কালভৈরব স্তুতি (শিবরহস্য মহাইতিহাসোক্ত)
ভূমিকা —
পরমেশ্বর শিবের থেকে উৎপন্ন হওয়া রুদ্রাবতার শ্রীকালভৈরব জী ব্রহ্মার অহংকারী মস্তক ছিন্ন করেছিলেন। শ্রীকালভৈরব জী অত্যন্ত ভক্ত বৎসল, যারা প্রকৃত শৈব ব্যক্তি - তাদের প্রতি বাবা কালভৈরবের কৃপা বর্ষিত হয় । কিন্তু যারা শিবনিন্দুক, শৈবদের নিন্দুক, শিব ভক্তদের হিংসাকারী, তাদের উপর ভীষন ক্রোধ করেন। পরমেশ্বর শিবই একমাত্র সর্বোচ্চ -এটি যারা না মান্য করেন তারা বাবা কালভৈরবের কৃপা কোনোভাবেই লাভ করতে পারেন না। যারা শৈব তথা শৈবপরম্পরার ক্ষতিসাধন করেছে বা করছে অথবা করবে - এমন ব্যক্তিদের উপর বাবা কালভৈরব প্রচণ্ড ক্রোধ করেন। তাই বাবা কাল ভৈরবের পূজার্চনা বা স্তোত্র পাঠ একমাত্র তারাই করবেন যারা পরমেশ্বর শিবকেই সর্বোপরি মানেন, কারণ অসত্যের পথে থাকা ব্যক্তি অধর্মীই হয়, অধর্মীর পূজা বাবা কালভৈরব গ্রহণ করেনা। ভক্তি যুক্ত হয়ে কালভৈরব বাবার এই স্তুতি পাঠ করলে কালভৈরব বাবা প্রসন্ন হয়ে শিব ভক্তের সকল বাঁধা বিপত্তি দূর করে দেন। সকল ভয় থেকে মুক্ত করেন, সকল অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেন।
এই শ্রী কালভৈরব স্তুতি স্তোত্রটি শিবরহস্য মহাইতিহাস শাস্ত্রের ৭ম অংশের ১১ অধ্যায়ে রয়েছে। এটিকে অনুবাদ করেছেন শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী।
কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT
কালভৈরব স্তুতিঃ
॥ ॐ নমঃ শিবায় ॥
দেবা উচুঃ —
নমস্তে কালনাথায় নমস্তে কালরূপিণে।
নমো ভীমায় চোগ্রায় নমস্তে শূলপাণয়ে ॥২৬২॥
নমস্তে কালকণ্ঠায় নমস্তে কালভক্ষক।
নমো দিগম্বরানন্ত নমঃ পরমপূরুষ ॥২৬৩॥
নমো বিশ্বাত্মক শ্রীমন্ নমো বিশ্বৈকজীবন।
নমস্তেঽস্তু সহস্রাক্ষ সহস্রকর তে নমঃ ॥২৬৪॥
সহস্রচরণামেয় নমস্তে ভৈরবপ্রভো।
নমস্তে রুদ্র রুদ্রাত্মন্ নমস্তে রুদ্রসম্ভব ॥২৬৫॥
নমস্তে শাম্ভবানন্দ নমস্তে ভূতভাবন।
নমস্তে সর্বলোকেশ সর্বাধারামরার্চিত ॥২৬৬॥
নমস্তে দিক্ স্বরূপায় নমস্তে ভূস্বরূপিণে।
নমস্তে সূর্যরূপায় চন্দ্ররূপায় তে নমঃ ॥২৬৭॥
নমস্তে গ্রহরূপায় রূপাতীতায় তে নমঃ।
নমঃ সকলকল্যাণ ভাজনায় অমৃতাত্মনে ॥২৬৮॥
নমঃ পরমবীরায় নমঃ পরশুধারিণে।
নমো ডমরুহস্তায় নমঃ খট্বাঙ্গধারিণে ॥২৬৯॥
নমোঽনন্তগুণাধার নমোঽনন্তস্বরূপিণে।
নমো বিভূতিকবচ ব্যোমকেশ নমোঽস্তুতে ॥২৭০॥
নমস্ত্রিশূলহস্তায় নমস্তে মুণ্ডমালিনে।
নমঃ প্রেতাসনাসীন জপাবর্ণ নমোঽস্তুতে ॥২৭১॥
নমো ব্রহ্মণ্যরূপায় বিধিনাশকৃতে নমঃ।
অশৈবশৈলবজ্রায় শিবদ্রোহিভিনাশক ॥২৭২॥
শিবভক্তপ্রিয় শ্রীমন্ নমঃ শ্রীকালভৈরবম্।
শরণ্যমূর্তে সর্বাত্মন্ নমস্তে ভক্তবৎসল ॥২৭৩॥
শিবনেত্রানল শ্রীমন্ নমস্তে শিবপূজক।
নমো রক্তাম্বর শ্রীমান্ নমস্তে রক্তচন্দন ॥২৭৪॥
নমস্তে রক্তকেশায় নমস্তে রক্তবাহবে।
নমস্তে রক্তভালায় নমো রক্তনখায় তে ॥২৭৫॥
নির্বিকার নিরীহেশ নিরঞ্জন নিরাশ্রয়।
নিরুপদ্রব নির্দ্বন্দ্ব নিরাময় নিরঞ্জন ॥২৭৬॥
ব্যালোপবীতিন্ ন উগ্রাত্মন্ মহাপ্রলয়কারণ।
অনেক সোমসূর্যাগ্নিগণাকার নমোঽস্তুতে ॥২৭৭॥
॥ ইতি শিবরহস্যান্তৰ্গতে কালভৈরবস্তুতিঃ সম্পূর্ণা ॥
- ॥ শ্রীশিবরহস্যম্ । উগ্রাখ্যঃ সপ্তমাংশ । অধ্যায়ঃ ১১ । ২৬২–২৭৭ ॥
বাংলা অনুবাদ :
কালনাথকে প্রণাম, কালরূপধারীকে প্রণাম।
ভীষণ ও কঠোর রূপধারীকে প্রণাম, শূলধারীকে প্রণাম। ২৬২
কালকণ্ঠকে প্রণাম, কালগ্রাসীকে প্রণাম।
দিগম্বর, অনন্ত, পরম পুরুষ— আপনাকে প্রণাম। ২৬৩
সমগ্র বিশ্বে আত্মরূপে বিরাজমান শ্রীমান আপনাকে প্রণাম,
যিনি বিশ্বে একমাত্র জীবনস্বরূপ, সহস্রনয়ন ও সহস্রহস্তধারী আপনাকে প্রণাম। ২৬৪
সহস্রপদধারী, ভয়ংকর প্রভু আপনাকে প্রণাম।
রুদ্র, রুদ্রাত্মা ও রুদ্রসম্ভব আপনাকে প্রণাম। ২৬৫
শাম্ভবানন্দ, ভূত ও ভবনের ধারক আপনাকে প্রণাম।
সমস্ত লোকের অধীশ্বর, সকলের আশ্রয়, দেবতাদের পূজিত আপনাকে প্রণাম। ২৬৬
দিক্দিশারূপে, ভূমিরূপে আপনাকে প্রণাম।
সূর্যরূপী, চন্দ্ররূপী আপনাকে প্রণাম। ২৬৭
গ্রহরূপে, রূপের অতীত সেই আপনাকে প্রণাম।
সমস্ত কল্যাণের ধারক, অমর আত্মা আপনাকে প্রণাম। ২৬৮
পরম বীরকে প্রণাম, পরশু (কুঠার) ধারীকে প্রণাম।
ডমরুধারী, খট্বাঙ্গধারী আপনাকে প্রণাম। ২৬৯
অনন্ত গুণের আধারকে প্রণাম, অনন্তরূপধারীকে প্রণাম।
ভস্মকবচ পরিধানকারী, আকাশসম কেশধারী আপনাকে প্রণাম। ২৭০
ত্রিশূলধারী আপনাকে প্রণাম, মুণ্ডমালাধারী আপনাকে প্রণাম।
প্রেতের আসনে উপবিষ্ট, জপময় রূপ আপনাকে প্রণাম। ২৭১
ব্রহ্মজ্ঞ রূপধারী, বিধি নাশকারী আপনাকে প্রণাম।
অশৈব পর্বতের জন্য যিনি বজ্ররূপ, শিববিদ্বেষীদের বিনাশকারী আপনাকে প্রণাম। ২৭২
শিবভক্তপ্রিয়, শ্রীমান, শ্রীকালভৈরব আপনাকে প্রণাম।
শরণযোগ্য মূর্তি, সর্বাত্মা, ভক্তবৎসল আপনাকে প্রণাম। ২৭৩
শিবনেত্রের অনলরূপ শ্রীমান, শিবপূজকদের প্রিয় আপনাকে প্রণাম।
রক্তবস্ত্রধারী, রক্তচন্দনে বিভূষিত আপনাকে প্রণাম। ২৭৪
রক্তবর্ণ কেশ, রক্তবাহু, রক্তমস্তকে বিভূষিত আপনাকে প্রণাম।
রক্তনখযুক্ত আপনাকে প্রণাম। ২৭৫
নির্বিকার, নিরীহ, নিরঞ্জন, নিরাশ্রয়;
নির্বিঘ্ন, নির্দ্বন্দ্ব, নিরাময়, নিরঞ্জন আপনাকে প্রণাম। ২৭৬
শৈশবে উপবীত ধারণকারী, উগ্রাত্মা, মহাপ্রলয়ের কারণ আপনাকে প্রণাম।
অসংখ্য চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি রূপ ধারণকারী আপনাকে প্রণাম। ২৭৭
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন