ভারত বর্ষ দেশের নামের উৎস ও স্থান বিষয়ে সনাতন ধর্মশাস্ত্রের মতামত

 

🇮🇳৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস এর সকল কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


🌸আমাদের দেশ ভারত বর্ষ পুণ্য ক্ষেত্র যা আজকের দিনেই স্বাধীন হয় সেটা সবাই জানে। কিন্তু এই পুণ্য ভূমি এর নাম "ভারত বর্ষ" সেটা আমাদের বিশ্বাস আমাদের ধর্ম আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শাস্ত্র আমাদের দর্শন আমাদের জীবন শৈলী এর সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। এই নাম আজকের নয়, বহু প্রাচীন কাল এর মুনি ঋষি রাও এই পুণ্য ভূমি কে ভারত বর্ষ নামেই চিহ্নিত করে গেছেন। 


🛑আমাদের দেশ এর নাম এর উৎস:---

শকুন্তলা ও দুষ্মন্ত এর পুত্র এর নাম ভারত থেকেই এই দেশ এর নাম ভারত বর্ষ। আবার অনেকে বলেন যে ভারত নামক উপজাতি থেকেই এই দেশ এর নাম। 


 ঋগবেদ, শৈবাগম ইত্যাদি শাস্ত্র আমাদের সনাতনীদের প্রাচীন ও মান্য গ্রন্থ। ঋগ্বেদ এর শাকল সংহিতা এর ৭নং মণ্ডলে উল্লেখ মেলে দশ রাজার যুদ্ধ এর। যা হয় ভারত উপজাতি এর রাজা সুদাস এর সহিত অন্যান্য উপজাতি এর। সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রাজা সুদাস বিজয়ী হন ও সূচনা করেন ভারত বর্ষের গৌরব গাথা এর। কাজেই এই নাম রাজা ভরত থেকেই হোক বা ভারত উপজাতি থেকে উভয় ক্ষেত্রেই এই নাম আমাদের সংস্কৃতি এর সাথেই জড়িত। শৈবাগমেও রয়েছে ভারতবর্ষের স্থানগত পরিচয়ের তথ্যসূত্র।


🛑 ভারত বর্ষ নাম এর সাপেক্ষে অন্যান্য শাস্ত্রীয় প্রমাণ : 


🇮🇳 ১. শিব মহাপুরাণ, উমা সংহিতা, ১৮ অধ্যায়, ১ শ্লোক —


🔱 সনৎকুমার উবাচ --

বক্ষ্যেঽহং ভারতং বর্ষং হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণে ।

উত্তরে তু সমুদ্রস্য ভারতী যত্র সংসৃতিঃ ॥ ১ ॥


🦚অর্থ:- মহর্ষি সনৎকুমার বললেন ---- 

আমি ভরতবর্ষের বর্ণনা করব, যা হিমালয়ের দক্ষিণে আর সমুদ্রের উত্তরে অবস্থিত। যেখানে ভারতী (ভারত উপজাতি) নামের মানুষের বসতি রয়েছে।

______________________________________________


🇮🇳 ২. বিষ্ণু পুরাণ, দ্বিতীয় অংশ, ৩ অধ্যায়, ১ শ্লোক —


🔱 পরশুরাম উবাচ -- 

উত্তরং যৎ সমুদ্রস্য হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম্ ।

বর্ষং তদ্ভারতং নাম ভারত যত্র সনতনঃ ॥


🦚অর্থ: আচার্য পরশুরাম বললেন,

সমুদ্রের উত্তরে এবং হিমালয়ের দক্ষিণে যে বর্ষ (দেশ), সেই বর্ষের নাম ভারত, যেখানে প্রাচীনকালে ভরত রাজা রাজত্ব করেছিলেন।

______________________________________________


🇮🇳 ৩. ভাগবত পুরাণ, ৫ স্কন্দ, ৪ অধ্যায়, ৯ শ্লোক —


🔱যেষাং খলু মহাযোগী ভরতো জ্যেষ্ঠঃ শ্রেষ্ঠগুণ আসীদ্যে‌নেদং বর্ষং ভারতমিতি ব্যপদিশন্তি ॥ ৯ ॥


🦚অর্থ:-  যাদের মধ্যে মহাযোগী ভরত (শকুন্তলা ও দুশমন্ত এর পুত্র) গুণে শ্রেষ্ঠ ও জ্যেষ্ঠ ছিলেন, তাঁর নামেই এই বর্ষকে ‘ভারত’ বলে অভিহিত করা হয়।

______________________________________________


🇮🇳 ৪. মার্কণ্ডেয় পুরাণ, ৫৪ অধ্যায়, ৫ শ্লোক —


🔱মার্কণ্ডেয় উবাচ --

ভারতস্য বর্ষস্য নব ভেদান্নিবোধ মে।

সমুদ্রান্তরিতা জ্ঞেয়াস্তে ত্বগম্যা পরস্পরম্ ॥ ৫ ॥


🦚অর্থ:- মহর্ষি মার্কণ্ডেয় বললেন ----

আমি তোমাকে এই ভারত দেশের নয়টি বিভাগ বলছি; এগুলি সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত, কিন্তু পরস্পরের নিকটগম্য নয়।


______________________________________________


🇮🇳 ৫. মৎস্য পুরাণ, ১১৪ অধ্যায়, ১ শ্লোক —


🔱ঋষয় ঊচুঃ --

যদিদং ভারতং বর্ষ যস্মিন্ স্বায়ম্ভুবাদয়ঃ।

চতুর্দশৈব মনবঃ প্রজাসর্গং সসর্জিরে ॥ ১ ॥


🦚অর্থ:- ঋষিগণ জিজ্ঞাসা করলেন ----

 এই যে ভারতবর্ষ, যেখানে স্বায়ম্ভুব প্রভৃতি চৌদ্দ জন মনু জন্মগ্রহণ করেছেন এবং প্রজাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিষয়ে আমরা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।


______________________________________________


🇮🇳 ৬. বায়ু পুরাণ, ৪৫ অধ্যায়, ৬৯ - ৭০শ্লোক


🔱যদিদং ভারতং বর্ষ যস্মিন্স্বায়ং নূবাদয়ঃ।

চতুর্বশৈতে মনবঃ প্রজাতনে ভবন্ত্যুত।। ৬৯

🔱এতদ্বেদিতুমিচ্ছামস্তন্নো নিগদ সত্তম।

এতচ্ছু ত্বা বচস্তেপামনদীল্লোমর্ষণঃ।। ৭০


🦚অর্থ:- হে সত্যনিষ্ঠ আচার্য লোমহর্ষণ, এই যে ভারতবর্ষ, যেখানে প্রজাসৃষ্টির কার্যক্রমে স্বায়ম্ভুব আদি চৌদ্দ জন মনু উৎপন্ন হয়েছেন, আমরা সেই ভারতবর্ষ এর বিষয়ে জানতে ইচ্ছুক।


______________________________________________


🇮🇳 ৭. মহাভারত, ভীষ্ম পর্ব, ৯ অধ্যায়, ১ - ২ শ্লোক


🔱যদিদং ভারতং বর্ষং যত্রেদং মূর্ছিতং বলম্। যত্রাতিমাত্রলুদ্ধোহযং পুত্রো দুর্য্যোধনো মম ॥১॥

🔱যত্র গৃদ্ধাঃ পাণ্ডুপুত্রা যত্র মে সজ্জতে মনঃ।

এতন্মে সর্বমাচক্ষ ত্বং হি মে বুদ্ধিমান্ মতঃ ॥২॥


🦚অর্থ:- ধৃতরাষ্ট্র বললেন ---- 

"সঞ্জয়! এই যে ভারতবর্ষ রয়েছে, যেখানে এই সকল সৈন্য সমাগম হয়েছে, আমার পুত্র দুর্য্যোধন যার প্রতি অত্যন্ত লোভী হয়েছে, যার ওপর পাণ্ডবেরাও লুব্ধ হয়ে পরেছে এবং যাতে আমার মনও আসক্ত হয়েছে, তুমি এই সমগ্র ভারতবর্ষটার বর্ণনা কর।কারণ, তোমাকে আমি বুদ্ধিমান বলে মনে করি”


______________________________________________


🇮🇳 ৮. পদ্ম পুরাণ, স্বর্গ খণ্ড, ৬ অধ্যায়, ১ - ২ শ্লোক


🔱ঋষয় ঊচুঃ

যদিদং ভারতং বর্ষ পুণ্যং পুণ্যবিধায়কম্।

তৎসর্ব নঃ সমাচক্ষ্ব ত্বং হি নো বুদ্ধিমান্মতঃ ॥১॥


🦚অর্থ:- ঋষিগণ বললেন ----

এই যে পবিত্র ও পুণ্যপ্রদানকারী ভারতবর্ষ, তার আপনি পূর্ণরূপে বর্ণনা করুন। আপনিই আমাদের মধ্যে বিজ্ঞ।


______________________________________________


🇮🇳 ৯. শৈব কামিকাগম, মৃগেন্দ্র তন্ত্র, বিদ্যাপাদ,১৩ অধ্যায় (ভুবনাধ্ব প্রকরণ), ৬৯ -- ৭০ শ্লোক —


🔱নিষধাদ্ হরিবর্ষং যৎ যাম্যতো হেমকূটতঃ ॥৬৯

নাম্না কিং পুরুষং খ্যাতং ভারতং হিমবদ্ গিরেঃ ॥৭০


🦚অর্থ:- ইলাব্রত বর্ষ, ভদ্রাবর্ষ, কেতুমালাবর্ষ, হরিবর্ষ, কিং পুরুষ বর্ষ, ভারতবর্ষ, রম্যকবর্ষ, হিরণ্যবর্ষ এবং কুরুবর্ষ; এদের মধ্যে ভারতবর্ষ অন্যতম, যা উত্তরে হিমগিরি তথা হিমাচল পর্বত হতে দক্ষিণ সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং হরিবর্ষ নিষধা ক্ষেত্র থেকে দক্ষিণে হেমকূট পর্যন্ত বিস্তৃত।


______________________________________________


🇮🇳 ১০. শিব মহাপুরাণ, উমাসংহিতা, ১৭ অধ্যায়, ৩৪ শ্লোক


🔱ভারতঃ কেতুমালশ্চ ভদ্রাশ্চঃ কুরুবস্তথা।

পত্রাণি লোকপদ্মশ্চ মর্যাদালোকপর্বতাঃ ॥৩৪


🦚অর্থ:- ভারত, কেতুমাল, ভদ্রাবর্ষ ও কুরুবর্ষ নামক চারবর্ষ লোকপদ্মরূপী পত্রের ন্যায় বিস্তৃত।


______________________________________________


🟩 সুতরাং স্পষ্ট যে ভারত বর্ষ নাম আমাদের সনাতনী সংস্কৃতি ও জীবন শৈলী এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ভারত বর্ষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কোনো দেশ নেই।


📿এমনকি আমাদের জাতীয় নীতিবাক্য "সত্যমেব জয়তে" ও আমাদের মুণ্ডক উপনিষদ (তৃতীয় মুণ্ডক, প্রথম খণ্ড, ৬ মন্ত্র) থেকে উদ্ধৃত যা আবারো আমাদের সংস্কৃতির অখণ্ডতা ও মহানতা কেই দর্শায়। 

  

তাই পরমপবিত্র শিবমহাপুরাণে বলা হয়েছে 👇


🇮🇳 ॥ভারতবর্ষ হল স্বর্গ ও মোক্ষ লাভের কর্মভূমি॥ 🇮🇳

  [শিবমহাপুরাণ/উমাসংহিতা/১৮অধ্যায়/২নং শ্লোক]


ভারত মাতার জয় 🚩

জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম🚩

শৈব সনাতন ধর্ম সদা বিজয়তে 🔱

হর হর মহাদেব 🔱🚩


✍🏻লেখনীতে — শ্রী Abhirup Ghosh শৈবজী ©️ 

সম্পাদনায় - শ্রী নন্দীনাথ শৈব আচার্য জী 

📢 কপিরাইট ও প্রচারে — International Shiva Shakti Gyan Tirtha - ISSGT 


#শৈববিপ্লব #শৈবধর্ম #ভারতবর্ষ #স্বাধীনতাদিবস #১৫আগষ্ট #15august #স্বাধীনতাদিবস #ISSGT #সনাতনধর্ম #ভারত #ভারতীয় #IndependenceDay

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ