নৃসিংহের দাঁতের মধ্যেই শরভ অবতার সীমাবদ্ধ — বলে দাবী করা নকল রামানুজী বৈষ্ণবদের চরম খণ্ডন



সমগ্র বাংলাতে দীর্ঘ শতক ধরে বৈষ্ণবদের দ্বারা দীর্ঘকালীন শিবনিন্দার পর অবশেষে মহাপাশুপত শৈব গুরুপরম্পরার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রুরুভৈরব দ্বারা মহামান্য দয়াল অবধূত শৈবাচার্যের প্রৌপুত্র শ্রীগুরু কাশীনাথ শৈবাচার্য জীর আদেশে শৈবধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে শ্রীনন্দীনাথ শৈব অর্থাৎ আমি ISSGT -র সৃজন করি, যার উদ্দেশ্য হল - পরমেশ্বর শিবের মাহাত্ম্য প্রচার, শিব ও ধর্মের নামে যারা অপপ্রচার করে তা খণ্ডন করে সত্য সনাতন ধর্মের সম্মান বজায় রাখা ও জীবরূপী শিবের সেবা করা।

সেই উদ্দেশ্য সফল করবার জন্য আমি বৈষ্ণবদের দ্বারা প্রচারিত পরমেশ্বর শিবের নামে বিভিন্ন কটুক্তিকে খণ্ডন করি। কিন্তু তারপর তারা এর উত্তর হিসেবে তারা আমাকে ব্যক্তিগত জীবনের উপর আক্রমণ করে এবং হাস্যকর কিছু উপযুক্তি দিয়ে পুনরায় দাবী করে যে পরমেশ্বর শিব পরম তত্ত্ব নন। তাই আমি এদের সেই সমস্ত অপপ্রয়াসকে পুনরায় খণ্ডন করতে প্রবৃত্ত হলাম।


সবার প্রথমে রামানুজ আচার্যের অনুসারী নব্য বৈষ্ণবেরা যে চিত্র সহ কটুক্তি করেছে তা প্রথমে তুলে ধরা হলো , তারপর শৈবপক্ষ থেকে তার আগাগোড়া খণ্ডন করা হয়েছে। 


🚫 নব্য রামানুজী বৈষ্ণবদের দাবি —

 ভগবান নারায়ণ সকলের আশ্রয় স্বরূপ। সেরকম শ্রী নৃসিংহ ভগবান ব্রহ্মা, রুদ্র, শরভ, ইন্দ্র, সরস্বতী ইত্যাদি দেব-দেবীগণের আশ্রয়স্থল স্বরূপ। সকল দেবতাগণ নৃসিংহদেবের দেহে আশ্রিত। 


(শরভ নৃসিংহদেবের দাঁতে আশ্রিত। নৃসিংহদেবের একেকটা দাঁত একেকটা শরভের তুল্য। দাঁতে আশ্রিত উপদেবতা শরভ কখনও পরমেশ্বর শ্রী নৃসিংহের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতাই রাখে না।) 



______________________________________________

🔥 শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্যের দ্বারা রামানুজ পন্থার নব্য অনুসারী বৈষ্ণবদের দাবীর খণ্ডন —

শ্রীগুরুবে নমঃ 

নমঃ শিবায় ॥

(১) বৈষ্ণবেরা যে দাবী করেছে যে, 

নার নামক জলে শায়িত নারায়ণ হল সকলের আশ্রয়, আর তার মধ্যেই সকলে বাস করেন।

খণ্ডন — চলুন, দেখে নেওয়া যাক ঐ নারায়ণ রূপে আসলে কে শায়িত হয়ে লীলা করছেন তা মহাভারত থেকে উদ্ধৃতি দিই।

• মহাভারতে সরাসরি জলে শায়িত নারায়ণকে মহাদেব বলে উল্লেখ করা হয়েছে 👇

সংভক্ষ্য সর্বভূতানি যুগান্তে পৰ্য্যুপস্থিতে ৷

যঃ শেতে জলমধ্যস্থস্তং প্রপদ্যেঽম্বুশায়িনম্ ॥১০১

[মহাভারত/শান্তিপর্ব/২৭৭ অধ্যায়]

অর্থ — প্রলয়কাল উপস্থিত হলে, যিনি সমস্ত ভূতকে উদরস্থ করে জলের মধ্যে শয়ন করেন, সেই জলশায়ী নারায়ণরূপী মহাদেবের শরণাপন্ন হয়েছি ॥১০১॥


সুতরাং নারায়ণের মধ্যে সব দেবদেবী বা সমগ্র জগত বাস করার অর্থ তা মহাদেবেই বাস করাকে বোঝায়। কারণ মহাভারত বলছে যে, নারায়ণরূপে যিনি জলে শায়িত তিনি মহাদেব‌ই স্বয়ং, অন্য কেউ নন। মহাদেব নারায়ণ রূপ ধারণ করেছেন মাত্র। তাই সকল কিছু‌ই, সকল দেবতা ই শিবের মধ্যে বসবাস করেন, শিব‌ই সকলের আশ্রয় । শব্দপ্রমাণ দেখুন 👇 

ধূম্ররূপঞ্চ যত্তস্য ধূর্জটিস্তেন চোচ্যতে।

বিশ্বে দেবাশ্চ যত্তস্মিন্ বিশ্বরূপস্ততঃ স্মৃতঃ ॥১০৮ 

(তথ্যসূত্র — মহাভারত/দ্রোণপর্ব/সপ্তত্যধিকশততোহধ্যায়)

অর্থ — যেহেতু তার (মহাদেবের) বর্ণ ধূম্রবর্ণ সেই জন্য তিনি ' ধূর্জটি ' এবং যেহেতু সমস্ত লোক ও দেবতা তার (মহাদেবের)মধ্যে থাকেন তাই তিনি(মহাদেব) বিশ্বরূপ নামে পরিচিত ॥১০৮

 মহাভারতে স্বয়ং ব্যাসদেব বলছেন, পরমেশ্বর শিবের মধ্যে সমস্ত লোক এবং সমস্ত দেবতা থাকেন।এই কারণেই মহাদেব স্বয়ং জগৎস্বরূপ বিশ্বরূপ। ধূর্জটি হল মহাদেবের আরেক নাম ।

তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নারায়ণ বলতে মূলত পরমেশ্বর শিবকেই নির্দেশ করা হয়েছে শাস্ত্রে, আর সমস্ত লোক তথা দেবতারাও যে শিবের মধ্যেই স্থিত , সেটিও প্রমাণিত হল ।

সুতরাং, এখানে বৈষ্ণবদের নারায়ণ সর্বাশ্রয়বাদ খণ্ডিত হল, পরমেশ্বর শিব‌ই সর্বাশ্রয় প্রমাণিত হল ।


এবার আসি বৈষ্ণবদের পরবর্তী দাবীর বিষয়ে, 

(২) বৈষ্ণবদের দাবী অনুযায়ী,

নৃসিংহের মধ্যে ভগবান ব্রহ্মা, রুদ্র, শরভ, ইন্দ্র, সরস্বতী ইত্যাদি দেব-দেবীগণের আশ্রয়স্থল স্বরূপ। সকল দেবতাগণ নৃসিংহদেবের দেহে আশ্রিত। 


খণ্ডন — চলুন, দেখে নেওয়া যাক কার দেহে আশ্রিত সকল কিছু , বেদ বলছে, 👇

মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্‌ মায়িং চ মহেশ্বরম্ ।

তস্যবয়বভূতৈস্তু ব্যাপ্তং সর্বমিদং জগৎ ॥ ১০ 

[তথ্যসূত্র : কৃষ্ণ-যজুর্বেদ/শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/৪অধ্যায়]

✅ অর্থ — বিদ্যা প্রকৃতি হল সাক্ষাৎ মায়া। সেই মায়ার বা প্রকৃতি তথা বিদ্যার(শক্তির) ঈশ্বর হলেন সাক্ষাৎ মহেশ্বর । তাকে মায়ী বা মায়াধীশ বলে জানা উচিত, সেই মহেশ্বরের অবয়ব দ্বারাই পরিব্যাপ্ত হয়ে সমগ্র জগৎ তার মধ্যে আশ্রিত, তার অবয়বের বাইরে কিছু নেই॥ ১০


সুতরাং, বেদ অনুসারে সকল কিছু‌ই শিবের মধ্যে আশ্রিত বলে প্রমাণিত । পূর্বেই উপরোক্ত পূর্ববর্তী দাবী খণ্ডনের প্রসঙ্গে মহাভারত থেকে প্রমাণিত করা হয়েছে যে, নারায়ণ মূলত সাক্ষাৎ শিবের‌ বাচক। সুতরাং স্মৃতি ও শ্রুতি প্রমাণ সাপেক্ষে বৈষ্ণবদের দুটি দাবীই খণ্ডিত। 


এখন বৈষ্ণবেরা বলতে পারে যে, নৃসিংহদেব হলেন পরমব্রহ্ম, নৃসিংহ পূর্বতাপনী উপনিষদে এ কথা বলা হয়েছে।

 আমরা শৈবগণ বলছি নৃসিংহরূপটি‌ও স্বয়ং পরমব্রহ্ম শিবের‌ই, একথা বেদের‌ই, দেখুন 👇 

ঋতং সত্যং পরং ব্রহ্ম নরকেসরিবিগ্রহং কৃষ্ণপিঙ্গলম্ ।

ঊর্ধ্বরেতং বিরূপাক্ষং শঙ্করং নীললোহিতম্ ।

উমাপতিঃ পশুপতিঃ পিনাকী হ্যমিতদ্যুতিঃ ।

ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্য়ো বৈ যজুর্বেদবাচ্যস্তং হি সাম জানীযাদ্যো জানীতে সোঽমৃতত্বং চ গচ্ছতি ॥ ১৩

(অথর্ববেদ/নৃসিংহ পূর্বতাপনী উপনিষদ/প্রথমোপনিষদ)


🔴 অর্থ — নরসিংহবিগ্রহ হল মূলত সেই ঋত সত্য সর্বোচ্চ সত্ত্বা পরমব্রহ্ম পরমপুরুষ কৃষ্ণপিঙ্গল অর্থাৎ অর্ধনারীশ্বর শিবেরই স্বরূপ, যিনি ঊর্ধ্বরেত বিরূপাক্ষ পরমেশ্বর শঙ্কর, নীলকন্ঠ ও লোহিত বর্ণের আভাযুক্ত জটাজূটধারী, তিনি উমার পতি, তিনি পাশরূপী মায়ার দড়িতে আবদ্ধ সকল জীব অর্থাৎ পশুদের স্বামী পশুপতি, তিনি পিনাক ধনুকধারী, তিনিই অমিত দ্যুতি সম্পন্ন। 

সেই ঈশান শিব‌ই সমস্ত বিদ্যার অধিপতি, সেই ঈশ্বর সদাশিব‌ই সমস্ত ভূত পদার্থের অধিশ্বর , অধিপতি ব্রহ্মারূপী হিরণ্যগর্ভের যিনি অধিপতি (অর্থাৎ বিষ্ণু), সেই বিষ্ণুর‌ও যিনি অধিপতি শিব । তার এই বিষয়ে যজুর্বেদ বিস্তারিত বাচ্যার্থ প্রকাশ করেছে, সামবেদ‌ও এক‌ই কথা বলে। এভাবে যিনি নৃসিংহ কে পরমেশ্বর শিবের‌ থেকে উৎপন্ন হ‌ওয়া একটি স্বরূপ বলে জানতে পারেন তিনিই অমৃত তত্ত্ব লাভ করতে সক্ষম ।


উপরোক্ত মন্ত্র টি নৃসিংহ পূর্বতাপনী উপনিষদের শুরুতে‌ই প্রথম দিকে ‘পরমেশ্বর শিবের রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করে , তারপর নৃসিংহের মন্ত্রের ঋচার বর্ণনা করা হয়েছে, আর এই উপনিষদের শেষ তম অধ্যায় একদম শেষে দিকে বলা হয়েছে এই মন্ত্র জপকরলে জপকারী‌ ব্যক্তি সদাশিবকে প্রাপ্ত করে তার শিবলোকে গমন করে।

প্রমাণ দেখুন 👇 

তদ্বা এতৎপরমং ধাম মন্ত্ররাজাধ্যাপকস্য যত্র ন সূর্যস্তপতি যত্র ন বায়ুর্বাতি যত্র ন চন্দ্রমা ভাতি যত্র ন নক্ষত্রাণি ভান্তি যত্র নাগ্নির্দহতি যত্র ন মৃত্যুঃ প্রবিশতি যত্র ন দুঃখং সদানন্দং পরমানন্দং শান্তং শাশ্বতং সদাশিবং ব্রহ্মাদিবন্দিতং যোগিধ্যেয়ং পরমং পদং যত্র গত্বা ন নিবর্তন্তে যোগিনঃ ॥ ২০

(অথর্ববেদ/নৃসিংহ পূর্বতাপনী উপনিষদ/পঞ্চমোপনিষদ)

🔴 অর্থ — এই মন্ত্ররাজ জপ করে জপকারী ব্যক্তি সেই পরমধাম প্রাপ্ত করেন, যেখানে বায়ু গমন করে না, যেখানে সূর্য তাপ দেয় না, যেখানে চন্দ্রের প্রকাশ নেই, সেখানে নক্ষত্র চমকায় না, যেই স্থানে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয় না তথা যেখানে মৃত্যুর প্রবেশ নেই, যে স্থান সর্বদা দুঃখরহিত, যেখানে সর্বদাই আনন্দ বিরাজ করে, যা পরমানন্দদায়ক স্থান, শান্ত, শাশ্বত, যেখানে স্বয়ং প্রভু সদাশিব বিরাজমান, সেই প্রভু শিব‌ই ব্রহ্মা সহ সকল দেবতাদের দ্বারা বন্দনীয় হন, তিনি যোগীব্যক্তিদের একমাত্র পরম লক্ষ্যবস্তু, যা পরমপদ নামে বিখ্যাত, যেখানে সাধকেরা পৌঁছে গেলে সংসার থেকে মুক্ত হয়ে যায়, আর কখনো সংসারে ফিরতে হয় না ॥ ২০

অর্থাৎ, বেদ অনুসারে নৃসিংহ রূপটিও পরমেশ্বর শিবের‌ই, তার মন্ত্র জপ করে শিবলোক ই প্রাপ্ত করবে বলেই উল্লেখ হয়েছে।

তাহলে এখানে বেদ থেকে প্রমাণ হয়ে গেল।

এবার পুরাণ থেকে দেখা যাক, এই বেদের বাক্য অনুসারে এই নরসিংহ মন্ত্র শিবের উদ্দেশ্যেই জপ করা হয় কি না ।


স্কন্দ পুরাণ বলছে নরসিংহ মন্ত্রে শিবের পূজা করবার জন্য, প্রমাণ 👇

বশিষ্ঠ উবাচ ।

যদ্যেবং তে মহারাজ - মদ্বাক্যাৎ সত্ত্বরং ব্রজ ।

হাটকেশ্বরজং ক্ষেত্রং সর্বসিদ্ধিপ্রদায়কম্ ॥ ৪৯ 

তত্র ভৈরবরূপেণ স্থাপয়িত্বা মহেশ্বরম্ ।

ভুজোদ্যতোগ্রশূলাগ্রবিদ্ধান্ধককলেবরম্ ॥ ৫০

নারসিংহেন মন্ত্রেণ ততঃ পুজয়ঃ ত রূপ।

রক্তপুপৈত্তৰ৷ ধুপৈ রক্তৈশ্চৈবাহুলেপনৈঃ ॥ ৫১

ততঃ সদ্বীৰ্য্যমাসাদ্য তেজোবীৰ্য্যসমন্বিতঃ।

হনিষ্যস্যখিলাঞ্ছত্রৃং স্তৎপ্রসাদাদসংশয়ম্ ॥ ৫২

পরং শৌচসমেতেন সম্পূজ্যো ভগবানস্ত্বয়া ।

অন্যথা প্রাপ্স্যসে বিঘ্নান সত্যমেতন্ময়োদিতম্ ॥ ৫৩

অথ তস্য বচঃ শ্রুত্বা স রাজা সত্বরং যযৌ ।

তত্র ক্ষেত্রে ততো দেবং স্থাপয়ামাস ভৈরবম্ ॥ ৫৪

ততঃ সম্পূজয়ামাস নারসিংহেন ভক্তিতঃ ।

মন্ত্রেণ প্রযতো ভূত্বা ব্রহ্মচর্য্যপরায়ণঃ ॥ ৫৫ 

ততো দশসহস্রান্তে তস্য মন্ত্রস্য সঙ্খ্যয়া ।

ভৈরবস্তুষ্টিমাপন্নঃ প্রোবাচ তদনন্তরম্ ॥ ৫৬ 

[তথ্যসূত্র : স্কন্দমহাপুরাণ/নাগরখণ্ড/১৫১ অধ্যায়]

অর্থ — বশিষ্ঠ বললেন, হে মহারাজ! আপনার যদি এরূপ বিপদ্ সংঘটিত হয়ে থাকে, তবে আপনি আমার বাক্যা অনুসারে সৰ্ব্বসিদ্ধিদায়ক হাটকেশ্বর ক্ষেত্রে গমন করুন। ঐ স্থানে গমন করে আপনি ভৈরবরূপী মহেশ্বরের বিগ্রহ স্থাপন করবেন। ঐ রূপ মহেশ্বরের হাতে থাকা ত্রিশূলের ফলার মস্তক দ্বারা অন্ধকাসুরের দেহ বিদ্ধ থাকবে এমনরূপ বিগ্রহ স্থাপন করবেন। এরপরে আপনি রক্তপুষ্প, রক্ত চন্দনলেপন ও ধূপ আদি উপাচার তারা নরসিংহ মন্ত্রে তার পূজা করবেন। এই রূপে পূজা করিলে আপনি অমিতবল ও তেজ-বীর্য্যসম্পন্ন হয়ে তার প্রসাদে অধিক শত্রু নির্মূল করবেন। কিন্তু খুব সাবধানে শৌচ-সমন্বিত হয়ে মহেশ্বরের পূজা করবেন, অন্তথায় বিঘ্ন হবে, এটি আমি সত্য বললাম ।

এরপর রাজা সুরথ ভগবান্ বশিষ্ঠের বাক্য শ্রবণ করে শীঘ্রই ঐ ক্ষেত্রে গমন করে ভৈরবমূর্তি সংস্থাপন করলেন। স্থাপন করবার পর ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বনপূর্ব্বক শুদ্ধভাবে নারসিংহ মন্ত্রে তার পূজা করলেন । তার ১০ হাজার বার জপের পর ভৈরব সন্তুষ্ট‌ হলেন ॥৪৯-৫৬


বৈষ্ণবদের পরম সাত্ত্বিক নারদপুরাণ থেকে প্রমাণ দিলাম , দেখুন 👇 

ध्यानभेदानयो वक्ष्ये सर्वसिद्धिप्रदायकान् ।

श्रीकामः सततं ध्यायेत्पूर्वोक्तं नृहरिं सितम् ॥५०

वामांकस्थितया लक्ष्म्यालिपितं पद्महस्तया ।

विषमृत्यूपरोगादिसर्वोपद्रवनाशनम् ॥५१॥

नसिहं महाभीमं कालानलसमप्रभम् ।

आंत्रमालाधरं रौद्रं कण्ठहारेण भूवितम् ॥५२

नागयज्ञोपवीतं च पञ्चानन सुशोभितम् ।

चन्द्रमौलि नीलकण्ठं प्रतिवक्त्र त्रिनेत्रकम् ॥५३॥

भुजैः परिघसंकाशैद्दशभिश्चोपशोभितम् ।

अक्षसूत्रं गदापद्मं शंखं गोक्षीरसन्निभम् ॥५४॥

धनुश्च मुशलं चैव बिभ्राणं चक्रमुत्तमम् ।

खङ्ग शूलं च बाणं च नृहरि रुद्ररूपिणम् ॥५५॥

इन्द्रगोपामनीलाभं चन्द्रा स्वर्णसन्निभम् ।

पूर्वादि चोत्तरं यावदूर्द्धास्यं सर्ववर्णकम् ॥५६॥

एवं ध्यात्वा जपेन्मंत्री सर्वव्याधिविमुक्तये ।

सर्वमृत्युहरं दिव्यं स्मरणात्सर्वसिद्धिदम् ॥ ५७॥

ध्यायेद्यदा महत्कर्म तदा षोडशहस्तवान् ।

नृसिंहः सर्वलोकेशः सर्वाभरणभूषितः ॥ ५८ ॥

द्वौ विदारणकर्माप्तौ द्वौ चांत्रोद्धरणान्वितौ ।

शङ्खचक्रधरौ द्वौ तु द्वौ च बाणधनुर्द्धरौ ॥५६॥

[তথ্যসূত্র — নারদপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় ৭১/৫০-৫৬ শ্লোক]

অর্থ — ধনের অভিলাষী মানুষের সর্বদা পূর্বোক্ত প্রকারে শুক্ল বর্ণযুক্ত পাপহারী নৃসিংহের ধ্যান করা উচিত, যার বামাঙ্কে পদ্ম হস্তা লক্ষ্মী(কমলা অম্বিকা) আলিঙ্গন করে রয়েছেন। বিষ অপমৃত্যু রোগ এবং নিখিল উপদ্রবের শান্তির জন্য কালানল এর সমান প্রভাযুক্ত, যিনি সুন্দর মালা ধারণ করেছেন, মহা ভয়ংকর রুদ্র রূপ, কন্ঠে হার দ্বারা সুশোভিত, সর্পের যোগ্য ও পবিত্র দ্বারা ভূষিত, যিনি পাঁচ মুখ যুক্ত, চন্দ্রমৌলি নীলকন্ঠ, প্রত্যেক মুখে তিনটি করে নেত্র ধারণকারী পরিদ তুল্য দশ এবং বান ধারণকারী, ইন্দ্রগোপা, নীলমণি, চন্দ্রমা তথা স্বর্ণের সদৃশ কান্তি সম্পন্ন পূর্ব দিক থেকে শুরু করে হস্তে সুশোভিত রুদ্রাক্ষমালা, গদা, পদ্ম, গাভীর দুধের সমান শ্বেত বর্ণের শঙ্খ, ধনুক, মুশল, চক্র, খড়্গ, ত্রিশূল উত্তর দিক পর্যন্ত ঊর্ধ্ব বিস্তৃত মুখসম্পন্ন আর সর্বালঙ্কারে ভূষিত নৃসিংহের ধ্যান করুন ।


🔹 

কালাগ্নিরুদ্রো ভগবান স্বয়মেব মহেশ্বরঃ ॥ ৬৯৮

নিরীক্ষ্যাকারমেতস্যা বিকরালং মহোৎকটম্ ।

সৌম্যরূপৈঃ সন্নিধাতুমশক্তঃ সাধ্বসাকুলঃ ॥৬৯৯

কৃত্বা ঘোরতরং রূপং সিংহাকারং বিভীষণম্ ।

উপাসাংচক্র ঈশানীং দুর্নিরীক্ষ্যত রাকৃতিম্ ॥ ৭০০

প্রতিরূপে দেবেশি কামভোগরসকুলা ।

তাদৃগুগ্রো নৃসিংহোঽপি যাদৃগুগ্রা মহেশ্বরী ॥ ৭০১

তয়োর্যোগো যোগ্যরূপোঽত এব পরিকীর্তিতঃ ।

পুর আবরণার্চায়া অতস্তং পরিপূজয়েৎ ॥ ৭০২

কালাগ্নিরুদ্র রূপস্য ভীষণস্য মহেশিতুঃ ।

আকারো নরসিংহস্য যথা তস্য তথৈব চ। ॥ ৭০৩

জ্বালামালী নৃসিংহেতি তস্য নাম নিগদ্যতে ।

স এত্র ভগবান রুদ্রঃ সিংহরূপেণ সংস্থিতঃ ॥ ৭০৪

সিংহরূপমতস্তস্যাঃ পতি রুদ্রং প্রপূজয়েৎ ।

দেব্যা দক্ষিণভাগে তু সর্বদা স্থিতমীশ্বরম্ ॥ ৭০৫

চিন্তয়িত্বার্চয়েৎ সর্বোপচারৈরম্বিকাং যথা ।

[তথ্যসূত্র — মহাকাল সংহিতা/গুহ্যকালীখণ্ড/১০ম পটল]

🔹 উপরোক্ত শ্লোক গুলি‌ লক্ষ্য করুন, ওখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে নৃসিংহ রূপ‌টি ভগবান কালাগ্নিরুদ্র ধারণ করে ছিলেন দেবী অম্বিকার ইচ্ছাকে পূর্ণ করবার জন্য। 


সুতরাং পুরাণ ও তন্ত্র শাস্ত্র‌ও বেদে উল্লেখিত নৃসিংহ মন্ত্র ও তার রূপকে পরমেশ্বর শিবের‌ই মন্ত্র ও রূপ বলে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু পুরাণের বাক্য বেদ সম্মত, তথা বেদের বাক্যকে বর্ধিত করে পুরাণ তার প্রয়োগের ঘটনাকে ব্যাখ্যা করেছে, তন্ত্রের মধ্যেও বেদোক্ত কথা রয়েছে। তাই নৃসিংহমন্ত্র দ্বারা মূলত পরমেশ্বর শিব‌ই যে একমাত্র পরমব্রহ্ম তা প্রমাণিত।

এবার শঙ্কা নিবারণ করছি, 

বেদে নৃসিংহকে ব্রহ্ম বলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা নৃসিংহের অন্তরস্থ পরমশিব তত্ত্বকে নির্দেশ করে বলা হয়েছে, দেহ‌ অবয়ব কে ব্রহ্ম বলা হয়নি। 

নচেৎ আপনারাই ভেবে দেখুন, বৈষ্ণবদের দাবী অনুযায়ী নৃসিংহ পূর্বতাপনী উপনিষদে যদি সরাসরি দেহযুক্ত নৃসিংহদেবকেই ব্রহ্ম বলা হয়ে থাকতো,

তাহলে বেদের অন্তর্গত ১০৮ উপনিষদের মধ্যে উপলব্ধ শরভ উপনিষদ‌ও তো বেদবাক্য। 

শরভ উপনিষদে বলা হয়েছে 👇 

যো ঘোরং বেষমাস্থায শরভাখ্যং মহেশ্বরঃ ।

নৃসিংহং লোকহন্তারং সংজঘান মহাবলঃ ॥ ৪

সরলার্থ – সেই মহাবলবান মহেশ্বর শরভের রূপ ধারণ করে নৃসিংহের প্রাণ হনন করেন ॥ ৪


নৃসিংহদেব যদি ব্রহ্ম হতেন তবে শরভ উপনিষদে শরভেশ্বর দ্বারা নৃসিংহদেব বধ হবার কথা কেন বর্ণিত হল ?

ভেবে দেখুন, নৃসিংহদেব যদি পরমব্রহ্ম‌ই হন তবে পরম ব্রহ্মের মৃত্যু কি করে সম্ভব ?

অর্থাৎ, বেদ‌ই এর মীমাংসা করে দিয়েছেন, বেদে বর্ণিত যে নৃসিংহ রূপ‌ তা মূলত পরমেশ্বর শিবের, আর সেই রূপ‌‌ই যখন শিবকৃপায় বিষ্ণু ধারণ করেন তখন তার অভিমান হয়,  সেই অভিমানকে চূর্ণ করতে পরমেশ্বর শিব‌ই শরভেশ্বর রূপ দ্বারা তাকে হনন করে সৃষ্টিকে রক্ষা করেন।


সুতরাং, বৈষ্ণবদের নৃসিংহদেবকে ব্রহ্ম দাবি করার যুক্তিকে খণ্ডন করা হল ।


(৩) বৈষ্ণবদের দাবী অনুযায়ী,

নৃসিংহের দেহের অন্তর্গত ললাটের মধ্যে ভগবান ব্রহ্মা, রুদ্র থাকেন, তাই নৃসিংহ ই সবকিছু ।


খণ্ডন — মজার বিষয় হল বৈষ্ণবেরা এখানে নৃসিংহ দেবকে সর্বোচ্চ প্রমাণ করতে গিয়ে নিজেদের দাবীর বিরুদ্ধেই স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে বসে আছেন। ভালো করে খেয়াল করুন, পদ্মপুরাণের বলা হয়েছে যে, নৃসিংহের দেহের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতাদের স্থান রয়েছে, কৈলাস প্রতি ভগবান রুদ্র নৃসিংহ-এর কপালে অবস্থান করেন। এর থেকে কি প্রমাণিত হয় ? 

একটু ভেবে দেখুন, মানুষের শরীরেরও বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতার বাস, আর ললাটে থাকেন সাক্ষাৎ আত্মারূপী পরমাত্মা। 

তাহলে এর দ্বারা মানুষ কি পরমব্রহ্ম হয়ে যায় ?

বৈষ্ণবদের এই ধরণের বালখিল্য যুক্তি দেখলে কিছু হোক না হোক, বরং বেশ কিছুটা পরিমাণে মনোরঞ্জন হয় ।

অতি হাস্যকর একটি যুক্তি দিয়ে নৃসিংহদেবকে ব্রহ্ম প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছে বৈষ্ণবেরা।

তাদের যুক্তি যদি মেনে চলা হয়, তবে এক একটি মানুষও একেকজন ব্রহ্ম হয়ে যাবে। কারণ, মানুষের দেহের মধ্যে আত্মা সহ একাদশ রুদ্র বাস করেন।

এমন যুক্তি ব্যবহার করেছে যেখানে নিজেদের‌ই পর্দা ফাঁস করে বসে আছে তারা 😆😄, খেয়াল করে দেখুন তারা বলেছে নৃসিংহ দেবের ললাটে রুদ্রদেব থাকেন। ললাটের স্থানে আত্মা থাকে, সুতরাং সেই পরমাত্মা সদাশিবই কৈলাসপতি রুদ্রদেব স্বরূপে নৃসিংহের আত্মার স্থানের মধ্যে অবস্থান করছেন নৃসিংহের মূল তত্ত্ব হিসেবে, যার বিষয়ে বেদের অন্তর্গত নৃসিংহ পূর্বতাপনী উপনিষদেও বলা হয়েছে যে, নৃসিংহ মূলত পরমেশ্বর শিবের‌ই বাচক।

যেহেতু পরমেশ্বর শিব ই পরমব্রহ্ম, তাই সকল জীবের দেহে তথা সকল দেবতার অন্তরেও পরমেশ্বর শিব‌ই স্থিত থাকবেন তা স্বাভাবিক বিষয়, কোন সন্দেহ নেই।

তাই এসব বালখিল্য যুক্তি দিয়ে কখনোই নৃসিংহদেব কে সর্বোচ্চ প্রমাণ করা যায় না। বরং পরমেশ্বর শিবের লীলামূর্তি অবতার রুদ্রদেবকে কপালে তথা মস্তকে ধারণ করে থাকে নৃসিংহ, এই সত্যটা নিজেদের অজান্তেই বৈষ্ণবেরা স্বীকার করে বসে আছেন। যাক.. ভুল করে হলেও সত্য বলেছেন , এর জন্য আপনাদের বৈষ্ণবদের করা শিবনিন্দার পাপ কিছুটা লাঘব হবে বলে আমরা নিশ্চিত।


এবার আসি বৈষ্ণবদের পরবর্তী দাবীর বিষয়ে, 

(৪) বৈষ্ণবদের দাবী,

দংষ্ট্রাসু সিংহশার্দূলাঃ শরভাশ্চ মহোরগাঃ ।

শরভ নৃসিংহদেবের দাঁতে আশ্রিত। নৃসিংহদেবের একেকটা দাঁত একেকটা শরভের তুল্য। দাঁতে আশ্রিত উপদেবতা শরভ কখনও পরমেশ্বর শ্রী নৃসিংহের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতাই রাখে না।


খণ্ডন — পাঠকবৃন্দ আপনারা দেখুন এই রামানুজ পন্থার অনুসারী নব্য বৈষ্ণব দের অবস্থা, এরা কোনটা উপমা আর কোনটা বাস্তব অর্থ তার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখে না।

এই আকাট মূর্খ নকল রামানুজী বৈষ্ণববেদের গর্দভরাজ উপাধি দিলে কম সম্মান প্রদর্শন হবে না। 

এই মূর্খ ভালো করে নিজেদের প্রাণপ্রিয় পদ্মপুরাণ না পড়েই অন্ধের মতো দাবী করেছে শরভ নাকি নৃসিংহের দাঁতে আশ্রিত।

শ্লোকটি লক্ষ করুন, দংষ্ট্রাসু সিংহশার্দূলাঃ শরভাশ্চ মহোরগাঃ ।

এখানে দেখুন সিংহ 🦁, শার্দূল অর্থাৎ বাঘ 🐅 -এর কথা প্রথমে বলা হয়েছে,‌আর তার সাথে ‘শরভ’ শব্দটি রয়েছে ।

অর্থাৎ এখানে পশুদের উল্লেখ করা হয়েছে। শরভ বলতে বিরাট এক পক্ষীর কথা বলা হয়েছে । কিন্তু মূর্খ বৈষ্ণবেরা এখানে  সিংহশার্দূলাঃ শব্দটিকে না দেখে শুধু শরভ শব্দটিকে তুলে নিয়ে বালখিল্য দাবী করে নিজেদের‌ই হাসির খোরাক বানিয়ে বসে আছে।

এখানে শরভ অর্থাৎ বিরাট পক্ষীর কথা বলা হয়েছে, পরমেশ্বর শিবের অবতার শরভেশ্বর, যিনি ঐ শরভ পাখির অবয়ব ধারণ করেছিলেন মাত্র। যেমন সাধারণত সিংহ অর্থে নৃসিংহকে বোঝায় না, তবে প্রসঙ্গ যদি নৃসিংহের থাকে তবে সেখানে তাকে সিংহ বলেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে, ঠিক তেমন‌ই শরভ উল্লেখ করলেই তা শরভেশ্বর হয়ে যায় না। কারণ, কালিকা পুরাণে শরভ বলি দেবার বিধান রয়েছে। এখন বৈষ্ণবেরা বলুক শরভ বলতে যদি শুধু ই পরমেশ্বর শিবের অবতার শরভেশ্বরকেই বোঝায় তাহলে সাধারণ মানুষ কি এখন শিব অবতার শরভেশ্বরকে ধরে আনবে বলি দেবার জন্য ?

সাধে কি আর মূর্খ বলি এসব দুদিনের তিলকধারী বৈষ্ণবদের ??

যাইহোক এবার দেখাবো , নৃসিংহের সামনে শরভেশ্বর দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে কি না ।

স্কন্দপুরাণ থেকে প্রমাণ 👇

নৃহরিং শরভাকারঃ সমহাষীন্ন চেদ্ভবান্ ।

স এব সংহরেদ্বিশ্বঃ হিরণ্যকশিপোরপি ॥ ৪১৭

ত্বমাচক্রক্ষঃ কল্পাদ্ধৌ কৈবৰ্ত্তো মৎস্যকচ্ছপৌ।

হরিং বদ্ধাহিয়াট সূত্রৈর্নৃসিংহমথ শূকরম ॥ ৪১৮

একোনে পদ্মসাহস্রে স্বনেত্রেণ কৃতার্চনম্ ।

শূলিন সুদর্শনং দত্ত্বা দৈতাদ্বিষমতূতৃষঃ ॥ ৪১৯

[তথ্যসূত্র — স্কন্দমহাপুরাণ/মহেশ্বরখণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য/উত্তরার্দ্ধ/অধ্যায় ১৬]

অর্থ —  হে মহাদেব ! তুমি যদি শরভাকার ধারণ করিয়া নৃ-হরিকে সংহার না করতেন, তবে সেই নৃ-হরি হিরণ্যকশিপু এমন কি সমস্ত বিশ্বকেই নিহত করে দিতেন। তুমি কৈবর্ত্ত হয়ে কল্পপর্যন্ত মৎস অবতার ও কচ্ছপকে আকর্ষণ করে বধ করে থাকো এবং নৃসিংহ, বরাহ প্রভৃতি রূপধারী, স্বনেত্ররূপ একোনসহস্র পদ্ম দ্বারা কৃত শিবার্চনরত হরিকে অহিরাজ-সূত্র দ্বারা বন্ধন করে তাকে তুমি সুদর্শন চক্র প্রদান করে দেবতাদের সন্তোষ বিধান করেছো।


🔸 কূর্মপুরাণ থেকে প্রমাণ 👇 

পরশ্বধাসক্তকরং ত্রিনেত্রং

নৃসিংহচর্ম্মাবৃত ভস্মগাত্রম্ ।..॥ ৫৫

(তথ্যসূত্র — কূর্মপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় ২৫)

অর্থ — ত্রিনেত্রধারী পরমেশ্বর শিবের ভস্মযুক্ত শরীরে নৃসিংহচর্ম্ম আবৃত রয়েছে ॥ ৫৫


🔸 কালিকা পুরাণ থেকে প্রমাণ 👇 

ততো দংষ্ট্রাগ্রঘাতেন নরসিংহং মহাবলঃ ।

শরভো ভগবান্ ভর্গো দ্বিধা মধ্যে চকার হ ॥ ১২৩

[তথ্যসূত্র — কালিকাপুরাণ/অধ্যায় ৩০]

অর্থ — তখন সেই ভগবান ভর্গ(শিব) শরভরূপের নিজের দাঁতের কামড় দ্বারা নরসিংহকে দুই টুকরো করে ছিন্নভিন্ন করে দিলেন ॥ ১২৩


🔹 রামায়ণ থেকে প্রমাণ 👇

শরভেণ যথা সিংহা..।..দ্বীপিনো যথা ॥ ২০

[তথ্যসূত্র : বাল্মিকী রামায়ণ/উত্তকাণ্ড/৭ম সর্গ]

অর্থ — শরভের সামনে যেমন সিংহ দাঁড়াতে পারে না, ভয় পায় যেমন ॥ ২০


🔹 মহাভারত থেকে প্রমাণ 👇

তথাষ্টপাদঃ শরভঃ সিংহঘাতী ।..॥ ১৫

[তথ্যসূত্র — মহাভারত/বনপর্ব/১৩৪ অধ্যায়]

অর্থ — যেমন অষ্টপদযুক্ত শরভেশ্বর নৃসিংহকে বধ করেন।


সিদ্ধান্ত —  শাস্ত্রে বাক্য কে অমান্য করে উপেক্ষা করে ‘দাঁতে আশ্রিত উপদেবতা শরভ কখনও পরমেশ্বর শ্রী নৃসিংহের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতাই রাখে না।’ এসব বলে নিজের মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মাত্র গর্দভস্বরূপ এই বৈষ্ণবেরা । 

শাস্ত্র প্রমাণ সহ প্রমাণিত হয়েছে যে, শরভেশ্বর অবতার দ্বারা নৃসিংহ বধ হয়েছেন, সুতরাং শরভেশ্বর অবতার কখনোই নৃসিংহের দাঁতে আশ্রিত নয় । সুতরাং 

যে সব রামানুজ বৈষ্ণব পন্থীদের অনুসারী বৈষ্ণবদের অল্পবুদ্ধিতা এখানে সিদ্ধ করে খণ্ডন পর্ব সম্পন্ন করা হল ।

পরমেশ্বর শিবের পরমত্ব অখণ্ডিত র‌ইল ।

জয় শরভেশ্বর 

জয় মহেশ্বর 


শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


🔥অপপ্রচার দমনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য 

©️কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ