহে এই ম্লেচ্ছরাই এরকম ধরনের ভাবনাচিন্তা করতে পারে।


সুতরাং, পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এখানে অশ্লীলতার কিছুই নেই।

 

বরং 

হে দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারী আর্যসমাজী ম্লেচ্ছ গণ !


 এখন আপনারা নিরন্তর অশ্বলি ঙ্গ আ পনাদের ম লদ্বারে যেন ঢো কাতে থাকুন (দয়ানন্দের লেখা যজুর্বেদের ২৫/৭ ভাষ্য)

আর মুখে দাঁড়িগোফে বী র্য(শুক্র) ঢেলে ছেটাতে থাকুন (দয়ানন্দের লেখা যজুর্বেদের ২৫/১ ভাষ্য)- একথা আপনাদের নিয়োগানন্দ কামানন্দ নন্নীজানের ভা তা র দয়ানন্দ সরস্বতী বলে গেছেন তার অশ্লীল যজুর্বেদভাষ্য পুস্তকে, তাই এসব আর্যসমাজীদের ই মানায়।


যেহেতু, বর্তমানে আর্যসমাজীদের জন্য এই গুজব ছড়িয়েছে, আর এই দাবীই যেহেতু খ্রিষ্টান-মুসলিম/বৌদ্ধ/নাস্তিকেরাও দাবী করেন, তাই আর্যসমাজীদের খণ্ডন করবার মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টান-মুসলিম/বৌদ্ধ/নাস্তিকদের দাবীও খণ্ডিত হল । 

সাক্ষাৎ সনাতনধর্ম শ্রীনন্দী মহারাজের জয় 

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩

হর হর মহাদেব 🚩 


🔥অপপ্রচার দমনে — শ্রীনন্দীনাথ শৈব আচার্য জী

প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত