বৈষ্ণবেরা শ্রীহরির কৃপায় শিবভক্তি লাভ করে শৈব হবার পর অন্তিমে শিবকৃপায় মোক্ষলাভ করে

 

Vishnu gives Shiv bhakti

ভূমিকা

আজকাল দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু ও পন্ডিতেরা বলে বেড়াচ্ছে যে, শিবের নাম করলে নাকি সে তার ভক্তদের কৃষ্ণভক্তি বা রাধা ভক্তি প্রদান করেন।

অথচ এই কথার কোন শাস্ত্রগত ভিত্তি নেই, কোন শাস্ত্রে এমন কথার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

কিন্তু শাস্ত্রে ঠিক এরই বিপরীত কথা বলা হয়েছে।

শাস্ত্র বলছে,  যিনি প্রকৃত রূপে ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত বৈষ্ণব, সেই বৈষ্ণব ব্যক্তির ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে শ্রী হরি বিষ্ণু তার ভক্তকে শিব ভক্তির মার্গ প্রদর্শন করে শৈব হবার নির্দেশ দেন।

স্কন্ধ মহাপুরাণের সূত সংহিতা/যজ্ঞবৈভবখণ্ড/২৫ তম অধ্যায়ে এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, 

দেখে নিন 👇


ভগবান বিষ্ণুর শিবভক্তি প্রদান

প্রাচীনকালে সত্যসন্ধ নামের একজন ব্রাহ্মণ ছিল ।

শুভ আচার তথা শুদ্ধ চিত্ত সম্পন্ন সেই উত্তম বিপ্র শাস্ত্রীয় বিধিবিধান অনুসারে কর্ম করতেন ভক্তিভাব সহকারে ।

তিনি ভগবান বিষ্ণু কে প্রতিষ্ঠা করে তথা প্রতিদিন পুষ্প আদি দ্বারা আরাধনা করতেন ॥৩-৪


বৈষ্ণব মন্ত্র জপ করতেন, শ্রদ্ধাপূর্বক বৈষ্ণব তীর্থগুলির দর্শন করেছিলেন তিনি। 

যারা বৈষ্ণব ব্যক্তি ছিলেন সেই সমস্ত বৈষ্ণবদের পূজা সেবা করতেন, এমনকি তিনি নিজের সর্বস্ব শ্রীবিষ্ণুর কাছে সমর্পিত করে দিয়েছিলেন। তার প্রতি প্রসন্ন হয়ে শঙ্খ চক্র গদাধারী শ্রীবিষ্ণু তাকে দর্শন দিলেন। ভগবান শ্রী বিষ্ণুকে দেখে সত্যসন্ধ অত্যন্ত আনন্দিত হলেন, তারপর তিনি প্রণাম করে নিজের সামর্থ্য অনুসারে পুনরায় ভগবান শ্রী বিষ্ণুর স্তুতি করলেন ।


সূতজী বললেন — সত্যসন্ধ এভাবে স্তুতি করবার পর ভগবান শ্রী বিষ্ণুকে বললেন, হে দেব ! আমার উপর কৃপা করে ভববন্ধন থেকে আমাকে চিরকালের মতো মুক্তি দিয়ে দিন। 

ভগবান জনার্দন, যিনি সম্যগ্ জ্ঞানের অথৈ সাগরস্বরূপ, সেই শ্রীহরি গম্ভীর বাণী দ্বারা সত্যসন্ধকে মার্গ দর্শন করবার জন্য বললেন —

শ্রীবিষ্ণু জী বললেন — হে সত্যসন্ধ ! তুমি আমার শ্রেষ্ঠ ভক্ত, সত্য পরায়ণ, শৌত-স্মার্ত ধর্মাচরণের উপর নিষ্ঠা স্থাপনকারী ও উত্তম নিশ্চয়কারী (ভাবনাকারী) ।

এখন তুমি এটা জেনে রাখো যে, সংসার সাগরে ডুবতে থাকা ব্যক্তিদের আমি সরাসরি মুক্তি দিতে সক্ষম ন‌ই । ব্রহ্মা আদি অন্য দেবতারাও কেউই এই কাজ করতে একা সমর্থ নন ।


এটি করবার জন্য আমাদের সবাইকে যার কৃপার ওপর নির্ভর করতে হয় তিনি হলেন সেই একমাত্র প্রভু শিব। যিনি সংসারের সমস্ত জীবেদের সরাসরি মুক্তি প্রদান করেন অন্য কারোর সহায়তা ছাড়াই। 

বস্তুতঃ সেই ঈশ্বর সাম্বসদাশিবের স্থূল বা সূক্ষ্ম কোন শরীর নেই, না ওনার সমান কেউ আছে না ওনার থেকে অধিক কেউ আছে। 

এই ত্রিশূলধারী মহাদেবের শক্তি বিবিধ আকার সম্পন্না । তার জ্ঞান, বল ও ক্রিয়া তিনটি সর্বথা স্বতন্ত্র(অর্থাৎ শিব কারোর আদেশে কাজ করেন না, নিজের ইচ্ছায় করেন)। 

আমার (বিষ্ণুর) তথা ব্রহ্মা আদির মধ্যে যে জ্ঞান সমূহ রয়েছে তা মূলত সেই শিবের কৃপার দ্বারাই হয়েছে। অত‌এব, তিনিই একমাত্র ভাবমোচক মুক্তিদাতা। 

আমি বিষ্ণু তথা ব্রহ্মা আদি দেবতারা সেই শিবের কৃপাপ্রপাকতারূপ দ্বারের মাধ্যমে মোক্ষপ্রদানকারী বলে পরিচিত হয়েছি মাত্র ॥৪৪

শিবের থেকে প্রাপ্ত প্রসাদ(কৃপা) ই সাক্ষাৎ মোক্ষের হেতু, তিনি সত্য আদি স্বরূপ সম্পন্ন। সংসারের প্রভাব কখনো তাকে প্রভাবিত করে স্পর্শ করতে পারে না। অতএব তিনি সর্বদাই শুদ্ধ, আসক্তিরহিত তথা সবার সাক্ষী মাত্র। অম্বিকা সহিত সেই সর্বজ্ঞদেবের থেকে প্রাপ্ত হওয়া প্রসাদই মোচক বলে গণ্য, অন্য কারোর প্রসাদ নয় ॥৪৫-৪৬

আমার তথা ব্রহ্মা আদি দেবতার যে প্রসাদ(কৃপা) ভোগ বা মোক্ষ দিয়ে থাকে, তা মূলত এই শিবেরই ইচ্ছার দ্বারা ই সম্ভব হয় ॥৪৭

আমাকে অর্থাৎ বিষ্ণুর সহিত অন্য সমস্ত দেবতার কৃপা মূলত শিবকৃপার উপর নির্ভর করেই ভোগ বা মোক্ষ দিতে সমর্থ্য হয় ।

অতঃ হে প্রিয় সত্যসন্ধ !  পরমেশ্বর শিবের সম্পূর্ণ কৃপা পাবার জন্য তুমি করুণাময় মহাদেবের ভজন করো ॥৪-৯

মহাদেব কে ভরসা করলে তোমার ইচ্ছা অবশ্যই সিদ্ধ হবে, কারণ শিবের আমার (বিষ্ণুর) মত অন্য কোন অবলম্বনের আবশ্যকতা নেই ॥৫০

মহেশ্বর নামতঃ আর অর্থতঃ উভয় দিক থেকেই মহান দেব বলেই গণ্য, অন্যদিকে আমরা (বিষ্ণু সহ)সব দেবতারা সবাই তো দেব, কিন্তু মহান নয় ॥ ৫১

যিনি মহাদেব কে আরাধনা না করেই কেবলমাত্র আমার অর্থাৎ বিষ্ণুর আরাধনা করেন তার কোটি কোটি জন্মেও সংসার চক্র থেকে মোক্ষ লাভ হয় না ॥৫২

এইভাবে আমি তোমাকে মোক্ষ লাভের উপায় বলে দিলাম । অতএব তুমি অন্য সবাইকে ছেড়ে শুধুমাত্র সাম্ব-সদাশিবের ভজনা করো ॥৫৩


সূত জী বললেন — 

এইভাবে সত্যসন্ধ কে নির্দেশ করে গরুড়ধ্বজ শ্রীহরি অন্তর্ধান হয়ে গেলেন ॥৫৪ বিষ্ণু কৃপায় সত্যসন্ধ‌ও অন্য সমস্ত দেবতাদের ছেড়ে একমাত্র ঈশ্বরের স্মরণ নিলেন ॥৪৪

ঈশ্বর প্রসাদের দ্বারা তার বেদান্ত জ্ঞানপ্রাপ্ত হল আর তিনি ভব বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে গেলেন। আপনারা সবাই অন্য সমস্ত দেবতাদের ছেড়ে অব্যয় শিবের ই প্রসাদ(কৃপা) প্রাপ্তি করবার জন্য ভজন করুন ॥৫৭

[তথ্যসূত্র - স্কন্দ পুরাণ/সূত সংহিতা/যজ্ঞবৈভবখণ্ড/২৫ তম অধ্যায়]


বিশ্লেষণ : 

♦️ পরমেশ্বর সদাশিব‌ই যে বৈষ্ণবদের‌ও অন্তিম গতি, সেটির প্রমাণ শিবমহাপুরাণের থেকে প্রমাণ দেখুন, পরমেশ্বর ভগবান রুদ্রদেব নিজেই বিষ্ণুজীকে বলেছেন, যে👇 

ত্বদ্ ভক্তানাং ময়া বিষ্ণো দেয়ং নির্বাণমুত্তমম্ ॥২৩

[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/রুদ্র সংহিতা/সতীখণ্ড/২৫ অধ্যায়]

অর্থ - হে বিষ্ণু ! আমি (অর্থাৎ শিব) তোমার ভক্ত বৈষ্ণবদের‌ও উত্তম মোক্ষ প্রদান করবো ।


♦️ এবার দেখুন শিব মহাপুরাণে বলা হয়েছে যে, সব দেবতার ভক্তি সম্পন্ন হলে অন্তিম জন্মে সেই দেবতার কৃপায় শিবভক্তি লাভ করে জীব শিবভক্তি করে শিবকে লাভ করে মোক্ষ প্রাপ্তি করে মুক্ত হয়ে যায় । পরমেশ্বর শিবকে লাভ করলে আর অন্য কোনো দেবতার কাছে যেতে হয় না, করণ শিব‌ই অন্তিম গতি। প্রমাণ 👇 

অন্যং ভজন্তি যে নিত্যং তস্মিংস্তে লীনতাং গতাঃ ।

তেনৈব রুদ্রং তে প্রাপ্তাঃ কালেন মহতা বুধাঃ ॥১৬ রুদ্রভক্তাস্তু যে কেচিত্তৎক্ষণং শিবতাং গতাঃ ।

অন্যাপেক্ষা ন বৈ তেষাং শ্রুতিরেষা সনাতনী ॥১৭

[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/কোটিরুদ্রসংহিতা/অধ্যায় ৪২]

সরলার্থ - যে সমস্ত ব্যক্তি অন্য দেবতাকে নিত্য ভজনা করেন তারা সেই দেবতাতেই লীন হয়ে বহু সময় অতীত হলে অবশেষে সেই দেবতার মাধ্যমে পরমেশ্বর শিব কে প্রাপ্ত করার সৌভাগ্য লাভ করেন। কিন্তু যারা শিবভক্ত তারা ওই সময়েই সরাসরি শিবতত্ত্ব কে প্রাপ্ত করে নেন কেননা তাদের অন্য কোন দেবতার প্রয়োজন পড়ে না, ইহাই সনাতন শ্রুতি ॥১৬ – ১৭


♦️ আবার, শিব মহাপুরাণে ই ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু জী নারদকে বলেছেন যে, 👇

অদ্যত সত্বং ভব মুনে শৈবঃ শিবপরায়ণঃ ।

মুক্তিভাগী বিশেষেণ শিবস্তে শং বিধাস্যতি ॥৭৫

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ রুদ্রসংহিতা ১ম খণ্ড/৪নং অধ্যায়]

অর্থ - হে নারদ মুনে ! আজ থেকে শিবারাধনা করে শৈব হয়ে যাও এবং বিশেষ মুক্তি হিসেবে মোক্ষের ভাগী হও, পরমেশ্বর শিব তোমার কল্যাণ করবেন ॥৭৫


♦️বৈষ্ণবেরাও অন্তিম গতি পাবার জন্য শিবের মার্গেই উপনিত হয়ে তবেই মোক্ষলাভ করতে পারে, অর্থাৎ বৈষ্ণব হোক বা যে কোনো মতবাদের অনুসারী ব্যক্তি হোক, সকলেই মোক্ষলাভের জন্য শেষপর্যন্ত পরমেশ্বর শিবের কাছেই এসে পড়ে, পুষ্পদন্ত রচিত শিবমহিম্ন স্তোত্র থেকে প্রমাণ 👇

ত্রযী সাঙ্খ্যং যোগঃ পশুপতিমতং বৈষ্ণবমিতি

প্রভিন্নে প্রস্থানে পরমিদমদঃ পথ্যমিতি চ .

রুচীনাং বৈচিত্র্যাদৃজুকুটিল নানাপথজুষাং

নৃণামেকো গম্যস্ত্বমসি পযসামর্ণব ইব ॥ ৭

[তথ্যসূত্র — পুষ্পদন্ত রচিত শিবমহিম্ন স্তোত্র]

 অর্থ — ঋগ্বেদ-যজুর্বেদ-সামবেদ ইত্যাদি ত্রয়ী, সাংখ্যশাস্ত্র, যোগশাস্ত্র, অবৈদিকধারার পাশুপতমত, বৈষ্ণবমত আদি বিভিন্ন মার্গ আছে, এর মধ্যে (তারা সবাই বলে) আমাদের এই মার্গটিই উত্তম, আমাদের মার্গ ই লাভপ্রদ(অন্য গুলি নয়)। এই প্রকারে বলতে থাকা সাধকদের জন্য হে শিব আপনিই একমাত্র প্রাপ্তব্য(গন্তব্য) মোক্ষদাতা আছেন। যেমন সোজা ও বাঁকা পথে বয়ে চলা সমস্ত নদীই অন্তিমে সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছে যায়, সেই ভাবেই সমস্ত প্রকারের মতানুসারীগণেরা অন্তিমকালে হে শিব আপনার কাছেই পৌঁছায়।


🔥 সিদ্ধান্ত — ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু হলেন পরমশিবভক্ত শৈব শিরোমণি। তিনি তার ভক্তদের ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে তাদের মুক্তি পাইয়ে দেবার জন্য শৈবমার্গের পথ দেখিয়ে দেন ।  কারণ, প্রকৃত বৈষ্ণব হবার পর শিবভক্ত শৈব হতে হয় জীবকে, এই জন্য শাস্ত্রে বলা হয়েছে বৈষ্ণবদের থেকেও শৈব রা শ্রেষ্ঠ। 

লিঙ্গ পুরাণ থেকে প্রমাণ দেখুন 👇 

বিষ্ণুভক্ত সহস্রেভ্যো রুদ্রভক্ত বিশিষ্যতে ।

রুদ্রভক্তাৎপরতরো নাস্তি লোকে ন সংশয়ঃ ॥২০

[তথ্যসূত্র — লিঙ্গমহাপুরান/উত্তরভাগ/৪ নং অধ্যায়]


✅ অর্থ — বিষ্ণুভক্তের থেকে হাজারগুণ অধিক শ্রেষ্ঠ হল একজন শিবভক্ত শৈব । 

কিন্তু শিবভক্ত শৈবদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই ।


🔥 সিদ্ধান্ত — সনাতন ধর্মের শাস্ত্র লিঙ্গ মহাপুরাণ বলছে যে, বৈষ্ণবদের চেয়ে শিবভক্ত শৈব -রা হাজার গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ, কারণ শৈবরা সনাতন ধর্মের প্রকৃত পরমসত্য শিবকেই অনুসরণ করেন, বৈষ্ণবেরা অদ্বৈত শৈব জ্ঞানকে স্বীকার করেন না বরং ভেদাভেদ করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। যেহেতু শৈবরা সকল দেবদেবীকে অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিবেরই বিভিন্ন রূপ বলে স্বীকার করে একতায় বিশ্বাসী, তাই ভেদাভেদকারী বৈষ্ণবদের থেকে শৈবদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছে স্বয়ং শাস্ত্র নিজেই।

এই এক‌ই কথা সৌরপুরাণের ১১তম অধ্যায়ের ৯নং শ্লোকে বলা হয়েছে।

বৈষ্ণবানাং সহস্রেভ্যঃ শিবভক্তো বিশিষ্যতে ॥৯

[তথ্যসূত্র - সৌরপুরাণ/অধ্যায় নং ১১]


☘️ সরলার্থ - পরমেশ্বর মহাদেব বললেন, এক হাজার বৈষ্ণবের থেকে একজন শিবভক্ত শৈব শ্ৰেষ্ঠ ॥


তাই, অন্তিম জন্মে শৈব হতেই হবে , কারণ এই শৈব হবার পথ‌ই সব পথের শেষে একমাত্র অন্তিম চরণের মার্গ। এই মার্গ দ্বারা পরমেশ্বর শিবকে লাভ করা সম্ভব, শৈব মার্গে পৌঁছে শিবকে লাভ করলে আর কোনো কিছু পাবার জন্য শেষ থাকে না, কারণ শিব‌ই অন্তিম গতি। শিবের পর আর কিছু নেই। 

অন্য দেবতার ভক্তদেরও অন্তিমে শিবই পরম গতি, একথা শিবমহাপুরাণ বলছে, প্রমাণ দেখুন 👇

অন্যং ভজন্তি যে নিত্যং তস্মিংস্তে লীনতাং গতাঃ ।

তেনৈব রুদ্রং তে প্রাপ্তাঃ কালেন মহতা বুধাঃ ॥১৬

রুদ্রভক্তাস্তু যে কেচিত্তৎক্ষণং শিবতাং গতাঃ ।

অন্যাপেক্ষা ন বৈ তেষাং শ্রুতিরেষা সনাতনী ॥১৭

[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/কোটিরুদ্রসংহিতা/অধ্যায় ৪২]

☘️ সরলার্থ — যে সমস্ত ব্যক্তি অন্য দেবতাকে নিত্য ভজনা করেন তারা সেই দেবতাতেই লীন হয়ে বহু সময় অতীত হলে অবশেষে সেই দেবতার মাধ্যমে পরমেশ্বর শিব কে প্রাপ্ত করার সৌভাগ্য লাভ করেন। কিন্তু যারা শিবভক্ত তারা ওই সময়েই সরাসরি শিবতত্ত্ব কে প্রাপ্ত করে নেন কেননা তাদের অন্য কোন দেবতার প্রয়োজন পড়ে না, ইহাই সনাতন শ্রুতি ॥১৬ – ১৭

সিদ্ধান্ত - বৈষ্ণব হোক বা শাক্ত, গাণপত্য হোক বা সৌর সকলেই অন্তিমে শিবে বিলীন হন, যেহেতু তারা অন্য দেবতার ভক্ত তাই তারা প্রথমে তাদের আরাধ্যতে লয় হবার পর অন্তিমে শিবে বিলীন হন, কারণ, শিবই অদ্বিতীয় পরমেশ্বর। কিন্তু যারা শিবভক্ত শৈব তারা যেহেতু সরাসরি সেই পরমেশ্বর শিবের ভক্ত তাই তারা অনায়াসেই শিবে লীন হয়ে শিবপ্রাপ্ত করেন, এটি চিরন্তন সত্য বেদবাক্য।


তাই ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু যে তার ভক্ত বৈষ্ণব সত্যসন্ধকে শিবভক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছেন , তা শাস্ত্রসম্মত ও যুক্তিপূর্ণ ।


🚩অপপ্রচার দমন ও সত্য প্রকাশে : শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য 

©️কপিরাইট ও প্রচারে : International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

ত্রিপু্রোৎসব দীপপ্রজ্জ্বলন রীতি – স্কন্দমহাপুরাণোক্ত