বৈষ্ণবীয় চতুর্ব্যূহ সিদ্ধান্ত খণ্ডন ও শিব পরমত্ব স্থাপন
বৈষ্ণবদের চতুর্ব্যূহ তত্ত্বের মূল রহস্য উদঘাটন ও মিথ্যাচারের খণ্ডন করে পরমেশ্বর শিবের পরমত্ব স্থাপন
আজকালকার নব্য গজিয়ে উঠা কিছু তথা কথিত রামানুজী বৈষ্ণবরা দাবী করে যে, বিষ্ণুর যে চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব রয়েছে তা সদাশিবের ঊর্ধ্বে। চতুর্ব্যূহ তত্ত্বের অন্তর্গত— বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, অনিরুদ্ধ ও প্রদ্যুম্ন।
এদের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা টেনে ধরে বোঝাতে চাইছে যে, এনারাই সর্বোচ্চ। এরা সদাশিব থেকেও ঊর্ধ্বে এবং সদাশিব এদের ধ্যান, জপ, পূজা ইত্যাদি করে।
মহাভারত থেকে কিছু শ্লোক টেনে নিয়ে, এটা দাবী করে যে, অনন্ত জগৎ চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব দ্বারাই পালিত হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে ও সংহার ও হচ্ছে৷ আবার এখানে সঙ্কর্ষণকে সদাশিব বা মহাবিষ্ণু বলা হচ্ছে। এক কথায় চতুর্ব্যূহ তত্ত্বই ব্রহ্ম, এমনটা দাবী তথাকথিত নব্য রামানুজীদের।
মূল আলোচ্য বিষয়ে আসা যাক — শাস্ত্র থেকে বারবার প্রমাণ করে দেওয়ার পরেও এদের মাথায় কথাটা ঢোকেই না যে, বিষ্ণুর জন্ম সদাশিব থেকেই হচ্ছে। শুধু মাত্র স্থিতি কৃত্য টা পরিচালনা করার জন্য। আর বিষ্ণু'ই স্থিতি কৃত্য পরিচালনা করার জন্য বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, অনিরুদ্ধ ও প্রদ্যুমন এই চারটি রূপ প্রকট করে। এরা স্থিতি কৃত্যের আলাদা আলাদা কার্য পরিচালনা করে।
চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব বোঝার আগে জানতে হবে পঞ্চব্রহ্ম কে পঞ্চচক্র কি!
👉প্রথমে জানা যাক পঞ্চব্রহ্ম সম্পর্কে—
[“কৃষ্ণ-যজুর্বেদ- তৈত্তিরীয় আরণ্যক- ১০ম প্রপাঠক—১৭/২১”] [“শিবমহাপুরাণ- বিদ্যেশ্বর সংহিতা- অধ্যায়—১০”] [শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫”] [পঞ্চব্রহ্ম উপনিষদ ও যোগশিখা উপনিষদ] [পূর্ব কামিকাগম-/চতুর্থ পটল] অনুযায়ী পঞ্চব্রহ্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও পরমেশ্বর সদাশিবের স্বরুপ।
পঞ্চব্রহ্ম বলতে সদা শিবের পাঁচটি মস্তককে বোঝায় যাঁর দ্বারা পরমেশ্বর সদাশিব পঞ্চকৃত্য করতে পারেন।
সদাশিবের এই পাঁচটি মস্তকের নাম হলোঃ-
![]() |
🕉️🔱পরমেশ্বর সদাশিব🔱🕉️ |
সদ্যোজাত (পশ্চিমমুখ), বামদেব (উত্তরমুখ), অঘোর (দক্ষিণমুখ), তৎপুরুষ (পূর্বমুখ), ঈশান (ঊর্ধমুখ)।
(১)সদ্যোজাত হলেন - সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ~ মাটিতত্ত্ব- অ-কার
(২)বামদেব হলেন - স্থিতিকর্তা বিষ্ণু ~ জলতত্ত্ব- উ-কার
(৩)অঘোর হলেন - লয়কর্তা রুদ্র ~ অগ্নিতত্ত্ব- ম-কার
(৪)তৎপুরুষ হলেন - তিরোভাবকর্তা ঈশ্বর/মহেশ্বর ~ বায়ুতত্ত্ব- বিন্দু
(৫)ঈশান হলেন - অনুগ্রহকর্তা সদাশিব ~ আকাশতত্ত্ব- নাদ
আর পরমেশ্বর সদাশিব হলেন পঞ্চব্রহ্মময় পঞ্চকৃত্যকারী পঞ্চভূতের অধীশ্বর এবং সাক্ষাৎ ব্যক্তপ্রণব ॐ-কার।
“প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।
ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত” ॥ ২০
[ঋগ্বেদ সংহিতা/খিলানি/চতুর্থ অধ্যায়/১১ নং খিলা]
[বিঃদ্রঃ- পঞ্চব্রহ্মের ধারণা আসলে আরও জটিল।শৈব আগমগুলিকে গভীর ভাবে অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে আসলে পঞ্চব্রহ্ম নাম গুলি হল –
মূর্তিব্রহ্ম, তত্ত্বব্রহ্ম, ভূতব্রহ্ম, পিণ্ডব্রহ্ম, ও কলাব্রহ্ম।
এই কলাব্রহ্মকেই সাধারণ ভাষায় এবং জটিলতা এড়াতে আমরা সদ্যোজাত, বামদেব ইত্যাদি পাঁচটা ভাবে বিভক্ত করে পঞ্চব্রহ্ম বলে থাকি।(ব্রহ্মের পঞ্চবক্রে পাঁচটি কৃত্যের জন্য এক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বা কে পঞ্চব্রহ্ম বলে সম্বোধন করা হয় মাত্র)
এসম্পর্কে বিশদ আলোচনা গুরুপরম্পরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাই তা গোপনীয় রাখা হলো]
👉“শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫” অনুযায়ী জগৎ পরিচালনার পাঁচটি চক্র হলো—
১.সৃষ্টি চক্র (অধিপতি ব্রহ্মা)
২.স্থিতি চক্র (অধিপতি বিষ্ণু)
৩.সংহার চক্র (অধিপতি রুদ্র)
৪.তিরোভাব চক্র (অধিপতি মহেশ্বর)
৫.অনুগ্রহ চক্র (সাক্ষাৎ ঈশান সদাশিব)
👉আবার প্রত্যেকটি চক্রের অধিপতি, সেই চক্রের কৃত্য প্রতিপাদন করার জন্য চারটা স্বরূপ প্রকট করেন।
👉সৃষ্টি চক্রে ব্রহ্মার চারটি রূপ হলো—
১. হিরণ্যগর্ভ
২. বিরাট
৩. পুরুষ
৪. উত্তম
এই চারজন সৃষ্টি চক্রের অধীনে থাকেন এবং নিজেদের কার্য পরিচালনা করেন। বিষ্ণুর সহস্র অংশ থেকে ব্রহ্মা প্রকট হয়।
विष्णोरेव सहस्त्रांशात्संबभूव पितामहः।
सद्योजातमुखात्मा यः पृथिवीतत्त्वनायकः ॥ ३०
हिरण्यगर्भाद्यस्यैव व्यष्टिरूपं चतुष्टयम्।
हिरण्यगर्भोऽथ विराट् पुरुषः काल एव च ॥ ३२
[শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫]
অর্থ — বিষ্ণুর হাজার ভাগের একটি থেকে পিতামহ ব্রহ্মা উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি শিবের সদ্যোজাত নামক মুখস্বরূপ আর পৃথিবীতত্ত্বের অধীশ্বর ॥৩০
হিরণ্যগর্ভ আদি চার এনারই ব্যষ্টিরূপ, যা হিরণ্যগর্ভ, বিরাট্ , পুরুষ আর কাল নামে বিখ্যাত ॥ ৩২
👉স্থিতি চক্রে বিষ্ণুর চারটি রূপ হলো—
১. বাসুদেব
২. সঙ্কর্ষণ
৩. অনিরুদ্ধ
৪. প্রদ্যুম্ন
এই চারজন স্থিতি চক্রের অধীনে থাকেন এবং নিজেদের কার্য পরিচালনা করেন। রুদ্রের সহস্র অংশের একটি অংশ থেকে বিষ্ণু প্রকট হয়।
रुद्रमूर्तेः सहस्त्रांशाद्विष्णोश्चैवाभवज्जनिः ।
स वामदेवचक्रात्मा वारितत्त्वैकनायकः ॥ २१
वासुदेवोऽनिरुद्धश्च ततः संकर्षणः परः।
प्रद्युम्नश्चेति विख्यातं स्थितिचक्रमनुत्तमम् ॥ २४
[শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫]
অর্থ — রুদ্রমূর্তির হাজার ভাগের একটি থেকে বিষ্ণু উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি শিবের বামদেব নামক মুখস্বরূপ আত্ম চক্রের স্বরূপ আর জলতত্ত্বের নায়ক ॥২১
এই উত্তম স্থিতি চক্র বাসুদেব, অনিরুদ্ধ, সংকর্ষন তথা প্রদ্যুম্ন নামে বিখ্যাত ॥২৪
👉সংহার চক্রে রুদ্রের চারটি রূপ হলো—
১. শিব
২. ভব
৩. মৃড
৪. হর
এই চারজন সংহার চক্রের অধীনে থাকেন এবং নিজেদের কার্য পরিচালনা করেন। মহেশ্বরের সহস্র অংশ থেকে রুদ্র প্রকট হয়।
महेश्वरसहस्त्रांशाद् रुद्रमूर्तिरजायत।
अधोरवदनाकारस्तेजस्तत्त्वाधिपश्च सः ॥ ११
गौरीशक्तियुतो वामे सर्वसंहारकृत्प्रभुः ।
अस्यैव व्यष्टिरूपं स्याच्छिवाद्यथ चतुष्टयम् ॥ १२
शिवो हरो मुडभवी विदितं चक्रमद्भुतम्।
संहाराख्यं महादिव्यं परमं हि मुनीश्वर ॥ १३
[শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫]
অর্থ — রুদ্রমূর্তির উৎপত্তি মহেশ্বর(সদাশিব)-এর হাজার অংশের একটি অংশ থেকে, তিনি অঘোর মুখের আকার সম্পন্ন তথা তেজ (অগ্নি) তত্ত্বের স্বামী ॥১১
সকলের সংহারকারী সেই প্রভু রুদ্রদেব তার বামভাগে তার শক্তি গৌরীর সাথে স্থিত তথা শিবাদি চার রূপ এনারই ব্যষ্টিরূপ। হে মুনীশ্বর্ শিব, হর, মৃড আর ভব এগুলি তারই চার নাম, যা সুপ্রসিদ্ধ, অদ্ভুত কথা মহাদিব্য সংহার নামক চক্র বলে বিখ্যাত ॥১২-১৩
👉তিরোভাব চক্রে মহেশ্বরের চারটি রূপ হলো—
১. ঈশ
২. বিশ্বেশ্বর
৩. পরমেশ
৪. সর্বেশ
এই চারজন তিরোভাব চক্রের অধীনে থাকেন এবং নিজেদের কার্য পরিচালনা করেন। সদাশিবের সহস্র অংশ থেকে মহেশ্বর প্রকট হয়।
सदाशिवसहस्त्रांशान्महेशस्य समुद्भवः। पुरुषानन्तरूपत्वाद्वायोरधिपतिश्च सः ॥ ३
तत्र सर्वेश्वरा यास्ते देवताः परिकीर्तिताः।
परब्रह्मात्मकाः साक्षान्निर्विकल्पा निरामयाः ॥ ८
[শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫]
১. মহেশ্বর
২. রুদ্র
৩. বিষ্ণু
৪. ব্রহ্মা
[তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/কৈলাস সংহিতা/অধ্যায় ১৫]
অর্থ — আকাশের অধিপতি প্রভু সদাশিব সমষ্টি স্বরূপ । মহেশ্বর আদি চাররূপ (মহেশ্বর, রুদ্র, বিষ্ণু, ব্রহ্মা) পরমেশ্বর শিবের ব্যপ্তপ্রকাশ ।
পরমেশ্বর সদাশিব পঞ্চকৃত্য প্রতিপাদন করার জন্য, নিজের ডান ভাগ থেকে ব্রহ্মা, বাম ভাগ থেকে বিষ্ণু ও হৃদয় থেকে রুদ্রকে সৃষ্টি করেন। এরা যথাক্রমে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় এই তিনটা কৃত্য পরিচালনা করে। বাকি দুটো কৃত্য তিরোভাব আর অনুগ্রহ তা স্বয়ং সদাশিব করে থাকেন। [শিবমহাপুরাণ- বিদ্যেশ্বর সংহিতা- অধ্যায়—১০]
👉ত্রিদেব থাকে মহেশ্বরের অধীনে এবং মহেশ্বরেই লয় প্রাপ্ত হয়।
কোটিকোট্যযুতান্যত্র ব্রহ্মণ্ডানি মম প্রিয়ে।
জলবুদ্বুদবদ্দেবি সঞ্জাতানি তু লীলয়া।।৪৫
তত্রতত্র চতুর্ব্বক্ত্রা ব্রহ্মাণো হরয়ো ভবাঃ।
সৃষ্টাঃ প্রধানেন তদা লব্ধা শম্ভোন্তঃ সন্নিধিঃ।।৪৬
লয়ং চৈব তথান্যোন্যমাদ্যস্তং প্রকোরতি চ।
সর্গসংহার-সংস্থানাং কর্ত্তা দেবো মহেশ্বরঃ।।৪৭
সর্গে চ রজসো পৃক্তঃ সত্ত্বস্থঃ পরিপালনে।
প্রতিসর্গে তমোযুক্তোঃ সোহহং দেবি ত্রিধা স্থিতঃ।।৪৮
[স্কন্দপুরাণ- প্রভাসখন্ড- ক্ষেত্রমাহাত্ম্য- অধ্যায়- ১৯]
প্রিয়ে! মদীয় (সদাশিব কত্তৃক) লীলাক্রমে প্রকৃতি হইতে বারিবুদবুদবৎ কোটি কোটি অযুত অযুত ব্রহ্মাণ্ড জন্মিয়াছে; সেই সকল ব্রহ্মাণ্ডে চতুরানন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্র সৃষ্ট হইয়াছেন।
ইঁহারা পরস্পর আদ্যন্তক্রমে লয় প্রাপ্ত হইয়া শম্ভু সান্নিধ্য লাভ করেন।মহেশ্বরই সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের কর্ত্তা।
হে দেবি! আমিই সেই মহেশ্বর আমি সৃষ্টি কাজে রজগুণযুক্ত, পালণ কার্য্যে সত্ত্বগুণযুক্ত ও সংহার কার্য্যে তমোগুণযুক্ত — এই ত্রিবিধ মূর্তি পরিগ্রহণ করিয়া বিরাজ করি।।
👉আরও কিছু শাস্ত্র প্রমাণ দেখে নেওয়া যাক—
👉অসংখ্য ব্রহ্মা ও অসংখ্য বিষ্ণু জন্ম হয় কিন্তু, মহেশ্বর একমাত্র (লিঙ্গপুরাণ-পূর্ব্বভাগ-অধ্যায়-৪—৫৪-৫৫)
👉সদাশিব একমাত্র নিত্য, ব্রহ্মা, বিষ্ণু অন্যান্য দেবতা কল্পানুসারে লয় প্রাপ্ত হয় এবং সদাশিব থেকেই প্রকট হয় (মৎসপুরাণ-অধ্যায়-১৫৪—১৭৬/১৮৪)
👉সদাশিবের একটা মাত্র নিশ্বাসে অসংখ্য ত্রিদেব লয় প্রাপ্ত হয় (শিবমহাপুরাণ-রুদ্রসংহিতা-সৃষ্টিখণ্ড-অধ্যায়-১০—১৬/২০)
👉নির্গুণ শিব পঞ্চকৃত্যের জন্য গুণভেদে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্র রূপ ধারণ করে, শিব থেকেই ত্রিদেব এর উৎপত্তি (সৌরপুরাণ, অধ্যায়, ২৩—৫৩/৫৪/৫৫)
এমনকি বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় ভাগবত পুরাণেও গুপ্তভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে,
হে প্রভু ! আপনার নিজ গুণময়ী শক্তি দ্বারা এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করার জন্যে অনন্ত, সর্বদা একরস থাকা সত্ত্বেও আপনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব নাম ধারণ করেন ॥ ২৩ ॥
👉এসবের ঊর্ধ্বে যিনি রয়েছেন তিনিই কালাতীত, গুণাতীত, মায়াতীত পরমেশ্বর সদাশিব।
মহাপ্রলয়ে ব্রহ্মা, বিষ্ণু সহ সব দেবতা বিনষ্ট হয়, তখন একমাত্র সদাশিব'ই থাকেন।
যেমন টা শ্রুতিতে উল্লেখ রয়েছে রুদ্রই অদ্বিতীয় পরমেশ্বর, যখন কিছুই ছিলোনা শুধুমাত্র পরমেশ্বর শিব ছিলো—
সৃষ্টেঃ পূর্বং শিবঃ প্রক্তঃ সৃষ্টের মধ্যেঃ শিবস্তথা।
সৃষ্টেরান্তেঃ শিবঃ প্রক্তঃ সর্বশূন্যে সদাশিবঃ॥২০।।
[শিবমহাপুরাণ- কোটিরুদ্রসংহিতা- অধ্যায়- ৪২]
সৃষ্টি শুরুর সময় শিব বলা হয়েছে, সৃষ্টি মাঝখানে শিব বলা হয়েছে, সৃষ্টি শেষে শিব বলা হয়েছে এবং সর্বশূন্য অবস্থায়ও সদাশিব বিদ্যমান থাকেন।।
“এক হি রুদ্র ন দ্বিতীয়ায় তস্থুর্য” “ শিবই অদ্বিতীয় পরমেশ্বর দ্বিতীয় কোনো সত্ত্বা নেই”(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ- ৩/২), “
“যদাত মস্তন্ন দিবা ন রাত্রি ন সৎ ন চ অসৎ শিব এব কেবলঃ” “যখন না দিন ছিলো, না রাত ছিলো, না আলো ছিলো, না অন্ধকার ছিলো, না সৎ ছিলো, না অসৎ ছিলো, শুধুমাত্র পরমেশ্বর শিব ছিলো”(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৪/১৮),
এক এব শিবো নিত্যস্ততোহন্যৎসকলং মৃষা।
তস্মাৎসর্বাপরিত্যজ্য ধ্যেযান্বিষ্ণবাদিকান্সুরান্॥ ৩০
[তথ্যসূত্র - শ্রুতিশাস্ত্র (বেদ)/শরভ উপনিষদ]
অর্থ — শিবই একমাত্র নিত্য, অন্য সকল কিছুই মিথ্যা। এই কারণে বিষ্ণু আদি সকল দেবতাকে পরিত্যাগ করে শিবকেই ধ্যেয় বলে জানা উচিত ॥৩০
👉সৃষ্টি চক্রে ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন, স্থিতি চক্রে বিষ্ণু পালন করেন, সংহার চক্রে রুদ্র সংহার করেন, তিরোভাব চক্রে মহেশ্বর, ত্রিদেবকে নিজের মধ্যে সমাহিত করেন, অনুগ্রহ চক্রে ত্রিদেব সহ মহেশ্বর সদাশিবের মধ্যে লীন হয়।
👉বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, অনিরুদ্ধ ও প্রদ্যুমণ স্থিতি চক্রের অধীনেই থাকে। অর্থাৎ ভাগবত ইত্যাদি বৈষ্ণবীয় পুরাণে বিষ্ণুকে পরমেশ্বর বলার কারণ হলো— স্থিতি চক্রের অন্তর্গত বিষ্ণু পরতত্ত্বকে উপস্থাপন করে নিজের কার্য্য পালন করছেন। তাই বৈষ্ণবাদি পুরাণে বিষ্ণুকে পরব্রহ্ম বলা হচ্ছে। অর্থাৎ স্থিতি কল্প অনুযায়ী বিষ্ণু থেকেই ব্রহ্মা ও রুদ্রের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সেক্ষেত্রে সেখানে বলা হয়েছে বিষ্ণুই পরমেশ্বর।
অহ্নঃক্ষয়ে ললাটাচ্চ সুতো দেবস্য বৈ তথা।
ক্রোধাবিষ্টস্য সংযজ্ঞে রুদ্রঃ সংহারকারকঃ ॥১৭৷৷
এতো দ্বৌ বিবুধশ্রেষ্ঠৌ প্রসাদক্রোধজাবুভৌ। তদাদেশিতপন্থানৌ সৃষ্টিসংহারকারকৌ ॥১৮৷৷
[মহাভারত- শান্তিপর্ব্ব - অধ্যায়- ৩২৭]
আবার ব্রহ্মারই দিবাবসানে ক্রোধাবিষ্ট নারায়ণের ললাট হইতে, সংহারকারী রুদ্র জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন ॥১৭॥
এই দুইজন দেবশ্রেষ্ঠই নারায়ণের অনুগ্রহ ও ক্রোধ হইতে উৎপন্ন হইয়াছিলেন এবং নারায়ণেরই আদেশে ইহাদের কৰ্ম্মপন্থ নির্দিষ্ট হইয়াছিল; তাহাতেই ইহারা সৃষ্টি ও সংহার করিয়া থাকেন ॥১৮॥
👉অর্থাৎ স্থিতি কল্পানুসারে বিষ্ণু থেকেই বাকী দুইদেব প্রকট হয়। এবং স্থিতি কল্পে বিষ্ণুই ব্রহ্মের পরতত্ত্বকে উপস্থাপন করে। এবং এর থেকে একটা বিষয় দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হলো যে, স্থিতি চক্রে বিষ্ণুর পরমত্বকেই বৈষ্ণবাদি পুরাণে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাই বিষ্ণুকে কোথাও কোথাও ব্রহ্ম বলা হচ্ছে। কিন্তু চতুর্ভূজ বিষ্ণুই সাক্ষাৎ পূর্ণব্রহ্ম নয়।বরং তার অন্তরে থাকা আত্মস্বরূপ পরমতত্ত্ব শিবই পূর্ণব্রহ্ম পরমেশ্বর।
👉শিবমহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতার উত্তর খণ্ডের ৩১ অধ্যায়ের ১৩৪-১৩৬ নং শ্লোকে বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, অনিরুদ্ধ ও প্রদ্যুমণ কে শিবের আজ্ঞাবহ বলা হয়েছে—
বাসুদেবোঽনিরুদ্ধশ্চ প্রদ্যুম্নশ্চ ততঃ পরঃ।
সংকর্ষণঃ সমাখ্যাতাশ্চতস্ত্রো মূর্তয়ো হরেঃ।।১৩৪
মৎস্যঃ কূর্মো বরাহশ্চ নারসিংহোঽথ বামনঃ।
রামত্রয়ং তথা কৃষ্ণো বিষ্ণুস্তুরগবজ্রকঃ৷৷ ১৩৫
চক্রং নারায়ণস্যাস্ত্রং পাঞ্চজন্যং চ শাঙ্গকম্।
সৎকৃত্য শিবযোরাজ্ঞাং মঙ্গলং প্রদিশন্তু মে৷৷ ১৩৬
(তথ্যসূত্র — শিবমহাপুরাণ/বায়বীয়সংহিতা/উত্তরখণ্ড/৩১ অধ্যায়)
অর্থ — বাসুদেব, অনিরুদ্ধ, প্রদ্যুম্ন এবং সংকর্ষণ - শ্রীহরির এই বিখ্যাত চার মূর্তি (ব্যূহ)। মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ, বিষ্ণু, হয়গ্রীব, চক্র, নারায়ণাস্ত্র, পাঞ্চজন্য এবং শাঙ্গধনুক—এনারা সকলে শিব ও শিবার আদেশ পালনকারী , তারা আমাকে মঙ্গল প্রদান করুন ৷৷ ১৩৪-১৩৬
👉শিবমহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতার পূর্বখণ্ডের অধ্যায় ১৩ অনুযায়ী— শিব থেকে উৎপন্ন হবার পর ত্রিদেব একে অন্যের থেকে পরস্পর পরস্পরের থেকে কল্পানুসারে প্রকট হন।
त्रयस्ते कारणात्मानो जाताः साक्षान्महेश्वरात् ।
चराचरस्य विश्वस्य सर्गस्थित्यन्तहेतवः ॥ १३
पित्रा नियमिताः पूर्वं त्रयोऽपि त्रिषु कर्मसु ।
ब्रह्मा सर्गे हरिस्त्राणे रुद्रः संहरणे तथा ॥ १५
ब्रह्मनारायणौ पूर्वं रुद्रः कल्पान्तरेऽसृजत् ।..॥ १७
कल्पान्तरे पुनर्ब्रह्मा रुद्रविष्णू जगन्मयः ।
विष्णुश्च भगवान् रुद्रं ब्रह्माणमसृजत्पुनः ॥ १८
नारायणं पुनर्ब्रह्मा ब्रह्माणं च पुनर्भवः ।
एवं कल्पेषु कल्पेषु ब्रह्मविष्णुमहेश्वराः ॥ १९
परस्परेण जायन्ते परस्परहितैषिणः। तत्तत्कल्पान्तवृत्तान्तमधिकृत्य महर्षिभिः ॥ २०
प्रभावः कथ्यते तेषां परस्परसमुद्भवात्।..॥ २१
[তথ্যসূত্র — শিবমহাপুরাণ/বায়বীয়সংহিতা/পূর্বখণ্ড/১৩ অধ্যায়]
✅ অর্থ — এই চরাচর জগতের সৃষ্টির পালন তথা সংহারের কারণ স্বরূপ যে তিন দেবতা আছেন,সেই ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও রুদ্রদেব অর্থাৎ ত্রিদেব সেই সাক্ষাৎ মহেশ্বর(সদাশিব) থেকে উৎপন্ন হন ॥১৩
পিতা স্বরূপ পরমেশ্বর সদাশিব পূর্বকালে এই তিন দেবতাকে তিনটি কার্যে নিযুক্ত করেছেন। ব্রহ্মাকে সৃজনের জন্য, বিষ্ণু কে পালনের জন্য তথা রুদ্রদেব কে সংহারের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন ॥১৫
পূর্বকল্পে রুদ্রদেব ব্রহ্মা আর নারায়ণ কে উৎপন্ন করেছেন ॥১৭
পুনরায় অন্য কোনো কল্পে ব্রহ্মা উৎপন্ন করেন রুদ্রদেব ও বিষ্ণুদেব কে । এইভাবে অন্য আরেকটি কল্পে ভগবান বিষ্ণু রুদ্রদেব ও ব্রহ্মা কে উৎপন্ন করেন। পুনরায় কোনো কল্পে ব্রহ্মা নারায়ণ কে উৎপন্ন করেন আর কোনো কল্পে রুদ্র দেব ব্রহ্মাকে উৎপন্ন করেন, এইভাবে প্রতি কল্পে ব্রহ্মা বিষ্ণু ও রুদ্রদেব পরস্পর পরস্পরের থেকে উৎপন্ন হন এবং একজন আরেকজনের হিত সাধন করে থাকেন।
মহর্ষি গনেরা সেই সেই গল্পের বৃত্তান্ত নিয়ে নিজেদের মধ্যে নিজের সমভাবের দৃষ্টিতে তার প্রভাব বর্ণনা করে থাকেন মাত্র। ॥১৭
উপরোক্ত শাস্ত্র গঠন থেকে আমরা প্রমাণ দেখতে পেলাম যে, পরমেশ্বর সদাশিবের থেকে ত্রিদেব উৎপন্ন হন, তারপর বিভিন্ন কল্পে এই ত্রিদেব একে অপরের থেকে উৎপন্ন হতে থাকেন, আর সেই ত্রিদেবের নিজেদের মধ্যে পরস্পরের উৎপন্ন হওয়ার ঘটনা পুরাণ শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে।
অর্থাৎ বৈষ্ণবীয় যা পুরাণ আছে তা সদাশিবের স্থিতি চক্রের অধীনেই থাকে। আর সেই কল্প অনুযায়ী যা যা ঘটেছিলো পূর্বে সেসব প্রসঙ্গ নিয়েই বৈষ্ণবাদি পুরাণে রচিত হয় বলেই সেই সৃষ্টিচক্র অনুসারে বিষ্ণু থেকেই জগতের কার্য শুরু হয়, তাই ত্রিদেবের অন্তর্গত বিষ্ণুকে সেক্ষেত্রে পরম বলে মানা হয়, যা আপাতদৃষ্টিমাত্র।
একমাত্র স্থিতি চক্রেই বিষ্ণু, ব্রহ্মা এবং রুদ্র থেকে শ্রেষ্ঠ বলে কথিত হন মাত্র। কিন্তু বিষ্ণু কখনও সদাশিব -এর থেকে ঊর্ধ্বে হন না। কল্পানুসারে ত্রিদেব এর অবস্থান পরিবর্তন হতে থাকে। কিন্তু সদাশিব নিত্য, শাশ্বত, সনাতন। সদাশিব থেকেই ত্রিদেব প্রকট হয়। কারণ শিবই সর্ব্বোচ্চ।
পরাৎপরতরো ব্রহ্মা তৎপরাৎপরতো হরিঃ ।
তৎপরাৎ হ্যেষ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥ ১৮
[ তথ্যসূত্র — “ঋগ্বেদ সংহিতা/আশ্বলায়ণশাখা/১০/১৭১/শিবসংকল্পসূক্ত” এবং ঋগ্বেদ সংহিতা/খিলানি/৪র্থ অধ্যায়/১১ নং খিলা/শিবসংকল্পসূক্ত]
👉এবার এখান থেকে পরিষ্কার ভাবে জানা গেলো যে বিষ্ণুর যে চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব রয়েছে তা কখনো সদাশিবের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ সদাশিব থেকে বিষ্ণু প্রকট হচ্ছে এবং বিষ্ণুই স্থিতি চক্র পরিচালনা করার জন্য চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব প্রকট করছেন। তারা মাত্র স্থিতি চক্রে ব্রহ্মতত্ত্ব উপস্থাপন করে তাদের কার্য্য পরিচালনা করছেন। কিন্তু একটা সময় পর তারাও বিনাশ প্রাপ্ত হচ্ছে।
তাই যেসব নব্য রামানুজী বৈষ্ণব রা, চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব কে সর্বোচ্চ তত্ত্ব (Supreme) দেখানোর প্রয়াস করছেন তা ব্যর্থ প্রমাণিত হল।
👉চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব মূলত প্রকট করেন পরমেশ্বর সদাশিব, জগৎ পরিচালনার জন্য। কিন্তু নব্য রামানুজীরা মূল প্রমাণকে লুকিয়ে রেখে, তাদের কিছু গল্প বই থেকে এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব থেকেই জগৎ সৃষ্টি হচ্ছে, পালন হচ্ছে ও অন্তিমে সংহার ও হচ্ছে।
এটা কিন্তু পূর্ণ সত্য নয়। কারণ পরমেশ্বর সদাশিবের দ্বারা প্রকট করা স্থিতি চক্রের মধ্যেই বিষ্ণু নিজের কার্য্য পরিচালনা করার জন্য, চারটি রূপ প্রকাশ করছেন। যারা স্থিতি চক্রের অধীনে থেকেই নিজেদের কার্য্য সম্পাদন করছে।
![]() |
✔️আসল চতুর্ব্যূহতত্ত্ব✔️ |
🔥মূল চতুর্ব্যূহ তত্ত্ব প্রকাশ করেন স্বয়ং পরমেশ্বর সদাশিব —
ঈশ্বর উবাচ ।
ততঃ পরং প্রবক্ষ্যামি সৃষ্টিপদ্ধতিমুত্তমাম্ ।
সদাশিবান্মহেশাদিচতুষ্কস্য বরাননে ॥১
[শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়- ১৫]
অর্থ — ঈশ্বর বললেন, হে বরাননে, এরপর সদাশিব থেকে যে প্রকারে মহেশ্বরাদি ব্যূহচতুষ্টয়ের উৎপত্তি হয়, সেই উত্তম সৃষ্টি পদ্ধতি আমি বলছি ॥১
সদাশিবঃ সমষ্টি স্যাদাকাশাধিপতিঃ প্রভুঃ ।
অস্যৈব ব্যষ্টিতাপন্নং মহেশাদি চতুষ্টয়ম্ ॥ ২
[শিবমহাপুরাণ- কৈলাস সংহিতা- অধ্যায়—১৫]
আকাশের অধিপতি প্রভু সদাশিব সমষ্টি স্বরূপ। মহেশ্বর আদি চার রূপ (মহেশ্বর, রুদ্র, বিষ্ণু, ব্রহ্মা) সদাশিবেরই ব্যষ্টি ॥২
👉অর্থাৎ এর থেকেই প্রমাণিত হয়, মূল ব্যূহ তত্ত্বের রচয়িতা স্বয়ং পরমেশ্বর সদাশিব।
সুতরাং, সংকর্ষন থেকে কৈলাসপতি রুদ্রদেবের উৎপন্ন হবার উল্লেখ দেখিয়ে শিব উৎপন্ন হন বলে অবোধ শিশুর ন্যায় দাবী করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অর্থাৎ বৈষ্ণবীয় চতুর্ব্যূহ সিদ্ধান্ত খণ্ডন সম্পূর্ণ হল এবং পরমেশ্বর শিব যে একমাত্র পরমতত্ত্ব সেই প্রভু শিবের পরমত্ব প্রমাণিত হল শাস্ত্রের বচনের ভিত্তিতে।
হর হর মহাদেব ✊🚩
নমঃ শিবায় 🙏🚩
ওঁ সাম্বসদাশিবায় নমঃ 🚩🙏
ওঁ দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ 🙏🚩
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে ✊🚩
✍️লেখনী ও অপপ্রচার দমনেঃ— অন্তিক ভট্টাচার্য্য (শম্বরনাথ শৈব)
🌻বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ— আমার গুরু শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী ও রোহিত কুমার চৌধুরী শৈবজী।
কপিরাইট ও প্রচারেঃ— আন্তর্জাতিক শিব শক্তি জ্ঞান তীর্থ (International Shiva Shakti Gyan Tirtha)
[বিঃদ্রঃ— লেখাটি কপি করলে সম্পূর্ণই কপি করবেন কোনো রকম কাটাছেঁড়া করা যাবে না]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন