যতমত ততপথ — কালী, খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক — সর্বধর্ম সমন্বয়বাদের প্রবক্তা শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের বক্তব্য সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী কতটুকু গ্রহণযোগ্য ?

  Sree Ramkrishna dev vani sarba dharma samanmay refutation

নমঃ শিবায়

আজ আমি এমন একটি বিতর্কিত বিষয়ের উপর আলোচনা করবো, যেটির উপর বর্তমানের বহু সনাতনীরা বিশ্বাস করে‌ বসে আছেন, নির্ভর করে আছেন, কিন্তু তাদের এই বিশ্বাস সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে কটতটুকু গ্রহণযোগ্য ?

সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সকল পাঠকবৃন্দের আছে একটি নিবেদন, কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার উপর অন্ধ বিশ্বাস না রেখে নিরপেক্ষ ভাবে সম্পূর্ণ নিবন্ধ টি পড়ুন, তারপর নিরপেক্ষ ভাবে নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করে বিচার করুন এখানের কথা গুলি কি অযৌক্তিক ?

যদি অযৌক্তিক না হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই যুক্তিসম্মত বিচারের সিদ্ধান্তে অটল হয়ে এগিয়ে চলুন, আর যদি মনে হয় যে, এখানে সব অযৌক্তিক বলা হয়েছে, তবে এড়িয়ে যেতে পারেন। এটি মানবার জন্য আপনাকে আমরা বাধ্য করছি না।

এখানে শুধুমাত্র রামকৃষ্ণ দেবের বক্তব্যগুলি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বিচার করবার জন্য ইসলাম মজহাবের ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান গ্রন্থ থেকে কিছু কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, নিন্দা করবার জন্য ব্যবহার করা হয়নি।


শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের বানী —


“আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না। ঈশ্বর এক, দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম। যেমন পুকুরে জল আছে, একঘাটের লোক বলছে জল, আর একঘাটের লোক বলছে ওয়াটার, আর একঘাটের লোক বলছে পানি, হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, কিন্তু বস্তু এক। মত-পথ। এক-একটি ধর্মের মত এক-একটি পথ, ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায়। যেমন নদী নানাদিক থেকে এসে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়।

যত মত তত পথ — কালী খ্রিষ্ট আল্লা সব এক। সর্বধর্ম সমন্বয়”


🔥 শ্রীনন্দীনাথ শৈবাচার্য দ্বারা সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণের নিরিখে শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের উক্তির বিশ্লেষণ


ॐ শ্রীগুরবে নমঃ ॥

ॐ গাং গণেশায় নমঃ ॥

ॐ নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥

প্রিয়, সনাতনী বৃন্দ !

আমার প্রথম পরিচয় আমি একজন সনাতনী শৈব ।

আমার কাছে কোনো ব্যক্তির বা কোনো সংগঠন বা সংস্থার নিজস্ব বিশ্বাস ও আদর্শের নীতির আগে সর্বদা সনাতন ধর্মের সম্মান বড়, সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসম্মত প্রাচীন সিদ্ধান্ত‌ই গ্রহণযোগ্য।

তাই আমি শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকে একজন সনাতনী হিসেবে সম্মান করি, কিন্তু তার প্রচারিত বানী যদি সনাতন ধর্মের প্রাচীন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান করে থাকে, তবে আমি বা কোনো প্রকৃত সনাতনী ব্যক্তি সেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে মেনে চলতে অক্ষম।


🔷 ১ 🔷

শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বলেছেন— আমার ধর্ম ঠিক, আর অপরের ধর্ম ভুল – এ মত ভাল না।


🔍 সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ ১

       আমার ধর্ম , তোমার ধর্ম বলে কিছু হয় না ।
          ধর্ম একটিই, তার নাম - সনাতন ।

কেন ধর্ম একটিই ? কেন ধর্মের নাম সনাতন - এটি জানবার আগে জানতে হবে..ধর্ম শব্দের উৎপত্তি কোথা হতে ? ধর্ম শব্দের অর্থ কি ??! ধর্মের লক্ষণ কি ??!

জেনে নিন।

🔶প্রশ্ন — ধর্ম শব্দের উপস্থিতি ও উৎপত্তি কোথায় ?

⭕উত্তর : সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহেই “ধর্ম” শব্দটির অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে । সনাতন ধর্মের বিপক্ষে থাকা মতবাদগুলির গ্রন্থে ধর্ম শব্দটির উপস্থিতি নেই ।

🔶প্রশ্ন — ধর্ম শব্দের অর্থ কি ?

⭕উত্তর : ধর্মের অর্থ পরমকল্যানের মার্গ, যা আমরা প্রকৃতিগত কারণেই ধারণ করি, প্রমাণ 👇

যতো অভ্যুদয় নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্মঃ।
[তথ্যসূত্র - বৈশেষিক দর্শন/১ম অধ্যায়/১ম আহ্নিক/২নং সূত্র]

অর্থ - যার মাধ্যমে যথাযথ উন্নতি তথা পরম কল্যাণ সাধিত হয়, তা ধর্ম বলে অভিহিত।

অর্থাৎ, যার দ্বারা গ্রাম, নগর, দেশ, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয়, শুধুই এগুলিই নয় বরং সমগ্র জগৎ সংসারে, সমস্ত জীবের জন্য যা কল্যাণপ্রদ, মঙ্গলজনক, যা সংরক্ষকরূপী, সংবর্দ্ধকরূপী হয় তাকে‌ই — ধর্ম বলে।

🔶প্রশ্ন — অধর্ম কাকে বলে ?

⭕উত্তর :  অকুশল কর্ম কে অধর্ম বলা হয়।

 যার দ্বারা অনিষ্ট ফলের প্রাপ্তি হয় তাকে আচার্যগণ অধর্ম বলে থাকেন ।

[তথ্যসূত্র - লিঙ্গমহাপুরাণ/ পূর্বভাগ/ ১০ নং অধ্যায় / শ্লোক নং - ১১ ও ১৩]

[অর্থাৎ, কারো মতবাদের নীতি যদি হয় অন্য সম্প্রদায়কে হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করা, অন্য সম্প্রদায়ের নারীদের যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করে ভোগ করা ; অন্য সম্প্রদায়ের জায়গাজমি ও তাদের উপাসনালয় ধ্বংস করা। তবে তা ধর্ম বলে গণ্য হয় না, এধরণের কার্য অধর্ম বলেই গণ্য হবে।]


🔶 প্রশ্ন — ধর্মের কয়টি লক্ষণ ও সেগুলি কি কি?

⭕ উত্তর : ধর্মের লক্ষণ দশ টি। প্রমাণ👇

ধৃতিঃ ক্ষমা দমোঽস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয় নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥

[তথ্যসূত্র - মনুস্মৃতি/৬ নং অধ্যায়/৯২ তম শ্লোক]

অর্থ -

(১) ধৃতি (সর্বদা ধৈর্য রাখা),

(২) ক্ষমা,

(৩) দম (মনকে নিয়ন্ত্রণ),

(৪) অস্তেয় (চুরি তথা অনৈতিক কর্ম না করা),

(৫) শৌচ (অন্তর ও বাহিরে শুদ্ধতা),

(৬) ইন্দ্রিয় নিগ্রহ (ইন্দ্রিয়গুলিকে লোভনীয় বিষয় থেকে দূরে রাখা),

(৭) ধী(বেদ ও শৈবাগম ইত্যাদির শাস্ত্রের জ্ঞান),

(৮)বিদ্যা (ব্রহ্মবিদ্যা),

(৯) সত্য,

(১০) অক্রোধ (ক্রোধ না করা) - এই হল ধর্মের দশটি লক্ষণ। - এগুলি ধর্মের ১০টি লক্ষণ।

🔶 প্রশ্ন — ধর্ম প্রকাশিত হয়েছে কার দ্বারা ? তার নাম কি ?

⭕উত্তর : পরমেশ্বর শিবের দ্বারা, প্রমাণ 👇

জ্ঞানং ক্রিয়া চ চর্যা চ যোগেশ্চেতি সুরেশ্বরী। 

চতুষ্পাদঃ সমাখ্যাতো মম ধর্ম সনাতনঃ ॥৩০

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তরখণ্ড/১০ অধ্যায়]

অর্থ : হে সুরেশ্বরী পার্বতী! আমার (অর্থাৎ শিবের) দ্বারা প্রকাশিত যে সনাতন ধর্ম রয়েছে, তা চার পদযুক্ত (অর্থাৎ চারটি পা যুক্ত), যাদের নাম জ্ঞান(অর্থাৎ সত্য), ক্রিয়া, চর্যা ও যোগ।

            — উপরোক্ত শাস্ত্রবাক্য থেকে আমরা জানতে পেরেছি ,ধর্ম শব্দটির লক্ষণের সাথে যে কোনো মতবাদগুলিকে জুড়ে দেওয়া যায় না, সেই মতবাদগুলির মধ্যে ধর্মের ১০ রকম লক্ষণ আছে কি না তা দেখতে হবে। 


ধর্ম মাত্র‌ই সকলের জন্য। যার মধ্যে ধর্মের এই গুণ গুলো নেই সে মানুষ নয়। একারণেই প্রবাদ বাক্যে বলা হয় “ধর্ম হীন মানুষ পশুর সমান”

  কেউ কখনোই ধর্ম পরিবর্তন করতে পারে না, মানুষ নিজের ইচ্ছে মতো কিছু নিয়ম সৃষ্টি করে সেটিকে প্রচার করে, যা সম্প্রদায় বলে গণ্য। 

তাই মানুষ সম্প্রদায় বানাতে পারে, একটি সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায়ে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে।  কিন্তু ধর্ম পরিবর্তন করা কখনো সম্ভব নয়। কারণ ধর্ম মানে তা শাশ্বত, যে শাশ্বত নিয়ম মানুষের বানানো নয়।

ধর্ম সর্বদা মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করায়, কিন্তু যা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেটা ধর্ম নয় সেটি হল — মতবাদ বা সম্প্রদায়।


🟪 এবার দেখুন,

ইসলামের দৃষ্টিতে ইসলামের পবিত্র কোরাণে,

আল্লাহ নিজে বলেছেন — আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযোগ্য হবে না।(কোরাণ/৩:১৯, ৩:৮৫)
According to Islam, Islam is one &. Only dwin
(কোরাণ/৩:১৯)

According to Islam — Islam is one &. Only dwin
(কোরাণ/৩:৮৫)


শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জীর কথা অনুযায়ী, ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন হয়, তিনি আমার ধর্ম তোমার ধর্ম বলতে, সনাতনকেও ধর্ম, ইসলামকেও ধর্ম, খ্রিষ্টানকেও ধর্ম বলে দাবী করেছেন।

অথচ, সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে বিচার করলে বোঝা যাচ্ছে যে, সনাতন ধর্মের লক্ষণ ইসলাম বা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে মিল খাচ্ছে না। ফলে সব কিছুর সাথে ধর্ম শব্দটি জুড়ে দেওয়া যায় না।

এক‌ইভাবে, ইসলামের দৃষ্টিকোণে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহর দেওয়া ইসলামের পথ‌ই একমাত্র গ্রহণযোগ্য আল্লাহর কাছে, যিনি আল্লাহর দেওয়া এই বিধানের বিরুদ্ধে যাবে তার জন্য পদক্ষেপ(হিসাব) গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছে ইসলামের পবিত্র কোরাণ শরীফ।

শ্রীরামকৃষ্ণ দেবজী, সনাতন ধর্ম বা ইসলাম দ্বীনের মধ্যে কোনোটির মূল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত না হয়েই উপরোক্ত কথা বলেছেন । এর দ্বারা শ্রীরামকৃষ্ণদেব ইসলামের সিদ্ধান্ত ও সনাতন ধর্মের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে কথা বলেছেন।


সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী

 ধর্মের নাম সনাতন , এটিই প্রমাণিত। সনাতন কথার অর্থ শাশ্বত সত্য ।

তাই সত্যের পথ‌ই একমাত্র ধর্ম, একারণে সনাতন‌ই একমাত্র “ভালো” বলেই গণ্য হবে সনাতনীদের কাছে। সনাতনের বাইরে থাকা অসত্য কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না সনাতনীদের কাছে, তাই তা ভালো নয়।

♦️ সুতরাং আমার ধর্ম, তোমার ধর্ম বলা অযৌক্তিক। কারণ, সনাতন ধর্ম ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অন্য আরেকটি ধর্ম নেই। সত্যের ধর্ম হল সনাতন, তাই সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে একমাত্র — সত্য‌ই ভালো, সনাতন ধর্ম ই ভালো।


🔷 ২ 🔷

শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বলেছেন— ঈশ্বর এক, দুই নাই। তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ডাকে। কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রহ্ম।


🔍 সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ ২ —

      শ্রীরামকৃষ্ণ দেব আংশিক সত্য বলেছেন, এটা ঠিক‌ই যে, ঈশ্বর একজন‌ই, কিন্তু ‘ঈশ্বর’- শব্দটি সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের থেকে এসেছে, কোরাণ, বাইবেল বা অন্য কোনো গ্রন্থে ঈশ্বর শব্দটি উপস্থিত নেই। 

পরমেশ্বর শিবের একটি নাম - ঈশ্বর (যজূর্বেদ/তৈত্তিরীয় আরণ্যক/১০ম প্রপাঠক)

শৈব আগম,বেদ,পুরাণ তথা সমস্ত সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর শিব‌ই সমস্ত দেবতার রূপ ধারণ করে লীলা করছেন। তাই বিষ্ণু, ব্রহ্মা, ইন্দ্র, বায়ু, অগ্নি, সূর্য, পবন প্রভৃতি এই সব নামই পরমেশ্বর শিবের।

কিন্তু সনাতন ধর্মের কোনো শাস্ত্রে “ গড, আল্লাহ ” শব্দটিই নেই, সুতরাং সনাতন ধর্মের ঈশ্বরের বিভিন্ন নাম থাকলেও তার মধ্যে কোথাও সেই ঈশ্বরের নাম “ ড, আল্লাহ ” বলে স্বীকার করা হয়নি।

উদাহরণ হিসেবে বলি, 

সূর্য কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকতে পারে যেমন রবি, সবিতা, দিবাকর, আদিত্য, প্রভাকর ইত্যাদি কারণ এগুলো সূর্যের বিভিন্ন নাম। কিন্তু কোনো স্বাভাবিক মানুষ সূর্য কে কখনো জল, গাছ, ঘোড়া নামে ডাকবে না; কারণ জল, গাছ, ঘোড়া আর সূর্য একই বস্তু নয়। একি ভাবে বেদে ঈশ্বরের অনেক নাম আছে কিন্তু আল্লাহ, গড নাম কোথাও নেই, কোথাও বলা হয়নি ঈশ্বরের আর এক নাম আল্লাহ, গড। তাই যিনি যথার্থ জ্ঞানী তিনি কখনো পরমাত্মাকে আল্লাহ, গড নামে কখনো ডাকবেন না। কারণ পরমেশ্বরের অনেক নামের মধ্যে আল্লাহ, গড নাম কোথাও নেই। আমাদের শাস্ত্রে ঈশ্বরের বহু নাম রয়েছে সেই নামেই তাকে ডাকবেন।

অনেকে বলতে পারেন, যে, ঈশ্বর তো নাম রূপের ঊর্ধ্বে তাই তাকে নিজের ভক্তি দিয়ে নিজের মন মতো যেকোনো একটা নামে ডাকলেই হবে, 

এরকম মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বলছি, আপনি সনাতনী হয়ে যদি মনে করেন, আপনি সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী পরমেশ্বরের নামগুলির মধ্যে থাকা কোনো একটি নাম ধরে পরমেশ্বর কে না ডেকে বরং পরমেশ্বরের নাম ভেবে দিনরাত “ভূত, প্রেত, দৈত্য, অসুর, দানব ” বলে ডাকেন, “শয়তান শয়তান” বলে ডাকেন বা “আল্লা, গড” বলে ডাকেন , তাহলে আপনি ভেবে দেখুন, আপনার দেখাদেখি সাধারণ মানুষ এই পথ অনুসরণ করে চলতে পারে, মানুষ যা দেখে তাই শেখে। তাহলে সেক্ষেত্রে সনাতন ধর্মের আচার-বিচার বলে কি কিছু থাকলো  ?

 ভূত প্রেত, দানব, দৈত্য, অসুর নামক প্রত্যেকটি শব্দের সাথে তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, ঠিক তেমন ভাবেই ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ যিনি, সেই আল্লাহর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সনাতন ধর্মের পরমেশ্বরের বৈশিষ্ট্য মেলে না। খ্রিষ্টানদের গডের বৈশিষ্ট্য‌ও সনাতন ধর্মের পরমেশ্বরের সাথে মেলে না। 


খ্রিষ্টানদের বাইবেলের নির্দেশ, ইসলামের হাসিস গ্রন্থের নির্দেশ ও সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের নির্দেশে কতটা আকাশপাতাল তফাৎ তা প্রমাণ সহ দেখুন।


বাইবেল (খ্রিষ্টান গ্রন্থ)👇

“তোমরা তাদের দেবতাদের পূজা কিংবা সেবা করবে না এবং সেখানকার লোকেরা যা করে তা করবে না। তোমরা তাদের দেবদেবতার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলবে এবং তাদের পূজার পাথরগুলোও টুকরো টুকরো করে ফেলবে।” (তথ্যসূত্র - বাইবেল: যাত্রাপুস্তক, ২৩.২৪)


হাদিস (ইসলাম গ্রন্থ)👇

হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন 'আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। (তথ্যসূত্র - সহীহ মুসলিম হাদিস. ৮৩২)


শিবমহাপুরাণ (সনাতন ধর্ম শাস্ত্র)👇

যতক্ষণ পর্যন্ত পরমাত্মা শিবের বিজ্ঞান লাভ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিমাপূজা করতেই থাকবে। কিন্তু কোনো অজ্ঞানী ব্যক্তি যদি অজ্ঞতাবশত পরমেশ্বরের প্রতিমা পূজা না করে তবে তার পতন নিশ্চিত ॥

(শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/১২নং অধ্যায়/৬৭নং শ্লোক)

আপনি যদি সব মতবাদ কে ও সনাতন ধর্ম কে এক মনে করে মেনে চলতে চান তাহলে বলুন, আপনি প্রতিমাপূজা করবেন ? নাকি প্রতিমাপূজা হতে দেখলেই তা ভাঙচুর করবেন ? 


শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের কথা অনুযায়ী যদি সব ধর্ম এক হতো, আল্লা, গড, শিব, সবাই এক‌ই হতো, তবে খ্রিষ্টানদের বাইবেলের নির্দেশ, ইসলামের হাসিস গ্রন্থের নির্দেশ ও সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের নির্দেশে এতটা আকাশপাতাল পার্থক্য কেন রয়েছে ?

একজন সৃষ্টিকর্তা কি তার দেওয়া গ্রন্থ বা দূতের দ্বারা এক এক সময় এক এক কথা বলতে পারেন ? ঈশ্বর কি কখনো স্ববিরোধী হতে পারেন ?

না....... সৃষ্টিকর্তা কখনোই স্ববিরোধী হতে পারেন না। বরং শ্রীরামকৃষ্ণ দেব ধর্ম ও মতবাদের মধ্যে থাকা বৈশিষ্ট্য গুলির ভিন্নতা সম্পর্কে অবগত নন।


যদি কেউ ইসলামের আল্লাহর সাথে অন্য কোনো কিছুকে এক বলে প্রচার করে তবে সেটি বড় অপরাধ বলেই গণ্য হয় ইসলামের দৃষ্টিতে।


 🟪 ইসলামের দৃষ্টিতে ইসলামের পবিত্র কোরাণে,

আল্লাহ নিজে বলেছেন — আল্লাহ্ সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য, অংশীদার না করার জন্য।(কোরাণ/৪:৩৬)

যদি কেউ আল্লার সাথে অংশীদারি করে তবে সে জাহান্নামে যাবে।(কোরাণ/৫:৭২)


তাহলে এবার ভেবে দেখুন, যেখানে আল্লাহের বৈশিষ্ট্য কোরাণে বর্ণিত হয়েছে, সেই কোরাণেই আল্লাহ বলেছেন যে, আল্লাহের সাথে অন্য কাউকে এক বলে না ভাবতে, অংশীদার না করতে। এমন করলে জাহান্নামে যাবে সেই ব্যক্তি।

অথচ শ্রীরামকৃষ্ণ দেবজী কোরাণের কথা অমান্য করে ইসলামের আল্লাহকে, গড, কৃষ্ণ, শিব, ব্রহ্ম সবাইকে এক বলেছেন(অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে শরীক করেছেন)। যা কোরাণের আল্লাহর নির্দেশের বিপক্ষে চলে যায়।


♦️ সুতরাং, একারণে সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন নামের মধ্যে “ গড , আল্লা ” নাম না থাকার কারণে, ঈশ্বর কখনোই গড বা আল্লা নন। 

ইসলামের দৃষ্টিতেও, আল্লাহ, শিব-কৃষ্ণ কখনোই এক নন, বরং আলাদা ।



🔷 ৩ 🔷

শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বলেছেন — হিন্দু বলছে জল, খ্রীষ্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, কিন্তু বস্তু এক”।


🔍 সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ ৩ —

       হ্যাঁ! জল, পানি, ওয়াটার — এর বৈশিষ্ট্য এক, কোনো পার্থক্য নেই তাই ইহা একই বস্তু বটে।


কিন্তু আল্লাহ, গড, ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য তো এক নয় ❗ তাদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। তাহলে আল্লাহ, গড, ঈশ্বর একই সত্ত্বা হয় কিভাবে ? এনারা একজন হয় কিভাবে ?

উদাহরণ হিসেবে বলছি, সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে জল এবং অ্যাসিড কে একই বস্তু বলে মনে হয়। কারণ, জল‌ও তরল আবার অ্যাসিডও তরল । কিন্তু অ্যাসিড আর জলের তফাৎ না বুঝে অ্যাসিড কে জল মনে করে পান করলে মৃত্যু অবধারিত।


♦️ সুতরাং , শ্রীরামকৃষ্ণ দেবজীর এই জল, পানি, ওয়াটার -এর যুক্তি এখানে খাটে না। সনাতন ধর্মের ঈশ্বর এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণের আল্লা, খ্রিষ্টানের দৃষ্টিকোণের গড ভিন্ন ভিন্ন — এটিই প্রমাণিত।


🔷 ৪ 🔷

শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বলেছেন — “নদী নানাদিক ধরে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়”।


🔍 সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ ৪ —

     কিন্তু নদী পথ ধরে যেমন কখনো চন্দ্রে পৌছাতে পারে না। নদী পথ ধরে সাগরে পৌছানো যায় আর চন্দ্রে পৌছাতে হলে আকাশ পথে যেতে হয়। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে পৌছানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথের অনুসরণ করতে হয়।

সেরকম ভাবেই যদি কোনো সম্প্রদায় অংশীবাদীদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুট করা; অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা করে তাদের স্ত্রী দের যৌন দাসী হিসাবে ব্যবহার করা; অন্য সম্প্রদায়ের আবাসভূমি এবং উপাসনালয় ধ্বংস করার জন্য যে মতবাদ নির্দেশ দেয় এধরণের ঘৃণ্য মতবাদ বা পথ অনুসরন করে কখনো পরমাত্মার সান্নিধ্য পাওয়া যায় না।

পরমেশ্বরকে প্রাপ্ত করবার জন্য সত্যের পথ অবলম্বন করতে হয়, অসত্যের পথে পরমেশ্বরকে লাভ করা যায় না ।


🔷 ৫ 🔷

শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বলেছেন — “সকল মত পথ, ঈশ্বরের দিকে লয়ে যায় — যতমত ততপথ — কালী খ্রিষ্ট গড আল্লা সব এক — সর্বধর্ম সমন্বয়”।


🔍 সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ ৫ —

    সকল মত পথ কখনোই ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায় না, একমাত্র সত্যের পথ ই ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায়, অসত্য দ্বারা তৈরি মোহাচ্ছন্ন মতের পথে কখনোই ঈশ্বর লাভ হয় না। 

  ধরুন, কেউ যদি মনে মনে ভাবে মানুষকে মারধর করে, হত্যা করে, শিশু-নারীদের লাঞ্ছিত তথা ভোগ করে, অন্যের জায়গাজমিকে জোর করে লুটপাট করে নেয়, এমন মতের পথ অনুসরণকারী ব্যক্তি কি কখনো ঈশ্বর লাভ করতে পারে ?

এই নৃশংস মতের পথ কে ত্যাগ করে সত্যের পথে চলতে হবে তবেই সেই ব্যক্তি ঈশ্বর লাভ করতে পারবে, কারণ সত্যের পথেই ঈশ্বর লাভ হয়, অসত্যের পথে নয়।

তাই, যতমত তত পথ — আর যত মত তত‌ই বিপদ, কারত মতাদর্শ মানুষের তৈরি, পরমসত্য মানুষের তৈরি নয়

 একারণেই,

 যত‌ই মত হোক, সনাতন ই একমাত্র পথ, সনাতন অর্থাৎ সত্যের পথ‌ই ঈশ্বর লাভের পথ, বিভিন্ন মতের মধ্যে অসত্য মত‌ও থাকে, সেই অসত্য মত কখনোই ঈশ্বর লাভের পথ হতে পারে না


আজকালকার, রামকৃষ্ণ মিশনের অনুসারীরা দাবী করতে পারে যে , শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জী যতমত ততপথ বলতে খ্রিষ্টানদের যীশুগডের পথ, ইসলামের আল্লার পথ প্রভৃতি অসনাতনীদের মতপথের কথা বোঝাননি, তিনি সনাতন ধর্মের বিভিন্ন মতের পথের কথা বুঝিয়েছেন।


আমি সেই সমস্ত রামকৃষ্ণ মিশনের অনুসারীদের বলছি, তাই যদি হয়, তাহলে এটা কি ? বলুন👇



যতমত ততপথ বলতে শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জী — সনাতন ধর্মকেই, খ্রিস্টান রিলিজিয়নকেই, ইসলাম দ্বীনকে‌ই এক একটি মত বলে চালিয়েছেন, তথা সনাতন ধর্মের দ্বারাও ঈশ্বরকে লাভ করা যায়, ইসলামের দ্বারাও লাভ করা যায়, খ্রিষ্টমতের দ্বারাও লাভ করা যায় এটিই তিনি বুঝিয়েছেন নচেৎ তিনি কখনোই কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক এই কথাটি দাবী করতেন না। 

ধামাচাপা দেবার জন্য রামকৃষ্ণ দেবের অনুসারীরা বলে থাকেন যে, 

  শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জী যতমত ততপথ বলতে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন মতের কথা বুঝিয়েছেন, অথচ তাদের চালাকি ধরা পড়ে যায় - “যতমত ততপথ ” -এর পরবর্তী উক্তি “কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক” এর মাধ্যমে।

আবার কিছু রামকৃষ্ণ অনুসারীরা বলবে যে, আসলে  “কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব একবলার মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণ চেয়েছিলেন খ্রিষ্টান, মুসলিমদের কনভার্ট করে সনাতনী বানাতে।


অথচ, এই “কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক” উক্তির দোহাই দিয়ে জাকির নায়েকের মতো অপপ্রচারকারীরা সনাতনী হিন্দুদের মুসলিমে কনভার্ট করে চলেছে।

 মুসলিম রা বলছে, সব‌ই যদি এক হয় তাহলে, এসো কোরাণ পড়ো, গোমাংস খাও, আল্লাহর ইবাদত করো, নবী মুহাম্মদ কে রাসূল মেনে নাও।

এবার সনাতনীদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কি এসব করবেন ? 

আপনারা সনাতনী হয়ে দেবতার পূজার্চনা ত্যাগ করে ইসলামের পরিপন্থী হয়ে চলবেন ?

কেননা কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক বলেছেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব, 

সব মতের সব পথেই সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায় বলেছেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব, তাহলে কি এখন সনাতনীরা দেবপ্রতিমাপূজা ছেড়ে, শৈবআগম বেদপুরাণ ছেড়ে বাইবেল কোরাণ পড়বে ??


 সনাতনীদেরকে বিপজ্জনক এই একটি উক্তির উপর নির্ভরশীল করিয়ে তাদেরকে ধর্মান্তরিত করবার মতো পথে ঠেলে দিচ্ছে ।


এবার শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের অনুসারীরা বলুক — সনাতন ধর্মের মধ্যে কোথায় বলা আছে গড, আল্লা আর কালী এক ❓

আসলে, এসব সনাতন ধর্মের কোনো শাস্ত্রের কোথাও লেখা নেই । তবুও “কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক” — এই দ্বিতীয় উক্তিটিকে না দেখার ভান করে “যতমত ততপথ” নামক প্রথম উক্তিকে সনাতন ধর্মে গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণ করবার জন্য সর্বোচ্চ প্রয়াস করতে থাকে শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জীর অনুসারীরা। যা বৃথা প্রয়াস মাত্র ।


যাই হোক এবার আসি, 

                    সর্বধর্ম সমন্বয় -এর বিশ্লেষনে।


  সনাতন ধর্মের গুরুপদে বসে থাকা আজকালকারের কিছু তথাকথিত গুরুরা, কিছু হিন্দু নেতারা যে সর্বধর্মসমন্বয়ের কথা বলে বেড়ায় যা সর্বথাই অসত্য ও প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

আমি প্রমাণ করে দেখাবো যে, এনারা যে বলেন,


        """ পরমেশ্বর একজন‌ই, তার কাছে পৌঁছে যাওয়ার বিভিন্ন রকম পথ রয়েছে, সমস্ত পথের দাঁড়ায় সেই অদ্বিতীয় পরমেশ্বর এর কাছে পৌঁছানো সম্ভব, প্রেম ভক্তি দিয়ে সেই ঈশ্বরকে নিজের ইচ্ছে মতো যে কোনো নামেই ডাকা যায়। সমস্ত ধর্ম গুলি সমান, ঈশ্বর শিব কৃষ্ণ আল্লাহ গড রাম রাসূল সব এক ।

তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রকমের কথা বলেন, যেমন — 

গান্ধী জী বলেছেন -“ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম”, 

শ্রী রামকৃষ্ণ দেব জী বলেছেন — “যত মত তত পথ, কালী খ্রিষ্ট গড আল্লা সব এক”, 

ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন — “নবী মুহাম্মদ ছিলেন একজন ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি, তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শাক্তাবেশ অবতার, 

শ্যামসুন্দর শ্রীকৃষ্ণকেই কোরানে ভগবান বলে স্বীকার করা হয়েছে”   """"""" 

                                   ইত্যাদি ইত্যাদি এই ধরণের মন্তব্য গুলো শুধুমাত্র হিন্দু সনাতনীদের মধ্যে থেকে কিছু লোক দাবী করে চলেছে, আর আজকাল কারের কিছু অন্ধ বিশ্বাসীরা শাস্ত্র অধ্যয়ন না করেই সেই কথাগুলো অন্ধের মতো মান্য করে চলেছে ।

  অথচ কোনো প্রকৃত খ্রিষ্টান বা প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি এইধরণের কথা বলেও না, মান্য করা তো দূরের কথা । শুধুমাত্র হিন্দু সনাতনীদের মধ্যে থাকা এমন কিছু মস্তিষ্কশূণ্য উদারপন্থীদের মধ্যেই এই সর্বধর্ম সমন্বয়ের মতো উদ্ভট সাম্যবাদ নিয়ে মাতামাতি করতে দেখা যায়।

 সর্ব ধর্ম সমন্বয়কারী, সর্বধর্মে সমদর্শী শ্রী রামকৃষ্ণদেব, মুসলিম পীর সাঁইবাবা, অনুকুল ঠাকুর ইত্যাদি এই চরিত্রগুলো শুধু সনাতনী হিন্দুদেরই আদর্শ হয়ে আছে।

 হিন্দু সনাতনীদের দেরই কিছু তথাকথিত ধর্মগুরু এবং কিছু হিন্দু নেতাদের দেখা যায় গীর্জায় গিয়ে খ্রীষ্টানদের সঙ্গে যীশুর সামনে প্রার্থনা করতে। রামকৃষ্ণমিশন সহ আরো অনেক কে দেখা যায় বড়দিন পালন করতে।

বহু সনাতনীকে দেখা যায় মাজারে গিয়ে প্রার্থনা করতে, সম্মান জানাতে, মাজারে পশু উৎসর্গ করতে। ইসকনকে দেখা যায় ইফতার পাটির আয়োজন করতে; এভাবে ধর্মীয় সীমারেখা মুছে দেবার চেষ্টা করতে শুধুমাত্র সনাতনী হিন্দুদেরকেই দেখা যায়। সর্ব ধর্ম সমন্বয় করার মহান দায়িত্ব যেন শুধু সনাতনী হিন্দুদেরই মাথার উপর রয়েছে।


অথচ, 

অন্যদিকে, পৃথিবীর অন্য দুটি বিরাট সম্প্রদায় খ্রিস্টান ও মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে, তাদের মতামত কি চলুন দেখে নি ই।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী ইসলামে বলা হয়েছে যে,

একমাত্র “আল্লাহ” ছাড়া আর অন্য কোনো উপাস্য নেই, যারা আল্লাহ্ স্থানে অন্য কারো উপাসনা করে তারা মুশরিক। ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, আল্লাহ্ একমাত্র সত্য দ্বীন। আল্লাহ্ কাছে পৌঁছনোর একমাত্র পথ হচ্ছে ইসলাম। আর কেউ ইসলাম দ্বীন ব্যতীত অন্য কোন মার্গ গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না। 

আল্লাহকে কোরাণে বর্ণিত নাম ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকা যায় না। মুসলিমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো মার্গকে দ্বিন বলেই স্বীকার করেন না। অন্য মার্গের অনুসারীকে কার্যতঃ মানুষ বলেই স্বীকার করেন না। যারা ইসলাম গ্রহণ করে না তারা অবিশ্বাসী, সীমা লঙ্ঘনকারী(কাফের)। তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। জগতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা আর প্রত্যেককে মুসলমানে পরিণত করাই তাদের উদ্দেশ্য। - ইহা কোরাণের‌ই বক্তব্য, যারা সহিহ মুসলিম, তারা কখনোই কোরাণের নির্দেশের বিপক্ষে যাবেন না। যারা কোরাণের নির্দেশ মানবে না তারা মুসলমান ই নন। 

মুসলমানদের কোনো মৌলানা, হুজুর ভুল করেও কখনো সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে না।

 যদি কোন মৌলানা বলে “ধর্ম সবই সমান, ঈশ্বর আর আল্লা, রাম-রসূল সবাই এক” তবে তিনি যত বড় মৌলানা হোক না কেন, মুসলমানদের যতই প্রিয় হোক না কেন, এই কথা বলার সাথে সাথেই মুসলমানরা তাকে “মোনাফেক”(বিশ্বাসঘাতক), “মুরতাদ”(ইসলাম ত্যাগী) বলে আখ্যা দেবে।

 সব চেয়ে বড় কথা হল, সেই মৌলানার ঘাড়ে তার নিজের মাথা থাকবে কিনা সেটাই সন্দেহ ❗

 কোনো প্রকৃত মুসলমান নেতাকে, মৌলানাকে কোনো মন্দিরে গিয়ে পূজা দিতে, দেবপ্রতিমার সামনে মাথানত করে প্রণাম করতে, প্রার্থনা করতে, কেউ কি কোনো দিন দেখেছেন? নিশ্চয় দেখেননি। 


সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা শুধু হিন্দুদের মধ্যে থাকা কিছু তথাকথিত ধর্মগুরুরাই বলতে পারে।


খ্রিষ্টানরাও মুসলমানদের মতোই এক‌ই নীতি অবলম্বন করে। তারাও কখনো বলে না যীশু আর শিব এক কিন্তু এই কথা শুধুমাত্র কিছু অজ্ঞ হিন্দুরাই বলে। 

খ্রিষ্টাণদের বাইবেলের মতানুসারে, সব মানুষ জন্মপাপী। জন্ম নেবার পর যে নবজাত শিশুকে খ্রিষ্টমতে শুদ্ধিস্নান করানো হয় না। তার নরকযন্ত্রণা অবধারিত। যীশুর আশীর্বাদ ছাড়া কেও গডের সান্নিধ্য পাবেন না ও heaven যেতে পারবেন না। 

 

 ইসলাম দ্বীন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় তাদের জন্মকাল থেকেই সর্বদা অন্য মার্গ অবলম্বনকারী মানুষদেরকে ছলে-বলে-কলে-কৌশলে নিজেদের মতবাদের অন্তর্গত করবার মতো কাজ করে এসেছে। তাঁদের মতবাদ প্রচারও নিজেদের বিস্তারে নিয়োজিত রয়েছে। 

ফলে তাদের মতবাদের জন্মলগ্ন থেকে ২ হাজার বছরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এবং ১৪০০বছরের মধ্যে ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় হিসেবে আজ দাড়িয়ে পৃথিবীর উপর দাড়িয়ে আছে। উভয় সম্প্রদায়ই নিজেরা নিজেদের নীতিতে সু-সংগঠিত। নিজ নিজ মতবাদ প্রচার ও বিস্তার ঘটানো তাদের প্রধান কর্মসূচির অঙ্গ। উভয় সম্প্রদায়ের প্রচারকরা সংগঠিত শক্তি ও অর্থের ক্ষমতার দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তেই তাঁদের মতবাদ বিস্তারে সচেষ্ট হয়ে চলেছেন। 


ইসলামের প্রবর্তক নবী হজরত মোহম্মদ সামরিক শক্তিতে শক্তিমান হয়ে ঘোষণা করেছিলেন ইসলামের দ্বীন একমাত্র সত্য। পৃথিবীর সব মানুষকে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। মুসলিমরা তাদের সন্তানকে, শিশু বয়স থেকেই শিখিয়ে দেয় “কে তাদের বন্ধু এবং কে তাদের শক্র”।


 ইহুদী-নাসারা, মুশরিকরা(পৌত্তলিক), কাফের(অবিশ্বাসী), সর্বপ্রকারে প্রতিটি অমুসলিম সম্প্রদায় মুসলমানদের শত্রু। যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না তারাই মুসলমানদের শত্রু। ইসলাম বলে এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই। 

  

  কিন্তু হিন্দু সমাজে এমন কোন নীতি নেই। একারণে অজ্ঞানের বশবর্তী হয়ে বর্তমানের তথাকথিত হিন্দুগুরুরা শেখায় — সব ধর্ম সমান, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই, কেউ সনাতনী হিন্দুদের শত্রু নয়। তাই সনাতনী হিন্দুরা অসনাতনীদের কাছে সব চেয়ে সহজ শিকার।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “অতএব যদি মুসলমান মারে আমরা পড়ে পড়ে মার খাই তবে জানব, এ সম্ভব করেছে শুধু আমাদের দুর্বলতা। আমার প্রতিবেশীদের কাছে আপীল করতে পারি তোমরা ক্রুর হইও না, তোমরা ভাল হও, নর হত্যা উপরে কোন ধর্মের ভিত্তি হতে পারে না। -কিন্তু সে আপীল দুর্বলের কান্না” (রবীন্দ্রনাথ রচনাবলী, জন্ম শত বার্ষিক সংস্করণ, ত্রয়োদশ খণ্ড, পৃ-৩৫৬)


আমি ইসলামের আকর গ্রন্থ কোরান বারবার পড়ে, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি। ভেবে পাই না কি করে এইসব তথাকথিত সনাতনী গুরুরা খ্রিষ্টান বা ইসলামকে সনাতন বৈদিক ধর্মের সমার্থক বলে ❓


 এই সমস্ত ব্যক্তিদের “সব ধর্মইতো সমান” এমন নির্বোধ ও উন্মাদের মতো বক্তব্য শুনে বিস্মিত হয়ে যাই......

হিন্দু সমাজের মধ্যে সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী তথাকথিত সনাতনী হিন্দু-ধর্মগুরুরা এবং হিন্দু-রাজনৈতিক নেতারা হয় খ্রিষ্টানদের ও ইসলামের গ্রন্থগুলি পড়ে দেখেন নি, অথবা খ্রিষ্টানদের ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না।


অথবা তারা সব কিছু জেনে বুঝেও প্রতারণা করবার জন্য এমন সব দাবীর আশ্রয় নিয়েছেন । এনারা অর্থহীন প্রলাপ বকতে থাকেন আর এইসব ভিত্তিহীন জনপ্রিয়তার পুজি নিয়ে অন্নসংস্থান করে। নয়তো তারা কাপুরুষতার এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, প্রকৃত সত্য কথা বলার সাহস পর্যন্ত তারা হারিয়ে ফেলেছেন। খ্রিষ্টানদের বা ইসলামের মান্যতার সত্যতা তুলে ধরার মত বুকের পাটা তাদের নেই। সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে এরা তৃপ্তিবোধ করেন। তাদের মধ্যে একটাও পিতার পুত্র নেই যিনি প্রকৃত সত্য তুলে ধরবেন। তারা এখন ম্লেচ্ছ যবনদের মতবাদের পদলেহনকারী দালালে পরিণত হয়েছেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আজ সনাতনীরা সনাতন ধর্মের প্রকৃত নির্দেশ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। সনাতন ধর্মীরা বিপথগামী হয়ে পড়েছে। সনাতনীরা বর্তমানে সনাতন ধর্মের নামে যা অনুসরণ করে চলেছে, তাকে সনাতন ধর্ম বললে সত্যের নাশ হয়ে যায়।

 

  সনাতন ধর্মের সেই সাহস ও বীরত্ব তেজসম্পন্ন বাণী, সম্পূর্ণরূপে ভুলে গিয়ে অধিকাংশ সনাতনীরা পরিণত হয়েছে কাপুরুষে।

তথাকথিত সনাতনী ধর্মগুরুরা বলে “ধর্ম সবই সমান।”

কিন্তু ইসলাম কি বলে সেটা জানেন ?

 ইসলামের প্রধান গ্রন্থ‌ পবিত্র কোরান কি বলে‌? 

জানেন ❓

জেনে নিন ইসলামের দৃষ্টিতে ইসলামের পবিত্র কোরাণে বলা হয়েছে,

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।(কোরাণ/৩:১৯)

কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে অন্য কোন মার্গ গ্রহণ করতে চায়, তবে সেটা কি আল্লাহ গ্রহণ করবেন? উত্তর হল — না! 

কেননা ইসলামের আল্লাহ বলেন…

আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন(ধর্ম) গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল(গ্রহণ) করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (কোরাণ/৩:৮৫)

অর্থাৎ একমাত্র ইসলাম দ্বীনের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে পৌঁছানো যায় অন্য কোন মার্গ বা মতে নয়।

তাহলে এক-একটি ধর্মের মত এক-একটি পথ। সব ধর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানো যায়; তাদের এই ধরণের বক্তব্য গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারন হিন্দু ধর্মের মাধ্যমে কখনো আল্লাহ্ কাছে পৌছানো যাবে না, আল্লাহর কাছে পৌছাতে হলে একমাত্র ইসলামকে গ্রহণ করতে হবে। একি ভাবে ইসলামের মাধ্যমে কখনো ঈশ্বর, ব্রহ্ম, বিষ্ণু, শিবের কাছে যাওয়া যাবে না । কারণ, কোরানের আলোকে অন্য সব মার্গ মিথ্যা। সর্ব ধর্ম সমন্বয়কারীরা এ কথা গুলো বলার মাধ্যমে তারা যে নিজেদের কে একটা মূর্খ ও

নির্বোধ তথা ভণ্ড হিসাবে প্রমাণ করে । 

কেননা,

ইসলামের পবিত্র কোরানে সবচেয়ে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে “শির্ক” এর জন্য, যা এমন এক পাপ, আল্লা কখনো ক্ষমা করেন না, শির্কের কোন ক্ষমা নেই। 

তোমরা আল্লাহ্ ইবাদত কর ও কোন কিছুকে তার শরীক করো না।(কোরাণ/৪:৩৬)
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর তাঁর থেকে ছোট যাবতীয় গুনাহ যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করে দেবেন, আর যে কেউ আল্লাহ সাথে শির্ক করে সে ভীষণ ভাবে পথ ভ্রষ্ট হয়। (কোরাণ/৪:১১৬)
এবং আল্লাহ সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সবকিছুই ধ্বংসশীল, কেবল আল্লাহ সত্তাই ব্যতিক্রম। শাসন কেবল তাঁরই এবং কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। (কোরাণ/২৮:৮৮)
আপনার রব-এর কাছ থেকে আপনার প্রতি বা ওহী হয়েছে আপনি তারই অনুসরণ করুন, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুশরিকদের (মূর্তিপূজারিদের) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। (কোরাণ/৬:১০৬)
কি এই শির্ক? যে পাপের জন্য আল্লা কখনো ক্ষমা করবেন না বলেছেন।
মুশরিক কারা?
তাঁর অর্থাৎ আল্লাহ্ পরিবর্তে তারা অর্থাৎ মুশরিকরা নারীমূর্তিকে ডাকে অথার্ৎ লাত, উযযা, মানাত ইত্যাদি নারী মূর্তিসমূহের উপাসনা করে। এবং তারা প্রতিমা পূজায় শয়তানের আনুগত্য করে বিদ্রোহী অর্থাৎ অবাধ্য শয়তানকেই অর্থাৎ ইবলীসকেই ডাকে অর্থাৎ এসব প্রতিমা পূজার মাধ্যমে মূলত: শয়তানেরই তাঁরা উপাসনা করে। (তাফসীর জালালাইন: প্রথম খণ্ড, সূরা নিসা-৪, আয়াত-১১৭, পৃষ্ঠাঃ ৮৯৫)


 শির্ক অর্থ হচ্ছে আল্লাহ সাথে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু বা কারো ওপর আল্লাহ্ ক্ষমতা আরোপ করা বা আল্লাহ্ শরীক করাকে আরবি ভাষাতে শিরক(শির্ক) বলে।

 আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ অর্থাৎ হুকুম দাতা বা উপাস্য বলে মনে করাও শিরক। আর যে শিরক করে সে মুশরিক। দেবদেবীদের বা মূর্তিকে আল্লাহ মনে করা শির্ক। প্রতিমা ইত্যাদির পূজাপাট শির্কের অন্তরভূক্ত। পয়গাম্বর ও ওলীদের জ্ঞান ও শক্তি-সামর্থ্যে ইত্যাদি গুণে (অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বিশেষ কে পূজা করা) আল্লাহ্ সমতুল্য মনে করাও অন্যতম শিরক।

 তাহলে আল্লাহ্ সাথে শরীক করে শিব, ব্রহ্ম বা অন্য কোন দেবদেবীকে এবং তাদের মূর্তিসমূহকে সর্বশক্তিমান মনে করে উপাসনা করা শিরক।

 শিরকের নীচে যে কোনো গুনাহ(পাপ) আল্লাহ ক্ষমা করবেন, কিন্তু শিরক কখনোই ক্ষমা হবে না। মুশরিকদের জন্য শাস্তিই অবধারিত। কাজেই চুরি করা ও অপবাদ আরোপ করা ইত্যাদি পাপ আল্লাহ স্বীয় কৃপায় ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু যে যখন রাসূলের আদেশ থেকে গা ঢাকা দিয়ে মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সাথে গিয়ে মিলিত হলো, তখন তার ক্ষমাপ্রাপ্তির সম্ভাবনাও বাতিল হয়ে যায়। আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা করাই কেবল শিরক নয়, বরং মহান আল্লাহর আদেশের বিপরীতে অন্য কারও আদেশ পছন্দ করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। শিরকের তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সৃষ্ট বস্তুকে ইবাদত(প্রার্থনা) কিংবা মহব্বত(ভালোবাসা) ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহর সমতুল্য মনে করা। মূর্তিপূজা শয়তানেরই আনুগত্য ও তাকে খুশি করার নামান্তর।

আর আল্লাহ্ সাথে শিরক বা অংশীদার করার শাস্তি হচ্ছে….
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্ অংশীস্থাপন করবে, আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তাঁর বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর এরুপ অত্যাচারীদের জন্যে কোন সাহায্যকারী থাকবে না।(কোরাণ/৫:৭২)
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে(মূর্তিপূজারীদের) যেখানে পাবে হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁঠিতে তাদের জন্য ওৎঁ পেতে থাক; কিন্তু যদি তারা তাওবাহ্ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও; নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(কোরাণ/৯:৫)
কিতাবীদের মধ্যে যারা আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস রাখে না এবং পরকালেও নয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূল যা কিছু হারাম(নিষেধ) করেছেন তাকে হারাম মনে করে না এবং সত্য দ্বীনকে(ইসলামকে) নিজের দ্বীন(ধর্ম) বরে স্বীকার করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে নিজ হাতে জিজিয়া দেয়। (কোরাণ/৯:২৯) 


অথচ কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী সর্ব ধর্ম সমন্বয়কারী ধর্মগুরুরাই হচ্ছে মহা জাহান্নামি পাপিষ্ঠ! কারন কোরানে পরিষ্কার বলা হয়েছে আল্লাহ্ সাথে কাউকে শরীক, অংশীদার না করার জন্য; কিন্তু আল্লাহ্ সাথে কৃষ্ণ, চৈতন্য, শিব কে অংশীদারি করে, এরা বলে ঈশ্বর, গড, আল্লাহ, কৃষ্ণ, শিব সব এক, একই বস্তু; তাই এরা সবাই ক্ষমা পাওয়ার অযোগ্য অপরাধী আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপনকারি মুশরিক এবং এরা সবাই ছিলেন মূর্তিপূজারী। তাই এদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। শুধু তাই নয় ইসলামের আলোকে এরা কতল(হত্যার) যোগ্য।

কোরান থেকে উপরিউক্ত তথ্য তুলে ধরার উদ্দেশ্য হচ্ছে,

   অনুকূল পন্থী সহ অন্যান্য সর্ব ধর্ম সমন্বয়কারী যত দল আছে তাদের ভণ্ডামির মুখোশ উন্মোচন করা। মুশরিক অনুকূল ঠাকুর তার চ্যালাকে দিয়ে, মনগড়া অপব্যাখ্যা দিয়ে “রাসূল গীতা” নামক বই লিখিয়েছেন, কোরানের আয়াতকে সুবিধামত ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকে হিন্দু ধর্মের সমার্থক হিসাবে দেখানোর অপচেষ্টা করে।

  প্রথম কথা হচ্ছে সে যখন ইসলামকে ঈশ্বর প্রদত্ত একটা সত্য ধর্ম বলে প্রচার করে তবে সে কেন নিজে মুসলিম হল না ? কারন ইসলামকে সত্য মানলে অন্য কোন মার্গ পালন করার কোন সুযোগ নেই। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে এরা হিন্দুদের কাছে পরোক্ষ ভাবে ইসলামের মহিমা প্রচার করে অনুকূল পন্থীরা। অথচ মন্দিরে মন্দিরে মুশরিক অনুকূল ঠাকুর কে ঈশ্বর জ্ঞানে উপাসনা করে অজ্ঞানে নিমজ্জিত থাকা কিছু সনাতনীরা। কিন্তু এরা কি চোখে দেখে না কোরানের নিদের্শ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি বিশেষকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করাও অন্যতম মহাপাপ শিরক; 

যার শাস্তি হবে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হ‌ওয়া । আর এরা দেখবেও বা কিভাবে এদের গোপন উদ্দেশ্য হচ্ছে আরব সাম্রজ্যবাদের প্রসার করা। হিন্দুদেরকে বোকা বানিয়ে নিজেদের আখের গোছানোই এই অনুকূলবাদীদের উদ্দেশ্য।

ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ দাবী করেছেন, নবী মুহাম্মদ ছিলেন একজন ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি, তিনি শ্রীকৃষ্ণের শাক্তাবেশ অবতার ছিলেন। কিন্তু ইসকন তথা প্রভুপাদ কি জানে নবী মুহাম্মদ কিভাবে দেবমূর্তি পূজাকরী, মুশরিক দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন? তারা যখন মোহাম্মদকে একজন ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি বলে মানে, কিন্তু তবে এদের উচিৎ নয় কি? মুসলমান হিসেবে নিজেদের মেনে নেওয়া ?

সমন্বয়কারী ভণ্ড ধর্ম গুরুরা বলবে যে, কোরান দেয়া হয়েছিল অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জন্য, আমাদের জন্য না। যদি তাই হয়, তবে আপনাদের সৃষ্টিকর্তা মানে আল্লাহ আবার কোরানে কেন বললেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন(ধর্ম) ইসলাম।

 এই কথা বলে মানুষের মধ্যে কেন বিবাদ সৃষ্টি করলেন? একটা মিথ্যাকে আড়াল করার জন্য আর কত মিথ্যার রচনা করবেন?

যখন কোন হিন্দু মেয়ে প্রেমের ফাঁদে পড়ে কোন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে, তখন সেই মেয়েটিকে কোন ভাবেই দোষ দেওয়া যায় না। দোষ হচ্ছে মেয়েটার পরিবার, হিন্দু সমাজ এবং তথাকথিত ধর্মগুরুদের। কারণ ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি শুনে আসছে, সব ধর্ম সমান। সব ধর্মের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব। অতএবঃ সর্ব ধর্ম সমান হলে ধর্মান্তরিত হতে অসুবিধা কোথায় আর? কাজেই এই সব ভুল কথাগুলি শুনে শুনে কোনো সনাতনী হিন্দু মেয়ে যদি, কোন মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে; এক‌ইভাবে কোন হিন্দু ছেলে যদি মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করে মুসলিম হয়; তবে দোষ দিতে হবে তাদের যারা ঐ সব মিথ্যাচার করে চলেছে।


শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে সনাতনী হিন্দুদের তেজ, শক্তি, সামর্থ্য, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, এই সব কিছুই জোঁকের মত চুষে নিয়ে সনাতনী হিন্দুদের কে আত্মরক্ষায় অসামর্থ্য, একটা নির্বোধ জাতিতে পরিণত করেছে; সর্বমতের, সর্ব ধর্ম সমন্বয়কারী গুরুরা, ভণ্ড কিছু বৈষ্ণবরা, বা ইসকনিরা; অহিংসাবাদের ভাঁওতাবাজি করা গান্ধির মত রাজনীতিবিদ, সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা। 

 

কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব যদি এক হতো, তাহলে মসজিদে গিয়ে রামকৃষ্ণদেবের অনুসারী রা কালীপূজা করে দেখাক, পারবে ?

হ্যা.... সম্প্রীতি দেখানোর জন্য গীর্জাতে বসে হরে কৃষ্ণ নাম গাইছেন ইসকনের প্রভুজী মাতাজীরা অথবা গীর্জাতে বিবেকানন্দ জীকে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন তথাকথিত মিশনবাদী গুরুরা ,যা শুধুমাত্র ভিডিও শ্যুটের জন্য‌ই মাত্র। 

 সমাজে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে বসে থাকা এমন  দুচারটে সনাতনী হিন্দু ব্যক্তি পাওয়াই যায় , যারা গরুর মাংস‌ও খায় আনন্দ করে। কিন্তু তার ঐ গরু খাওয়ার বিষয় তুলে কখনোই এটা দাবি করা যায় না যে সমস্ত হিন্দুরা গরু খায়। এমন মতিভ্রম দুএকজনেরই হয়।

ঠিক তেমনভাবেই, খ্রিস্টানদের মধ্যেও এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন পোপদের পাওয়া যায়, যারা গীর্জাতে প্রতিমাপূজকদের নামগান প্রচারের সুযোগ করে দিচ্ছে। 

এতে যে, তাদের‌ই বাইবেলের নির্দেশের বিরোধীতা হচ্ছে তা সেই গীর্জার পোপ বুঝতে অক্ষম। 

কিন্তু তা বলে সমস্ত গীর্জাতে এসব হয় না। যারা প্রকৃত মুসলমান বা খ্রিষ্টান তারা ভুল করেও প্রতিমাপূজকদের সমর্থন করবে না, এটাই সত্য কথা। 


সনাতন ধর্ম বলে হিংসা কোরো না, সহিষ্ণু হও, ক্ষমা করো, দয়া করো। কিন্তু ব্যবহারিক জগতের বাস্তবতা বর্জন করে দিব্য তুরীয় ভাব দিয়ে ধর্ম, জাতি কোনটাকেই রক্ষা করা যায় না, তার জন্য প্রয়োজন হয় কাণ্ডজ্ঞানের।

পরম সত্যের পথ অদ্বৈতবাদের অপব্যবহার করে বিভ্রান্ত অদ্বৈতবাদের ফাঁদে ফেলে সর্বধর্ম সমন্বয়বাদ প্রচার করলে তা সনাতন ধর্মের বিনাশ ঘটাবে।

অভ্রান্ত অদ্বৈতবাদ প্রচারের অভাবে আজ সনাতন ধর্মের বেহাল অবস্থা।

 সনাতন ধর্ম কখনও অন্যায়কারীদের, দুষ্কৃতীদের  ক্ষমা করতে বা তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে বলেনি। 

বরং অন্যায়কারী ও দুষ্কৃতীদের উপযুক্ত শাস্তি দেবার কথাই বলেছে।


যদি তাই না হতো, তবে ভগবান রামচন্দ্র রাবণ বধ করতেন না, আর কুরুক্ষেত্রের ময়দানে ধর্ম অধর্মের মধ্যে যুদ্ধ‌ও হতো না ।

শেষে, সকল সনাতনীদের বলছি, যারা সর্বমতের(সত্য/অসত্য) এবং সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে এরা হচ্ছে একটা প্রতারক গোষ্ঠী , এদের থেকে সাবধান থাকুন।

“যারা বলে ঈশ্বর, আল্লাহ এক, রাম, রসূল, কৃষ্ণ-শিব-কালী সব এক, বেদ, কোরান, বাইবেল সব এক। সব ধর্ম সমান তাদের থেকে সনাতনীরা সাবধান থাকবেন”

আমাদের সনাতনীদের কাছে  একমাত্র সনাতন ধর্ম‌ই সত্যের পথ, এই সত্যের পথ অবলম্বন করুন।


সিদ্ধান্ত : 

১) সনাতন ধর্মের বিপক্ষে থাকা মতবাদগুলি থেকে বিরত থাকুন । 

২) সর্বধর্ম সমন্বয় বলে কিছু হয় না, শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জীর বক্তব্যগুলি সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণের বিচারে গ্রহণযোগ্য নয় । কারণ, ধর্ম একটিই তা হল সনাতন, আর বাকি সব মতবাদ, তাই সর্বধর্ম সমন্বয় বলে কিছু হয় না । 

৩) যত মত হোক, সত্য সনাতন ই একমাত্র ঈশ্বর লাভের পথ


সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের নির্দেশ অমান্য করে কোনো সনাতনী যদি নিজের ব্যক্তিগত অন্ধভক্তি ও নিজের অজ্ঞতার উপর নির্ভর করে যেকোনো মতবাদ কে ধর্ম বলে চিহ্নিত করে “যতমত ততপথ — কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক — সর্বধর্ম সমন্বয়” -এর মতো ভ্রান্ত মতবাদ কে সমর্থন করে তবে সনাতন ধর্মের শাস্ত্র ভগবদ্গীতার মধ্যে বলা হয়েছে, 

যে ব্যক্তি শাস্ত্রের দেওয়া বিধি মান্য না করে নিজের ইচ্ছে মত কার্য করে, তিনি তো সিদ্ধিলাভ করতে পারেনই না, না সুখ পান আর না তার কোন পরমগতি হয় ॥২৩

[তথ্যসূত্র – ভগবদ্ গীতা/অধ্যায় ১৬]


সুতরাং, যারা নিজেদের প্রকৃত সনাতনী মনে করেন তারা সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের কথাকে মেনে চলুন, কোন ব্যক্তি কি বলছে সে কোন সংগঠনের হয়ে বলছে সেগুলিকে প্রাধান্যতা না দিয়ে সনাতন ধর্মের প্রাচীন শাস্ত্র কে মেনে চলুন সনাতন ধর্মের উন্নতির জন্য সনাতন ধর্মের আচার অনুষ্ঠান ও নিয়মগুলিকে অনুসরণ করুন। যা সনাতন ধর্মের সিদ্ধান্ত নয় সেই সিদ্ধান্তকে সর্বদাই পরিত্যাগ করুন ।


শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জী ছাড়াও আমাদের সনাতন ধর্মের প্রাচীন আচার্য, যেমন — গোরক্ষনাথ, রেণুকাচার্য, অভিনব গুপ্ত, মহর্ষি উপমন্যুজী, শ্বেতাচার্য, শ্রীপতিপণ্ডিতারাধ্য, মহর্ষি দধীচি, বসভান্না জী, ৬৩ জন নায়নার তিরুমুলার, মা অক্কা মহাদেবী প্রভৃতি হাজার হাজার আচার্য তথা সাধকেরা ছিলেন, তাদের অনুসরণ করুন, আপনারা নিজেদের চিন্তা চেতনা সংকীর্ণ করে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন, ঐ সংকীর্ণ মনোভাব থেকে বের হয়ে চিন্তা ভাবনা কে প্রসারিত করে আরো বাড়িয়ে তুলুন, প্রাচীন আচার্যদের বানী অনুসরণ করুন, কারণ , প্রাচীন আচার্য সাধকেরা খাঁটি সনাতন ধর্মের কথা বলতেন, তারাও সাধক ছিলেন, তারা শিবকে লাভ করেছিলেন আবার কেউ সাক্ষাৎ শিবের‌ই অবতার ছিলেন, তাই শুধুমাত্র রামকৃষ্ণ দেবের অনুসারীদের লেখা পুস্তকের কাহিনী অনুসারে শ্রীরামকৃষ্ণদেব কেই একমাত্র সাধক হিসেবে মনে করে প্রাচীন আচার্যদের বানীকে অগ্রাহ্য করে সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দেবেন না।


[বিঃদ্রঃ — শ্রীরামকৃষ্ণ দেব জী “যত মত তত পথ - কালী খ্রিষ্ট আল্লা গড সব এক - সর্বধর্ম সমন্বয়” উক্তিটি স্বয়ং নিজেই দিয়েছেন কি না তার সত্যতা জানা যায় না, রামকৃষ্ণ দেবের অনুসারীরা রামকৃষ্ণ দেবের বাণী পুস্তকে এগুলি রামকৃষ্ণ দেব বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন, এমন‌ও হতে পারে শ্রীরামকৃষ্ণ দেব কখনো এ ধরনের কথা বলেননি, কারণ প্রকৃত সাধক কখনোই পরম সত্য জানার পর এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কথা বলতে পারেন না, হতে পারে পরবর্তীতে ম্লেচ্ছ যবনরা রামকৃষ্ণ মিশনে আসবার পর এইসব কথাবার্তা রামকৃষ্ণদেবের নামে লিখে দিয়েছে। আমরা শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের নিন্দা বা অপমান করবার উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রবন্ধটি লিখিনি, যেহেতু রামকৃষ্ণ মিশনের পুস্তক থেকে এই ধরনের বক্তব্যকে রামকৃষ্ণদেবের বাণী বলে দাবি করা হয়েছে তাই সেই দাবীর ভিত্তিতে‌ই আগাগোড়া বিশ্লেষণ করেছি মাত্র। যদি সত্য সত্যই শ্রীরামকৃষ্ণ দেব এই কথা বলে থাকেন তাহলে তার এই বক্তব্য আমাদের সনাতনীদের দৃষ্টিতে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, আর যদি দাবি না করে থাকেন তবে এখানের কোনো প্রতিবাদমূলক বাক্য তার জন্য প্রযোজ্য নয়, বরং যারা শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের নামে এই কথাগুলোকে তার বক্তব্য বলে পুস্তকে এই ধরনের বক্তব্যকে ছেপে দিয়েছেন তারাই আসল দোষী]

শ্রীগুরুভ্যো নমঃ

শ্রী নন্দীকেশ্বরায় নমঃ

নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায়

শৈব সনাতনঃ ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩

হর হর মহাদেব 


🪷লেখনীতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী

🚩 কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত