রামকে সদাশিবের আরাধ্য দাবী করা ও রামের উপাসনা করে সদাশিবের সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছন বলে দাবী করা নব্য রামানুজী বৈষ্ণবদের অপপ্রচারের খণ্ডন
রামকে সদাশিবের আরাধ্য দাবী করা ও রামের উপাসনা করে সদাশিবের সর্বোচ্চ স্থান প্রাপ্ত হওয়া, বলা নব্য রামানুজি বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবদের অপপ্রচারের খণ্ডন—
নমস্কার 🙏
নমঃ শিবায় 🙏
হর হর মহাদেব ✊🚩
সকল সনাতনীদের রাতুল চরণে আমার প্রমাণ জ্ঞাপন করছি। আপনারা হয়তো জানেন না যে, বর্তমান সমাজে একদল শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যাকারী নব্য সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয়েছে। তাদের বিশেষ কোনো কাজ নেই বললেই চলে। শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে পরমেশ্বর শিবের অপমান করা ও ভগবান বিষ্ণু, কৃষ্ণ, রাম ইত্যাদিদের চেয়ে ছোট করাটাই এই নব্য রামানুজি বৈষ্ণবদের একমাত্র উদ্দেশ্য। অথচ শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে জানা যায় বিষ্ণুর জন্ম শিব থেকেই হয়েছে। এবং বিষ্ণু, কৃষ্ণ ও রাম এনারা সকলে পরম শিব ভক্ত ছিলেন এবং পরমেশ্বর শিবের প্রদর্শিত মত মহাপাশুপত মতে দীক্ষিত ছিলেন, যা পুরাণ, মহাভারত, শিবগীতা অধ্যয়ন করলেই জানা যায়। এবং সকল শাস্ত্রে এটাই বলা আছে যে একমাত্র পরমেশ্বর হলো শিব “এক হি রুদ্র ন দ্বিতীয়ায় তস্থুর্য “। কিন্তু তা এই কলির পাষণ্ড বৈষ্ণবেরা মানতে নারাজ কারণ এরাও তো দক্ষের বংশধর ভণ্ডাসুরের চ্যালাচামুণ্ডা। নাহলে পরমেশ্বর শিবের বিরোধীতা তথা অপমান কখনো করতো না।
👉তো যে কারণে আজকের লেখালেখি তার ছোট্ট ধারণা আমি প্রথমেই বলেছি। তারপরেও আবার বলি—
❌ বৈষ্ণবদের অপপ্রচার —
বৈষ্ণবদের দাবী হলো সদাশিব রামের উপাসনা করে সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছেন। এবং তার প্রমাণের জন্য পদ্মপুরাণের পাতাল খণ্ডের একটি শ্লোক তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ বৈষ্ণবরা এখন এটাই দাবী করতে চাই যে রাম সর্বোচ্চ সত্ত্বা।
✅ শৈবপক্ষ দ্বারা দাবীর খণ্ডন —
উক্ত শ্লোকে কি বলা হয়েছে তা একবার দেখে নেব—
সদাশিবো যমারাধ্য পরমং স্থানমাগতঃ।
স রামো মন্মনস্ত্যক্তা ন কাপি পরিগচ্ছতি।।
অর্থঃ— সেই ভগবান্ সদাশিব যাঁহাকে আরাধনা করিয়া পরম স্থান প্রাপ্ত হইয়াছেন, সেই রামচন্দ্র, মদীয় হৃদয়ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া কদাচ কুত্রাপি গমন করেন না ।।
👉 এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো “সদাশিবো যমারাধ্যং” বলতে এখানে ত্রিদেব এর অন্তর্গত রুদ্রদেবের কথা ই বোঝানো হয়েছে।
কিন্তু এই সামান্য ব্যাপারটাকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে গেলো নকল রামানুজি বৈষ্ণবেরা। সোজাসুজি বলে দিচ্ছে যে, সদাশিবের আরাধ্য রাম এবং রামের আরাধনা করে সদাশিব সর্বোচ্চ স্থান প্রাপ্ত করেছেন।
শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে, পরমেশ্বর সদাশিব কখনো মায়ার জগতে প্রবেশ করেন না। কারণ সদাশিব মায়ার ঊর্ধ্বে, কালের ঊর্ধ্বে, গুণের ঊর্ধ্বে। পরমেশ্বর সদাশিব স্বয়ং কোনো কার্য করেন না, উনি উনারই লীলা মূর্তি রুদ্রদেব কে দিয়ে কার্য করান। পরমেশ্বর সদাশিব অকর্তা।
প্রমাণ 👇
🟪 এই শিবের অংশস্বরূপ অবতার রুদ্রই কৈলাসপর্বতে থাকেন — একথা শিবমহাপুরাণেই পরমেশ্বর সদাশিব বলেছেন। প্রসঙ্গ টি হল, কুবেরকে সখা হিসেবে তার বাসস্থানের পাশেই তিনি বাস করে থাকার জন্য বরদান দিয়েছিলেন সদাশিব, এই বরদান দেবার পর তিনি ভাবলেন যে, তিনি তো মায়ার জগতের সমস্ত মায়ার প্রভাবের অতীত অর্থাৎ গুণাতীত সদাশিব। তাহলে মায়ার জগতে থাকা কুবেরের বাসস্থানের পাশে সদাশিব কিভাবে বসবাস করবেন ? তখন পরমেশ্বর সদাশিব একটি উপায় বের করে ভাবলেন যে, যেহেতু আমার হৃদয় থেকে প্রকটিত হওয়া রুদ্রদেবই আমার পূর্ণাবতার, সেহেতু সেই রূপেই আমি রুদ্রকে ওখানে থাকার ব্যবস্থা করবো, এতে রুদ্রের দ্বারাই আমার বরদান অনুযায়ী কুবেরের পাশে থাকাও হয়ে যাবে আবার গুণাতীত সদাশিব রূপেই মায়ার জগতে প্রবেশও করতে হবে না।
তাই পরমেশ্বর সদাশিব অংশস্বরপে গুণযুক্ত রুদ্রদেবরূপে কৈলাসে বসবাস করে কৈলাসপতিরূপে থাকেন সর্বদা।
প্রমাণ — পরমেশ্বর সদাশিব ভাবলেন,
বিধ্যঙ্গজস্স্বরূপো মে পূর্ণঃ প্রলয়কার্যকৃৎ।
তদ্রুপেণ গমিষ্যামি কৈলাসং গুহ্যকালয়ম্ ॥ ৩
রুদ্রো হৃদয়জো মে হি পূর্ণাংশো ব্রহ্ম নিষ্কলঃ ।
হরিব্রহ্মাদিভি সেব্য মদভিন্নো নিরঞ্জনঃ ॥ ৪
তৎস্বরূপেণ তত্রৈব সুহৃদ্ভূত্বা বিলাস্যহম্ ।
কুবেরস্য চ বৎস্যামি করিষ্যামি তপো মহৎ ॥ ৫
সঞ্চিন্ত্য রুদ্রোঽসৌ শিবেচ্ছাং গন্তুমুৎসুকঃ ।
ননাদ তত্র ঢক্কাং স্বাং সুগতিং নাদরূপিণীম্ ॥ ৬
[তথ্যসূত্র - শিবমহাপুরাণ/রুদ্রসংহিতা/সৃষ্টিখণ্ড/অধ্যায় ২০]
অর্থ — ব্রহ্মার ললাট থেকে যিনি প্রাদুর্ভূত হয়েছেন তথা প্রলয় কার্যের দায়িত্ব পালন করছেন, সেই রুদ্রদেব আমার পূর্ণ স্বরূপ । অতঃ সেই রুদ্রদেবের রূপেই আমি সদাশিব গুহ্যগণের অন্তিমকালের আশ্রয়রূপী নিবাসস্থান কৈলাস পর্বতে যাবো । রুদ্র আমার(সদাশিবের) হৃদয় থেকেই প্রকট হয়ে প্রলয় কার্য সামলান, সেই রুদ্রই প্রকৃত পক্ষে আমার পূর্ণ অবতার, নিষ্কল, নিরঞ্জন ব্রহ্ম আর অন্তর থেকে সে আমার(সদাশিবের) থেকে অভিন্ন। হরি, ব্রহ্মা আদি দেবতারা সেই রুদ্রের সেবা করে থাকে নিরন্তর। সেই রুদ্রদেবের রূপেই কুবেরের মিত্র হয়ে সেই কৈলাস পর্বতেই বিলাসপূর্বক থাকবো আর মহান তপস্যা করবো। শিবের অন্তরের এই ইচ্ছা কে চিন্তন করেই সেই রুদ্রদেব কৈলাস যাবার জন্য উৎসুক হয়ে উত্তম গতি প্রদানকারী নাদস্বরূপ নিজের ডমরু বাজালেন।
সুতরাং রুদ্রদেবই কৈলাসপর্বতে কৈলাসপতি হিসেবে ঐ পর্বতে থেকে লীলা করছেন মাত্র । তিনি সদাশিবের লীলা অবতার মাত্র। তাই কখনো কখনো সংহারকর্তা রুদ্রদেবকে সদাশিব বলে সম্বোধন করা হয় মাত্র।
👉এবার একটু শাস্ত্রের দিকে আসা যাক, বীরমণিকে রক্ষা করার বরদান ত্রিদেবের অন্তর্গত রুদ্রদেব দিয়েছিলেন। পদ্মপুরাণের যে অধ্যায় থেকে বৈষ্ণবেরা অপদাবী করেছিল সেই একই অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে—
যস্য রক্ষাং প্রকুরুতে সদা রুদ্রঃ পিনাকধৃক্।
যং দেবা দানবা যক্ষা নমন্তি মণিমৌলিভিঃ ॥২৮
[তথ্যসূত্র - নবভারত পাবলিশার্স প্রাকাশিত ‘পদ্মপুরাণ’/ পাতাল খণ্ড/অধ্যায়- ২৪]
✅ অর্থ — স্বয়ং রুদ্রদেব পিনাকহস্তে সর্ব্বদা যাঁহাকে রক্ষা করিতেছেন; দেব, দানব ও যক্ষগণ মণি-ভূষিত মস্তকদ্বারা যাঁহাকে প্রণিপাত করিয়া থাকেন ॥২৮
👉 রুদ্রদেব যাহাকে রক্ষা করছেন, অর্থাৎ বীরমণিকে। তাই পুষ্কলের বলা “সদাশিবো যমারাধ্যং” অর্থে, রুদ্রদেবের আরাধ্য রাম কেই বলা হচ্ছে।
কিন্তু এটাও শিবের একটা অভিনয় মাত্র কারণ, পদ্মপুরাণেই বলা হয়েছে যে শিব কারো ধ্যান করেন না, উনি কেবল মাত্র উনার ভক্তদের প্রশংসা করে থাকেন মাত্র—
♦️ পরমেশ্বর শিব কার ধ্যান করেন ----
শ্রীবিষ্ণু উবাচ্-
" শ্ৰুতিদেবাদ্যগম্যং হি পদং তবকিলস্থিতম্ ॥ ১৮৫
সর্বোপনিষদব্যক্তংত্বত্পদংকপিসর্বযুক্ ।
যমাদিসাধনৈৰ্যোগৈর্নক্ষণন্তেপদং স্থিতম্ ॥ ১৮৬
অথবিষ্ণুর্মহাতেজ মহেশমিদম্ ব্রবীৎ ।
সর্ব্বৈর্নমস্যতেযস্তুসর্ব্বৈরেবসমর্চ্যতে ॥ ২৪৪
হুযতে সর্বযজ্ঞেষু সভবান্কিজপিষ্যতি ।
রচিতাংজলযঃ সর্বেত্বামেবৈকমুপাসতে ॥ ২৪৫
তবকঃ ফলদোবন্দ্যঃ কোবাত্বত্তোধিকোবদ ॥ ২৪৬ "
(তথ্যসূত্র - পদ্মপুরাণ/পাতাল খণ্ড/১১৪ নং অধ্যায়)
✅ অর্থ — আপনার পাদপদ্ম বেদ এবং দেবতাগণের জন্যও অগম্য। এমনকি সমগ্র উপনিষদও আপনার পাদপদ্মকে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ নয়। সাধন, যোগের দ্বারাও আপনাকে পাওয়া যায়না। সবাই আপনাকে অর্চ্চনা করে, প্রার্থনা করে, আপনার জপ করে, উপাসনা করে এবং সর্বযজ্ঞে আপনারই উদ্দেশ্য আহুতি দেয়। তাহলে আপনি কার পূজা করেন ? আপনাকে ফলপ্রদানকারী ও আপনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এমন কেই বা আছে ?
শঙ্কর উবাচ্ -
" ধ্যাযেনকিঞ্চিৎ গোবিন্দননমস্যেহকিঞ্চন ॥ ২৪৭
নোপাস্যেকিঞ্চনহরেনজপিষ্যেহকিঞ্চন ।
কিন্তু নাস্তিকজন্তুনাং প্ৰবৃত্ত্যৰ্থমিদংমযা ॥ ২৪৮ "
(তথ্যসূত্র - পদ্মপুরাণ/পাতাল খণ্ড/১১৪ নং অধ্যায়)
✅ অর্থ — হে গোবিন্দ ! বস্তুত আমি কারও ধ্যান করিনা, কাউকে প্রণাম করিনা, কাউকে উপাসনা করিনা এবং কারও জপ করিনা। নাস্তিকদেরকে এবং জগৎবাসীকে শিক্ষা প্রদানের নিমিত্তে আমি নিজ ইচ্ছায় বিধি নিয়মে আবদ্ধ হই।
সিদ্ধান্ত - সদাশিবই একমাত্র সেই নিরঞ্জন ব্রহ্ম, সাক্ষাৎ পরমেশ্বর। আর যিনি সাক্ষাৎ পরমেশ্বর তিনি কেনই বা অপর কোনো দেবতার ধ্যান বা অর্চনা করতে যাবেন। তিনি সাকার অবস্থায় যা কিছু করেন সবটাই তার লীলা মাত্র। সবাই আসলে তাকেই একমাত্র ভজনা করে থাকে বিভিন্ন মার্গে, কিন্তু তিনি কারো ভজনা করেন না।
শিব মহাপুরাণও একই কথা বলছে, দেখুন 👇
" সর্বে রুদ্রং ভজন্ত্যেব রুদ্রঃ কঞ্চিদ্ভজেন্ন হি।
স্বাত্মনা ভক্তবাৎসল্যাদ্ভজত্যেব কদাচন ॥ ১৫ " (শিবমহাপুরাণ/কোটিরুদ্রসংহিতা/অধ্যায় ৪২)
✅ অর্থ — সবাই পরমেশ্বর শিবের ভজনা করেন, কিন্তু পরমেশ্বর শিব কারোর ভজন করেন না, কখনো কখনো ভক্তবৎসলবশত তিনি নিজেই নিজের ভক্তের প্রশংসা রূপে ভজনা করে থাকেন ॥ ১৫
👉অর্থাৎ এর থেকে দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে গেলো যে পরমেশ্বর শিব মূলত কারোর ধ্যান করেন না, উনি কেবল মাত্র উনার ভক্তদের প্রশংসা করেন। এবং সাধারণ জগৎবাসী এবং নাস্তিকদের শিক্ষা প্রদানের নিমিত্ত নিজে ইচ্ছাকৃত ভাবে লোক দেখানো বিধি নিয়মে আবদ্ধ হন মাত্র।
অর্থাৎ এর থেকে এটাই জানা যায় যে সদাশিব অর্থে ত্রিদেবের অন্তর্গত রুদ্র দেবকেই বোঝানো হচ্ছে। এখানে মোটেও পঞ্চকৃত্যকারী সদাশিবের কথা বলা হয় নি।
👉শাস্ত্রের মধ্যে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এক-একটার অর্থ ভিন্ন রকম হয়। এবং একটা অর্থ দ্বারা অনেক কিছুকেই বোঝানো হয়। তেমনি সদাশিব শব্দটা দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে রুদ্রদেব কে বুঝিয়েছে তো অনেক ক্ষেত্রে পরমশিবকে বুঝিয়েছে। কারণ শাস্ত্রই এই কথা টা বলে—
গুণাতীত সদাশিব নাম্নে রুদ্রঃ কথিতাঃ ।
স্তুতিবাচ্য বদয়া ন সাক্ষাৎ গুণাত্মকা হরঃ ॥৩৯
[মহাশ্রুতি ভদ্রবিধ আগম/৭ম পটল]
✅ অর্থঃ— রুদ্রদেব কখনো কখনো গুণাতীত সদাশিব নামে কথিত হন। স্তুতির সময়ে সদাশিব নামে বাচিত হন মাত্র, এর অর্থ এই নহে যে সাক্ষাৎ গুণাত্মক হর(রুদ্র) গুণাতীত সদাশিব হয়ে গেলেন ॥ ৩৯
👉তাহলে শাস্ত্রই বলছে যে, রুদ্র সদাশিব শব্দে কথিত হন। কিন্তু উনি গুণাতীত সদাশিব নন। শাস্ত্রে বলা হয়েছে রুদ্র বিষ্ণুর আরাধ্য হবে, এবং বিষ্ণু রুদ্রের আরাধ্য হবে এদের মধ্যে যারা ভেদ করে তারা মূর্খ।
একি ভাবে পদ্মপুরাণে একি কথায় বলা আছে রাম শিবের (রুদ্রের) আরাধ্য এবং শিব রামের আরাধ্য যে ব্যক্তি রাম এবং শিবের মধ্যে ভেদ করে সে নরকে গমন করে—
[গীতাপ্রেস-পদ্মপুরাণ- পাতাল খণ্ড- অধ্যায়- ৪২]
👉আর বৈষ্ণব তাদের বালখিল্য দাবী করে বলছে রামের উপাসনা করে সদাশিব সর্বোচ্চ স্থান প্রাপ্ত করেছেন। এই ভেদ টা করার জন্যই তো ওরা নরকে পতিত হয়ে কুম্ভীপাকে মরতে থাকবে।
👉ওদের বালখিল্য দাবী বিরুদ্ধে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে।
বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবরা যে দাবী করছে রাম সদাশিবের আরাধ্য! তাহলে তাদের সাত্ত্বিক বৈষ্ণব পুরাণ পদ্ম পুরাণে কেন বিষ্ণু পরমেশ্বর শিবকে বলছে, হে প্রভু আমি তো ভস্মের মাহাত্ম্যই জানিনা আপনার মাহাত্ম্য কীভাবে জানবো—
হরিরুবাচ—
ন শক্তিং ভস্মনো জানে প্রভাবং তে কুতো বিভো।
নমস্তেহস্তু নমস্তেহস্তু ত্বামেব শরণং গতঃ।।২৩৮
[পদ্মপুরাণ- পাতালখণ্ড- অধ্যায়- ৬৪]
অর্থঃ— হরি বলিলেন,-প্রভো! আমি ভস্মেরই মহিমা জানি না, আপনার মহিমা কিরূপে জানবো ? (আপনাকে আর অধিক কি বলিব) আপনারই শরণাপন্ন হইলাম।।২৩৮
👉তাহলে এখানে বিষ্ণু বলছেন যে, উনি ভস্মের মহিমা জানেন না, শিবের মহিমা জানা তো দূরের কথা। আর নব্য রামানুজীরা শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে বলছে রাম যিনি কিনা বিষ্ণুর অবতার সেই রাম নাকি সদাশিবের আরাধ্য 🤭
বিষ্ণুকে বৈষ্ণবরা পরমেশ্বর বলেন, তাহলে এখানে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, যিনি সর্বান্তর্যামী, সর্বব্যাপক তিনিই ভস্মের মাহাত্ম্য কেন জানে না ? কেনই বা শিবের মাহাত্ম্য ও জানে না ? যিনি সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী তার তো সবই জানার কথা কিন্তু এখানে বলছে ভস্মের মহিমা জানে না! তাহকে এটা কি বিষ্ণুর সর্বব্যাপকতাকে খণ্ডিত করে না❓❓
তাহলে যার সর্বব্যাপকতা খণ্ডিত হয় তিনি কীভাবে পরমেশ্বর হবে❓❓
হ্যাঁ তবে এটাও ঠিক যে, ত্রিদেবের অন্তর্গত রুদ্র এবং বিষ্ণু একে অপরের আরাধ্য হয়। কিন্তু সদাশিব ত্রিদেব এর ও ঊর্ধ্বে। এবং সাক্ষাৎ ত্রিদেব সদাশিব থেকেই প্রকট হয়। এই কথাও আমি বলছি না বৈষ্ণবদের পরম সাত্ত্বিক পদ্মপুরাণই বলছে—
'যএকঃ শাশ্বতোদেবোব্রহ্মবন্দ্যঃ সদাশিবঃ । ত্রিলোচনোগুণাধারো গুণাতীতোহক্ষরোব্যয়ঃ ॥৩
পৃথকৃত্বাত্মনস্তাততত্র স্থানং বিভজ্য চ ।
দক্ষিণাঙ্গে সৃজাৎপুত্রং ব্রহ্মাণাং বামতো হরিম্ ॥৫
পৃষ্ঠদেশে মহেশানংত্রীপুত্রান্ সৃজিদ্বিভুঃ । জাতমাত্রাস্ত্রয়োদেবা ব্রহ্মাবিষ্ণুমহেশ্বরাঃ ॥৬”
[তথ্যসূত্র - পদ্মপুরাণ/ পাতালখণ্ড/১০৮ নং অধ্যায়]
অর্থঃ— সেই এক সদাশিবই শাশ্বত, ব্রহ্মা দ্বারা অৰ্চিত, ত্রিলোচন, ত্রিগুণধারী, ত্রিগুণাতীত, অক্ষর (অক্ষর ব্রহ্মস্বরূপ) এবং অব্যয়। তিনি নিজ ইচ্ছায় নিজেকে তিনভাগে বিভক্ত করেন। তিনি তাঁর দক্ষিণ(ডান)ভাগ থেকে পুত্রস্বরূপ ব্রহ্মাকে, বামভাগ থেকে শ্রীহরিকে এবং পৃষ্ঠদেশ থেকে মহেশ্বরকে (অর্থাৎ রুদ্র) সৃষ্টি করেন। এই ভাবে সদাশিবের তিনপুত্র ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর ত্রিদেব হিসেবে পরিচিতি পায়। [ তাই সদাশিবকে ত্রিদেবজনক বলা হয়]
👉তাহলে রাম যদি সদাশিবের আরাধ্য হয় তাহলে, বিষ্ণুকে নিজের বাম ভাগ থেকে উৎপন্ন করা সদাশিব টা কে❓
👉তাছাড়া পদ্মপুরাণে তো এটাও বলা আছে যে মহেশ্বরের ৪ টা নিশ্বাস সমান বিষ্ণুদেবের সম্পূর্ণ আয়ু—
শম্ভুরুবাচ্ -
" ব্রহ্মাধিকবলোবিষ্ণুরায়ুষি ব্রহ্মণোহধিক || ৬৯ || ব্রহ্মাংডমালাভরণে মহেশস্যমমৈবতু। চতুর্নিঃশ্বাসমাত্রেন বিষ্ণোরায়ুরুদাহৃতম্ || "
[রেফারেন্স- পদ্মপুরাণ/ পাতাল খণ্ড/ ১০৮ নং অধ্যায়]
ব্রহ্মার চেয়ে বিষ্ণুদেবের আয়ু ও ক্ষমতা উভয়ই বেশি। তবে মহেশ্বরের এবং আমার (শম্ভু) চারটি নিঃশ্বাসের সমান বিষ্ণুদেবের পুরো আয়ুষ্কাল।
👉মহেশ্বর, রুদ্র, শম্ভু, শ্রী বিষ্ণু ও ব্রহ্মা সকল সাকার দেবগণই কালের অধীনে আবদ্ধ। প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট আয়ু আছে। কিন্তু সদাশিব কালাতীত। তাঁর কোনো সময়ের মাপকাঠি নেই। জগৎ চরাচরের সকল কিছুই তাঁর মধ্যে বিলীন হয়। তিনি কোথাও বিলীন হন না।
👉তাহলে যিনি কালের অধীন হন তিনি কীভাবে পরমেশ্বর পদবাচ্য হয়❓
আর বৈষ্ণবরা বলছে রাম সদাশিবের আরাধ্য। যার ৪ টা নিশ্বাস সমান বিষ্ণুদেবের সম্পূর্ণ আয়ু, সেই বিষ্ণুদেবের অবতার রামের উপাসনা করে নাকি সদাশিব সর্বোচ্চ স্থান প্রাপ্ত করেছেন 🤭
👉কেউ যদি মায়াতে আসক্ত না হয়, সে কখনো এমন উদ্ভট দাবী করবে না। আর এই বকরামুণ্ডি বৈষ্ণবরা মায়াতেই আসক্ত থাকবে এটা ও শাস্ত্রের কথা। কারণ বৈষ্ণবরা সবসসময় পরমেশ্বর শিবকে অপমান করে, ছোট করে এবং উপাসনাও করে না। তাই তো এরা মায়াতে আসক্ত হয়ে পরমেশ্বর শিবের মূল স্বরূপটাই জানতে পারে না।
আপনাদের বৈষ্ণবদের সাত্ত্বিক পদ্মপুরাণই বলছে যে—
যো মদীয়ং পরং ভক্তং শিবং সম্পূজয়েন্ন হি।
মন্মায়ামোহিতধিয়ঃ প্রায়স্তে মানবাধর্মাঃ।৫১
[পদ্মপুরাণ- পাতালখণ্ড- অধ্যায়- ৪২]
অর্থঃ— যে মদীয় ভক্তরা ভূতেশ্বর শিবের পূজা না করিবে, সেই পাপিষ্ঠ পুরুষ কখনই আমাতে ভক্তি রাখিতে পারিবে না এবং যাহারা ভূতেশ্বরকে প্রণাম স্তব বা স্মরণ পর্য্যন্ত না করে, সেই অধম মানবেরা আমার মায়াতে আছন্ন হয়ে আছে।।৪২
👉এখন যারা মায়াতে আছন্ন হয়ে আছে তাদের নতুন করে আর কি বা বলার আছে। তারা তো মায়ার বশে সত্যকে কখনো জানতে পারবে না। আর যে মস্তকে মায়ার অবস্থান থাকে সেই মস্তক টা শরীর থেকেও আলাদা হয়ে যায়, যেমনটা দক্ষের ক্ষেত্রে হয়েছিলো।
যে শিব নিন্দা করবে তার মস্তক ভূমিতে পতিত হবে এটাই চিরন্তন সত্য।
তাই বৈষ্ণবদের বকরামুণ্ডি বলি🤭
বৈষ্ণবেরা বারংবার শৈবদের খোঁচা দিতে গিয়ে নিজেদের পায়েই কুড়োল মারে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বের হয়ে আসে 🤭
কপিরাইট ও প্রচারেঃ— আন্তর্জাতিক শিবশক্তি জ্ঞান তীর্থ (ISSGT)
বিঃদ্রঃ— লেখাটি কপি করলে সম্পূর্ণ রূপে কপি করবেন কোনোরকম কাটাছেঁড়া করা যাবে না।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন