পশু হিংসাকারী — নির্দয় স্ববিরোধী দয়ানন্দ সরস্বতী




ভূমিকা -

বর্তমান সময়ে আর্যসমাজীরা নিজেদের সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য ও ধার্মিক হিসেবে প্রমাণ করবার জন্য মানুষের কাছে বিভিন্ন ভাবে অভিনয় করে চলেছে। সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে নিজেদের দলে টেনে নিচ্ছে। ঠিক তেমনই একটি অভিনয় হল আর্যসমাজীদের পশুপ্রেম বিষয়টি ।

 বর্তমান কালে আর্যসমাজীরা নিজেদের পশুপ্রেমী হিসেবে দেখিয়ে বেড়ায়, কিন্তু আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতী নিজেই পশুহিংসা করতেন । 


পশু হিংসাকারী নির্দয়  স্ববিরোধী দয়ানন্দ সরস্বতী 


আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী বেদের মন্ত্রের ভাষ্য করতে গিয়ে পশু হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন, বেদের মন্ত্রের ভুল অর্থ বের করে বেদের নামে কলঙ্ক লাগানর অপপ্রয়াস করেছেন দয়ানন্দ সরস্বতী। চলুন দেখে নেওয়া যাক -

পশু হিংসাকারী নির্দয় দয়ানন্দ সরস্বতী - প্রমাণ (১)

দয়ানন্দ সরস্বতী যজুর্বেদের ১৩ অধ্যায়ের ৪৮ ও ৪৯ নং মন্ত্রের ভাষ্য করে নিজের ব্যক্তিগত ভাবে ভাবার্থ লিখেছেন --

ইমং মা হিংসীরেকশফং পশুং কনিক্রদং বাজিনং বাজিনেষু ।

গৌরম্ আরণ্যম্‌ অনু তে দিশামি তেন চিন্বানস্‌ তন্বো নিষীদ ॥

গৌরং তে শুগ্ ঋচ্ছতু যং দ্বিষ্মস্ তং তে শুগ্ ঋচ্ছতু ॥ ৪৮

 [যজুর্বেদ/১৩ অধ্যায়/৪৮ নং মন্ত্র]

(১)দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের হিন্দি ভাবার্থ দেখুন --

"मनुष्यों को उचित है कि जिनके मारने से जगत् की हानि और न मारने से सबका उपकार होता है, उनका सदैव पालन पोषण करें, और जो पशु तुम्हारे लिए लाभकारी न हों उनको मारें" ॥४८ ॥

(১) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের বাংলায় অনুবাদিত  ভাবার্থ  দেখুন --

মানুষের উচিত —যাদের হত্যা করলে জগতের ক্ষতি হয় এবং না মারলে সকলের উপকার হয় —তাদের সর্বদা পালন-পোষণ করবে। আর যেসব পশু তোমাদের জন্য লাভকারী না হয়, তাদের হত্যা করবে ॥৪৮॥

-------------------------------------------------------------

ইম্ সাহস্রং শতধারমুৎসং ব্যচ্যমানং সরিরস্য মধ্যে।

ঘৃতং দুহানাম্ অদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোমন্।

গবয়ম্ আরণ্যম্ অনু তে দিশামি তেন চিন্বানঃ তন্বো নিষীদ।

গবয়ং তে শুগ্ ঋচ্ছতু যং দ্বিষ্মস্ তং তে শুগ্ ঋচ্ছতু॥

[যজুর্বেদ/১৩ অধ্যায়/৪৯ নং মন্ত্র]

 (১) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের হিন্দি পদার্থ  দেখুন --

"हे (अग्ने) दया को प्राप्त हुए परोपकार राजन्, (ते) तेरे राज्य में, (आरण्यम्) - वन में रहने वाली, (गवयम्) - गौ जाति की नीलगाय से खेती की हानि होती है इस कारण, (तेन) - उसके मारने को, (अनुदिशामि) - उपदेश करता हूँ"

(১) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের বাংলায় অনুবাদিত  পদার্থ  দেখুন --

"হে (অগ্নে)!  দয়াকে প্রাপ্তকারী পরোপকারে রত রাজা, (তে) তোর রাজ্যে যে, (আরণ্যম্‌) — বনাঞ্চলে বাস করে এমন, (গব্যম্‌) — গরুর জাতের ‘নীলগাই’ দ্বারা ক্ষেতের হানি হয় এই কারণে, (তেন) — তাদের হত্যার জন্য, (অনুদিশামি) — উপদেশ দিচ্ছি।"


(২) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের হিন্দি ভাবার্থ দেখুন --

 गौ जाति से सम्बन्ध रखने वाली, गौ के समान दिखने वाली नीलगाय आदि जो जंगल में रहती है, उससे खेती की हानि होती है इसलिए वह मारने योग्य है,

(২) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের বাংলায় অনুবাদিত ভাবার্থ  দেখুন --

গরুর জাতিভুক্ত, গরুর মতো দেখতে নীলগাই আদি যারা বনে থাকে, তাদের দ্বারা চাষবাসের হানি হয়, তাই তারা হত্যারই যোগ্য।




❌ দয়ানন্দের সরস্বতীর দাবীর খণ্ডন (ISSGT) — (১)

এমন ভাষ্যকারী কুবুদ্ধিসম্পন্ন দয়ানন্দ সরস্বতী জী আপনাকে কি বলব বলুন তো ? 

আপনি সত্যিই দন্য এবং ধন্য সেই আর্য‌সমাজ, যারা এমন ভাষ্যকে মেনে নিয়ে বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেয়। স্বামীজির মাথায় হঠাৎ কী বুদ্ধি এলো যে, তার মাধ্যমে তিনি ধর্ম ও ধর্মকর্ম ত্যাগ করে হিংসার পথ বেছে নিলেন ? 

এইরকম শিক্ষা তো বেদের মধ্যে দেখা যায় না। বরং এটা তো বেদের নামে তিনি তাঁর শিষ্যদের জন্য একপ্রকার উন্মুক্ত ছাড়পত্রই দিয়ে দিলেন — যে নীলগাই ইত্যাদি যে যে পশুরা তোমার উপকারে আসে না, তাদের মেরে ফেলো।

হায়! হায়! এমন বুদ্ধির প্রতি ধিক্কার জানাই। দেখুন পাঠকবৃন্দ ! বেদের এই মন্ত্রের প্রকৃত অর্থ কখনোই দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা অর্থের মতো নয়। এই বেদ-শ্রুতি একটি প্রার্থনার অর্থ বহন করে, যা দয়ানন্দের লেখা কাল্পনিক অর্থের থেকে ভিন্ন অর্থ ।  যজুর্বেদের ১৩ অধ্যায়ের ৪৯ নং মন্ত্রের এই শ্রুতিতে প্রকৃতপক্ষে এই প্রার্থনাই করা হয়েছে যে —

"হে অগ্নি! এই যে গোশ্রেষ্ঠ স্থানে বসবাসকারী, হাজার রকম উপকারী দুগ্ধাদি শত শত ধারা দানকারী, লোকসমাজে নানান কাজে ব্যবহৃত এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ঘৃত ও দুধ প্রদানকারী এই 'অদিতিরূপা' গরু যেন আপনার এই রূপ দেখে ব্যথিত না হয়। এরই বিপরীত বনাঞ্চলে বসবাসকারী গব্য আদি বন্যপশু (যাদের দ্বারা চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়) আপনাকে দেখে যেন ভয় পায়।"

 এই অর্থটিই উক্ত বেদ মন্ত্রের প্রকৃত অর্থ। দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা অর্থ কখনোই প্রকৃত অর্থ নয়। 

  এই কারণে মানুষ বনবস্তুর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশাল ইত্যাদি জ্বালিয়ে রাখে, যাতে বনজ পশুরা ভয় পেয়ে দূরে সরে যায়। কারণ সব বনজ পশুরাই অগ্নিকে ভয় পায় এবং আগুন দেখে দূরে সরে যায়। এই হল সেই শ্রুতি মন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য।

এখানে কোথাও কোনো জীব হত্যা করবার কথা বলা হয়নি। এই কথা দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারী আর্যসমাজীদেরও বুঝে নেওয়া উচিত।

কিন্তু দয়ানন্দ তাঁর বেদভাষ্যে তাঁর প্রিয় শিষ্যদের একপ্রকার মুক্ত অনুমতি দিয়েছেন — যে বা যারা তোমার উপকারে আসে না, এমন পশুদের মেরে ফেলো।

এবং এই অর্থ স্বামীজির দ্বারা ভুলক্রমে হয়েছে, এমনটা নয়। তিনি তাঁর অন্য লেখাগুলিতেও পশুহিংসার সমর্থন করেছেন। 

যেমন "সত্যার্থ প্রকা‌শ"-এর প্রথম সংস্করণের পৃষ্ঠা ১৪৮-এ লেখা আছে —
মাংসের পিণ্ড দেওয়াতে তো কোনো পাপ নেই ।


পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭২নং -এ লিখেছেন যে, যজ্ঞের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত পশুর বলি দেওয়া হচ্ছে তা বিধি পূর্বক কৃত হনন প্রক্রিয়া ।


পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০২নং -এ লিখছেন যে কেউ যদি মাংস ভক্ষণ না করে তবে পশু পাখি মৎস্য এবং এত জলরাশি রয়েছে যে তার থেকে শত সহস্র গুন উৎপন্ন হবে যা পরবর্তীতে মানুষের প্রাণনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং খেতে ধানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সমগ্র মানুষের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাবে এবং এভাবে মানব জাতি নষ্ট হয়ে যাবে। 


পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০৩ নং -এ লিখছেন যেখানে যেখানে গোমেধাদি উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে পশুদের মধ্যে পুরুষদের হত্যার কথা বলা হয়েছে। এবং একটি ষাড় দ্বারা হাজার হাজার গরু গর্ভবতী হতে পারে, এর থেকে কোন ক্ষতিরও সম্ভাবনা নেই । যে গরু বন্ধ্যা তাকেও যজ্ঞের জন্য হত্যা করা উচিত, কারণ বন্ধ্যা গরুর থেকে দুগ্ধ ও সন্তান উৎপাদন হয় না ।


পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৬৬নং -এ লিখছেন যে, পশুদের হত্যায় ক্ষণিক দুঃখ হয় কিন্তু চরাচর জগতে যশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকার হয় ।


এই সমস্ত কথা ‘সত্যার্থ প্রকা‌শ’-এর প্রথম সংস্করণে স্বয়ং স্বামী দয়ানন্দই লিখেছিলেন, যেগুলো পরে ‘সত্যার্থ প্রকা‌শ’-এর দ্বিতীয় সংস্করণে সংশোধন করে এই বলে মুছে ফেলা হয়েছিল যে, এই কথাগুলো লেখার ও ছাপানোর ভুল ছিল প্রকাশক বা অন্যান্যদের — স্বামীজির নয়।

কিন্তু নীচের লেখাটি পাঠ করলে বিদ্বান ব্যক্তিরা সহজেই বুঝতে পারবেন যে, দয়ানন্দজী সত্য ধর্ম প্রচারক ছিলেন, নাকি অধর্মের বিস্তারকারী।

-------------------------------------------------------------------------------------

পশু হিংসাকারী নির্দয় দয়ানন্দ সরস্বতী - প্রমাণ (২)


এবং শুনুন, আরও—
 যজুর্বেদের ১৫ অধ্যায়ের ১৫ নং মন্ত্রে দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন যে—

অযং পুরো হরিকেশঃ সূর্যরশ্মিস্ তস্য রথগৃৎসশ্ চ রথৌজাশ্ চ সেনানীগ্রামণ্যৌ।
পুঞ্জিকস্থলা চ ক্রতুস্থলা চাপ্সরাসৌ দঙ্ক্ষ্ণবঃ পশবো হেতিঃ পৌরুষেয়ো বধঃ প্রহেতিস্।
তেভ্যো নমোঽ অস্তু তে নোঽঅবন্তু তে নো মৃডয়ন্তু। তে যং দ্বিষ্মো যশ্চ নো দ্বেষ্ঠি
তম্ এষাং জম্ভে দধ্মঃ ॥

 [যজুর্বেদ/১৫ অধ্যায়/১৫ নং মন্ত্র]

(১) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের হিন্দি পদার্থ  দেখুন --

जो (अयम्) - यह, (दक्ष्णवः) - मांस और घास आदि पदार्थों को खानेवाले पशु आदि उनके ऊपर, (हेति:)- बिजुली गिरे,,,, (य:)-जो, (नः)- हमसे, (द्वेष्टि) - विरोध करें, (तम्) उसको हम लोग, (एषाम्) - इन व्याघ्रादि पशुओं के, (जम्भे) मुख में, (दध्म:)-स्थापन करें" 

 (১) দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা এই মন্ত্রের বাংলা পদার্থ  দেখুন --

যে (অয়ম্) — এই, (দক্ষ্‌ণবঃ) — মাংস ও ঘাসাদি দ্রব্য আহারকারী পশুদের উপর, (হেতিঃ) — বজ্রপাত হোক ; (যঃ) — যে, (নঃ) — আমাদের প্রতি, (দ্বেষ্টি‌ ) — বিদ্বেষ করে, (তম্‌) — তাকে আমরা, (এষাম্) — এই ব্যাঘ্র প্রভৃতি পশুদের, (জম্ভে) — মুখে, (দধ্মঃ) — স্থাপন করুন।




❌ দয়ানন্দের সরস্বতীর দাবীর খণ্ডন (ISSGT) —  (২)

সমীক্ষক — দয়ানন্দের হিংসাত্মক বুদ্ধি লক্ষ করুন। দয়ানন্দ লিখছেন—

(দক্ষ্‌ণবঃ) —  মাংস ও ঘাসাদি দ্রব্য আহারকারী পশুদের উপর,
(হেতিঃ)বজ্রপাত হোক

দয়ানন্দ সরস্বতী এখানে পশুহিংসাকেও ধর্মের অঙ্গ বানিয়ে দিয়েছেন!
ধন্য আপনি, স্বামীজী, আপনার বুদ্ধি!

তবে এখন দয়ানন্দী আর্যসমাজীরা আমাদের বলুক —
 এই সব জীবের উপর বজ্রপাত কেন হওয়া উচিত?
আর ঈশ্বরই বা কেন নিজেরই সৃষ্ট সেই প্রাণীগুলির উপর বজ্রপাত করবেন?

যদি এই প্রাণীগুলি জগতের পক্ষে ক্ষতিকরই হতো, তবে ঈশ্বর তাদের সৃষ্টি করতেনই বা কেন ?
এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো—দয়ানন্দ তো কেবল হিংস্র মাংসাশী প্রাণীই নয়, ঘাস খাওয়া নিরীহ নিরপরাধ প্রাণীদের ক্ষেত্রেও তাদের হত্যা করে দেবার কথা লিখছেন।

তবে দয়ানন্দী লোকেরাই বলুক—ঘাস খাওয়া এই নিরীহ প্রাণীগুলি কি সমাজের কোনও ক্ষতি করছে? তাদের উপরে বজ্রপাত হওয়া কি ন্যায়সঙ্গত?

আমার তো মনে হয় না এই জগতে কোনও একটিও প্রাণী আছে যা প্রকৃতপক্ষে জগতের পক্ষে ক্ষতিকর।
যদি এমন হতো, তবে ঈশ্বর তার সৃষ্টি করতেন না। এই জগতে প্রতিটি প্রাণীই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আর এই পরস্পর নির্ভরতার শৃঙ্খল থেকে যদি একটি প্রাণীও বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে সমগ্র জীবজগতের ভারসাম্যই ভেঙে পড়বে।

এই একই বেদ-শ্রুতিতে পরে আরও লেখা হয়েছে —


দয়ানন্দের স্ববিরোধিতা – সত্যার্থ প্রকাশ বনাম বেদভাষ্য

যজুর্বেদের ১৫ অধ্যায়ের ১৫ নং মন্ত্রে দয়ানন্দ সরস্বতী লিখেছেন যে—

(यः) — যে, (नः) — আমাদের প্রতি, (द्वेष्टि) — বিদ্বেষ পোষণ করে,
(तम्) — তাকে আমরা, (एषाम्) — এই ব্যাঘ্র প্রভৃতি পশুর, (जम्भे) — মুখে, (दध्मः) — স্থাপন করি।


ধন্য হে, স্বামীজীর বুদ্ধি!

স্বামীজীর তো নিজের লেখাও মনে থাকে না !
দেখুন, “সত্যার্থ প্রকাশ”-এর সপ্তম সমুল্লাসে, পৃষ্ঠা ১৩৭-এ স্বামীজি লিখছেন

"এমন প্রার্থনা কখনোই করা উচিত নয়, আর ঈশ্বরও এমন প্রার্থনা গ্রহণ করেন না—
যেমন: হে ঈশ্বর! আপনি আমার শত্রুদের বিনাশ করুন, আমাকেই সবার উপরে করুন, কেবল আমারই খ্যাতি হোক, সবাই আমার অধীন হোক — ইত্যাদি।"

স্বামীজীর এই ভাষ্যেই তো স্বামীজীর নিজের দেওয়া মত খণ্ডন হয়ে যাচ্ছে ! স্ববিরোধী বক্তব্য বের হয়েছে। 
যদি ঈশ্বর এমন প্রার্থনা গ্রহণ না করেন, তবে এ থেকেই স্পষ্ট হয়—দয়ানন্দের ওই বেদ-ভাষ্য ভুল, বা বিকৃত।

এখন দয়ানন্দী আর্যসমাজীদের উচিত এই নির্ণয় করা—এই দুই বক্তব্যের মধ্যে কোনটা সঠিক?
দয়ানন্দের লেখা ওই বেদ-ভাষ্য?
না কি “সত্যার্থ প্রকাশ”-এ লেখা স্বামীজীর নিজের বচন ?


-----------------------------------------------------------------------

তাহলে এবার ভাবুন এই

আর্যসমাজের পশুপ্রেম : সত্য না ভণ্ডামি ?

বর্তমান সময়ে আর্যসমাজীরা নিজেদের ‘অহিংস’ ও ‘পশুপ্রেমী’ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। নানা বক্তৃতা, প্রবন্ধ এবং প্রচারপত্রে তারা দাবি করে যে বৈদিক ধর্ম কখনোই পশুহত্যা সমর্থন করে না এবং পশুদের রক্ষা করা একজন বৈদিক ধার্মিকের কর্তব্য। কিন্তু এই দাবিগুলির পেছনে সত্যতা কতখানি? বাস্তবে তাদের গ্রন্থসমূহ, বিশেষত ‘সত্যার্থপ্রকাশ’ ও ‘ঋগ্বেদ’ ও ‘যজুর্বেদ’-এর উপর স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা ভাষ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এক বিপরীত চিত্র।

এই প্রবন্ধে আমরা আর্যসমাজের এই তথাকথিত 'পশুপ্রেম' নামক দাবিটির গভীরে প্রবেশ করেছি, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দেখালাম তিনি পশুহত্যাকে বৈধতা দিয়েছেন। 


‘গোহত্যা’ সম্পর্কিত দ্বিচারিতা

একদিকে দয়ানন্দ গোহত্যাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, অপরদিকে তিনি গরুকে উপকারী না হলে হত্যা করার অনুমতি দেন (যজুর্বেদ/১৩ অধ্যায়/৪৮ নং মন্ত্র)। প্রশ্ন হল—উপকারী না হওয়া মাত্রই কি কোনো প্রাণী হত্যা করা ধর্মসঙ্গত হয়ে যায় ? এর মাধ্যমে তাদের ‘গোরক্ষা’ নীতিতেও দ্বিচারিতা ধরা পড়ে।


আর্যসমাজের নাটকীয় পশুপ্রেম: আসল উদ্দেশ্য কী?

আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত হিন্দুধর্ম সংস্কার এবং ব্রাহ্মণ্য বিরোধী অবস্থান নিয়ে। একদিকে তারা বেদবিরোধী প্রথা রূপে পশুবলি এবং মূর্তিপূজার সমালোচনা করে, অপরদিকে নিজেদের মত অনুযায়ী পশুহত্যাকে বৈধতা দেয়। আজকের দিনে এই গোষ্ঠী জনমত গঠনের জন্য অহিংসার মুখোশ পরে থাকলেও, বাস্তবে তাদের শাস্ত্রীয় ও নৈতিক অবস্থান অত্যন্ত অসংগতিপূর্ণ।


উপসংহার

আর্যসমাজের পশুপ্রেম একটি চাতুর্যময় প্রচার-কৌশল, যা জনসাধারণের অজ্ঞতা ও আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের হাতিয়ার হয়েছে। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নিজের লেখা থেকেই প্রমাণ হয় যে, পশুহত্যা ও মাংসভোজনকে তিনি নৈতিক ও বৈদিক বলে মান্যতা দেন। ফলে, আজকের দিনে আর্যসমাজীদের পশুপ্রেমের মুখোশ খোলার সময় এসেছে।


শেষকথা

পশুপ্রেম বা অহিংসা যদি কারও মতবাদের ভিত্তি হয়, তবে সেই মতবাদে পশুহত্যার কোনো ছাড় থাকা উচিত নয়। দয়ানন্দ সরস্বতীর রচনার আলোকে আর্যসমাজের পশুপ্রেম একটি পরিকল্পিত প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।

---------------------------------------------------------------------------------------------

এখানেই এই প্রবন্ধ টি সমাপ্ত হল ।


আরও দেখুন 

এখানে ক্লিক করে 👉 দয়ানন্দ সরস্বতী ও তার আর্যসমাজের খণ্ডন



নন্দী মহারাজের জয়

পরমেশ্বর শিবের জয়


শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩 

হর হর মহাদেব 🚩 


লেখনীতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT





মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ