ॐ-কার একমাত্র পরমেশ্বর শিব, অন্য আর কেউ নয়



॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥

ভূমিকা —

বর্তমান সমাজ এমন একটি কুৎসিত কালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেখানে ‘ॐ’(প্রণব) মহামন্ত্র কে একমাত্র রূপহীন নামহীন ব্রহ্মের মন্ত্র মন্ত্র বলে চিহ্নিত করবার অপচেষ্টা চলছে। মানুষের ধারণা হল বিষ্ণুর জন্য ‘বিষ্ণবে নমঃ’, শিবের জন্য ‘নমঃ শিবায়’, বিভিন্ন দেবদেবীর নাম উচ্চারণ করে নমঃ পদ যুক্ত করে তাদের সেগুলিই মন্ত্র হিসেবে নির্দিষ্ট। কিন্তু  ‘ॐ’ মহামন্ত্র নাকি কোনো দেবতার নিজস্ব মন্ত্র নয়, এটি নাকি একমাত্র রূপহীন নামহীন নিরাকার ব্রহ্মের মন্ত্র। 

নিরপেক্ষতা বজায় রাখবার জন্য ‘ॐ’ মহাবীজ মন্ত্র কে সকল দেবদেবী তথা প্রভু শিবের‌ থেকে ভিন্ন বলে দাবী করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন যে, যেকোনো দেবদেবীর নামে সাথে ‘ॐ’ অর্থাৎ ‘প্রণব’ যুক্ত করা হয় ব্রহ্ম কে ইঙ্গিত করবার জন্য, উদাহরণ হিসেবে, ধরুন ‘নমো নারায়ণায়’, ‘নমঃ শিবায়’, ‘দুর্গায়ৈ নমঃ’ ইত্যাদির সহিত ‘ॐ’ অর্থাৎ ‘প্রণব’ যুক্ত করে ‘ॐ নমো নারায়ণায়’, ॐ নমঃ শিবায়, ॐ দুর্গায়ৈ নমঃ করা হয় এই উদ্দেশ্যে যে, যেকোনো দেবদেবীর সহিত ব্রহ্মের ‘ॐ’ কে যুক্ত করলে তা ব্রহ্মের সহিত ঐ দেবদেবীকে যুক্ত করে। অর্থাৎ সূক্ষ্মভাবে ‘ॐ’ কার কে ব্যবহার করে একটি ভ্রান্ত ধারণাকে সমাজে প্রচলিত করা হয়েছে তথাকথিত নিরপেক্ষ ব্রহ্মবাদীদের দ্বারা। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভাবে শাস্ত্র বিরুদ্ধ‌। কারণ, ॐ-কার হল স্বয়ং পরমেশ্বর শিবের বাচক, ঐ নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্মটি স্বয়ং শিব‌ই নিজে, তিনি সাকার রূপ ধারণ করে সদাশিব হয়েছেন, তিনি ত্রিদেব (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্র) কে উৎপন্ন করেছেন, তার থেকেই সকল দেবদেবীর উৎপত্তি হয়েছে। তাই শিবকে ছেড়ে অন্য কোনো নিরাকার ব্রহ্মের বাচক ‘ॐ’ নয়। এমনকি ॐ কার শিবকে ছেড়ে অন্য আর কোনো দেবদেবীর বাচ্য মন্ত্র নয়। এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এই প্রবন্ধে ।

_______________________________________________

ॐ কার একমাত্র পরমেশ্বর শিব, অন্য আর কেউ নয়


ॐ-কার কে কেন ‘প্রণব’ বলা হয় ?

উত্তর —

এই বিষয়ে শিব মহাপুরাণের বিদ্যেশ্বর সংহিতার ১৭ তম অধ্যায়ের বচন উপস্থাপন করছি।


প্রো হি প্রকৃতিজাতস্য সংসারস্য মহোদধেঃ ।
নবং নাবান্তরমিতি প্রণবং বৈ বিদুর্বুধাঃ ॥ ৪

প্রঃ প্রপঞ্চো ন নাস্তি বো যুষ্মাকং প্রণবং বিদুঃ ।

প্রকর্ষেণ নযেদ্যস্মান্মোক্ষং প্রণবং বিদুঃ ॥ ৫

স্বমন্ত্রজাপকানাং চ পূজকানাং চ যোগিনাম্ ।
সর্বকর্মক্ষয়ং কৃত্বা দিব্যজ্ঞানং তু নূতনম্ ॥ ৬

তমেব মায়ারহিতং নূতনং পরিচক্ষতে ।
প্রকর্ষেণ মহাত্মানং নবং শুদ্ধস্বরূপকম্ ॥ ৭

নূতনং বৈ করোতীতি প্রণবং তং বিদুর্বুধাঃ।
প্রণবং দ্বিবি
ধং প্রোক্তং সূক্ষ্মস্থূলবিভেদতঃ॥ ৮

সূক্ষ্মমেকাক্ষরং বিদ্যাৎ স্থূলং পঞ্চাক্ষরং বিদুঃ।
সূক্ষ্মমব্যক্তপঞ্চার্ণং সুব্যক্তার্ণং‌ তথেতরৎ॥ ৯

জীবন্মুক্তস্য সূক্ষ্মং হি সর্বসারং হিতস্য হি।
মন্ত্রেণার্থানুসন্ধানং স্বদেহবিলয়াবধি ॥ ১০

স্বদেহে গলিতে পূর্ণং শিবং প্রাপ্নোতি নিশ্চয়ঃ।..॥ ১১

 [শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১৭নং অধ্যায়/৪-১১ নং শ্লোক]

অর্থ —  প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন সংসাররূপ মহাসাগরের নাম হল - 'প্র'। প্রণব হল (প্রকৃতি)এর থেকে পার করার জন্য দ্বিতীয় (নব) নৌকা। তাই এই -কারের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে 'প্রণব'। ॐ-কার তাঁর জপকারী সাধকদের বলেন- 'প্র-প্রপঞ্চ, -নেই, বঃ - তোমাদের জন্য।' সুতরাং এই ভাব নিয়েই জ্ঞানী ব্যক্তি ‘ওম্’-কে 'প্রণব' নামে জেনে থাকেন। 

এর অন্য ভাব হল এইরূপ - 

'প্র-প্রকর্ষেণ, - নয়েৎ, বঃ- যুষ্মান্ মোক্ষম্ ইতি বা প্রণবঃ। অর্থাৎ এটি সকল উপাসকদের মোক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।' এই জন্যও ঋষি-মুনিগণ একে 'প্রণব' বলেন। এটি তার জপকারী যোগীদের এবং তার মন্ত্রপূজাকারী উপাসকদের সমস্ত কর্মনাশ করে দিব্যনূতন জ্ঞান প্রদান করে; সেইজন্যও এর নাম প্রণব। সেই মায়ারহিত মহেশ্বরকেই নব অর্থাৎ নূতন বলা হয়। এই পরমাত্মা প্রকৃষ্টরূপে নব অর্থাৎ শুদ্ধস্বরূপ, তাই তাঁকে 'প্রণব' বলা হয়। প্রণব সাধককে নব অর্থাৎ নবীন (শিবস্বরূপ) করে দেয়। সেজন্যও বিদ্বান ব্যক্তি একে প্রণব নামে জানেন। অথবা প্রকৃষ্টরূপে নব দিব্য পরমাত্মজ্ঞান প্রকটিত করে, তাই এটি প্রণব ॥

 প্রণবের দুটি ভাগ বলা হয়েছে- স্থূল এবং সূক্ষ্ম। এক অক্ষররূপ যে 'ॐ(ওম্)', সেটি সূক্ষ্ম প্রণব বলে জানতে হবে, 'নমঃ শিবায়' এই পঞ্চাক্ষরযুক্ত মন্ত্রকে স্থূল প্রণব বলে জানতে হবে। যাতে পাঁচ অক্ষর ব্যক্ত নয়, সেটি সূক্ষ্ম এবং যাতে পাঁচ অক্ষর সুষ্পষ্টরূপে ব্যক্ত, তা স্থূল ॥

জীবন্মুক্ত ব্যক্তির জন্য সূক্ষ্ম প্রণব জপের বিধান আছে। সেটিই তাঁর জন্য সমস্ত সাধনার সার। তিনি তাঁর দেহ লয় পাওয়া পর্যন্ত সূক্ষ্ম প্রণব-মন্ত্র জপ এবং তার অর্থভূত পরমাত্ম-তত্ত্বের সন্ধান করতে থাকেন। যখন শরীর নাশ হয়ে যায়, তখন তিনি পূর্ণ ব্রহ্মস্বরূপ শিবকে লাভ করেন-এটি সুনিশ্চিত ব্যাপার ॥

_______________________

এই প্রণব (ॐ) মন্ত্র জপ করলে শ্রদ্ধার সহিত জপকারী ব্যক্তি অন্তিমে কাকে লাভ করেন ?

উত্তর — ১ম প্রমাণ হিসেবে 

শিব মহাপুরাণের বিদ্যেশ্বর সংহিতার ১৭ তম অধ্যায়ের নং শ্লোক বলছে,

সদা জপন্সদা ধ্যানৎ শিবং প্রণবরূপিণম্॥ ২৪
সমাধিস্থো মহাযোগী শিব এব ন সংশয়ঃ॥..॥ ২৫

 [শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/১৭নং অধ্যায়/২৪-২৫ নং শ্লোক]

অর্থ — সর্বদা প্রণব-জপ এবং প্রণব রূপ শিবের ধ্যান করতে করতে সমাধি-স্থিত মহাযোগী পুরুষ সাক্ষাৎ শিবই হয়ে যান, তাতে কোনো সংশয় নেই ॥

_______________________________________________


শিবমহাপুরাণে প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছে —  (২)

প্রণবঃ সর্ববেদাদিঃ প্রণবঃ শিববাচকঃ
মন্ত্রাধিরাজরাজশ্চ মহাবীজং মনুঃ পরঃ ॥ ৬০

শিবো বা প্রণবো হ্যেষ প্রণবো বা শিবঃ স্মৃতঃ।
বাচ্যবাচকয়োর্ভে‌দো নাত্যন্তং বিদ্যতে যতঃ ॥ ৬১

[শিবমহাপুরাণ/কৈলাসসংহিতা/১৩নং অধ্যায়/৬০-৬১নং শ্লোক]

🔴 অর্থ  —  সম্পূর্ণ বেদের আদি হল - প্রণব (ॐ) তথা শিবের (পরমেশ্বর মহাদেবের) বাচক‌ও হল - প্রণবই। এটি শ্রেষ্ঠ মন্ত্র অনান্য মন্ত্রের রাজাধিরাজ তথা মহাবীজ স্বরূপ।

 প্রণব-ই শিব আর শিব‌-ই প্রণব বলে জানা উচিত । কারণ বাচক আর বাচ্যের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। 


শিবমহাপুরাণ থেকে প্রমাণ — (৩)


প্রণবার্থপরিজ্ঞানরূপং তদ্বিস্তরাদহম্‌ ।

বদামি ষড়্বিধার্থৈক্যপরিজ্ঞানেন সুব্রত ॥ ৯॥

প্রথমো মন্ত্ররূপঃ স্যাদ্‌ দ্বিতীয়ো মন্ত্রভাবিতঃ ।

দেবতার্থস্তৃতীয়োঽর্থঃ প্রপঞ্চার্থস্ততঃ পরম্‌ ॥ ১০॥

চতুর্থঃ পঞ্চমার্থঃ স্যাদ্‌ গুরুরূপপ্রদর্শকঃ।

ষষ্ঠঃ শিষ্যাত্মরূপোর্থঃ ষড়্বিধার্থাঃ প্রকীর্তিতাঃ ॥ ১১

তত্র মন্ত্রস্বরূপং তে বদামি মুনিসত্তম।

যেন বিজ্ঞাতমাত্রেণ মহাজ্ঞানি ভবেন্নরঃ ॥ ১২

আদ্যঃ স্বরঃ পঞ্চমশ্চ পঞ্চমান্তস্ততঃ।

বিন্দুনাদৌ চ পঞ্চার্ণা‌ঃ প্রোক্তা বেদৈর্ন‌ চান্যথা ॥ ১৩

এতৎসমষ্টিরূপো হি বেদাদিঃ সমুদাহৃতঃ।

নাদঃ সর্বসমষ্টিঃ স্যাদ্‌ বিন্দ্বাঢ্যং যচ্চতুষ্টয়ম্ ॥ ১৪

ব্যষ্টিরূপেণ সংসিদ্ধং প্রণবে শিববাচকে ।..॥ ১৫

[শিবমহাপুরাণ/কৈলাসসংহিতা/১৪নং অধ্যায়/১০-১৪ নং শ্লোক]

🔴  অর্থ  —  সুব্রহ্মণ্য বললেন, প্রণবার্থপ্রজ্ঞানরূপ একটি বিষয়ের ছয় প্রকার তাৎপর্য রয়েছে। 

প্রথমত মন্ত্ররূপ অর্থ, দ্বিতীয়ত যন্ত্ররূপ অর্থ, তৃতীয়ত দেবতাবোধক অর্থ, চতুর্থত প্রপঞ্চরূপ অর্থ, পঞ্চমত গুরু রূপ দেখানো অর্থ এবং ষষ্ঠত শিষ্য স্বরূপ বোধক অর্থ।  প্রথম স্বর অকার, দ্বিতীয় স্বর উকার, পঞ্চম বর্গের অন্তিম বর্ণ মকার, বিন্দু এবং নাদ - এই পাঁচটি বর্ণ‌ই বেদের দ্বারা ॐ কারের মধ্যে বলা হয়েছে। এগুলির সমষ্টি রূপ ॐ কার কেই বেদের আদি বলা হয়েছে। নাদ হলো সর্বসমষ্টি রূপ আর বিন্দুর সাথে যে চারটি বর্ণের সমূহ রয়েছে তা শিববাচক প্রণবের মধ্যে ব্যষ্টিরূপে প্রতিষ্ঠিত। 


শিবমহাপুরাণ থেকে প্রমাণ — (৪)


দেবো গুণত্রয়াতীতঃ সর্বজ্ঞঃ সর্বকৃৎ প্রভুঃ ।

ওমিত্যেকাক্ষরে মন্ত্রে স্থিতঃ সর্বগতঃ শিবঃ ॥ ৮

[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তরখণ্ড/১২ অধ্যায়/৮ নং শ্লোক]

অর্থ —  ‘ॐ’ -কার এই একাক্ষর মন্ত্রে ত্রিগুণের অতীত, সর্বজ্ঞ, সর্বকর্তা, দ্যুতিময়, সর্বব্যাপী প্রভু পরমেশ্বর শিব প্রতিষ্ঠিত ।


_______________________________________________


 এবার দেখুন ! 

♦️বেদ শাস্ত্রে (শ্রুতিতে) ‘ॐ’ -কার বলতে পরমেশ্বর শিবকেই বুঝিয়েছে  —


  বেদের মন্ত্র সংহিতা ভাগ থেকে প্রমাণ দেখুন 👇

প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।

ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥ ২০ 

যো বৈ বেদাদিষু গায়ত্রী সর্বব্যাপীমহেশ্বরাৎ ।

তদ্বিরুক্তং তথাদ্বৈশ্যং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥ ২১

[তথ্যসূত্র : ‘ঋগ্বেদ সংহিতা/আশ্বলায়ণ শাখা/১০/১৭১’ এবং ‘ঋগ্বেদ সংহিতা/খিলানি/৪র্থ অধ্যায়/১১ নং খিলা’]

অর্থ — যিনি নিত্য, প্রণব ( ॐ ), পরম, পুরুষোত্তম, সাক্ষাৎ ॐ কার এবং পরমাত্মা, যিনি সাক্ষাৎ সমগ্র বেদের গায়ত্রীস্বরূপ, যিনি সর্বব্যাপী মহেশ্বর বলে উক্ত হয়েছেন, সেই অদ্বিতীয় শিবের প্রতি মন সংকল্পিত হোক ।। ২০-২১


  বেদের ব্রাহ্মণভাগ থেকে প্রমাণ দেখুন 👇 

ইন্দ্রঃ প্রজাপতিমপৃচ্ছৎ-ভগবন! অভিষ্টয় পৃচ্ছামীতি। পৃচ্ছ বৎসেত্যব্রবীৎ। কিময়মোংকারঃ, কস্যঃ পুত্রঃ, কিং চৈতচ্ছন্দঃ, কিং চৈতদ্বর্ণঃ, কিং চৈতন্ত্রহ্মা ব্রহ্ম সংপদ্যতে? তস্মাদ বৈ তদ্ ভদ্রমোংকারং পূর্বমালেভে। স্বরিতোদাত্ত একাক্ষর ওংকার ঋগ্বেদে, ত্রৈস্বর্যোদাত্ত একাক্ষর ওংকারো যজুর্বেদে, দীর্ঘপ্লুতোদাত্ত একাক্ষর ওংকারঃ সামবেদে, হ্রম্বোদাত্ত একাক্ষর ওংকারোহথর্ববেদে, উদাত্তোদাত্তদ্বিপদ অ উ ইত্যর্ধচতম্রো মাত্রা মকারে ব্যঞ্জনমিত্যাহুঃ। যা সা প্রথমা মাত্রা ব্রহ্মদেবত্যা রক্তা বর্ণেন। যস্তাং ধ্যায়তে নিত্যং, স গচ্ছেদ ব্রাহ্মং পদম্। যা সা দ্বিতীয়া মাত্রা বিষ্ণুদেবত্যা কৃষ্ণা বর্ণেন। যস্তাং ধ্যায়তে নিত্যং, স গচ্ছেদ বৈষ্ণবং পদম্। যা সা তৃতীয়া মাত্রৈশানদেবত্যা কপিলা বর্ণেন। যস্তাং ধ্যায়তে নিত্যং, স গচ্ছেদৈশানং পদম্। যা সার্ধচতুর্থী মাত্রা সর্বদেবত্যা ব্যক্তীভূতা খং বিচরতি শুদ্ধস্ফটিকসন্নিভা বর্ণেন। যস্তাং ধ্যায়তে নিত্যং, স গচ্ছেত্ পদমনামকম্। ওংকারস্য চোৎপত্তিঃ। বিপ্রো যো ন জানাতি তত্ পুনরুপনয়নম্। তম্মাদ ব্রাহ্মণবচনমাদর্তব্যম্ যথা লাতব্যো গোত্রো, ব্রহ্মণঃ পুত্রো, গায়ত্রং ছন্দঃ, শুক্রো বর্ণঃ, পুংসো বৎসো, রুদ্রো দেবতা, ওংকারো বেদানাম্ ॥২৫

[তথ্যসূত্র : অথর্ববেদ/গোপথব্রাহ্মণ/পূর্বভাগ/১ম প্রপাঠক/২৫]

অর্থ — ইন্দ্র প্রজাপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন-'ভগবন ! আপনার স্তুতি করে আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করি'। প্রজাপতি বললেন-'বৎস! বল'। ইন্দ্র জিজ্ঞাসা করলেন-'কী এই ওঙ্কার ? কে এর আত্মজ? এর ছন্দ কী? এর বর্গ কী? এ কিভাবে ব্রহ্মের ব্রহ্মত্ব সম্পাদন করে'? (প্রজাপতি বললেন) 'এই সুভদ্র ॐ-কারকে ব্রহ্মা প্রথম লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ॐ-কার ঋগ্বেদে স্বরিতোদাত্ত একাক্ষর। যজুর্বেদে একাক্ষর ॐ-কারকে ত্রৈস্বর্যোদাত্ত করে পাঠ করা হয়। সামবেদে ॐ-কার দীর্ঘপ্লতোদাত্ত একাক্ষর। অথর্ববেদে ॐ-কার একাক্ষর, হ্রস্বোদাত্ত। (ব্রহ্মবাদীরা বলেন) উদাত্তোদ্বিপাদ-‘অ’ ‘ও’ ‘উ’, প্রতিটি ॐ-কারের অর্ধচতুর্মাত্রা (অর্থাৎ চতুর্মাত্রিক ॐ-কারের অর্ধমাত্রাবিশিষ্ট। ‘ম’কারের মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণ বিদ্যমান।

 ॐ-কারের প্রথম মাত্রা রক্তবর্ণ এবং ব্রহ্মা তার দেবতা। তাকে যে নিত্য ধ্যান করে সে নিশ্চিতরূপে ব্রাহ্মীপদ লাভ করে। ॐ-কারের দ্বিতীয় মাত্রা কৃষ্ণবর্ণ এবং তার দেবতা বিষ্ণু। ঐ মাত্রা যে নিত্য ধ্যান করে সে নিশ্চিতভাবে বৈষ্ণবপদ লাভ করে। ঈশা (ঈশান) তার তৃতীয়মাত্রার দেবতা এবং বর্ণে কপিল। ঐ মাত্রার নিত্য ধ্যানকারী ঈশান পদ লাভ করে। যা সার্ধচতুর্থীমাত্রা তা সর্বদেবতার প্রকটীভূত রূপ। আকাশে বিচরণকারী সে এবং স্ফটিকের ন্যায় বিশুদ্ধ তার বর্ণ। যে তাকে নিত্য ধ্যান করে, সে নামহীন পদ লাভ করে। (এই হল) ॐ-কারের উৎপত্তি। যে ব্রাহ্মণ এ জানেন না তার পুনরায় উপনয়ন প্রয়োজন। সেহেতু (এই) ব্রাহ্মণবচন আদরণীয়। 

বেদে ॐ-কারের গোত্র হল লাতব্য। (ॐ-কার হল) ব্রহ্মের পুত্রস্বরূপ, (ॐ-এর) ছন্দ হল গায়ত্রী, (ॐ-এর) বর্ণ শুক্ল, (ॐ-এর) বৎস হল পুংবৎস। (ॐ-এর) ‘দেবতা রুদ্র’। ॥ ২৫

[লক্ষ্য করুন, এখানে ব্রহ্মা বা বিষ্ণু কেহই সেই নামরূপহীন পদের অধীশ্বর নন, বরং বিশুদ্ধ স্ফটিকের ন্যায় যার বর্ণ তিনিই আকাশে বিচরণকারী ব্যোমরূপ। তাকে ধ্যান করলেই নামরূপ হীন পদ (ব্রহ্মপদ) লাভ হয়। ব্রহ্মের‌ই নামরূপ নেই, পরমশিব‌ই সেই ব্রহ্ম।

সেই ব্রহ্মকে লাভের জন্য বিশুদ্ধ স্ফটিকের ন্যায় যার বর্ণ তাকেই ধ্যান করতে বলা হয়েছে। এবার দেখুন শুদ্ধস্ফটিক বর্ণের সাকার দিব্যদেহ কার রয়েছে। 👇

কৃষ্ণ-যজুর্বেদ -এর অন্তর্গ‌ত যোগতত্ত্ব উপনিষদে 

পরমেশ্বর শিবের সাকার দিব্যদেহের বর্ণনা করে বলা হয়েছে 👇

আকাশে বায়ুমারোপ্য হকারোপরি শঙ্করম্ ।

বিন্দুরূপং মহাদেবং ব্যোমাকারং সদাশিবম্ ॥ ৯৯

শুদ্ধস্ফটিকসংকাশং ধৃতবালেন্দুমৌলিনম্ ।

পঞ্চবক্ত্রযুতং সৌম্যং দশবাহুং ত্রিলোচনম্ ॥ ১০০

সর্বায়ুধৈর্ধৃতাকারং সর্বভূষণভূষিতম্ ।

উমার্ধদেহং বরদং সর্ব কারণকারণম্ ॥ ১০১

আকাশধারণাত্তস্য খেচরত্বং ভবেদ্ ধ্রুবম্ ।

যত্র কুত্র স্থিতো বাপি সুখমত্যন্তমশ্রুতে ॥ ১০২

এবং চ ধারণাঃ পঞ্চ কুর্যাদ্যোগী বিচক্ষণঃ ।

ততো দৃঢ়শরীরঃ স্যান্মৃত্যুস্তস্য ন বিদ্যতে ॥ ১০৩

ব্রহ্মণঃ প্রলয়েনাপি ন সীদতি মহামতিঃ ।

সমভ্যসত্তথা ধ্যানং ঘটিকাষষ্টিমেব চ ।

বায়ুং নিরুধ্য চাকাশে দেবতামিষ্টদামিতি ॥ ১০৪

সগুণং ধ্যানমেতৎস্যাদণিমাদিগুণপ্রদম্ ।

নির্গুণধ্যানযুক্তস্য সমাধিশ্চ ততো ভবেৎ ॥ ১০৫

(তথ্যসূত্র : কৃষ্ণ-যজুর্বেদ/যোগতত্ত্ব উপনিষদ)

অর্থ — এই আকাশ তত্ত্বতে বায়ু কে আরোহণ করে ‘হ’ -কারের ওপর ভগবান শঙ্করের ধ্যান করবে, যিনি বিন্দুরূপ মহাদেব, তিনি সেই ব্যোম আকারে সদাশিব হিসেবে আছেন ॥ ৯৯

যে সদাশিব পরমপবিত্র স্ফটিকের মতো শ্বেত উজ্জ্বল বর্ণযুক্ত নির্মল প্রভু, তিনি নিজের মস্তকের জটাতে চন্দ্রকে ধারণ করে নিয়েছেন, তিনি পাঁচটি মুখসম্পন্ন, সৌম্যকান্তি , তার দশটি হাত রয়েছে, তার প্রতিটি মুখে তিনটি করে নেত্র রয়েছে ॥ ১০০

সেই পরমেশ্বর শিব নিজের দশটি হাতে বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র-শস্ত্র ধারণ করে আছেন, তিনি বিভিন্ন প্রকারের আভূষণে বিভূষিত, তার অর্ধ অঙ্গে(শিবের বামদিকে) উমা(পরাম্বিকা শিবা) অবস্থান করছেন, সেই বরদাতা শিব সমস্ত কারণের‌ও মূল কারণ বলে জানা উচিত  ॥ ১০১

সেই পরমেশ্বর শিবের ধ্যান আকাশতত্ত্বে করলে নিশ্চিতভাবে (সূক্ষ্ম দেহে) আকাশ মার্গে গমনের শক্তি প্রাপ্ত হয়ে থাকে । এই ধানের দ্বারা সাধক যেখানেই থাকুক, তিনি অত্যন্ত সুখ প্রাপ্ত করতে পারেন ॥ ১০২

এই প্রকারে বিশেষ লক্ষণের দ্বারা যুক্ত যোগী ব্যক্তির পাঁচ রকমের ধারণা করা উচিত। এই ধারণার দ্বারা সেই যোগী ব্যক্তির শরীর অত্যন্ত দৃঢ় হয়ে ওঠে, সেই যোগী ব্যক্তিকে মৃত্যুর ভয় আবদ্ধ করতে পারেনা ॥ ১০৩

ব্রহ্ম-প্রলয় (অর্থাৎ চরাচরে জল আর জল থাকবার স্থিতি) সংঘটিত হলেও সেই মহামতি যোগী ব্যক্তি দুঃখ প্রাপ্ত হন না । ছঃ ঘটি (ছয় ঘন্টা চব্বিশ মিনিট) পর্যন্ত বায়ু কে অবরুদ্ধ করে আকাশতত্ত্বের ইষ্ট সিদ্ধিদাতা দেব সদাশিবের নিরন্তর ধ্যান করা উচিত । সগুণরূপী সংহারক রুদ্রের ধ্যান করলে অণিমা আদি সিদ্ধি প্রাপ্ত হয় তথা নির্গুণরূপী সদাশিবের চিন্তন করলে সমাধির স্থিতি প্রাপ্ত হয় ॥ ১০৪-১০৫


দেখুন, সেই আকাশে বিচরণকারী শুদ্ধস্ফটিক বর্ণের সাকার দিব্যদেহধারী পরমব্রহ্ম বলতে পাঁচ মুখ সম্পন্ন দশহাত যুক্ত সদাশিবকে বোঝানো হয়েছে বেদে, যিনি উমার স্বামী। সেই নির্গুণ সদাশিবকে আকাশরূপে ধ্যান করলে সমাধিতে প্রবেশ করে সাধক, আর ব্রহ্মলাভের চতুর্থ চরণে সমাধি স্থিতিই “ব্রহ্মে স্থিত হয়েছে মন” -এমন লক্ষণের সূচক । সুতরাং সাকার ব্রহ্ম সদাশিবের ধ্যান করলেই পরমশিব (ব্রহ্ম) কে লাভ করা যায়। আর এই কারণেই ॐ-কারের দেবতা হলেন স্বয়ং রুদ্র (শিব), বিষ্ণু বা অন্য কোনো দেবদেবীকে ॐ-কারের দেবতা ঘোষণা করা হয়নি।

[বিঃদ্রঃ - পদ্মপুরাণের পাতালখণ্ডের অন্তর্গত শিবগীতার ৪র্থ‌ অধ্যায়ের ২৭ নং শ্লোকে 'মহাদেবং শুদ্ধস্ফটিকবিগ্রহম্' বলা হয়েছে।]



  বেদের উপনিষদ ভাগ থেকে প্রমাণ দেখুন 👇 

হৃদি ত্বমসি যো নিত্যং তিস্রো মাত্রাঃ পরস্তু সঃ । তস্যোত্তরতঃ শিরো দক্ষিণতঃ পাদৌ য উত্তরতঃ স ওঙ্কারঃওঙ্কারঃপ্রণবো যঃ প্রণবঃ স সর্বব্যাপী যঃ সর্বব্যাপী সোঽনন্তো যোঽনন্তস্তত্তারং যত্তারং তৎসূক্ষ্মং যৎসূক্ষ্মং তচ্ছুক্লং যচ্ছুক্লং তদ্বৈদ্যুতং তৎপরং ব্রহ্ম যৎপরং ব্রহ্মএকঃএকঃরুদ্রো যো রুদ্রঃঈশানোঈশানঃভগবান্ মহেশ্বরঃ ॥ ৩

[অথর্ববেদ/অথর্ব-শির উপনিষদ/৩য় কণ্ডিকা মন্ত্র]

অর্থ — হৃদয়ের মধ্যে বিরাজমান আপনি(পরমশিব), তিনমাত্রার (অ,উ,ম) চেয়েও ঊর্ধ্বে। (হৃদয়ের) উত্তরে তার (ॐ) মস্তক রয়েছে, দক্ষিণে চরণ রয়েছে । যিনি উত্তরে বিরাজমান তিনিই ওঙ্কার, ওঙ্কারকেই ‘প্রণব’ বলা হয় আর প্রণব ই সর্বব্যাপী, সেই সর্বব্যাপী প্রণব‌ই অনন্ত, যিনি অনন্ত, তিনি তারক স্বরূপ, যিনি তারক, তিনি সূক্ষ্ম স্বরূপ, যিনি সূক্ষ্ম স্বরূপ, তিনিই শুক্ল, যিনি শুক্ল, তিনি বিদ্যুৎ, যিনি বিদ্যুৎ, তিনিই পরব্রহ্ম, যিনি পরমব্রহ্ম তিনিই এক(অদ্বিতীয়) রূপ, যিনি এক অর্থাৎ অদ্বিতীয় স্বরূপ, তিনি পরমেশ্বর রুদ্র, যিনি রুদ্র তিনি ঈশান, যিনি ঈশান, তিনিই ভগবান মহেশ্বর ॥ ৩


✅ উপনিষদ বলা হয়েছে ‘ॐ-কার’ জপ করে শিবকেই আরাধ্য বলে জানা উচিত। প্রমাণ দেখুন 👇 

ওঙ্কাররথমারুহ্য বিষ্ণুং কৃত্বাথ সারথিম্ ।

ব্রহ্মলোকপদান্বেষী রুদ্রারাধনতৎপরঃ ॥ ২

[তথ্যসূত্র : কৃষ্ণ যজুর্বেদ/অমৃতনাদ উপনিষদ/২য় মন্ত্র]

অর্থ — ॐ-কার রূপী রথে আরোহন করে, শ্রী বিষ্ণুকে নিজের সারথি বানিয়ে, ব্রহ্মলোকের পরম পদকে চিন্তা করে জ্ঞানী ব্যক্তির সর্বদা দেবাদিদেব পরমেশ্বর রুদ্রের (শিবের) উপাসনাতে মগ্ন থাকা উচিত ॥ ২


ব্যাখ্যা : সনাতনীরা যে ॐ-কার মহামন্ত্র জপ করেন, সেই মহামন্ত্র মূলত পরমেশ্বর শিবের উদ্দেশ্যেই জপ করা হয়, কারণ, ॐ-কার পরমশিব বাচক মহাবীজ মন্ত্র। শ্রীবিষ্ণু হলেন পরম শিবভক্ত শৈব। শ্রীবিষ্ণু শিবভক্তির পথ দেখিয়ে দেন ॐ-কার জপকারী শিবভক্তকে, যাতে শিবভক্ত প্রভু শিবের আরাধনায় মগ্ন হয়ে ব্রহ্মপদলাভ করে শিবে লীন হতে পারেন। তাই বেদের এই মন্ত্রে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তির উচিত কার্য হল ব্রহ্মলোক (শিবলোক) প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রথমে ॐ-কার রথ হিসেবে ভেবে নিয়ে, ॐ-কার শিববীজ মন্ত্র জপ করা, শ্রীবিষ্ণু সাক্ষাৎ শৈবগুরু হিসেবে ভূমিকা পালন করে ঐ ॐ-কার রূপী রথের সারথী হয়ে সেটিকে পরমেশ্বর শিবের আরাধনার দিকে নিয়ে যান, শিব আরাধনা করলেই ব্রহ্মলোক অর্থাৎ শিবের লোক‌ই প্রাপ্তি হয়ে যায়।

অর্থাৎ, এখান থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, বেদের বচন ॐ-কার মহামন্ত্র শিব প্রাপ্তির জন্য‌ই উপস্থিত।

ॐ-কার বিষ্ণু বা অন্য কোনো দেবদেবীকে প্রাপ্ত করায় না বরং তাদের মূল স্বরূপ শিবের প্রাপ্তি করায়। বেদ এখানে সকল জীবের জন্য নির্দেশনা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সকল জীবের আরাধ্য একমাত্র শিব হ‌ওয়া উচিত, অন্য সকল দেবদেবী শিবপ্রাপ্তি করাবার পথ দেখিয়ে সহায়ক হয়ে থাকেন, তাই অমৃতনাদ উপনিষদের এই ২নং মন্ত্র বিষ্ণুকে আরাধ্য নয় বরং একমাত্র শিবকেই আরাধ্য হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছে। তাই ॐ-কার শিব প্রাপ্তিই করায়, শিবপ্রাপ্তির অর্থ‌ই হল সকল দেবদেবীকে প্রাপ্ত করে নেওয়া, কারণ সকল দেবদেবীরূপে প্রভু শিব‌ই লীলা করছেন, তাই শিব প্রাপ্ত হলেই সকল কিছুর প্রাপ্তি হয়ে যায়, আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।




সিদ্ধান্ত

   

 উপরোক্ত পুরাণ শাস্ত্রের শ্লোকের উপর বেদের অর্থাৎ শ্রুতিশাস্ত্রের সমর্থন পাওয়া গিয়েছে । তাই এই শ্লোকগুলি যে চিরাচরিত সত্য তা দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার।

কেননা ব্যাস সংহিতায় বলা হয়েছে,

মহর্ষি ব্যাসদেব তার ব্যাস সংহিতা ১.৪ তে বলেছেন -

"শ্রুতি স্মৃতি পুরাণানাং বিরোধো যত্র দৃশ্যতে ।

তত্র শ্রৌতং প্রমাণস্তু তয়োর্দ্বৈধে স্মৃতিব্বরা ॥"

(তথ্যসূত্র - ব্যাস সংহিতা/১ম অধ্যায়/৪ নং শ্লোক)

অর্থ : যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্রুতির কথনই বলবান এবং যেস্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে স্মৃতির কথনই বলবান।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, বেদের সহিত পুরাণ শাস্ত্রের বাক্যের উপর সমর্থন রয়েছে। তাই এই শ্লোকগুলির অর্থ নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। 

যেহেতু ব্যাস সংহিতার ১ম অধ্যায়ের ৪ নং শ্লোক মতে বেদের বচনই সর্ব্বোচ্চ। আর বেদই বলছে যিনি সাক্ষাৎ ॐ-কার তিনি একমাত্র পরমেশ্বর শিব ছাড়া আর কেউ নন। ॐ-কার কখনোই শিব কে ছেড়ে আলাদা করে অন্য কোনো নিরপেক্ষ নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্মের বাচক হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই স্মৃতি এবং শ্রুতি প্রমাণ অনুযায়ী পরমেশ্বর শিবই সাক্ষাৎ ॐ-কার। ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা অন্য কোন দেব-দেবী সাক্ষাৎ ॐ-কার নন ।

_______________________________________________


ॐ নমঃ শিবায়

ॐ সাম্বসদাশিবায় নমঃ 

ॐ দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ 

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩

হর হর মহাদেব 🚩 


✍️অপপ্রচার দমন ও লেখনীতে — অম্বিকানাথ শৈব।

সম্পাদনায় — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য গুরুদেব জী

🔶 ধন্যবাদ - শ্রী নন্দীনাথ শৈবচার্য গুরুদেব জী, শ্রী শম্বরনাথ শৈবজী।


কপিরাইট ও প্রচারেঃ— আন্তর্জাতিক শিব শক্তি জ্ঞান তীর্থ (International Shiva Shakti Gyan Tirtha) 


বিঃদ্রঃ— লেখাটি কপি করলে সম্পূর্ণরূপে কপি করবেন, কোনো কাটছাঁট করা যাবে না।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ