শিব — কি নির্গুণ ব্রহ্মের একটি গুণবাচক নাম ?
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
ভূমিকা —
পার্বতীপতি শিব হলেন বেদের দ্বারা উল্লেখিত এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বর। যার প্রমাণ সমগ্র বেদে প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু কলিযুগের এই বর্তমান সময়ে কিছু অধার্মিক আগাছারূপী সম্প্রদায় নিজেদের কাল্পনিক মতবাদকে সমাজের বুকে স্থাপন করবার জন্য এই পরম সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে চলেছে। যেমন — দয়ানন্দ সরস্বতীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজের অনুসারী নকল বৈদিক ব্যক্তিগণ পরমেশ্বরকে শুধুমাত্র নিরাকার প্রমাণ করবার জন্য বেদের অর্থের অনর্থ্য ঘটিয়ে বিকৃত অর্থ লিখে প্রচার করছে, সেখানে তারা নিরাকার ঈশ্বরের একটি গুণবাচক নাম হল শিব - এমনটা দাবী করছে। ঠিক এমন ভাবেই, বৈষ্ণবেরা বেদের মধ্যে পরমেশ্বর শিবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় যেসব বেদ মন্ত্রে - সেই সকল বেদ-মন্ত্রগুলিকে বিকৃত করে শিব শব্দকে গুণবাচক মঙ্গলময় অর্থ বের করে দাবি করছে যে ভগবান বিষ্ণু মঙ্গলময়, তাই বেদে কোথাও পার্বতীপতি শিবের উল্লেখ নেই, বৈষ্ণবদের দাবি হলো বেদে কোথাও শিবকে পরমেশ্বর বলা হয়নি। যেখানে শিবকে পরমেশ্বর বলে দাবি করা হয়েছে বেদে - বেদের সেই শিব শব্দের অর্থ কে মঙ্গলময় বলে ঘুরিয়ে - এই মঙ্গলময় গুণের অধিকারী হলেন একমাত্র শ্রীবিষ্ণু, এমন ধরনের কুযুক্তি ব্যবহার করে বৈষ্ণবেরাও আর্যসমাজীদের মতোই সমাজকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। তাই "শিব" কি নির্গুণ ব্রহ্মের গুণবাচক নাম ? - এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
🔥 শিব’ শব্দের ব্যাকরণিক ও শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণে শিবের পরমেশ্বরত্ব —
‘শিব’—এই শব্দটি সনাতন ধর্মতত্ত্বে এক অনন্ত, অখণ্ড ও সর্বময় সত্তার নাম। শিব মানে কল্যাণ, মঙ্গল, শান্তি ও চিরন্তন চৈতন্যের আধার। কিন্তু এই ‘শিব’ শব্দটির শুধু ধর্মীয় বা দার্শনিক গুরুত্বই নয়, বরং ব্যাকরণ ও শাস্ত্র অনুসারে এর ব্যুৎপত্তিগত গভীরতাও অনন্য। 'শিব' শব্দের যথার্থ তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন হয় ব্যাকরণ, দর্শন ও শাস্ত্রপ্রমাণের সম্মিলিত আলোচনা। এই প্রবন্ধে আমরা ‘শিব’ শব্দের ব্যুৎপত্তি, ব্যবহারযোগ্যতা এবং শাস্ত্রসম্মত অবস্থান বিশ্লেষণ করবো।
👉প্রথমে দেখে নেবো ব্যাকরণগত অর্থ—
“ভূমনিন্দাপ্রশংসাসু নিত্যযোগেঽতিশায়নে ।
সম্বন্ধেঽস্তিবিবক্ষায়াং ভবন্তি মতুবাদয়ঃ ॥”
[মহাভাষ্য/৫/২/৯৪]
যিনি নিত্য মঙ্গল ও নিত্য কল্যাণ প্রদান করেন তিনিই হলো শিব।।
এই সূত্রে বলা হয়েছে যে, 'মতুপ' ইত্যাদি প্রত্যয়সমূহ (যেমনঃ মতুপ্, অণ্, ইন্, ক্বিপ্ ইত্যাদি) যেসব প্রসঙ্গে প্রয়োগযোগ্য, তা হলো—
ভূমনি— (বিশালতা বা সর্বব্যাপিতা বোঝাতে),
নিন্দা ও প্রশংসা— (নিন্দা বা প্রশংসা বোঝাতে),
নিত্যযোগ— (নিত্যসংযুক্ত গুণ নির্দেশ করতে),
অতিশায়ন— (অত্যুৎকৃষ্টতা বোঝাতে),
সম্বন্ধ— (সম্পর্ক নির্দেশে),
এবং অস্তিবিবক্ষা— (কোনো গুণ বা সত্তার অস্তিত্ব জানাতে)।
👉‘শিব’ শব্দের ব্যাকরণিক গঠন:—
ধাতু: শম্ – মঙ্গল্যে (ধাতুপাঠ: শম্ অর্থে মঙ্গল বা কল্যাণ)
প্রত্যয়: মতুপ্ (অর্থাৎ “যিনি মঙ্গলের অধিকারী”)
ফলত, "শিবঃ" = শম্ + মতুপ্
যার অর্থ দাঁড়ায়: “যিনি স্বভাবতই ও নিত্যভাবে মঙ্গলদাতা”
এটি উপরে উল্লিখিত "নিত্যযোগ" ও "প্রশংসাসু" এই দুই অবস্থার মধ্যে পড়ে, কারণ ‘শিব’ পরমসত্ত্বা, তিনি চিরন্তন মঙ্গল ও কল্যাণের আধার।
শিব কোনও সাধারণ গুণবাচক পদ নন। তিনি নাম ও গুণে পরম শিব — সর্বদা মঙ্গলময়, সদাশিব, যিনি আনন্দ, কল্যাণ ও চৈতন্যের স্বরূপ। শ্রুতিও একই কথা সমর্থন করে —
নমঃ শম্ভবায় চ ময়োভবায় চ। নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ। নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ।।
[শুক্ল-যজুর্বেদ/১৬/৪১]
মুক্তিসুখ ও সংসার সুখদাতা শম্ভুকে নমস্কার। লৌকিক ও মোক্ষসুখের কারক শঙ্করকে নমস্কার। যিনি স্বয়ং কল্যাণ স্বরূপ ও সমগ্র জীবের কল্যাণ বিধাতা পরমেশ্বর শিবকে নমস্কার।।
একই প্রসঙ্গে তৈত্তিরীয় আরণ্যকে বলা আছে যে—
"শিবায় নমঃ। শিবলিঙ্গায় নমঃ।।"
[কৃষ্ণ যজুর্বেদ/ তৈত্তিরীয় আরণ্যক/১০ম প্রপাঠক/১৬ নং অনুবাক]
শিবায় নমঃ = সপ্তপুরুষের মনে নিবাসকারী পরম মঙ্গলময়, পরমানন্দঘন চৈতন্য স্বরূপ শিবকে নমস্কার।
শিবলিঙ্গায় নমঃ = যিনি সেই মঙ্গলময় চৈতন্যরূপেই লিঙ্গ প্রকাশ করেন সেই শিবকে নমস্কার।
আচার্য সায়ণ ও ভট্টভাস্কর একই অর্থকে মান্যতা দিয়ে গেছেন নিজেদের ভাষ্যে। এবং সায়ণাচার্য নিজের ভাষ্যে শিব বলতে কৈলাস নিবাসী নীলকণ্ঠ ত্রিনেত্রধারী শিবকেই বুঝিয়েছেন। কেননা শিবই নিরাকার সাকার দুই স্বরূপেই বিদ্যমান। সেই শিবই হলো সকলকে চেনতা প্রদানকারী ব্রহ্ম যিনি সদাই মঙ্গলময়।
এ প্রসঙ্গের ইতিহাস শাস্ত্রে বলা আছে যে—
সমেধয়তি যন্নিত্যং সর্বার্থান্ সর্ব্বকৰ্ম্মস্থ।
শিবমিচ্ছন্ মনুষ্যাণাং তস্মাদেব শিবঃ স্মৃতঃ ।১১০৷৷
[মহাভারত/দ্রোণপর্ব/অধ্যায় ১৭০/১১০]
যে হেতু তিনি (পার্বতীর স্বামী মহাদেব) সর্বদা মানুষের 'শিব' অর্থাৎ মঙ্গল কামনা করিয়া সমস্ত কার্য্যে সমস্ত বিষয় বর্ধিত করেন, সেই জন্য তাঁকে 'শিব' বলা হয় ॥১১০।।
'শিব' শব্দে 'মতুপ্' প্রত্যয় কোনো সাময়িক গুণ বা পার্থিব শ্রেষ্ঠতা বোঝাতে নয়, বরং চিরন্তন এবং স্বভাবসিদ্ধ মঙ্গলকারিতার প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই যুক্তিতে অদ্বৈত শৈব দর্শন বলে, ‘শিব’ শব্দটি শুধু একটি সাধারণ বিশেষণ নয়, বরং এটি সেই পরম সত্তার নির্দিষ্ট রূঢ় অর্থবাহী নাম, যিনি অনাদিকাল থেকে কল্যাণের একমাত্র আধার — পরমেশ্বর শিব।
মহাভাষ্যের ব্যাকরণিক বিধান অনুসারে ‘শিব’ শব্দে ‘মতুপ্’ প্রত্যয়ের প্রয়োগ নিত্য মঙ্গল ও চিরস্থায়ী গুণ বোঝাতে উপযুক্ত। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘শিব’ অর্থ সেই পরমেশ্বর, যিনি স্বভাবতই মঙ্গলদাতা, সর্বত্র বিরাজমান ও সর্বোৎকৃষ্ট।
👉ব্যুৎপত্তি—
উণাদিসূত্র (১/১৫৩)—
"সর্বনিঘৃষ্বরিষ্বলষ্বশিবপট্বপ্রহ্বেষ্বা অতন্ত্রে"
অনুবাদ— যদি ‘তন্ত্র’ অর্থাৎ ব্যাকরণীয় নিয়ম অনুসরণ না করা হয়, তবে সর্ব, নিঘৃষ্ব, ঋষ্ব, লষ্ব, শিব, পট্ব, প্রহ্ব এবং ঈষ্ব—এই আটটি শব্দকে "বন্" (वन्) প্রত্যয় সহ নিপাতিত (ব্যাকরণিক নিয়মের বাইরে প্রতিষ্ঠিত) শব্দরূপে গৃহীত হয়। অর্থাৎ এগুলোর উৎপত্তি ব্যাকরণসম্মত নয়, কল্পিত বা প্রচলনভিত্তিক।
👉‘শিব’ শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি—
"যিনি শয়ন বা বিশ্রাম করেন তিনিই ‘শিব’। শিব অর্থ - ঈশ্বর।"
এই ব্যাখ্যায় ‘শিব’ শব্দটি 'শীঙ্'(বিশ্রাম, ঘুম ইত্যাদি) ধাতু থেকে উণাদিপ্রত্যয় 'বন্' যোগে নিপাতিতভাবে গৃহীত।
প্রলয়ান্তে জগৎ যার মধ্যে শয়ন করেন তাহাই শিব। বা যিনি সবার শয়ন স্থান, নিবাস স্থান, প্রলয়স্থান তাহাই শিব। শিবই পরমেশ্বর।
👉ব্যাখ্যা—
উণাদিসূত্র ১.১৫৩ অনুসারে ‘শিব’ শব্দটি একটি নিপাতিত পদ — অর্থাৎ এটি ব্যাকরণীয়ভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে, বিশেষভাবে গৃহীত হয়েছে। এখানে ‘শিব’ শব্দের ব্যুৎপত্তি করা হয়েছে শীঙ্ (স্বপ্নে) ধাতু থেকে, যার অর্থ ‘শয়ন করা’, এবং এর সঙ্গে 'বন্' প্রত্যয় যোগে গঠিত হয়েছে 'শিবঃ'— অর্থ: যিনি শয়ন করেন বা যার মধ্যে সব কিছু শয়ন করে।
প্রলয়ের সময় সমগ্র বিশ্ব যেখানে লীন হয়, যেখানে সব কিছু বিশ্রাম নেয়, সেই পরমাশ্রয়স্বরূপ সত্তা হলেন শিব। তিনি কেবল শয়িতা নন, তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরম আশ্রয়, প্রলয়স্থল ও কল্যাণের একমাত্র আধার। তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে—
সংভক্ষ্য সর্বভূতানি যুগান্তে পৰ্য্যুপস্থিতে।
যঃ শেতে জলমধ্যস্থস্তং প্রপদ্যেহম্বুশায়িনম্ ॥ ১০১ ॥
[মহাভারত/শান্তিপর্ব/অধ্যায় ২৭৭/১০১ শ্লোক]
অর্থ — প্রলয়কাল উপস্থিত হইলে, যিনি সমস্ত ভূতকে উদরস্থ করিয়া জলমধ্যে শয়ন করেন, সেই জলশায়ী নারায়ণরূপী মহাদেবের শরাণাপন্ন হইতেছি ॥ ১০১ ॥
সাধারণ ভাবেই সকলের জানা পরমেশ্বর শিব হলো পঞ্চকৃত্যকারী। তার মধ্যে তিনটা কৃত্য হলো- সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়। অধিকাংশ শাস্ত্রে যেমন, শ্রুতি, আগম, পুরাণ, ইতিহাস ইত্যাদিতে ও উত্তর মীমাংসা (ব্রহ্মসূত্র) ব্রহ্মের লক্ষণ প্রতিপাদন করার জন্য যে মীমাংসাটা দিয়েছে তা হলো—
"জন্মাদ্যস্য যতঃ" [ব্রহ্মসূত্র/১/১/২]
অর্থাৎ যার থেকে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় হয় তিনিই ব্রহ্ম। ঠিক একই যুক্তির সমর্থন করে শাস্ত্র শিবকেই একমাত্র ব্রহ্ম বলেই প্রতিপাদি করে। যদিও শ্রুতি, আগম, পুরাণ, ইতিহাস আদি অনুযায়ী শিব পঞ্চকৃত্যকারী। তাই এখানে কেবল তিনটা কৃত্য দেখিয়ে আলাদা ভাবে শিবকে ব্রহ্ম বলতেই হয় না। কিন্তু, বিষয়টি পরিস্কারভাবে বোঝাতেই ব্যাখ্যা করা। এবার শাস্ত্রে দেখে নেবো সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় এর কর্তা কে। এই প্রসঙ্গে শ্রুতিতে বলা আছে —
সর্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জলানিতি শান্ত উপাসীত।
[বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩/১৪/১]
সকলই ব্রহ্ম। যাহা হইতে জাত যাহাতে স্থিত যাহাতে পরিণতি প্রাজ্ঞ তিনি ব্রহ্ম। তাহাকে শান্ত স্বরূপে উপাসনা করিবে।
যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে । যেন জাতখনি জীবন্তি । যৎ প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি ॥
[তৈত্তিরীয় উপনিষদ/৩/১]
“যার থেকে এই সমস্ত ভৌতিক সত্তাগুলির (জগতের) উৎপত্তি হয়,
যার দ্বারা জন্মগ্রহণকারী জীবসমূহ জীবিত থাকে,
এবং যার মধ্যে তারা প্রলয়ে প্রবিষ্ট হয়—
তাকে (ঐ ব্রহ্মকেই) জানিবার চেষ্টা করো।”
এই ব্রহ্মটিই যে শিব তা শ্রুতি বাক্য দ্বারা সিদ্ধ হয়—
যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে ।
যেন জাতানি জীবন্তি । যৎ প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি । তং মামেব বিদিত্বোপাসীত । ভূতেভির্দেবেভিরভিষ্টুতোঽহমেব ॥ ৯
যেন জাতানি জীবন্তি । যৎ প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি । তং মামেব বিদিত্বোপাসীত । ভূতেভির্দেবেভিরভিষ্টুতোঽহমেব ॥ ৯
[ভস্মজাবাল উপনিষদ/২/৯]
অর্থ — পরমেশ্বর শিব বলছেন — যেখান থেকে সমস্ত প্রাণী ও সৃষ্ট জগৎ উৎপন্ন হয়, যার দ্বারা এরা জীবিত থাকে, যার মধ্যেই সমস্ত কিছু অবশেষে বিলীন হয়, তাকে (শিবকে) জেনে এবং উপলব্ধি করেই উপাসনা করা উচিত। আমি (শিব) সেই তত্ত্ব(পরমশিব তত্ত্ব), আমাকেই দেবতারা সহ সমগ্র বিশ্ব স্তুতি ও উপাসনা করে ॥ ৯ ॥
ইতিহাস শাস্ত্র মহাভারতে বলা হয়েছে—
অতঃ প্রবর্ততে সর্বমস্মিন্ সর্বং প্রতিষ্ঠিতম্।
অস্মিংশ্চ প্রলয়ং যাতি অয়মেকঃ সনাতনঃ ॥৩৬৷৷
[মহাভারত/অনুশাসনপর্ব/অধ্যায় ১৫/৩৬]
মহাদেব হইতেই সমস্ত উৎপন্ন হয়, ইহাতেই সমস্ত প্রতিষ্ঠিত আছে এবং এই মহাদেবেই সকল লয় প্রাপ্ত হইয়া থাকে। সুতরাং একমাত্র মহাদেবই সনাতন ॥৩৬৷৷
শিব নামের অর্থ নিয়ে পরম পবিত্র শিবমহাপুরাণে বলেছে—
শং নিত্যং সুখমানন্দমিকার পুরুষঃ স্মৃতঃ ॥
বকারঃ শক্তিরমৃতং মেলনং শিব উচ্চতে ॥
[শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/অধ্যায় ১৮/৭৬/৭৭]
“শ” কারের অর্থ হলো নিত্যসুখ এবং আনন্দ। “ই” কারকে পুরুষ আর “ব” কারকে অমৃতস্বরূপা শক্তি বলা হয়েছে। এই সবের সম্মিলিত রূপকে শিব বলা হয়।।
শিব হলো অনন্ত সত্ত্বা, যিনি সত্য, নিত্য, আনন্দময় । "শ" অক্ষর দ্বারা বোঝানো হয় নিত্য, চিরস্থায়ী সুখ ও আনন্দ — যা সচ্চিদানন্দ স্বরূপ পরমাত্মার লক্ষণ। "ই" দ্বারা বোঝানো হয় চৈতন্যস্বরূপ পুরুষ বা আত্মা — যিনি জ্ঞান ও সত্তার আধার। আর "ব" দ্বারা বোঝানো হয় অমৃতময় শক্তি — যা সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের ক্ষমতা ও ক্রিয়াশীলতা। এই তিনটি—সদা-আনন্দস্বরূপতা, চৈতন্যপুরুষত্ব এবং অমৃতশক্তি—যখন একত্র হয়, তখন সেই সম্মিলিত সর্বোচ্চ সত্তাকে ‘শিব’ বলা হয়।”
👉শিব হল —
নিত্য (শাশ্বত),
সচ্চিদানন্দ (সত্য-চৈতন্য-আনন্দ),
সর্বশক্তিমান (শক্তিসংযুক্ত পরম পুরুষ),
এবং সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের একমাত্র কারণ।
এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে দিই সেটি হল - প্রথমে আমি যা বললাম শিব হলো পঞ্চকৃত্যকারী। অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি, লয়, তিরোভাব ও অনুগ্রহ। এর মাধ্যমেই পরশিব জগতের পরিচালনা করেন। এবং এই পঞ্চকৃত্যকারী যে সাক্ষাৎ শিব তাও শ্রুতি দ্বারা প্রমাণিত —
পঞ্চধা বর্তমানং তং ব্রহ্মকার্যমিতি স্মৃতম্।
ব্রহ্মকার্যমিতি জ্ঞাত্বা ঈশানং প্রতিপদ্যতে ॥২২॥
[পঞ্চব্রহ্ম উপনিষদ]
জগতের যে কৃত্য রয়েছে তা পাঁচটি ভাগে বর্তমান থাকে, তাকেই ব্রহ্ম কার্য বলে, তাই পরমেশ্বর শিব পঞ্চকৃত্যকারী। পরমেশ্বর ঈশান সদাশিবই পাঁচটি কৃত্য প্রতিপাদন করেন।।
এমন বহু শাস্ত্র প্রমাণ উপলব্ধ হয় যেখানে পরমেশ্বর শিবকে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের কর্তা বলা হয়েছে। কিন্তু এখানে শ্রুতি, পুরাণ ও ইতিহাসের সিদ্ধান্ত এক। তাই এখানে আর অন্যান্য শাস্ত্র প্রমাণের প্রয়োজন নেই। কেননা জৈমিনি পূর্বমীমাংসা অনুযায়ী—
" বিরোধে ত্বনপেক্ষ্যং স্যাদ্ অসতি হ্যনুমানম্ "
[পূর্বমীমাংসা সূত্র/১/৩/৩]
শ্রুতি আর স্মৃতির বিরোধ বাঁধলে স্মৃতিশাস্ত্র অপেক্ষার যোগ্য নয় অর্থাৎ স্মৃতিকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যাবে না, এক্ষেত্রে স্মৃতি শাস্ত্র অপ্রমাণ হিসেবে পরিগণিত হবে। শ্রুতি আর স্মৃতির বিরোধ (অসতি) না হলে তবেই তা (স্মৃতি) অনুমানের যোগ্য অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য।
অর্থাৎ পূর্বমীমাংসা থেকেই জানা যায় যে, উত্তর মীমাংসা (ব্রহ্মসূত্রে) যে ব্রহ্মকে বোঝানো হয়েছে তা এক শিবই। কেননা পুরাণ, ইতিহাস আর শ্রুতির প্রমাণ একই সিদ্ধান্তকেই মেনে চলে যা, ন্যায় মতে দৃষ্টান্তের লক্ষণ।
অতএব, এই সূত্রে 'শিব' শব্দটি শুধু ব্যাকরণগত নয়, বরং অপরিহার্যভাবে পরমার্থবোধক — যা শৈব দর্শনে শিবের পরমেশ্বরত্ব ও সর্বময়তাকে প্রতিষ্ঠা করে।
“শিবঃ” [অমরকোষ/স্বর্গ-বর্গঃ/২১]
টীকা— শ্যতি তনুকরোত্যশুভমিত্যৌণাদিকাৎ শ্যতোর্ডবঃ
যিনি অশুভকে নাশ করেন তিনিই হলো শিব। তাই শিবকে সদা মঙ্গলকারী বলা হয়।।
‘শিবঃ’ শব্দের অর্থ — যিনি অশুভকে নাশ করেন, সেই পরমেশ্বর। অমরকোষ ও উণাদিসূত্রের ব্যুৎপত্তি অনুসারে, ‘শিব’ শব্দটি “শ্য” ধাতু (নাশ করা) থেকে “ডব্” উণাদিপ্রত্যয়ে গঠিত, যার অর্থ:
“শ্যতি অশুভম্ ইতি শিবঃ” — যিনি অকল্যাণ, দুঃখ, অজ্ঞান ও পাপকে দূর করেন।
এই ব্যাখ্যায় স্পষ্ট হয় যে শিব কেবল মঙ্গলময় নন, বরং তিনিই সেই পরম শক্তি, যিনি জীবের সমস্ত অশুভ, মোহ ও বন্ধন বিনাশ করে মুক্তি ও কল্যাণ প্রদান করেন।
👉এই প্রসঙ্গে শাস্ত্রে বলা হয়েছে—
পুংবিশেষপরো দেবো ভগবান্ পরমেশ্বরঃ ।
চেতনাচেতনাযুক্তপ্রপঞ্চাদখিলাৎ পরঃ ॥ ৪৫
লোকে সাতিশয়ত্বেন জ্ঞানৈশ্বর্যং বিলোক্যতে ।
শিবেনাতিশয়ত্বেন শিবং প্রাহুর্মনীষিণঃ ॥ ৪৬
[লিঙ্গমহাপুরাণ/উত্তরভাগ/৯ অধ্যায়/৪৪-৪৫]
অর্থ — সেই পরমেশ্বর ভগবান্ মহাদেব — সমস্ত জীবের থেকে শ্রেষ্ঠ এবং জড়-চেতনরূপ সমগ্র সৃষ্টিপ্রপঞ্চের ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী। যেমন এই জগতে জ্ঞান ও ঐশ্বর্যকে অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করা হয়, তেমনই অতিশয় মঙ্গলময় স্বরূপের কারণে মনীষিগণ মহাদেবকে ‘শিব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ॥৪৪–৪৫॥
আরেকটি পুরাণ থেকে দেখুন —
পাপঘ্নে বর্ততে শিশ্চ বশ্চ মুক্তিপ্রদে তথা ।
পাপঘ্নো মোক্ষদো নৃণাং শিবস্তেন প্রকীর্তিতঃ ॥
শিশব্দো মঙ্গলার্থশ্চ বকারো দাতৃবাচকঃ ।
মঙ্গলানাং প্রদাতা যঃ স শিবঃ পরিকীর্ত্তিতঃ ॥
[ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ/১/৬/৫২], [ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ/২/৫৬/৫৩]
যিনি মঙ্গল প্রদাতা, যিনি সদা কল্যাণকারী, যিনি পাপের নাশ তথা সকলকে মুক্তি প্রদান করেন তিনিই হলো শিব।
এবং ইতিহাস শাস্ত্রে বলা আছে—
স মেধযতি যন্নিত্যং সর্বান্ বৈ সর্ব্বকৰ্ম্মভিঃ।
মনুষ্যান্ শিবমন্বিচ্ছংস্তম্মাদেষ শিবঃ স্মৃতঃ ॥৯॥
[মহাভারত/অনুশাসনপর্ব্ব/অধ্যায়/১৩৯]
যে হেতু মহাদেব মানুষের মঙ্গল কামনা করিয়া সমস্ত কৰ্ম্মদ্বারা সর্ব্বদা সকল মানুষকে পবিত্র করেন; সেই হেতু তিনি শিব নামে অভিহিত হন ॥৯॥
এবং শাস্ত্রে আরও বলা আছে—
যুগ্মাকং নিতরাং শং বৈ কর্তাহং বিবুধর্ষভাঃ।
চরামি মহদত্যুগ্রং যজ্ঞাপি পরমং তপঃ।।৩
বিদ্বিষ্টা বো মম দ্বিষ্টাঃ কষ্টাঃ কষ্টপরাক্রমাঃ।
তেষামভাবঃ সম্পাদ্যো যুগ্মাকং ভব এব চ।।৪
[মৎস্যপুরাণ/১৩৩/৩/৪]
হে বিবুধবরগণ! আপনারা জানিবেন-আমি আপনাদের নিয়তই মঙ্গল-বিধাতা। আমি যে অত্যুগ্র মহৎ তপস্যা করি, তাহা আপনাদেরই মঙ্গলার্থ। আপনাদের যাহারা বিদ্বেষী, আমার তাহারা দ্বেষের পাত্র; কে আছে এমন তাঁর পরাক্রম ক্লেশ-দায়ক শত্রু? আমিই তাহাদিগের বিনাশ সাধন করিয়া তোমাদের মঙ্গলবিধান করিব।।
অর্থাৎ— শিবই পরমেশ্বর, যিনি নিঃস্বার্থভাবে, কেবল নিজের ইচ্ছাবলে সমস্ত জীবের মঙ্গলসাধন করেন, এবং সেই ব্রহ্মজ্যোতিরূপ, সর্বকারণ, সর্বমঙ্গলকারী শিব-স্বরূপের কারণেই তিনি ‘শিব’ নামে সম্বোধিত। তিনিই মুক্তির দাতা, আত্মার পরম গতি, এবং শাশ্বত কল্যাণের একমাত্র আশ্রয়।
অতএব, ‘শিব’ শব্দটি শুধুমাত্র এক গুণবাচক নাম নয়, বরং তা মোক্ষপ্রদায়ক, পাপনাশক ও সদাশিব পরমেশ্বরের প্রতীক — যিনি চিরন্তন মঙ্গল ও চৈতন্যের আধার।
‘শিব’ শব্দটি ব্যাকরণিক দিক থেকে যতই বিভিন্ন ধাতু ও প্রত্যয়যোগে বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, সমস্ত ব্যুৎপত্তি ও অর্থ মিলিয়ে এই সত্যই প্রতিভাত হয় — শিব কেবল একটি গুণ নয়, তিনি এক পরম সত্তা।
তিনি —
অশুভনাশক (পাপনাশক, অজ্ঞানবিনাশী),
নিত্যমঙ্গলময় ও শ্রেষ্ঠ (গুণমাত্র নয়, গুণাতীত ঈশ্বর),
এবং বিশ্বের শয়নতল ও আশ্রয়স্থল (ব্রহ্মেন্দ্রিয়তীত পরমেশ্বর)।
এ নিয়ে শাস্ত্রে বলা আছে যে—
নান্তঃপ্রজ্ঞং ন বহিপ্রজ্ঞং নোভয়তঃপ্রজ্ঞং ন প্রজ্ঞানঘনং ন প্রজ্ঞং নাপ্রজ্ঞম্। অদৃষ্টমব্যবহার্যমগ্রাহ্যমলক্ষণমচিন্ত্যমব্যপদেশ্যমেকাত্মপ্রত্যয়সারং প্রপঞ্চোপশমং শান্তং শিবমদ্বৈতং চতুর্থং মন্যন্তে স আত্মা স বিজ্ঞেয়ঃ।। ৭ ।।
[মাণ্ডূক্য উপনিষদ/৭]
যিনি না জ্ঞানস্বরূপ, না জ্ঞেয় আর না অজ্ঞেয়; যিনি অদৃষ্ট, তাঁকে না ব্যবহারে আনা যায়, না তিনি গ্রহণীয়, না চিন্তনীয়, না কথনীয় আর না আছে তাঁর কোনো লক্ষণ, তাঁর মধ্যে সমস্ত প্রপঞ্চের অভাব। পরমেশ্বর শিবই শান্ত, অদ্বৈত পরমসত্ত্বা, চতুর্থ অবস্থা বা তুরীয়াবস্থা, ব্রহ্মজ্ঞানীরা শিবকেই পরমাত্মা ও জ্ঞেয় মনে করেন।।
অতএব, এই তিন প্রামাণিক গ্রন্থ — মহাভাষ্য, উণাদিসূত্র ও অমরকোষ — ত্রিপ্রকারে শিবের পরমেশ্বরত্ব ও নিরাকার-সাকার দ্বৈতাতীত পরমতত্ত্ব-কে প্রতিষ্ঠিত করে।
👉 পরিশেষে বলবো—
সর্বত্রপূর্ণরূপোহস্মি সচ্চিদানন্দলক্ষণঃ।
সর্বতীর্থস্বরূপোহস্মি পরমাত্মাস্ম্যহং শিবং।।১২
[সামবেদ/মৈত্রেয়ী উপনিষদ/অধ্যায়/৩]
আমি সর্বত্র পূর্ণরূপে বিরাজিত সচ্চিদানন্দ লক্ষণযুক্ত।
তীর্থের স্বরূপও আমি এবং আমি পরমাত্মা স্বরূপ কল্যাণকারী শিব।।১২
পরমাত্মা শিব নিজেই ঘোষণা করছেন যে—
আমি সর্বত্র পূর্ণচৈতন্যস্বরূপ,
আমার প্রকৃতি সচ্চিদানন্দ,
আমি তীর্থরূপে, অর্থাৎ সমস্ত শুদ্ধতার আধার,
এবং আমি পরমাত্মা — যিনি জীবের অন্তঃস্থ চৈতন্য,
সেই আমি শিব — কল্যাণময় ব্রহ্মতত্ত্ব।
উক্ত শ্রুতি বাক্য দ্বারা এটাই জানা যায় যে, শিবই সেই পরমাত্মা, যিনি সর্বত্র, সর্বশক্তিমান, সচ্চিদানন্দ স্বরূপ এবং পরম কল্যাণময় ব্রহ্ম।
🔥অর্থাৎ যারা শ্রুতিতে অবস্থিত শিব নামের অর্থকে নিরাকার পরব্রহ্মের গুণবাচক নাম বলেন তাদের এটা এবার জেনে নেওয়া দরকার যে— শিবই অদ্বিতীয় পরমেশ্বর। ইহা শিবের গুণ যে শিব সর্বজীবের মঙ্গল বিধান করেন। তাই পরব্রহ্ম শিবকে মঙ্গলময় বলা হয়।
——————————————————————————————————————————
⚠️এবার উক্ত প্রসঙ্গ থেকে যে আপত্তি অন্যান্যরা করতে পারে তা হলো—
এটাই যে ত্রিনেত্র, নীলকণ্ঠ, কৈলাস নিবাসী, পাঁচমুখ, দশহাত বিশিষ্ট শিব তার স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তাই এই দাবী গ্রহণ যোগ্য নই। তাই শ্রুতিতে শিব বলতে পরব্রহ্মকে বুঝিয়েছে যিনি মঙ্গলময়।
👉আমি প্রশ্নের যুক্তিসম্মত ও শাস্ত্রীয় ব্যাখা দেবো। তবে প্রথমে বলে রাখতে শিবই যে পরব্রহ্ম তা সর্ব শাস্ত্র দ্বারা স্বীকার্য। এবং মহান আচার্যরাও একই কথাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন৷ তাই শাস্ত্রে যিনি একমাত্র অদ্বৈত পরব্রহ্ম তিনিই শিব। কারণের শিব ছাড়া আর কিছুই নেই। সবই এক শিবের বিভিন্ন প্রকাশ। তাই এখানে বুঝতে হবে যে, নিরাকার ও সাকার, পরা-অপরা ভেদে শিব দুইভাবেই ক্রীড়া করছেন৷ নিরাকার, নির্গুণ অবস্থায় শিব হলো পরমশান্ত ও নিষ্ক্রিয় যাকে পরমশিব বলা হচ্ছে। আর সাকারে শিব হলো ত্রিনেত্রধারী নীলকন্ঠ কৈলাস নিবাসী সদাশিব যিনি পঞ্চকৃত্যকারী। এখানে আবার সদাশিবের স্বরূপ ও ত্রিদেবের অন্তর্গত রুদ্রের স্বরূপও একই। এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে—
⚠️ শংকা— এটাই যে ত্রিনেত্র, নীলকণ্ঠ, কৈলাস নিবাসী, পাঁচমুখ, দশহাত বিশিষ্ট শিব তার স্পষ্ট প্রমাণ নেই। তাই এই দাবী গ্রহণ যোগ্য নই। তাই শ্রুতিতে শিব বলতে পরব্রহ্মকে বুঝিয়েছে যিনি মঙ্গলময়।
✅ শংকা নিবারণ— প্রথমে জেনে রাখতে হবে ব্রহ্মের দুটি অবস্থা সম্বন্ধে। কেননা ব্রহ্ম না একাধারে নিরাকার আর না একাধারে সাকার। এই ব্রহ্মের অবস্থা সম্পর্কে শ্রুতিতে বলা হয়েছে—
“দ্বে বাব ব্রহ্মণো রূপে মূর্ত্তঞ্চৈবামূর্ত্তঞ্চ”
[বৃহদারণ্যক উপনিষদ/২/৩/১]।
ব্রহ্মের দুটি রূপ একটি নিরাকার অপরটি সাকার।।
এবং শ্রুতিতে আরও বলা হয়েছে যে—
“তদনুপ্রবিশ্য সচ্চ ত্যচ্চাভবৎ”
[তৈত্তিরীয় উপনিষদ/২/৬]
অর্থাৎ— ব্রহ্ম সংসারে অনুপ্রবেশ করিয়া সৎ অর্থাৎ মূর্ত এবং ত্যৎ অর্থাৎ অমূর্ত উভয়ই হলেন।
অর্থাৎ এর থেকে জানা যাচ্ছে ব্রহ্ম সাকার ও নিরাকার দুই অবস্থাতেই বিদ্যমান আছেন।
এই প্রসঙ্গে যাস্কনিরুক্তে আছে—
"অপি বোভয়বিধাঃ স্যুঃ"
[যাস্ক নিরুক্ত/৭/২/৩/৭]
দেবতারা মনুষ্যকার এবং মনুষ্যাকার নয় দুই হতে পারে।
👉প্রথমে জেনে রাখা উচিত ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। সেই অদ্বৈত একমাত্র ব্রহ্মই নিরাকার নির্গুণ ও সাকার সগুণ অবস্থায় ভাসিত হয়ে থাকেন। তাহলে এবার দেখার বিষয় যে, সেই এক অদ্বৈত অদ্বিতীয় ব্রহ্মটা কে! সেই ব্রহ্ম নিয়ে শ্রুতিতে বলা আছে যে—
“একমেবাদ্বিতীয়ম” [ছান্দোগ্য উপনিষদ/৬/২/১] ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। তাই শ্রুতি সিদ্ধান্ত অনুসারে সেই এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মটা সাক্ষাৎ পরমেশ্বর শিব। কেননা শ্রুতিতে পরমেশ্বর শিব সম্পর্কে এটাই বলা হয়েছে যে- “এক এব রুদ্রো ন দ্বিতীয়” [তৈত্তিরীয় সংহিতা/১/৮/৬], [শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ/৩/২] অর্থাৎ রুদ্রই (পরশিব অর্থে) অদ্বিতীয় পরমেশ্বর, দ্বিতীয় কোনো সত্ত্বা নেই।
তাই এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় সেই এক অদ্বৈত অদ্বিতীয় ব্রহ্ম শিবই নিরাকার ও সাকার দুই-ই।
👉নির্গুণ এবং সগুণ রূপ নিয়ে ঋগবেদে বলা আছে যে—
যোহসৌ সর্বেষু বেদেষু পঠতে হ্যজ ঈশ্বরঃ
অকাযো নির্গুণোহধ্যাত্মা তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত।।২৩।।
[ঋগবেদ/খিলভাগ/৪/১১] [ঋগবেদ/আশ্বলায়ন শাখা/১০/১৭১]
ব্যাখ্যা — সকল জীবের অভ্যন্তরে যে এক নিরাকার চৈতন্য সত্ত্বা বর্তমান, তিনিই আসলে সেই ব্রহ্ম। ব্রহ্ম আর জীবাত্মা অভিন্ন। এই ব্রহ্মই সাক্ষাৎ পরমশিব। তাঁকে আত্মজ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করতে হয়, এই জ্ঞান লাভের উত্তম মার্গ হল বেদ শাস্ত্র/ বেদান্ত। এই বেদ দ্বারা সেই নির্গুণ পরমেশ্বর শিবই বাচিত হন। যোগীগণ তাই নিজ আত্মাকে সেই শিবের সাথেই একাত্ম মনে করে অদ্বৈত ভাবে উত্তীর্ণ হন। তাই সেই এক শিবের প্রতিই অর্থাৎ আত্ম স্বরূপের প্রতিই মন সংকল্পিত হওয়া উচিৎ প্রত্যেকের। ইহাই আসলে মানস পূজা। সেই জন্য মান্য যোগশাস্ত্র, আগম, তন্ত্র এর জ্ঞান কাণ্ড সর্বদাই শ্রুতি শাস্ত্রের জ্ঞানকাণ্ডকে সমর্থন করে চলে। উভয়েই সেই এক শিবেরই প্রতিপাদক।
👉পরমেশ্বর শিবই নিরাকারে নির্গুণ অকায়ো ব্রহ্ম আর সাকারে কৈলাস নিবাসী, নীলকণ্ঠ সদাশিব—
ঋগ্বেদ পরমেশ্বর শিব সম্পর্কে কি বলছে—
পরাৎপরতরো ব্রহ্মা তৎপরাৎপরতো হরিঃ।
তৎপরাৎপরতো হ্যেষ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥ ১৮
প্রযতঃ প্রণবো নিত্যং পরমং পুরুষোত্তমম্ ।
ওঙ্কারং পরমাত্মনং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥ ২০
যো বৈ বেদাদিষু গায়ত্রী সর্বব্যাপীমহেশ্বরাৎ ।
তদ্বিরুক্তং তথাদ্বৈশ্যং তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু ॥ ২১
[ঋগবেদ/খিলভাগ/৪/১১] [ঋগবেদ/আশ্বলায়ন শাখা/১০/১৭১]
সর্বোপরি হলেন ব্রহ্মা। তাঁরও উপরে হরি এবং এদের চেয়েও পরমতম হলেন ঈশ (ঈশান/মহাদেব), যিনি নিত্য, প্রণব, পরম, পুরুষোত্তম, সাক্ষাৎ ওঙ্কার এবং পরমাত্মা, যিনি সাক্ষাৎ সমগ্র বেদের গায়ত্রীস্বরূপ, যিনি সর্বব্যাপী মহেশ্বর বলে উক্ত হয়েছেন, সেই অদ্বিতীয় শিবের প্রতি মন সংকল্পিত হউক।
👉 ঋগ্বেদে বর্ণিত এই 'শিব' আসলেই কে সেটা দেখে নেওয়া যাক—
কৈলাসশিখরে রম্যে শংকরস্য শুভে গৃহে ।
দেবতাস্তত্র মোদন্তি তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥ ২৪
কৈলাসশিখরাভাসা হিমবদিগরিসংস্থিতা ।
নীলকণ্ঠং ত্রিনেত্রং চ তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্ত ॥ ২৫
[ঋগবেদ/খিলভাগ/৪/১১] [ঋগবেদ/আশ্বলায়ন শাখা/১০/১৭১]
অর্থ — কৈলাস পর্বত শিখরে শিব শংকরের ভবনে সমস্ত দেবতাগণ (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, ইন্দ্রাদি) বিচরণ করছেন। সেই (সর্বদেবাত্মক কৈলাসবাসী) শিবের প্রতি মন সংকল্পিত হউক। যিনি হিমগিরি কৈলাস শিখরে বাস করেন, যিনি (সাকারে) নীলকন্ঠ, যিনি ত্রিনেত্র সেই শিবের প্রতি মন সঙ্কল্পিত হউক।
সিদ্ধান্ত - এক শিবই ত্রিদেবরূপে প্রকট হয়েছেন। মূল সত্ত্বা সেই শিবই, যার প্রত্যক্ষ সাকার রূপ হল- ত্রিনেত্রধারী ও নীলকন্ঠ (সদাশিব)।
অর্থাৎ ব্রহ্ম সাকার নিরাকার দু ভাবেই আছেন।
শুক্ল-যজুর্বেদ এর ১৬নং অধ্যায়ে পরমেশ্বর শিবের সাকারত্ত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায়, যেখানে শিবকে, ত্রিলোচন, নীলকণ্ঠ, কপর্দ্দী, ধূর্জটি, কৃত্তিবাসা, পিনাকধৃত, নীললোহিত ইত্যাদি বলা হয়েছে যা শিবের সাকারত্ত্বকে প্রতিপাদিত করে। যেমন উক্ত অধ্যায়ে বলা হয়েছে—
“নমোহস্তু নীলগ্রীবায় সহস্রাক্ষায় মীঢুষে।। ৮।।
নমঃ সহস্রাক্ষায় চ শতধন্বনে চ। নমো গিরিশয়ায় চ শিপিবিষ্টায় চ।।২৯।।
সহস্রাণি সহস্রশো বাহ্বেবাস্তব হেতয়ঃ। তাসামীশানো ভগবঃ পরাচীনা মুখা কৃধি।।৫৩।।”
[শুক্ল-যজুর্বেদ/অধ্যায় ১৬ (শতরুদ্রিয়/রুদ্রসূক্ত)]
এখানে পরশিবের বিশ্বোত্তীর্ণ ও বিশ্বাত্মক দুই স্বরূপেই সহস্রাক্ষ (সহস্র চোখ বিশিষ্ট) বলা হয়েছে। বিশ্বাত্মক অবস্থায় যিনি গিরিনিবাসী অর্থাৎ জ্ঞানকৈলাস নিবাসী, যিনি জটাজুটধারী, নীলকণ্ঠ, পিনাকধারী, কৃত্তিবাসা। সেই জ্ঞানকৈলাস নিবাসী রুদ্রই (সদাশিব) বিষ্ণুরূপ ধারন কর্তা।
👉তৈত্তিরীয় সংহিতার ভাষ্যে সায়ণাচার্যজী বলেছেন—
“গিরৌ কৈলাসে স্থিত্বা নিত্যং প্রাণিভ্যো যঃ শং তনোতি স সম্বোধনং হে গিরিশন্ত। তথাবিধ হে রুদ্র শং তময়াতিশয়েন সুখং তনুবাঽভিচাকশীহি মামনিলক্ষ্য প্রকাশং কুরু।”
“গিরৌ কৈলাসে রোবে তিষ্ঠতীতি গিরিশঃ স্বামচ্ছ প্রাপ্তুং শিবেন মঙ্গলঞ্চেন স্তুতিরূপেণ বচসা বদামসি বয়ং।”
[তৈত্তিরীয় সংহিতা/৫ম প্রপাঠক]
"যিনি কৈলাস পর্বতে সর্বদা অবস্থান করেন এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শান্তি ও মঙ্গল বিস্তার করেন, তাঁকে আমরা 'গিরিশ' নামে সম্বোধন করি। হে রুদ্র! আপনি সেই কল্যাণময় রূপে, অতিশয় শান্তিদায়ক তনু দ্বারা, আমাকে দর্শন দিন, আমার অন্তরে জ্যোতি প্রকাশ করুন।"
"আপনি যেহেতু গিরিতে, অর্থাৎ কৈলাস পর্বতে অধিষ্ঠান করেন, তাই আপনাকে 'গিরিশ' বলা হয়। আমরা আপনাকে 'শিব' নামে—যার অর্থ মঙ্গলময়—স্তব বা প্রশংসা করি, যাতে আমরা আমাদের অভীষ্ট, পরম কল্যাণ, আপনার প্রসাদে লাভ করতে পারি।"
🔥অর্থাৎ সায়ণাচার্য নিজেই বলছেন— শিবই সকলের মঙ্গলকারী পরমেশ্বর যিনি গিরিতে থাকেন। এখানে গিরি বলতে কৈলাসকেই বুঝিয়েছে। বিষয়টি এখানে পরিস্কার শ্রুতিতে উল্লেখিত শিব কোনো নির্গুণ ব্রহ্মের গুণবাচক নাম নয়, শিবই মঙ্গলময় ব্রহ্ম।
ব্রহ্ম ≠ শিব ❌
শিব = ব্রহ্ম ✔️
পরশিব না একধারে নিরাকার না একাধারে সাকার। জগৎ পরিচালনার জন্য পরশিব সাকার হন।
কারণ যে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আকার দিয়েছেন তিনি একদমই নিরাকার কীভাবে হবেন??
তাই শাস্ত্রের মান্যতা এটাই যে পরশিব সাকার এবং নিরাকার দুই অবস্থাতেই বিদ্যমান। ইহা শাস্ত্রের বাক্য আর ভগবদ গীতার ১৬ অধ্যায়ের ২৩/২৪ নং শ্লোক অনুযায়ী শাস্ত্রকে মানতেই হবে, না মানলে তার পরাগতি প্রাপ্ত হবে না।
অর্থাৎ এর থেকে বিষয়টা স্পষ্ট যে শ্রুতিতে উল্লেখিত শিব কোনো নির্গুণ ব্রহ্মের গুণবাচক নাম নয়। শিবই নিরাকার ও সাকার দুই অবস্থাতেই বিরাজমান। তাই শ্রুতিতে শিব বলতে মঙ্গলময় নির্গুণ ব্রহ্ম নয়, বরং শিব সকলের মঙ্গল করেন বলে শ্রুতিতে শিবকে মঙ্গলময় বলা হয়েছে।
👉এবং যাস্ক নিরুক্তে এও বলা আছে যে—
"এস চাখ্যানসময়ঃ"
[যাস্ক নিরুক্ত/৭/২/৩/৯]
পুরাণ ও ইতিহাসের সিদ্ধান্ত।
অর্থাৎ দেবতার আকার কেমন হবে তার জন্য পুরাণ এবং ইতিহাস শাস্ত্র (রামায়ণ/মহাভারত) অনুযায়ী নির্ধারণ করা যাবে। আর পুরাণে, ইতহাস শাস্ত্রে দেবতার আকার কেমন তার পরিস্কার উল্লেখ পাওয়া যায়।
👉এই নিয়ে পুরাণে পরমেশ্বর শিব বলেছেন —
শ্রীমহেশ উবাচ।
প্রলয়স্থিতিসর্গাণাং হাং সগুণোঽগুণঃ ।
পরব্রহ্ম নির্বিকারী সচ্চিদানন্দলক্ষণঃ ॥
ত্রিয়া ভিন্নো হ্যহং বিষ্ণো ব্রহ্মবিষ্ণুহরাখ্য ।
সর্গরক্ষালয়গুণৈর্নিষ্কলোহং সদা হরে ॥
[শিবমহাপুরাণ/রুদ্র সংহিতা/সৃষ্টি খণ্ড/অধ্যায় ৯/ ২৭-২৮ নং শ্লোক]
অর্থ — যদিও নির্গুণ, আমিও সগুণ এবং বিলীন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সৃষ্টির রচয়িতা। আমি ক্ষয় ও পরিবর্তন ছাড়া পরম ব্রহ্ম । অস্তিত্ব, জ্ঞান এবং আনন্দ আমার বৈশিষ্ট্য।
সত্যই, হে হরি, আমি চিরকালের জন্য নিষ্কল (নির্গুণ)। সৃষ্টি, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিলুপ্তির ক্রিয়াকলাপের জন্য আমি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও হর এই তিন রূপে নিজেকে প্রকাশ করি, হে বিষ্ণু।।
অর্থাৎ এর থেকেও বিষয়টা পরিস্কার যে- শিবই নির্গুণ ব্রহ্ম যিনি সৃষ্টির নিমিত্ত সাকার হয়ে বিভিন্ন স্বরূপে প্রকাশিত হন। আর এই শিবই হলো শ্রুতিতে উল্লেখিত মঙ্গলময় ব্রহ্ম।
👉এবার দেখে নেবো শ্রুতিতে কি শিবকে ত্রিনেত্রধারী পাঁচমুখ দশহাত বিশিষ্ট বলা হয়েছে কিনা। তবে দেখে নেওয়া যাক সেই শব্দপ্রমাণ —
বিন্দুরূপং মহাদেবং ব্যোমাকারং সদাশিবম।
শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশং ধৃতবালেন্দু মৌলিনম্।।৯৯
পঞ্চবক্ত্রযুতং সৌম্যং দশবাহুং ত্রিলোচনম্।
সর্বাযুধৈর ধৃতাকারং সর্বভূষণ ভূষিতম্।।১০০
উমার্ধদেহং বরদং সর্বকারণ কারণম্।
আকাশধারণাত্তস্য খেচরত্বং ভবেদ্ধ্রুবম্।।১০১
[কৃষ্ণ-যজুর্বেদ/যোগতত্ত্ব উপনিষদ]
যিনি বিন্দু স্বরূপ , যিনি সকল দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তাই মহাদেব , যার স্বরূপ ব্যোমাকার অর্থাৎ অসীম অনন্ত অনাদি , তিনিই সদাশিব । যিনি শুদ্ধস্ফটিকের ন্যায় শুভ্র শ্বেতবর্ণ ও জটাতে যিনি অর্ধচন্দ্রকে ধারণ করেছেন।।
সেই পঞ্চমুখ বিশিষ্ট , দশবাহু ও ত্রিনেত্রযুক্ত সৌম্যরূপী সদাশিবই সকলপ্রকার আয়ুধ (অস্ত্র) এবং তার দেহ সর্বপ্রকার অলংকার দ্বারা সুসজ্জিত ।।
যিনি পরাম্বিকা উমাকে নিজের অর্ধদেহে ( বামভাগে ) ধারণ করেছেন , সেই বরদাতা পরমেশ্বর সদাশিবই অখিল চরাচরের সমস্ত কারণের একমাত্র কারণ ৷ সেই আকাশ স্বরূপ বিশাল ও অনন্ততত্ত্বময় সদাশিবের ধ্যান করলে সাধক সেই পরমতত্ত্বরূপী পরমাত্মার সাথে একাত্ম হয়ে যান ও চিরকাল তাহার আত্মা পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয়ে ( শিবোঽহম = শিব অহম্ ) অভেদ্যবস্থাতেই স্থিত থাকে / পরমগতি লাভ করে ।।
🔥অতএব, শ্রুতিতে বর্ণিত শিব বলতে শুধুমাত্র নির্গুণ মঙ্গলস্বরূপ বোঝানো হয়নি—বরং বোঝানো হয়েছে সেই সর্বব্যাপী, সর্বতত্ত্বাত্মক, সর্বরূপধারী, নিরাকার ও সাকার, শুদ্ধ ও স্বয়ম্ভূ চৈতন্যসত্তা—পরমশিবকে, যিনি নিজেই অদ্বৈত ব্রহ্ম।
‘শিব’ শব্দ শুধু ব্যাকরণ দিয়ে ব্যাখ্যাযোগ্য নয় — বরং সমস্ত ব্যুৎপত্তি, শাস্ত্র ও দর্শনকে কেন্দ্র করে এটি এক মহাসত্তার প্রকাশ, যিনি মোক্ষদাতা, কল্যাণস্বরূপ, চিরন্তন, সর্বব্যাপী এবং শিবই ব্রহ্মতত্ত্ব ও পরম প্রকাশ।
✅ সিদ্ধান্ত—
১. ব্রহ্মের বহু রূপের মধ্যে একটি শিব - এই মতবাদ ভুল।
২. শিব নির্গুণ ব্রহ্মের গুণবাচক নাম এটিও অযৌক্তিক।
৩. শিবই সাক্ষাৎ অদ্বৈত অদ্বিতীয় নিরঞ্জন ব্রহ্ম।
৪. শিবই সাক্ষাৎ মঙ্গলময় ব্রহ্ম।
৫. শিবই নিরাকারে অকায়ো নির্গুণ ব্রহ্ম ও সাকারে ত্রিনেত্রধারী নীলকন্ঠ কৈলাস নিবাসী সদাশিব।
———🙏সর্বে হ্যেষ রুদ্র তস্মৈ রুদ্রায় নমো অস্তু🙏———
ওঁ সাম্বসদাশিবায় নমঃ 🚩🙏
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে ✊🚩
✍️অপপ্রচার দমন ও লেখানীতেঃ— অন্তিক ভট্টাচার্য্য (শম্বরনাথ শৈব)
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ— আমার গুরু শ্রী নন্দীনাথ শৈবাচার্য জী ও আমার আদর্শ শ্রী রোহিত কুমার চৌধুরী শৈবজীকে 🙏
কপিরাইট ও প্রচারেঃ— International Shiva Shakti Gyan Tirtha (আন্তর্জাতিক শিব শক্তি জ্ঞান তীর্থ)
বিঃ দ্রঃ— লেখাটি কপি করলে সম্পূর্ণ কপি করবেন, কোনো রকম কাটাছেঁড়া করা যাবে না।
শিবঃ ওঁ....🙏
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন