ব্যাসাষ্টকম (স্কন্দমহাপুরাণোক্ত)

Vyasastakam


নমঃ শিবায় 

মহর্ষি ব্যাসদেব জীবনের প্রথম দিকে শ্রীবিষ্ণুর মাহাত্ম্য প্রচার করতেন, তিনি সর্বত্র শ্রীহরি বিষ্ণুকেই সর্বোচ্চ বলে বেড়াতেন, একবার তিনি কাশী-বারাণসীতে উপস্থিত হয়ে হাত উপরদিকে তুলে শ্রীহরি বিষ্ণু‌ই একমাত্র পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর বিষ্ণুর সমতুল্য বা তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই বলে গর্বের সহিত চিৎকার করতে শুরু করেছিলেন, তখন সাক্ষাৎ সনাতন ধর্মরূপী নন্দী মহারাজ ব্যাসদেবকে স্তম্ভিত করে দেন, ব্যাসদেব যেন ঐ হাত তুলে চিৎকার করা অবস্থাতেই পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে গিয়েছিলেন, তার নড়াচড়া করবার মত কোন শক্তি তখন ছিল না, তিনি আর কোনো কথাও বলতে পারছিলেন না । ঠিক তখনই শ্রীহরি বিষ্ণু অদৃশ্যভাবে ব্যাসদেবের কানে কানে বললেন, ওহে ব্যাস তুমি মস্ত বড় ভুল কথা বলেছো, তোমার বলা কোনো কথা পরম সত্য নয়, তুমি সেই পরমব্রহ্ম শিবের কথা ভুলেই গিয়েছো, প্রভু শিবকে ছেড়ে বিষ্ণুই সর্বোচ্চ বলে গর্বের সহিত ধর্মবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রচার করেছো। তাই স্বয়ং সনাতন ধর্মরূপী নন্দী তোমাকে স্তম্ভন করে দিয়েছেন। এখনি ক্ষমা চেয়ে পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করো তবেই, তুমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সক্ষম হবে শিবের কৃপায়। নচেৎ নন্দী মহারাজের কোপ থেকে তোমায় কেউ বাঁচাতে পারবে না, তখন ব্যাসদেব মনে মনে ভগবান বিষ্ণুকে বলেন, আমি তো কথাও বলতে পারছি না তাহলে কিভাবে প্রভু শিবের স্তুতি করবো ?

তখন ভগবান বিষ্ণু বললেন, হে ব্যাস তুমি মানসিকভাবে মনে মনে পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করো, তবেই মুক্ত হতে পারবে। এই বলে ভগবান বিষ্ণু অন্তর্ধান হলেন। ব্যাসদেব মনে মনে পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করলেন। তখন পরমেশ্বর শিব হেঁসে নন্দী মহারাজকে বললেন ব্যাসদেবকে মুক্ত করে দিতে। নন্দী মহারাজ তখন ব্যাসদেবকে মুক্ত করে দিলেন । এরপর থেকে ব্যাসদেব চিরতরে শিবভক্ত শৈব হয়ে গেলেন।

ব্যাসদেব যে স্তুতি গায়ন করে নিজের বিপদ থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলেন, সেই স্তুতি ব্যাসাষ্টকম নামে পরিচিত। যা স্কন্দ মহাপুরাণ এর কাশীখণ্ডের উত্তরার্ধের ৯৫ তম অধ্যায়ের ৫৩ থেকে ৬৩ নং শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে। 


॥ ব্যাসাষ্টকম ॥


একো রুদ্র ন দ্বিতীয়ো যতস্তদ্ ব্রহ্মৈবৈকং নেহ নানাঽস্তি কিঞ্চিয় ।

যদ্যপ্যন্যঃ কোঽপি বা কুত্রচিদ্বা ব্যাচষ্টাং তযস্য শক্তির্মদগ্ৰে ।। ১ ।।

যঃ ক্ষীরাব্ধের্মন্দরাঘাতজাতো জ্যালামালী কালকূটোঽতিভীমঃ ।

তং সোঢুং বা কোঽপরোঽভূন্মহেশাদ্যত্কীলাভিঃ কৃষ্ণতামায় বিষ্ণুঃ ।। ২ ।।

যদ্বাণোঽভূচ্ছ্রীপতির্যস্য যন্তা লোকেশো যত্স্যন্দনং ভূঃ সমস্তা ।

বাহা বেদা যস্য যেনেষুপাতাদ্ দগ্ধা গ্ৰামাস্ত্রৈপুরাস্তৎ সমঃ কঃ ।। ৩ ।।

যং কন্দর্পো বীক্ষমানঃ সমানং দেবৈরন্যৈর্ভস্মজাতঃ স্বয়ং হি ।

পৌষ্পৈর্বাণৈঃ সর্ববিশ্বৈকজেতা কো বা স্তুত্যঃ কামজেতুস্ততোঽন্যঃ ।। ৪ ।।

যং বৈ বেদ নো নৈব বিষ্ণুর্নো বা বেধা নো মনো নৈব বাণী ।

তং দেবেশং মাদৃশঃ কোঽল্পমেধা যাথাত্ম্যাদ্বৈথাত্ম্যাদ্বৈ বেত্ত্যহো বিশ্বনাথম্ ।। ৫ ।।

যস্মিন্ সর্বং যস্তু সর্বত্র সর্বো যো বৈ কর্তা যোঽবিতা যোঽপহর্তা ।

নো যস্যাদির্যঃ সমস্তাদিরেকো নো যস্যাঽন্তো যোঽন্তকৃত্তং নতোঽস্মি ।। ৬ ।।

যস্যৈকাখ্যা বাজিমেধেন তুল্যা যস্যা নত্যা চৈকয়াল্পেন্দ্রলক্ষ্মীঃ ।

যস্য স্তুত্যা লভ্যতে সত্যলোকো যস্যাঽর্চাতো মোক্ষলক্ষ্মমীরদূরা ।। ৭ ।।

নাঽন্যং দেবং বেদ্ম্যহং শ্রীমহেশান্নাঽন্যং দেবং স্তৌমি শম্ভোর্ঋতেঽহম্ ।

নাঽন্যং দেবং বা নমামি ত্রিনেত্রাত্ সত্যং সত্যং সত্যমেতন্মৃষা ন ।। ৮ ।।


(তথ্যসূত্র - স্কন্দমহাপুরাণ/কাশীখণ্ড/উত্তরার্ধ/অধ্যায়-৯৫/শ্লোক নং ৫৬-৬৩)

________________________________________________


অর্থ :

ব্যাসদেব বললেন —

একমাত্র রুদ্র ভিন্ন আর দ্বিতীয় কিছুর অস্তিত্ব নেই, কারণ তিনিই একমাত্র ব্রহ্ম,তিনি ছাড়া এ ব্রহ্মাণ্ডে আর কিছুই নেই। যদি তিনি ছাড়া আর কেউ থেকে থাকেন, তাহলে তিনি আমার সামনে তার শক্তি প্রদর্শন করুক ।। ১ ।।

ক্ষীর সমুদ্র থেকে মন্দর পর্বতের মন্থনের দ্বারা যে কালকূট বিষ উৎপন্ন হয়েছিল,যাহার তেজে বিষ্ণু কৃষ্ণবর্ণের হয়ে গিয়েছিলেন, মহেশ্বর ভিন্ন আর কেউ কি সেই বিষ সহ্য করতে পেরেছেন? ।। ২ ।।

বিষ্ণু যার বাণ, ব্রহ্মা যার সারথি, সমস্ত পৃথিবী যার রথ, বেদ যার রথের বাহন (ঘোড়া) হয়েছিল এবং যার একটি মাত্র বাণে ত্রিপুরের সমস্ত গ্ৰাম দগ্ধ হয়ে গিয়েছিল,সেই মহেশ্বরের সমান আর কে? ।। ৩ ।।

কেবল পুষ্পবাণ দ্বারা ত্রিলোকজয়ী কামদেবও সমস্ত দেবতাগণের সম্মুখে যার দৃষ্টিপাত মাত্রই ভস্ম হয়ে গিয়েছিলেন,সেই কামবিজয়ী শিব ভিন্ন আর কে স্তুতি করার যোগ্য? ।। ৪ ।।

বেদ,ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মন এবং বাণীও যাকে জানতে পারে না,সেই দেবদেব বিশ্বনাথ কে আমার মতোন অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি কিভাবে যথার্থরূপে জানতে পারবে? ।। ৫ ।।

সমস্ত বিশ্ব যার মধ্যে অবস্থান করছে, এবং যিনি সর্বত্রই বিরাজমান রয়েছেন,যিনি জগৎ এর কর্ত্তা,রক্ষক এবং প্রলয়কর্ত্তা,যিনি একাই সকলের আদি,যার কোনো অন্ত নেই, এবং যিনি সকলের অন্তরে নিবাস করেন,আমি সেই মহাদেব কে প্রণাম করি ।। ৬ ।।

যার নাম একটিবার স্মরণ করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়,যাকে একবার প্রণাম করলে ইন্দ্রদেবের সম্পত্তিও তুচ্ছ মনে হয়,যার স্তুতি করলে সত্যলোক প্রাপ্তি হয়,একইভাবে যার পূজা করলে মোক্ষ ও লক্ষ্মী পর্যন্ত দূরে থাকতে পারেন না, আমি সেই মহেশ্বর কে প্রণাম করি ।। ৭ ।।

আমি মহেশ্বর ভিন্ন অন্য কোনো দেবতা কে জানি না,শম্ভু ভিন্ন অন্য কোনো দেবের স্তুতি করি না, ত্রিলোচন শিব ভিন্ন অন্য কাউকে প্রণামও করি না।এর মধ্যে কোনো মিথ্যা নেই, এই বাক্য সর্বদা সত্য সত্য ।। ৮ ।।


এই মহাপবিত্র স্তোত্র ব্যাসাষ্টক নামে বিখ্যাত। এই স্তোত্র যে পাঠ করবে মহাদেব তার উপর প্রসন্ন হবেন। এই শিব সান্নিধ্যকারক ব্যাসাষ্টক কে নিত্যদিন প্রাতঃকালে পাঠ করলে সমস্ত দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদি কোনো মাতৃঘাতি,পিতৃহত্যাকারী,গোঘ্ন,বালকহত্যাকারী এবং স্বর্ণতস্কর(সোনাধাতুর চোর) ব্যক্তিও উক্ত কার্যগুলি থেকে বিরত হয়ে অনুতাপ পূর্বক এই স্তোত্রের পাঠ করে, তাহলে সেও পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। 

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


✍️ লেখনী ও সংগ্রহে — শ্রী শৈলনাথ শৈব জী

পরিমার্জিত করণে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ