পরমেশ্বর সদাশিবের বিভিন্ন প্রাচীন প্রতিমা বিগ্রহের ঐতিহাসিক প্রমাণ



ॐ নমঃ শিবায় ॥

শৈব সনাতন ধর্ম যে সবচেয়ে প্রাচীন, তা পরমেশ্বর শিবের সবচেয়ে প্রাচীনতম নিদর্শন থেকেই প্রমাণিত হয় । আদি সনাতনী বলতে ‘শৈব’ - দের‌ই বোঝায় । কারণ, আদিকাল থেকে পরমেশ্বর শিবের পূজা করে আসছে সনাতনীরা, আমাদের সনাতন ধর্মের শাস্ত্রের মধ্যেও সকল দেবতা, মুনি ঋষি, মনুষ্য তথা সকলেই পরমেশ্বর শিবের‌ই ভজনা করেন বলে হাজার হাজার প্রমাণ ভরে ভরে উল্লেখ করা রয়েছে ।

আর প্রভু শিবের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সেই শাস্ত্রের মধ্যে উল্লেখিত ঘটনা গুলির প্রমাণ হিসেবে পরমেশ্বর শিব ও সনাতন ধর্মের প্রাচীনত্বকে তুলে ধরছে। সর্বত্র শিবের অস্তিত্ব আছে, এটি শৈব দের অতি গৌরবময় ইতিহাস, যা যা কি না পরমেশ্বর শিবের অদ্বিতীয়তা, সনাতন ধর্মের প্রাচীনত্ব এবং শৈবদের একমাত্র আদিসনাতনী হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেয় সমগ্র বিশ্বসমাজের সম্মুখে ।

চলুন, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ নামক ত্রিদেব কে উৎপন্নকারী সনাতন ধর্মের এক ও অদ্বিতীয় সেই পরমেশ্বর সদাশিবের কিছু অতি প্রাচীন বিগ্রহ প্রতিমা দেখে নিন, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত —


(১) সিন্ধু সভ্যতার পশুপতি সদাশিব —

সিন্ধু সভ্যতার পশুপতি শিব

সময়কাল : ২৩৫০-২০০০ খ্রিষ্টপূর্ব।

স্থান : মহেঞ্জোদারো, সিন্ধুপ্রদেশ, বর্তমান পাকিস্তান।

বর্ণনা : বর্তমান পাকিস্তান দেশ যেখানে রয়েছে, প্রাচীন কালে সেই স্থানের অন্তর্গত সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে মহেঞ্জোদারোতে পরমেশ্বর শিবের একটি সিলমোহর পাওয়া গিয়েছে। সেখানে সেই সিন্ধু। সভ্যতার সময়কালে পাওয়া প্রভু শিবের সিলমোহরটির নাম - ‘পশুপতি সিল’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই সীলমোহরটিতে স্পষ্টভাবে সামনের দিকে পরমেশ্বর সদাশিবের একটি মুখ, পাশাপাশি দুটি মুখ এবং এটি বলা যেতে পারে যে পিছনে আরও দুটি মুখ রয়েছে(যা কল্পনা করে নিতে হয় আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে)। কারণ এটি পঞ্চমুখী সদশিবের আকৃতি বলে স্পষ্ট বোধগম্য হয় ।

______________________________________________


(২) এলিফ্যান্টা গুহা থেকে সদাশিব মূর্তি —



সময়কাল : ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দী ।

স্থান : এলিফ্যান্টা দ্বীপ, মুম্বাইয়ের কাছে, মহারাষ্ট্র রাজ্য, ভারত ।

বর্ণনা : ভারতের বর্তমান মুম্বইয়ের কাছে স্থিত এলিফ্যান্টা দ্বীপের গুহাতে পরমেশ্বর সদাশিবের এই বিরাট প্রতিমা বিগ্রহ অবস্থিত রয়েছে । ৭ মিটার (২৩ ফুট) উচ্চতা বিশিষ্ট এই কেউ কেউ একে ত্রিমূর্তিও বলে। কিন্তু এটি মূলত পরমেশ্বর সদাশিবের পাঁচ মুখের প্রতিমা, সামনের দিকে তিনটি ও পেছনদিকে (কল্পনায়) দুটি মুখ রয়েছে ।


______________________________________________


 (৩) প্রতিহার রাজবংশের সদাশিব —



সময়কাল : ১০ম শতাব্দী ।

স্থান : ভূপাল জাদুঘর , মধ্যপ্রদেশ রাজ্য, ভারত ।

বর্ণনা : প্রথমহারা রাজবংশের এই পরমেশ্বর সদাশিবের বিগ্রহে তিনটি মুখ রয়েছে এবং ছয়টি হাত রয়েছে(যদিও তা অক্ষত নয়)। শান্ত মুখের এই মূর্তিটি পবিত্র সুতোয় (নাগের যজ্ঞোপবীত) একটি সাপ রয়েছে এবং এর চুল ভালভাবে বাঁধা। 

______________________________________________


(৪) পশ্চিমবঙ্গ থেকে সদাশিব মূর্তি  —



সময়কাল : পাল বংশের রাজত্ব কালের ৯০০-১১০০ শতক।

স্থান : বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

বর্ণনা : সদাশিব পদ্ম ফুলে উপবিষ্ট, সামনে পাশাপাশি তিনটি মস্তক পেছনে কল্পনায় চতুর্থ মস্তক ও উপর দিকে পঞ্চম মস্তক । পরমেশ্বর শিব যে পদ্ম ফুলের উপর উপবিষ্ট আছেন, সেই পদ্মফুলের নীচে একটি হাতি ফুলের নিচে চাপা পড়ে আছে, এটি পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী গজাসুর। প্রভু শিব পদ্মাসন অবস্থায় বসে আছেন, তার দশটি হাত রয়েছে। গঙ্গা ও যমুনা পবিত্র জল দিয়ে পরমেশ্বর এর পূজা করছেন।

_______________________________________________


(৫) পশ্চিমবঙ্গে পরমেশ্বর সদাশিবের বিগ্রহ (২) —



সময়কাল :  ১২ শতাব্দী।

স্থান — দক্ষিণ দিনাজপুরের  থেকে বাণগড় পাওয়া গিয়েছে, বর্তমানে কলকাতার ভারতীয় মিউজিয়ামে রয়েছে (ভারত)। 

বর্ণনা : পরমেশ্বর সদাশিব পদ্ম ফুলে উপবিষ্ট, সামনে পাশাপাশি তিনটি মস্তক পেছনে কল্পনায় চতুর্থ ও পঞ্চম মস্তক । মস্তকের উপরে রয়েছেন কীর্তিমুখ। পরমেশ্বর শিব যে পদ্ম ফুলের উপর উপবিষ্ট আছেন, তার নীচের দিকে সদাশিবের বামদিকে  (ছবির ডানদিকে) শিববাহন বৃষভ নন্দী রয়েছেন, তার মুখের সামনের দিকে রয়েছেন মহাকাল দ্বারপাল হিসেবে । সদাশিবের ডানদিকে  (ছবির বামদিকে) শিবগণেরা রয়েছেন, তাদের সামনের দিকে নন্দীকেশ্বর দ্বারপাল হিসেবে রয়েছেন। 

_______________________________________________

(৬) পূর্ব বঙ্গ (বাংলাদেশ) -এ পরমেশ্বর সদাশিব —


সময়কাল :  ১০-১১ শতাব্দী।

স্থান — পূর্ব বঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে পাওয়া গিয়েছে, বর্তমানে ইংল্যান্ডের অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামে রয়েছে । 

বর্ণনা : ব্রোঞ্জ ধাতুর তৈরি এই শিববিগ্রহে পরমেশ্বর সদাশিব পদ্ম ফুলে উপবিষ্ট আছেন, সামনে পাশাপাশি তিনটি মস্তক পেছনে চতুর্থ মস্তক ও উপর দিকে পঞ্চম মস্তক । অস্ত্রসজ্জিত দশটি হাত বিদ্যমান । পরমেশ্বর শিব পদ্ম ফুলের উপর উপবিষ্ট আছেন, তার নীচের দিকে সদাশিবের সামনে  শিববাহন বৃষভ নন্দী বসে রয়েছেন ।


_______________________________________________


(৭) ব্রহ্মাবিষ্ণু সেবিত পরমেশ্বর শিব —



সময়কাল :  ১০-১১ শতাব্দী।

স্থান : বাত‌ ফু, লাওস দেশ (Vat phou/wat phu, Laos)।

বর্ণনা : পরমেশ্বর সদাশিব দাঁড়িয়ে আছেন, তার তিনটি মুখ সামনের দিকে আছে, উপরের দিকে একটি মুখ ও পেছনের দিকে (কল্পনায়) আরেকটা মুখ রয়েছে। তার দশটি হাত রয়েছে(যদিও ডানদিকের একটি‌ হাতের স্থানটি ভঙ্গ হবার কারণে চারটি হাত অবশিষ্ট রয়েছে বর্তমানে)।বামদিকের একটি হাতে দণ্ডের মতো ত্রিশূল রয়েছে। পরমেশ্বর শিবের ডানদিক(ছবির বাম দিকে) ব্রহ্মা এবং পরমেশ্বর সদাশিবের বামদিকে(ছবির ডানদিকে) বিষ্ণু উভয়ে হাতজোড় করে প্রভু শিবকে নমস্কার করছেন ।

Map Location : Vat Phou 

 _______________________________________________

মতামত : পরমেশ্বর শিবের আধিপত্য সর্বত্র বিস্তৃত ছিল প্রাচীন কালেও, এখনো রয়েছে ও চিরকাল এভাবেই বিদ্যমান থাকবে । সনাতন ধর্মের এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর শিবের কারণেই প্রমাণিত হয় যে, সনাতন ধর্মের প্রাচীনত্ব সবার চেয়ে অধিক। যা আছে সব‌ই শিব, শিব ছাড়া কিছুই নেই। কারণ, শিবঃ এব কেবল ॥

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


সংগ্রহে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ