চীনের কোয়াংঝোতে মঙ্গোল রাজা কুবলাই খান কর্তৃক নির্মিত শিব মন্দিরের শৈব ইতিহাস
ভূমিকা:
সমগ্র সনাতন ধর্মের সুত্রপাত হয়েছিল শৈবপরম্পরার হাত ধরে, ভারতের বাইরেও সমগ্র বহির্বিশ্বে শৈব স্থাপত্য সংস্কৃতি ছড়িয়ে ছিল। বিভিন্ন নিদর্শনের মধ্যে চীনের কোয়াংঝো-র কায়ুয়ান শিব মন্দির টি বিখ্যাত শৈব নিদর্শনের ঐতিহাসিক চিহ্ন, যা শৈবধর্মের প্রাচীনত্ব কে দৃঢ় করবার সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবী তে নিজের অস্তিত্ব কে প্রমাণ করছে। এই প্রবন্ধে সেই বিষয়ে কিছু প্রমাণের সাথে সংক্ষিপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
চীনের কোয়াংঝোতে মঙ্গোল রাজা কুবলাই খান কর্তৃক নির্মিত শিব মন্দিরের শৈব ইতিহাস
চীনের কোয়াংঝো শহরে (Quanzhou) অবস্থিত একটি বিশাল শৈব মন্দির, ভারতের বাইরে অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ হিন্দু শিব মন্দির হিসেবে পরিচিত। এর পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক শিলালিপি, যা ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে (শকাব্দ ১২০৩) স্বয়ং মঙ্গোল সম্রাট কুবলাই খানের ফরমান অনুযায়ী খোদাই করা হয়েছিল। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় ইতিহাস নয়, বরং ভারত ও চীনের মধ্যকার গভীর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বিনিময়ের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।
শিলালিপির বিবরণ ও তার অর্থ:
এই দ্বিভাষিক (তামিল-চীনা) শিলালিপিটি ১২৮১ সালের চিত্রা পূর্ণিমা দিনে খোদাই করা হয়। এতে বলা হয়েছে:
“শিবকে নমস্কার। মঙ্গল হউক। শকাব্দ ১২০৩, চিত্রা নক্ষত্রযুক্ত চিত্রাই মাসে, সম্বন্ধ পেরুমল নামে পরিচিত তবচ-চক্রবর্তী, খোদ সম্রাট চেকাচাই (অর্থাৎ কুবলাই খান)-এর ফরমান অনুযায়ী, উদৈয়ার তিরুকদলিশ্বরম উদৈয়া-নায়িনার নামে শিবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন, সম্রাটের শারীরিক কল্যাণ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য।”
এই লেখাটি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, কুবলাই খান স্বয়ং এই শৈব মন্দির প্রতিষ্ঠার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
TEXT
1. Harah () Svasti śri (*) Saga p tam 1203-vadu chittirai-
2. Ch-chittirai nią śri Cheka-kän tirumēni [kki] nan-
3. r-äga udaiyär Tirukata... [su] ram udaiya näyinärai
4. ari-yarula-p-paşni Sambanda-p-perumil-
5. [a] na Tavachchakkarava [r] tti [ka]-Chekachai -kan parman/
6. Padi (*)[.............
(Each star in the 6th line represents a Chinese character.)
TRANSLATION
"Obeisance to Hara (Siva). Let there be prosperity! On the day (having) the Chitra (asterism) in the month of Chittirai of the Saka Year 1203, the Tavachchakkaravarttigaj alias Sambandhap-perumal caused, in accordance with the firman of Chekachai-Khan, to be graciously installed the God Udaiyar Tirukkadaliśvaram Udaiya-näyinär, for the welfare of the illustrious body of the illustrious Chekachai Khin."
The inscription is dated on the day having the asterism of Chitra in the month of Chittiral in the Saka Year 1203 i e. the Chitra-paurnami day in the month of Chittirai corresponding to April in the year 1281 A. D.
সম্বন্ধ পেরুমল ও তার ভূমিকা:
সম্বন্ধ-পেরুমল ছিলেন একজন দক্ষিণ ভারতীয় শৈব সন্ন্যাসী ও একটি শৈব মঠের অধ্যক্ষ। তাকে তপস-চক্রবর্তী (Tapas-Chakravartin) বা তপস্বী-সম্রাট বলা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় তিনি শুধু ধর্মীয় নেতা নন, বরং সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক দূত হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি কোয়াংঝো শহরে বসবাস করতেন এবং সেখানেই একটি শৈব মঠ পরিচালনা করতেন। এই মঠ থেকেই মন্দির প্রতিষ্ঠা ও শিবমূর্তি সহ অনান্য শৈব প্রতিমা প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হয়।
শৈব ধর্মের বিস্তার ও জনসংখ্যা:
শিলালিপির ভাষা ও তার প্রেক্ষাপট থেকে অনুমান করা যায়, তৎকালীন সময়ে কোয়াংঝো শহরে বিশাল সংখ্যক শৈব ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করতেন। তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণে একটি মঠ ও মন্দির প্রয়োজন ছিল, এবং এটি উপযুক্ত রাজানুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রমাণ করে যে ১৩শ শতাব্দীতে ভারত-চীন সংযোগ কতটা গভীর ছিল।
শৈব মন্দিরের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য:
কোয়াংঝো শিব মন্দিরে বৃষভ-নন্দী, ভৈরব-শিব, নটরাজ-শিব দেখা যায়।
চীনের মঙ্গোল রাজা কুবলাই খানের লিখিত আদেশ অনুযায়ী (১২৭১ সালে) স্থাপিত চীনের কোয়াংঝোর শিবের মন্দিরে আছে শৈব ভাস্কর্য সমূহ, যার মধ্যে গজ-মৃগ দ্বারা পূজিত শিবলিঙ্গ, ভৈরব শিব, ঊর্ধ্বতাণ্ডব নটরাজ, বৃষভ-নন্দী প্রভৃতি বিখ্যাত শৈব দেবভাস্কর্য রয়েছেন। এগুলি নিঃসন্দেহে প্রাচীন দক্ষিণ ভারতীয় শৈলী অনুসরণ করে নির্মিত হয়েছে।
উপসংহার :
এই ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ভারতীয় শৈব ধর্ম শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কুবলাই খানের মতো একজন শক্তিশালী মঙ্গোল সম্রাট পর্যন্ত এই ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তাঁর শারীরিক ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণের জন্য শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সম্বন্ধ-পেরুমলের মতো দক্ষিণ ভারতীয় শৈব আচার্যগণ চীন দেশে গিয়ে শৈবধর্ম ও সংস্কৃতির আলো ছড়িয়েছিলেন। কোয়াংঝোর এই শিব মন্দির ইতিহাসের পাতায় ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতির এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে। প্রাচীন কালে শৈবদেরই রাজত্ব ছিল, প্রাচীন কালে সকলেই শৈব সংস্কৃতি পালন করতেন, এটিই সনাতনীদের প্রকৃত পরিচয় ছিল - তাই এই বিষয়ে বর্তমানের সকল সনাতনীর এটি জানা খুবই আবশ্যক এবং পরমেশ্বর শিবের শৈবমার্গে উপনীত হয়ে জীবন-যাপন করাই উপযুক্ত কর্তব্য বলে জানা উচিত ।
________________________________________________
এই প্রবন্ধটি এখানে সমাপ্ত হল ।
নন্দী মহারাজের জয়
পরমেশ্বর শিবের জয়
শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🚩
হর হর মহাদেব 🚩
লেখনীতে — শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী
কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন