বেদে কি হরি ও শিবকে কে সমান হয়েছে ❓

In the Vedas, Hari and Shiva are said to be one?


♦️ বেদে কি হরি ও শিবকে কে সমান হয়েছে ❓

Who is equal to Hari and Shiva in the Vedas?


✅ উত্তর : বেদ-পুরাণ শৈবাগম সম্পর্কে না জেনে আজকাল কিছু সনাতনী ব্যক্তিরা ই দাবী করছে যে পুরাণে নাকি ভেদাভেদ আছে, একেক পুরাণে এক এক দেবতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা আছে, আর বেদ যেহেতু সর্বোপরি, তাই বেদে কোনো ভেদাভেদ করা নেই, সব দেবতাকেই সমান বলা হয়েছে । 


এখন মজার বিষয় হল, যারা বেদ কখনো চোখেও দেখেনি, সেই সমস্ত জনতা আন্দাজে বেদ সম্পর্কে মন্তব্য করে স্বপ্ন দেখে আর এসব কাল্পনিক আবেগের বশে 'বেদে সব দেবতা সমান  বলা আছে' — এমনটা ধারণা করতে থাকে।


আজ সেই পরমপবিত্র বেদ থেকেই এসব হাস্যকর দাবীকে অলীক কল্পনা প্রমাণ করবো।


🔶দেখুন ! ঋগ্বেদ সংহিতার অন্তর্গত ‘আশ্বলায়ণ শাখা ও খিলভাগের’ -র মধ্যে বলা হয়েছে 👇 


পরাৎপরতরো ব্রহ্মা তৎপরাৎপরতো হরিঃ । তৎপরাৎপরতো হ্যেষ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥ ১৮  

[ঋগ্বেদ/আশ্বলায়ণশাখা/১০/১৭১/শিবসংকল্পসূক্ত]

এবং (ঋগ্বেদ সংহিতা/খিল ভাগ /৪/১১)


অর্থ — সর্বোপরি হলেন ব্রহ্মা । তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হরি এবং এনাদের চেয়েও যিনি পরমতম তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ঈশ’ ( ঈশান/ঈশ্বর/সদাশিব) সেই শিবের প্রতি মন সংকল্পিত হোক ।


🔶এবার দেখুন ! এই এক‌ই মন্ত্রকে আরো বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে

 অথর্ববেদে শরভ উপনিষদের মধ্যে 👇 


পরাৎপরতরং ব্রহ্মা যৎপরাৎপরতো হরিঃ ।

পরাৎপরতরোঃ ঈশঃ তস্মাৎ  তুল্যোঽধিকো ন হি ॥২৯ 

(শরভ উপনিষদ/২৯নং মন্ত্র)


সরলার্থ – যিনি পরাৎপর ব্রহ্মা, তাঁর থেকেও অধিক পরাৎপর হলেন হরি। কিন্তু হরির থেকেও অধিক যিনি পরাৎপর তিনিই হলেন ঈশ(সদাশিব), সেই প্রভু শিবের সমান তথা তাঁর চেয়ে অধিক কেউ নেই ,কারণ শিবই সর্বোচ্চ সত্ত্বা পরমব্রহ্ম।


▶️ দেখুন, বেদ বলছে শিবের চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কেউ নেই  👇 


অর্হন্ বিভৰ্ষি সায়কানি ধন্বার্হন্ নিষ্কং যজতং বিশ্বরূপম্ ।

অর্হন্নিদং দয়সে বিশ্বমভ্বং ন বা ওজীয়ো রুদ্র ত্বদস্তি ॥১০॥

[ঋগ্বেদ/২য় মণ্ডল/৩৩নং সূক্ত]

🔥 অর্থ – হে দুঃখকে রোদন করানোর কর্তা প্রভু শিব ! তুমি বাণ ও ধনুক ধারণ করে থাকেন,

হে পূজনীয় প্রভু ! আপনিই বহুরূপে একমাত্র বিশ্বরূপধারী।আপনিই সমস্ত বিশ্বভুবনের রক্ষাকর্তা, আপনার চেয়ে অধিক বলবান কেহই নেই ॥১০


▶️ দেখুন, বেদ বলছে পরমেশ্বর শিব হলেন সকল দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ পরমেশ্বর তিনিই।


যঃ শুক্র ইব সূর্যো হিরণ্যমিব রোচতে।

শ্রেষ্ঠো দেবানাং বসুঃ ॥ ৫ ॥

[ঋগ্বেদ/১ম মণ্ডল/৪৩ সূক্ত]

🔥 সরলার্থ – প্রভু রুদ্র সূর্যসম দীপ্তিমান এবং স্বর্ণসম উজ্জ্বল প্রভাযুক্ত, তিনি সকল দেবতার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভু, তিনি‌ই সকলের একমাত্র মাত্র আশ্রয়, তাই তার মধ্যে সকলে নিবাস করেন ॥৫॥ 


আশা করি, আকাট বোধহীন কিছু জনতা বেদের এই বচন গুলোকে নির্দ্বিধায় মেনে নেবেন।


যদি  "শ্রীহরির চেয়েও পরমতম হলেন শিব" বেদের এই বচন দেখেও কেউ না মানতে চায়, তাহলে সে সনাতনী ই নয়, সে হল শ্রেষ্ঠ পাষণ্ড ও অধার্মিক ।


আমাদের আদি সনাতনী শৈব দর্শন অনুসারে, প্রভু শিব‌ই শ্রীবিষ্ণুরূপ ধারণ করে পালন কার্য করছেন(অথর্বশির উপনিষদ/২/২), 

ব্রহ্মারূপ ধারণ করে প্রভু শিব‌ই জাগতিক সংসার সৃজন করছেন(অথর্বশির উপনিষদ/২/১), আবার রুদ্র রূপ ধারণ করে সংহার করছেন। 

বিভিন্ন দেবতার রূপে প্রভু শিব‌ই প্রকাশমান(অথর্বশির উপনিষদ/২/১-৩৩)।

তাই সকল রূপে এক প্রভু শিব‌ই সব দেবতার রূপে যেহেতু কার্য করছেন শাস্ত্রে প্রভু শিবকে ই একমাত্র পরমেশ্বর ঘোষনা করা হয়েছে, বেদ‌ও তাই ই বলছে । প্রভু শিবের বিভিন্ন কার্যগত রূপ গুলি স্থায়ী নয়, যেমন পালন করবার জন্য পরমেশ্বর শিব বিষ্ণু রূপ ধারণ করছেন, কার্য শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই বিষ্ণু রূপটি শিবেই বিলিন হয়ে যায়, ফলে অন্তিমে শুধুমাত্র এক পরমেশ্বর শিব ই থাকেন । দ্বিতীয় আর কেউ থাকেন না। তাই কার্যগত রূপ গুলি যেহেতু অনিত্য অর্থাৎ স্থায়ী নয়, তাই সেই বিষ্ণুরূপ বা ব্রহ্মা রূপকে সাক্ষাৎ পরমেশ্বর বলে ঘোষণা করা হয়নি, যেহেতু পরমেশ্বর শিব একমাত্র নিত্য তার কোন উৎপত্তি বা বিলীন হয় না, তাই প্রভু শিব কেই এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর বলে ঘোষণা করা হয়েছে বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রে ।


🔹অথর্ববেদের 

শরভ উপনিষদে বলা হয়েছে 👇 


এক এব শিবো নিত্যস্ততোহন্যসকলং মৃষা ।

তস্মাৎসর্বাপরিত্যজ্য ধ্যেযান্বিষ্ণবাদিকারান্ ॥ ৩০

(শরভ উপনিষদ/৩০নং মন্ত্র)


সরলার্থ – শিবই একমাত্র নিত্য, অন্য সকল কিছুই মিথ্যা। এই কারণে বিষ্ণু সহ সকল দেবতাকে পরিত্যাগ করে শিবকেই ধ্যেয় বলে জানা উচিত ॥ ৩০


যারা শাস্ত্র সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবগত নয়, তারা ভগবান বিষ্ণুকে পরমেশ্বর হিসেবে অস্বীকার করতে দেখলে এটা মনে করে বসে যে, বিষ্ণুকে অপমান করা হচ্ছে।


 যদি সত্যিই বিষ্ণুকে অপমান করা হয়ে থাকতো, তাহলে বেদে সরাসরি ভগবান বিষ্ণুকে ধ্যানের যোগ্য কেন বলা হয়নি ?

কেন বেদে ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু সহ অন্যান্য সকল দেবতাদের ধ্যানের অযোগ্য ও অনিত্য বলা হয়েছে ?


কেন ভগবান বিষ্ণুর থেকেও শ্রেষ্ঠ একমাত্র পরমেশ্বর শিব - এটা ঘোষণা করেছে স্বয়ং বেদ নিজে ?


এ কথার উত্তর এইসব শাস্ত্র জ্ঞানহীন জনতা দিতে পারেনা। তারা শুধু নিজেদের আবেগের বশবর্তী হয়ে মূঢ় মস্তিষ্কের অল্প বুদ্ধির রোগী আক্রান্ত হয়ে সামনে-পেছনে কিছু না ভেবে আমাদের শৈব সনাতনীদের দোষারোপ করতে থাকে।


কিন্তু আমরা বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রের থেকে প্রমাণ তুলে দেখিয়ে তবেই পরমেশ্বর শিব কে সর্বশ্রেষ্ঠ দাবি করি। সেটা তারা বুঝতে অক্ষম, অথবা অনেকেই আছেন যারা আমাদের দেওয়া সমস্ত শাস্ত্র প্রমাণ দেখবার পরেও সত্য টা স্বীকার করতে কোনমতেই রাজি নন। 


কিন্তু আমরা শৈবাগম, বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত অনুসারেই চলেছি, এখনো চলছি আর চিরকাল চলবো।

যারা বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রের নির্দেশিত পথে চলেন, তারাই ধার্মিক, তারাই প্রকৃত সনাতনী। 

আর যারা নিজেদের আবেগের বশবর্তী হয়ে শৈবাগম, বেদ ও অন্যান্য শাস্ত্রের নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের মনমর্জি মতো চলেন, তাদের কোনো গতি হয় না। শেষকালে তাদের জন্য চরম দুর্ভোগই অপেক্ষা করছে।

সেই সমস্ত অবোধ জনতার জন্য আমি প্রার্থনা করি, পরমেশ্বর দক্ষিণামূর্তি শিবের কাছে, যাতে এ ধরণে ব্যক্তিদের সকলের পরম জ্ঞান লাভ হয় ।


শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


🔥অপপ্রচার দমনে - শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য 


©️ কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 


#ISSGT #সদাশিব #শৈবধর্ম #হরি #সনাতনধর্ম #বেদ #শিবসংকল্পসূক্ত #পরমেশ্বরশিব #শিব #হরিহর #শরভ‌উপনিষদ #নন্দীনাথশৈব

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ