পরমেশ্বর শিবের বাহন — বৃষভ নন্দী স্বয়ং সনাতন ধর্ম





🧡🌷🟧 সাক্ষাৎ সনাতন ধর্ম — বৃষভ নন্দী 🟧🌷🧡


বর্তমান সময়ে ধর্ম বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ খুব বেশি অবগত নয়। ধর্মের সংজ্ঞা, ধর্মের উৎপত্তি, ধর্মের লক্ষণ কী❓

 আসুন শাস্ত্র থেকে প্রমাণসহ সেই ধর্মের অজানা তথ্য গুলো দেখা যাক।


                                ॥ শিবঃ ॐ ॥


🔴প্রথম প্রশ্ন : (১) ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে ?


🔥উত্তর:- ধর্ম শব্দটি একটি সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃত ধাতু  'ধৃ' থেকে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, যার অর্থ হল ধারণ করা।

যে বস্তু যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তা সেই বস্তুর ধর্ম ,যেমন অগ্নির ধর্ম উত্তাপ, বরফের ধর্ম শীতলতা।


ধর্ম শব্দটি সনাতন ধর্মের শাস্ত্র সমূহেই দেখা যায়, অন্যান্য কোন মতবাদের গ্রন্থে এই ধর্ম শব্দটি পাওয়া যায় না।


🔴(২) ধর্ম কাকে বলে ?


🔥উত্তর:-

       যতো অভ্যুদয় নিঃ শ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্ম।

(তথ্যসূত্র - বৈশেষিক দর্শন/১ম অধ্যায়/১ম আহ্নিক/২ নং সূত্র)

🟪 অর্থ - যার মাধ্যমে যথাযথ উন্নতি তথা পরম কল্যাণ সাধিত হয়, তা ধর্ম বলে অভিহিত।

       সুতরাং ধর্ম হলো কল্যাণের মার্গ।


🔴(৩) ধর্মের লক্ষণ কেমন ?

🔥উত্তর:-

      ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং শৌচমিন্দিয় নিগ্ৰহঃ ।

ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্।।

(তথ্যসূত্র-মনুস্মৃতি/৬ নং অধ্যায়/৯২ তম শ্লোক)


🟪 অর্থ :- (১)ধৃতি(সর্বদা ধৈর্যরাখা) ,

(২)ক্ষমা,

(৩)দম(মনকে নিয়ন্ত্রণ রাখা),

(৪)অস্তেয় (চুরি তথা অনৈতিক কর্ম না করা),(৫)শৌচ(অন্তর ও বাহিরে শুদ্ধতা),

(৬)ইন্দ্রয় নিগ্ৰহ(ইন্দ্রিয় গুলিকে লোভনীয় বিষয় থেকে দূরে রাখা),

(৭)ধী(শাস্ত্র জ্ঞান),

(৮) বিদ্যা (ব্রহ্মবিদ্যা),

(৯) সত্য,

(১০) অক্রোধ (ক্রোধ না করা)।

                                 — এই হল ধর্মের দশটি লক্ষণ।


সুতরাং ধর্ম আমরা তাকেই বলতে পারি যার মধ্যে উপরোক্ত শুভ ও কল্যাণকর লক্ষণ গুলি রয়েছে। 


🔴(৪) সেই কল্যাণকর লক্ষণ যুক্ত ধর্মের নাম কি ? কোন শাস্ত্রে তার উল্লেখ আছে ?


🔥উত্তর:- ধর্মের নাম সনাতন যার উল্লেখ বেদ বেদান্তসার পরম পবিত্র শ্রী শিবমহাপুরাণেও রয়েছে। শ্রী শিব মহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতার উত্তরখণ্ডের অন্তর্গত ১০ তম অধ্যায়ের ৩০ নং শ্লোকে প্রভু পরমেশ্বর শিব মাতা পার্বতীদেবীকে বললেন —

জ্ঞানং ক্রিয়া চ চর্যা চ যোগেশ্চতি সুরেশ্বরী।

চতুষ্পাদঃ সামাখ্যাতো মম ধর্ম  সনাতন।।৩০

(তথ্যসূত্র :- শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তরখণ্ড/১০ অধ্যায়/৩০ নং শ্লোক)

🌷 অর্থ — হে সুরেশ্বরী পার্বতী। আমার (অর্থাৎ শিবের) ধারা প্রকাশিত যে সনাতন ধর্ম রয়েছে, তা চার পদযুক্ত (অর্থাৎ চারটি পা যুক্ত), যাদের নাম জ্ঞান(অর্থাৎ সত্য), ক্রিয়া, চর্যা ও যোগ।


    💥সুতরাং- শাস্ত্র প্রমাণসহ দেখা গেল ধর্ম হলো সনাতন, ধর্মের চারটি পদ রয়েছে। শাস্ত্র মতে এই চারটি পদ হলো শিববাহন বৃষভ নন্দী মহারাজের, এমনকি তার মধ্যে ধর্মের ১০টি লক্ষণ‌ই উপস্থিত। 

তাই এই কারণে ভগবান নন্দীকে সাক্ষাৎ ধর্মের মূর্ত প্রতীক বলা হয়েছে। প্রমাণ দেখুন 👇 


✅ শিব মহাপুরাণের বিদ্যেশ্বর সংহিতার ১৭ তম অধ্যায়ের ৮৫ থেকে ৮৭ নং শ্লোকে 

বলা হয়েছে —

তদূধর্বং “বৃষভো ধর্মো” ব্রহ্মচর্যস্বরূপধৃক্।

সত্যাদিধর্মযুক্তস্ত শিবলোকাগ্ৰর্তঃ স্থিতঃ ।।৮৫

ক্ষমাশৃঙ্গঃ শমশ্রোত্রো বেদধ্বনি বিভূষিতঃ।

আস্তিক্যচক্ষুর্নিশ্বাস গুরুবুদ্ধিমনা বৃষঃ।।৮৬

তং ক্রিয়া বৃষভং ধর্মং কালাতীতোহ ধিতিষ্ঠতি।।৮৭

(তথ্যসূত্র:-শিব মহাপুরাণ/ বিদ্যেশ্বর সংহিতা/অধ্যায় নং ১৭)

🌷 অর্থ —   ঊর্ধ্বে “বৃষভ নন্দীরূপী যে ধর্ম” রয়েছে, তা ব্রহ্মচর্য (অর্থাৎ দশ লক্ষণযুক্ত) এর মূর্ত প্রতীক। তার চার পদ (অর্থাৎ চার পা) হল সত্য অর্থাৎ জ্ঞান, ক্রিয়া, চর্যা ও যোগ। এই ধর্ম বৃষভ সাক্ষাৎ শিবলোকের দ্বারে অবস্থিত। তার শিং হলো- ক্ষমা, কান হলো-শম, তার গলার ঘন্টা হলো-বেদধ্বনি, চক্ষু দুটি আস্তিকতা, তার শ্রেষ্ঠ বুদ্ধি ও মন হলো-বিশ্বাস। এই ক্রিয়া ইত্যাদি ধর্মরূপী বৃষভ নন্দী, তিনি কারণের আদিতে অবস্থিত বলে অবগত হওয়া উচিত। এই ধর্মবৃষভ নন্দীর উপর কালের অতীত সেই পরমেশ্বর শিব আরোহন করে অধিষ্ঠিত আছেন।


বৈষ্ণবদের প্রাণপ্রিয় পদ্মপুরাণের ভূমিখণ্ডের ৬৯ অধ্যায়ের ৩নং শ্লোকে বলা হয়েছে —

অনন্তশাখাকলিতাঃ শিবমূলৈকসংশ্রিতাঃ।

জ্ঞানধ্যানসুপুষ্পাধ্যাঃ শিবধর্মঃ সনাতনঃ।।৩।।

[পদ্মপুরাণ/ভূমিখণ্ড/অধ্যায় ৬৯/৩]

🌷 অর্থ ঃ এই অস্তিত্বের বহু সম্প্রদায় রয়েছে কিন্তু, পরমেশ্বর শিবই সবকিছুর মূল। যে ধর্ম পরমেশ্বর শিবের নিকটে নিয়ে যায়, কেবল সেটিই সনাতন ধর্ম, এটি ধার্মিক কার্য আর জ্ঞানের শিক্ষা দেয়। ইহাই শিবধর্ম সনাতন।।


পদ্মপুরাণেও শিবধর্মের দশটি লক্ষণ মনুসংহিতায় উল্লেখিত ১০টি ধর্মলক্ষণের সাথে সম্পূর্ণভাবে মিলে গিয়েছে। সনাতনধর্মকেই শিবধর্ম বা শৈবধর্ম বলে।


                          — শাস্ত্র প্রমাণ সহ প্রমাণিত হলো নন্দী মহারাজ হলেন সাক্ষাৎ সনাতন ধর্ম সেই ধর্মের উপর পরমেশ্বর শিব আরোহন করেন (চড়ে বসেন), পরমেশ্বর শিব সনাতন ধর্মের প্রকাশ করেছেন। তাই সনাতন ধর্মকে শিবধর্ম বা শৈবধর্ম বলা হয়।

মনুসংহিতায় উল্লেখিত ধর্মের ১০টি লক্ষণ সম্পূর্ণ ভাবে  নন্দী মহারাজের মধ্যে সাঙ্কেতিক আকারে অবস্থিত। 

তাই শিববাহন বৃষভ নন্দী মহারাজ হলেন — সাক্ষাৎ সনাতন ধর্ম

------------------------------🌷🕉️🌷--------------------------------


✅ এবার দেখুন স্বয়ং সংহিতাই পরমেশ্বর শিবের বাহন নন্দী-বৃষভ মহারাজকে সাক্ষাৎ ‘ধর্ম’  বলে চিহ্নিত করেছেন ।


বৃষো হি ভগবান্ ধর্মস্তস্য যঃ কুরুতে হ্যলম্।

বৃষলং তং বিদুর্দেবাস্তস্মাদ্ধর্মং ন লোপয়েৎ ॥ ১৬

(তথ্যসূত্র : মনু সংহিতা/৮ম অধ্যায়/শ্লোক ১৬)

🌷 অর্থ — শিব বাহন ভগবান্ বৃষ নন্দী হলেন সাক্ষাৎ ধর্ম । তাঁকে যে বারণ করে তাকে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিগণ বৃষল বলেন; সুতরাং, ধর্ম লুপ্ত করবে না।


✅ শিবমহাপুরাণ ও মনুসংহিতার মতো শিবধর্মপুরাণ‌ও প্রভু শিবের বাহনকেই সনাতন ধর্ম বলে চিহ্নিত করেছেন, প্রমাণ দেখুন 👇 


ক্ষিতেঃপতির্বরয়ো দেবঃ সর্বধর্মোত্তমোত্তমঃ ।

ঈশং বহতি পৃষ্ঠেণ তস্মাৎ ধর্মো জগৎপ্রভুঃ ॥ ২৮

বৃষো বৃষপতিঃ শ্রীমান্ করোতু মম শান্তিকম্ ।..॥ ২৯

(তথ্যসূত্র : শিবধর্মপুরাণ‌/৬ষ্ঠ অধ্যায়)


🌷 অর্থ — (বৃষপতি ধর্মের ধ্যান) হে শিববাহন ! আপনি সর্বলোকের রাজা হবার কারণে আপনিই বরদাতা আর সমস্ত কিছুর মধ্যে সর্বোত্তম শিবের সনাতন ধর্ম আপনি । আপনার পৃষ্ঠভাগে(পিঠে) বসে থাকা সাক্ষাৎ ঈশ্বর পার্বতীপতি শিবকে আপনি বহন করেন, অতএব আপনিই ধর্ম জগৎপ্রভু । হে বৃষদেব ! সকল বৃষের স্বামী বৃষপতি বৃষভ-নন্দী মহারাজ ! আপনি আমাকে শান্তি প্রদান করুন ॥ ২৮-২৯


✅ স্কন্দ মহাপুরাণের 

আরো দেখুন 👇 

ধর্মরূপবৃষো ॥

 (তথ্যসূত্র - শ্রীস্কন্দমহাপুরাণ/ সূতসংহিতা/ মুক্তিখণ্ড/ চতুর্থ অধ্যায় /শ্লোক ৪২)


🌷 অর্থ — সনাতন ধর্মের সাক্ষাৎ রূপ হলেন বৃষভ (অর্থাৎ শিববাহন নন্দী মহারাজ)।


♦️ এমনকি বৃষ স্বয়ং সনাতন ধর্ম হবার কারণে, পরমেশ্বর শিব নিজের হাতে যে ধ্বজ(পতাকা/নিশান) ধারণ করেন, সেই ধ্বজেও বৃষ নন্দীর চিহ্ন থাকে, এই ধ্বজের নাম — বৃষভধ্বজ। তাই সাক্ষাৎ বেদেও পরমেশ্বর শিবের নাম বৃষধ্বজ বলা হয়েছে। প্রমাণ দেখুন 👇 

তেঽর্চয়ন্তি বৃষধ্বজম্ ॥ ৫

(তথ্যসূত্র : কৃষ্ণ-যজুর্বেদ/রুদ্রহৃদয় উপনিষদ/৫নং মন্ত্র)

অর্থ — তিনি পরমেশ্বর ‘বৃষধ্বজ শিবের‌ই’ অর্চনা করেছেন বলে জানা উচিত ।


[সনাতন ধর্মের ধ্বজে শিববাহন বৃষভ-নন্দীর‌ই চিহ্ন থাকে, এটি স্বয়ং বেদের বচন। আর ঐ ধ্বজ মহাদেবের হাতে থাকে বলে পরমেশ্বর শিব কে বৃষধ্বজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে ]


🔶 মহাশ্রুতি শৈব আগম শাস্ত্রেও এবিষয়ে কল্পান্তরের একটি কাহিনী বর্ণিত আছে।  সেখানে পরমেশ্বর শিব নিজের ‘বৃষভবাহন’ নাম উৎপত্তির বিষয়ে বলতে গিয়ে দেবীকে যে কাহিনী বলেছিলেন, তা দেখুন 👇 

পুরা কল্পাবসানে হি সর্বং সংহৃত্য শঙ্করঃ।
কৃত্বোমাং সাক্ষির্ণী তস্মিন্নেক এব চচার হ॥ ১৫

দৃষ্ট্বা ধর্মস্তথাভূতং সর্বসংহারকারণম্।
নাশয়েন্মামিতি ভয়াৎ তং রুদ্রং শরণং গতঃ॥ ১৬

অনুগৃহ্য তু তং দেবো বাহনত্বে নিয়ুক্তবান্।
তস্য নিত্যত্বমাজ্ঞাপ্য তেনাহং বৃষবাহনঃ॥ ১৭

[তথ্যসূত্র : মহাশ্রুতি/সূক্ষ্ম আগম/দ্বিতীয় পটল/১৫-১৭]

অর্থ — প্রাচীনকালের একটি গল্প যে কল্পের শেষে, ভগবান শিব সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করেছিলেন। সেই সময়, কেবল দেবীকে সাক্ষী রেখে, তিনি একাকী ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন। ॥১৫॥

সকল কিছু এভাবে ধ্বংস হতে দেখে ধর্ম ভীত হয়ে পড়েন এবং মনে করেন যে হয়তো তিনি যদি তাকেও(ধর্মকেও) ধ্বংস করে দেন, তাই তিনি (ধর্ম) নিজেকে রক্ষা করার জন্য সকলের বিনাশকারী ভগবান রুদ্রের শরণাপন্ন হন। ॥ ১৬ ॥

তাঁর প্রতি করুণা প্রদর্শন করে, ভগবান শিব ধর্মকে চিরকালের জন্য নিজের বাহন করে নিয়েছিলেন। এই কারণেই আমি(শিব) হলাম বৃষবাহন। ॥১৭


_____________________________________________


 🚩 সিদ্ধান্ত  — স্বয়ং নন্দী মহারাজ হলেন সাক্ষাৎ সনাতন ধর্ম  আর পরমেশ্বর শিব হলেন একমাত্র সত্য ও সনাতন।

যারা সনাতন ধর্ম বলে গর্বিত বোধ করেন, তাদের প্রত্যেকর উচিত পরমেশ্বর শিবের চরণে আশ্রয়ে নিয়ে শিববাহন নন্দীর সেবা করা ।

পরমেশ্বর শিব ও বৃষভ নন্দীকে এড়িয়ে সনাতন ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করা যেন ঠিক তেমন, যেমন - মরুভূমিতে গিয়ে গঙ্গা জল খুঁজে বেড়ানো । 

যে ব্যক্তি ধর্মকে রক্ষা করে, ধর্ম‌ও তাকে রক্ষা করে (মনু স্মৃতি/অধ্যায় ৮/১৫নং শ্লোক)

অর্থাৎ , যে ব্যক্তি ধর্মের পথে থেকে ধর্মের রীতিনীতি, পদ্ধতি, সংস্কার ও আদর্শকে মান্য করে ধর্মকে অব্যাহত রাখেন, ঐ ধর্মের নীতি আদর্শ মেনে চলবার কারণেই সেই ব্যক্তির কোনো সর্বনাশ হয় না। 


পরমেশ্বর শিব প্রকৃত ধার্মিক সনাতনী ব্যক্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন —

ধর্মসূক্ষ্মার্থবেত্তারো দুর্লভা গিরিকন্যকে।

সদাশিবস্য বদনৈঃ সদ্যোজাতাদিসংশ্রিতৈঃ ॥৬৩

আগমাঃ পঞ্চভিঃ প্রোক্তা অষ্টাবিংশতিকোটয়ঃ।

নির্ণয়াঃ শিবভক্তানাং শিবমার্গস্য শোভনাঃ ॥ ৬৪

তেষু তেষু মুনীন্দ্রৈশ্চ নত্বৈব প্রতিপদ্যতে।

কালো মুখঞ্চ কঙ্কালং শৈবং পাশুপতং তথা ॥ ৬৫

মহাব্রতং পঞ্চ চৈতাঃ শিব-মার্গ প্রবৃত্তয়ঃ।

ভেদাশ্চ বঽবস্তেষামন্যোন্যস্য শিবে রতাঃ ॥ ৬৬॥

সাধ্য একো হি বলবান্ সর্ব্বৈস্তৈরনিশং শিবঃ।

সর্ব এব সদা পূজ্যাঃ স্বধর্ম্মপরিনিষ্ঠিতৈঃ ॥ ৬৭ ॥ 

অমৎসরৈঃ শিবে ভক্তঃ শিবাজ্ঞাপরিপালকৈঃ ।

বেদৈশ্চ বহুভির্যজ্ঞৈর্ভক্ত্যা চ পরয়া শিবঃ ॥ ৬৮

আরাধ্যতে মহাদেবঃ সর্বদা সর্বদায়কঃ ।

জীবহিংসা ন কর্তব্যা বিশেষেণ তপস্বিভিঃ ॥ ৬৯

শিবধৰ্মস্য ভেত্তারো নিহন্তব্যাস্তথাঞ্জসা।

ন বেষজুষি বীক্ষেত ন লিঙ্গং নৈব সম্ভবম্ ॥ ৭০

শিবধৰ্মস্য ভেত্তারং হন্যাদেবাবিচারয়ন্ ।

বহুভিঃ স্ফূর্ত্তয়া বুদ্ধ্যা ধৰ্মবিদ্ভির্নিরূপিতে। ৭১ ৷

(স্কন্দমহাপুরাণ/মাহেশ্বরখণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য/পূর্বার্দ্ধ/১১ অধ্যায়/৬৩-৭১নং শ্লোক)

অর্থ ঃ হে গিরিকুমারি ! ধর্মের সূক্ষ্মার্থবেত্তা দুর্লভ। সদাশিবের সদ্যোজাতাদি পাঁচমুখ থেকে ২৮ টি আগম প্রকট হয়েছে । এই সমস্ত আগমে শিব ভক্তগণের শিবের উত্তম শৈবমার্গ নির্দিষ্ট হয়েছে । সেই সকল আগমের অর্থ নির্ণয় বিষয়ে মুনিগণেরাও সমর্থ্য নন । কাল, মুখ, কঙ্কাল, পাশুপত তথা অনান্য শৈব মার্গ হল পঞ্চ মহাব্রত পরম্পরা । এগুলি আবার পরস্পর বহু উপধারায় বিভক্ত রয়েছে, কিন্তু যতই ভেদ কথিত হোক না কেন, একমাত্র পরমেশ্বর শিব‌ই সমস্ত রকমের পরম্পরার ব্রতের সাধ্য আরাধ্য লক্ষ্য । শিবের আজ্ঞা প্রতিপালক স্বধর্মে নীরত থাকা ‌অমৎসর(অহিংসকারী) ব্যক্তিগণ সমস্ত শিব ভক্তকেই পূজা করে থাকেন। বহুভেদ ও যোগ দ্বারা পরম ভক্তি সহকারে সর্বদায়ক মহাদেব সর্বদা আরাধনীয় । বিশেষত তপস্বীগণের কখনো জীব হিংসা কর্তব্য নয় । কিন্তু যারা শিবধর্মকে হিংসা করে, তাদের তৎক্ষণাৎ বধ করাই কর্তব্য । যারা কেবলমাত্র ছলনা করবার জন্য শিবভক্তের বেশ ধারণ করে, কিন্তু আত্মলিঙ্গের আত্মজ্ঞান সম্পন্ন নয়, তারা শিবধর্মের অপমানকারী, এই ধরনের ব্যক্তিদের জেনে অন্য কিছু বিচার না করে বধ করবে । কারণ, ধর্মবিদ ব্যক্তিগণ প্রশস্ত বুদ্ধির দ্বারা শিবধর্ম নির্দিষ্ট করেছেন ॥ ৬৩-৭১

এই শিবধর্মের এত গুরুত্ব কেন শাস্ত্রে রয়েছে ? কারণ

এই শিবধর্ম‌ই হল প্রকৃত পক্ষে সনাতন ধর্ম নামে পরিচিত বর্তমানে, তাই শিবধর্ম‌ই সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রমাণ দেখুন 👇 

🚩 শ্রীনন্দীকেশ্বর উবাচঃ- 

ধর্মাণামোত্তমো ধর্মঃ শিবধর্মঃ সনাতনঃ।

সর্বোত্তমোত্তমত্বেন যথা গীতঃ সদাশিবঃ॥ ১৭ ॥

যথা সাম্বো মহাদেবঃ সর্বদেবশিখামণিঃ।

তথাঽয়ং শিবধর্মোহপি সর্বধর্মশিরোমণিঃ॥ ১৮ ॥

শিবধর্মাৎপরো ধর্মো নাস্তি ন শ্রূয়তেহপি চ।

সত্যমেতৎ পুনঃ সত্যমুদ্ধৃত্য ভুজমুচ্যতে॥ ১৯ ॥

শিবধর্মান্যধর্মেষু ধর্মাভাসত্বনিশ্চয়াৎ।

তদ্ধর্মাচরণাৎ কিং বা ফলং সম্ভাবিত সুরাঃ॥ ২০ ॥

শিবধর্মানবিজ্ঞান্য ধর্মাভাসরতা নারাঃ।

কুর্বন্তু তান্ বিমোহেন ন তেব্যঃ ফলমশ্রুতে॥ ২১ ॥

[তথ্যসূত্রঃ- শিবরহস্য মহাইতিহাস/ ৩য় অংশ/পূর্বার্ধ/ অধ্যায় ৩১]

অর্থ — “সমস্ত ধর্মের মধ্যে শিবধর্মই সর্বোচ্চ — যা সনাতন ধর্ম নামে পরিচিত। সদাশিব স্বয়ং ঘোষণা করেছেন, এটি সর্ব উত্তমেরও সর্বোত্তম।”

 “যেমন সাম্বসদাশিব (মহাদেব) সকল দেবতার শিরোমণি,

তেমনই এই শিবধর্ম সকল ধর্মের মুকুটমণি।”

অর্থঃ- “শিবধর্মের চেয়ে উচ্চতর কোনো ধর্ম নেই, এমন কিছু কখনও শোনা যায় না।

এটি সত্য — আবারও বলছি, এটি সত্য — উঁচু হাত তুলে এই ঘোষণা করা হয়েছে।”

 “শিবধর্মের তুলনায় অন্য যেসব তথাকথিত ধর্ম রয়েছে, সেগুলি শুধু ধর্মের আভাসমাত্র — এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।

হে দেবগণ, এমন অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ধর্মগুলি পালন করে সত্যিই কী ফল লাভ করা সম্ভব?

যে সমস্ত মানুষ শিবধর্ম না জেনে, মোহবশত ধর্মের ছায়াস্বরূপ কর্মকাণ্ডে(অনান্য শাখারূপী সম্প্রদায়ের বিধিবিধান মান্য করতে ও তাতে) লিপ্ত থাকে —

তারা এসব করতেই পারে, কিন্তু সেগুলোর ফল তারা লাভ করবে না।”


তাই আসুন আমরা সকলে এই সত্যকে স্বীকার করি। সত্যের পথে চলি । 

 যাতে আমাদের ইহকাল এবং পরকাল শিবময় হয়। কারণ আমাদের অন্তিম গন্তব্য হলো একমাত্র পরমেশ্বর শিব । তিনি ভিন্ন আমাদের সনাতনীদের রক্ষার জন্য দ্বিতীয় অন্য কোনো রক্ষাকর্তা নেই।


বৃষভ নন্দী মহারাজের জয় 

পরমেশ্বর শিবের জয় 

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 

হর হর মহাদেব


চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর পাহিমাম্ 🙏

চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর চন্দ্রশেখর রক্ষমাম্  🙏


এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে 

এই লিংক -এ ক্লিক করুন 👇

https://youtu.be/R_1yrCnst5I?si=_i9vk76M9ze0MqOo


তথ্য সংগ্রহ সহ লেখনীতে - শ্রী নন্দীনাথ শৈব  আচার্য

🔹লেখনী পুনঃ সংগ্রহে - বিজয়নাথ শৈব (ISSGT)


🔴 ©️ কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 

#ISSGT #শৈবধর্ম #ধর্ম #সনাতন #সনাতনধর্ম #SanatanaDharma #hindu #hindudharm

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ