সর্ব শাস্ত্রের সর্বোচ্চ ও অন্তিম সিদ্ধান্ত সার হল পরমেশ্বর শিবের মুখ নিঃসৃত বানী — শৈব আগম
শৈব আগম সিদ্ধান্তের ঊর্ধ্বে আর অন্য কোন সিদ্ধান্ত নেই অর্থাৎ শৈব আগম-ই হলো সর্বসার সিদ্ধান্ত – শ্রুতি ও অনান্য শাস্ত্রসহ আচার্যবচনের নিরিখে তার প্রামাণিকতা বিচার —
ॐ গাং গণপতয়ে নমঃ 🙏
ॐ দক্ষিণামূর্তয়ে নমঃ 🙏
👉সর্বপ্রথম আমরা দেখে নেব শৈব আগমের উৎপত্তি ও মহিমা সম্পর্কে স্কন্দমহাপুরাণে কি বলা হয়েছে —
"আগমাঃ পঞ্চভিব প্রোক্তা অষ্টাবিংশতিকোটয়ঃ"
[স্কন্দমহাপুরাণ/মহেশ্বর খণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য /পূর্বাদ্ধ/অধ্যায় ১১/৬৪নং শ্লোক]
✅ অর্থ — ২৮ টি শৈবাগমের উৎপত্তি পরমেশ্বর সদাশিবের পাঁচ মুখ থেকে হয়েছে।
(সদাশিবের ৫ মুখের থেকে উৎপত্তি হওয়ার জন্যই শৈবাগমকে শ্রুতি মান্য করা কর্তব্য)
সাংগবেদা ধর্মশাস্ত্রং পুরাণানি শিবাগমাঃ।
কল্যা সকলাঃ প্রোক্তা ভবতৈব ভবাদয়োঃ।।৪৫
নিশ্রেয়সায় ভক্তানোং যচৈব গুরুরুপিনা।
অষ্টাবিংশতিরাখ্যাতা আপমা শৈবসংজিতাঃ।।৪৬
[স্কন্দমহাপুরাণ/মহেশ্বর খণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য/অধ্যায় ২/৪৫-৪৬ নং শ্লোক]
✅ অর্থ — হে ভব! বেদ, ধর্মশাস্ত্র, পুরাণ, শিবাগম- এই সব শাস্ত্র আপনিই (পরমেশ্বর শিব) রচনা করেছেন, এবং আমাকে বলেছেন। ভক্তদের কল্যাণের জন্য, তাদের মুক্তির জন্য, শৈব বলা হয় এমন ২৮ টি আগমের উপদেশ আপনিই গুরুরূপে প্রদান করেছেন।।
কামিকাদিপ্রভেদানাং যথা দেবো মহেশ্বরঃ ।। ১২
[স্কন্দমহাপুরাণ/সূতসংহিতার/শিবমাহাত্ম্য খণ্ড/১ম অধ্যায়/১২নং শ্লোক]
✅ অর্থ — কামিকাদি আগমের রচিয়তা হলেন মহেশ্বর ।
"নাস্তি শাস্ত্রং শিবাগমাৎ"
[স্কন্দমহাপুরাণ/মহেশ্বর খণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য/অধ্যায় ৪/৫৭নং শ্লোক]
✅ অর্থ — শৈব আগমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অন্য কোনো শাস্ত্র নেই ।
অর্হাগমোদিতাদ্ধর্মাব্যাজাপত্যাগমোদিতঃ।
ধর্ম শ্রেষ্ঠ ইতি প্রোক্তঃ সর্বধর্মার্থবেদিভিঃ।।১৮।।
প্রাজাপত্যাগমপ্রোক্তাদ্ধর্মাদ্বেদবিদাং বরাঃ।
সদা শ্রেষ্ঠ ইতি প্রোক্তো ধর্মো বিষ্ণবাগমোদিতঃ।।১৯
বিষ্ণবাগমোদিত্তাদ্ধর্মাদশেষাদাস্তিকোত্তমাঃ।
শৈবাগমোদিতো ধর্মো বরিষ্ঠী নৈব সংশয়ঃ।
শৈবাগমোদিতো ধর্মো দ্বিধা পূর্বামুদীরিতঃ।।২০
[স্কন্দমহাপুরাণ/সূতসংহিতা/যজ্ঞবৈভব খণ্ড/অধ্যায় ২০/১৮/২০নং শ্লোক]
✅ অর্থ — এখন ঋষিগণেরা ষন্মুখ কার্তিকেয়জীকে সর্বোচ্চ ধর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো! কার্তিকেয় জী এই ঘোষণা করেছেন যে, জৈনধর্মের অপেক্ষা ব্রহ্মা দ্বারা প্রোক্ত আগমে বলা ধর্ম শ্রেষ্ঠ। তার অপেক্ষা বৈষ্ণব আগমের অনুসরণ শ্রেষ্ঠ। তার চেয়েও শৈব আগমের ধর্ম নিঃসন্দেহে পরমতম শ্রেষ্ঠ ।
নন্দী মহারাজের উদ্দেশ্যে মার্কণ্ডেয় মুনি বলছেন,
ত্বয়াপ্যবিদিতং কিঞ্চিন্নাস্ত্যত্র ভুবন ত্রয়ে ।
সর্ব আগম পুরাণেষু বাহ্যেষাভ্যন্তরেষু চ ॥ ৫
জ্ঞানযোগ ক্রিয়া চর্য্যাস্বশেষাণাং শরীরিণাম্ ।
অপি শৈবাগমোক্তাসু ন বুদ্ধিঃ সম্প্রবর্ত্ততে॥ ১১
[স্কন্দমহাপুরাণ/মাহেশ্বরখণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য/ উত্তরার্দ্ধ/১ম অধ্যায়/৫নং শ্লোক]
অর্থ — হে নন্দী মহারাজ ! এই ত্রিভুবনে গুহ্যাগুহ্য নিখিল সকল আগমশাস্ত্র ও পুরান শাস্ত্রের বিনয়ে আপনার অজানা কিছুই নেই ।
শৈব আগমোক্ত জ্ঞান,যোগ, ক্রিয়া, চর্যা — বিষয়ের উপর মনুষ্যগণের বুদ্ধি সহসা প্রবেশ করে না।
তস্মাদস্তি মহাদেব এবং সাক্ষাৎস্বয়ংপ্রভুঃ ।
আনন্দরূপঃ সম্পূর্ণো ন ততোঽন্যত্তু কিংচন ॥৬৬॥
ইয়মেব তু তর্কাণাং নিষ্টাকাষ্টা সুরোত্তমাঃ ।
প্রত্যক্ষাদিপ্রমাণানাং বেদান্তানামপীশ্বরাঃ ॥৬৭॥
স্মৃতীনাং চ পুরাণানাং ভারতস্য তথৈব চ।
বেদানুসারিবিদ্যানামন্যাসামাস্তিকোত্তমাঃ ॥৬৮॥
শৈবাগমানাং সর্বেষাং বিষ্ণুপ্রোক্তাগমস্য চ।
অস্মদুক্তাগমস্যাপি সুরাঃ সূক্ষ্মনিরূপণে ॥৬৯॥
বুদ্ধাগমানাং সর্বেষাং তথৈবার্হাগমস্য চ ।
যক্ষগন্ধবৈসিদ্ধাদিনির্মিতস্যাঽ ঽগমস্য চ ॥৭০॥
পরমাদ্বৈতবিজ্ঞানং কস্য মর্ত্যস্য সিধ্যতি ।
কস্য দেবস্য বা সাক্ষাচ্ছ্যিস্যৈব হি সিধ্যতি ॥৭১॥
পরমাদ্বৈতবিজ্ঞানং শিবস্যামিততেজসঃ ।
স্বভাবসিদ্ধং দেব্যাশ্চ শিবায়া আস্তিকোত্তমাঃ ॥৭২॥
[স্কন্দ মহাপুরাণ/সূত সংহিতা/ব্রহ্ম গীতা/অধ্যায়-৪ বিদ্যারণ্য ভাষ্য]
✅ অর্থ — অতএব, এটা স্বীকৃত যে সর্বব্যাপী, আনন্দময়, সর্বব্যাপী ভগবান মহাদেব-ই হলেন পরোক্ষ স্বয়ংসম্পূর্ণ আনন্দ। চূড়ান্ত পরীক্ষার যুক্তিও একই উপসংহার টেনে আনে। প্রত্যক্ষ প্রমাণ, বেদান্ত এবং ধর্মগ্রন্থগুলিও এটি নিশ্চিত করে। যদি আমরা স্মৃতি, পুরাণ, মহাভারত, জ্ঞানের সকল শাখা, শৈব আগম, বিষ্ণু-প্রবর্তিত আগম (পঞ্চরাত্র এবং বৈখানস), ব্রহ্ম আগম, বৌদ্ধ(ও জৈন)আগম এবং যক্ষ, গন্ধর্ব, সিদ্ধ ইত্যাদি দ্বারা রচিত আগমগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করি তবে দেখা যাবে তাদের সারমর্ম কেবল অদ্বৈতবাদী শিবের মধ্যেই নিহিত। পরম অদ্বৈততার জ্ঞান কোনও মানুষ বা দেবতার কাছে নেই (কারণ তাদের অস্তিত্ব নেই), তবে এটি কেবল শিবের মধ্যেই অন্তর্নিহিত, কারণ শিব এবং উমা স্বাভাবিক ভাবে অদ্বৈততার সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী।
শব্দাতীতং নির্গুণং নির্বিকারং সত্তামাত্রং জ্ঞানগম্যং ত্বগম্যম্।
যত্তদ্বস্ব সর্বদা কথ্যতে বৈ বেদাতীতৈশ্চাগমৈর্মন্ত্রভূতৈঃ ॥ ৩৬
তদ্বস্বভূতো ভগবান্ স ঈশ্বরঃ পিনাকপাণির্ভগবান্ বৃষধ্বজঃ।
যেনৈব সাক্ষান্মকরধ্বজো হতস্তপো জুষাণঃ পরমেশ্বরঃ সঃ ॥ ৩৭
[স্কন্দ মহাপুরাণ/মাহেশ্বর খণ্ড/কেদার খণ্ড/অধ্যায় ২২/শ্লোক-৩৬]
✅ অর্থ — এটি সমস্ত শব্দ এবং শব্দের উর্ধ্বে; এর কোন গুণ, ক্ষয়, অবক্ষয় নেই। এটি বিশুদ্ধ অস্তিত্বের প্রকৃতি যা নিখুঁত জ্ঞানের মাধ্যমে বোঝা যায়। এটা অর্জন করা সহজ নয়। এটিই সেই বাস্তবিক বস্তু যা শৈব আগমগুলিতে উল্লেখ রয়েছে যা বেদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং মন্ত্রগুলির মূল বাচ্য ॥ ৩৬
সেই বস্তু হলেন ভগবান নামে বিখ্যাত ঈশ্বর পিণাকপাণি ভগবান বৃষধ্বজ । সেই পরমেশ্বর বৃষধ্বজ শিবই তপস্বীর বেশ ধারণ করে মকরধ্বজকে নিহত করেছিলেন ॥ ৩৭
পরিজ্ঞা য মহাদেবং গুরুবাক্যত আগমাৎ ।
হর্ষবাষ্পাকুলঃসন্নকণ্ঠোরোমাঞ্চকঞ্চুকঃ ॥ ১৫০
[স্কন্দ মহাপুরাণ/কাশী খণ্ড/পূর্ব/অধ্যায় -১১/শ্লোক ১৫০]
✅ অর্থ — ‘গৃহপতি’ তাঁর গুরুর বলা বাক্য এবং শৈব আগম থেকে প্রাপ্ত অংশগুলির মধ্যে বলা শিবের বৈশিষ্ট্য গুলি স্মরণের মাধ্যমে পরমেশ্বর মহাদেবকে দেখে চিনতে পেরে হর্ষযুক্ত হয়ে ফুঁপিয়ে উঠছিলেন, তার কণ্ঠ যেন গদগদ হয়ে সমস্ত শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছিলেন ।
---------------------------------------------------------------------
👉এবার আমরা দেখে নেব শৈব আগমের উৎপত্তি ও মহিমা সম্পর্কে শিবমহাপুরাণে কি বলা হয়েছে —
"শ্রীকণ্ঠেন শিবেনোক্ত শিবায়ৈ চ শিবাগমঃ"
শিবাশ্রিতানাং কারুণ্যাচ্ছেয়সামেকসাধনম্।।৩৯
[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তরভাগ/অধ্যায় ৭/৩৯নং শ্লোক]
✅ অর্থ — শ্রীকণ্ঠ শিব দ্বারা মাতা পার্বতীকে দেওয়া জ্ঞানকে আগম বলা হয়, শৈব আগম শিবভক্তদের জন্য মুক্তির একমাত্র সাধন।।
"শৈবাগমৈস্তু সম্পন্নঃ সহাংগোপাংবিস্তরঃ"
[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/পূর্বভাগ/অধ্যায় ৩২/১০নং শ্লোক]
✅ অর্থ — শৈবাগমে সকল প্রকার জ্ঞান নিহিত রয়েছে।।
"শ্রুতিসারময়ঃ"
[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/পূর্বভাগ/অধ্যায় ৩২/১১নং শ্লোক]
✅ অর্থ — শৈবাগম স্বয়ং শ্রুতির সারতত্ত্ব।।
শিবাজ্ঞানার্ণবং সাক্ষাৎ ভুক্তিমুক্তিফলপ্রদ।।
শব্দার্থন্যাযসংযুক্তৈরাগমার্থৈর্বিভূষিতম।২২-২৩
[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/পূর্ব খণ্ড/অধ্যায় ১/২২-২৩নং শ্লোক]
✅ অর্থ — শিববিষয়ক জ্ঞানের সমুদ্র স্বাক্ষাৎ ভুক্তি মুক্তিফলপ্রদ এবং শব্দ,অর্থ, ন্যায় আদি তর্কসংগত অভিপ্রায় বলে শৈবাগমোক্ত সিদ্ধান্তে বিভুষিত।
শিবং শিবাগমং দিব্যং পুজয়েৎ শিববদগুরু ।।১৩
[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/উত্তরভাগ/অধ্যায়২০/১৩নং শ্লোক]
✅ অর্থ — স্বয়ং শিবের ও গুরুর রূপ হল শৈব আগম, এমনটা জেনে শৈবাগমের পূজা করা উচিত।।
________________________________________
🟪 শৈবাগমের মধ্যে ভেদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, শৈবাগম দুই প্রকারের হয় - অধঃস্রোতোদ্ধব ঊর্দ্ধস্রোতোজয়। (শৈবাগমের উৎপত্তি শিব থেকেই মানা হয়)
শৈবাগমো হি দ্বিবিধঃ শ্রৌতো ঽশ্রৌতশ্চ সংস্কৃতঃ।
শ্রুতিসারময়ঃ শ্রৌতস্বতন্ত্র ইতরো মতঃ।।১১
[শিবমহাপুরাণ/বায়বীয় সংহিতা/পূর্বভাগ/অধ্যায় ৩২/১১ নং শ্লোক]
✅ অর্থ — শৈব আগমের দুইটা ভেদ — শ্রৌত আর অশ্রৌত। যে আগম, শ্রুতির সার তত্ত্ব সম্পন্ন হয়, তাকে সংস্কার সম্পন্ন শ্রৌত বলা হয়; আর যে আগম, স্বতন্ত্র হয়, তাকেই অশ্রৌত মানা হয়।।
------------------------------------------------------------------------------
👉এখন আমরা দেখে নেব শৈব আগমের প্রামাণ্যতা সম্পর্কে শৈব পরম্পরাগত গ্রন্থ তে কি বলা হয়েছে —
পাঞ্চরাত্রস্য সাংখ্যস্য যোগস্য চ তথা মুনে।
বেদৈকদেশবর্তিত্বং শৈবং বেদময়ং মতম্।।৬
বেদৈকদেশবর্তিভ্যঃ সাংখ্যাদিভ্যো মহামুনে
সর্ববেদানুসারিত্বাচ্ছেবতন্ত্রং বিশিষ্যতে।।৭
শৈবতন্ত্রমিতি প্রোক্তং সিদ্ধান্তাখ্যং শিবোদিনম্।
সর্ববেদার্থরূপত্বাৎ প্রামাণ্যং বেদবৎ সদা।।৮
[সিদ্ধান্ত শিখামণী/৫/৬-৮ নং শ্লোক]
✅ অর্থ — হে মুনে! পাঞ্চরাত্র, সাংখ্য আর যোগ এইসব বেদের একটা ভাগকেই মানে, অতঃ এগুলো অংশত বৈদিক অথবা অর্ধবৈদিক। কিন্তু শৈবসিদ্ধান্ত পূর্ণত বেদময় পূর্ণবৈদিক।
হে মহামুনে! বেদের এক ভাগকে মান্যতা দেওয়া সাংখ্য আদি অপেক্ষা সম্পূর্ণ বেদের অনুসরণ করার জন্যই শৈবশাস্ত্র বিশিষ্ট হয়।
শিবের দ্বারা উপদিষ্ট সিদ্ধান্ত৷ নামক তন্ত্রকেই শৈবতন্ত্র বলা হয়। সম্পূর্ণ বেদের তাৎপর্যরূপ হওয়ার কারণে আগমের প্রামাণ্য সদা বেদের সমমান হয়।।
বেদধর্মাভিধায়িত্বাৎ সিদ্ধান্তাখ্যাঃ শিবাগমঃ।
বেদবাহ্যবিরোধিত্বাদ্ বেদসম্মত উচ্চতে।।১২
বেদসিদ্ধান্তযোরৈক্যমেকার্থপ্রতিপাদনাৎ।
প্রামাণ্যং সদৃশং জ্ঞেয়ং পণ্ডিতৈরেতয়োঃ সদা।।১৩
[শ্রী সিদ্ধান্ত শিখামণী/ পরিচ্ছেদ ৫/১২-১৩ নং শ্লোক]
✅ অর্থ — সিদ্ধান্ত নামক শিবাগম বেদোক্ত ধর্মের প্রতিপাদক তথা বেদবাহ্য বিরোধী হওয়ার কারণে বেদসম্মত বলা হয়।।
এক অর্থ অর্থাৎ সমান বিষয়ের প্রতিপাদক করার কারণে পণ্ডিত লোকদের বেদ আর শৈবসিদ্ধান্ত এই দুইয়ের প্রামাণ্য এক সমান বুঝতে হবে।।
--------------------------------------------------------------------
👉শৈব আগমের শৈব পরম্পরাগত ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতার সম্পর্কে তে কি বলা হয়েছে, দেখুন —
ভুখননোপলধ্বস্য প্রাগৈতিহাসিকসংস্কৃতিসুচকস্য
বস্তুজাতস্যোপরি দৃষ্টিনিক্ষেপে কৃতে এবং নিশ্চয় জায়তে যচ্ছেবাগম পরম্পরায়াঃ সত্তাঽস্মাৎ কালাৎ পঞ্চসংহস্রবর্ষপূর্ব
'হরপ্পা-মোহেঞ্জোদড়োং সংস্কৃতিনাং সময়ে আসীদিতি।
[আগম মীমাংসা]
✅ অর্থ – প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির সংকেত দেওয়া খননের দ্বারা প্রাপ্ত বস্তুর দ্বারা অবলোকনের দ্বারা নির্ধারিত হয় যে, শৈবাগম পরম্পরার অস্তিত্ব ন্যূনতম ৫০০০ বছর পুরোনো 'হরপ্পা-মোহেনজোদাড়ো' সভ্যতার সময়ের।।
------------------------------------------------------------------------------
👉এখন আমরা দেখে নেব শৈব আগমের প্রামাণ্যতা সম্পর্কে স্মৃতি শাস্ত্র তে কি বলা হয়েছে —
ঈশেন রচিতং শাস্ত্রং অষ্টবিংশতিসংখ্যয়া ।
তথৈব বৈষ্ণবং চাপি ব্যামোহায় পুরা কৃতম্।
সুগতানাং রাক্ষসানাং দেবদেবন বিষ্ণুবা ॥ ১১
তদেতদখিলং তস্মাৎ শাস্ত্রং তদ্ দ্বিবিধং পরম্।
ব্যামোহকং পরিত্যাজ্যং তারকং পরিগৃহ্য বৈ ॥ ১২
(তথ্যসূত্র - মার্কণ্ডেয় স্মৃতি/বেদেতরমুক্তিবর্ণন/১১-১২ নং শ্লোক)
✅ অর্থ — পরমেশ্বর ঈশান শিব ২৮ টি শৈব আগমশাস্ত্র রচনা করেন তথা অতীতকালে বিষ্ণুদেব বৈষ্ণবদের জন্য মোহিত করবার জন্য পাঞ্চরাত্র শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। শ্রীবিষ্ণু মূলত ভয়ঙ্কর রাক্ষসদের নাশ করবার নিমিত্তে এই মোহনাত্মক পঞ্চরাত্র রচনা করেছিলেন । এই অখিল জগতে বিভিন্ন রকমের শাস্ত্র উপস্থিত রয়েছে। তার মধ্যে পঞ্চরাত্রের মতো আরো যে সমস্ত অনান্য মোহশাস্ত্র আছে সেসব পরিত্যাজ্য করে যে সমস্ত তারক শাস্ত্র অর্থাৎ পরমমুক্তি প্রদানকারী বেদ সহ শৈব আগমাদি আছে সর্বদা তা গ্রহন করা উচিত ॥ ১১-১২
🟥 বৈদিক ঋষিগণ শৈব আগম শাস্ত্রেরও অনুসারী ও বিদ্বান ছিলেন -
রুদ্রবিধিং বিধিশ্রেষ্ঠং কুর্যাদ্বিপ্রঃ শিবেরিতঃ।
শৈবাগমবিশেষজ্ঞো বেদ-বেদাঙ্গ পারগঃ।।১৬৯
[বৃহৎ পরাশর সংহিতা/১১শ অধ্যায়/১৬৯ শ্লোক]
✅ অর্থ - শিবেরিত তথা শিবানুরাগী বিপ্রকৃত রুদ্রবিধি হলো সকল বিধিশ্রেষ্ঠ এবং শৈব আগমে বিশেষজ্ঞ সকল বেদবেদাঙ্গেও পারদর্শী।
------------------------------------------------------------------------------
👉এবার আমরা দেখে নেব স্বয়ং শৈব আগমে কি বলা হয়েছে —
গারূডং ভূততন্ত্রং চ ভৈরবং বামতন্ত্রকম্ ॥
কাপোলং পাঞ্চরাত্রং চ লাকুলং কুলশাস্ত্রকম্ ।
তন্ত্রং পাশুপতং চান্যৎ পুরাণং ধর্মশাস্ত্রকম্ ॥
ইতিহাসং পডঙ্গং চ ঋগ্যজুস্সাম সংজ্ঞকম্ ।
অধর্বণং তথা বৌদ্ধং আর্হতং মতমেব চ ॥
ঊর্ধ্বস্রোতোऽক্ষপাচ্ছাস্ত্রাদপরং তদনুক্রমাৎ ।
[(মহাশ্রুতি) কামিক আগম ১.১.১১২-১১৪]
✅ অর্থ – ভৈরব, বামা তন্ত্র, কপাল শাস্ত্র, পঞ্চরাত্র শাস্ত্র, লকুলা শাস্ত্র, কুল পরম্পরার শাস্ত্র, পাশুপত তন্ত্র, পুরাণ, ধর্ম শাস্ত্র, ইতিহাস, বেদের ছয়টি অঙ্গ- ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, বৌদ্ধ এবং অর্হত তন্ত্র দ্বারা সম্বন্ধীয় গ্ৰন্থ এইসব আগমের দৃষ্টিকোণ থেকে 'নিকৃষ্ট' শ্রেণীর (অপরা) অন্তর্গত পড়ে, যা উর্ধ্ব শ্রোত (উপরের মুখ থেকে নির্গত গ্রন্থ) রূপে পরিচিত। যার প্রামাণিকতাকে কম করা অসম্ভব ।
ঐশ্বরং যদ্ভবেদ্বাকাং তৎপূজ্যং মতমুত্তমঃ ।
ন পুম্ভিরার্ষকং বাক্যং দৈবিকং ঋষিভিস্তথা ॥
ন দেবৈঃ ব্রহ্মণো বাক্যং বৈষ্ণবং পদ্মজেন বা ।
নং শৈবং বিষ্ণুনা বাকাং বাধ্যতে ন কদাচন ॥
উত্তরোত্তর বৈশিষ্যং সর্বেষাং পরিকীর্তিতম্ ।
[উত্তর কামিক আগম/ক্রিয়াপদ/পটল ২৫]
✅ অর্থ – একজন জ্ঞানী ঋষির দেওয়া বক্তব্য একজন সাধারণ মানুষ কখনোই খণ্ডন করতে পারে না। একজন ঐশ্বরিক সত্তার দ্বারা দেওয়া বক্তব্য কখনও একজন ঋষি দ্বারা খণ্ডন করা যায় না। ব্রহ্মার দ্বারা প্রকাশিত বক্তব্য কোন ঐশ্বরিক সত্তা কখনও খণ্ডন করতে পারে না। বিষ্ণুর প্রকাশিত উক্তি ব্রহ্মা খণ্ডন করতে পারবেন না। শিবের দেওয়া উক্তি বিষ্ণু কখনও খণ্ডন করতে পারবেন না। এইভাবে, প্রতিটি পরবর্তী পূর্ববর্তীটির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতএব ঘোষণা করা হয়েছে যে শিবের বাণীর মূর্ত প্রতীক শৈব আগমগুলি অন্যান্য সমস্ত ধর্মগ্রন্থের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। শৈব আগম সর্বদা এবং সব সময় অকাট্য।
শৈব আগম হল শিবের বাণী, তাই বিষ্ণুর (পঞ্চরাত্র) বাণী দ্বারা এগুলিকে কখনও খণ্ডন করা যায় না।
------------------------------------------------------------------------------
👉 দেখুন শৈব আগম ও বেদ সম্পর্কে শৈব আচার্যগণ কি বলেছেন —
শৈবাচার্য শ্বেত জীর শিষ্য শ্রীকণ্ঠ শিবাচার্য তার ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যে
উল্লেখ করে বলেছেন -
বেদশিবাগমযোর্ভেদং ন পশ্যামঃ ।
[শ্রীকণ্ঠ কৃত ব্রহ্মসূত্র ভাষ্য/২/২/৩৮ সূত্র]
✅ অর্থ — বেদ ও শিবাগমের মধ্যে কোনো পার্থক্য বা ভেদ নেই ।
------------------------------------------------------------------------------
🟥চলুন দেখে নেয়া যাক আগমশাস্ত্র সম্পর্কে এই পদ্মপুরাণই কি বলছে ➖
অথ ধৰ্ম্মাঃ শিবেনোক্তাঃ শিবধৰ্ম্মাগমোত্তমাঃ ।
জ্ঞেয়া বহুবিধাস্তে চ কৰ্ম্মযোগপ্রভেদতঃ ॥১
হিংসাদিদোষনিৰ্ম্মুক্তাঃ ক্লেশায়াসবিবৰ্জ্জিতাঃ ।
সৰ্ব্বভূতহিতাঃ শুদ্ধাঃ সূক্ষ্মায়াসা মহৎফলাঃ ॥২
অনন্তশাখাকলিতাঃ শিবমূলৈকসংশ্ৰিতাঃ ।
জ্ঞানধ্যানসুপুষ্পঢ্যাঃ শিবধৰ্ম্মাঃ সনাতনাঃ ॥৩
[তথ্যসূত্র : পদ্মপুরাণ/ভূমিখণ্ড/৬৯নং অধ্যায়]
✅ অর্থ — ধর্ম পরমেশ্বর শিব দ্বারা উক্ত হয়েছে, যা শিব দ্বারা প্রকটিত শৈবআগম শাস্ত্রে উত্তম শিবধর্ম নামে পরিচিত, সেই ধৰ্ম কৰ্ম্মযোগ ভেদে বহুবিধ এবং হিংসাদি দোষরহিত, ক্লেশায়াসবিবর্জ্জিত সৰ্ব্বভূত হিতকর, শুদ্ধ, সূক্ষ্ম মহানফল প্রদানকারী ।
অনন্ত শাখা-প্রশাখা (বৈষ্ণব,শাক্ত,গানপত্য,সৌর ও অন্যান্য গৌণ মতবাদ) যুক্ত শিবের প্রকাশিত একমাত্র শিবধর্ম হল সব কিছুর মূলস্বরূপ ও সবকিছু এতেই আশ্রিত। তাই ইহাকে জ্ঞান ধ্যানসুপুষ্পাঢ্য সনাতন শিবধর্ম বলে বিখ্যাত ॥১-৩
------------------------------------------------------------------------------
👉এবার দেখুন বেদ শাস্ত্র শৈব আগম সম্পর্কে কি বলছে —
সর্বাক্ষরময়ঃ কালঃ সর্বাগমময়ঃ শিবঃ ।
সর্বশ্রুত্যুত্তমোং মৃগ্যঃ সকলোপনিষন্ময়ঃ ॥২॥
[অথর্ববেদ/নারদ পরিব্রাজক উপনিষদ/উপদেশ-৮/মন্ত্র-২]
✅ অর্থ — সর্বাগময়ঃ শিবঃ অর্থাৎ সকল আগমের স্বরূপ (সর্বাগমাঃ) পরমেশ্বর শিব।
শিবঃ শৈবাগমস্থানাং কালঃ কালৈকবাদিনাম্ ।
যৎসর্বশাস্ত্রসিদ্ধান্তং যৎসর্বহৃদয়ানুগম্ ॥২১॥
[অথর্ববেদ/অন্নপূর্ণা উপনিষদ/অধ্যায়-৩/মন্ত্র-২১]
✅ অর্থ — পরমেশ্বর শিবের শৈব আগম হল সমস্ত শাস্ত্রের (যৎসর্বশাস্ত্রসিদ্ধান্তম্) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত (উপসংহার) এবং এটি প্রতিটি যুগের প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
🔥ব্যাখ্যা — শৈব আগম সমস্ত শাস্ত্রের মধ্যে সর্বোত্তম, সাক্ষাৎ বেদশাস্ত্র একথা স্বীকার করেছে, সুতরাং যারা শৈব আগম অমান্য করে অর্থাৎ বেদশাস্ত্রের প্রমাণ দেখার পরেও শৈব আগম মানতে অস্বীকার করে তারা সনাতনী নয়।
-----------------------------------------------------------------------
সিদ্ধান্ত
(১) পরমেশ্বর শিবের মুখ নিঃসৃত বানী - শৈব আগম শাস্ত্র,
(২) শৈব আগমে বর্ণিত ধর্মকেই একমাত্র সনাতন শৈবধর্ম বলা হয়েছে,
(৩) বেদ, স্মৃতি শাস্ত্র, পুরাণ ইতিহাস দ্বারা শৈব আগমের বচন খণ্ডন করা সম্ভব নয়,
(৪) শৈব আগম শাস্ত্রের শৈব পরম্পরা পাঁচ হাজার বছরের চেয়েও অধিক পুরাতন,
(৫) শৈব আচার্যগণ শৈব আগম ও বেদ কে এক বলেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন,
(৬) বেদ নিজেই শৈব আগম শাস্ত্র কে সকল শাস্ত্রের অন্তিম সিদ্ধান্ত বলে শৈব আগমের সর্ব শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছে ।
(৭) শৈব আগমশাস্ত্রের ঊর্ধ্বে আর অন্য কোনো শাস্ত্রের বচন সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত বলে গণ্য নয় ।
-----------------------------------------------------------------------
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
লেখনীতে — শ্রী অম্বিকানাথ শৈব দেবী জী
সম্পাদনায় — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
Ⓒ কপিরাইট ও প্রচারে - International Shiva Shakti Gyan Tirtha (ISSGT)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন