শাস্তা রূপে পরমেশ্বর শিব করলেন — বিষ্ণুর মৎস অবতার নিগ্রহ (সংহার)
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
ভূমিকা ঃ
পরমেশ্বর শিব এই জগত কে রক্ষা করবার জন্য বহু লীলা করেছেন, তার মধ্যে বিষ্ণু অবতার গুলির সংহার করবার লীলা অন্যতম । এই প্রবন্ধে শ্রীবিষ্ণুর মৎস অবতারকে সংহার করবার বিষয়ে স্কন্দমহাপুরাণের শঙ্করসংহিতার শিবরহস্যখণ্ডের উপদেশখণ্ডের ৬৪ অধ্যায়ের মধ্যে ৩৭-৫৩ নং শ্লোকে যে কাহিনি উল্লেখিত হয়েছে, আমি তা শ্লোক সহ অনুবাদ উপস্থাপন করলাম। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ প্রবন্ধ টি পড়ুন ।
________________________________________________
শাস্তা রূপে পরমেশ্বর শিব করলেন — বিষ্ণুর মৎস অবতার নিগ্রহ (সংহার)
[তথ্যসূত্র : স্কন্দমহাপুরাণ/শঙ্করসংহিতা/শিবরহস্যখণ্ড/উপদেশখণ্ড/৬৪ অধ্যায়/৩৭-৫৩ নং শ্লোক]
মৎস্যাবতারনিগ্রহঃ
পুনশ্চাপ্যেকদা বিষ্ণুর্বেদোদ্ধরণকর্মণে ।
শাফরীং যোনিমাসাদ্য সংহরিষ্যন্ স তস্করম্ ॥ ৩৭
অর্থ — একবার এক সময়ে, সোমক নামে এক রাক্ষস বেদ কে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেগুলো উদ্ধার করবার জন্য শ্রী বিষ্ণু একটি ছোট মাছের (মৎস্য) আকারে অবতরিত হন, যাকে বলা হয় বিষ্ণুর মৎস অবতার ॥ ৩৭
বেদানাং সোমকং দৈত্যং বিনিগৃহ্য চ লীলয়া ।
বেদাংশ্চ বেধসে দত্বা যথাপূর্ব জনার্দনঃ ॥ ৩৮
অর্থ — তিনি (জনার্দন) যেন খেলার ছলেই দৈত্য সোমককে হত্যা করে বেদ কে পুনরুদ্ধার করেছিলেন এবং ব্রহ্মার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যেমনটি আগে ছিল ॥ ৩৮
অহঙ্কারেণ তেনৈব চার্ণবানাং চ ভেদনম্ ।
কুর্বন্ সর্বান্ সমাকৃষ্য ভক্ষয়ামাস মাধবঃ ॥ ৩৯
অর্থ — এই বিজয়ের ফলে মৎসরূপী বিষ্ণু গর্বে ভরে ওঠেন এবং তার অহংকারে সমুদ্রকে প্রচণ্ড অশান্তিতে উত্তাল করে তোলেন, যা কিছু তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন তা গ্রাস করে নিতে শুরু করেন॥ ৩৯
ততো ভীতা বিরিঞ্চাদ্যাঃ শঙ্করং লোকশঙ্করম্ ।
কৈলাসবাসিনং দেবং প্রীণয়িত্বা ব্যজিজ্ঞপন্ ॥ ৪০
অর্থ — এই ঘটনায় ভীত হয়ে ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবতারা কৈলাসবাসী প্রভু শ্রীশঙ্করের শরণাপন্ন হন, যিনি সর্বদা জগতের কল্যাণ করেন। দেবতারা মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করেন, তাদের দুর্দশার কথা বলেন ॥ ৪০
দেবৈনাপি সমাবিষ্টঃ শাস্তা যোগী তদাজ্ঞয়া ।
কৈবর্ততাং সমাসাদ্য মাধবং মৎস্যরূপিণম্ ॥ ৪০
অর্থ — দেবতাদের প্রার্থনা শুনে যোগীশ্বর প্রভু মহাদেব তাঁর গণ শাস্তা (শিবস্বরূপ এক গণ) কে দেবতাদের তথা সকলকে এই দুঃখ থেকে উদ্ধার করবার কার্য করতে নির্দেশ দেন। এই আদেশ পালন করবার জন্য শাস্তা জেলে রূপ ধারণ করেন এবং তিনি তার জাল দিয়ে মাধবকে (মৎস্য রূপী বিষ্ণুকে) ধরে বশ করেন ॥ ৪১
বিনিগৃহ্যাক্ষিযুগলং কুরুবিন্দমণিপ্রভম্ ।
নখাগ্রেণ সমাদায় শিবাগ্রে বিনিবেদয়ন্ ॥ ৪২
অর্থ — তখন শাস্তা নিজের ধারালো নখ দিয়ে বিষ্ণুর দুটি উজ্জ্বল চোখ উপড়ে ফেলেন, যা তামাটে লাল রুবির মতো উজ্জ্বলতায় উজ্জ্বল ছিল এবং সেগুলি নিয়ে তিনি পরমেশ্বর শিবের কাছে উপস্থাপন করেন ॥ ৪২
নিধায়ৈতন্নমস্কৃত্য তস্থৌ যোগী কৃতাঞ্জলিঃ ।
তদা ব্রহ্মাদয়ো দেবা মহাদেবং সমর্চয়ন্ ॥ ৪৩
অর্থ — কৃতাঞ্জলিপুটে শ্রদ্ধার সাথে সেগুলো মহাদেবের কাছে উৎসর্গ করার পর, শাস্তা ভক্তিভরে মহাদেবের সামনে দাঁড়ালেন। তখন সেই মুহূর্তে ব্রহ্মা এবং অন্যান্য সমস্ত দেবতারা পরমেশ্বর মহাদেবের উপাসনা করলেন এবং বিনীতভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করলেন ॥ ৪৩
বয়ং মৎস্যেন ঘোরেণ পীড়িতা ভৃশমীশ্বর ।
সোঽয়ং বিনিগৃহীতশ্চ জগতাং হিতকাম্যয়া ॥ ৪৪
তস্যাস্যাক্ষিযুগং ত্বেতত্তবাস্ত্বাভরণে মণিঃ ।
ইতি সংপ্রার্থিতো দেবৈস্তদক্ষিযুগলং মণিম্ ॥ ৪৫
দধার রুণ্ডমালায়াং দয়ানিধিরুমাসখঃ ।
গতমোহঃ পুনর্বিষ্ণুর্থ্যাত্বা দেবং জনার্দনঃ ॥ ৪৬
অর্থ — (দেবতারা বললেন) “হে ঈশ্বর, বিষ্ণুর মৎস্য (মাছ) অবতারের কারণে আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু, জগতের কল্যাণের জন্য আপনি মৎস্যকে শাস্তি দিয়েছেন। এখন, আমরা প্রার্থনা করি যে আপনি তার এই দুটি চোখকে আপনার অলঙ্কারে মণিরত্ন হিসেবে অলঙ্কৃত করুন” ॥ ৪৪-৪৫
তাদের প্রার্থনায় আগ্রহী হয়ে, করুণার সাগর উমাসখা (শিব) বিষ্ণুর(মৎস অবতারের) চোখদুটি গ্রহণ করেন এবং সেগুলোকে তিনি নিজে মুণ্ডমালাকে যেমনভাবে ধারণ করেছেন, তেমন ভাবেই ঐ চক্ষুদুটিকে রত্ন হিসেবে অঙ্গে(আঙ্গুলের আংটি হিসেবে) পরিধান করেন। এদিকে নিজের ভুল বুঝতে পেরে শ্রীবিষ্ণু তার ভ্রম থেকে মুক্ত হন এবং সেই জনার্দন হরি একাগ্রতার সহিত মহাদেবকে ধ্যান(স্মরণ) করেন ॥ ৪৬
শিবপূজাপ্রভাবেন পূর্ব সোমকমর্দয়ন ।
মোহেনৈব ততঃ পশ্চাজ্জগন্তি তমসাবৃতঃ ॥ ৪৭
শাসিতোঽস্মি জগদ্ধাত্রা কৃতার্থোঽস্মি ততঃ কৃতঃ ।
এতদাগোনিবৃত্ত্যর্থং পূজয়িষ্যামি শঙ্করম্ ॥ ৪৮
অর্থ — বিষ্ণু ভাবলেন: “শুধুমাত্র শিব-পূজার মহিমার কারণেই আমি(মৎসরূপে অবতার নিয়ে) সোমক রাক্ষসকে বধ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু, পরে, আমার অহংকার এবং অজ্ঞতার কারণে, আমি জগৎকে অশান্ত করে তমোরূপী অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিলাম, এবং তারপর (শাস্তার দ্বারা) জগদ্বাত্রা মহেশ্বর আমাকে এইভাবে শাস্তি দিলেন। এইভাবে দেওয়া শাস্তি নিজেই প্রকৃতপক্ষে এখন আমার জন্য একটি মহান আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে! তবুও, আমার পাপ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার জন্য, আমি প্রভু শঙ্করের উপাসনা করবো” ॥ ৪৭-৪৮
ইতি কাঞ্চীপুরীং প্রাপ্য পূজয়ামাস তত্র তম্ ।
মৎস্যরূপায় বৈ তস্মৈ প্রসসাদ পিনাকধৃৎ ॥ ৪৯
বরেণ চ্ছন্দয়ামাস মৎস্যরূপং জগৎপতিঃ ।
বৃতো বরশ্চ তেনাপি নিগ্রহোঽয়মনুগ্রহঃ ॥ ৫০
অর্থ — এই চিন্তা করে বিষ্ণু কাঞ্চিপুরীমে যাত্রা করলেন এবং সেখানে মহাদেবের আরাধনা করলেন। তাঁর আন্তরিক ভক্তি দেখে বিষ্ণুর মৎস্যরূপে পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে পিনাকপাণি মহাদেব বললেন: “বর প্রার্থনা করো!” তখন বিষ্ণু প্রার্থনা করলেন: “হে দেবেশ, তুমি আমাকে যে শাস্তি দিয়েছেন, তা আপনার কৃপায় অনুগ্রহ (আশীর্বাদ) হয়ে গিয়েছে” ॥ ৪৯-৫০
মমাস্তু দেব কৃপয়া মৎস্যরূপং তু মাং দ্বিজাঃ ।
যে যজন্তি জগত্যস্মিন্ তেষামিষ্টপ্রদো ভব ॥ ৫১
কৃপয়া তব দেবেশ বরদোঽস্মি মহেশ্বর ।
ময়াচরিতমাগস্ত্বং তিতিক্ষুর্জগদীশ্বর ॥ ৫২
অর্থ — “এই পৃথিবীতে যদি দ্বিজ বা যে কোনো ব্যক্তি আমার মৎস্যরূপে আমার উপাসনা করে, তবে আপনি তাদের সকল ইচ্ছা পূরণ করবেন ॥ ৫১
হে প্রভু, আপনার করুণার দ্বারা, আমিও যেন আমার উপাসনাকারীদের আশীর্বাদ করার যোগ্য হই। এবং আমার অপরাধ ক্ষমা করুন” ॥ ৫২
ইতীশোঽভ্যর্থিতঃ পূর্ব বিষ্ণুনা মৎস্যরূপিণা ।
দত্বান্তর্ধানমগমল্লোকানাং হিতকাম্যয়া ॥ ৫৩
বিষ্ণুশ্চ বৈষ্ণবং লোকমাসাদ্যাপালয়ৎস্বকম্ ।..॥ ৫৪
অর্থ — মৎস্যরূপী বিষ্ণুর এই আন্তরিক প্রার্থনা শুনে, পরমেশ্বর শিব জগতের কল্যাণের জন্য বর প্রদান করে বললেন, “তাই হোক!” । এরপরে, প্রভু শিব অন্তর্হিত হন, এবং বিষ্ণু বৈকুণ্ঠে ফিরে আসেন, জগৎ রক্ষার তাঁর ঐশ্বরিক কর্তব্য পুনরায় শুরু করেন ॥ ৫৩-৫৪
[লক্ষণীয় বিষয় : মৎস অবতার কে সংহার করবার জন্য স্বয়ং পরমেশ্বর শিব নিজে যাননি, বরং তার স্বরূপভূত ‘শাস্তা’ নামক একজন অনুচর ‘গণ’ কে আদেশ দিয়েছিলেন। সেই শাস্তা নামক রুদ্রগণ মৎসরূপী বিষ্ণুকে জাল দিয়ে ধরে তার চক্ষুদুটিকে উপড়ে নিয়ে পরমেশ্বর শিবের কাছে উপস্থিত হন, সকল দেবতারা ঐ চক্ষুদুটিকে অলংকার হিসেবে ধারণ করবার জন্য প্রভু শিবের কাছে প্রার্থনা করেন, তখন পরমেশ্বর শিব নিজেদের দেহে যেমন মুণ্ডগুলিকে মালা রূপে স্থান দিয়েছিলেন তেমনভাবে ঐ মৎসরূপী হরির চক্ষুদুটিকে নিজের অঙ্গে স্থান দিয়েছিলেন, আংটি হিসেবে ধারণ করেন । এই দৃষ্টান্তমূলক কাহিনীর দ্বারা সমাজ এই শিক্ষা পাবে যে, যতই শক্তিশালী হও, অহংকার কোরো না, অহংকার করলেই পরমেশ্বর সেই অহংকার বিনাশ করবেন। তাই সদা সর্বদা অহংকার থেকে দূরে থাকো। শিবের অঙ্গে থাকা মৎসরূপী হরির সেই চক্ষুদুটি হল সেই অহংকার বিনাশের প্রতীক হিসেবে সমাজের কাছে আদর্শ উদাহরণ।]
___________________________________________
⬛ মৎস অবতার কে সংহার বিষয়ে স্কন্দমহাপুরাণ থেকে
আরো একটি প্রমাণ 👇
নৃহরিং শরভাকারঃ সমহাষীন্ন চেদ্ভবান্ ।
স এব সংহরেদ্বিশ্বঃ হিরণ্যকশিপোরপি ॥ ৪১৭
ত্বমাচক্রক্ষঃ কল্পাদ্ধৌ কৈবৰ্ত্তো মৎস্যকচ্ছপৌ।
হরিং বদ্ধাহিয়াট সূত্রৈর্নৃসিংহমথ শূকরম ॥ ৪১৮
একোনে পদ্মসাহস্রে স্বনেত্রেণ কৃতার্চনম্ ।
শূলিন সুদর্শনং দত্ত্বা দৈতাদ্বিষমতূতৃষঃ ॥ ৪১৯
[তথ্যসূত্র — স্কন্দমহাপুরাণ/মহেশ্বরখণ্ড/অরুণাচল মাহাত্ম্য/উত্তরার্দ্ধ/অধ্যায় ১৬]
অর্থ — হে মহাদেব ! আপনি যদি শরভাকার ধারণ করিয়া নৃ-হরিকে সংহার না করতেন, তবে সেই নৃ-হরি হিরণ্যকশিপু এমন কি সমস্ত বিশ্বকেই নিহত করে দিতেন। আপনি কৈবর্ত্ত হয়ে কল্পপর্যন্ত মৎস অবতার ও কচ্ছপকে আকর্ষণ করে বধ করেন এবং নৃসিংহ, বরাহ প্রভৃতি রূপধারী, স্বনেত্ররূপ একোনসহস্র পদ্ম দ্বারা কৃত শিবার্চনরত হরিকে অহিরাজ-সূত্র দ্বারা বন্ধন করে তাকে আপনি সুদর্শন চক্র প্রদান করে দেবতাদের সন্তোষ বিধান করেছেন।
অনান্য শাস্ত্রে, পরমেশ্বর শিবের দ্বারা মৎস অবতার সংহারের প্রমাণ —
বেদ প্রমাণ
বেদোক্ত মুক্তিকা উপনিষদের বচন অনুসারে বেদের মূল ১০৮ উপনিষদের মধ্যে অন্যতম হল শরভ উপনিষদ। অর্থাৎ (বেদ) শ্রুতিশাস্ত্র শরভ উপনিষদের ১৩ নং মন্ত্রেও এই কাহিনীর সমর্থন করেই বেদবাক্য উপস্থিত রয়েছে, দেখুন —
যো মত্স্যকূর্মাদিবরাহসিংহান্বিষ্ণুং ক্রমন্তং বামনমাদিবিষ্ণুম্ ।
বিবিক্লবং পীড্যমানং সুরেশং ভস্মীচকার মন্মথং যমং চ ।
তস্মৈ রুদ্রায নমো অস্তু ॥ ১৩
(অথর্ববেদ/শরভ উপনিষদ/১৩নং মন্ত্র)
অর্থ — যিনি শ্রীবিষ্ণুর মৎস, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ এমনকি বামন অবতারকেও পীড়া দান পূর্বক পরাজিত করেছিলেন সেই মন্মথ(কামদেবের)কে ভস্মকারী সকলের যমরূপী সুরেশ্বর ভগবান রুদ্র(শিব)কে প্রণাম করি ॥১৩
মহাশ্রুতি শৈবাগম থেকে প্রমাণ
মৎস্যকূর্মবরাহাদিনারসিংহাদিকান পুরা ।
অবতারাত্ মহাবিষ্ণোঃ সংহৃত্য পরমেশ্বরঃ ॥ ৩৬ ॥
তত্তত্কল্পেষু ভুষাং চ তত্তদঙ্গান্যকল্পয়ত্ ।
হরিধ্বংসীতি লোকেষু ততঃ খ্যাতিং গতঃ শিবঃ ॥ ৩৯ ॥
[মহাশ্রুতি সূক্ষ্মাগম/ক্রিয়াপাদ/দ্বিতীয়ঃ পটলঃ]
অর্থ – অতীতে মহাবিষ্ণুর মৎস, কূর্ম, বরাহ এবং নরসিংহ অবতারকেও পরমেশ্বর শিব সংহার করেছিলেন ॥৩৬
বিভিন্ন কল্পে পরমেশ্বর শিব শ্রীবিষ্ণুর এসব অবতারদের হত্যার পরে তাদের বিভিন্ন অঙ্গ নিজের আভূষণ ও অলঙ্কার হিসেবে ধারন করতেন। এরপর থেকেই মহেশ্বর শিব সমগ্র লোকে ‘হরিধ্বংসী’ রূপে আখ্যায়িত হন ॥৩৯
🔻বাতুলশুদ্ধাখ্য আগম মতেও মহেশ্বরের ২৫ টি লীলাবিগ্রহের মধ্যে ১৩ নং বিগ্রহটিই হল – হরিধ্বংসী। প্রমাণ দেখুন -
“ত্রয়োদশং হরিধ্বংসী ত্বর্ধনারী চতুর্দশম্ ।”[মহাশ্রুতি বাতুলশুদ্ধাখ্য আগম – প্রথমঃ পটলঃ – ১২৯ নং মহামন্ত্র]
🔘 তামিল শৈবশাস্ত্র ‘Sivaparakramam’(শিবপরাক্রমম্) অনুযায়ী মহেশ্বরের ৬৪ টি লীলা বিগ্রহের মধ্যে একটি বিগ্রহ হল - মৎস্য সংহার মূর্তি’ বা মৎস্যারি ।
🔖নীলকন্ঠ শিবাচার্য জী তার রচিত ক্রিয়াসার গ্রন্থে এই মৎস অবতার নিগ্রহ প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন ।
________________________________________________
সিদ্ধান্ত
শৈব আগম ও বেদ যখন নিজেই বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতার কে শিবের দ্বারা সংহার হয়েছে বলে স্বীকার করেছে, তখন প্রত্যেক সনাতনী কে এই বিষ্ণুঅবতারগুলিকে সংহার করবার কাহিনীকে সত্য বলে গ্রহণ ও মান্য করতেই হবে। কারণ বেদ সম্মত যে কোন কাহিনী সর্বদাই সর্বপ্রথম এবং সর্বোচ্চ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। বেদ বিরুদ্ধ কোন কাহিনী বা মত গ্রহণযোগ্য নয়।
আর বেদানুসারে শৈবাগম সর্বোচ্চ তথা অন্তিমসার সিদ্ধান্তদায়ী, অর্থাৎ যখন শৈবাগম কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তখন তা আর কোনোভাবেই খণ্ডন বা অগ্রহণযোগ্য হবে না ।
________________________________________________
________________________________________________
শ্রী মচ্ছেশ্বর শিব মন্দিরের বর্তমান ঠিকানা
Current location of Macheeswarar Mandir
মৎস অবতাররূপী বিষ্ণু যে স্থানে পরমেশ্বর শিবের আরাধনা করেছিলেন, সেই কাঞ্চীপুরমে স্থিত শিবমন্দিরটি আজও বিদ্যমান রয়েছে । বর্তমানে তার নাম ‘মচ্ছেশ্বর’ , যা বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কাঞ্চীপুরমে অবস্থিত।
ঠিকানা :
Machesa Perumal, Macheeswarar
மச்சேச பெருமாள், மச்சீஸ்வரர்
82-B, E Raja St, Periya, Kanchipuram, Tamil Nadu 631502
এখানে ক্লিক করে Location দেখুন 👇
শ্রী মচ্ছেশ্বর শিবমন্দির খোলার সময় -
এই মন্দিরটি সকাল ৭.০০ টা থেকে দুপুর ১২.০০ টা এবং বিকেল ৫.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শ্রী মচ্ছেশ্বর শিবমন্দির পৌঁছাবার বিশেষ বিবরণ —
শ্রী মচ্ছেশ্বর শিব মন্দিরটি কাঞ্চিপুরম বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০ মিটার, কাঞ্চিপুরম পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ কিলোমিটার এবং কাঞ্চিপুরম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মন্দিরটি পেরিয়া কাঞ্চিপুরমের পূর্ব রাজা স্ট্রিটে অবস্থিত। এই মন্দিরটি উলাগালন্থ পেরুমাল মন্দির এবং বৈকুণ্ঠবাস পেরুমাল মন্দিরের কাছে অবস্থিত। কাঞ্চিপুরম ওয়ালাজাবাদ থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার, শ্রীপেরুম্বুদুর থেকে ৩১ কিলোমিটার, চেঙ্গালপাট্টু থেকে ৪০ কিলোমিটার, চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে ৬০ কিলোমিটার, মহাবালিপুরম থেকে ৬৭ কিলোমিটার এবং চেন্নাই থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সড়কপথে :
কাঞ্চিপুরম সড়কপথে সবচেয়ে সহজে পৌঁছানো যায়। চেন্নাই-বেঙ্গালুরু জাতীয় মহাসড়ক, ৪ নম্বর জাতীয় সড়ক শহরের উপকণ্ঠ দিয়ে যায়। তামিলনাড়ু রাজ্য পরিবহন কর্পোরেশন দ্বারা চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, ভিল্লুপুরম, সালেম, তিরুপতি, তিরুথানি, ভেলোর, তিরুভান্নামালাই, কোয়েম্বাটোর, টিন্ডিভানাম এবং পন্ডিচেরি থেকে প্রতিদিন বাস পরিষেবা প্রদান করা হয়। চেন্নাইতে দুটি প্রধান বাস রুট রয়েছে, একটি পুনমল্লি হয়ে এবং অন্যটি তাম্বারাম হয়ে।
তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার পরিচালিত পরিবহন কর্পোরেশন কাঞ্চিপুরম থেকে তামিলনাড়ুর বেশিরভাগ প্রধান শহরগুলিতে বাস পরিচালনা করে। চেন্নাই থেকে বাসগুলি কোয়াম্বেদু আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি পনের মিনিট অন্তর কাঞ্চিপুরমের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়াও Z576 নম্বরের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস পরিষেবা রয়েছে যা সকাল 5.00 টা থেকে সন্ধ্যা 6.00 টা পর্যন্ত টি-নগর বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘন্টায় ছেড়ে যায়। বেঙ্গালুরু থেকে বাসগুলি দিনে সাতবার কাঞ্চিপুরমের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ট্রেনে :
কাঞ্চিপুরম রেলওয়ে স্টেশনের মাধ্যমে শহরটি রেল নেটওয়ার্কের সাথেও সংযুক্ত। চেঙ্গালপাট্টু - আরাককোনাম রেললাইন কাঞ্চিপুরমের মধ্য দিয়ে যায় এবং ভ্রমণকারীরা এই গন্তব্যগুলিতে পরিষেবা পেতে পারেন। পন্ডিচেরি এবং তিরুপতিতে প্রতিদিন ট্রেন সরবরাহ করা হয় এবং মাদুরাইয়ের জন্য একটি সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস ট্রেন এবং নাগেরকোয়েলের জন্য একটি দ্বি-সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে। চেঙ্গালপাট্টু এবং আরাককোনামের উভয় দিক থেকে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন কাঞ্চিপুরমের মধ্য দিয়ে যায়।
আকাশপথে:
নিকটতম অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
________________________________________________
________________________________________________
এখানেই এই প্রবন্ধ টি সমাপ্ত হল ।
মৎস অবতার রূপে শ্রীনারায়ণের জয়
মৎসসংহারি পরমেশ্বর শিবের জয়
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
লেখনীতে — ©শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন