শালগ্রাম শিলার মতো শিবলিঙ্গকেও স্ত্রী শূদ্ররা পূজা করতে পারবে না বলে দাবী করা গোঁড়া স্মার্ত ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অপদাবীর খণ্ডন শৈবপক্ষ থেকে
👁️🗨️ শালগ্রাম শিলার মতো শিবলিঙ্গকেও স্ত্রী শূদ্ররা পূজা করতে পারবে না বলে দাবী করা গোঁড়া স্মার্ত ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অপদাবীর খণ্ডন শৈবপক্ষ থেকে —
🟫 মূল ঘটনা —
বেশ কিছুদিন আগে জাতপাতের কট্টরতায় বিশ্বাসী এক গোড়া স্মার্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যক্তি বলে বেড়াচ্ছিল যে, শালগ্রাম শিলাকে স্পর্শ করে পূজা করবার অধিকার নেই নারী ও শূদ্রদের ।
এসব দেখে তখন কিছু ব্যক্তি শৈবদের প্রশ্ন করে বলেছিল “শিবলিঙ্গ কি সবাই পূজা করতে পারে ? নারী শূদ্র সবাই কি পূজা করতে পারে ?”
এই প্রশ্নের উত্তরে শিবভক্ত শৈবরা বলেছিল যে, প্রভু শিব তো পরমব্রহ্ম, তার শিবলিঙ্গ অর্চনা যে কেউ করতে পারে, পরমেশ্বর শিবের কাছে কোনো জাতপাত নেই, তিনি দেব মনুষ্য দানব অসুর কীটপতঙ্গ পশুপাখি সবার ।
শৈবদের এই রকম কথা বলতে দেখে ব্রাহ্মণ হবার অভিমানে অহংকারী দাম্ভিক ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যক্তিরা ক্রোধে ফুঁসতে থাকে, তারা জাতপাতের ভেদাভেদের জালে পরমেশ্বর শিবের শিবলিঙ্গকেও ফাঁসিয়ে ফেলবার পরিকল্পনা করে বসে। আর সেই দাম্ভিক ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যক্তিদের মধ্যেরই একজন শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় নামক এক কাটপিস ব্রাহ্মণ্যবাদী তার সংকীর্ণ কাল্পনিক ধারণা দিয়ে পিতৃপরিচয় হীন তথ্যসূত্র হীন পুস্তক থেকে দাবী করেছিলেন যে ,
শিবলিঙ্গ নারী বা শুদ্ররা পূজার্চনা করতে পারেনা।
তখন আমাদের ISSGT-র শৈবরা পরমপবিত্র শিবমহাপুরাণ থেকে প্রমাণ করে দেখান যে,
“শিবলিঙ্গ পূজায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র নারীগণ তথা সকলেরই অধিকার আছে [তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/২১ অধ্যায়/৩৯-৪০নং শ্লোক]”
তখন শিবমহাপুরাণের বচনের নির্দেশ কে খণ্ডন করতে না পেরে সেই দাম্ভিক ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় লিঙ্গপুরাণ থেকে কিছু শ্লোকের একটি কাটপিস অর্ধসত্য অনুবাদ তুলে ধরে দেখিয়ে বলছে যে—
🔴 শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় -এর দাবী 👇
“খালি শিবপুরাণ পড়ে লাফালেই হবে না, লিঙ্গপুরাণখানাও পড়তে হবে। এটিও মহাপুরাণ -
সুত উবাচ
অথ রুদ্রো মহাদেবো মণ্ডলস্যঃ পিতামহঃ।
পূজ্যো বৈ ব্রাহ্মণানাং চ ক্ষত্রিয়াণাং বিশেষতঃ ॥১॥
বৈশ্যানাং নৈব শূদ্রাণাং শুশ্রূষাং পূজস্য চ।
স্ত্রীণাং নৈবাধিকারোহস্তি পূজাদিষু ন সংশয়ঃ ॥২॥
স্ত্রীশূদ্রাণাং দ্বিজেন্দ্রৈশ্চ পূজয়া তৎফলং ভবেৎ ।
লিঙ্গপুরাণ * উত্তরখণ্ড ২০ অধ্যায়
সূত কহিলেন, মণ্ডলস্থ পিতামহ মহাদেব রুদ্রকে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় বিশেষরূপে পূজা করিতে পারে। বৈশ্যও পূজা করিতে পারে, শূদ্র পূজা করিতে পারে না; কিন্তু শূদ্র পূজকের শুশ্রূষা করিতে পারে। পূজাদিতে স্ত্রীদিগেরও অধিকার নাই। স্ত্রী ও শূদ্রগণ ব্রাহ্মণ দ্বারা পূজা করাইলে, সেই ফলপ্রাপ্ত হয় 👈
🚫 শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য (ISSGT)-র পক্ষ থেকে উপরোক্ত দাবীর আপাদমস্তক খণ্ডন —
জয় শ্রীগুরুদেবের
জয় গণেশ
জয় পরমেশ্বর শিবের
জয় মাতা পার্বতীর
জয় নন্দীমহারাজের
♨️(১) গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় আপনি লিঙ্গপুরাণ থেকে তো লেখা আমদানি করলেন কিন্তু শিব মহাপুরাণে যেটি বলা হয়েছে সেটির বিশ্লেষণ না দিয়ে সেটিকে এড়িয়ে গেলেন কেন ?
আপনি আগে পূর্বপক্ষকে যুক্তি দিয়ে শিবমহাপুরাণের উক্ত নির্দেশকে খণ্ডন করতে পারেননি ।
সুতরাং শৈব তথা সমগ্র সনাতনীদের কাছে শিবমহাপুরাণের উক্ত বানী অনুযায়ী -
“শিবলিঙ্গ পূজায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্র নারীগণ তথা সকলেরই অধিকার আছে [তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/২১ অধ্যায়/৩৯-৪০নং শ্লোক]”
পুরাণে পুরাণে কখনো স্ববিরোধ হয় না, মীমাংসা জানলেই বোঝা যায় যে পুরাণে সব কিছুরই সাথেই সবকিছুর মিল রয়েছে। কিন্তু যারা মীমাংসা জানে না তারা কোনো যুক্তি দেখাতে পারে না শুধু এড়িয়ে যাওয়াই তাদের কাজ।
🔷 শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় আপনি প্রথম বিশ্লেষণেই ডাহা ফেল করলেন ।
♨️(২) গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় আপনি লিঙ্গমহাপুরাণ থেকে কিছু শ্লোক ও অর্ধসত্য অনুবাদ দেখিয়ে শিবমহাপুরাণের বচনকে লিঙ্গপুরাণের সাথে পরস্পর বিরোধী প্রমাণ করে নাকচ করতে চেয়েছেন, কিন্তু এটা আপনার দ্বারা সম্ভব হল না,
কারণ লিঙ্গমহাপুরাণে কোথাও সরাসরি শিবলিঙ্গ অর্চনায় নারী ও শুদ্রদের নিষেধ করা হয়নি, আপনি “শিবলিঙ্গ স্পর্শ/পূজা” প্রসঙ্গটিকে “শিব আরাধনা” প্রসঙ্গতে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন ।
এটাই চরম হাস্যকর বিষয় ও আপনার অজ্ঞতার পরিচায়ক.....
তাছাড়া আপনি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে শিব আরাধনার বিষয়টি সম্পর্কে যে একদম ধারণা রাখেন না সেটাও স্পষ্টতঃ প্রমাণিত ।
লিঙ্গমহাপুরাণের উক্ত শ্লোকটা ভালো করে পড়ে দেখুন ওখানে বলা হয়েছে “অথ রুদ্রো মহাদেবো মণ্ডলস্যঃ পিতামহঃ” — এখানে “মণ্ডলস্যঃ” শব্দটা আপনার চক্ষুতে ধরা পড়ছে কি না বলুন ???
এবার আসল অর্থটা জেনে নিন — “মণ্ডলস্যঃ” অর্থাৎ সূর্যমণ্ডলে মহাদেবকে কল্পনা করে যে পূজার্চনা করার বিধি রয়েছে তা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের জন্য বিশেষ বলা হয়েছে, অর্থাৎ এখানে সূর্যতে শিবকে কল্পনা করে অর্চনার কথা বলা হয়েছে, এই অধ্যায়ের পূর্বের অধ্যায়ে মণ্ডল -এর অর্থ সূর্যমণ্ডল হিসেবেই বলা হয়েছে। এখানে শিবলিঙ্গের কোনো প্রসঙ্গই নেই। তাহলে শিবলিঙ্গ পূজা বা স্পর্শ নারী, শূদ্র রা করতে পারবে না - এমন কথা গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় আপনি এখানে কোথায় পেলেন ?
🔷 শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় আপনি তিল থেকে তাল বানাচ্ছেন ।
কাটপিস লেখার উপর ভিত্তি করে সাধারণ ভোলাভালা সনাতনীদের ভ্রমিত করে বিভ্রান্ত করছিলেন। আপনার সেই অর্ধসত্যতাও ধরা পড়ে গেল, আপনার দাবী খণ্ডিত ।
♨️(৩) গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদীরা হয়তো বলতে পারে যে, সূর্যমণ্ডলের মধ্যে শিবকে কল্পনা করে নারী শুদ্রদের কেন পূজার অধিকার দেওয়া হয়নি , এটারও উত্তর খুব সহজ, শ্বেতবর্ণের লিঙ্গ যেমন গৃহস্থদের জন্য পূজা করা উচিত নয়, কারণ এতে বৈরাগ্য উৎপন্ন হয় ফলে সংসার থেকে বারত হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় মনে। একারণে বারণ করা হয়েছে। ঠিক তেমন ভাবেই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এভাবেই বর্ণাশ্রমীদের জন্য সূর্যমণ্ডলে মহাদেবকে কল্পনা করে পূজা করবার বিধান বর্ণাশ্রমের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় দের অধিকার দেওয়া হয়েছে নারী শূদ্রদের নয় ।
কিন্তু এর দ্বারা কোথাও নারী শূদ্রদের জন্য শিবলিঙ্গকে স্পর্শ বা পূজা করার নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয় না ।
বরং বর্ণাশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী ই শুধু সূর্যমণ্ডলে মহাদেবকে কল্পনা করে পূজা না করবার বিধান বর্ণাশ্রমের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে নারী শূদ্রদের উদ্দেশ্যে।
তাছাড়া নারীরা যদি শিবলিঙ্গ পূজার অধিকার ই না পেতো তাহলে মাতা পার্বতী কি করে শিব আরাধনা করলেন ?
”লক্ষ্মীবৃক্ষময়ং লক্ষ্মীর্গুহো(লিঙ্গপুরাণ/পূর্বভাগ/৭৪ অধ্যায়/শ্লোক ৮)”
অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবী বিল্ববৃক্ষের কাঠ দিয়ে বানানো শিবলিঙ্গ পূজা করেন। তাহলে নারীরা যদি শিবলিঙ্গ আরাধনা করবার অধিকারী ই না হতেন তবে মাতা লক্ষ্মী কি ভাবে শিব আরাধনা করলেন ?
এসবের উত্তর চাই ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কাছে।
তাছাড়া
🔰 নারীরা যে শিবলিঙ্গ পূজা করতে পারবেন সেই অধিকার শিবমহাপুরাণ দিয়েই রেখেছে,
প্রমাণ দেখুন 👇
স্ত্রীণাং তু পার্থিবং লিঙ্গং সভর্তৃণাং বিশেষতঃ ।
বিধবানাং প্রবৃত্তানাং স্ফটিকং পরিকীর্তিতম্ ॥৫১
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১৮ অধ্যায়]
♦️অর্থ — মহিলাদের বিশেষ করে সাধবাদের পার্থিব শিবলিঙ্গ পূজায় করবার বিধান রয়েছে, আর বিধবা নারীদের জন্য স্ফটিক শিবলিঙ্গ পূজায় করবার বিধান রয়েছে ।
🔰শুদ্ররাও শিবলিঙ্গ পূজা করে শুদ্ধ হতে পারে 👇
শিলালিঙ্গং তু শূদ্রাণাং মহাশুদ্ধিকরং শুভম্ ॥৪৯
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১৮ অধ্যায়]
♦️অর্থ —সুন্দর শিলার দ্বারা তৈরি শিবলিঙ্গ পূজা করলে শুদ্রগণের মহাশুদ্ধি প্রাপ্ত হয় ।
🔰শুদ্র ভীল ও ভীলনীও শিব আরাধনা করে পরবর্তী জন্মে নল দময়ন্তী হয়েছিলেন [তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/শতরুদ্রসংহিতা/২৮ অধ্যায়]
নারী ও শূদ্রদেরও উদ্ধার হয় শিব আরাধনা করে।
বরং আপনাদের মতো অহংকারী ও জাতপাত নিয়ে সনাতনীদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা উচ্ছিষ্ট তথাকথিত ব্রাহ্মণরূপী অধমদের উদ্ধার হয় না শিবপূজা করেও, কারণ আপনাদের ভাবনায় সংকীর্ণতা থাকে, ভাবনা পবিত্র না হলে পরমেশ্বর শিবের পূজা করলেও সেই দূষিত চিন্তাকরী ব্যক্তিকে পরমেশ্বর শিব দণ্ড দেন।
তাই লিঙ্গপুরাণ ই বলছে যে, 👇
উচ্ছিষ্টঃ পূজয়ন্ যাতি পৈশাচং তু দ্বিজাধমঃ ।৫
[তথ্যসূত্র — লিঙ্গমহাপুরান/পূর্বভাগ/৭৯ অধ্যায়]
অর্থ - উচ্ছিষ্ট (অপবিত্র ভাবযুক্ত) অধম ব্রাহ্মণ শিবের পূজা করে পিশাচলোক প্রাপ্ত হয়ে পিশাচ হয়ে যায় ।
🔷আশা করি এই স্পষ্ট প্রমাণ গুলো দেখার পর থেকে শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় আপনি ও আপনার গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী মহাশয়েরা নারী ও শূদ্রদেরকে শিবলিঙ্গ পূজা করবার অধিকার নিয়ে অপপ্রচার করবার দুঃসাহস দেখাবেন না ।
♨️(৪)এবার আসি... অদ্বৈত শৈব দর্শনের অনুসারী দের দৃষ্টিতে পুরাণের মধ্যে থাকা বর্ণাশ্রমের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে....
প্রথমত, আমরা অদ্বৈত শৈব দর্শনের অনুসারী শৈবরা কখনোই বর্ণাশ্রমের বিরোধীতা করিনা, কিন্তু যখন যখন বর্ণাশ্রমের নিয়মগুলি সাধারণ মানুষের জ্ঞান অর্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের অদ্বৈত শিবজ্ঞানের আলোকে আমরা সেই বর্ণাশ্রমের নিয়মকে উপেক্ষা করি। তাই যদি কেউ ভেবে থাকে যে আমরা ব্রাহ্মণদের বিরোধী, তাহলে এটা তাদের ভুল ধারণা । আমরা ব্রাহ্মণদের বিরোধী নই, ব্রাহ্মণদের আমরা পবিত্র বলেই জানি, কিন্তু ব্রাহ্মণ হবার অহংকারের বশবর্তী হয়ে যিনি নিজেই ব্রাহ্মণত্ব হারিয়ে ফেলে অন্যদের উপর জোরজবরদস্তি করবার মতো কাজ করছে আমরা সেই সমস্ত গোঁড়ামীর বিরোধী।
যাই হোক, আমরা আত্মজ্ঞান কে প্রাধান্য দিই।
স্কন্দপুরাণের সূতসংহিতার মুক্তিখণ্ডের ৫ম তম অধ্যায়ের ৯নং শ্লোক থেকে ৪৫নং শ্লোক পর্যন্ত পরমেশ্বর শিব বলেছেন , যিনি সর্বভূতে সর্বদিকে একমাত্র আমি শিবকেই দর্শন করে শিবোঽহং ভাবের স্তরে উঠে সমদৃষ্টিতে দেখেন সমগ্র জগতকে তিনিই বর্ণাশ্রমেরও ঊর্ধ্বে উঠে অতিবর্ণাশ্রমী নামে বিখ্যাত।
অতিবর্ণাশ্রমী জন্য বর্ণশ্রমের বিধিনিষেধ মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা নেই ।
বর্ণাশ্রম জীবের দেহের উপর আরোপিত হয় মাত্র, যা মূলত মায়া বা ভ্রান্ত মাত্র ।
তাই সেই আত্মজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী অতিবর্ণাশ্রমী শৈবদের কাছে পুরাণ শাস্ত্রের কোনো অংশে বর্ণাশ্রমের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলেও স্থান কাল পাত্র ভেদে তা অমান্য করবার অনুমতি রয়েছে অতিবর্ণাশ্রমী ব্যক্তির কাছে।
একারণে অতিবর্ণাশ্রমী শৈবরা অনায়াসেই যেকোনো বর্ণাশ্রমের নিয়মকে অগ্রাহ্য করতে পারে বা অন্যদেরকে এই বর্ণাশ্রমের নিয়মকে অগ্রাহ্য করবার নির্দেশও দিতে পারে তাদের জন্য পরমজ্ঞান অর্জন করবার ক্ষেত্রে। কারণ অতিবর্ণাশ্রমীরা সকলের গুরু, বর্ণাশ্রমীদেরও গুরু , অতিবর্ণাশ্রমীদের গুরু অন্যেরা হতে পারেন না। একথা শাস্ত্রের, স্কন্দপুরাণের ।
অনেক পাষণ্ড গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী হয়তো বলে বেড়াচ্ছে যে শিবমহাপুরাণে অতিবর্ণাশ্রমী শব্দটাই উপস্থিত নেই, আমি সেই সব পাষণ্ড ছিচঁকে নেংটি ইঁদুর রূপী শিয়ালপণ্ডিতের মুখে জবাব এঁটে দিলাম, শিবমহাপুরাণে অতিবর্ণাশ্রমী শব্দের উল্লেখ দেখে নিন 👇
অতিবর্ণাশ্রমী নিত্যং শিবোঽহং ভাবনাৎপরাৎ ।
শিবযোগী চ নিয়তমীশানেনাপি ধারয়েৎ ॥৩৭
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/২৪নং অধ্যায়]
অর্থ — যারা বর্ণাশ্রমের বিধিনিষেধের ঊর্দ্ধে উঠে গেছেন তারা অতিবর্ণাশ্রমী, তারা নিত্য আমিরূপী আত্মাই শিব —এমন ভাবনাতে তৎপর থাকেন, এনাদেরই শিবযোগী বলে, যারা ঈশানমন্ত্র দ্বারা ভস্ম ধারণ করে থাকেন ।
পাষণ্ড অহংকারী তথাকথিত ব্রাহ্মণের ভেক ধরে থাকা কাটপিস কপিপেষ্টজ্ঞানী ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যক্তিবর্গের মুখে আচ্ছা মতো পাদুকার নিম্নাংশ বুলিয়ে দিলাম, এরপরেও না শোধরালে এর থেকেও ১০গুণ অধিক বুলানো হবে।
তাই বর্ণাশ্রমের নিষেধাজ্ঞার নিয়মসমূহ আমাদের অদ্বৈত শৈব অর্থাৎ অতিবর্ণাশ্রমীদের জন্য কোনো গ্রহণযোগ্যতা রাখে না।
বরং লিঙ্গপুরাণ ই বলছে যে, বর্ণাশ্রমীদের উচিত হল সর্বদাই বর্ণাশ্রমের ঊর্দ্ধে যারা(অতিবর্ণাশ্রমী) উঠে গেছে তাদের সেবা করা । দেখুন 👇
তস্মাদ সেব্যা নমস্কার্যাঃ সদা ব্রহ্মবিদস্তথা ॥৩২
বর্ণাশ্রমীবিনির্মুক্তা বর্ণাশ্রমপরায়ণৈঃ ॥৩৩
[তথ্যসূত্র : লিঙ্গপুরাণ/পূর্বভাগ/২৮তম অধ্যায়]
♦️অর্থ — অতএব, বর্ণাশ্রমীদের উচিত হল সর্বদাই বর্ণাশ্রমের নিয়ম থেকে মুক্ত হয়ে বর্ণাশ্রমের ঊর্দ্ধে যারা(অতিবর্ণাশ্রমী) উঠে গেছে সেই সমস্ত ব্রহ্মবেত্তাবাদীদের নমস্কার সহ সেবা করা ॥৩২-৩৩
[বিশেষ দ্রষ্টব্য : এগুলি মনে রাখবেন 👇
✓ ব্রাহ্মণ = যিনি ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য শাস্ত্র অধ্যয়ন সহ কর্মকাণ্ড ও বর্ণাশ্রমের অন্তর্গত বিধিনিষেধ মেনে সত্যের মার্গে নিরহংকার ভাবে চলেন।
✓অতিবর্ণাশ্রমী= যিনি ব্রহ্মজ্ঞান সম্পর্কে অবগত হয়ে গিয়েছেন । বর্ণাশ্রমের বিধিনিষেধের নিয়ম থেকে মুক্ত, জ্ঞানযোগী/শিবজ্ঞানী/আত্মজ্ঞানী শৈব]
সুতরাং বর্ণবাদের গোঁড়ামী তে যারা বিশ্বাসী , যারা লিঙ্গপুরাণের উক্ত শ্লোক নিয়ে লাফালাফি করছিলেন তাদের উচিত অতিবর্ণাশ্রমী শৈবদের প্রণাম করে চরণ সেবা করা, কারণ এটা লিঙ্গ পুরাণের নির্দেশ।
তাই বলছি শুনুন গোয়ার গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদীগণ আমাদের ISSGT-র অদ্বৈতনিষ্ঠ অতিবর্ণাশ্রমী শৈবদের কাছে এসব ঠুনকো গোঁড়ামীর কারবার দেখাবার ও আমাদের উপর সেটি চাপাবার সাহস করবেন না ।
🔷 শ্রীকৃষ্ণ দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায় ও গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অপ্রচার দমন করা হল।
🌿 শেষতম ঔষধ —
প্রভু শিব নিজেই বলছেন যে তার কাছে
ভক্তিহীন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের থেকে শিবভক্ত চণ্ডাল ব্যক্তিই অতিপ্রিয় 👇
ন যে প্রিয়শ্চতুর্বেদী যদ্ভক্তঃ শ্বপচোঽপি যঃ ।
তস্মৈ দেয়ং ততো গ্রাহ্যং স চ পূজ্যো যথা হ্যহম্ ॥৭১
[রেফারেন্স - শিবমহাপুরাণ/বায়বীয়খণ্ড/উত্তরখণ্ড/অধ্যায় নং ১০]
সরলার্থ - যে আমার(মহাদেবের) ভক্ত নয়, সে চারবেদের পারঙ্গম বিদ্বান ব্রাহ্মণ হলেও আমার প্রিয় নয়। কিন্তু যে আমার ভক্ত সে চণ্ডাল হলেও আমার প্রিয়। তাকে উপহার দেয়া উচিত, তার থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে নেওয়া উচিত, সে আমার মতোই পূজনীয় ॥৭১
সিদ্ধান্ত- শিবভক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিই পরমেশ্বর শিবের অতি প্রিয় । একজন শিবভক্ত প্রভু শিবের মতোই পূজনীয় ব্যক্তি।
তাই শিবের ভক্তি যদি কারোর হৃদয়ে জন্মায় তাহলে সে যেই হোক (বর্ণাশ্রমের বিচার অনুসারে) নারী হোক বা শূদ্র হোক বা চণ্ডাল হোক, সে শিব আরাধনায় সর্বদাই অধিকারী ।
পরমেশ্বর শিব সবার, তার আরাধনা করবার অধিকার দুনিয়ার সকল ভক্তদের আছে ।
🔥 শিবলিঙ্গ অর্চনায় নারী ও শূদ্রদের নিষেধাজ্ঞা দেবার অপপ্রয়াস ব্যর্থ করে দেওয়া হল আমাদের শৈব পরম্পরা ও ISSGT-র পক্ষ থেকে । শিবলিঙ্গ পূজার অধিকার সবার, কোনো বাধা নেই ।
ISSGT -র বক্তব্য হল সনাতন ধর্মের মধ্যে কোনো জাতপাত নেই, সামাজিক ব্যবস্থার জন্য ক্ষেত্র বিশেষে বর্ণাশ্রম মান্য, কিন্তু যিনি আত্মজ্ঞান/ব্রহ্মজ্ঞান সম্পর্কে অবগত হয়েছেন তার জন্য বর্ণাশ্রম নিয়মের প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরা ব্রাহ্মণ বিরোধী নই, ব্রাহ্মণ অতি পবিত্র হয়ে থাকেন, প্রকৃত ব্রাহ্মণ কখনোই অহংকারী হন না, নিরহংকার ভাবই ব্রাহ্মণের বৈশিষ্ট্য, কিন্তু যারা নিজেদের ব্রাহ্মণ বলে দাবী করে অহংকারী হয়ে নিজেদেরকের সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবী করে মানুষকে শুদ্র চণ্ডাল নারী বলে অপমানিত করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অদ্বৈতবাদী শৈবরা।
তাই আমাদেরকে ব্রাহ্মণ বিরোধী বা বর্ণাশ্রম বিরোধী ভেবে বসবেন না । যদি ভাবেন তাহলে এটা আপনাদের বুদ্ধির অভাবের পরিচয় হবে।
অপপ্রচারকারী গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বলছি, আমাদের ISSGT -র শৈবদের সাথে দ্বন্দ্ব করবার আগে হাজার বার ভাবনা চিন্তা করে আসবেন, নচেৎ আপনাদের আপাদমস্তক খণ্ডন বারংবার করা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও করা হবে।
কোনো জাতপাত মান্যকারী গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদীর যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে আমার এই লেখা খণ্ডন করে দেখান। নচেৎ হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকুন ।
আমরা ভালোর সাথে ভালো ব্যবহার করি,
অপপ্রচারকারীদের সাথে কড়া ব্যবহার করি ।
জাতপাত ভুলে সমস্ত সনাতনী ভাইবোন এক হও ।
শিবজ্ঞান লাভের নিমিত্তে নিত্য শিবের নাম লও ।।
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
🚩অপপ্রচার দমনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য
©️কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
#ISSGT
🟣 মূল পোষ্ট পড়ুন এখানেও 👇
https://issgt100.blogspot.com/2024/03/Everyone-has-the-right-worship-Shivlinga.html
#ব্রাহ্মণ্যবাদেরখণ্ডন
#অতিবর্ণাশ্রমী
#অতিবর্ণাশ্রম
#বর্ণাশ্রম
#শৈব
#নন্দীনাথশৈব
[ This post is only for Public Awareness ]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন