পরমেশ্বর সদাশিবকে মহাবিষ্ণুর রূপ বলে অন্ধের ন্যায় দাবী করতে গিয়ে নব্য রামানুজী বৈষ্ণবেরা অপদস্থ হল ঐ নিজেদের বৈষ্ণবীয় বামনপুরাণ থেকেই
পরমেশ্বর সদাশিবকে মহাবিষ্ণুর রূপ বলে দাবী করা নব্য রামানুজী বৈষ্ণবদের মত খণ্ডন—
নমস্কার 🙏
নমঃ শিবায় 🙏
হর হর মহাদেব ✊🚩
সকল সনাতনীদের রাতুল চরণে আমার প্রমাণ জ্ঞাপন করছি। আপনারা হয়তো জানেন না যে, বর্তমান সমাজে একদল শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যাকারী নব্য সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয়েছে। তাদের বিশেষ কোনো কাজ নেই বললেই চলে। শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে পরমেশ্বর শিবের অপমান করা ও ভগবান বিষ্ণু, কৃষ্ণ, রাম ইত্যাদিদের চেয়ে ছোট করাটাই এই গুরুপরম্পরাহীন নব্য রামানুজী বৈষ্ণবদের একমাত্র উদ্দেশ্য। অথচ শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে জানা যায় বিষ্ণুর জন্ম শিব থেকেই হয়েছে। এবং বিষ্ণু, কৃষ্ণ ও রাম এনারা সকলে পরম শিব ভক্ত ছিলেন এবং পরমেশ্বর শিবের প্রদর্শিত মত মহাপাশুপত মতে দীক্ষিত ছিলেন, যা পুরাণ, মহাভারত, শিবগীতা অধ্যয়ন করলেই জানা যায়। এবং সকল শাস্ত্রে এটাই বলা আছে যে একমাত্র পরমেশ্বর হলো শিব “এক হি রুদ্র ন দ্বিতীয়ায় তস্থুর্য “। কিন্তু তা এই কলির পাষণ্ড বৈষ্ণবেরা মানতে নারাজ কারণ এরাও তো দক্ষের বংশধর ভণ্ডাসুরের চ্যালাচামুণ্ডা। নাহলে পরমেশ্বর শিবের বিরোধীতা করে অপমান কখনো করতো না।
👉আজকের যে বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি তা হলো নব্য বকরামুণ্ডি রামানুজীরা বামনপুরাণের একটা শ্লোকে ভুল অর্থ টেনে এটাই প্রমাণ করছে যে, পরমেশ্বর সদাশিব হলো মহাবিষ্ণুর রূপ। আসুন দেখে নিই বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের বালখিল্য দাবী—
❌বৈষ্ণবদের মিথ্যাচার—
উক্ত বামনপুরাণের এই ভুল অর্থকে সবার সামনে তুলে ধরে এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে, সদাশিব মহাবিষ্ণুর রূপ।
✅শৈবপক্ষ দ্বারা দাবীর খণ্ডন—
উক্ত বামনপুরাণে, এই বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবরা যে রেফারেন্স টা তুলে ধরেছে তা পূর্ণ সঠিক নয়। কেননা উক্ত রেফারেন্স এ বলছে, আন্ডারলাইন দ্বারা মার্ক করা প্রথমে লাইনে, “তোমরা বিষ্ণুর নিন্দা করো” এখানের মধ্যেই গরমিল রয়েছে। কারণ এখানে রুদ্রদেব তার গণেদের বলছে তোমরা বিষ্ণুর নিন্দা করছো। পরবর্তীতে বিষ্ণু ও রুদ্রের একত্মতা দেখাতে শেষে বিষ্ণুকে সদাশিবের সাথে এক করেছে।
কিন্তু আমরা যদি একি শ্লোকের অর্থ সঠিক ভাবে যাচাই করে দেখি, তখন জানা যায় যে, রুদ্রদেব তার গণেদের বিষ্ণুর নিন্দা করতে দেখে, রুদ্রদেব এটা বলেন যে, তোমরা আমারই স্বরূপ কমলনয়ন জগন্নাথের নিন্দা করছো।
তার অর্থ এখানে রুদ্রদেব নিজেই বলছে বিষ্ণু হচ্ছে সাক্ষাৎ শিবের একটি রূপ। তাই তো বিষ্ণুর ও সদাশিবের একত্মতা রুদ্রদেব তার গণেদের মধ্যে বর্ণন করেছে।
👉আসুন দেখে নিই মূল শ্লোকের অর্থ—
व्रजन्ति नरकं घोरमित्येवं परिवादिनः ।
अतोऽर्थं न क्षिपाम्यद्य भवतो नरकेऽद्भुते ॥39
यन्निन्दध्वं जगन्नाथं पुष्कराक्षं च मन्मयम् ।
स चैव भगवाशर्वः सर्वव्यापी गणेश्वरः ॥ 40
न तस्य सदृशो लोके विद्यते सचराचरे।
श्वेतमूर्तिः स भगवान् पीतो रक्तोऽञ्जनप्रभः ॥41
तस्मात् परतरं लोके नान्यद् धर्म हि विद्यते ।
सात्त्विकं राजसं चैव तामसं मिश्रकं तथा।
स एव धत्ते भगवान् सर्वपूज्यः सदाशिवः ॥42
[গীতাপ্রেস— বামনপুরাণ- অধ্যায়- ৬৭]
✅ অর্থঃ— এই প্রকারের নিন্দা করা লোক ভয়ংকর নরকে গমন করে। এইজন্য আমি তোমাদের অদ্ভুত নরকে পাঠাবো না। তোমরা আমারই স্বরূপ যে কমলনয়ন জগন্নাথের নিন্দা করছো, সে-ই সর্বব্যাপী গণেশ্বর ভগবান শর্ব। এই সমস্ত চরাচর জগতে উনার সমান কেউ নেই। সেই ভগবান শ্বেতমূর্তি, পীত, রক্ত এবং অঞ্জনের ন্যায় কান্তিময়। সংসারে উনার থেকে শ্রেষ্ঠ দ্বিতীয় কোনো ধর্ম নেই। সর্বপূজ্য সেই সদাশিব (যিনি সদা মঙ্গল করেন) ভগবান সব স্বা সাত্ত্বিক, রাজস, তামস এবং মিশ্রিত ভাবকে(গুণকে) ধারণ করেন(ত্রিদেবরূপে)।।৩৯-৪২
👉দেখুন পাঠকগণেরা মূল শ্লোকের অর্থে কি বলা হচ্ছে— এখানে রুদ্রদেব বলছে “আমারই স্বরূপ” এবং যিনি, “সর্বব্যাপী গণেশ্বর ভগবান শর্ব”। অর্থাৎ এখানে পরিস্কার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে - বিষ্ণু, শিবেরই রূপ। এবং বিষ্ণুজীকে শর্ব বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। আর শর্ব যে সাক্ষাৎ শিব তা আলাদা প্রমাণ করার দরকার নেই। কেননা পরমেশ্বর শিবই তো বিষ্ণুরূপ ধারণ করছেন—
যোবৈ রুদ্রঃ স ভগবান যশ্চ বিষ্ণু তস্মৈ বৈ নমো নমঃ।।২।।
[অথর্ব্বশির উপনিষদ- ২]
✅ অর্থঃ—যিনি সেই পরমেশ্বর রুদ্র বিষ্ণুরূপ ধারণ করে অখিলব্রহ্মাণ্ড পালন করছে, সেই পরমেশ্বর রুদ্রকে পুনঃ পুনঃ প্রমাণ করি।।২
👉বেদ থেকে আরও একটা প্রমাণ দেখে নেব—
নমো গিরিশয়ায় চ শিপিবিষ্টায় চ।।২৯
[শুক্লযজুর্বেদ- অধ্যায়- ১৬—২৯]
✅ অর্থ — গিরিতে (কৈলাস) বাস করা পরমেশ্বর রুদ্রকে নমস্কার, বিষ্ণুরূপ ধারণকারী পরমেশ্বর রুদ্রকে নমস্কার।।
👉বৈদিক শব্দকোশ নিঘন্টু তে' বিষ্ণু' শব্দের ব্যাখ্যায় কি আছে সেটা এবার দেখে নেবো—
" শিপিবিষ্টো বিষ্ণুরিতি বিষ্ণোদ্বৈ নামনি ভবতঃ" | (নিঘন্টু/৫/৭)
যিনি শিপিবিষ্ট, তিনিই বিষ্ণু।
আর শ্রুতিতে কাকে শিপিবিষ্ট নামে সম্বোধন করা হয়েছে তাঁর শব্দ প্রমাণ নিম্নে দেওয়া হল -
" নমঃ কপর্দিনে চ ব্যুপ্তকেশায় চ | নমঃ সহস্রাক্ষায় চ শতধন্বনে চ নমো গিরিশযায চ শিপিবিষ্টায চ নমো মীঢুষ্টমায চেষুমতে চ || ২৯ || " (যজুর্বেদ/তৈত্তিরীয় সংহিতা/৪/৫- শতরুদ্রিয় সূক্ত) - বেদ ভাষ্যকার সায়ণাচার্য সহ আচার্য মহীধর, উবট প্রত্যেকেই সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতি সমূহকে 'শতরুদ্রীয়' হিসেবে মান্যতা দিয়ে গেছেন। বেদের শতরুদ্রীয় যে সাক্ষাৎ শিবের প্রতি সমর্পিত সেটা সর্ব শাস্ত্র মান্য। তাই ন্যায়শাস্ত্র মতে ইহা হল ' দৃষ্টান্তের ' লক্ষণ। আর দৃষ্টান্তের কোনো খণ্ডন হয় না।
আর' শিপিবিষ্ট' নাম শিব মহাপুরাণের কোটিরুদ্র সংহিতায় শিব সহস্রনামের মধ্যেও পাওয়া যায়। শ্রুতি মান্যতা সহ প্রমাণ করা হল যে শিপিবিষ্ট বা বিষ্ণু এই শব্দটি পরমশ্বর শিবের উদ্দেশেই সমর্পিত।
👉অর্থাৎ হিসাব দুইয়ে দুইয়ে চার। এবার সব দিক থেকে এটাই প্রমাণ হচ্ছে সদাশিবই বিষ্ণু রূপ টা ধারণ করছে। এবং রুদ্রদেবও উক্ত শ্লোকে বলছেন বিষ্ণু আমারই রূপ। এবং বিষ্ণুকে শর্ব বলেও সম্বোধন করছে। তাই সকল দিক থেকে এটাই আপনা-আপনিই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে বিষ্ণু রূপটা সদাশিবেরই প্রকাশ মাত্র। এখানেই তো বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের মিথ্যাচার খণ্ডিত হয়।
👉প্রথমত এখানে মহাবিষ্ণু শব্দটির কোনো উল্লেখ নেই, আর উক্ত সমগ্র অধ্যায়ের কোথাও না আছে এই মহাবিষ্ণু শব্দটির কোনো শব্দপ্রমাণ। তাহলে যেখানে মহাবিষ্ণুর কোনো উল্লেখই মেলে না, সেখানে সদাশিব কীভাবে মহাবিষ্ণুর রূপ হবে❓ প্রশ্ন রইলো বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের কাছে। উল্টে বেদ এবং নিরুক্ত দুই শাস্ত্রই বলছে বিষ্ণু রূপটা শিবই ধারণ করে। তাহলে এখানে মহাবিষ্ণুর রূপ হলো সদাশিব এসব বালখিল্য যুক্তির অর্থ কি❓যাহা যৌক্তিক নয় তাহা অপ্রামাণ্য, আর বৈষ্ণবরাই তো একটা শ্লোকাংশ বার বার আওড়াতে থাকে, “যুক্তিহীন বিচারেন ধর্মহানী প্রজায়তে”, তাহলে, এখানে তো দেখা যাচ্ছে বৈষ্ণবদেরই অযৌক্তিক দাবী দ্বারা ধর্মহানী হচ্ছে। তাহলে উক্ত শ্লোকের সার্থকতা কোথায়❓
👉দ্বিতীয়ত আমি যদি ধরেও নিই সেই বিষ্ণু ই মূলত সদাশিব। ঠিক কথা। কারণ বিষ্ণুর আলাদা অস্তিত্ব নেই, তার দেহ মায়াময়, অন্তর্সত্ত্বা হল শিব সত্ত্বা।
একারণে বামন পুরাণে সমগ্র স্তুতির শেষে সদাশিব বলেই স্বীকার করা হয়েছে বিষ্ণুকে।
কারণ সদাশিবই ত্রিদেব রূপে প্রকট করে নিজেকে তিনটে গুণের দ্বারা বিভক্ত করেছেন, তাই ব্রহ্মার মধ্যেও সদাশিবই রয়েছেন, বিষ্ণুর মধ্যেও সদাশিবই রয়েছেন, রুদ্রের মধ্যেও সদাশিবই রয়েছেন। আর যেটা সম্পূর্ণ শাস্ত্রর সম্মত।
👉এখানে এই বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের ধূর্ততা ধরা পড়ে। কারণ শ্লোকে অর্থ এক আর এই বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবরা মানুষকে বোঝাচ্ছে আরেক। কি পরিমাণ যে ধূর্ত এই বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবরা তা বলার বাইরে। তাই তো শাস্ত্রে বলেছে—
অন্যথা পরমং তত্ত্বং জনা ক্লিশ্যন্তি চান্যথা।
অন্যথা শাস্ত্রসদ্ভাবো ব্যাখ্যাং কুর্বন্তি চান্যথা।।৯২
[কূলার্ণব তন্ত্র- ১ম উল্লাস—৯২]
✅ অর্থঃ— পরমতত্ত্ব একরকম আর লোকেরা জানে অন্যরকম। শাস্ত্রের যথার্থ জ্ঞান একরকম আর এরা ব্যাখ্যা করে অন্যরকম।।৯২
👉একদম শাস্ত্রের বাক্যের সাথে বৈষ্ণবদের ধূর্ততার রূপটাও প্রকাশিত হচ্ছে। তাই তো বৈষ্ণবদের বকরামুণ্ডি বলি। কারণ অকারণে ম্যা ম্যা করা ছাড়া আর কিছুই যে জানে না এরা।
👉এবার উক্ত বামনপুরাণের অধ্যায়ে পরবর্তী শ্লোকাংশে কি বলা হচ্ছে তা একবার দেখে নেব—
शङ्करस्य वचः श्रुत्वा शैवाद्याः प्रमथोत्तमाः।
प्रत्यूचुर्भगवन् ब्रूहि सदाशिवविशेषणम् ॥ 43
तेषां तद् भाषितं श्रुत्वा प्रमथानामथेश्वरः ।
दर्शयामास तद्रूपं सदाशैवं निरञ्जनम् ॥ 44
ततः पश्यन्ति हि गणाः तमीशं वै सहस्त्रशः ।
सहस्त्रवक्त्रचरणं सहस्त्रभुजमीश्वरम् ।। 45
दण्डपाणिं सुदुर्दृश्यं लोकैर्व्याप्तं समन्ततः ।
दण्डसंस्थाऽस्य दृश्यन्ते देवप्रहरणास्तथा ॥46
[গীতাপ্রেস—বামনপুরাণ- অধ্যায়- ৬৭]
✅ অর্থঃ— প্রভু শংকরের এরূপ বচন শুনে শৈব আদি শ্রেষ্ঠ গণেরা বললেন— হে ভগবান! আপনি সদাশিবের বিশেষতা প্রকট করা গুণ গুলো বলুন। প্রমথেশ্বর তাদের কথা শুনে তাদের নিরঞ্জন সদাশিব রূপকে দেখালেন। এরপর হাজার সংখ্যক গণেরা শিবকে হাজার মুখ, হাজার চরণ এবং হাজার ভুজা রূপে দেখলেন। তিনি সর্বলোকে সবক্ষেত্রেই ব্যাপ্ত তথা দণ্ডপাণি এবং অত্যধিক সুদূরদৃশ্য ছিলো। দেবতাদের অস্ত্র উনার দণ্ডের মধ্যেই দেখা যাচ্ছিলো।।
👉পরমেশ্বর সদাশিব সম্পর্কে কিঞ্চিত জেনে, শিবগণেরা যখন, সদাশিবের রূপ সম্পর্কে জানতে চাইলো, তখন রুদ্র দেব শিবগণেদের সম্মুখে সদাশিবের রূপটা প্রকট করলেন এবং শিবগণেরা দেখলেন যে, সেই পরমেশ্বর সদাশিবের রূপটা হাজার মুখ, হাজার হাত, হাজার পা বিশিষ্ট। যেমনটা ঋগবেদে পুরুষ সুক্তে, শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে ও ভগবদগীতাতে বলা হয়েছে— “সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাদ” (ঋগ্বেদ-১০/৯০/১), (ভ-গী- ১১— ১০/১১/১৬) (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৩/১৪) অর্থাৎ পরম পুরুষের সহস্র মস্তক, সহস্র নেত্র ও সহস্র চরণ। অর্থাৎ সাক্ষাৎ বিশ্বরূপের কথায় বলা হচ্ছে। আর শিবগণেদের রুদ্রদেব সদাশিবেরই বিশ্বরূপ টা দেখালেন। যেমন ভাবে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সদাশিবেরই বিশ্বরূপ টা দেখালেন। এবং এটাও জানান দিলেন শিবই সর্বব্যাপী যা সম্পূর্ণ শ্রুতি সম্মত- “সর্বব্যাপী স ভগবাংস্তস্মাৎ সর্বগতঃ শিবঃ” ভগবান শিবই সাক্ষাৎ সর্বব্যাপী, (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ- ৩/১১), “সঃ সর্বব্যাপী যঃ সর্বব্যাপী সোহনন্তঃ” যিনি সর্বব্যাপী তিনিই অনুত্ত্বর সত্ত্বা (অথর্ব্বশির উপনিষদ- ৩)। তিনিই সব দেবদেবতার রূপে নিজেকে প্রকট করেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্রদেবের রূপ ও সদাশিব থেকেই প্রকট হয়।
তো এবার আমার প্রশ্ন হলো বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্যে পরমেশ্বর সদাশিবই সাক্ষাৎ বিশ্বরূপ, সর্বব্যাপী অনুত্তর সত্ত্বা (অর্থাৎ এর উপর আর কোনো সত্ত্বা নেই) তিনিই সকল দেবতার রূপে নিজেকে প্রকট করছেন। তাহলে মহাবিষ্ণু কখন সদাশিব রূপটা ধারণ করলো❓ মহাবিষ্ণুর উল্লেখ ও বা কোথায় এখানে❓
তার বৈদিক প্রমাণ কি যে মহাবিষ্ণু সদাশিব রূপ ধারণ করছে❓
👉এর পরবর্তী শ্লোকে বলা হচ্ছে যে—
ततोऽभवच्चैकरूपी शङ्करो बहुरूपवान् ।।৫০
[গীতাপ্রেস প্রকাশিত —বামনপুরাণ/অধ্যায়- ৬৭]
✅ অর্থঃ— এরপর প্রভু শংকর একরূপ থেকে বহুরূপ হয়ে যান।।
👉এরপর রুদ্রদেব বহুরূপ হয়ে শিবগণেদের সম্মুখে সমস্ত দেবতার রূপে নিজেকে প্রকাশ করতে থাকলেন। রুদ্রদেব শিবগণেদের এটাই জানান দিলেন, সকল দেবদেবী শিবেরই প্রকাশিত স্বরূপ তাই কখনো দেবদেবীদের মধ্যে ভেদাভেদ করা উচিত নয় ও অন্য দেবতাদের নিন্দা করাও উচিত নয়। কারণ সকলের উৎপত্তিই তো শিব থেকে, শ্রুতিও একি কথাকে সমর্থন করে-
যো দেবানাং প্রভবশ্চোদ্ভবশ্চ বিশ্বাধিপা রুদ্র মহর্ষিঃ। হিরণ্যগর্ভং পশ্যত জায়মানং পূর্ব্বং স নো বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনক্তু।।১২ (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ- ৪/১২) যাহা হইতে সমস্ত দেবতার উৎপত্তি,যিনি ঐ সকল দেবতাতে যে সকল শক্তি আছে তাহার ও হেতু,যিনি সর্ব্বলোকপিতামহ ব্রহ্মার ও জনয়িতা, পরমেশ্বর সর্ব্বজ্ঞ রুদ্র, যিনি রুদ্র রুপে সংহার করেন,সেই পরমেশ্বর রুদ্র তাগাদিগকে শুভদ্বায়িনী বুদ্ধি প্রদান করুক।
এবং “অথর্বশির উপনিষদ- ২” অনুযায়ী সকল দেবতা শিবেরই প্রকাশিত স্বরূপ। এবং একি কথার প্রমাণ বামন পুরাণের উক্ত অধ্যায়ের পরবর্তী শ্লোকে দেখা যায়—
क्षणार्द्धाच्छङ्करो विष्णुः क्षणाच्छर्वः पितामहः ।
ततस्तदद्भुततमं दृष्ट्वा शैवादयो गणाः ॥52
[গীতাপ্রেস—বামনপুরাণ- অধ্যায়- ৬৭]
✅ অর্থঃ— প্রভু শংকর কখনো ইন্দ্র, কখনো সূর্য, কখনো বিষ্ণু এবং কখনো পিতামহের স্বরূপ প্রকটিত করতে থাকে।।
👉অর্থাৎ এখানে আর আলাদা করে প্রমাণ করার দরকার নেই যে, বিষ্ণু রূপটা কার। আর বকরামুণ্ডি রামানুজী বৈষ্ণবরা শ্লোকার্থকে ঘুড়িয়ে উলটো দাবী করছে যে, মহাবিষ্ণুর রূপ হলো সদাশিব।
তাছাড়া এখানেই সুস্পষ্ট হয় যে, সকল দেবতা এক শিবেরই প্রকাশিত বিভিন্ন স্বরূপ।
এর পরবর্তী শ্লোকটার মাধ্যমে আজকের পূনরায় বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের খণ্ডন পর্ব শেষ করবো।
👉চলুন দেখে নিই পরবর্তী কি বলা হচ্ছে—
तदा निर्धूतपापास्ते समजायन्त पार्षदाः ।
तेष्वेवं धूतपापेषु अभिन्नेषु हरीश्वरः ॥ 54
[গীতাপ্রেস—বামনপুরাণ- অধ্যায়- ৬৭]
✅ অর্থঃ— এইপ্রকার অভেদ বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার কারণে তাদের পাপ থেকে মুক্ত হওয়াতে, হরিশ্বর শম্ভু প্রসন্ন হলেন।।
👉শিবগণেরা প্রথমে বিষ্ণুর নিন্দা করতে দেখে, রুদ্রদেব তাদের বিষ্ণুর স্বরূপ বোঝায় ও এটা বলে যে, বিষ্ণু আমারই অর্থাৎ শিবের রূপ তাই রুদ্র এবং বিষ্ণুর মধ্যে ভেদ করা উচিত নয়। পরে যখন শিবগণেরা এই অভেদ অবস্থা বুঝতে পারে তখন রুদ্রদেব খুবই প্রসন্ন হন।
এবার এখানে দেখার বিষয় হলো, শিবকে হরিশ্বর বলে সম্বোধন করছে। অর্থাৎ যিনি হরি/বিষ্ণুর ঈশ্বর তিনিই শম্ভু।
অর্থাৎ দিনের আলোর মতোই ব্যাপার টা পরিস্কার হয়ে গেলো। যিনি বিষ্ণুর ঈশ্বর, তার রূপটা নাকি মহাবিষ্ণু প্রকট করছে 🤭
যেখানে মহাবিষ্ণুর কোনো উল্লেখ এই নেই।
👉এবার আরো কিছু দেখবো উক্ত বামনপুরাণ থেকে—
न ब्रह्मा न च गोविन्दः पौराणा ऋषयो न ते।
माहात्म्यं वेदितुं शक्ता याथातथ्येन शंकर ॥146
[গীতাপ্রেস—বামনপুরাণ- অধ্যায়- ৪৭]
✅ অর্থঃ— ব্রহ্মা, বিষ্ণু তথা প্রাচীন ঋষিরা ও আপনার মহিমাকে সঠিকভাবে জানতে পারে না। আপনি (আপনারি মধ্যে) লক্ষ পুরুষকে সমাদৃত করে স্থিত আছেন।।
पुलस्त्य उवाच—
जटाधरं हरिर्दृष्ट्वा क्रोधादारक्तलोचनम् ।
तस्मात् स्थानादपाक्रम्य कुब्जाग्रेऽन्तर्हितः स्थितः ॥1
[গীতাপ্রেস—বামনপুরাণ- অধ্যায়- ৫]
👉 এটাই কি সত্য ? বৈষ্ণবদের সাত্ত্বিক পুরাণ কি ঠিক বলছে ?
শ্রীবিষ্ণু ভয় পায় শিবের ক্রোধ কে ?
তাহলে যদি বিষ্ণু পরমেশ্বর হয়েই থাকেন, তাহলে সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর কেন শিবকে দেখে ভয়তে লুকিয়ে পড়বেন?
আপনাদের তথাকথিত সাত্ত্বিক পুরাণের বচন বৈষ্ণবেরা মানবেন তো এবার ?
সকল শাস্ত্র প্রমাণ অনুসারে বকরামুণ্ডি রামানুজী বৈষ্ণবদের বলা “মহাবিষ্ণুর রূপ হলো সদাশিব’’ উক্ত বালখিল্য দাবী শৈব সনাতনী দের পক্ষ থেকে চরম ভাবে খণ্ডিত করা হলো।
আবারও বকরামুণ্ডি রামানুজী বৈষ্ণবদের দ্বারা কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে এলো, শ্রী বিষ্ণুকে পরমেশ্বর প্রমাণিত করবার চক্করে সমগ্র প্রসঙ্গ না পড়ে দু একটি শ্লোকের খণ্ডিত অনুবাদ দেখিয়ে ভাবছিল শৈবদের আরাধ্য প্রভু শিবের পরমত্বকে খণ্ডন করে ফেলবে। অথচ বৈষ্ণবদের ওই দেখানো উক্ত অনুবাদের প্রকৃত শ্লোক ও ওই অধ্যায়ের সমগ্র প্রসঙ্গটি পরমেশ্বর শিবেরই মাহাত্ম্যকে বর্ণনা করে বিষ্ণুর পরমত্বকে খণ্ডন করে রেখেছে। যাকে এককথায় বলে, বৈষ্ণব রা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়ুল মেরেছে। ছাদে কি আর বলি বকরামুন্ডি বৈষ্ণব 😆
🔥সিদ্ধান্ত হলো—
👉বিষ্ণু হল — সদাশিবের প্রকাশিত রূপ ✔️
👉 সদাশিবের উৎপত্তি অন্য কোনো দেবতা থেকে হয় না ✔️
নমঃ শিবায় 🙏🚩
ॐ দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ 🚩
ॐ সাম্বসদাশিবায় নমঃ 🚩
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে ✊🚩
হর হর মহাদেব 🚩
✍️লেখনী ও অপপ্রচার দমনেঃ— অন্তিক ভট্টাচার্য্য (শ্রীশম্বরনাথ শৈব)
🌻বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ— আমার গুরু শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী ও রোহিত কুমার চৌধুরী শৈবজী।
কপিরাইট ও প্রচারেঃ— আন্তর্জাতিক শিব শক্তি জ্ঞান তীর্থ (International Shiva Shakti Gyan Tirtha)
[বিঃদ্রঃ— লেখাটি কপি করলে সম্পূর্ণই কপি করবেন কোনো রকম কাটাছেঁড়া করা যাবে না]
শিবঃ ওঁ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন