কালভৈরবের উৎপত্তির কারণ ও মাহাত্ম্য (স্কন্দমহাপুরাণোক্ত)

 


কালভৈরবের উৎপত্তির কারণ ও মাহাত্ম্য —


ॐ মহাগণাধিপতয়ে নমঃ 🙏🕉️

ॐ শ্রীগুরু দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ 🔱🙏


পরমেশ্বর শিবের প্রথম অবতার, সৃষ্টির প্রথম দেব কালরাজ কালভৈরবের মাহাত্ম্য আমরা সবাই কম বেশি জানি। কালভৈরব নিয়ে বিভিন্ন মতের মানুষের বিভিন্ন ধরনের জল্পনাকল্পনা ঘিরে রয়েছে। বেশ কিছু মানুষ যারা নিজেদের বিশাল বড় সাধু দাবী করে, তাদের এমন কিছু বক্তব্যে দেখা যায় যেখানে বলা হচ্ছে, কালভৈরবকে নাকি মদের নেশায় মাতাল করে, তথাকথিত তান্ত্রিকরা নিজেদের কার্য সিদ্ধ করতো। আবার অনেক সৌর মতাদর্শীদের মতে নাকি কালভৈরবজী ব্রহ্মহত্যার দোষ থেকে বাঁচতে সূর্যলোকে গিয়ে ঠাঁই নেয়।  কালভৈরবকে অন্যান্য সাধারণ দেবতারদের সাথে এক করে কালভৈরবজীর পরমত্বকে ছোট করায় এদের কাজ। যাইহোক তাই আজকে সবার সামনে তুলে ধরবো কালরাজ কালভৈরবের উৎপত্তির কারণ ও মাহাত্ম্য। 


👉কালভৈরবের উৎপত্তির কারণ হলো ব্রহ্মার অহংকারকে নাশ করার জন্য। ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে কে পরমতত্ত্ব তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এর একপর্যায়ে তাদের দুজনের সম্মুখে একটি অগ্নিস্তম্ভ/অগ্নিলিঙ্গ প্রকট হয়। সেই অগ্নিলিঙ্গ থেকে কোনো একপুরুষ তাদের এই বলেন যে, যে প্রথম এই অগ্নিলিঙ্গের শেষ প্রান্ত খুঁজে বের করবে সেই হবে সর্ব্বোচ্চ। 

সেই কথা অনুযায়ী ব্রহ্মা গেলো উপরের দিকে এবং বিষ্ণু গেলো নিচের দিকে, কিন্তু অনন্ত বর্ষ পাড় হওয়ার পরেও কেউ-ই সেই অগ্নিলিঙ্গের শেষ প্রান্ত খুঁজে বের করতে অসমর্থ ছিলো। 

এবং হাল ছেড়ে দিয়ে দুই দেবই আবার যথাস্থানে ফিরে আসে। তখন অগ্নিলিঙ্গ থেকে সেই পুরুষ বলেন যে, কে এই লিঙ্গের শেষ প্রান্ত খুঁজে বের করেছে? তখন বিষ্ণু বলেন, উনি এই অগ্নিলিঙ্গের শেষ প্রান্ত খুঁজে পাননি। কিন্তু বিপরীতে ব্রহ্মা মিথ্যাবাক্য বলেন যে, উনি এই অগ্নিলিঙ্গের শেষ প্রান্ত খুঁজে পেয়েছে এবং ব্রহ্মা অহংকার বশত নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ দাবী করতে থাকে। তখন সেই অগ্নিলিঙ্গ থেকে পরমেশ্বর শিব সাকার রূপে প্রকটিত হন এবং উনার থেকেই এক ভয়ংকর পুরুষের উৎপত্তি হয়। সেই ভয়ংকর পুরুষটাই হলো কালভৈরব। পরমেশ্বর শিবের থেকে উৎপন্ন হয়ে, কালভৈরব ব্রহ্মার পঞ্চম অহংকারী মস্তককে নখ দ্বারা আলাদা করে দেন এবং ব্রহ্মার অহংকাশ নাশ করেন। এই হলো কালভৈরবের উৎপত্তির কারণ। 


👉এবার আসা যাক শাস্ত্র প্রমাণের দিকে। শাস্ত্রে বলা আছে যে—

যথা সুরাণাং প্রবরো দেবদেবো মহেশ্বরঃ। 

তথৈত সর্ব্বশাস্ত্রাণাং স্কন্দকীর্ত্তিতম্‌।।

[স্কন্দমহাপুরাণ/ প্রভাসখণ্ড/ অধ্যায়—১- ২৫/২৬]

অর্থঃ— ব্রহ্মা,বিষ্ণু, রুদ্র, ইন্দ্রাদিদেবগণের মধ্যে যেমন মহেশ্বর শ্রেষ্ঠ। তেমনি সকল শাস্ত্রের মধ্যে স্কন্দমহাপুরাণ শ্রেষ্ঠ।। 


👉তাই আজ "স্কন্দমহাপুরাণের কাশীখণ্ডের পূর্বাদ্ধের ৩১ তম অধ্যায়" থেকে প্রমাণ সহ কালভৈরবের ইহিহাস ও মাহাত্ম্য বর্ণনা সবার সামনে তুলে ধরবো।


👉অহংকারের বশবর্তী হয়ে ব্রহ্মা বলছেন—

জগদ যোনিরহং ধাতা স্বয়ম্ভরেকঈশ্বরঃ।

অনাদিমদহং ব্রহ্মা মামন্য ন মুচ্যতে । ১৪।।

প্রবর্তকো হি জগতামহমেকো নিবর্ত্তকঃ।

নান্যোমদধিকঃ সত্যং কশ্চিৎ ক্বাপি সুরোত্তমঃ ॥ ১৫।।


আমিই জগতের কারণ, আমিই জগতের পালয়িতা, আমিই স্বয়ম্ভু আমিই ঈশ্বর, আমার আর দ্বিতীয় নাই, আমি অনাদি ব্রহ্ম, জীব সকল আমাকে আরাধন। না করিলে কখনই মুক্তিলাভ করিতে পারে না। ১৪।।

হে দেবগণ! আমিই জগতের প্রবর্ত্তক, আমিই জগতের নিবর্ত্তক, আমাঅপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কোন স্থানে কেহই নাই নিশ্চয় জানিবে ৷৷ ১৫ ॥


👉ব্রহ্মার এরূপ অহংকারপূর্ণ বাক্য শুনে বিষ্ণুজী তার উত্তরে বলছেন—

স্যৈবং ধ্রুবতো ধাতুঃ ক্রতুর্নারায়ণাংশজঃ।

প্রোবাচ প্রহসন্ বাক্যং রোষতাঅবিলোচনঃ ॥ ১৬।।

অবিজ্ঞায় পরং তত্ত্বং কিমেতৎ প্রতিপাদ্যতে।

অজ্ঞানং যোগযুক্তস্য নচৈতছুচিতং তব ॥ ১৭।।

অহং কর্তা হি লোকানাং যজ্ঞো নারায়ণঃ পরঃ।

ন মামনাদৃত্য বিধে জীবনং জগতামজ ॥ ১৮।।

অহমেব পরং জ্যোতিরহমেব পরা গতিঃ।

মৎপ্রেরিতেন ভবতা সৃষ্টিরেষা বিধীয়তে ৷।১৯।।


অর্থ — নারায়ণাংশ যজ্ঞরূপী বিষ্ণু ক্রোধে আরক্ত নয়ন হইয়া হাসিতে হাসিতে কহিলেন ৷৷ ১৬ 

তুমি পরমতত্ত্ব না জানিয়া ইহা কি প্রতি পাদন করিলে? তুমি যোগী অজ্ঞানের তুল্য এরূপ বাক্য প্রয়োগ করা তোমার উচিত হয় নাই ৷ ১৭৷।

 হে বিধে! হে অজ! যজ্ঞরূপী পরম পুরুষ নারায়ণ আমিই জগতের কর্তা, আমাকে অনাদর করিলে কখ নই জগতের কুশল হইবে না ৷ ১৮ ॥

আমিই পরম জ্যোতি, আমিই পরমা গতি, তুমি আমা কর্তৃক প্রেরিত হইয়াই জগতের সৃষ্টি কার্য্য সম্পাদন করিতেছ ৷ ১৯ ৷।


👉ব্রহ্মা আর বিষ্ণু যখন কোনো সমাধানে আসতে পারছে না যে, কে পরমতত্ত্ব, তখন তারা দুজন চার বেদকে বললেন তোমরাই নির্ণয় করো মূলত কে ব্রহ্ম—

এবং বিপ্রকৃতৌ মোহাৎ পরস্পরজয়ৈষিণৌ।

পপ্রচ্ছতুঃ প্রমাণজ্ঞানাগমাংশ্চতুরোপি তৌ ॥ ২০।।


বিধিক্রতু উচতুঃ—

বেদাঃ প্রমাণং সর্বত্র প্রতিষ্ঠাং পরমামিতাঃ যয়মেব ন সন্দেহঃ কিং তত্ত্বং প্রতিতিষ্ঠত ॥ ২১।


এইরূপ বিরূদ্ধ বাদী ও মোহ বশতঃ পরস্পর জয়েচ্ছ হইয়া ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু, প্রমাণজ্ঞ মূর্তিমন্ত চারিবেদকে জিজ্ঞাসা করিলেন ৷ ২০॥

উভয়ে কহিলেন হে বেদগণ! তোমরা নিঃসন্দেহরূপে সর্ব্বত্রই প্রমাণ বলিয়া প্রতিষ্ঠিত আছ, এক্ষণে জিজ্ঞাসা করি, কাহাকে ব্রহ্ম স্থির করিয়াছ? ॥২১৷৷


👉ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর বাক্য শ্রবণ করে চারবেদ কে ব্রহ্ম, সে ব্যাপারে যা বললেন—

শ্রুতয়উচুঃ—

যদি মান্যা বয়ং দেবৌ সৃষ্টিস্থিতিকরৌ বিভূ।

তদা প্রমাণং বক্ষ্যামো ভবৎসন্দেহভেদকম্ ॥ ২২।।


বেদগণ কহিলেন— হে সৃষ্টিস্থিতিকর দেবদ্বয়! যদি আমরা প্রমাণ বলিয়া মাননীয় হই, তবে আপনাদের সন্দেহ নিবারক প্রমাণ কীর্ত্তন করিব ॥ ২২ ৷।


ঋগুবাচ—

যদন্তঃস্থানি ভূতানি যতঃ সর্ব্বং প্রবর্ততে।

যদাহুস্তৎপরং তত্ত্বং স রুদ্রত্ত্বেকএব হি ॥ ২৪।


যজুরুবাচ—

যোযজ্ঞেরখিলৈরীশো যোগেন চ সমিজ্যতে।

যেন প্রমাণংহি বয়ং স একঃ সর্ব্বদৃক শিবঃ ॥ ২৫।


সামোবাচ—

যেনেদং ভ্রাম্যতে বিশ্বং যোগিভির্যোবিচিন্ত্যতে।

যদ্ভাসা ভাসতে বিশ্বং সএক্যুম্বকঃ পরঃ ॥ ২৬।


অথর্ব্বোবাচ—

যং প্রপশ্যন্তি দেবেশং ভক্ত্যানুগ্রহিণো জনাঃ।

তমাহুরেকং কৈবল্যং শঙ্করং দুঃখতস্করম্ ॥২৭।।


ঋগবেদ কহিলেন—প্রলয়কালে সমস্ত ভূত যাঁহার অন্তস্থিত হয় এবং যাঁহা হইতে সৃষ্টিসময়ে পুনর্ব্বার প্রকটিত হয়, সকলে যাঁহাকে পরম তত্ত্ব বলিয়া কীর্ত্তন করেন তিনিই একমাত্র রুদ্র জানিবেন || ২৪ ৷।

যজুর্ব্বেদ কহিলেন— যিনি অখিলযজ্ঞ ও যোগদ্বারা আরাধিত হইতেছেন এবং যাঁহার দ্বারা আমরা প্রমাণ বলিয়া পরিগণিত হইতেছি, সেই সর্ব্বদর্শী অদ্বিতীয় শিবই পরমতত্ত্ব জানিবেন ॥ ২৫ ৷।

সামবেদ কহিলেন— যাঁহা কর্তৃক এই বিশ্ব ভ্রাম্যমাণ হইতেছে, যোগিগণ যাঁহাকে নিয়ত চিন্তা করিতেছেন, এই বিশাল জগৎ যাঁহার প্রভাবে প্রভান্বিত হইতেছে, সেই অদ্বিতীয় ত্রিলোচনই পরমতত্ত্ব ॥ ২৬৷।

অথর্ব্ববেদ কহিলেন— অনুগৃহীত ভক্তজনেরা ভক্তি দ্বারা যে দেবদেবকে নিরন্তর দর্শন করিতেছেন এবং লোকে যাঁহাকে সৰ্ব্বদুঃখ নাশন, কৈবল্যরূপী শঙ্কর বলিয়া কীর্ত্তন করিতেছে, তিনিই পরমতত্ত্ব জানিবেন।।২৭৷।


👉চারবেদ ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুকে বললেন একমাত্র ব্রহ্ম হলেন পরমেশ্বর শিব। ব্রহ্মা বা বিষ্ণু কেউ-ই নয়। বেদের বাক্য শ্রবণ করে ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু বললেন—

শ্রুতীরিতং নিশম্যেত্থং তাবতীব বিমোহিতৌ।

স্মিত্বাহতুঃ ক্রতুবিধী মোহান্ধ্যেনাঙ্কিতৌ মুনে ॥ ২৮।। 

কথং প্রমথনাথোসো রমমাণো নিরন্তরম্।

দিগম্বরঃ পিতৃবনে শিবয়া ধূলিধূষরঃ ॥ ২৯।।

বিটঙ্কবেশো জটিলো বৃষগো ব্যালভূষণঃ।

পরং ব্রহ্মত্বমাপন্নঃ ক চ তৎসঙ্গবর্জিতম্ ॥ ৩০।।


হে মুনে! তখন ব্রহ্মা ও যজ্ঞরূপী বিষ্ণু বেদোক্ত এই কথা শ্রবণ করিয়া ঈষৎ হাস্য পূর্ব্বক মোহজালে আবৃত হইয়া কহিলেন, কিজন্য এই প্রমথনাথ নিরন্তর শ্মশানে দিগম্বর ও ধূলি ধূষর হইয়া উমার সহিত বিহার করেন? কি জন্যই বা বৃষারূঢ়, জটাধারী, সর্প- ভূষণ এই সকল কুৎসিত বেশ ধারণ করিয়া সঙ্গ বর্জিত পরম ব্রহ্মত্ব লাভ করিলেন? ॥ ২৮/২৯/৩০৷।


👉ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর এরূপ পরমেশ্বের শিব ও মাতা পার্বতী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বাক্য শ্রবণ করে প্রণব সাকার রূপ ধারণ পূর্বক ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে বললেন—

তদুদীরিতমাক্য প্রণবাত্মা সনাতনঃ।

অমূর্তো মূর্তিমান্ ভূত্বা হসমান উবাচ তৌ ॥ ৩১।।


প্রণব (ॐ) উবাচ—

নহ্যেষ ভগবান্ শক্ত্যা স্বাত্মনো ব্যতিরিক্তয়া।

কদাচিদ্রমতে রুদ্রো লীলারূপধরো হরঃ ॥ ৩২।।

অসৌ হি ভগবানীশঃ স্বয়ং জ্যোতিঃ সনাতনঃ।

আনন্দরূপা তস্যৈষা শক্তির্নাগন্তুকী শিবা ॥ ৩৩।।


তাঁহাদিগের এই কথা শ্রবণানন্তর অমূর্ত্ত সনাতন প্রণব মূর্তিমান হইয়া ঈষৎ হাস্য পূর্বক কহিলেন যে এই লীলারূপ ধারী ভগবান রুদ্র আপনার অভিন্ন শক্তি সেই ভগবতী ব্যতীত কখনই একাকী বিহার করেন না ৷।৩১/৩২৷।

এই ভগবান্ রুদ্র সনাতন এবং স্বয়ং জ্যোতিঃ স্বরূপ। তদীয় আনন্দরূপা পরমা শক্তি ভগবতী আগন্তুকী নহেন, অর্থাৎ তিনি নিত্য বস্তু জানিবেন।।৩৩।।


👉প্রণবের বাক্য শ্রবণ করেও যখন ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু মোহ নাশ হলো না তখন সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিব ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর সম্মুখে সাকার রূপে প্রকটিত হলেন—

ইত্যেবমুক্তেপি তদা মখমূর্তেরজস্য হি।

নাজ্ঞানমগমন্নাশং শ্রীকণ্ঠস্যৈব মায়য়া।। ৩৪।। প্রাদুরাসীততোজ্যোতিরুভয়োরন্তরে মহৎ।

পূরয়ন্নিজয়া ভাসা দ্যাবাভূম্যোর্যদন্তরম্ ॥ ৩৫।।

জ্যোতিৰ্ম্মণ্ডলমধ্যস্থো দদৃশে পুরুষাকৃতিঃ।

প্রজজ্বালাথ কোপেন ব্রহ্মণঃ পঞ্চমং শিরঃ ॥ ৩৬।।

আবয়োরন্তরে কোহলো বিভূয়াৎ পুরুষা তিম্।

বিধিঃ সম্ভাবয়েদ যাবত্তাবৎ সহি বিলোকিতঃ ॥ ৩৭।।

স্রষ্টা ক্ষণেন চ মহান্ পুরুষো নীললোহিতঃ। ত্রিশূলপাণির্ভালাক্ষো নাগোড় পবিভূষণঃ ॥ ৩৮।


প্রণব এই রূপ কহিলেও মহাদেবের মায়াহেতু বিষ্ণু ও ব্রহ্মার অজ্ঞান দূরীভূত হইল না ৷ ৩৪ ॥

অনন্তর উভয়ের অন্তরে অতি মহৎ জ্যোতিঃ প্রাদুর্ভুত হইল এবং সেই জ্যোতিতে স্বর্গ ও পৃথিবীর যাবতীয় মধ্যভাগ পরিপূর্ণ হইল।৩৫ ৷।

সেই জ্যোতির্মণ্ডল মধ্যে এক অপূর্ব্ব পুরুষাকৃতি দর্শন করিলেন। তাহা দেখিয়া ব্রহ্মার পঞ্চম শির কোপানলে প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল ৷ ৩৬৷।

আমাদিগের উভয়ের মধ্যে পুরুষাকার ধারণ করিল এ ব্যক্তি কে? ব্রহ্ম মনে মনে এইরূপ বিতর্ক করিতেছেন, ইতিমধ্যে নীল লোহিত, ত্রিশূলপাণি ভালনেত্র, শেষ ও শশাঙ্কভূষণ এক মহাপুরুষ দর্শন করিলেন ৷৷ ৩৭ ॥ ৩৮৷।


👉সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিবকে দেখার পরেও ব্রহ্মার মোহ নাশ হলো না। এবং মোহ বশত পরমেশ্বর শিবকে রুদ্র ভেবে অহংকার পূর্ণ বচনে বললেন যে—

হিরণ্যগর্ভন্তং প্রাহ জানে ত্বাৎ চন্দ্রশেখরম্।

ভালস্থলান্মম পুরা রুদ্রঃ প্রাদুরভুদ্ভবান্ ॥ ৩৯।।

রোদনাক্রন্দ্রনাম্নাপি যোজিতোহসি ময়া পুরা।

মামেব শরণং যাহি পুত্র রক্ষাৎ করোমি তে॥ ৪০।।


তখন হিরণ্যগর্ভ তাঁহাকে কহিলেন, তুমি চন্দ্রশেখর তোমাকে আমি বিশেষরূপ অবগত আছি। পুরাকালে তুমি আমার ললাটদেশ হইতে রুদ্ররূপে প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলে ॥ ৩৯৷।

জন্ম গ্রহণ মাত্রেই তুমি রোদন করিতে লাগিলে একারণ আমি তোমার নাম রুদ্র রাখিয়াছিলাম, অতএব হে পুত্র! এক্ষণে তুমি আমার শরণাগত হও, তাহা হইলে তোমাকে রক্ষা করিব । ৪০।।


👉পরমেশ্বর শিব দেখলেন যে, ব্রহ্মার মোহ এখনো নাশ হয়নি। তাই উনি কালভৈরবকে উৎপন্ন করে উনার কার্য ও ব্রহ্মাকে মোহ নাশ করার আদেশ দিলেন। এবং কালভৈরব ও পরমেশ্বর শিবের আদেশানুসারে নিজের কর্তব্য পালন করলেন—

অথেশ্বরঃ পদ্মযোনেঃ শ্রুত্বা গর্ববতীৎ গিরম্।

স্বকোপতঃ সমুৎপাদ্য পুরুষং ভৈরবাক্বতিম্ ॥ ৪১।।

প্রাহ পঙ্কজজন্মাসৌ শাস্যন্তে কালভৈরব।

কালবদ্রাজসে সাক্ষাৎ কালরাজস্তুতো ভবান্ ॥ ৪২।।

বিশ্বৎ ভর্তং সমর্থোসি ভরণাদ্ভৈরবঃ স্মৃতঃ।

ত্বতো ভেষ্যতি কালোপি ততত্ত্বং কালভৈরবঃ ॥ ৪৩।।

আমদয়িষ্যতি ভবান্ রুষ্টো দুষ্টাত্মনো যতঃ।

আমৰ্দ্দক ইতিখ্যাতিং ততঃ সর্ব্বত্র যাস্যতি ॥ ৪৪।।

যতঃ পাপানি ভক্তানাং ভক্ষয়িষ্যতি তৎক্ষণাৎ।

পাপভক্ষণ ইত্যেব তব নাম ভবিষ্যতি ॥ ৪৫।।

যা মে মুক্তিপুরী কাশী সর্ব্বাভ্যোপি গরীয়সী।

আধিপত্যঞ্চ তস্যাস্তে কালরাজ সদৈব হি ॥ ৪৬।

তত্র যে পাপকর্তারস্তেষাং শান্তা ত্বমেব হি।

শুভাশুভং ন তৎকৰ্ম্ম চিত্রগুপ্তো লিখিষ্যতি ॥ ৪৭।।

এতান্ বরান্ প্রগৃহ্যাথ তৎক্ষণাৎ কালভৈরবঃ।

বামাঙ্গুলিনখাত্রেণ চকর্ত চ শিরো বিধেঃ ॥ ৪৮।।

যদঙ্গমপরান্নোতি কাৰ্য্যং তস্যৈব শাসনম্।

অতো যেন ক্বতা নিন্দা তচ্ছিন্নং পঞ্চমং শিরঃ ॥ ৪৯।।

যজ্ঞমূর্তিধরো বিষ্ণুস্ততত্ত্বষ্টাব শঙ্করম্।

ভীতো হিরণ্যগর্ভোপি জজাপ শতরুদ্রিয়ম্ ॥ ৫০।।


অনন্তর সেই মঙ্গপুরুষ পদ্ম- যোনির এবম্বিধ গর্বিত বাক্য শ্রবণ করিয়। ক্রুদ্ধ হওত ভৈরবাকার এক পুরুষ উৎপাদন করিলেন এবং তাঁহাকে কহিলেন, হে কালভৈরব! এই পদ্মযোনি ব্রহ্মা তোমার শাস্য হইবে, তুমি সাক্ষাৎ কালের ন্যায় প্রকাশ পাইবে, এই নিমিত্ত তোমার কালরাজ নাম হইবে । ৪১ ॥ ৪২৷।

তুমি বিশ্বকে ভরণ করিতে সমর্থ হইবে, এই নিমিত্ত তোমার নাম ভৈরব, এবং তোমা হইতে কালও ভয় পাইবে, একারণ তোমার নাম কালভৈরব হইবে ৷ ৪৩৷।

তুমি কষ্ট হইয়া দুরাত্মাদিগকে আমর্দ্দন, অর্থাৎ দমন করিবে, একারণ তোমার আমর্দ্দক নাম হইবে । ৪৪৷।

তুমি ভক্তদিগের পাপ সকল ভক্ষণ অর্থাৎ নাশ করিবে এই নির্মিত্ত তোমার পাপ ভক্ষণ নাম হইবে । ৪৫ ৷।

হে কালরাজ! সকল মুক্তি পুরী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মদীয় মুক্তিপুরী কাশীতে সর্ব্বদাই তোমার আধিপত্য থাকিবে ৷ ৪৬৷।

কাশী- ধামে যাহারা পাপ করিবে, তাহাদিগকে তুমিই শাসন করিবে, তত্রত্য লোকদিগের শুভাশুভ কার্য্য তুমি ভিন্ন চিত্রগুপ্ত লিখিতে পারিবেন না ॥ ৪৭৷

কালভৈরব এই সকল বর গ্রহণ করিয়া তৎক্ষণাৎ বামাঙ্গুলি নখাগ্রদ্বারা ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছেদন করিলেন ৷ ৪৮।

কারণ যে অঙ্গ অপরাধ করে, সে অঙ্গের শাসন করায় উচিত, এই নিমিত্ত ব্রহ্মা যাহা দ্বারা নিন্দা করিয়াছিলেন, সেই পঞ্চম শির, কালভৈরব ছেদন করিলেন ॥ ৪৯৷।

যজ্ঞমূর্তিধারী বিষ্ণু, তদ্দর্শনে ভীত হইয়া শঙ্করকে স্তব করিতে লাগিলেন, ব্রহ্মাও শতরুন্দ্রিয় পাঠ করিতে লাগিলেন ॥ ৫০॥


👉পরমেশ্বর শিবের আদেশে কালভৈরব ব্রহ্মার অহংকারী পঞ্চম মস্তক ছেদন করে ব্রহ্মার অহংকার নাশ করেন। এবং পরমেশ্বর শিব কালভৈরব পরবর্তী আদেশ দেন যে—

আশ্বাস্য তৌ মহাদেবঃ প্রীতঃ প্রণতবৎসলঃ।

প্রাহ স্বাৎ মূর্তিমপরাং ভৈরবং তৎ কপদ্দিনম্ ॥ ৫১।।

মান্যোদ্বয়োহসৌ ভবতা তথা শতধৃতিত্ত্বয়ম্।

কপালং বৈধসঞ্চাপি নীললোহিত ধারয় ॥ ৫২।।

ব্রহ্মহত্যাপনোদায় ব্রতং লোকায় দর্শয়ন্।

চর ত্বং সততং ভিক্ষাৎ কাপালিব্রতমাস্থিতঃ ॥ ৫৩।।

ইত্যুক্ত্যান্তর্হিতো দেবস্তেজোরূপস্তদাশিবঃ।

উৎপাদ্য কন্যামেকান্ত ব্রহ্মহত্যেতি বিশ্রুতাম্ ॥ ৫৪।।


প্রণত- বৎসল মহাদেব প্রীত হইয়া তাঁহাদিগকে আশ্বাস দান পূর্ব্বক স্বকীয় অপরামূর্ত্তি কপদী ভৈরবকে কহিলেন হে নীললোহিত! তুমি এক্ষণে বৈধকপাল-ব্রত ধারণ কর এবং অদ্য হইতে এই যজ্ঞমূর্ত্তিধর বিষ্ণু, ও ব্রহ্মাকে মান্য কর । ৫১॥ ৫২৷

তুমি ব্রহ্মহত্যা পাপ খণ্ডনের নিমিত্ত লোক সকলকে ধৈর্য্যব্রত অভিনয় মাত্র দেখাইয়া কাপালিক ব্রত অবলম্বন পূর্ব্বক নিয়ত ভিক্ষা কর॥ ৫৩।

তখন তেজোরূপী সেই মহাদেব এই কথা কহিয়। ব্রহ্মহত্যা- নাম্নী এক কন্যা উৎপাদন করিয়া অন্তর্হিত হইলেন ৷ ৫৪।।


👉এখানে সৌরমতালম্বীরা যে মূর্খতাপূর্ণ দাবী করে যে, কালভৈরব ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সূর্যলোকে আশ্রয় নেন, তা মূলত মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা পরমেশ্বর শিব সাধারণ লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার নিমিত্তে কালভৈরবজীকে অভিনয় মাত্র ব্রহ্মহত্যার পাপের জন্য৷ ভিক্ষা করার আদেশ দেন। 

কারণ কালভৈরবজী যদি এমন টা না করেন তাহলে, পরমেশ্বর শিবের দ্বারা সৃষ্ট এই জগতে কেউ-ই নিয়মের পালন করবে না। তাই কালভৈরবজী কেবল মাত্র অভিনয় করে ব্রহ্মহত্যার দোষের ভাগীদ্বার হন। 

কিন্তু মূলত কালভৈরবজী সকল দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে। 


👉এর পরবর্তীতে পরমেশ্বর ব্রহ্মহত্যা নামক এক ভয়ঙ্কর কন্যার সৃষ্টি করেন এবং তাকে কালভৈরবজীর সাথে থাকার আদেশ দিয়ে অন্তর্হিত হন। কালভৈরবজী ও পরমেশ্বর শিবের আদেশানুরূপ জগতে লোক দেখানো ভিক্ষা করে বেড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে গমন করতে থাকেন—

রক্তাম্বরধরাও রক্তাং রক্তস্রগন্ধলেপনাম্।

দংষ্টাকরালবদনাং ললজ্জিহ্বাতিভীষণাম্ ॥ ৫৫।।

অন্তরিক্ষৈকপাদাগ্রাং পিবন্তীৎ রুধিরং বহু।

কর্ত্রী কর্পরহস্তাগ্রাং স্ফরৎপিঙ্গোগ্রতারকাম্।

গর্জ্জয়ন্তীৎ মহাবেগাং ভৈরবস্যাপি ভীষণাম্ ॥ ৫৬।।

যাবদ্বারাণসীং দিব্যাং পুরীমেষ গমিষ্যতি।

তাবত্ত্বং ভীষণে কালমনুগচ্ছোএরূপিণি ॥ ৫৭।।

সর্ব্বত্র তে প্রবেশোংস্তি ত্যক্ত। বারাণসীং পুরীম্।

নিযোজ্য তামিতিশিবোপ্যন্তর্দ্ধানং গতস্ততঃ ॥ ৫৮।।

তৎসান্নিধ্যাদ্ভৈরবোপি কালোহভূৎ কালকালনঃ।

স দেবদেববাক্যেন বিভ্রৎ কাপালিকং ব্রতং ॥ ৫৯। কপালপাণির্বিশ্বাত্মা চচার ভুবনত্রয়ম্।

নাত্যাক্ষীচ্চাপি তং দেবং ব্রহ্মহত্যাতিদারুণা ॥ ৬০।।

সত্যলোকেপি বৈকুণ্ঠে মহেন্দ্রাদিপুরীষ্যপি।

ত্রিজগৎপতিরুগ্রোপি ব্রতী ত্রিজগতীশ্বরঃ।

প্রতিতীর্থং ভ্রমন্নাপি বিমুক্তো ব্রহ্মহত্যয়া ॥ ৬১।।

অনেনৈবানুমানেন মহিমাত্ববগম্যতাম্।

ব্রহ্মহত্যাপনোদিন্যাঃ কাশ্যাঃ কলশসম্ভব ॥ ৬২।।

সন্তি তীর্থান্যনেকানি বহু ন্যায়তনানি চ।

অধিত্রিলোকি নো কাশ্যাঃ কলামহ ন্তি শোড়শীম্ ॥ ৬৩।।

তাবদার্জন্তি পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকান্যলম্।

যাবন্নাম ন শৃণ্বন্তি কাশ্যাঃ পাপাচলাশনেঃ ॥ ৬৪।।


রক্তাম্বর- ধরা, রক্তবর্ণা, রক্তমাল্য ও রক্তচন্দন ভূষিতা, বিকটদশনা, করালবদনা, লোলজিহ্বা, অতিভীষণা, আকাশমার্গে ঊর্ধ্বীকৃত একপদ, সতত কধির পানাশক্ত, একহন্তে কৃপাণ, অপর হস্তে কপাল শোভিত, পিঙ্গলবর্ণ ও অতি ভয়ানক তারকাদ্বয়, অতি বেগবতী, ঘোর-নিনাদিনী, ভৈরব-ভয়দায়িনী, এবম্বিধা ভয়ঙ্করী এক কন্যা সৃষ্টি করিয়া তাহাকে কহিলেন,হে ভীষণে উগ্ররূপিনি! এই মহাকাল, যে কাল পর্যন্ত বারাণসী পুরীতে গমন না করেন, সেই কাল পর্যন্ত ইহার সঙ্গে সঙ্গে গমন কর, তুমি বারাণসী ভিন্ন সকল স্থানেই গমন করিতে পারিবে। মহাদেব সেই ভীষণা কন্যাকে এই সকল আদেশ করিয়া অন্তর্হিত হইলেন ৷ ৫৫ ॥ ৫৬ ॥ ॥৫৭৷ ৫৮৷।

কালভৈরব সেই ভয়ানক কন্যার সন্নিধানে থাকিয়া কালেরকাল স্বরূপ হইলেন এবং সেই বিশ্বাত্মা কালভৈরব দেবদেবের বাক্যে কপাল হস্ত ও কাপালিকব্রতাবলম্বন পূর্ব্বক ত্রিভুবনে পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তথাপি সেই ব্রহ্মহত্যা তাঁহাকে পরিত্যাগ করিল না ॥ ৫৯ ॥৬০।।

ত্রিজৎপতি, কাপালিকব্রতাবলম্বী সেই কালভৈরব অতি ভয়া- নক হইলেও সত্যলোক, বৈকুণ্ঠ, মহেন্দ্রাদিলোক এবং অন্যান্য প্রত্যেক তীর্থ পরিভ্রমণ করিতেছেন, তথাপি ব্রহ্মহত্যা তাঁহাকে পরিত্যাগ করিল না ৷ ৬১৷।

হে কুম্ভযোনে! তুমি এই অনুমান দ্বারা কাশী মহিমা অব- গত হও, দেখ, ব্রহ্মহত্যা সকল স্থানেই গমন করিল কিন্তু কাশীতে প্রবেশ করিতে পারিল না ৷ ৬২৷।

এই ত্রিলোকীতলে অতি বিস্তৃত অনেকানেক তীর্থ আছে সত্য, কিন্তু তাহারা কাশীর ষোড়শাংশের একাংশও নহে ৷ ৬৩॥

ব্রহ্মহত্যাদি পাপ সকল সেই কাল পর্যন্ত গর্জন করিয়া থাকে যে কাল পর্যন্ত পাপ পর্ব্বতের অশনি স্বরূপ কাশীধামের নাম শ্রবণ না করে । ৬৪।।


👉এভাবে একসময় কালভৈরবজী কাপালিকব্রত পালন করা অবস্থায় বৈকুণ্ঠে পরদার্পণ করেন। এবং কালভৈরবজীকে বৈকুণ্ঠে আসতে দেখে শ্রীবিষ্ণু জীর কালভৈরবের মাহাত্ম্য মাতা লক্ষ্মীকে বর্ণনা করতে করতে বলেন—

প্রমথৈঃ সেব্যমানোয়ৎ ত্রিলোকীং বিচরন্ হরঃ।

কাপালিকো যযৌ দেবো নারায়ণনিকেতনম্ ॥ ৬৫।।

অথায়ান্তং মহাকালং ত্রিনেত্রং সর্পকুণ্ডলম্।

মহাদেবাংশসন্ত তং ভৈরবং ভীষণাকৃতিম্ ॥ ৬৬।।

পপাত দণ্ডবস্তু মৌ দৃষ্টা তং গরুড়ম্বজঃ।

দেবাশ্চ মুনয়শ্চৈব দেবনার্য্যঃ সমন্ততঃ ॥ ৬৭।।

নিপেতুঃ প্রণিপত্যৈনং প্রণতঃ কমলাপতিঃ। শিরস্যঞ্জলিমারোপ্য স্তুত্বা বহুবিধৈস্তবৈঃ ॥ ৬৮।।ক্ষীরোদমথনোড়ু তাও প্রাহ পদ্মালয়াং হরিঃ।

প্রিয়ে পশ্যাজনয়নে ধন্যাসি সুভগেইনঘে।

ধন্যো২হং দেবিশুশ্রোণি যৎ পশ্যাবো জগৎপতিম্ ॥৬৯।।

অয়ং ধাতা বিধাতা চ লোকানাং প্রভুরীশ্বরঃ।

অনাদিঃ শরণঃ শান্তঃ পরঃ ষড় বিংশসম্মিতঃ ॥ ৭০।।

সর্বজ্ঞঃ সর্ব্বযোগীশঃ সর্ব্বভূতৈকনায়কঃ।

সর্বভূতান্তরাত্মায়ং সর্ব্বেষাং সর্ব্বদঃ সদা ॥ ৭১।।

যং বিনিদ্রা বিনিঃশ্বাসাঃ শান্তা ধ্যানপরায়ণাঃ।

ধিয়া পশ্যন্তি হৃদয়ে সোহয় মদ্য সমীক্ষ্যতাম্ ॥ ৭২।।

যৎ বিদুর্ব্বেদতত্ত্বজ্ঞা যোগিনো যতমানসাঃ।

অরূপো রূপবান্ ভূত্বা সোয়মায়াতি সর্ব্বগঃ ॥ ৭৩।।

অহো বিচিত্রং দেবস্য চেষ্টিতং পরমেষ্ঠিনঃ।

যস্যাখ্যাং ধ্রুবতাং নিত্যং ন দেহঃ সোহপি দেহধক ॥৭৪।।

যং দৃষ্টা ন পুনর্জন্ম লভ্যতে মানবৈডুবি।

সোয়মায়াতি ভগবান্ এ্যম্বকঃ শশিভূষণঃ ॥ ৭৫।।

পুণ্ডরীকদলায়া মে ধন্যে মেদ্য বিলোচনে।

ময়োরতিথিতাং নীতো নীলরূপধরো হরঃ ॥ ৭৬।।

ধিক্ ধিক্ পদন্ত দেবানাং পরং দৃষ্টাত্র শঙ্করম্।

লভ্যতে যন্ন নির্ব্বাণং সর্ব্বদুঃখান্তকৃত যৎ ॥ ৭৭।।

দেবত্বাদশুভং কিঞ্চিদ্দেবলোকে ন বিদ্যতে।

দৃষ্টাপি সর্ব্বদেবেশং যম্মু ক্তিং ন লভামহে ॥ ৭৮।।

এবমুক্তা হৃষীকেশঃ সংপ্রহৃষ্টতনূরুহঃ।

প্রণিপত্য মহাদেবমিদমাহ বৃষগ্ধজম্ ॥ ৭৯।।


প্রমথগণ-পরিবৃত সেই কাপালিকব্রতধারী কালভৈরব এইরূপে ত্রিলোক পরিভ্রমণ করিতে করিতে ক্রমে বৈকুণ্ঠধামে গমন করিলেন । ৬৫ ৷।

মহাদেবাংশ সম্ভূত, ত্রিনয়ন, সর্পকুণ্ডলী, ভীষণা- কার সেই মহাকাল ভৈরবকে বৈকুণ্ঠে সমাগত দেখিয়া ভগবান, গরুড়বাহন, তাঁহাকে দণ্ডবৎ প্রণাম করিলেন। দেবতা, মুনি ও দেবাঙ্গনা সকলও সেই কালভৈরবকে প্রণাম করিলেন, কমলাপতি শ্রীহরি প্রনামানন্তর মস্তকে অঞ্জলিব্ধ করিয়া বহুবিধ স্তব করত ক্ষীরোদমখনসম্ভবা পদ্মালয়াকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, হে অম্বুজনয়নে সুভগে! হে প্রিয়ে! হে সুশ্রোণি! হে দেবি! অদ্য জগংপতিকে দর্শন করিয়া তুমি ধন্য হইলে, আমিও ধন্য হইলাম ৷ ৬৬ ॥ ৬৭॥ ৬৮ ॥ ৬৯॥

ইনিই ধাতা, বিধাতা, ত্রিলোকের ঈশ্বর ও প্রভু, ইনিই অনাদি, শরণ্য, শান্ত, পরমা- অস্বরূপ, সর্ব্বজ্ঞ, সর্ব্বযোগীশ্বর, সর্ব্বভুতের একমাত্র নায়ক, অন্তরাত্মা, সকলের সর্ব্বাভীষ্টপ্রদ ॥ ৭০ ॥ ৭১ ৷।

শান্ত ও ধ্যানাবলম্বী যোগিগণ, নিদ্রা ও নিশ্বাস রহিত হইয়া জ্ঞান দ্বারা যাঁহাকে সতত হৃদয়ে দর্শন করিতেছেন, সেই ভগবান, কালভৈরব, অদ্য আমাদিগের আলয়ে উপস্থিত অতএব দর্শন কর ৷ ৭২।।

বেদতত্ত্বজ্ঞ সংযতচিত্ত যোগিগণ যাঁহাকে সতত ধ্যান করেন, সেই সর্ব্বব্যাপী, অরূপ, রূপবান হইয়া আগমন করিয়াছেন । ৭৩॥

যাঁহার নাম নিয়ত কীর্ত্তন করিলে জীবের আর দেহ ধারণ করিতে হয়না,অদ্য সেই ঈশ্বর দেহ ধারণ করিয়াছেন অহো! দেবতার কি বিচিত্রঘটনা, ব্রহ্মারইবা কি আশ্চর্য্য চেষ্টিত। ৭৪৷।

যাঁহাকে দর্শন করিলে জীবের আর পুনর্জন্ম হয়না, সেই ভগবান, ত্রিলোচন, শশীভূষণ, অদ্য আমার আলয়ে আগমন করিলেন । ৭৫ ॥

নীলরূপধর হরকে দর্শন করায় অদ্য আমার পুণ্ডরীকদলায়ত নয়নদ্বয় ধন্য হইল । ৭৬৷।

আমি দেবগণের দেবত্বপদকে ধিক্কার দিই, কারণ তাঁহারা পরমেশ্বর শঙ্কর দর্শন করিয়াও সর্ব্বদুঃখান্তকর নির্ব্বান পদলাভে সমর্থ নহেন ॥ ৭৭ ॥

হে দেবি! দেবত্ব অপেক্ষা অধিক অসুখ আর কিছুই নাই, যেহেতু অদ্য আমরা সর্ব্বদেবেশ্বরকে দর্শন করিয়াও মুক্তিলাভে সমর্থ হইলাম না ৷ ৭৮৷৷

পুলকিতাঙ্গ হৃষীকেশ এই সকল কথ। বলিয়া বৃষবাহন মহাদেবকে প্রণামপূর্ব্বক কহিলেন । ৭৯।।


👉কালভৈরব রূপী মহাদেবকে এমন কাপালিক ব্রত পালন করতে দেখে জিজ্ঞাসু ভাবে প্রশ্ন করেন—

কিমিদং দেবদেবেন সর্ব্বজ্ঞেন ত্বয়া বিভো।।

ক্রিয়তে জগতাং ধাত্রা সর্ব্বপাপহরাব্যয় ॥ ৮০।।

ক্রীড়েয়ং তব দেবেশ ত্রিলোচন মহামতে।

কিং কারণং বিরূপাক্ষ চেষ্টিতৎ তে স্মরাদ্দন ॥ ৮১।।

কিমর্থং ভগবান শন্তো ভিক্ষাৎ চরসি শক্তিপ।

সংশয়ো মে জগন্নাথ নতত্রৈলোক্যরাজ্যদ ॥ ৮২।।


হে বিভো! হে সর্ব্বপাপহর! হে অব্যয়! আপনি দেবদেব, সর্ব্বজ্ঞ ও জগৎপাতা হইয়া এ কি করিতেছেন? ॥ ৮০৷।

হে মহামতে! দেবেশ! ত্রিলোচন! বিরূপাক্ষ! স্মরহর! আপনার এ কি চেষ্টা কি কারণেই বা এরূপ ভাব অবলম্বন করিলেন? ॥ ৮১।।

হে শস্তো!জগন্নাথ! আপনি ষড়ৈশ্বর্য্যশালী, মায়ার নিয়ন্তা, আপনি ভক্তদিগকে ত্রিলোকের আধিপত্য প্রদান করেন তবে কি নিমিত্ত কুৎসিত ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিলেন ইহাতে আমার অতীব সংশয় হইয়াছে । ৮২॥


👉বিষ্ণুজী কালভৈরবরূপী মহাদেবকে বলেন যে, আপনি সকলকে ঐশ্বর্য দান করেন, আপনিই মারার অতীত, গুণের অতীত কিন্তু তারপরেও কেন আপনি এরূপ ভিক্ষা করছেন? বিষ্ণুজীর এমন সংশয় পূর্বক বাক্য শ্রবণ করে মহাদেব বললেন—

এবমুক্তস্ততঃ শত্রু বিষ্ণুমেতদুদাহরৎ।

ব্রহ্মণস্ত শিরঃ চ্ছিন্নমঙ্গল্যগ্রনখেন হ।

তদদ্য প্রতিষৎ বিষ্ণো চরাম্যেতদ্রুতং শুভম্ ॥ ৮৩।।


অনন্তর মহাদেব বিষ্ণুর এই কথা শ্রবণ করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে বিষ্ণো! আমি আঙ্গুলের অগ্রবর্তী নখ দ্বারা ব্রহ্মার মস্তক ছেদন করিয়াছি। সেই পাপ বিমোচনার্থ এখন আমি এই পবিত্র ব্রত আচরণ করিতেছি ॥৮৩৷।


👉মহাদেব বিষ্ণুজীকে বললেন ব্রহ্মহত্যার দোষ থেকে উদ্ধারের জন্য তিনি এরূপ ব্রত আচরণ করছেন। যাতে উনার উপর আরোপিত ব্রহ্মহত্যার দোষের নিবারণ হয়। 

কিন্তু বিষ্ণুজী, মহাদেবের এমন বাক্য শুনে মহাদেবকে হাস্যপূর্বক বললেন যে—

এবমুক্তো মহেশেন পুণ্ডরীকবিলোচনঃ।

স্মিত্বা কিঞ্চিন্নতশিরাঃ পুনরেবং ব্যজিজ্ঞপৎ ॥ ৮৪।।

যথেচ্ছসি তথা ক্রীড় সর্ব্ববিষ্টপনায়ক।

মায়য়া মাং মহাদেব ন চ্ছাদয়িতুমহ সি ॥ ৮৫।।

নাভীকমলকোশাত কোটিশঃ কমলাসনান্।

কল্পে কল্পে সৃজামীশ ত্বন্নিয়োগবলাদ্বিভো ৷ ৮৬।

ত্যজ মায়ামিমাং দেব দুস্তরামকৃতাত্মভিঃ।

মদাদয়ো মহাদেব মায়য়া তব মোহিতাঃ।

যথাবদবগচ্ছামি চেষ্টিতং তে শিবাপতে ॥ ৮৭।।

সংহারকালে সংপ্রাপ্তে সদেবানখিলাম্মু নীন।

লোকান্ বর্ণাশ্রমবতো হরিষ্যসি যদা হর ॥ ৮৮।

তদা ক হে মহাদেব পাপং ব্রহ্মবধাদিকম্।

পারতন্ত্র্যং ন তে শস্তো স্বৈরং ক্রীড়েত্ততোভবান ॥৮৯।

অতীতব্রহ্মণামস্থাং অক্ কণ্ঠে তব ভাসতে।

তদা তদা ক্ব নু গতা ব্রহ্মহত্যা তবানঘ ৷ ৯০।।

কৃত্বাপি সুমহৎ পাপং ত্বাং যঃ স্মরতি ভাবতঃ।

আধারং জগতামীশং তস্য পাপং বিলীয়তে। ৯১।।

যথা তমো ন তিষ্ঠেত সন্নিধাবৎশুমালিনঃ।

তথা ন তব ভক্তস্য পাপং তস্য ব্রজেৎ ক্ষয়ম্। ৯২।।

যশ্চিন্তয়তি পুণ্যাত্মা তব পাদাম্ব জদ্বয়ম্।

ব্রহ্মহত্যাদিকমপি পাপং তস্য ব্রজেৎ ক্ষয়ম্ ॥ ৯৩।।

তব নামানুরক্তা বাক্ যস্য পুংসো জগৎপতে। অপাদ্রিকূটতুলিতং নৈনস্তমনুবাধতে ॥ ৯৪।।

রজসা তমসা বিবর্দ্ধিতং ক্ব নু পাপং পরিতাপদায়কম্।

কচ তে শিবনাম মঙ্গলং জনজীবাতুজগ জাপহম্ ॥ ৯৫।।

যদি জাতুচিদন্ধকদ্বিষস্তব নামৌষ্ঠপুটাদ্বিনিঃসৃতম্।

শিব শঙ্কর চন্দ্রশেখরেত্যসকৃতস্য ন সংসৃতিঃ পুনঃ ॥৯৬।।

পরমাত্মন, পরংধাম স্বেচ্ছাবিষ্কৃতবিগ্রহ।

কতূহলং তবেশেদং ক পরাধীনতেশ্বর ॥ ৯৭।।

অদ্য ধন্যোহস্মি দেবেশ যং ন পশ্যন্তি যোগিনঃ।

পশ্যামি তং জগন্মলং পরমেশ্বরমক্ষয়ম্ ॥ ৯৮।।

অদ্য মে পরমো লাভত্ত্বদ্য মে মঙ্গলৎ পরম্। ত্বদ্দষ্ট্যমৃততৃপ্তস্য তৃণং স্বর্গাপবর্গদম্ ॥ ৯৯।

ইত্থং বদতি গোবিন্দে বিমলা পদ্ময়া তয়া।

মনোরথবতী নাম ভিক্ষা পাত্রে সমর্পিতা।

ভিক্ষাটনায় দেবোপি নিরগাৎ পরয়া মুদা ॥ ১০০।।

দৃষ্টানুযায়িনীং তান্ত সমাহয় জনাদনঃ।

সংপ্রার্থয়দ্ব হ্মহত্যাৎ বিমুগ্ধ ত্বং ত্রিশূলিনম্ ॥ ১০১।


পুণ্ডরীকলোচন হরি, মহাদেবের এই কথা শুনিয়া অধোবদনে ঈষৎ হাস্য করত পুনর্ব্বার কহিলেন । ৮৪।।

হে সকল-ভুবন-স্বামিন! মহাদেব! আপনার যাহা ইচ্ছা তাহাই করুন, কিন্তু আমাকে মায়াদ্বারা ভুলাইতে পারিবেন না ৷ ৮৫৷।

হে ঈশ। হে বিভো! আপনার আজ্ঞানুসারে আমি কল্পে কল্পে এইরূপ কোটি কোটি ব্রহ্মা নিজ নাভিকমল হইতে সৃষ্টি করিয়া থাকি ৷ ৮৬।।

হে মহাদের! অম্মদাদি সকলেই আপনার অচিন্তনীয় মহামায়ায় বিমোহিত, অতএব অকৃতাত্মাজনের এই দুরপণেয় মায়া পরিহার করুন। হে শিবাপতে! আপনার যেরূপ চেষ্টিত তাহা আমি বিশেষরূপ অবগত আছি ৷ ৮৭৷।

হে মহাদেব! হে হর! সংহার কাল উপস্থিত হইলে, যখন আপনি দেবতা মুনি ও নিখিল বর্ণাশ্রমবস্তু লোকদিগকে হরণ করিয়া থাকেন, তখন আপনার ব্রহ্মবধাদি পাপ সকল কোথায় থাকে? অতএব আপনি স্বৈর বিহারী সুতরাং কোন কালেই আপনার পরাধীনতা নাই ॥ ৮৮॥৮৯৷

হে অনঘ! এক্ষণে অতীত ব্রহ্মের অস্থিমালা তোমার কণ্ঠে শোভা পাইতেছে কিন্তু সংহার কাল উপস্থিত হইলে এই অস্থিমালা ও ব্রহ্মহত্যা কোথায় থাকিবে? ॥ ৯০।।

যে ব্যক্তি অতি মহাপাতকী, সে যদি ভক্তি পূর্ব্বক জগদীশ্বর জগতের আধার তোমাকে স্মরণ করে, তাহা হইলে তাহার সমস্ত পাপরাশি দুরীভূত হয় । ৯১৷।

যেরূপ অংশুমালীর সন্নিধানে কখন অন্ধকার থাকিতে পারে না সেইরূপ ত্বদীয় ভক্তজনের নিকট কদাচ পাপ সকল থাকিতে পারে না ৷ ৯২।।

যে মহাত্মা আপনার পাদপদ্ম যুগল সতত চিন্তা করেন, তাঁহার ব্রহ্মহত্যাদি পাপ সকলও বিনষ্ট হইয়া যায় ৷ ৯৩।।

হে জগৎপতে! যে মনুষ্যের বাক্য, আপনার নামে অবিরত অনুরক্ত থাকে, সেই মনুষ্যকে পৰ্ব্বত শৃঙ্গ প্রমাণ পাপরাশিও আক্রমণ কাতে পারে না। ৯৪।।

হে শিব! রজ ও তমোগুণে বিবর্দ্ধিত পরিতাপ-দায়ক পাপইবা কোথায়? আর জগতের পাপ-রোগনাশক পরম মঙ্গল জীবনৌষধস্বরূপ তোমার নামইবা কোথায়? ফলিতার্থ তোমার নামোচ্চারণ করিলে জীবের কোন পাপই থাকে না। ৯৫ ॥

হে অন্ধকরিপো! শিব, শঙ্কর, চন্দ্রশেখর ইত্যাদি ত্বদীয় নাফ যদি কখন জীবের ওষ্ঠপুট হইতে বারম্বার নিঃসৃত হয়, তাহা হইলে তাহার আর পুনর্ব্বার সংসারে আসিতে হয় না। ৯৬।।

হে পরমাত্মন্ পরম জ্যোতিৰ্ম্ময় ঈশ্বর! আপনি স্বীয় ইচ্ছায় শরীর দারণ করেন। আপনার পরাধীনতা কখনই নাই, তবে যে পরাধীন হইয়াছেন এ বড় কৌতুকের বিষয়॥ ৯৭॥

যাঁহাকে যোগিগণ দর্শন করিতে সমর্থ নহেন, সেই জগৎকারণ, অক্ষয়, মহেশ্বর আপনাকে দেখিয়া আমি আজ ধন্য হইলাম॥৯৮৷।

আপনার দর্শনরূপ অমৃতে পরিতৃপ্ত ব্যক্তির স্বর্গ এবং অপবর্গও তৃণের ন্যায় তুচ্ছ বোধ হয়, সুতরাং অদ্য আপনাকে দর্শন করিযা আমার পরমলাভ ও পরম মঙ্গল হইল ॥৯৯৷৷

ভগবান্ গোবিন্দ এই প্রকার কহিতেছেন, ইতি মধ্যে তদীয় প্রেয়সী লক্ষ্মী মহাদেবের ভিক্ষা পাত্রে অমৃত তুল্য পবিত্র ভিক্ষা প্রদান করিলেন, মহাদেবও ভিক্ষা পাইয়া আনন্দে অন্যস্থানে গমন করিলেন ৷ ১০০।।

ভগবান্ জনার্দন, তখন মহাদেবের অনুগামিনী ব্রহ্মহত্যাকে আহ্বান করিয়া, তাঁহার নিকট প্রার্থনা করিলেন, হে ব্রহ্মহত্যে! তুমি এক্ষণে শূলপাণিকে পরিত্যাগ কর । ১০১।।


👉বিষ্ণুজী জানেন যে পরমেশ্বর সকল দোষ-গুণ, মায়া, শোক-মোহ, সকল বিকার, পাপ-পূণ্য, জন্ম-মৃত্যু সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এসব কিছু পরমেশ্বর শিবের উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। কেননা শিবই অদ্বিতীয় ব্রহ্ম। তাই বলছেন কেন আপনি এসব করছেন। শিবের নাম নিলে জীব গুরুতর ব্রহ্মহত্যা থেকেও মুক্ত হয়ে যায়, সেই শিব নাকি ব্রহ্মহত্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য কাপালিক ব্রত আচরণ করছেন!!

এবং এরপর ব্রহ্মহত্যাকে বিষ্ণুজী বললেন যে, পরমেশ্বর শিবকে ত্যাগ করতে। বিপরীতে ব্রহ্মহত্যা বিষ্ণুজীকে বললেন—

ব্রহ্মহত্যা উবাচ—

অনেনাপি মিযেণাহং সংসেব্যামুং বৃষঙ্গজম্।

আত্মানং পাবয়িষ্যামি ক্ক পুনর্ভবদর্শনম্ ॥ ১০২।।

সা তত্যাজ ন তৎপার্শ্বং ব্যান্ধতাপি মুরারিণা।

তমুচেংথ হরিং শম্ভুঃ স্মেরাস্যো বচনৎ শুভম্ ॥ ১০৩।। ত্বদ্বাষ্পীযুষপানেন তৃপ্তোহস্মি বহুমানদ।

বরং বৃণীষ গোবিন্দ বরদোহস্মি তবানঘ ॥ ১০৪।।

ন মাদ্যন্তি তথা ভৈক্ষৈর্ভিক্ষবোপ্যতিসংস্কৃতৈঃ।

যথা মানসুধাপানৈনু ন্নভিক্ষাটনজ্বরাঃ ॥ ১০৫।।


ব্রহ্মহত্যা কহিলেন— আমি এই স্থানে বৃষবাহন মহাদেবকে সেবা করিয়া আত্মাকে পবিত্র করিব। এরূপ ঘটনা না হইলে আর মহাদেবের দর্শন কোথায় পাইব || ১০২।।

ভগবান্ মুরারি ব্রহ্মহত্যাকে এই কথা কহিলেও সে মহাদেবের পার্শ্ব' পরিত্যাগ করিল না। অনন্তর মহাদেব ঈষৎ হাস্য করিয়া হরিকে কহিলেন, হে গোবিন্দ! তুমি আমাকে অনেক সম্মান করিলে, তোমার বাক্যামৃত পান করিয়া আমি যারপরনাই পরিতৃপ্ত হইয়াছি। এক্ষণে তুমি অভিলাষিত বর প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে বর দান করিব ৷ ১০৩ ৷ ১০৪ ৷।

ভিক্ষুক ব্যক্তিসকল যেমন মানরূপ সুধাপানে ভিক্ষাটন ক্লেশ দূর করিয়া অত্যন্ত পরিতৃপ্ত হয়, সেইরূপ সম্মান শূন্য প্রচুর পবিত্র ভিক্ষালাভেও তৃপ্ত হয় না। ১০৫ ৷।


👉মহাদেবের দর্শন পাওয়ার জন্যই মূলত ব্রহ্মহত্যা কালভৈরবজীর সাথে সাথেই ছিলেন। দোষের জন্য নয়। কেননা ব্রহ্মহত্যা নিজেও চাইছিলেন মহাদেবের দর্শনে তার আত্মশুদ্ধি হোক। তাই ব্রহ্মহত্যা কালভৈরবজীকে ত্যাগ করেনি। 

মহাদেব বিষ্ণুর এমন সম্মানজনক আচরণে খুশি হয়ে বর চাইতে বলেন। তখন বিষ্ণুজী বলেন—

শ্রীমহাবিষ্ণুরুবাচ—

এষ এব বরঃ শ্লায্যো যদহৎ দেবতাধিপম্।

পশ্যামি ত্বাৎ দেবদেবং মনোরথপথাতিগম্ ॥ ১০৬।।

অনভ্রেয়ং সুধাবৃষ্টিরনায়াসো মহোৎসবঃ।

অযত্নো নিধিলাভো যদ্বীক্ষণং হর তে সতাম্ ॥ ১০৭। অবিযোগোহস্তু মে দেব ত্বদচ্ছি যুগলেন বৈ।

এষ এব বরঃ শম্ভো নান্যং কঞ্চিদ্বরং বৃণে ॥ ১০৮।


মহাবিষ্ণু কহিলেন— হে দেবদেব! আমায় এই বর প্রদান করুন যেন আমি মনোরথ পথের অতীত, নিখিল দেবতাধিপতি আপনাকে নিয়ত দর্শন করিতে পাই৷ ১০৬৷।

হে হর! তোমার দর্শন সাধুদিগের পক্ষে বিনামেঘে সুধাবৃষ্টির ন্যায় অনায়াসকৃত মহোৎসবের ন্যায় অযত্নলব্ধ নিধির ন্যায় হইয়া থাকে । ১০৭ ॥

হে শম্ভো! আমি আর অন্য বর প্রর্থনা করিতে চাহি না কেবল এই বর প্রার্থনা করি, যেন ভবদীয় চরণযুগলে কখন বঞ্চিত না হই ৷ ১০৮ ॥


👉মহাদেব অর্থাৎ কালভৈরব, বিষ্ণুজীকে বরদান দিতে চাইলে, বিষ্ণুজী বরদান এটাই কামনা করেন যে, বিষ্ণুজী যেন মহাদেবের ভক্ত হয়ে থাকেন। এবং মহাদেবের চরণকমল থেকে যেন কখনো দূর না হয় সেই বর প্রার্থনা করেন বিষ্ণুজী। 

কালভৈরবরূপী মহাদেব বিষ্ণুজীর মনো কামনা পূরণ করে পবিত্র কাশী নগরীতে প্রবেশ করেন এবং কাশীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে বলেন যে—

শ্রীঈশ্বরউবাচ—

এবং ভবতু তেনন্ত যত্ত্বয়োক্তং মহামতে।

সর্ব্বেষামপি দেবানাং বরদস্তুং ভবিষ্যসি ॥ ১০৯।।

অনুগৃহ্যেতি দৈত্যারিং কেন্দ্রাদিভুবনে চরন।

ভেজে বিমুক্তিজননীং নাম্ন। বারাণসীং পুরীম্ ॥ ১১০।

যত্রস্থিতানাং জন্তনাং কলাৎ নার্হন্তি ষোড়শীম্।

অপি ব্রহ্মাদিদেবানাং পদানি বিপদাৎ পদম্ ॥ ১১১।।

বরং বারাণসীবাসী জটী মুণ্ডী দিগম্বরঃ।

নান্যত্র চ্ছত্রসংচ্ছন্নবসুধামগুলেশ্বরঃ ॥ ১১২।।

বরং বারাণসীভিক্ষা ন. লক্ষাধিপতান্যতঃ।

লক্ষাধীশো বিশেদার্ভং তদ্ভিক্ষাশী ন গর্ভভাক্॥ ১১৩।।

ভিক্ষাপি যত্র ভিক্ষুভ্যো দত্তামলকসম্মিতা।

সুমেরুণাপি তুলিতা বারাণস্যাং গুরুর্ভবেৎ ॥ ১১৪।।

বর্ষাশনং হি যোদদ্যাৎ কাশ্যাং সীদৎকুটুম্বিনে।

যাবন্ত্যব্দানি তাবন্তি যুগানি স দিবীজ্যতে ॥ ১১৫।

বারাণস্যাৎ বর্ষভোজ্যং যো দদ্যান্নিরুপায়িনে।

স কদাচিত্ ক্ষুধা নো দুঃখং ভুঙক্তে নরর্ষভঃ ॥ ১১৬।।

বারাণস্যাং নিবসতাং যৎ পুণ্যমুপজায়তে।

তদেব সংবাসয়িত্বঃ ফলং ত্ববিকলং ভবেৎ ॥ ১১৭।।

ব্রহ্মহত্যাদিপাপানি যস্যা নায়োপি কীর্তনাৎ।

ত্যজন্তি পাপিনাং কাশী সা কেনেহোপমীয়তে ॥ ১১৮।


মহাদেব কহিলেন— হে মহামতে! হে অনন্ত! তুমি যাহা কহিতেছ তাহাই হইবে, এবং তুমি সমস্ত দেবগণের বরদাতা হইবে ৷ ১০৯।।

কালভৈরব এইরূপে দৈত্যারিকে অনুগ্রহ করিয়া ক্রমে ব্রহ্মেন্দ্রাদিলোকে বিচরণ করিতে করিতে অবশেষে কৈবল্যধাম বারাণসীতে গমন করিলেন ॥ ১১০৷।

যে কাশীস্থিত জীবগণের ষোড়শাংশের একাংশ তুল্যও ব্রহ্মাদি দেবগণের পদ নহে। কারণ ঐ সকল পদ বিপদের আশ্রয়, অর্থাৎ উহা হইতে পতন হইতে পারে ॥ ১১১।।

বারাণসীবাসী হইয়া জটিল, মুণ্ডিত-মস্তক, দিগম্বর হওয়াও সর্ব্বতোভাবে শ্রেয়, তথাপি অন্যত্র রাজছত্রধারী হইয়া ভুমণ্ডলের আদিপত্য সুখভোগ করাও কিছু নহে । ১১২।।

বারাণসীতে ভিক্ষা বৃত্তি অবলম্বন করাও ভাল, তথাপি লক্ষাধিপতি হওয়াও ভাল নহে, যেহেতু লক্ষানিপতির পুনর্ব্বার গর্ভ প্রবেশ আছে, কিন্তু কাশীতে ভিক্ষাশী ব্যক্তির আর গর্ভে প্রবেশ করিতে হয় না। ১১৩॥

যে কাশীতে ভিক্ষুকদিগকে আমলক ফলপ্রমাণ ভিক্ষা দান করিলে তাহার ফলসুমেরু পর্ব্বতের ন্যায় গুরুতর হইয়া থাকে। ১১৪।।

যে ব্যক্তি কাশীধামে স্ত্রী পুত্রাদি রহিত অবসন্ন দীন দুঃখীদিগকে এক বর্ষকাল ব্যাপিয়া অন্ন দান করেন, তিনি সেই অন্ন সংখ্যা পরিমিত কাল যুগ ব্যাপিয়া স্বর্গে বাস করেন । ১১৫।।

যে মহাত্মা বারাণসীতে নিরুপায় ব্যক্তিদিগকে ভোজ্য বস্তু দান করেন। তিনি কোন কালেই ক্ষুধা ও তৃষ্ণা জন্য দুঃখ ভোগ করেন না ৷ ১১৬।।

বারাণসীবাসী সাধুদিগের যে পুন্য উপার্জন হয়, বারাণসী বাসের প্রযোজক ব্যক্তিরও অবিকল সেই পুণ্য লাভ হইয়া থাকে৷ ১১৭৷।

যে কাশীর নাম মাত্র স্মরণে পাপীরা ব্রহ্মহত্যাদি পাপ হইতে মুক্ত হয়, এই জগতে সেই কাশীধাম কাহার সহিত উপমা হইতে পারে? । ১১৮ ||


👉কাশীতে প্রবেশ করার পর ব্রহ্মহত্যা কালভৈরবজীর সঙ্গ ত্যাগ করে পাতালে গমন করেন—

ক্ষেত্রে প্রবিষ্টমাত্রে ভৈরবে ভীষণাকৃতৌ।

হাহেত্যুক্ত। ব্রহ্মহত্যা পাতালতলমাবিশৎ ॥ ১১৯।।

কপালং ব্রহ্মণো রুদ্রঃ সর্ব্বেষামের পশ্যতাম্।

হস্তাৎ পতিতমালোক্য ননর্ত পরয়া মুদা ॥ ১২০।।

বিধেঃ কপালং নামুঞ্চৎ করমত্যন্তদুঃসহম্।

হরস্য ভ্রমতঃ কাপি তৎ কাশ্যাৎ ক্ষণতোহপতৎ ॥ ১২১।।

শূলিনো ব্রহ্মণো হত্যা নাপৈতিস্ম চ যা ক্বচিৎ।

যা কাশ্যাৎ ক্ষণতো নষ্টা কথং কাশী ন দুর্লভা।

অতঃ প্রদক্ষিণীকাৰ্য্যা পূজনীয়া পুরীত্বিয়ম্ ॥ ১২২।।


অনন্তর ভীষণকায় কালভৈরব কাশী প্রবেশ মাত্রই তাঁহাব অনুগামিনী ব্রহ্মহত্যা হাহা করিয়া পাতালে প্রবেশ করিল । ১১৯।।

সর্ব্বজন সমক্ষে ব্রহ্মার কপাল হস্ত হইতে পতিত হইল দেখিয়া কালভৈরব পরমানন্দে নৃত্য করিতে লাগিলেন । ১২০।।

কালভৈরব যে ব্রহ্ম কপাল লইয়া নিখিল লোক পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন তথাপি সেই কপাল, কাঁহার দুঃসহ হস্ত পরিত্যাগ করে নাই কিন্তু কাশীতে ক্ষণকাল মধ্যেই তাহা পতিত হইল ॥ ১২১।

 কালভৈরবের যে ব্রহ্মহত্যা কোন স্থানেই অপগত হয় নাই। সেই ব্রহ্মহত্যা কাশীতে ক্ষণকাল মধ্যে বিনষ্ট হইল, অতএব এই কাশী কিজন্য দুর্লভ নহে? সকলেরই এই পুরীর পূজা ও প্রদক্ষিণ করা বিদেয় ।১২২॥


👉ব্রহ্মহত্যা কালভৈরবজীকে ত্যাগ করার পর আনন্দে নৃত্য করতে থাকেন এবং পরম পবিত্র কাশীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে করতে বলেন—

বারাণসীতি কাশীতি মহামন্ত্রমিমং জপন্।

যাবজ্জীবং ত্রিসন্ধ্যন্ত জন্তর্জাতু ন জায়তে ॥ ১২৩।।

অবিমুক্তৎ মহাক্ষেত্রং স্মরন্ প্রাণাংস্তু যস্ত্যজেৎ। দূরদেশান্তরস্থোপি সোপি জাতু ন জায়তে ॥ ১২৪।। আনন্দকাননং যস্য চিত্তং সংস্মরতে সদা।

তৎ ক্ষেত্রনামস্মরণান্ন স ভূয়োহভিজায়তে ॥ ১২৫।।

রুদ্রাবাসে বসেন্নিত্যং নরো নিয়তমানসঃ।

এনসামপি সম্ভারং কৃত্বা কালাদ্বিমুচ্যতে ॥ ১২৬।।

মহাশ্মশানমাসাদ্য যদি দৈবাদ্বিপদ্যতে।

পুনঃ শ্মশানশয়নং ন ক্বাপি লভতে পুমান ॥ ১২৭।। কপালমোচনং কাশ্যাং যে স্মরিষ্যন্তি মানবাঃ।

তেষাং বিনঙ্ক্ষ্যতি ক্ষিপ্রমিহান্যত্রাপি পাতকম্ ॥১২৮।।

আগত্য তীর্থপ্রবরে স্নানং কৃত্বা বিধানতঃ।

তর্পয়িত্বা পিতৃন, দেবান্ মুচ্যতে ব্রহ্মহত্যয়া ॥ ১২৯।।

অশাশ্বতমিদং জ্ঞাত্বা বারাণস্যাং বসন্তি যে।

দেহান্তে তৎপরং জ্ঞানং তেষাৎ দাস্যতি শঙ্করঃ ॥ ১৩০।।

ইয়ং কাশীপুরী বিপ্র সাক্ষাত্রুদ্রতমুঃ পরা।

অনির্বাচ্যা পরানন্দা দুষ্প্রাপ্যেশবিরোধিভিঃ ॥ ১৩১।।

অস্যাস্তত্ত্বমহং জানে শিবভক্তিপরোপি বা।

মুচ্যন্তে জন্তবোইত্রৈব যথা যোগেন যোগিনঃ ॥ ১৩২।।

পরং পদমিয়ং কাশী পরানন্দ ইয়ং পুরী।

ইয়মেব পরং জ্ঞানৎ সেব্যাসৌ মোক্ষকাঙ্ক্ষিভিঃ ॥ ১৩৩।। অত্রোষিত্বাপাশভক্তান্ বিরুণদ্ধি তু যঃ কুধীঃ।

পুর্য্যৈ দ্রুহ্যতি বা মূঢ়স্তস্যান্যত্রাত্র নো গতিঃ ॥ ১৩৪।।


যে মহাত্মা যাবজ্জীবন ত্রিকালীন বারাণসী, কাশী এই মহামন্ত্র জপ করেন, তাঁহাকে আর পুনর্ব্বার জন্মগ্রহণ করিতে হয় না ৷ ১২৩।।

যে ব্যক্তি দূরস্থ হইয়া এই মহাক্ষেত্র অবিমুক্তসাম স্মরণ করিয়া প্রাণত্যাগ করেন, তাঁহাকেও আর কখন জন্মগ্রহণ করিতে হয় না। ১২৪৷।

যাঁহার চিত্ত নিরন্তর এই আনন্দকানন স্মরণ করে, ক্ষেত্র নাম স্মরণ জন্য তাঁহাকেও আর জন্য গ্রহণ করিতে হয় না। ১২৫ ৷৷

যে জীব পাপভার গ্রন্ত হইয। বারাণসীতে পবিত্র চিত্তে নিয়ত বাস করেন। তিনি যথাকালে মুক্তি লাভ করিতে পারেন । ১২৬৷৷

যে মনুষ্য মহাশ্মশান প্রাপ্ত হইয়া যদি দৈবাৎ দেহ ত্যাগ করেন, তাহা হইলে তাঁহাকে আর পুনর্ব্বার কোন স্থানে শ্মশান শয্যায় শয়ন করিতে হয় না৷ ১১৭৷।

যে সকল মনুষ্য কাশীতে কিম্বা অন্যস্থানে এই কপালমোচন প্রস্তাব স্মরণ করেন, তাঁহাদিগের অতকৃত বা অন্য স্থান কৃতপাপ সকল শীঘ্র বিনষ্ট হয় ৷ ১২৮ ॥

যিনি কপাল মোচন এই প্রধান তীর্থে আগমন করিয়া যথাবিধি স্নানানন্তর পিতৃলোক ও দেবলোকের তর্পণ করেন, তিনি অনায়াসে ব্রহ্মহত্যা হইতে মুক্তি লাভ করিতে পারেন। ১২৯।।

যাঁহারা এই সংসার অনিত্য জ্ঞান করিয়া নিয়ত বারা- ণসীতে বাস করেন, দেহান্তে তাঁহাদিগকে মহাদেব, পরম জ্ঞান প্রদান করিয়া থাকেন ৷ ১৩০ ॥

হে বিপ্র! এই কাশীপুরী সাক্ষাৎ মহাদেবের কলেবর, এ কারণ এই অনির্বচনীয় পরমানন্দময়ী পুরী শিবদ্বেষী পামর- দিগের দুষ্প্রাপ্য জানিবে ৷ ১৩১৷।

যেরূপ যোগিগণ যোগদ্বারা মুক্তি লাত করেন, সেইরূপ জষুগণ এই স্থানে দেহ ত্যাগ মাত্র মুক্তি লাভ করিয়া থাকে। কাশীধামের মহিমা শিবভক্তি পরায়ণ কোন কোন মহাত্মা অবগত আছেন এবং আমিও বিশেষরূপ পরিজ্ঞাত আছি । ১৩২৷।

এই কাশী পুরী পরমপদ ও পরমানন্দময়ী, পরমজ্ঞানরূপিণী একারণ মমুক্ষুদিগের এই পুরী সেবা করা সর্ব্বতোভাবে বিধেয়। ১৩৩ ৷৷

যে মূঢ়মতি এই ক্ষেত্রে বাস করিয়া শিবভক্তদিগের সহিত বিরোধ করে ও যে মূঢ় এই পুরীর বিদ্বেষ করে, তাহাদিগের কি এই স্থানে কি অন্যস্থানে কোন স্থানেই গতি হয় না৷ ১৩৪৷।


👉কাশীর মাহাত্ম্য বর্ণনের পর স্কন্দজী, অগস্ত্যজীকে কালভৈরবজীর পরম পবিত্র মাহাত্ম্য বর্ণনা করেন—

কপালমোচনৎ তীর্থং পুরস্কৃত্বা তু ভৈরবঃ।।

তত্রৈব তস্থৌ ভক্তানাং ভক্ষয়ন্নঘসন্ততিং ॥ ১৩৫।।

পাপভক্ষণমাসাদ্য কৃত্বা পাপশতান্যপি।

কুতো বিভেতি পাপেভ্যঃ কালভৈরবসেবকঃ ॥ ১৩৬।।

আমদয়তি পাপানি দুষ্টানাঞ্চ মনোরথান।

আমৰ্দ্দক ইতিখ্যাতস্ততোইসৌ কালভৈরবঃ ॥ ১৩৭।।

কলিং কালং কলয়তি সদা কাশীনিবাসিনাম্।

অতঃ খ্যাতিং পরাং প্রাপ্তঃ কালভৈরবসংজ্ঞিতাম্ ॥১৩৮।

সদৈব যস্য ভক্তেভ্যো যমদূতাঃ সুদারুণাঃ।

পরমাং ভীরুতাং প্রাপ্তান্ততোসৌ ভৈরবঃ স্মৃতঃ ॥ ১৩৯।।

মার্গশীর্ষাসিতাষ্টম্যাৎ কালভৈরবসন্নিধৌ।

উপোষ্য জাগরং কুর্ব্বন্ মহাপাপৈঃ প্রমুচ্যতে ॥ ১৪০।।

যৎ কিঞ্চিদশুভৎ কৰ্ম্ম কৃতং মানুষবুদ্ধিতঃ।

তৎ সর্ব্বং বিলয়ং যাতি কালভৈরবদর্শনাৎ ॥ ১৪১।।

অনেকজন্মনিযুতৈর্যৎ কৃতৎ জন্তভিত্ত্বঘম্।

তৎ সর্ব্বং বিলয়ত্যান্ড কালভৈরবদর্শনাৎ ॥ ১৪২।।

কৃত্বা চ বিবিধাং পূজাৎ মহাসম্ভারবিস্তীরঃ।

নরো মার্গাসিতাষ্টম্যাৎ বার্ষিকং বিঘ্নমুৎসৃজেৎ ॥ ১৪৩।।

অষ্টম্যাঞ্চ চতুৰ্দ্দশ্যাং রবিভূমিজবাসরে।

মাত্রাঞ্চ ভৈরবীং কৃত্বা ক্বতৈঃ পাপৈঃ প্রমুচ্যতে ॥ ১৪৪।।

কালভৈরবভক্তানাং সদা কাশীনিবাসিনাম্।

বিঘ্নং যঃ কুরুতে মূঢ়ঃ স দুর্গতিমবাপুয়াৎ ॥ ১৪৫।।

বিশ্বেশ্বরেপি যে ভক্তা নো ভক্তাঃ কালভৈরবে।

কাশ্যাং তে বিঘ্নসঙ্ঘাতং লভন্তে তু পদে পদে ॥ ১৪৬।।

তীর্থকালোদকে স্বাত্বা কৃত্বা তর্পণমত্বরঃ।

বিলোক্য কালরাজঞ্চ নিরয়াদুদ্ধরেৎ পিতৃন্ ॥ ১৪৭।।

অষ্টৌ প্রদক্ষিণীকৃত্য প্রত্যহং পাপভক্ষণম্।

নরো ন পাপৈলিপ্যেত মনোবাক্কায়সম্ভবৈঃ ॥ ১৪৮।।

তস্মিন্নামদকে পীঠে জপ্ত। স্বাভীষ্টদেবতাম্।

যক্ষ্মাসং সিদ্ধিমাপ্নোতি সাধকো ভৈরবাজ্ঞয়া ॥ ১৪৯।

বারাণস্যামুষিত্বা যো ভৈরবৎ ন ভজেন্নরঃ।

তস্য পাপানি বর্দ্ধন্তে শুক্লপক্ষে যথা শশী ॥ ১৫০।।

যং যং সঞ্চিন্তয়েৎ কামং পাপভক্ষণসেবয়া।

বলিপূজোপহারৈশ তৎ তৎ স সমবাপুয়াৎ ॥ ১৫১।।

কালরাজং ন যঃ কাশ্যাৎ প্রতি ভূতাষ্টমীকুজম্।

ভজেত্তস্য ক্ষয়েৎ পুণ্যৎ কৃষ্ণপক্ষে যথা শশী ॥ ১৫২।।

শ্রুত্বাধ্যায় মিমং পুণ্যং ব্রহ্মহত্যাপনোদকম্।

ভৈরবোৎপত্তিসংজ্ঞঞ্চ সর্ব্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে ॥ ১৫৩।।

বন্ধনাগারসংস্থোপি প্রাপ্তোপি বিপদং পরাম্।

প্রাদুর্ভাবং ভৈরবস্য শ্রুত্বা মুচ্যেত সঙ্কটাৎ ॥ ১৫৪।


কালভৈরব কপালমোচন তীর্থকে পুরস্কার করিয়া ভক্তদিগের পাপরাশি ধ্বংশ করত সেই স্থানে অবস্থিত হইলেন ৷ ১৩৫ ৷।

কালভৈরবের ভক্তগণ শত শত পাপ করিয়াও যদি একবার কালভৈরবকে প্রাপ্ত হন, তবে তাঁহারা কখন পাপ হইতে ভীত হয়েন না ৷ ১৩৬ ৷।

কালভৈরব পাপ সকল ও দুষ্টদিগের মনোরথ মর্দ্দন করেন, এই নিমিত্ত আমৰ্দ্দক নামে বিখ্যাত হইয়াছেন । ১৩৭ ॥

ভগবান কালভৈরব সর্ব্বদা কাশীবাসীদিগের কলি এবং কালকে মর্দন করেন, এই নিমিত্ত কালভৈরব নামে বিখ্যাত হইয়াছেন ॥ ১৩৮॥

ভয়ঙ্কর যমদূতেরা যাঁহার ভক্তদিগের নিকট অতিশয় ভীত হয় বলিয়া যিনি ভৈরব নামে বিখ্যাত হইয়াছেন ৷ ১৩৯৷।

অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় অষ্টমীতিথিতে কালভৈরবের সন্নিধানে উপবাস করিয়া জাগরণ করিলে মহাপাতক হইতে মুক্ত হওয়া যায় । ১৪০৷।

মানবুদ্ধিক্রমে যে কিছু অশুভ কার্য্য করা হয় তৎ সমুদয় কালভৈরব দর্শন মাত্র এক কালীন বিনষ্ট হয় ৷ ১৪১ ৷। জীবগণ জন্মে জন্মে যে সকল পাপ উপার্জন করিয়াছে, সেই সকল পাপ কালভৈরব দর্শন মাত্র ধ্বংস হয় ৷ ১৪২ ৷।

মানবগণ যদি অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণ অষ্টমীতে বিবিধ উপহারে কালভৈরবের পূজা করেন, তাহা হইলে তাহাদিগের কি ক্ষেত্রস্থ কি বহিস্থিত সকল বিঘ্নই দূরীভূত হয়। ১৪৩।।

অষ্টমী, চতুৰ্দ্দশী, রবিবার বা মঙ্গলবার এই কএক দিনে কালভৈরবের নিকট যাত্রা করিলে জীব সকল পূর্ব্বকৃত পাপ হইতে মুক্তি লাভ করে । ১৪৪।।

যে নরাধম কাশীবাসী কালভৈরবের ভক্তদিগের প্রতি বিঘ্ন আচরণ করে, সে চরমে নরক যন্ত্রণা ভোগ করিয়া থাকে । ১৪৫ ৷।

যাঁহারা বিশ্বেশ্বরের ভক্ত হইয়া কালভৈরবকে ভক্তি না করেনা, তাঁহারা পদে পদে সমূহ বিঘ্ন প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। ১৪৬ ॥

যিনি সুস্থ ভাবে হোলোক তীর্থে স্নান করিয়া তর্পণানন্তর কালরাজকে দর্শন করেন, তিনি পিতৃলোকদিগকে নরক হইতে উদ্ধার করিতে পারেন॥ ১৪৭৷

যে মানব পাপহারক কালভৈরবকে প্রত্যহ অষ্টবার প্রদক্ষিণ করেন, তিনি কায়িক, বাচিক ও মানসিক পাপে কখনই পরিলিপ্ত হন না৷ ১৪৮ ॥

যে সাধু এই কালভৈরবীয় পীঠে স্বীয় অভীষ্টদেবতাকে জপ করেন, তিনি ভৈরবের আজ্ঞানুসারে যন্মাস কালমধ্যে সিদ্ধি লাভ করিতে পারেন ॥ ১৪৯।

যে মনুষ্য বারাণসীতে বাস করিয়া কাল ভৈরবকে ভজনা না করেন, শুক্ল পক্ষের শশীকলার ন্যায় দিন দিন তাঁহার পাপ সকল পরিবর্দ্ধিত হইতে থাকে ৷ ১৫০ ॥

বলি ও বিবিধ পূজোপহার দ্বারা পাপহারক ভৈরবের সেবা করিয়া যে যে কামনা কর। যায় নিশ্চয়ই সেই সেই কামনা পূর্ণ হইয়া থাকে। ১৫১৷।

যিনি প্রতি চতুৰ্দ্দশী, প্রতি অষ্টমী, প্রতি মঙ্গলবারে কালভৈরবের সেবা না করেন, কৃষ্ণপক্ষের শশীকলার ন্যায় দিন দিন তাঁহার পুণ্য সকল ক্ষয় হইতে থাকে ৷ ১৫২ ॥

ব্রহ্মহত্যাপনোদন ভৈরবোৎপত্তি নামক এই পরিত্র অধ্যায় শ্রবণ করিলে সর্ব্ববিধ পাপ হইতে মুক্ত হওয়া যায় । ১৫৩॥

কারাগারস্থ বা পরম বিপদগ্রস্ত হইয়াও যদি ভৈরবোৎপত্তি কথা শ্রবণ করে তাহা হইলে সকল সঙ্কট হইতে মুক্তি লাভ করিতে পারে ॥ ১৫৪ ॥


ইতি শ্রীস্কন্দপুরাণে কাশীখণ্ডে ভৈরবপ্রাদুর্ভাবোনামৈকত্রিংশোহধ্যায়ঃ।


ইতি শ্রীস্কন্দপুরাণান্তর্গত কাশীখণ্ডে ভৈরব প্রাদুর্ভাব নামক একত্রিংশ অধ্যায়।।


👉এই ছিলো কালভৈরবজীর উৎপত্তির কারণ ও মাহাত্ম্য। এখানে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। 

যেমনটা কালভৈরবজীর বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যাচার ছড়ানো হয়েছিলো তার খণ্ডন ও জবাব পাওয়া যায়। মহাদেব যে পরমস্বতন্ত্র তার প্রমাণ ও পাওয়া যায়। পরমেশ্বর শিব যে, ত্রিগুণাতীত, মায়াতীত, কালাতীত এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহাদেবেরই আদেশে জগৎ সৃষ্টি এবং পালন করেন তার প্রমাণও স্পষ্ট ভাবেই পাওয়া যায়। শিব যে কোনো নিয়মের দ্বারা আবদ্ধ হন না তার প্রমাণ ও পাওয়া যায়। পরমেশ্বর শিব যা কিছুই রুদ্রদেব দ্বারা করান তা মূলত লোক শিক্ষার নিমিত্ত, সাধারণদের শিক্ষা দেওয়ার নিমিত্তে নিজেরই বানানো নিয়মে আবদ্ধ হন। আশা রাখি আপনারা সকলে কালভৈরবজীর বিষয়ে যা যা প্রশ্ন ছিলো তার উত্তর পেয়েছেন।

স্কন্দ কতৃক কালভৈরবজীর মাহাত্ম্য বর্ণনা সমাপ্ত হলো।


ওঁ কালভৈরবায় নমঃ 🙏🔱

ওঁ নমঃ শিবায় 🙏🔱

ওঁ সাম্বসদাশিবায় নমঃ 🔱🙏

ওঁ দক্ষিণামূর্ত্তয়ে নমঃ 🙏🔱

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে  ✊🚩

হর হর মহাদেব 🚩✊


✍️লেখানীতেঃ— অন্তিক ভট্টাচার্য্য (শম্বরনাথ শৈব)


🌻বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ— আমার গুরু শ্রী নন্দীনাথ শৈবচার্য জী ও রোহিত কুমার চৌধুরী শৈবজী। 


কপিরাই ও প্রচারেঃ— আন্তর্জাতিক শিব শক্তি জ্ঞান তীর্থ (International Shiva Shakti Gyan Tirtha)


বিঃ দ্রঃ— লেখাটি কপি করলে সম্পূর্ণরূপে করবেন কোনো রকম কাটঁছাট করা যাবে না। 


ওঁ নমঃ শিবায় 🙏

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ