মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ শিব উপাসক নন — দাবী করা আর্যসমাজীদের জবাব
পরমশৈব ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর শিবের পূজক নন এমন অপপ্রচারকারী আর্যসমাজীদের অপপ্রচারের জবাব —
দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজের অনুসারী আর্যসমাজীরা হলেন নিরাকার বাদী, বেদ মহাভারত ও রামায়ণে যেখানে যেখানে দেহধারী সাকার পরমেশ্বরের কথা উল্লেখ হয়েছে, আর্যসমাজীরা সেই সেই স্থানগুলোকে প্রক্ষিপ্ত ঘোষণা করে, অমান্য করে।
সনাতনীদের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদেরকে সনাতনী হিসেবে জাহির করবার জন্য তারা ভগবান শ্রী রামচন্দ্র ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ঢাল বানিয়ে সনাতনীদের কাছে আর্যসমাজীরা দেখাতে চায় যে, আর্যসমাজীদের কাছে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন আদর্শ। ফলের সনাতনীরা বিভ্রান্ত হয়ে ভাবতে থাকে আর্যসমাজীরা হয়তো সনাতনী । আর এরই সুযোগ নিয়ে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আর্য সমাজীরা নিজেদের মতোই প্রমাণ করবার চেষ্টা করতে থাকে, তারা দেখাতে থাকে যেন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর্য সমাজীদের মতই নিরাকার ঈশ্বরের বিশ্বাসী ছিলেন । তারা কোন দেহধারী দেবতার পূজা করতেন না, শ্রী রামচন্দ্র বা শ্রীকৃষ্ণ এনারা কেউ ই শিবের পূজা করতেন না । এমনটা সনাতনীদের কাছে প্রমাণ করবার জন্য, এই আর্যসমাজীরা মহাভারতের মধ্যে থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুধুমাত্র প্রভাত কালের সন্ধ্যা কার্যের উল্লেখ হয়েছে এমন কয়েকটি শ্লোক দেখিয়ে দাবি করে যে এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সন্ধ্যা কার্য ছাড়া কখনোই শিব আরাধনা করেননি। সুতরাং আর্য সমাজীদের বক্তব্য হলো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কোন দেহ ধারী সাকার দেবতার উপাসক নন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শিবের আরাধনা করতেন না। এমন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আর্যসমাজীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিরাকারবাদী প্রমাণ করবার অপপ্রয়াস করে চলেছে। যাতে আর্য সমাজিরা তাদের কাছে আসা শাস্ত্র জ্ঞানহীন সনাতনীদেরকে এটা দেখাতে পারে যে, তাদের আদর্শ সেই রামচন্দ্র ও শ্রীকৃষ্ণ কেউই দেবমূর্তি পূজা করতেন না, শিবের পূজা করতেন না, সুতরাং আর্য সমাজেরা যা বলছে তাই সঠিক। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ভাবেই শাস্ত্র জ্ঞানহীন সাধারণ সনাতনী ভাই বোনেদের মগজ ধোলাই করবার করে চলেছে আর্যসমাজীরা।
তাই আমি শ্রী নন্দীনাথ শৈব, সনাতন ধর্মের রক্ষকের ভূমিকায় নিজের আদি সনাতনী শৈব গুরু পরম্পরা আদর্শ ও নীতিকে অনুসরণ করে নিজের কর্তব্যকে পালন করবার জন্য আর্যসমাজীদের ভণ্ডামী ফাঁস করে সত্য কে তুলে ধরছি।
শ্রীগুরবে নমঃ ॥
গণেশায় নমঃ ॥
শ্রী নন্দিকেশ্বরায় নমঃ ॥
শ্রী সাম্বসদাশিবায় নমঃ ॥
💥 ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে মুখে বলছেন, তিনি প্রভাত কালে শিবমন্ত্র বিষয়ক বৈদিক সূক্ত পাঠ করতেন, যার নাম শতরুদ্রিয়। দেখুন 👇
বাসুদেব উবাচ ।
প্রযতঃ প্রাতরুত্থায় যদধীয়ে বিশাংপতে! প্রাঞ্জলিঃ শতরুদ্রীয়ং তন্মে নিগদতঃ শৃণু ॥৪॥
(তথ্যসূত্র — হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ-র অনুবাদিত, বিশ্ববাণী প্রকাশনী প্রকাশিত — মহাভারত/অনুশাসন পর্ব/১৩৮ অধ্যায়/৪নং শ্লোক | গোরক্ষপুর গীতাপ্রেস প্রকাশনীর প্রকাশিত — মহাভারত/অনুশাসন পর্ব/১৬০ অধ্যায়/৪নং শ্লোক)
✅ অর্থ — বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ বললেন, আমি প্রাতঃকালে গাত্রোত্থান করে সংযত ও কৃতাঞ্জলি হয়ে শুক্ল যজুর্বেদের ১৬ অধ্যায়ে বর্ণিত পরমেশ্বর শিবের শতরুদ্রীয় সূক্ত পাঠ করি ॥৪
______________________________________________
🔶 ঐ একই অধ্যায়ের ২১ নং শ্লোকে বলা হয়েছে যে, দেবতারা শতরুদ্রিয় সূক্ত পাঠ করবার কারণে পরমেশ্বর শিব প্রসন্ন হয়েছেন 👇
জেপুশ্চ শতরুদ্রীয়ং দেবাঃ কৃত্বাঞ্জলিং তদা ।
সংস্তূয়মানস্ত্রিদশৈঃ প্রসসাদ মহেশ্বরঃ ॥২১
(তথ্যসূত্র — হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ-র অনুবাদিত, বিশ্ববাণী প্রকাশনী প্রকাশিত — মহাভারত/অনুশাসন পর্ব/১৩৮ অধ্যায়/২১নং শ্লোক | গোরক্ষপুর গীতাপ্রেস প্রকাশনীর প্রকাশিত — মহাভারত/অনুশাসন পর্ব/১৬০ অধ্যায়/২১নং শ্লোক)
✅ অর্থ — তখন দেবগণ অঞ্জলি বন্ধন করে শতরুদ্ৰীয় জপ করতে থাকলেন সেইভাবে দেবতাবা স্তব করতে থাকলে, প্রভু মহেশ্বর প্রসন্ন হলেন ॥২১
______________________________________________
🔴 এই “শতরুদ্রিয়” সূক্ত যে পরমেশ্বর পার্বতীপতি শিবের উদ্দেশ্যেই বেদে উল্লেখিত আছে, তার প্রমাণও মহাভারতে রয়েছে। দেখুন 👇
বেদো চাস্য সমান্নতিংশতরুদ্রিয়মুত্তমম্ ।
নাভানা চানন্তরুদ্রেতি ল্যপস্থানং মহাত্মনঃ ॥১১৮
ধন্যও ঘর্ণস্যমায়ুষ্যং পুণ্যং বেদৈচ সম্মিতম ।
দেবদেবস্যতে পাৰ্থ ব্যাখ্যাতং শতরুদ্রিয়ম্ ॥১১৯
চরিতঃমহাত্মনো দিব্যং সাংগ্রামিকমিদং শুভম্ ।
পঠন বৈশতরুদ্রিয়ং শৃণ্বত সততোত্থিতঃ ॥১২০
[তথ্যসূত্র — হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ-র অনুবাদিত, বিশ্ববাণী প্রকাশনী প্রকাশিত — মহাভারত/দ্রোণপর্ব/সপ্তত্যধিকশততমোহধ্যায়]
✅ অর্থ — যজুর্বেদে রুদ্রের উত্তম শতরুদ্রিয় প্রকরণ বলা হয়েছে এবং এই মহাত্মার অনন্তরুদ্র এই নামে উপাসনার মন্ত্রও কথিত আছে ॥১১৮
হে অর্জুন! ধন, যশ, আয়ুর জনক এবং বেদের তুল্য পবিত্র এই দেবদেব মহাদেবের মাহাত্ম্য স্বরূপ শতরুদ্রিয় তোমাকে বললাম ॥১১৯
যে ব্যক্তি সর্বদা উদ্যোগী হয়ে মহাত্মা উমাপতি শিবের এই যুদ্ধসংক্রান্ত অলৌকিক শুভ চরিত্রর ও পরম পবিত্র শতরুদ্রিয় পাঠ ও শ্রবণ করেন তিনি রুদ্রলোক প্রাপ্ত হন ॥১২০
যজুর্বেদে পার্বতীপতি শিবের উদ্দেশ্যে শতরুদ্রিয় সূক্ত রয়েছে আছে তা মহাভারতে ব্যাসদেব দ্বারা প্রমাণিত । আর এই “শতরুদ্রিয়” সূক্ত যে পরমেশ্বর পার্বতীপতি শিবের উদ্দেশ্যেই সকালবেলায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জপ করতেন তারও প্রমাণ মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৩৮ অধ্যায়ের ৪নং শ্লোকে পরিষ্কার করেই স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজমুখে বলেছেন।
______________________________________________
♦️ শতরুদ্রিয় সূক্ত পাঠ করবার জন্য এখানে ক্লিক করে দেখুন 👇
শতরুদ্রিয় সূক্ত (শুক্ল যজুর্বেদোক্ত)
🔥 সিদ্ধান্ত — ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রভাত কালে সন্ধ্যাকার্যের সাথে সাথে পরমেশ্বর শিবেরও আরাধনা করতেন বৈদিক শতরুদ্রিয় সূক্ত পাঠ করতেন। শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর শিবের পরম ভক্ত ছিলেন, তাই তাকে পরমশৈব বলা হয়। এসবই মহাভারত থেকেই প্রমাণিত হলো।
সুতরাং আর্যসমাজীরা যে অর্ধসত্য কথা বলে অপপ্রচার করে, নিজেদের দলে সাধারণ সনাতনীদেরকে আকর্ষণ করবার চরম প্রকারের ভণ্ড ও স্বার্থান্বেষী মনোভাবে পরিপূর্ণ, তা জনসমক্ষে দিনের আলোর ন্যায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । সনাতন ধর্মের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এই আর্য সমাজী অর্ধযবনদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন, নচেৎ এরা ধর্ম প্রচারকারী সেজে আপনাকেও অধর্মের পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করবে। সুতরাং সকল সনাতনী সাবধানে থাকুন ।
যতদিন একটিও প্রকৃত শৈব এই বসুন্ধরা তে বেঁচে থাকবে ততদিন এই সমস্ত অসনাতনী আর্যসমাজীরা অপপ্রচার করে নিজেদের নিষ্কলঙ্ক প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না ।
কারণ,
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
✍️অপপ্রচার দমনে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
©কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha- ISSGT
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন