শিব ও বিষ্ণুর মধ্যে কে সাত্ত্বিক আর কে তামসিক ? — জেনে নিন


শিব ও বিষ্ণুর মধ্যে কে সাত্ত্বিক আর কে তামসিক ? — জেনে নিন 

ভূমিকা —

নমঃ শিবায়
বর্তমান কালে দেখা যায়, বেশ কিছু কল্পিত বৈষ্ণবেরা পরমেশ্বর শিবের অবতার কৈলাসপতি ভগবান রুদ্রদেব কে তামসিক বলে আখ্যা দিয়ে পরোক্ষভাবে নিকৃষ্ট প্রমাণ করবার জন্য প্রয়াস করতে থাকে ।
 শাস্ত্র অনুসারে প্রভু শিব নিরাকার থেকে সাকার 
রূপ ধারণ করলে সেই স্বরূপকে সদাশিব বলা হয়।
প্রভু সদাশিব আদ্যাশক্তির প্রকৃতিভাগ থেকে রজোগুণের দ্বারা ব্রহ্মাকে ও সত্ত্বগুণ দ্বারা বিষ্ণুকে সৃষ্টি করেন , পরবর্তীতে ব্রহ্মার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবার জন্য পরমেশ্বর সদাশিব সরাসরি নিজের হৃদয় থেকে তার মতোই দেখতে একজন অবতার প্রকাশ করেন তার নাম রুদ্র ।
ব্রহ্মার কপালে ক্রোধের দ্বারা উৎপন্ন হ‌ওয়া তমগণকে আশ্রয় করে সেই রুদ্রদেব পুনরায় প্রকটিত হন লীলাবশত ।
কলিযুগের এই ভয়ংকর মায়ার প্রভাবে ৯৯% শতাংশ মানুষই আজ এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন ।
তারা পরমেশ্বর সদাশিবের এই লীলা অবতার 'রুদ্রদেব'কেই সম্পূর্ণ শিব বলে মনে করেন।

ব্রহ্মা-বিষ্ণু-রুদ্র — এই তিনজন পরমেশ্বর সদাশিবের থেকে প্রকটিত হওয়া সদাশিবের‌ই গুণ(মায়া) যুক্ত স্বরূপ, 
কিন্তু সাধারণ মানুষ এই ত্রিদেবের উর্ধ্বে যে পরমেশ্বর সদাশিব রয়েছেন তা মায়ার আচ্ছাদনের কারণে জানতে সক্ষম হন না ।

সাধারণভাবে মানুষ মনে করে যে, 
প্রজাপতি ব্রহ্মা রজগুণযুক্ত, শ্রী বিষ্ণু সত্ত্ব গুণযুক্ত, রুদ্র হল তমোগুণযুক্ত ।
এই বিষয়টিকেই আশ্রয় করে বর্তমানের কিছু ভন্ড বৈষ্ণবেরা কৈলাসপতি রুদ্রদেব কে শিব বলে আখ্যা দিয়ে, দাবি করছে যে, শিব হল তমোগুণের দেবতা ।
অর্থাৎ, 
তমঃ গুণ - কথার অর্থ অশুভ অকল্যাণকর শক্তি 

সুতরাং এখান থেকে বৈষ্ণবদের দাবি অনুসারে বোঝা যায় যে তারা পরোক্ষভাবে পরমেশ্বর শিব কে অশুভ অকল্যাণকারী হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করে চলেছে।

তাই শাস্ত্র থেকে আমি প্রমাণ করে দেবো যে, কে তমোগুণের দেবতা আর কে সত্ত্বগুণের দেবতা !

আলোচ্য বিষয় —

প্রথমে আমরা দেখে নেবো.... ত্রিদেবের উৎপত্তির বিষয়ে শিবমহাপুরাণের বচন ।

♦️ প্রমাণ — ১ ( শিমহাপুরাণ থেকে)♦️

॥ শিবউবাচ ॥

যুবাং প্রসূতৌ প্রকৃতের্মদীয়ায়া মহাবলৌ
সব্যাপসব্যগাত্রাভ্যাং মম সর্বৈশ্বরস্য হি॥১৬
অয়ং মে দক্ষিণাৎপার্শ্বাদ্ ব্রহ্মা লোকপিতামহঃ।
বামপার্শ্বাদ্ বিষ্ণুস্ত্বং সমুৎপন্নঃ পরমাত্মনঃ॥১৭

 (শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/৯ অধ্যায়)

অর্থ : পরমেশ্বর শিব বললেন - আমি সকলের ঈশ্বর, তোমরা দুজন(ব্রহ্মা ও বিষ্ণু) জন্ম হয়েছ আমার স্বরূপভূত (আদিশক্তির) প্রকৃতির অংশ থেকে। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু উভয়েই আমি পরমপুরুষ সদাশিবের ডান-বাম অঙ্গ হতে উদ্ভব হয়েছে।

শিবপুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মা বিষ্ণুর উৎপত্তি পরমেশ্বর সদাশিবের থেকে হয়েছে।
আদ্যাশক্তি হলেন পরমেশ্বর সদাশিবের পরমাপ্রকৃতি স্বরূপ বামভাগ। পরমেশ্বরের এই বামভাগের প্রকৃতি থেকেই বিষ্ণুর আগমন,তিনিই নারায়ণ নামে অভিহিত হন।

এবার দেখুন ভগবান রুদ্রের বিষয়ে প্রভু পরমেশ্বর সদাশিব ব্রহ্মাকে বলছেন -

মদ্রুপং পরমং ব্রহ্মন্নীদৃশং ভবদঙ্গতঃ।
প্রকটীভবিতা লোকে নাম্না রুদ্রঃ প্রকীর্তিতঃ ॥৩০

[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/অধ্যায়৯]

সরলার্থ : হে ব্ৰহ্মা! আমার এমন পরম অংশস্বরূপ তোমার শরীর থেকে ইহলোকে প্রদর্শিত হবে, যাকে 'রুদ্র' বলা হবে।

সুতরাং এখানে প্রমাণিত হচ্ছে যে পরমেশ্বর শিব ব্রহ্মাজী কে বলছেন তাঁর একটি অংশস্বরূপ পিতামহ ব্রহ্মার শরীর থেকে সম্ভূত হবে, যার নাম 'রুদ্র' হবে । 

আরো একটি প্রমাণ দেখুন শিবমহাপুরাণ থেকে👇

বামাঙ্গজো মম হরির্দক্ষিণাঙ্গোদ্ভবো বিধিঃ ॥৫৬
মহাপ্রলয়কৃদ্ রুদ্রো বিশ্বাত্মা হৃদয়োদ্ভবঃ ।
ত্রিধা ভিন্নো হ্যহং বিষ্ণো ব্রহ্মবিষ্ণুভবাখ্যয়া ॥৫৭
সর্গরক্ষালয়করস্ত্রিগুণৈ রজ আদিভিঃ ।
গুণভিন্নঃ শিবঃ সাক্ষাৎ প্রকৃতে পুরুষাৎপরঃ ॥৫৮
পরং ব্রহ্মাদ্বয়ো নিত্যোঽনন্তঃ পূর্ণো নিরঞ্জনঃ ।
অন্তস্তমো বহিঃসত্ত্বস্ত্রিজগৎপালকো হরিঃ ॥৫৯
অন্তঃ সত্ত্বস্তমোবাহ্যস্ত্রিজগল্লয়কৃদ্ধরঃ ॥৬০
অন্তর্বহীরজশ্চৈব স্ত্রী জগৎ সৃষ্টিকৃদ্বিধিঃ ।
এবং গুণাস্ত্রিদেবেষু গুণভিন্নঃ শিবঃ স্মৃতঃ ॥৬১
[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/অধ্যায় ৯]

অর্থ — পরমেশ্বর সদাশিব বললেন, 
শ্রী হরি আমার বাম অঙ্গ থেকে প্রকট হয়েছেন, ব্রহ্মা আমার ডান অঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়েছেন, আর মহাপ্রলয়কারী বিশ্বাত্মা রুদ্র আমার হৃদয় থেকে প্রাদুর্ভূত হয়েছেন, 
হে বিষ্ণু ! 
আমি ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং ভব(রুদ্র) নাম দ্বারা তিন রূপে বিভক্ত হয়েছি। আমি রজ আদি তিন গুণের দ্বারা সৃষ্টি, পালন তথা সংহার করি ।
 আমি শিব এই জাগতিক মায়ার গুণ(-এর প্রভাব) থেকে ভিন্ন (তথা মুক্ত) , আর আমি প্রকৃতি তথা পুরুষের‌ও ঊর্ধ্বে। আমি অদ্বিতীয়(অর্থাৎ একমাত্র),নিত্য, অনন্ত, পূর্ণ এবং নিরঞ্জন পরব্রহ্ম।
ত্রিলোকের পালনকারী শ্রীহরি - ভেতরে তমোগুণ আর বাইরে সত্ত্বগুণ ধারণ করে থাকেন।
ত্রিলোকের সংহারকারী রুদ্রদেব ভেতরে সত্ত্বগুণ আর বাইরে তমোগুণ ধারণ করে থাকেন । 
ত্রিজগত কে সৃষ্টিকারী ব্রহ্মাজী বাইরে এবং ভেতরে উভয় দিকেই রজোগুণী সম্পন্ন। 
এইভাবে ব্রহ্মা-বিষ্ণু তথা রুদ্র এই তিন দেবতায় গুণ রয়েছে ।
কিন্তু সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিব কে গুণের ঊর্ধ্বে গুণাতীত বলে জানা উচিত ॥ ৫৬-৬১


তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,
শিবমহাপুরাণে রুদ্রসংহিতার সৃষ্টিখণ্ডের ৯ম অধ্যায়ে উল্লেখিত হয়েছে, 
রজঃ গুণের দ্বারা ব্রহ্মা সৃজন করেন, তমো গুণের দ্বারা রুদ্র ধ্বংস করেন এবং সত্ত্বগুণের দ্বারা বিষ্ণু জগতের পালন-পোষণ করেন।
ত্রিপালক শ্রীহরি বিষ্ণু সর্বদা অন্তরে তমোগুণ ও বাইরে সত্ত্বগুণ প্রকাশ করেন। ত্রিলোকের সংহারক রুদ্রদেব অন্তরে সত্ত্বগুণ ও বাইরে তমোগুণ ধারন করেন এবং ত্রিলোকের সৃজন কর্তা ব্রহ্মা অন্তরে বাহিরে উভয়দিকেই রজোগুণ বিশিষ্ট হন।
কিন্তু স্বয়ং পরমেশ্বর শিব কখনোই গুণের বশবর্তী হন না। তিনি সর্বদা এর উর্দ্ধে, অর্থাৎ গুণাতীত। তাই প্রভু শিবকে  মায়াতীত এবং মায়ার অধীশ্বর বলা হয়, কোনো রকম মায়ার প্রভাব সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিবের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। 
এখান থেকেই প্রমাণিত হয়ে গেল যে, সনাতনী শৈবদের আরাধ্য “পরমেশ্বর শিব কখনোই তমোগুণের দেবতা নন,”
শিবের পূর্ণ লীলাঅবতার ভগবান রুদ্রদেব তমোগুণকে ধারণ করেন, তাও তিনি বাহ্যিকভাবে তমোগুণ ধারণ করেন, কিন্তু তিনি ভিতরে সত্ত্বগুণী দেবতা অর্থাৎ শুভ তথা কল্যাণকারী দেবতা। 

পরমেশ্বর শিবকে যারা তমোগুণ সম্পন্ন দেবতা বলে অপপ্রচার করছেন তারা শাস্ত্রজ্ঞানহীন অজ্ঞব্যক্তি ।


চলুন, এবার দেখে নিই স্কন্দপুরাণের সূতসংহিতা ত্রিদেবের মধ্যে থাকা রুদ্রদেব এবং সাম্বশিব(সদাশিব) সম্পর্কে কি বলছে, 
♦️ প্রমাণ — ২ (স্কন্দপুরাণ থেকে)♦️

স্কন্দপুরাণের সূতসংহিতার যজ্ঞবৈভবখণ্ডের উপরিভাগের অন্তর্গত সূতগীতার ২য় অধ্যায়ের ১৫নং শ্লোক থেকে ৫০নং শ্লোকে বলা হয়েছে 👇

অর্থ — ত্রিমূর্তি অর্থাৎ ত্রিদেব(ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্রদেব)-এর মধ্যে রুদ্রদেব হলেন তিনি, যার উপাধিগত বিশেষত্ব মূলত সত্ত্বগুণ , অর্থাৎ রুদ্রদেবের দিব্যদেহ সাত্ত্বিক, কিন্তু সংহারের কারণে তিনি তমোগুণকে ধারণ করেন মাত্র ॥১৫
কিন্তু যার নিজের শরীর স্বয়ং তমোগুণসম্পন্ন কিন্তু পালন করবার প্রয়োজনের কারণে সত্ত্বগুণ গ্রহণ করেন , ত্রিমূর্তির মধ্যে তিনি হলেন শ্রীবিষ্ণু ॥১৬
রজোগুণ যার শরীর তো বটেই বরং উৎপত্ত্যর্থ (সৃষ্টি করবার জন্য) -এর কারণেও রজোগুণ ধারণ করেন, তিনি হলেন ব্রহ্মা ॥১৭
ভোগ তথা মোক্ষ প্রদান করবার কারণে রুদ্রদেবের শরীর শুক্ল অর্থাৎ শ্বেত বর্ণ, বিষ্ণু হল কৃষ্ণবর্ণ আর ব্রহ্মা লাল বর্ণের — এভাবেই তাদেরকে স্মরণ করে ধ্যান করা উচিত ॥১৮ 
সত্ত্বগুণ থেকে শুক্ল অর্থাৎ শ্বেত বর্ণ উৎপন্ন হয়, রজোগুণ থেকে লালবর্ণ উৎপন্ন হয় আর তমোগুণ থেকে কৃষ্ণ/কালো বর্ণ হয় ॥১৯
বেদ শাস্ত্রে কোথাও কোথাও ব্রহ্মা বা বিষ্ণুকে পরমেশ্বর বলা হয়েছে কিন্তু সেটি তাদের ঔপাধিক রূপের দৃষ্টি তে নয় বরং তাদের অন্তরস্থ পরতত্ত্বকে বস্তুতঃ পরমেশ্বর বলা হয়েছে এই দৃষ্টিতে ॥২০-২১
কেবলমাত্র ব্রহ্মা-বিষ্ণু আদি উপাধি প্রধান রূপে তো মূলত ব্রহ্মা আদি দেবতা ই , পরমেশ্বর নয় ॥২২
কিন্তু উপাধিপ্রাধান্য দৃষ্টিতেও রুদ্রদেব সব থেকে উৎকৃষ্ট, কারণ উত্তম সত্ত্বগুণ কে একমাত্র তিনিই শরীররূপে গ্রহণ করেছেন ॥২৩
রজ এবং তম গুণের থেকে সত্ত্বগুণ শ্রেষ্ঠ, পর তথা অপর, সুখ তথা জ্ঞান সত্ত্বগুণ থেকেই প্রাপ্ত হয়ে থাকে ॥২৪
পরত্বের প্রকাশ রুদ্রদেবের মধ্যেই সর্বাধিক , ব্রহ্মা বা বিষ্ণু আদি দেবতার মধ্যে সেই সত্ত্বগুণের প্রকাশ তেমনটা নেই ॥২৫
রুদ্রদেব সর্বদাই নিজের পরতত্ত্বতা ই মানেন, এই বিষয়টি কখনোই ভুলে যান না। কিন্তু অন্য দেবতারা প্রায়শই নিজের ঔপাধিকরূপ কেই নিজে স্বয়ং বলে মানতে থাকেন। সেই হরি বা ব্রহ্মা‌ উভয়েই স্বয়ং কেই মানতে থাকেন, বাস্তবিক অর্থেও নিজের পরতত্ত্বতার প্রতি সজাগ থাকেন না, কিন্তু তারাও রুদ্রদেব কে পরতত্ত্ব রূপ‌ই মানেন, নিজেদের মতো ভাবেন না ॥২৬-২৭
কখনো কখনো সংহার আদি কার্যের জন্য রুদ্রদেব নিজেকে স্বয়ং ঔপাধিক রুদ্ররূপে ভেবে নেন, কিন্তু মুখ্যতঃ তিনি নিজেকে পরতত্ত্ব হিসেবে অবশ্যই অবগত থাকেন ॥২৮
ব্রহ্মা আদি দেবতারাও বিচার বিবেচনার দশাতে নিজের পরতত্ত্বতার নিশ্চয়কারী হয়ে যান, কিন্তু মুখ্যতঃ তাদের ঔপাধিক অভিমান এর সাথে বজায় থাকে। রুদ্রদেবের স্থিতি এনাদের চেয়ে বিপরীত — মুখ্যতঃ রুদ্রদেবের নিরূপাধিক প্রকাশ ই থাকে। প্রয়োজনে কখনো কখনো ঔপাধিক অভিমানী হন মাত্র । রুদ্রদেবের  তত্ত্বনিষ্ঠা স্বাভাবিক ই, হরি-ব্রহ্মার ঔপাধিক স্থিতি স্বাভাবিক ॥২৯-৩১
যে সমস্ত ব্যক্তিরা যথাশক্তি হরি ব্রহ্মা আদি দেবতাদের পূজা করে থাকে সে সমস্ত ব্যক্তিদের শীঘ্রই মোক্ষ লাভ হয় না , ধীরগতিতে ক্রমে ক্রমে শিবকৃপাপ্রাপ্তি হবার পর‌ই মোক্ষ লাভ হয় ॥৩২
যে ব্যক্তি যথাশক্তি রুদ্রদেবের পূজার্চনা করেন সেই ব্যক্তির অতি শীঘ্রই মোক্ষ লাভ হয়ে যায়, কারণ সেক্ষেত্রে কোনো ক্রমের আবশ্যকতা থাকে না ॥৩৩
রুদ্ররূপ এর দ্বারা রুদ্রদেব অন্য দেবতাদের চেয়ে বরিষ্ঠ — বড় — এইরকম ভাবনা নিশ্চিত ভাবেই মোক্ষদায়ক ॥৩৪
গুণ‌উপাধির মধ্যে অভিমানসম্পন্ন শ্রীবিষ্ণু আদি দেবতা রুদ্রদেবের থেকে বরিষ্ঠ(শ্রেষ্ঠ) — এমন ভাবনা করাটাই সংসারচক্রে আবদ্ধ হয়ে মোক্ষলাভ করতে অক্ষম হবার মূল কারণ হয় ॥৩৫
রুদ্রদেব, বিষ্ণু, পিতামহ ব্রহ্মার মধ্যে কাউকেই সাক্ষাৎ পরতত্ত্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভেবে নেওয়াটাই সংসারে আবদ্ধ হবার কারণ , রুদ্রদেব, বিষ্ণু, ব্রহ্মা, স্বরাট্, সম্রাট, ইন্দ্র আদি সবাই আভ্যন্তরীণভাবে শিবরূপের দৃষ্টিকোণে সকলে এক ও অদ্বিতীয় পরতত্ত্ব , এরকম ভাবনা করলে অবশ্যই মোক্ষ প্রাপ্তি হয় ॥৩৬-৩৭
মন্ত্রীর মধ্যে রাজদৃষ্টি করলে দোষ নয় বরং মন্ত্রী প্রসন্নতা দ্বারা ফল প্রাপ্তির হেতু হয় । অতঃ সর্বত্র ব্রহ্ম(শিব)দৃষ্টি করা মুখ্য ভাবনা হওয়া উচিত, ইহা নিঃসন্দিগ্ধ ॥৩৮
তথাপি রুদ্রদেবের মধ্যে পরতত্ত্বদৃষ্টি সরলভাবে ই হয়ে যায় , কারণ - সত্ত্বময় হবার কারণে তার মধ্যে পরতত্ত্বের স্ফুর্তি প্রবাহমান থাকে । অন্যত্র সেই রকম দৃষ্টি হতে পারে না কারণ অসাত্ত্বিক হবার কারণে পরতত্ত্বের সেইরকম স্ফুর্তি তাদের মধ্যে হয় না ॥৩৯
রুদ্রদেবের “আন্তরিকতা-উপাধিশরীর” সত্ত্বগুণ যুক্ত আর তমগুণ এনার স্বরূপশরীর থেকে বহির্ভূত তথা পৃথকভাবে স্থিত । বিষ্ণু দেবের আন্তরিকতা তমগুণযুক্ত, সত্ত্বগুণ তার শরীর থেকে পৃথক হয়ে বহির্ভূত ভাবে স্থিত।
ব্রহ্মার আন্তরিকতা রজঃ আর সেই রজগুণ তার স্বরূপ থেকে বহির্ভূত হয়েও স্থিত । সত্ত্বগুণের সাথে ব্রহ্মার কোন সম্বন্ধ নেই । রুদ্রদেব ও শ্রীবিষ্ণুর মধ্যে সত্ত্বগুণের সহিত সম্বন্ধ হল — একজনের আন্তরিক আর আরেকজনের বহির্ভূত । অতঃ সত্ত্বগুণের দৃষ্টি কে নিয়ে  সাধারণ জীবেরা বিবাদ করে বলতে থাকে যে হরি শ্রেষ্ঠ নাকি হর ? ।
অহো ! মোহশক্তির  উপর ! আশ্চর্য হচ্ছি ! কতটা ক্ষমতা মোহশক্তির... !
আন্তরিক সত্ত্বগুণযুক্ত রুদ্রদেবের শ্রেষ্ঠতা নির্বিবাদ হবার পরেও, বাহ্যিক সত্ত্বগুণ যুক্ত বিষ্ণুকে দেখে জীবেরা ভ্রমে পড়ে যায় । সত্ত্ব-অসংবদ্ধ হবার কারণে ব্রহ্মা কে তো বরিষ্ঠ মানা যায় না ॥৪০-৪২
অনেক বার জন্ম গ্রহণ করে শ্রৌত-স্মার্ত ধর্ম অনুষ্ঠান
করে বুদ্ধি শুদ্ধ হয়ে যায় যে সমস্ত ব্যক্তিদের, একমাত্র তাদের‌ই মনে এই নিশ্চয় হতে পারে যে হরির থেকে হর শ্রেষ্ঠ ॥৪৩
মহাপাপ যুক্ত লোকেদের হরের থেকে হরিকে শ্রেষ্ঠ মনে হয়ে থাকে ॥৪৪
নির্বিকল্প পরমতত্ত্বতে যার শ্রদ্ধা হয়, তিনি বিনা প্রয়াস করেই মোক্ষ পেয়ে যান ॥৪৫
নির্বিকল্প পরম তত্ত্ব হলেন স্বয়ং প্রভু শিব , তিনি নিজের লীলাবিগ্রহ তে সাম্ব(অম্বা সহিত), ত্রিলোচন, চন্দ্রমৌলি রূপধারী ॥৪৬
নিজ আত্মরূপ, সুখাভিন্ন, স্ফুর্তিলক্ষণ প্রমোদ দ্বারা তিনিই তাণ্ডব প্রিয়, রুদ্রাদি গুণোপাধি মূর্তির‌ও তিনি(শিব‌ই) উপাস্য ॥৪৭
এরকম পরমমূর্তি যার তিনিই সাক্ষাৎ পরমতত্ত্ব, অন্য কেউ নয় ॥৪৮
ব্রহ্মাদি কে পরতত্ত্ব ভাবা মূলত অজ্ঞান, তাই এমন অজ্ঞানতার বিষয় ভাবতে থাকা ব্যক্তি কখনোই মুক্তি লাভ করতে পারে না ॥৪৯
অতঃ শিব , যার সাম্ব আদি মূর্তি বিশেষ রয়েছে তিনিই সচ্চিদানন্দরূপ সাক্ষাৎ পরমতত্ত্ব, অন্য কেউ নয় ॥৫০

সুতরাং, ভগবান বিষ্ণুই যে মূলত তমোগুণসম্পন্ন তা প্রমাণিত হল।
ত্রিদেবের মধ্যে থাকা রুদ্র/মহেশ হল প্রকৃতপক্ষে সত্ত্বগুণসম্পন্ন।

এবার বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় সাত্ত্বিক পদ্মপুরাণ থেকেই দেখাবো পরমেশ্বর সদাশিব কে ? ভগবান রুদ্র(ত্রিদেবের অন্তর্গত মহেশ) ? বিষ্ণু কে ? আর ব্রহ্মা কে ?

♦️ প্রমাণ — ৩ ( পদ্মপুরাণ থেকে)♦️

পদ্মপুরাণ থেকে ত্রিদেবের পিতা সদাশিবের বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ ও পরিচয় 👇 

'যএকঃ শাশ্বতোদেবোব্রহ্মবন্দ্যঃ সদাশিবঃ । ত্রিলোচনোগুণাধারো গুণাতীতোহক্ষরোব্যয়ঃ ॥৩  পৃথকৃত্বাত্মনস্তাততত্র স্থানং বিভজ্য চ । 

দক্ষিণাঙ্গে সৃজাৎপুত্রং ব্রহ্মাণাং বামতো হরিম্ ॥৫ 

 পৃষ্ঠদেশে মহেশানংত্রীপুত্রান্ সৃজিদ্বিভুঃ । জাতমাত্রাস্ত্রয়োদেবা ব্রহ্মাবিষ্ণুমহেশ্বরাঃ ॥৬

(তথ্যসূত্র - পদ্মপুরাণ/ পাতালখণ্ড/১০৮ নং অধ্যায়)

সরলার্থ - সেই এক সদাশিবই শাশ্বত, ব্রহ্মা দ্বারা অৰ্চিত, ত্রিলোচন, ত্রিগুণধারী, ত্রিগুণাতীত, অক্ষর (অক্ষর ব্রহ্মস্বরূপ) এবং অব্যয়(নিরাকার পরমশিব)। তিনি নিজ ইচ্ছায় নিজেকে তিনভাগে বিভক্ত করেন। তিনি তাঁর দক্ষিণ(ডান)ভাগ থেকে পুত্রস্বরূপ ব্রহ্মাকে, বামভাগ থেকে শ্রীহরিকে এবং পৃষ্ঠদেশ থেকে মহেশ্বরকে (অর্থাৎ রুদ্র) সৃষ্টি করেন। এই ভাবে সদাশিবের তিনপুত্র ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর ত্রিদেব হিসেবে পরিচিতি পায়। [ তাই সদাশিবকে ত্রিদেবজনক বলা হয়]


 ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে পরমেশ্বর সদাশিবকে এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রভু সদাশিব ই ত্রিদেবকে প্রকট করেন, সেই ত্রিদেবের অন্তর্গত বিষ্ণু অর্থাৎ হরি এবং ত্রিদেবের মধ্যে থাকা হর বা রুদ্র/মহেশ , উভয়েই গুণযুক্ত সত্ত্বা। 

কিন্তু ত্রিদেবের উৎপন্নকারী অদ্বিতীয় পরমেশ্বর সদাশিব এই গুণসত্ত্বার ঊর্ধ্বে, অর্থাৎ কোনো গুণের প্রভাবে তিনি প্রভাবিত নন। তাই শিবের দ্বারা লোকশিক্ষার জন্য প্রকট করা ত্রিদেবের অন্তর্গত কৈলাসপতি রুদ্রদেব কে ইঙ্গিত করে তার তমঃগুণাত্মক সত্ত্বাকে শিব বলাটা যুক্তিযুক্তি নয়। কেননা, এই হর/মহেশ/রুদ্ররূপটি পরমেশ্বর সদাশিব লীলাবশত ধারণ করেছেন মাত্র ।

বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় সাত্ত্বিক পদ্মপুরাণ বলছে যে, পরমেশ্বর সদাশিব ই মাত্র পরমব্রহ্ম, তিনিই বৈষ্ণবদের আরাধ্য হরি কে জন্ম দিয়েছেন, সেই হরি অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণু হলেন পরমেশ্বর সদাশিবের পুত্র। এখানে বৈষ্ণবদের নিজেদের‌ই শাস্ত্র থেকে বিষ্ণুপরমত্ব খণ্ডিত হয়ে গিয়েছে ।

পরবর্তী শ্লোকগুলিতে পরমেশ্বর সদাশিবের দ্বারা প্রকট করা শ্রীবিষ্ণু ও কৈলাসপতি ভগবান রুদ্রের মধ্যে কে সত্ত্বগুণ আর কে তামসিক গুনের অধিকারী সেটি দেখে নেওয়া যাক।

🔥
 পদ্মপুরাণ/ পাতালখণ্ড/৬৬ নং অধ্যায়-র বর্ণনাতে এভাবে বলা হয়েছে —

বিশ্ব সৃষ্টির পূর্ব্বে যে এক-মাত্র বেদবন্দ্য সনাতন, গুণত্রয়ের আধার অথচ গুণাতীত সুতরাং অচ্যূত(মহিমা থেকে চ্যূত না হ‌ওয়া) স্বরূপ ও অবিনশ্বর, ত্রিলোচন সদাশিব ছিলেন, তাঁহার সৃষ্টিকরণের ইচ্ছা জন্মিলে, বেদত্রয়- রূপ সেই আত্মস্থ গুণত্রয়ের দিকে দেখে তাদের আত্ম(নিজ) থেকে পৃথক করে, পরস্পর পৃথক করে নিজ অঙ্গত্রয়ে স্থাপন করলেন। বিভু সদাশিব এই ভাবে দক্ষিণাঙ্গ হইতে ব্ৰহ্মা, বামাঙ্গ হতে শ্রীহরি ও পৃষ্ঠদেশ হইতে মহেশ্বর — এই তিন পুত্রের সৃষ্টি করিলেন। সেই ব্রহ্মবিষ্ণু-মহেশ্বররূপী তিন পুত্র জাত হওয়া মাত্রই সদাশিবকে বাক্য উচ্চারণ পূর্বক বললেন, — আপনি কে ? এবং আমরাই বা কে ? 

শিব সেই পুত্রগণকে বললেন,— আমি তোমাদের পিতা, তোমরা আমার পুত্ৰ । হে পুত্রগণ ! তোমরা কর্ম্মের হেতু- ভূত এই গুণত্রয়ের ভজনা কর। 
পুত্রেরা বললেন — হে ঈশ্বর ! আমাদের মধ্যে কে কত কাল পর্যন্ত কোন গুণের ভজনা করবে ? এবং কি প্রকারেই বা গুণসমূহের নিবৃত্তি হবে ? সেই বিষয়ে আমাদের বলুন।

শিব বললেন — যত পর্যন্ত তোমাদের জ্ঞান বা আইও থাকবে তত পর্যন্ত একেক জন এক একটি গুণ অবলম্বন করে থাকবে, সদাশিব ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও মহেশ্বর কে যথাক্রমে নিবৃত্তি হবে।
সত্ত্ব রজঃ ও তমঃ গুণ গ্রহণ করতে বললে ব্রহ্মা সৰ্বগুণ গ্রহণ করলেন । কিন্তু ওই গুণ ধারণের শক্তিমান হওয়া দূরের কথা তা চালনা করবার জন্য‌ও সক্ষম হলেন না তিনি। সুতরাং ব্রহ্মা তা ত্যাগ করে রজোগুণ গ্রহণ করলেন, সেটিও চালনা করতে অক্ষম হয়ে তমোগুণ গ্রহণ করলেন কিন্তু সেই গুণ চালনা করতেও সক্ষম না হয়ে ব্রহ্মা রোদন করতে লাগলেন। 
শ্রী বিষ্ণু বামহস্ত দ্বারা রজোগুণ ধারণ করলেন, —মহেশ্বরও দুই আঙ্গুল দ্বারা তমো- গুণ ধারণ করলেন। অনন্তর মহেশ দুই আঙ্গুল দ্বারা সত্ত্ব ও বিষ্ণুকেও ধারণ করলেন এবং ব্রহ্মাকে পাদপীঠে ধারণ করে নৃত্য করতে লাগলেন।
  তরুণ গোদুগ্ধের ন্যায় বিশুদ্ধ শুভ্রবর্ণের দিব্যদেহধারী ত্রিনেত্র মহেশ তমঃ-সত্ত্বগুণ দুটি ও রজোধারী বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাকে ধারণ করে আনন্দে নৃত্য করছেন দেখে সদাশিব তার সেই পুত্রগণকে বর দেবার জন্য বললেন।
সদাশিব বললেন, – হে পুত্র! আমি তোমার উপর প্রীত হয়েছি, এবার ইচ্ছা মতো বর গ্রহণ করো ।
তখন মহেশ তার পিতা সদাশিবকে বললেন — আপনি আমাকে বক্ষ্যমাণ বর প্রদান করুন । হে শিব ! হে অব্যয় !  আমাকে উদ্দেশ্যে করে পূজা করলে আপনারই পূজা করা হয়, আপনি সদা আমার আত্মার অবস্থান করেন, ও আমিও আপনার তুল্য হই, আমাকে এই তিনটি বর দান করুন।
 সদাশিব বললেন,—তাই হবে, এই বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। হে অনঘ ! এই রক্তোজ্জ্বলের ন্যায় ব্রহ্মা-বিষ্ণুও আমার পুত্র। এরা আমার বাহু- মূলস্থ-রোম হতে উৎপন্ন এবং আমার ই স্বরূপ প্রকাশ। 
এই কথা বলে সদাশিব ব্রহ্মাকে বললেন, তুমিও একটি গুণ আশ্রয় করো। ব্রহ্মা বললেন,—হে ঈশ্বর । আমি আপনার নির্দ্দিষ্ট সৰগুণ ধারণে অক্ষম, অতএব আমি রজোগুণ গ্রহণ করি, বিষ্ণু সত্ত্বগুণ গ্রহণ করুন ।
আর অবশিষ্ট তমোগুণ এই মহেশ্বর ধারণ করুন।১—২২।

 শম্ভু ঋষি বললেন, হে রাম! সেই ত্রিদেব উক্ত তিনটি গুণ সবসময়ের জন্য ধারণ করতে অক্ষম হয়ে, বহনশক্তি লাভের নিমিত্তে সকলে তারা একত্রিত হয়ে শিবের কাছে গিয়ে বললেন,
  হে ভগবন্! আমরা সর্ব কালের গুণ তিনটি ধারণে অক্ষম হয়েছি ; অতএব অনুগ্রহ করে নিত্যধারণ করবার শক্তির বর দান করুন আমাদের । অনন্তর সদাশিব তাদের বাক্য শ্রবণ করে বললেন —বিদ্যাশক্তিকেই সৰ্বশক্তি বলা যায় ; বিদ্যা ও অবিদ্যা উভয়েই গুণত্রয়কে আশ্রয় করে রয়েছে, তোমরা গুণত্রয়কে দগ্ধ করে গুণত্রয়ের যে সারভূত পদার্থমাত্র থাকে তা ধারণ করো । গুণত্রয় দাহের পর সেখানে যা কিছু থাকবে, তোমরা সেটিই ধারণ করবে। 
শিববাক্য শ্রবণ করে তার পুত্রেরা বললেন, হে পিতা ! অগ্নি ব্যতিরেকে দাহকাৰ্য হতে পারে না। 
শিব বললেন, মহেশের চক্ষুতে বহ্নি(অগ্নি) আছে । এই গুণত্রয় বেদরূপা ধেনু ও গুণত্রয়াশ্রিতা-বিদ্যা ঐ ধেনুর শুভ গোময় এবং বেদান্তর্গত উপনিষৎ উহার মূত্র হইবে; অনন্তর ঐ গোময়(শুকিয়ে,দহন করে) ভস্ম করতে হবে। স্মৃতিসমূহ যে বেদরূপা ধেনুর বৎস, গোময়ও সেই ধেনু হ‌ইতে উৎপন্ন হয়েছে ।
ভস্ম গ্রহণ ও প্রণবদ্বারা প্রমার্জনপূর্ব্বক ত্রিনেত্র, ত্রিগুণাধার, ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বরের জনক বিভূ  সৰ্ব্বব্যাপী সদাশিবকে স্মরণ করে ‘শিবায় নমঃ' মন্ত্র দ্বারা ললাটে, ‘শিবাভ্যাং নমঃ' মন্ত্র দ্বারা বাহু দুটিতে, ‘অঘোরায় নমঃ' মন্ত্র দ্বারা উভয় প্রকোষ্ঠে ‘ভীমায় নমঃ' মন্ত্র যারা পৃষ্ঠে ‘নীলকণ্ঠায় নমঃ' মন্ত্র দ্বারা গ্রীবার পশ্চাদ্ভাগেএবং ‘সৰ্ব্বাত্মনে নমঃ' মন্ত্রদ্বারা মস্তকে ত্রিপুণ্ড্র দিয়ে হাত দুটি প্রক্ষালনান্তর কর্ম্মানুষ্ঠান করবে। শ্রীশিব বললেন,—হে পুত্রগণ তোমরা এই প্রকারে ভস্ম প্রস্তুত করে সর্ব্বাঙ্গে লোপন করলে গুণসমূহ ধারণে সক্ষম হয়ে প্রজা সৃষ্টি করবে। 
ঋষি শম্ভু বললেন, হে রাম ! তখন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ সদাশিব কর্তৃক এইভাবে আশ্বস্ত হয়ে বিধি অনুসারে ভস্ম ধারণ করে পরস্পরের প্রতি স্পর্দ্ধাপূর্বক সদাশিবকে প্রণাম করে বললেন, আমাদের মধ্যে কে কোন গুণ ধারণ করবে ?

তা শ্রবন করে সদাশিব বললেন, কর্মশক্তি ও জ্ঞান মুখরেনুর মতো নাশ প্রাপ্ত হবে, কিছু মন্বন্তরে ব্রহ্মার  নাশ হবে, সুতরাং ব্রহ্মা অল্প আয়ুসম্পন্ন হবেন। হে ব্রহ্মণ ! তুমি রজগুণের আশ্রয় হয়ে আমাকে(সদাশিবকে) ব্রহ্মাণ্ডমালা ভূষিত বেদরক্ষক বলে বুঝতে পারবে না, ব্রহ্মাণ্ড সমূহের পালন কার্যে ব্রহ্মার থেকেও অধিক শ্রীবিষ্ণুর বল ও আয়ু বেশি।
মহেশ বা আমার (সদাশিবের) চারটি নিঃশ্বাসে বিষ্ণুর আয়ু পর্যবসিত হবে, ব্রহ্মার থেকে সত্যগুণ বেশি থাকায় বিষ্ণু সর্বগুণাবলম্বি হবেন। সর্বকালে আমাকে (সদাশিবকে) জানতে পারবেন কখনো বিস্মৃত হবেন না এবং জগতে তার কেবল সাত্ত্বিকী পূজাই বিহিত হবে , রাজসী ও তামসী পূজা হবে না। শান্ত মঙ্গলময় সত্ত্বগুণাবলম্বী মহেশ্বরে রজোগুণেরও বিদ্যমানতা থাকায় তিনি নীলবর্ণের তমোগুণও ধারণ করবেন।
সর্ব প্রথমে সত্ত্ব, রজ ও তমঃ এই তিনটি গুণ‌ই মহেশ ধারণ করেছিলেন বলে শঙ্করের সাত্ত্বিকী, রাজসী ও তামসী এই পূজাই বিহিত হবে ।
 তমোগুণযুক্ত রজকে দারুণ বলে; শঙ্কর, তমোরজো-মিশ্রিত দারুণ পূজা দ্বারা পূজিত হলে উত্তম গতি দান করেন। রজস্তমোমিশ্রিত পুজা শাস্ত্র-বিহিত হলেও তদ্বিচ্ছিন্না অর্থাৎ শুধুমাত্র রাজসী বা শুধুমাত্র তামসী পূজা দ্বারা পূজিত হলেও শঙ্কর ফলদায়ক হন ; সত্ত্বসংযুক্ত তমো "মিশ্রক" নামে অভিহিত ; লোকমঙ্গলকর শঙ্কর তমঃ
সৰ্ব মিশ্ৰিত (মিশ্রক ) পূজা দ্বারাও প্রীতি প্রাপ্ত হন, সুতরাং সেই সব পূজা সফল। 
বিভু শঙ্কর, যে কোন দেহধারী জীব কর্তৃক উল্লেখিত নিয়মসমূহের যে কোন নিয়মদ্বারা পূজিত হলেও আশু ফল দান করেন ॥৫৭ – ৭৮॥
ঋষি শম্ভূ বললেন,—হে অনঘ রাম ! এই আমি ' তোমার নিকট বক্তা ও শ্রোতার সর্বপাপ বিনাশক ভস্ম উৎপত্তির বিষয় সংক্ষেপে বর্ণন করলাম ॥৭৯


♦️ প্রমাণ — ৪ (ভাগবতপুরাণ থেকে)♦️

এবার বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় তথাকথিত সাত্ত্বিক ভাগবত পুরাণ থেকে দেখা যাক ত্রিদেবের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে আর কে সাত্ত্বিক ও কে তামসিক।
🔥
ভাগবত পুরাণের ৮ম স্কন্ধের ৭ম অধ্যায়ের ২৩নং শ্লোকে
বলা হয়েছে — 
গুণময়‌্যা স্বশক্ত্যাস্য সর্গস্থিত্যপ্যয়াম্বিভো ।
ধৎসে যদা স্বদৃগ্ ভূমন- ব্রহ্মবিষ্ণুশিবাভিধাম ॥ ২৩
[তথ্যসূত্র — ভাগবত পুরাণ/৮ম স্কন্ধ/৭ম অধ্যায়]

অর্থ — হে প্রভু শিব! আপনি নিজের গুণময়ী শক্তির দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করার জন্য আপনি অনন্ত ও একরস পরব্রহ্ম হয়েও ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্ররূপী শিব নাম ধারণ করেন ॥২৩

🔸 ভাগবত পুরাণ বলছে, পরমেশ্বর শিব ই ত্রিদেবের রূপ ধারণ করেন ।

এবার গুণ বিষয়ে ভাগবত পুরাণ কি বলছে তা দেখে নেওয়া যাক। 

ভাগবতপুরাণে পরমেশ্বর শিব কে সত্ত্বগুণধারী সহ ত্রিগুণাত্মক ও ত্রিগুণাতীত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পরিষ্কার ভাবে , দেখুন 👇 

নমঃ শিবায় শান্তায় সত্ত্বায় প্রমৃড়ায় চ । রজোজুষেঽপ্যঘোরায় নমস্তুভ্যং তমোজুষে ॥ ১৭ 
(তথ্যসূত্র - ভাগবতপুরাণ/ ১২নং স্কন্ধ/১০ম তম অধ্যায়)

✅ অর্থ — ঋষি মার্কেণ্ডেয় মহাদেবকে বললেন,
আমি আপনার ত্রিগুণাতীত সদাশিব স্বরূপকে ও সত্ত্বগুণযুক্ত শান্ত শিব স্বরূপকে নমস্কার করি। আপনার রজোগুণযুক্ত সর্বপ্রবর্তক স্বরূপ এবং তমোগুণযুক্ত অঘোর স্বরূপকে নমস্কার করি। 
(লক্ষ্য করুন - পরমেশ্বর শিব শুধু তমোগুণী নন বরং তিনি সত্ত্বগুণধারী এবং রজোগুণধারী হয়েও এই তিনগুণেরও অতীত সদাশিব। যেহেতু, পরমেশ্বর সদাশিব তিনটে গুণ ধারণের মাধ্যমে ত্রিদেব রূপে প্রকটিত হয়েছেন, তাই সেই দৃষ্টিকোণের দ্বারা পরমেশ্বর শিব কে ত্রিগুণাত্মক বলা হয়, কিন্তু আসলেই তিনি এই তিনটে গুণের প্রভাবের থেকে মুক্ত, তাই তাকে ত্রিগুণাতীত বলা হয়)
🔥

সুতরাং, বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় তথাকথিত সাত্ত্বিক পদ্মপুরাণ ও ভাগবতপুরাণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে বেশ কয়েকটি পরমসত্য। সেগুলি হল —

(১) সদাশিব ই একমাত্র পরমেশ্বর পরমব্রহ্ম, তার বাম‌ অঙ্গ থেকে বৈষ্ণবদের আরাধ্যদেবতা শ্রীহরি বিষ্ণুর জন্ম হয়েছে।
(২) শ্রীহরি বিষ্ণু তমোগুণ ধারণে সক্ষম নন, তিনি অক্ষম। কিন্তু মহেশ তিনটি গুণ‌ই ধারণে সমর্থ। 
(৩) ত্রিদেবের মধ্যে থাকা মহেশ‌/রুদ্রদেব হলেন সত্ত্বগুণসম্পন্ন। 
(৪) ভগবান রুদ্রের পূজা সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক তিনভাবেই পূজা করা যায়।
(৫) ত্রিদেবের অন্তর্গত কৈলাসপতি রুদ্রের পূজা যেভাবেই করা হোক, তাতেই তিনি তুষ্ট হয়ে শুভফল প্রদান করেন। এর দ্বারাই শিবপূজা হয়ে যায়। কারণ রুদ্রের পূজাই শিবের পূজা ।
(৬) পরমেশ্বর শিব সমস্ত গুণের ঊর্ধ্বে ।
(৭) পরমেশ্বর শিব ই ত্রিদেবের উৎপত্তি কর্তা।
_______________________________________________

এবার দেখুন
 সাক্ষাৎ শ্রুতি অর্থাৎ বেদ শাস্ত্র কি বলছে 👇

নমােঽস্তু নীলগ্রীবায় সহস্রাক্ষায় মীঢুষে ।

অথাে যেঽ অস্য সত্বানােঽহং তেভ্যোঽকরন্ নমঃ ॥ ৮ ॥

(তথ্যসূত্র — শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৬/৮ নং মন্ত্র)

অর্থ — নীলকন্ঠ, সহস্র অক্ষ(চক্ষু) বিশিষ্ট, সিঞ্চনকারি(মৃত্যুঞ্জয় ত্র্যম্বক শিব)
রুদ্রের উদ্দেশ্যে আমি নমস্কার করি। আপনার যে সত্ত্ব(মঙ্গলময়) স্বরূপ আছে তার উদ্দেশ্যে আমি নমস্কার করি ॥ ৮
_______________________________________________


♦️এবার দেখবো পুরাণ মীমাংসার জন্য পরমেশ্বর শিবের থেকে প্রাপ্ত শৈব আচার্য সাবর্ণীমুনিকৃত পৌরাণিক সংহিতা (উপ-আগম) কি বলছে ।

शास्त्रे यत्र यत्र शिवमाहात्म्यं अस्ति वर्तते तत् परमं सात्त्विकम् । 
आगम वेद पुराण-शिवरहस्यादि च इतिहासः सर्वं शिव महावाक्यम् ॥ ५
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/৫নং শ্লোক)
✅ অর্থ — শাস্ত্রের যেখানে যেখানে শিব মহিমা রয়েছে তাহাই সাত্ত্বিক। আগম, বেদ, পুরাণ, শিবরহস্য আদি ই ইতিহাস সকল‌ই শিবের‌ই মহাবাক্য । 

तथापि सर्वेषु शास्त्रेषु परा च अपराविद्यास्ति ।
यत्र शिवमहात्म्यं विद्यते तत् परा विद्या नात्र संशय ॥ ६
यत्र च पार्वतीवल्लम स्वमहात्म्यं गुह्यं भवति च ।
विष्ण्वादिदेवान् श्रेष्ठान् वदति तत् सर्वं अपरा विद्या ॥ ७
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/৬-৭নং শ্লোক)
✅ অর্থ — তথাপি সমস্ত শাস্ত্রে পর ও অপর বিদ্যা রয়েছে। যে স্থানে শিব মাহাত্ম্য রয়েছে তাহাই পরাবিদ্যা। আর যে স্থানে মহেশ্বর নিজের মাহাত্ম্য গোপন করে বিষ্ণু আদি দেবতাকে শ্রেষ্ঠ বলেছেন, সে সমস্ত অপরাবিদ্যা(মায়াবাক্য)।

अज्ञः नरः तस्मिन्विषयेअज्ञत्वात् रुद्रमुखे विष्ण्वादिदेवतानां ।
प्रशंसां श्रुत्वा मोहवशात् तान् एव शिवात् अपि श्रेष्ठं मन्यते ॥ ८
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/৮নং শ্লোক)
✅ অর্থ — অজ্ঞ নর সেই বিষয়ে অজ্ঞাত থাকায় রুদ্রমুখে বিষ্ণু আদি দেবতাদের প্রশংসা শ্রবণ করে মোহবশত তাদের‌ই শিব হতেও শ্রেষ্ঠ মনে করে ।

विष्णुः यथा बहिरन्तः सात्त्विकः अपि तु अन्तः ।
मूलतः तामसिकत्वात् स कृष्णवर्ण स्थूलंदेहयुक्तः ॥ ९
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/৯নং শ্লোক)
✅ অর্থ — শ্রী বিষ্ণু যেমন বাহিরে সাত্ত্বিক হলেও অন্তরে মূলতঃ তামসিক হবার কারণে তিনি কৃষ্ণবর্ণ দেহসম্পন্ন ।

रुद्रदेवः यथा बहिः तामसिकगुणस्य आचरं दर्शयति तथापि।
सः अन्तः मूलतः सात्त्विकः सन् श्वेतवर्णयुक्तदेहः अस्ति ॥ १०
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/১০নং শ্লোক)
✅ অর্থ — রুদ্রদেব তেমন‌ই বাহিরে তামসিক গুণের ব্যবহার দেখালেও তিনি অন্তরে মূলত সাত্ত্বিক হবার নিমিত্তে শ্বেতবর্ণের দেহসম্পন্ন ।

तथैव वैष्णव पुराणानि बाह्य दृष्ट्या संसार संवृत्तिम् ।
इच्छन्ति मोहग्रस्तस्य व्यक्तिषु सात्त्विकानि अस्ति ॥ ११
किन्तु जीवस्य परमं ज्ञाने मार्गे महाविघ्नं कर्तुं ।
कारणात् एषः वास्तवतः महाघोर महातामसिकः‌ ॥ १२
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/১১-১২নং শ্লোক)
✅ অর্থ — ঠিক তেমন‌ই বৈষ্ণবপুরাণ গুলি বাহ্যিক দৃষ্টিতে সংসারে আবদ্ধ থাকতে চাওয়া মোহগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য সাত্ত্বিক, কিন্তু জীবের পরমজ্ঞানের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবার কারণে ইহা প্রকৃত পক্ষে তামসিক ।

अनत्रे शैवपुराणानि बाह्यतः मायामयं 
व्यक्तीनां घोरतरं तामसिकरूपम् ।
किन्तु यः वैराग्ये अनुरागी तस्य कृते एषः 
परज्ञानप्राप्तौ मार्गः च वास्तविकसात्त्विकः ॥१३
(পৌরাণিক সংহিতা/৫ম পটলঃ(অধ্যায়)/১৩নং শ্লোক)
✅ অর্থ — কিন্তু শৈবপুরাণ গুলি বাহ্যিক ভাবে মায়ায় আচ্ছন্ন ব্যক্তিদের কাছে তামসিক স্বরূপ। কিন্তু যারা বৈরাগ্যে অনুরাগী সেই ব্যক্তির জন্য ইহা পরমজ্ঞান লাভের পরম উত্তম মার্গ হ‌ওয়া‌য় ইহাই প্রকৃত সাত্ত্বিক।

সিদ্ধান্ত — 

ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু যে প্রকৃত পক্ষে তামসিক, এ কারণেই তার দেহ বর্ণ কালো বর্ণের। তা প্রমাণিত হয়ে গেল ।

ভগবান রুদ্র তামসিক নন, তিনিই প্রকৃতপক্ষে সাত্ত্বিক, আর এই কারণেই তার দেহ দুগ্ধের মতো শ্বেত বর্ণের। আর শ্বেত শুভ্র বর্ণ সর্বদাই শুভ তথা কল্যাণের প্রতীক। মূলত তিনি সদাশিবের অবতার তাই তিনি সদাশিবের‌ই দেহবর্ণ লাভ করেছেন।যা তার শুভ শক্তির পরিচয়।

সর্বশেষে, শৈবদের আরাধ্য শিবলোকবাসী পরমেশ্বর সদাশিব - সত্ব, রজো, তমো এই তিন গুণের উর্ধ্বে, অর্থাৎ আমাদের আরাধ্য সদাশিব গুণাতীত (গুণের অতীত) । তাই তার দেহ বর্ণ শ্বেত তথা স্বর্ণালী আভাযুক্ত । রুদ্রদেব শিবের‌ই সাক্ষাৎ অবতার হবার কারণে তিনিও শ্বেত (শুভ সাত্ত্বিক) বর্ণের দেহযুক্ত।

এক‌ই ভাবে
 সকল পুরাণের মধ্যে যেখানে যেখানে বিষ্ণুকে সর্বোচ্চ ঘোষনা করা হয়েছে, তা যে মোহনাত্মক মাত্র, তা পুরাণ মীমাংসায় প্রমাণিত। 
আর যেহেতু বিষ্ণুর মতোই বৈষ্ণবপুরাণগুলি উপরে উপরে নামমাত্র সাত্ত্বিক, কিন্তু ভেতরে তামসিকগুণে পরিপূর্ণ। তাই সকল বৈষ্ণবীয় পুরাণগুলিই প্রকৃতপক্ষে তামসিক অর্থাৎ যা মোক্ষ প্রদান করে না, বরং জাগতিক সংসারের মায়ায় আবদ্ধ করে রাখে, তাই এগুলি সকল জীবের জন্য মোহনাত্মক ও অশুভ। 
আর শৈবপুরাণগুলি প্রকৃত পক্ষে সাত্ত্বিক অর্থাৎ মোক্ষ লাভের পথ প্রদর্শনকারী পরম মঙ্গলময় তথা শুভ শাস্ত্র।
এমনকি শিব মাহাত্ম্য যেখানে যেখানে রয়েছে সেটিই পরম সাত্ত্বিক, কিন্তু যেখানে অন্য দেবতার চেয়ে মহাদেবকে নিকৃষ্টতম দেখানো হয়েছে, তা মোহনাত্মক বলে চিহ্নিত করেছে পৌরাণিক সংহিতা ।
তাই,
বিষ্ণু ও বৈষ্ণবীয় পুরাণ গুলি তামসিক।
রুদ্রদেব ও শৈব পুরাণ গুলি সাত্ত্বিক এবং পরমেশ্বর শিব হলেন ত্রিগুণাতীত পরমব্রহ্ম।

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 
হর হর মহাদেব 🚩 

সত্য উন্মোচনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 
©কপিরাইট ও প্রচারে — international Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমবার ব্রত বিধি ও মাহাত্ম্য (শৈবপুরাণোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ১ (মূলপূজা)

বৃহৎ শিবার্চন বিধি পুস্তক (শৈব আগমোক্ত)

শিবরাত্রির ব্রত বিধি ২ (প্রহরপূজা)

পরমেশ্বর শিব বৈষ্ণব নন