🚩 সূর্য স্বতন্ত্র ভাবে সাক্ষাৎ ব্রহ্ম কদাপি নন, বরং পরমেশ্বর শিব-ই সূর্যরূপ ধারণ করেন, তাই চিৎসূর্যরূপি শিবই সাক্ষাৎ ব্রহ্ম:-

 

" স্রষ্টা ভানুর্মহাতেজা বৃষ্টীনাং বিশ্বদৃগ্ভিভুঃ 

সোঽপি সাক্ষাদ্ দ্বিজশ্রেষ্ঠাশ্চেশানঃ পরমঃ শিবঃ || ৬২ ||

স এব তেজস্ত্বোজস্তু বলং বিপ্রা যশঃ স্বযং | .... ৬৩ ||

সত্যং ঋতং তথা বাযুরম্বরং খচরশ্চ সঃ |

লোকপালো হরির্ব্রহ্মা রুদ্রঃ সাক্ষান্মহেশ্বরঃ || ৬৪ ||

সহস্রকিরণঃ শ্রীমানষ্টহস্তঃ সুমঙ্গলঃ |

অর্ধনারীবপুঃ সাক্ষাৎ-ত্রিনেত্রস্ত্রিদশাধিপঃ || ৬৪ || "

(তথ্যসূত্র- শ্রীলিঙ্গমহাপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় নং ৫৪)

অর্থ- হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! বিশ্বের নেত্রস্বরূপ মহাতেজস্বী যে ভানু (সূর্য) হতে বৃষ্টির সৃষ্টি হয়ে থাকে, তা সাক্ষাৎ পরমশিব‌‌ ঈশান-ই । তিনিই তেজস্বরূপ, তিনিই ওজ স্বরূপ, তিনিই বল ও যশ স্বরূপ তিনিই পরম সত্য , তিনিই বায়ু, অম্বর, গ্রহ, লোকপাল স্বরূপ। তিনিই সাক্ষাৎ হরি, ব্রহ্মা, রুদ্র এবং মহেশ্বর। তিনি সহস্র-কিরণের ন্যায় শোভা সম্পন্ন, তিনি অষ্টবাহু, মঙ্গলময় সাক্ষাৎ অর্ধনারীশ্বর তিনিই সাক্ষাৎ ত্রিনেত্রধারী, ত্রিদশার (জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি) অধিপতি (পরমেশ্বর শিব)।

শ্রুতিশাস্ত্র শ্রীমৎ অংশুমদ্ আগমে স্পষ্টভাবেই পরমেশ্বর শিব বলছেন - " সকলঃ সূর্যরুপস্তু নিষ্কলঃ শিব এব চ " - অর্থাৎ নিষ্কল নির্গুণ পরশিবের একটি সগুণ প্রকাশ হল সূর্য।

তাছাড়া শ্রীসাম্বপঞ্চাশিকার ২৭ নং শ্লোকের ভাষ্যে মহামাহেশ্বরাচার্য ক্ষেমরাজ এই চিৎসূর্যস্বরূপ পরমশিবের প্রতি স্তুতি জানিয়ে বলেছেন -

" হে চিদর্ক ! ব্রহ্মরন্ধ্রাবস্থিতশাক্তব্রহ্মোপলক্ষিত স্যাণ্ডস্য অন্তরীতি ধরা-মূল-মায়া-শক্ত্যাণ্ড চতুষ্টযস্য মধ্যে গৃহে স্বাত্মযোগং করোষি | ... সোমং রুপাদিপঞ্চদশাত্মকমেযং তেজসা নিজমরীচিবিস্ফুরণেন, পূর্ণামৃতং চরুমিব সাধযিত্বা -- একৈকত্র চ তত্ত্বেঽপি ষট্-ত্রিংশতত্ত্বরুপতা |... অনল উদানবহির্মুখং ... ব্রহ্মাদ্যনাশ্রিতান্ত কারণাধিষ্ঠিত ধরাদি শিবতত্ত্বান্তাধ্ববিস্ফারমযস্য জগতঃ, তস্য তর্পণং যত্তদেব বৈশ্বদেবং যাগং তেন‌ সোমেন চরুণা বিধায, তস্য সোমস্য কলাশেষং ....... অমাখ্যকলারুপং ... || 

ভাষ্যার্থ - হে চিৎ স্বরূপ অর্ক (অর্থাৎ শিবসূর্য) আপনি সাক্ষাৎ ব্রহ্মরন্ধ্রে অবস্থিত ব্রহ্মাণ্ড, প্রকৃত্যণ্ড, মায়াণ্ড ও শাক্তাণ্ড এই অণ্ড চতু্ষ্টয়ের মধ্যে অবস্থান করেন এবং আত্মযোগে রমণ করেন (বলাবাহুল্য পরমশিবই একমাত্র ব্রহ্মরন্ধ্রে  অবস্থান করেন)। প্রাণ-অপাণ স্বরূপ চন্দ্রকলামৃতকে আপনিই পূর্ণতা প্রদান করেন এবং সেই পূর্ণামৃত হতে উদান অর্থাৎ অগ্নি স্বরূপ চরুকে ৩৬ তত্ত্বাত্মক তথা ১১৮ ভুবনাত্মক জগতের নিমিত্ত তর্পণ করে বৈশ্বদেবযজ্ঞ সম্পন্ন করেন এবং অবশিষ্টাংশ‌ হুতশেষরূপি সেই অমাকলাকে নিজ চিদাকাশে বিলীন করে নেন, ইহাই অমাবস্যা। সেই এক তত্ত্বই ৩৬ তত্ত্ব রূপে ভাসিত হয়েছেন।

যেহেতু স্থূল সূর্যদেব নিজেই ৩৬ তত্ত্ব এর অন্তর্গত, সুতরাং তা হতে বিশ্বচরাচরের সৃজন ও প্রসার অসম্ভব, তাই এক্ষেত্রে চিৎ-অর্ক সাক্ষাৎ ৩৬ তত্ত্বের অতীত পরমশিবের- ই দ্যোতক।

সুতরাং সূর্য-সোমাগ্নি-লোচন পরমেশ্বর শিবই সাক্ষাৎ সূর্যমূর্তি ধারণ করেন তা প্রামাণিক শাস্ত্রের নিরিখে প্রমাণিত হল।

© লিখনে- RohitKumarChoudhury.ISSGT.2023